Monday, October 6, 2025







তোমাতে মত্ত আমি পর্ব-১২

#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১২

মিস্টার খানের কোম্পানিতে হামজা বড় অ’ঙ্কে’র টাকা ইনভেস্ট করে এবং নিজের কোম্পানির কিছু অভিজ্ঞ লোক ওখানে পাঠায়। এরপর কয়েকমাসে কোম্পানির অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়। মিস্টার খানের কোম্পানির সবাই তো পরিশ্রম করছেই তার ওপর হামজার কোম্পানির লোকেদের সহায়তায় কাজ আরো সহজ হয়। এর মাঝে মিস্টার খানের কোম্পানি থেকে কোনো প্রকার লভ্যাংশ হামজা দাবি করেনি, যদিও শুরু থেকেই হামজার কিছু পাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। সে শুধু মিস্টার খান কে সাহায্য করতে চেয়েছিলো। এই ই’ন’ভে’স্ট’মে’ন্ট ও ফারহান অহনার সম্পর্কের জন্যে উভয় পরিবারের মধ্যেকার সম্পর্ক আরো দৃ’ঢ় হতে শুরু করে। সবকিছু মোটামুটি স্বাভাবিক হবার পর অহনা ও ফারহানের বিয়ে নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে। ওদের বিয়ের কথা ওঠার পর অনেকদিন হয়ে গেছে, এবার একটা ব্যবস্থা করা দরকার তাই মিস্টার খান ও মিস্টার শাহ্ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে ঘরোয়াভাবে দুজনের শরীয়তমতে বিয়েটা সারবেন। সবটাই হবে ছোটো করে, শুধু একটা ফর্মালিটি হিসেবে। তো মিস্টার শাহ্ এই ব্যাপারে রাজি হন, ফারহান ও অহনাও আপত্তি করেনি। এখনো ফারহানের মাথায় অনেক চি’ন্তা তাই বড় অনুষ্ঠান করে বিয়ের ইচ্ছে ওর নেই। অহনাও ওর সিদ্ধান্তে সম্মান জানিয়েছে। সবকিছু মোটামুটি ঠিকঠাক, যেহেতু ঘরোয়াভাবে বিয়ে তাই বিয়েটা ২-১ দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। ঘরোয়া হলেও যারা আসবে তাদের জন্যে রান্নার দায়িত্ত্ব আলফা নিয়েছে, তো অবসর সময়ে মিসেস খানের সঙ্গে বসে খাবার মেন্যু নিয়ে আলোচনা করে নেয় ও..

“এটা আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করার কি আছে আলফা? তুমিই নিজের ইচ্ছেমতো কিছু বানিয়ে নাও”

“না আন্টি, আপনি যা বলবেন তাই হবে। শত হলেও আপনার ছেলের বিয়ে হচ্ছে তাই মেন্যু আপনার পছন্দেরই হবে”

“সে কি করে হয়, আচ্ছা তুমি বরং ফারহানকে জিজ্ঞাসা করো ও কিভাবে কি চায়”

“আমি ফারহানকেই প্রথমে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আন্টি, কিন্তু ও একই কথাই বলেছে। আপনার পছন্দই ওর পছন্দ”

এ কথা শুনে মিসেস খান আলফাকে নিজের মতামত জানালেন, কিভাবে কি খাবার বানালে ভালো হবে তা বলে দিলেন এবং আলফাও সবটা লিখে নিলো..

“আমাদের বাড়িতে বেশি মানুষ আসবে না, তোমার আংকেলের পরিচিত কিছু মানুষ আর আমাদের কয়েকজন আত্মীয় আসবে তাও পরে। তুমি অল্প করেই খাবার বানিও”

“আপনি নি’শ্চি’ন্ত থাকুন আন্টি। যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই আমি সব করে নেবো”

“আলফা, একটা কথা বলবো মা?”

“হ্যাঁ, বলুন!”

“বলছি, অনেকদিন তো হলো তুমি বাড়িতে আছো।এবার ফারহানের বিয়েটা হয়ে গেলে তোমাকে আর ঘরে বসে থাকতে হবে না। তুমি বরং আবার চাকরি শুরু করো”

“কেনো আন্টি! বাড়িতেই তো ভালো আছি আমি। আপনাকে সময় দিচ্ছি, এছাড়া বাড়ির কতো কাজকর্ম আছে বলুনতো। আমি চাকরিতে গেলে কিভাবে হবে?”

“বাড়ির কথা, আমাদের কথা ভাবতে গিয়ে তুমি নিজে নিজের কথা ভুলতে বসেছো সে খেয়াল আছে তোমার?”

মিসেস খানের কথায় কিছু সময় চুপ রইলো আলফা, এরপর মুখে স্মিত হাসি এনে বললো..

“আমাকে নিয়ে ভাববেন না আন্টি, আমি একদম ঠিক আছি আর যতদূর রইলো চাকরির কথা। করেছি তো অনেকদিন, আবার যদি কখনো সুযোগ হয় তখন না হয় সময় সুযোগ বুঝে করবো। তবে এখন নয়”

মিসেস খান আলফার হাতটা ধরে বললেন..

“আলফা, একটা কথা মনে রেখো সবসময়। তুমি যে সিদ্ধান্তই নেবে তাকে আমি আর ফাহাদের বাবা সবসময় তোমার পাশে থাকবো। তোমার মনে কোনো কথা থাকলে আমার সাথে শেয়ার করবে কেমন?”

“অবশ্যই আন্টি!”

আলফার প্রতি মিস্টার ও মিসেস খানের এক অন্যরকম ভালোবাসা রয়েছে, বড় ছেলের মৃ’ত্যু’র পর তা যেনো আরো দ্বি’গু’ণ বেড়ে গেছে। আলফাকে তারা এখন বৌমা নয় বরং নিজের বড় মেয়ে মানেন। বিয়ে মানেই টুকটাক কেনাকাটা করতেই হবে, তাই অহনা ফারহানকে মার্কেটে যাচ্ছে নিজের আর ওর জন্যে বিয়ের ড্রেস কিনতে। মিস্টার শাহ্ মেয়েকে বলেছেন হামজার থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্যে, তার জন্যেই অহনা হামজার কাছে এসেছে তো হামজা ক্যাশ বের করে দেয়..

“ক্যা’শ কেনো?”

“ড্যাড আমায় বারণ করেছে তোকে ক্রে’ডি’ট কা’র্ড তোকে দিতে”

“ভাইয়া, আমার বিয়ের শপিং এটা! একটু ইচ্ছেমতো কেনাকাটা করবো না?”

“না! এখন থেকেই একটু হিসেব করে চলতে শেখ”

“দুদিন পর অন্যের বাড়িতে চলে যাবো তখন দেখবি মনে পড়বে আমার কথা। যে আমাকে ইচ্ছেমতো বিয়ের শপিংও করতে দিসনি তুই”

“তুই গেলে বাঁচা যাবে, অন্তত হুটহাট আমার ক্রে’ডি’ট কা’র্ড থেকে টাকা চু’রি হবেনা”

ভাইয়ের কথা শুনে অহনা মুখ ভা’র করে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছিলো, তখনই হামজা বলে ওঠে..

“শোন অহনা..তোরা যখন যাচ্ছিস, তোর ভাবীকেও তোদের সঙ্গে যেতে বলিস”

ভাইয়ের কথা শুনে ঘুরে তাকালো অহনা..

“কিন্তু ভাইয়া, তুই তো এখনও বিয়েই করিসনি তাহলে আমার ভাবী আসবে কোত্থেকে”

“ই’ডি’য়’ট!;ফারহানের ভাবী কি তোর ভাবী নয়?”

“আরে হ্যাঁ, ভুলে গেছিলাম ভাইয়া। আসলে এখনও ভাবী ডাকটার অভ্যাস হয়ে ওঠেনি তো, এখনও আলফা আপুই বলি। স’রি স’রি আর হ্যা তুই না বললেও আমি ভাবীকে বলতাম আমাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্যে”

“হয়েছে, যা এবার!”

ভাইয়ের সঙ্গে কথা শেষ হতেই অহনা সোজা গিয়ে আলফাকে ফোন করে, যদিও আলফা শুরুতে ওদের সঙ্গে যেতে চায়নি কিন্তু অহনা অনেক জো’রা’জু’রি করলো আবার ফারহানও বললো তাই ওদের মন র’ক্ষা’র্থে আলফা সঙ্গে যেতে রাজি হলো। অহনার এই ধরনের কেনাকাটা সম্পর্কে বিশেষ আইডিয়া নেই তাই ও আলফার বেছে দেওয়া জিনিসই কিনে নিলো আর ফারহান শুধু একটা পাঞ্জাবি কিনেছে। এর ফাঁকে আলফা নিজের মা বাবার জন্যেও কিছু জিনিস কিনলো। কেনাকাটা শেষে বাড়ি ফেরার পথে আলফা নিজের বাসার কাছাকাছি একটা জায়গায় ফারহানকে গাড়ি থা’মা’তে বললো..

“ফারহান, আমাকে এখানেই নামিয়ে দাও। আমি একটু বাসায় যাবো”

“ভাবী, তাহলে আমি কি তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো এখানে?”

“এখানে আর কি অপেক্ষা করবে? তোমরাও চলো আমার সঙ্গে বাসায়”

“না ভাবী, আজ থাক। আজ আর বাড়িতে যাবো না, আমি বরং এখানেই থাকছি”

“আমার তো দেরি হবে”

“তাহলে আমরা চলে যাবো?”

“হ্যা, বাসায় চলে যাও আর হ্যা আন্টিকে বলে দিও আমার বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হতে পারে”

“ডো’ন্ট ও’রি ভাবী, আমি আম্মুকে বলে দেবো। তুমি যতক্ষণ ইচ্ছে তোমার বাড়িতে সময় কা’টা’ও”

“ইনজয় ইউর টাইম আপু..ওহ স’রি, ভাবী”

অহনার কথা শুনে হাসলো আলফা, ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো..

“এতো কনফিউসড হবার দরকার নেই, আমাকে ভাবী বা আপু যেভাবে ডাকতে তোমার কমফোর্ট লাগে সেভাবেই ডেকো”

হ্যাঁ সূচক মাথা দুলিয়ে আলফার কথায় স’ম্ম’তি জানালো অহনা। আলফা নেমে গেলো আর ফারহানও গাড়ি স্টা’র্ট দিলো। প্রথমে অহনাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে এরপর বাসায় যাবে। আলফার মা কদিন আগে আজ ফোন করেছিলো কিন্তু আলফা আসতে পারেনি। আজ দুটো উদ্দেশ্যে এখানে এসেছে আলফা, এক মায়ের সঙ্গে দেখে করতে এবং ফারহানের বিয়ের দাওয়াত দিতে কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই আজও বড় ফুপুকে দেখেই মুড অ’ফ হয়ে এলো আলফার। উনি তখন চা খাচ্ছিলেন, আলফা দেখা মাত্র বলে উঠলেন…

“আরে আলফা, এতদিন পর এলি! আজকাল তো এই বাড়িতে আসতেই দেখা যায়না তোকে”

“বাড়িতে ব্যস্ততা থাকে, তাই আসার সময় হয় না”

“ভালোই দায়িত্ব নিতে শিখে গেছিস দেখছি, যাক ভালো ভালো। এই দায়িত্বটা যদি আরো আগে নিতে শিখতিস তাহলে..”

ফুপু পুরো কথা শেষ করতে পারেনি তার আগেই আলফার মা চলে আসেন, কথার ফাঁ’ক দিয়ে মেয়েকে নিয়ে আসেন নিজের ঘরে। মায়ের ঘরে এসেই দুটো ব্যাগ এগিয়ে দিলো আলফা। ব্যাগদুটো হাতে নিয়েই মেয়ের দিকে তাকালেন আলফার মা..

“কি আছে এতে?”

“এগুলো তোমার এর আব্বুর জন্যে”

“এগুলো আবার কেনো এনেছিস?”

“আসলে ফারহানের বিয়ের জন্যে টুকটাক কেনাকাটা করতে গেছিলাম, সেখানে গিয়ে মনে পড়লো অনেকদিন হলো তোমাদের জন্যে কিছু কিনি না। তাই ভাবলাম আজ নিয়ে আসি”

“ভালো করেছিস!”

ব্যাগদুটো রেখে দিলেন আলফার মা, বিছানায় বসলো আলফা। খা’নি’ক’টা বি’র’ক্তি’র সুরেই মাকে প্রশ্ন করলো..

“একটা কথা বলোতো আম্মু, আজকাল বড় ফুপু কি এই বাড়িতে পা’র্মা’নে’ন্ট’লি থাকতে শুরু করেছেন?”

“আর বলিস না, ছেলের বউয়ের সঙ্গে ঝ’গ’ড়া লাগলেই তোর বাবার কাছে ফোন করে কা’ন্না’কা’টি করে আর তখন তোর বাবাই বলে এখানে চলে আসতে”

“মানে কি! ঝগড়া লাগলেই এখানে আসতে হবে? নিজের মেয়ের বাড়িতেও তো যেতে পারে”

“স্বভাব জানিস তো ওনার, আচ্ছা বাদ দে ওসব। তোর বাড়ির কথা বল, ওখানে সব ঠিক আছে তো?”

এরপর মেয়ের সঙ্গে শুরু করলেন কথাবার্তা, মেয়ের সঙ্গে অনেকদিন পর মন খুলে একটু কথার সুযোগ পেয়েছেন আলফার মা। আলফাও অনেকদিন পর মায়ের সঙ্গে দেখা করে এবং কথা বলে অনেক খুশি। কিছুক্ষণ পে আলফাকে ওর মা নাস্তা দিলেন, আলফা যখন এসেছে তখন ওর বাবা বাসায় ছিলেন না, উনি এসেই মেয়েকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন..

“কখন এসেছো?”

“এইতো ঘন্টাখানেক আগে এসেছি, আব্বু। তুমি উই সন্ধ্যাবেলা কোথায় গেছিলে?”

“একটা কাজ ছিলো, সেটাই মে’টা’তে গেছিলাম”

এরই মাঝে আলফার ফুপু বলে উঠলেন..

“কি রে আলফা, এসেই তো মায়ের সঙ্গে ঘরে চলে গেলি। এতদিন পর এসেছিস, ফুপুর সঙ্গে বসে একটু কথা বললেও তো পারিস”

“ক্লা’ন্ত হয়ে গেছিলাম ফুপু, তাই আম্মুর ঘরে একটু বি’শ্রা’ম করছিলাম”

তখনই আলফার ফোন আসে ও বাড়ি থেকে, কল রিসিভ করেই খাবার টেবিল থেকে উঠে একটু দূরে গিয়ে দাড়ায় আলফা। মিসেস খান ফোন করেছেন কোনো একটা দরকারে, আলফা কথা বলতে ব্যস্ত তখনই ওর ফুপু মাকে বলে..

“বুঝলে, তোমার মেয়ের ভা’গ্য আসলেই খা’রা’প। নাহলে এই বয়সেই এমন পরিণতি তো আমাদের বংশের কারো হয়নি”

বড় ফুপুর কথা শুনে আলফার মা আশ্চর্য চোখে তাকালেন, আলফা ওখানে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে দেখার পরও ওর ফুপু এসব কথা তুললেন যেনো মনে হচ্ছে উনি ইচ্ছে করেই আলফাকে কথাগুলো শোনাতে চাইছেন..

“আপা, আলফা এখানেই আছে। চুপ করুন আপনি!”

“ভুল কি বললাম আর এটা ওর থেকে লুকানোর কি আছে? এটাই তো সত্যি। আচ্ছা তুমিই ভেবে দেখোতো, বিয়ের পরই তোমার মেয়ের জামাই চলে গেলো আবার যাও ফিরলো মেয়ে তোমার দুই মাসও সংসার করতে পারলো না আর এই বয়সেই বি’ধ’বা হলো। এমন পো’ড়া ক’পা’ল আমাদের বংশের কারো কি আছে?”

“আপা, আপনি দয়া করে চুপ করুন। আমার মেয়েটার জীবনে এমনিই ঝ’ড় চলছে আপনি আর দয়া করে ওর দুঃখ বাড়াবেন না”

“শোনো আলফার মা, আমাকে চুপ করিয়ে রাখলে তো হবেনা। এই একই কথা আমাদের বাকি আত্মীয় স্বজনরাও বলছে, এই বয়সে মেয়ে বি’ধ’বা হয়েছে। আজ যদি ওর একটা সন্তান থাকতো তাও কথা কিন্তু তাও নেই। ওর ভবিষ্যৎ একেবারেই শে’ষ হয়ে গেছে”

“ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনাকে বা অন্য কাউকে ভাবতে হবেনা আপা! আমরা এখনও বেঁ’চে আছি আর যা হয়েছে তাতে ওর ভা’গ্যে’র দো’ষ নেই। কারো মৃ’ত্যু তো আর বলে কয়ে আসেনা”

“আমাকে বলে লাভ নেই, তুমি নিজেও জানে আমি যা বললাম তার একটা কথাও ভুল নয়”

এরই মাঝে আলফা কথা শেষে ওর মায়ের কাছে এসে বলে..

“আম্মু, অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। আমি আজকে আসি”

“সে কি! আরেকটু থেকে যা”

“না আম্মু, বাড়ি গিয়ে আন্টিকে ওষুধ দিতে হবে। আরো কাজ আছে কিছু। আজকে আসি, পরে সময় হলে আবার আসবো”

আসলে ফুপুর সবগুলো কথাই শুনেছে আলফা, যেগুলো তী’রে’র মতো বিঁ’ধে’ছে ওর বুকে। এগুলো শোনার পর ওখানে আর এক মুহূর্তের জন্যেও দাড়ানোর ইচ্ছে নেই ওর। ফুপু আরো কথা শোনাতে পারেন ভেবেই আলফার মা ও তাই আর মেয়েকে বাঁ’ধা দিলেন মা। হাতটা ধুয়েই কোনোরকম পার্সটা হাতে তুলেই ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো আলফা। ওদিকে, অহনা হামজার কাছে কোনো একটা কাজে এসেছিলো কিন্তু হামজা ঘরে নেই। হাতে বিশেষ কাজ না থাকায় হামজার রুমেই বসলো অহনা, ফোন স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ এক সাইডে রাখা ক্যানভাসের দিকে নজর পড়লো অহনার। কালার প্যালেট, রং সব এখনও ওখানেই। দেখেই বোঝা যাচ্ছে হামজা এখনও এগুলো ব্যবহার করছে..

“ভাইয়া একটা পেইন্টিং করতে তো এত সময় নেয়না, অথচ এই ক্যানভাস এত্তদিন ধরে এখানেই পড়ে আছে। কি আঁকছে এতোদিন ধরে? দেখি তো..”

কৌ’তূ’হ’ল’ব’শ’ত বিছানা থেকে উঠে ক্যানভাসের কাছে আসে অহনা। ওপরের পাতলা কাপড়টা সরাতেই ক্যানভাসে আঁকা ছবিটার দিকে তাকিয়ে চ’ম’কে ওঠে। ক্যানভাসে হা’সৌ’জ্জ্ব’ল একখানি পরিচিত মুখ দেখে অবাক হয় অহনা। শুরুতে মনের ভুল ভাবলো কিন্তু আরেকদফা ভালোভাবে দেখার পর বুঝলো এটা ওর মনের ভুল নয়..

“এটা তো..”

ছবি ওপর আলতো করে হাত বুলালো অহনা, নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে বসলো এটা এখানে কেনো? মেয়ের বিয়ে প্রসঙ্গে স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসেছেন মিস্টার সহজ আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন..

“মিস্টার খান তেমন আ’ড়’ম্ব’র চাইছেন না, তাই আমাদের পক্ষ থেকে কাউকে দাওয়াত দিচ্ছিনা। পরিচিত ৩-৪ জন আত্মীয় যাদের দাওয়াত না দিলেই নয় তাদের আসতে বলা হয়েছে”

“হ্যাঁ, তাই ভালো করেছো। এখন অতো হৈ হু’ল্লো’রে’র দরকার নেই। দরকার পড়লে ওসব পরে করা যাবে, কি বলিস হামজা?”

“আমারও তাই মনে হয়, এটাই বেটার হবে।আমাদের দুই পক্ষকেই ব্যা’লে’ন্স করে চলতে হবে। তারা যেভাবে চাইছে তার প্রতিও আমাদের নজর দিতে হবে”

“সেটাই! আমি মিস্টার খানের সঙ্গে কথা বলে সময় ঠিক করে নিয়েছি। ওনারা জানিয়েছেন কখন আসবেন, আমরা সেই হিসেবেই আয়োজন করবো আর হ্যাঁ হামজা তুই এক কাজ করিস তো। বিয়েতে ফারহানকে গিফট্ দিতে হবে, তুই কাল একটু সময় করে গিয়ে ওর জন্যে কিছু কিনে আনিস”

“আমি কি কিনবো?”

“তোর ইচ্ছেমতো কিছু আনিস, সেটাই দেওয়া হবে”

“ওকে, আমাকে একটু সময় দাও। ভেবে দেখছি কি আনা যায় ফারহানের জন্যে”

হামজা উঠে আসতে যাচ্ছিলো তখন পকেট থেকে একটা এনভেলাপ বের করে টেবিলের ওপর রেখে মিস্টার শাহ্ হামজাকে বলেন..

“এটা নিয়ে নাও”

হামজা প্রথমে ভেবেছিলো কোনো কাজের জিনিষ তাই হাতে তুলে নিলো কিন্তু এনভেলাপ খুলে কতগুলো মেয়ের ছবি দেখে ভ্রু কুঁ’চ’কে নিলো হামজা..

“এগুলো কি?”

“সময় দিলাম তোমাকে। এগুলো এখন থেকে দেখা শুরু করো। অহনার বিয়েটা হয়ে গেলে তুমি এখান থেকে যাকে পছন্দ করবে তার সঙ্গেই তোমার বিয়ে দেবো আমি”

“ড্যাড! এগুলো কি ছে’লে’মা’নু’ষী? তুমি আমাকে এভাবে লাইফ পার্টনার চুজ করতে বলছো? ড্যাড, লাইফ পার্টনার চুজ করাটা অনলাইনে চুজ করে ড্রেস কেনা নয় যে যেটা ভালো লাগবে অ’র্ডা’র করে দেবো”

“তোকে এতকিছু ভাবতে হবেনা, এদের সবাই হাই ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে এবং এদের বাবারা আমার পরিচিত। তুই শুধু পছন্দ করবি”

“আমার মনে হয় আপাতত আমাদের অহনার ব্যাপারেই ফোকাস করা উচিত, ওর ব্যাপারটা এখনও শেষ হয়নি!”

হামজা এনভেলাপটা টেবিলের রেখে দিয়ে রুমে চলে গেলো। ছেলের এই কা’ন্ড দেখে মিস্টার শাহ্ স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন..

“তোমার ছেলেকে দেখেছো? দিনদিন আরো রু’ঢ় প্রকৃতির হয়ে যাচ্ছে, বিয়ের কথা শুনলেই ওর স’ম’স্যা”

“আমি বলি কি, দুদিন পর তো মেয়ের বিয়ে। তার আগে হামজার সঙ্গে ঝা’মে’লা করো না তুমি। অহনার বিয়েটা মিটুক তারপর এইসব নিয়ে হামজার সঙ্গে কথা বলা যাবে”

“এই ওই বাহানায় আজ এতগুলো দিন কে’টে গেলো, হামজার এবার বিয়ের বিষয়টা নিয়ে একটু ভাবা উচিত”

অহনা অনেকক্ষণ যাবত খুঁ’টি’য়ে দেখছে ছবিটাকে, নাহ! কোনো স’ন্দে’হ’ই নেই এই ছবির ব্যাপারে। এদিকে রুমে ঢুকতেই অহনাকে ক্যানভাসের ছবিটা দেখতে দেখে হামজা কিছুটা অ’প্র’স্তু’ত হয়ে ওঠে, দ্রুত পায়ে গিয়ে অহনাকে সরিয়ে ক্যানভাসটা আবার কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। তাতে কি? অহনা তো যা দেখার দেখে নিয়েছে..

“কি এখানে করছিস তুই অহনা!”

“ভাইয়া! এটা আলফা ভাবীর ছবি না?”

“তোকে কতদিন বলেছি আমাকে জিজ্ঞাসা না করে আমার জিনিসে হাত দিবি না, কতদিন মানা করেছি?”

“আমি যা বললাম সেটা কি ঠিক?”

“ভুল দেখেছিস তুই!”

“ভুল দেখেছি? সর তো, তাহলে আরেকবার দেখতে দে”

“অহনা! মানা করলাম কিন্তু তোকে তাও জে’দ দেখাচ্ছিস কেনো? ফারদার আমার জিনিসে আমার অনুমতি ছাড়া হাত দিবি না”

“বেশ, ধরবো না আর তোর কোনো জিনিস কিন্তু তার আগে আমাকে এটার উত্তর দে”

“আমার কিছু বলার নেই”

হামজা ব্যালকনির দিকে যেতে যাচ্ছিলো তখনই অহনা ওর পথ আটকে দাড়ায়..

“বলার নেই মানে? আমি ভালোভাবেই দেখেছি এটা আলফা ভাবীর ছবি আর তার ছবি তোর ক্যানভাসে কেনো? এটা তো তুই নিজেই এঁকেছিস তাইনা?”

“তুই এখানে কোন কাজে এসেছিলি সেটা বল, আর যদি কিছু বলার না থাকে তাহলে যা। আমার কাজ আছে”

“ভাইয়া, তুই আমাকে যাই বল কিন্তু তুই কেনো আলফা ভাবীর ছবি এঁকেছিস তা না বললে আজ আমি এখান থেকে যাবো না”

“অহনা..!”

“রা’গ করে লাভ নেই ভাইয়া, আমি যাবো না”

গো ধরে বসলো অহনা, সামনে থেকে সরার নামই নিচ্ছেনা। বি’র’ক্ত হচ্ছে হামজা, বহু সময় ধরে চে’ষ্টা’র পর অ’ব’শে’ষে আলফার পেইন্টিংটা সম্পূর্ন করতে পেরেছিলো হামজা। ও চায়নি ক্যানভাসটা কেউ দেখুক কারণ ও জানে কেউ দেখলেই প্রশ্ন করবে কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো হামজা দিতে পারবে না আর দিলেও উত্তরটা লোকে ভালো চোখে দেখবে না!

চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ