Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছেতোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে পর্ব-১৯+২০

তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে পর্ব-১৯+২০

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_১৯
#সুমাইয়া_মনি

স্বচ্ছ ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে দু’জন তরুণ-তরুণী। আকাশের নির্মল চাঁদটি এক ফালি মেঘের আড়ালে মুখ লুকাচ্ছে বার বার। আজ সারাদিন মেঘলা আবহাওয়া ছিল। যার দরুণ শীতের রেশ একটু বেশিই ছিল অন্যদিনের তুলনায়। রাদের দেওয়া জ্যাকেটের পকেটে দু হাত পুরে ইসানা নীরব হয়ে হাঁটছে। ইসানা তার দেওয়া জ্যাকেটটি পড়েছে, এটা দেখে রাদ মনে মনে খুশি হয়। পাশাপাশি হাঁটছে রাদ। একটু আগেই তারা বাহিরে হাঁটতে বের হয়েছে। মুরাদের জোরাজোরিতে রাদকে দ্বিধাবোধ ফেলে ইসানাকে বাহিরে বের হওয়ার বার্তাটি জানায়। প্রথম বলাতেই ইসানা রাজি হয়ে যায়। আর এখন তারা সরু পথ পাড়ি দিচ্ছে এক সঙ্গে। ফুটপাত ধরে আরো অনেক মানুষকেই হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। কেউ বা আবার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে বাক্যবিনিময় ব্যস্ত।
রাদ কথা বলার টপিক খুঁজে পাচ্ছে না। শেষমেশ সরস স্বরে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি কী খেতে পছন্দ করেন?’
ইসানা রাদের প্রশ্ন শুনে তেমন আগ্রহ দেখায় না। কোমল স্বরে বলল,
‘আহামরি তেমন কিছু পছন্দ নয় আমার। তবে বাদাম খুব প্রিয়।’
‘ওহ!’ বলে থেমে যায় রাদ।
ইসানা রাদকে পছন্দের খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে না। কেননা সে রেহানা আনসারীর কাছ থেকে জানতে পেরেছে তার পছন্দের খাবার কী কী? ইসানার নীরবতায় রাদ ফের বলে,
‘আপনার প্রিয় রং?’
‘কালো।’
‘আমারটি কি জিজ্ঞেস করবেন না?’
‘নীল, সাদা।’
‘কী করে জানলেন?’ কিছুটা অবাক হয়ে জানতে চাইলো।
‘আন্টি বলেছে।’
‘তাহলে নিশ্চয় প্রিয় খাবারের সম্পর্কেও জানেন?’
‘হুম।’
‘মামনি এটাও বলেছে?’
‘হ্যাঁ! তিনি আমাকে যাওয়ার সময় একটি ডায়েরী দিয়েছিল। সেটির মধ্যে আপনার পছন্দ, অপছন্দের তালিকা রয়েছে।’
রাদ কপাল কুঁচকে বলে,
‘আমি ভয়…’
‘টিকটিকি, ব্যাঙ ভয় পান আপনি।’ অবশিষ্ট কথাটি ইসানা পূরণ করে।
রাদ কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে চোখ বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কিছুটা বিব্রতবোধ করছে সে। সুপ্ত অভিমান হয় তার মামনির ওপর। রাদ টপিক বদলাতে স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন না কেন?’
‘এখনো পর্যন্ত তুমি করে কাউকেই সম্বোধন করিনি। চাইছিও না!’
‘এনি রিজন?’
‘সিক্রেট!’
রাদ সামান্য হতাশ হলো। বলল,
‘অতীতকে ভুলে গিয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা উচিত!’
‘আপনাকে কে বলল আমি অতীত নিয়ে পড়ে আছি?’ ইসানার অকপটে প্রশ্ন শুনে রাদ অপ্রস্তুত হয়। বলে,
‘অনুমান করলাম।’
‘কিছু অতীত না চাইতেও সামনে এসে উপস্থিত হয়।’
‘যেমন?’
ইসানা উত্তর না দিয়ে দ্রুত হাঁটতে আরম্ভ করে। রাদ থেমে যায়। দাঁড়িয়ে দেখছে ইসানার কোথায় যাচ্ছে। সামনের খালি বেঞ্চে বসে। রাদ রাস্তার ওপর প্রান্তের শপটিতে যেতে আরম্ভ করে। সে মূলত বাদাম ক্রয়ের জন্য এসেছে। এই রাস্তায় মানুষজন তেমন নেই। ইসানা একা বেঞ্চটিতে বসে রয়েছে। হঠাৎ এখানকার এক যুবক ইসানার থেকে এক হাত দূরে বসে পড়লো। তার উপস্থিতিতে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাল না ইসানা। স্বাভাবিক ভাবে বিষয়টি নিয়েছে। যুবকটি দেখতে অতিরিক্ত ফর্সা, বেশ লম্বা – চওড়া। হাতে ছিল ব্লু রঙের আইফোন। সম্ভবত বড়লোক ঘরের ছেলে। মিনিট কয়েক সময় অতিবাহিত হবার পর যুবকটি ইংরেজিতে ইসানার উদ্দেশ্যে বলল,
‘আর ইউ এ প্রস্টিটিউট?’
রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে তাকায় যুবকটির দিকে ইসানা। দাঁতে দাঁত চেপে সর্বশক্তি দিয়ে সজোরে যুবকটির নাকে ঘু’ষি ছুঁড়লো। আকস্মিক ঘটনায় যুবকটি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে চোখমুখ বন্ধ করে নাকে হাত রাখল। সেকেন্ড কয়েক পর নাকের কাছে তরল কিছু অনুভব করল। হাত সামনের দিকে তাক করতেই রক্ত দেখে চমকে উঠে। ইসানার পানে চেয়ে দেখে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। যুবকটি দ্রুত গতিতে দৌঁড়ে জায়গা প্রস্থান করল। ইসানার শরীরে যেন কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। নাকমুখ গরম হয়ে গেছে ক্রোধের কারণে। রাদ পিছন থেকে পুরো ঘটনাটি দেখে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরক্ষণে ইসানার সাহসীকতা দেখে নজর সরিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে। তারপর স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে এসে বাদাম এগিয়ে দেয় ইসানার নিকট। হাত অনুসরণ করে ইসানা চোখ তুলে রাদের আদলে তাকায়। একটু আগের ঘটনা ভুলে নিজেকে স্বাভাবিক করে বাদাম হাতে নেয়। রাদ পাশে বসতে নিলেই ইসানা বলে উঠে,
‘হোটেলে যাব।’
রাদ না বসে দাঁড়িয়ে বলে ‘চলুন’। তারা অগ্রসর হয় হোটেলের উদ্দেশ্যে।
_
‘মুরাদ রাদ কি ইসানা আপুকে পছন্দ করে বা ভালোবাসে?’ গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো লিসা।
‘দু’টোই!’ ভ্রু উঁচু করে জবাব দিলো মুরাদ।
লিসা রেগেমেগে বলল,
‘আমার অনুমান সঠিক! ঐ ছোটলোক ঘরের মেয়েটিকে রাদ পছন্দ করে।।’
‘মুখের ভাষা সংযত করো লিসা।’ কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে বলল।
‘একদম না! আমার রাদকে আমারাই কাছ থেকে কেঁড়ে নিবে আমি চুপ থাকব না।’ চেঁচিয়ে বলল।
‘তোমার রাদকে সে কেঁড়ে নিচ্ছে না। বরঞ্চ রাদ তাকে ভালোবেসে আপন করে নিতে চায়।’
‘রাদের রুচি এত নিচে কীভাবে নেমেছে। একটা মিডেলক্লাস মেয়েকে…। আমি মানতে পারছি না।’
‘বাস্তবতা মেনে নিতে হবেই।’
‘সোহানার বিষয়টি না হয় মানা যায়। কিন্তু ইসানা, সে তো ডিভোর্সি এবং বয়সেও বড়।’
‘ভালোবাসা কেবল রূপ-যৌবন দেখেই হয় না লিসা।’
‘তুমি আমাকে যেটা বোঝাতে চাইছো আমি সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তাকে রাদের জীবনে কিছুতেই মেনে নিবো না।’
‘যে সারাজীবন থাকবে সে যদি মেনে নেয় তাহলে তুমি কোন খ্যাতের মু’লা!’ কিছুটা ব্যাঙ্গ করে বলল মুরাদ।
লিসা আরো ক্ষেপে যায়। আঙুল তুলে বলে,
‘রাদকে তুমি উসকেছো। আমি আন্টিকে সব বলব সব!’ বলে লিসা যাওয়ার ধরলে মুরাদ কাঠিন্য স্বরে ডেকে থামায়। লিসা থেমে যায়। কিন্তু ঘুরে তাকায় না।
.
ইভান হোয়াটসঅ্যাপে বড়ো বোন শালিনীকে কল দিয়েছে। এতদিন পর ছোট ভাইয়ের ফোন পেয়ে খুশিতে রিসিভ করে ‘কেমন আছিস’ জিজ্ঞেস করে।
‘ভালো। বাবা-মা কেমন আছে?’
‘ভালো আছে। কতদিন পর কল দিলি। অভিমান সরেছে আমাদের ওপর থেকে?’
‘হ্যাঁ! বাদবাকি গুলোও শীঘ্রই সরে যাবে। একটা গুড নিউজ আছে।’
‘তার আগে বল তুই আসবি কবে?’
‘যদি আমার ইচ্ছেটা পূরণ হয় তবেই আসবো খুব দ্রুত!’
‘ইচ্ছে কী? আর গুড নিউজ কি সেটা বল।’
‘দু’টোই এক।’
‘বলে ফেল।’
‘আমি বিয়ে করব। একটি মেয়েকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে।’
‘আমেরিকান মেয়ে। একদম চলবে না। বাবা-মা ক্ষেপে যাবেন।’
‘নাহ! মেয়ে বাংলাদেশি।’
‘নাম?’
‘ইসানা ইবনাত।’
নাম শুনে শালিনী বিড়বিড় করে বলে ভাবতে থাকে। ইভান অপরপ্রান্তে বলছে,
‘রাদ কোম্পানির পি.এ পোস্টে কাজ করছে। আমাদের কোম্পানির সঙ্গে ডিল করার জন্য আমেরিকায় এসেছে। প্রথম দেখায় পছন্দ হয় ওঁকে।’
শালিনী কপাল কুঁচকে বলল,
‘কই ছবি দে তো ওর।’
‘দেখো পাঠাচ্ছি। আজকে দু’জনে মিলে অনেক ঘুরাঘুরি করেছি। তখন কিছু সেলফি তুলেছিলাম। অবশ্য ও তুলতে চাইছিল না। আমি ফোর্স করায় তুলেছে।’ কথা বলতে বলতে তাদের কিছু ছবি গ্যালারি থেকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠায়।
ইভানের সঙ্গে ইসানার একত্রিত ছবি দেখে চোখ চড়কগাছ শালিনীর। বিস্মিত হয়ে বলল,
‘এটা তো তোর প্রাক্তন স্ত্রী ইসানা!’
শুনেই ইভানের ঠোঁটের হাসিটুকু মিলিয়ে যায়। বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠে। উৎকণ্ঠে বলল,
‘কী? তুমি শিওর আপু?’
‘হ্যাঁ! শিওর। এটাই ইসানা। যাকে রেখে তুই পালিয়েছিলি।’
‘এটা হতেই পারে না। কিছুতেই না!’ উত্তেজিত হয়ে চেঁচিয়ে বলল ইভান। মনে পড়ে ইসানার বলা সেই কথাটি। যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল সে নিজে!
_
সকালে..

প্রচন্ড জোর বেগে গাড়ি চালাচ্ছে ইভান। চেহারায় ফুটে আসে তীব্র রাগ! রাগের চোটে তিরতির করে ঠোঁট কাপছে। শালিনীর মুখে ইসানার বিষয়ে সব শুনে ক্রোধে সারারাত সিগারেট ও মদের নেশার ঘোরে ছিল। নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছে রাতটি। সে কিছুতেই ইসানাকে প্রাক্তন স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে পারছে না। বিয়ের পর ইসানার নাম তো দূর চেহারা দেখার আগ্রহ জাগেনি তার মধ্যে। ভোরবেলায় চলে এসেছিল এয়ারপোর্টে।
সেখানের পরই যাত্রা শুরু হয় তার নতুন জীবনের। ভুলে গিয়েছিল তার অতীত। ডিভোর্স পেপারে তার সাইন দিয়েই পাঠিয়েছিল। ইসানার নাম সহ বাকি সব শালিনী যুক্ত করে দেয়। তার মধ্যে এখন একটিই ক্ষোভ কাজ করছে মাত্রাতিরিক্ত কেন ইসানা তাকে বলেনি সে-ই তার প্রাক্তন স্ত্রী!
মিনিট কয়েক পর গাড়ি হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ায়। পার্ক না করেই ছুটে আসে হোটেলের ভেতরে। ইভানের অনুমান অনুযায়ী এখন ব্রেকফাস্ট করার সময়। তাই সে ক্যান্টিনে আসে। হনহনিয়ে আসতে দেখে অনেকেই তার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেখানেই তাদের সকলকে নাস্তা করতে দেখতে পায়। ইভানের নজর ইসানার ওপর পড়তেই ক্রোধ যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। দ্রুত বেগে এগিয়ে এসে বাহু ধরে তুলেই কষিয়ে চড় দিলো ইসানার গালে।
সকলে ইভানের এমন আচরণে দাঁড়িয়ে যায়। হতভম্ব তারা! জটিল প্রশ্ন সবার মনে। আসেপাশের লোকজনও তাদের পানে তাকিয়ে রয়েছে। হঠাৎ এরূপ ঘটনা আশাহত! রাদের কপালে তীব্র থেকে তীব্র রাগ এসে ভর করে। বিনাকারণে ইভানের এমন সিনক্রিয়েট অস্বাভাবিক! ইসানা ঘাড় কাত করে দৃষ্টি নত করে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রয়। ইভান উগ্রভাবে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘কেন বলোনি তুমি আমার প্রাক্তন স্ত্রী! কেন?’
এতক্ষণে তাদের প্রশ্নের জবাব মিলে। তবে থাপ্পড় দেওয়ার বিষয়টিতে বিরক্ত হয় ইভানের ওপর।
‘কথা বলছো না কেন?’ আরো জোরে চোঁচালো ইভান।
ইসানা টলমল অশ্রুসিক্ত চোখে ইভানের পানে চেয়ে তাচ্ছিল্য হাসে। বলে,
‘কী বলতাম? আমি আপনার প্রাক্তন স্ত্রী। যাকে রেখে পালিয়েছিলেন। চিনতে পেরেছেন আমাকে? এসব বলতাম আপনাকে?’ এতটুকু বলে গাল বেয়ে নোনাজল গুলো মুছে নেয়। ফের বলে,
‘কাল বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার পর আপনি অস্বীকার করেন। তারপর আর কীভাবে বলব আমি আপনার প্রাক্তন ছিলাম! না বলার কারণে আমার ওপর অনেক ক্ষোভ জমেছে আপনার। একবার ভাবুন তো আমার কতটা ক্ষোভ জমেছে এটা জেনে আপনি আমাকে রেখে পালিয়েছেন। অস্বীকার করেছেন পবিত্র কালেমা পড়ে বিয়ে করা স্ত্রীকে! প্রথম দিন আপনাকে দেখে, আপনার নাম শুনে বুঝেছি আপনি আমার প্রাক্তন…। নিজেকে শক্ত রেখেছি। মানিয়ে চলার চেষ্টা করেছি। আমার ভাগ্যটা দেখুন। যে আমাকে প্রথমে অস্বীকার করেছে। সে এক দেখাতেই আমাকে পছন্দ করে ফেলেছে।’ ইসানা থেমে উল্টোহাতে দু’চোখের পানি মুছে ফেলে। ইভান তখনো রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে আছে ইসানার ওপর। ইসানা স্বাভাবিক হয়ে বলে,
‘যে তার পূরানো অতীতকে অস্বীকার করে, সে-ই মহামূল্যবান ব্যক্তির ওপর আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি বহু আগেই। মাফ করবেন সত্যিটা লুকানোর জন্য।’ দু’হাত জোর করে বলে ইসানা ক্যান্টিন ত্যাগ করে।
মিনিট কয়েক পিনপতন নীরবতা ঘিরে ধরে তাদেরকে।
আচমকা লিসা ইভানের নিকট এগিয়ে এসে সজোরে গালে একটি চ’ড় নিক্ষেপ করে। ইভান গালে হাত রেখে ক্রোধ চোখে লিসার পানে তাকায়। লিসা তেজি কণ্ঠে আঙুল তুলে বলে,
‘এটা আপনি ডিজার্ভ করেন, ইসানা আপু না! ভদ্র সমাজে এখনো আপনার মতো কিছু অমানুষ রয়েছে। ওপর দিক থেকে তাদের একদম চেনা যায় না।’ লিসাও বাহিরের দিকে অগ্রসর হয়। ইভানের নিশ্বাস তীব্র হয়ে আসে রাগের বশে।
লিসার যাওয়ার পানে ক্ষোভিত চোখে তাকিয়ে আছে।
রাদ এক কদম ইভানের সামনে রেখে মুরাদের পানে চেয়ে ক্রোধান্বিত কণ্ঠে শুধালো,
‘ওনাকে জানিয়ে দে! ইসানার ধারেকাছেও যেন আসতে না দেখি। এবার ছেড়ে দিলেও, পরের বার শেষ রক্ষে হবে না। গ্রিন কোম্পানির সব ডিল ক্যান্সেল!’
.
.
.
.
#চলবে?

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_২০
#সুমাইয়া_মনি

ডিল ক্যান্সেল করার কারণে ইভানের ওপর রেগে আছে কোম্পানির মালিক। তিনি ইভানকে নির্দেশ দেয় যেভাবেই হোক এ ডিল যেন ক্যান্সেল না হয়। শক্তপোক্ত মুখে মালিকের কথা শুনলেও সে নিজেও চাইছে না রাদের কোম্পানির সঙ্গে ডিল করতে। কিন্তু বসের আদেশ তাকে মেনে নিতে হবে বাধ্যতামূলক। রাদকে বহুবার কল দিয়েছে। কিন্তু রাদ কল পীক করেনি। বিক্ষিপ্ত রাগ নিয়ে ইনগোর করছে।
রাতের ফ্লাইটে তারা বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। কাপড়চোপড় গোঁজ গাঁজ করছে সকলে। ইসানা রুমেই রয়েছে। আজ সে কষ্ট অনুভব করছে না। বরঞ্চ তার হৃদয়ে শান্তি অনুভব করছে। হয়তো বেশি আঘাত সইতে সইতে মন ধীরেধীরে পাথরে পরিনত হচ্ছে।
ইমরান ইভানের ওপর প্রচণ্ড ক্ষেপে রয়েছে। শুধু পারছে না রাগ বাহিরে বের করতে। ইসানার জন্য মন জ্বলছে। ফ্লাইটে বসে কথা বলবে ভেবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখে কিছুক্ষণের জন্য।
.
অনবরত ফোন বাজছে। রাদ ফোনের পাশে শান্তভাবে বসে রয়েছে। ক্যান্টিনের ঘটনাটি পুনরাবৃত্তিতে আওড়াচ্ছে। মাথা থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না। আমেরিকায় আসার আগের কথা তার মনে উঠছে। ইসানা চেয়েছিল না আমেরিকায় আসতে। তার কারণে আসতে হয়েছে। এখন নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। যদি তাকে না আনতো তাহলে হয়তো তাকে এমন হেনস্তা ও কষ্ট পেতে হতো না। না আসতো তার অতীত সামনে! এসব ভেবে চোখজোড়া বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
পাশে তাকাতেই দেখে ফোন তখনো বাজছে। প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে রাদ ফোন পীক করে। এক প্রকার খেঁকিয়ে বলে,
‘নেক্সট টাইম কল দিলে আমার চেয়ে খারাপ জগতের কেউ হবে না।’ বলে ফোন রেখে দেয়। ইভান বলার সুযোগটুকু পায় না। রাগ হয় তারও। তবুও নিজেকে শান্ত স্বাভাবিক রাখে।

রাতে এক সঙ্গে তারা এয়ারপোর্টে পৌঁছায়। সকলের সঙ্গে আসলেও মুখ দিয়ে একটি বাক্যও বের করেনি ইসানা। অতি শোকে আজ সে পাথর। এক ধ্যানে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। প্লেইন উঠতে আরম্ভ করে। ইসানার পাশে বসেছে লিসা। লিসা নিজেও ইসানাকে একা ছেড়ে দেয়। নিজ থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করবে ভেবে লিসা ইসানাকে বিরক্ত করে না। তবে মনে মনে কষ্ট অনুভব করছে ইসানার জন্য। তার মধ্যে ইসানার প্রতি হিংসা, ক্ষোভ কোনোটিই এখন আর নেই। সব উবে গেছে।

কয়েক ঘন্টা বাদে তারা বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। রাদ এয়ারপোর্টে থেকেই মামাবাড়ি যাওয়ার আগ্রহ পোষণ করে রাদের নিকট। রাদ না করতে পারে না। যেতে দেয়। ইসানা টেক্সি নিয়ে মামাবাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। রাদ, লিসা, মুরাদ নিজেদের বাড়ি চলে আসে। হঠাৎ করেই ইসানাকে এবাড়িতে দেখে সুরভী খাতুন কিছুটা অবাক হয়।
ইসানা ভাইবোনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে মামির কোলে মাথা রাখে। চোখ জোড়া বন্ধ করতেই অনবরত পানি জড়ছে। কয়েক ঘণ্টা নিজেকে আঁটকে রাখলেও এখন আর পারছে না। বাঁধভাঙা পানি নিজ গতিতে বর্ষিত হচ্ছে। সুরভী অবাক হয়। কিঞ্চিৎ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘বলবি না কী হয়েছে?’
ইসানা মামির কাছে পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করে। আঁখিযুগল তার এখনো বন্ধ। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইসানার মাথায় হাত চালিয়ে বলল,
‘নিজেকে আরো শক্ত কর ইসানা। জীবনের লড়াই সবে শুরু। তোকে যে আরো লড়তে হবে। এ যাত্রায় হার মেনে নিলে চলবে না।’
‘আমি পারছি না মামি।’ অতি কষ্টে ভাঙা গলায় বলল ইসানা।
‘আল্লাহ ভরসা! একদিন তোর কপালে সুখপাখি ঠিক ধরা দিবে।’
‘ক্ষণিকের সুখ আমি চাই না। এর চেয়ে মৃত্যুও মঙ্গলময়!’
‘দ্বিতীয় বার এই বাক্য মুখে আনবি না।’ ধমকের স্বরে বলল।
‘আমি ঘুমাবো মামি। আমাকে একটু ঘুম পাড়িয়ে দেও।’
‘ঘুমা।’ আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ইসানা ধীরে ধীরে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে যাচ্ছে।
.
বাড়িতে এসে রাদ নিজেকে একা অনুভব করে। ইসানা ছাড়া পুরো বাড়ি বড্ড ফাঁকা লাগছে। সব স্থানে কেমন নিরবতা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে। তার প্রাণের টাইসন কোলে উঠে বসে আছে সেই কখন থেকে। এতে তার বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই। সে ভাবছে শুধু ইসানাকে নিয়ে। যে ভাবনার প্রতিফলন স্পষ্ট আদলে দেখতে পাচ্ছে টাইসন নিজেও। জড়োসড়ো হয়ে হাতের ওপর মাথা রেখে চুপটি করে বসে রইলো। হয়তো ও ডিস্টার্ব করতে চাইছে না রাদকে। কলিং বেলের শব্দে রাদের চৈতন্য ফিরে। টাইসনকে পাশে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে ডেলিভারি বয়কে টাকা দিয়ে খাবার গুলো ভেতরে নিয়ে আসে। ইসানা নেই বিধায় অনলাইনে খাবার অর্ডার করেছিল। টেবিলের ওপর রেখে ফ্রেশ হতে যায়।
__
সকালে রাদ, মুরাদ ও লিসা এক সঙ্গে ফ্যাক্টরিতে আসে। ইসানা আজ আসেনি। আসবে না সেটিও জানিয়ে দিয়েছে রাদকে। মুরাদ রাদের কেবিনে বসে অল্পস্বল্প বাক্যবিনিময় করছিল।
‘আমি কাল লিসার ব্যবহারে অবাক হয়েছি। শেষে কি-না ইভানকে..। সত্যিই সাহস আছে মনে।’
‘হঠাৎ তার সার্পোট কেন নিলো? তুই লিসাকে কিছু বলেছিস?’
‘কই নাতো!’
রাদ ভাবনার ভঙ্গিমায় তাকায়। মুরাদ বলে,
‘সামনের শুক্রবার ইসানা আপুর মামাতো বোনের বিয়ে। তাকে একেবারে ছুটি দিয়ে দে।’
‘মন চাইছে দিতে, আবার বাঁধা দিচ্ছে। তাকে ছাড়া পুরো বাড়ি শূন্য।’
‘বাড়ি নাকি তুই?’
‘নিজেও!’
‘তোর এই ভালোবাসা তার অব্ধি কবে পৌঁছাবে, আই ডোন্ট নো।’
রাদ চেয়ারে হেলান দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
‘সে কি আমার হবে?’
‘রাদ আমি সোহানার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। দু ঘন্টা পর ফিরবো।’
‘হুম।’
.
গ্রিন কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত! রাদের কোম্পানির ডিল ক্যান্সেল হবার পর দ্বিতীয় ডিল ক্যান্সেল হয়ে যায়। অবশ্য এতে রাদের কোম্পানির কোনো লিঙ্ক ছিল না। ইভানের মালিক তার ওপর প্রচণ্ড ক্ষেপে রয়েছে। যে ভাবেই হোক নতুন কোম্পানির সঙ্গে ডিলের ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো বাকি ক্ষয়ক্ষতি ঘাটতি পূরণ হবে না। বসের কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের কেবিনে প্রবেশ করে। এক রাশ হতাশা নিয়ে আসনে বসতেই হোয়াটসঅ্যাপে শালিনীর কল আসে। ইভান ইনগোর করে ফোন কেটে সাইলেন্ট মুডে রাখে। আপাতত রাগ তার কার ওপর হওয়া উচিত বুঝতে পারছে না। তবে এর মূল জড়িবুটি ইসানা। তাকে দিয়েই সব বিপদের উৎস!
_____
রাতে রাদ বাড়ি ফিরার পর ইসানকে দেখতে পায়। তবে তার খুশি হবার বদলে মন খারাপ হয়ে যায়। কেননা রাদ তাকে বিয়ের আগ অব্ধি ছুটি দিয়েছে। এজন্য ইসানা রাদের বাড়িতে কিছু কাপড়চোপড় নিতে এসেছে। রাদ যখন ড্রইংরুম হয়ে রুমে প্রবেশ করবে তখনই ইসানা পিছন থেকে ডাক দেয়। রাদ ঘুরে দাঁড়ায়। সে বলে,
‘আমি আপনার জন্য রান্না করে রেখেছি।’
‘হুম! আপনি কি এখনই চলে যাবেন?’
‘না আমি সকালে যাব।’
রাদ নজর সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। বিছানার ওপর বসতেই টিভির রিমোটে হাত লেগে টিভি আপনাআপনি চালু হয়ে যায়। রাদ টিভির পানে তাকায় বিরক্ত হয়ে। রিমোট তুলে বন্ধ করতে যাবে এমতাবস্থায় থেমে যায়। একটি চ্যানেলে কোরিয়ার সিরিজ হচ্ছিল। সেখানের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখে রাদের মাথায় বুদ্ধির বাতি জ্বলে উঠে। দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে টাইপিং করে মুরাদকে টেক্সট পাঠায়। তারপর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয়।

সকাল সকাল বাড়িতে ডাক্তার এনে হাজির করেছে মুরাদ। রাদের প্রচণ্ড জ্বর হয়েছে সঙ্গে ঠান্ডাও লেগেছে। ডাক্তার থার্মোমিটার হাতে নিয়ে জ্বর মেপে দেখে ১০৮ ডিগ্রি।
সারাদিন রেস্ট নিতে বলে এবং ঠিকমতো মেডিসিন নিতে বলল। তাকে দেখার জন্য একজন লোক রাখতে বলে তিনি চলে যায়। যাওয়ার আগে এ-ও বলে যায় জ্বর অধিক মাত্রায় বেড়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে। মুরাদ উত্তেজিত হয়। রাদকে গা’ল’ম’ন্দ করে বিভিন্ন কথা বলে,
‘কি এমন কাজ করেছিস হ্যাঁ, এত জ্বর কীভাবে হলো? কাল আমাদের মিটিং রয়েছে অন্য কোম্পানির সাথে আর আজ তুই অসুস্থ হয়ে পড়লি? আন্টি জানলে রক্ষে নেই!’
ইসানা ভয়তে কাচুমাচু হয়ে যায় রেহানা আনসারীর কথা শুনে। দৃষ্টি নত রেখে গভীর ভাবনায় মসগুল সে। রাদ চোখের ইশারায় কথা চালিয়ে যেতে বলে,
‘এখন তোকে কে দেখবে? আপু তো চলে যাচ্ছে। আমাকে করতে হবে প্রজেক্টের কাজ। উফ! সব ঝামেলা এক সঙ্গে এলো।’ বলতে বলতে মাথায় হাত রাখল মুরাদ। রাদ মুরাদের ওভার অভিনয় দেখে মনে মনে বিরক্ত হলো। তখনই ইসানা মিনমিন স্বরে বলল,
‘আমি যাচ্ছি না ভাইয়া। তার সঙ্গে থাকব। খেয়াল রাখব। আন্টিকে প্লিজ বলবেন না জ্বরের বিষয়টি।’
‘সত্যি আপনি থাকবেন?’ হাসিমুখ নিয়ে।
‘হ্যাঁ! মামিকে বলে দিচ্ছি ফোন করে। মানুষের বিপদ তো আর বলেকয়ে আসে না।’
‘আপনার সমস্যা হলে আপনি যেতে পারেন। আমি একাই নিজেকে সামলে নিবো।’
‘বেশি কথা বলতে হবে না আপনাকে। ভাইয়া আপনি তার কাছে থাকুন কিছুক্ষণ। আমি স্যুপ বানিয়ে নিয়ে আসছি।’
‘আচ্ছা! দ্রুত আসবেন।’
প্রতিত্তোরে ইসানা জবাব না দিয়ে চলে যায়। মুরাদ রাদকে আস্তেধীরে বলে,
‘তোর প্লান সাকসেস দোস্ত!’
‘হতেই হবে। কালকে কম কষ্ট পোহাতে হয়নি। ঠান্ডা পানির মধ্যে ত্রিশ মিনিট বসার ফলস্বরূপ আজ আমি জয় হাসিল করেছি।’ হাস্যমুখ দিয়ে বলল।
মুরাদ বিরক্ত বোধ নিয়ে বলল,
‘এত খুশি হওয়ার কিছু নেই। ড্রামার ফল এটি। আর তাকে হাসিল তো করিস নি।’
‘ইনশাআল্লাহ! একদিন করব।’
‘তুই থাক। আমি অফিসে গেলাম।’
‘তু..’ বাকিটা বলার আগে জোরেশোরে হাঁচি দিয়ে ফের বলে,
‘যাহ!’
‘নতুন প্লান করার আগে আমাকে বলিস।’
‘আচ্ছা।’
মুরাদ চলে গেলো। টাইসন পাশে বসে রাদকে দেখছে। কাছে টেনে নেওয়ার পূর্বে দরজায় নক পড়ে। ইসানা ভেতরে প্রবেশ করে।
স্যুপ পাশে রেখে মেডিসিন গুলো বের করে দেয়। বলে,
‘খেয়ে নিবেন। দরকার হলে ডাকবেন আমাকে।’ দরজার দিকে এগিয়ে গেলে রাদের মনঃক্ষুণ্ন হয়। কারণ সে ভেবেছিল ইসানা তাকে খাইয়ে দিবে। রাদ স্যুপের বাটির পানে চেয়ে মৃদু হাসে। বিড়বিড় করে বলে,
‘একদিন আমার এই স্বপ্ন পূরণ হবে।’
_
পরদিন ইভানকে অফিসে ডেকে স্টাফদের সামনে অপমানিত করা হয়। এবং তাকে চাকরি থেকেও বরখাস্ত করা হয়। শুধু ডিল ক্যান্সেলের জন্য এটা করা হয় না। মূল কারণ হলো সে কোম্পানির ডিটেইলস কপি করে অন্য কোম্পানিতে বিক্রি করতো। এবং-কি প্রতি মাসে নিজের একাউন্টে এক লাখ টাকা জমা রাখতো কোম্পানি থেকে লুকিয়ে। বস তাকে পুলিশে দিতে চেয়েছিল ফ্রট কেসের জন্য। কিন্তু মানবতার খাতিরে তাকে শুধু বরখাস্ত করেন। ব্যাংক থেকে সব টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। কার্ডগুলো ক্যান্সেল করে দেন।
অফির থেকে তাকে যে বাড়ি দেওয়া হয়েছিল সেটিও নিয়ে নেওয়া হয়। আপাতত সে পথের ফকির!
হাতের কোটটি খুলে মাঝপথে বসলেন। বিদেশের মাটিতে তার অনেক ফ্রেন্ড রয়েছে। তাদের কাছে সাহায্য চাইতে তার ইগোতে বাজছে। এখন একটি পথ খোলা রয়েছে। বাংলাদেশ! তাকে বাংলাদেশ যেতে হবে। খুব দ্রুত।
.
কান থেকে ফোন সরিয়ে রাদ তৃপ্তির হাসি দেয়। ইভানের অধঃপতনের নিউজটি তাকে প্রচণ্ড আরাম দিয়েছে। এর সব হয়েছে তার কারণে। ইমরানকে আমেরিকায় রেখে গোয়েন্দাগিরি করে ভেতরের খবর সব সামনে এনেছে। ইভানকে পথে নামিয়ে তার বেশ শান্তি লাগছে।
ইসানার জীবন থেকে চারটা বছর কেড়ে নেওয়ার শাস্তি সে পেয়েছে। খাটের সঙ্গে হেলান দিয়ে মাথা রেখে ভাবে আগে কেন তার সঙ্গে দেখা হলো না। তাহলে হয়তো এত কষ্ট পোহাতে হতো না। মাথা উঠিয়ে ইসানাকে ডাকলো রাদ,
‘শুনছেন সানা!’
ইসানা ড্রইংরুমে ছিল। রাদের মুখে সানা নামটি শুনে মিনিট কয়েক চুপচাপ তাকে। হয়তো ভুল শুনেছে। তাই আরেক বার ডাক শোনার অপেক্ষায় আছে।
‘আপনি কি আছেন ড্রইংরুমে?’
ইসানা এগিয়ে যায় দরজার সামনে। রাদ ওঁকে দেখে বলে,
‘গরম পানি হবে?’
‘দিচ্ছি।’ বলে যেতে চাইলে রাদ পিছন থেকে বলে উঠে,
‘সানা নামে আপনাকেই ডেকেছি। আপনি কি রাগ করবেন এ নামে ডাকলে?’
ইসানা ঘুরে না তাকিয়ে ঘাড় হালকা কাত করে বলে,
‘রাগ করব না। সঙ্গে আপু বললে ভালো হবে।’ বলে এগিয়ে যায় রান্নাঘরের দিকে।
রাদের ঠোঁটের হাসি কোথায় যেন উবে গেল। এসে ভর করল এক রাশ হতাশা। বিড়বিড় করে ‘সানা আপু’ আওড়াতেই এক ফালি ক্রোধ এসে জড়ো হয় আদলে। ক্রোধের বশে কি যে করবে বুঝতে পারছে না।

রাতে রাদ খাবার খাচ্ছিল টেবিলে বসে। ইসানা নিজ কক্ষে ছিল। একটু জোরে হাঁকিয়ে ডাকল,
‘সানা শুনুন?’
ইসানা এগিয়ে আসে রাদের নিকট। রাদ বলে,
‘এক কাপ কফি বানাবেন।’ বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে যায়। ইসানা কিছুটা বিরক্ত চোখে রাদের যাওয়ার পানে তাকায়। আপু ছাড়া সানা নামটি তার কাছে বিরক্তিকর!
সব গুছিয়ে রাদের জন্য কফি বানিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। টেবিলে রেখে চলে যাওয়া ধরলে রাদ পিছন থেকে বলে,
‘রিমোটটি দিবেন সানা?’
রাগী নিশ্বাস ফেলে ইসানা। পরপরই রিমোট রাদের দিকে এগিয়ে দেয়। এবারও বাহিরের দিকে এগোতেই রাদ ফের ডাকে ‘সানা’ বলে। ইসানা এবার আর নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারে না। রাগ নিয়ে তেজি কণ্ঠে শুধালো,
‘ভুলে গেছেন আমি আপনার বড়ো? বলা স্বর্তেও আপু বলছেন না কেন?’
ইসানার তেজি কণ্ঠের স্বর রাদকে সুখ দিয়েছে। খুশিতে বিমোহিত! ইসানার নাকের ডগায় তীব্র রাগ দেখতে পাচ্ছে সে। ক্ষুব্ধ রাগ নিয়ে রাদের পানে চেয়ে রয়েছে। পরক্ষণে প্রস্থান করে। রাদ নজর নিচের দিকে সরিয়ে ফিক করে হেসে দেয়। যতবার ইসানার কথা মনে পড়ছে ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসির দেখা মিলছে।
.
.
.
.
#চলবে?

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ