#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১১
ফাহাদের মৃ’ত্যু’র পর প্রায় চার মাস কে’টে গেছে, সময় কে’টে’ছে ঠিকই কিন্তু সময় যেনো থেমে গেছে। মিস্টার ও মিসেস খান দুজনেই এখন প্রায়ই অসুস্থ থাকেন, ছেলের শো’ক কা’টি’য়ে উঠতে পারেননি দুজনের একজনও। ফারহান ইদানিং অফিস যাওয়া শুরু করেছে, কিন্তু আগে কখনো সেভাবে ও কাজের ব্যাপারে এগোয়নি বিধায় এখন সব বুঝতে ও হ্যা’ন্ডে’ল করতে বেশ স’ম’স্যা হচ্ছে। কখন কোন সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে সেটাও বুঝতে পারছে না। সবমিলিয়ে সবার প’রি’স্থি’তি এখনও এ’লো’মে’লো। এসবের মাঝেও আলফা যতোটা সম্ভব সামাল দেওয়ার চে’ষ্টা করছে। নিজের শখের চাকরি ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগেই, এরপর মিস্টার ও মিসেস খানের য’ত্ন করা ও বাড়ির কাজকর্ম সামলানোর কাজে লেগে পড়েছে আলফা। চার মাস ধরে এভাবেই চলছে সবটা, আলফা খুব করে চে’ষ্টা করছে সবটা স্বাভাবিক করার। কিন্তু ফাহাদের আ’ক’স্মি’ক মৃ’ত্যু’র ফলে সবটা যে এতো সহজে স্বাভাবিক হবেনা তাই জানে আলফা, এমনকি ও নিজেও এখনও সম্পূর্ন স্বাভাবিক হতে পারেনি। তবুও নিজেকে শ’ক্ত রেখে যথাসম্ভব চেষ্টা করছে বাড়ির বড় বউ হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করার। সন্ধ্যায় ফারহান বাড়ি ফিরেছে, মিসেস খান কে ওষুধ দিয়ে ড্রইং রুমে আসতেই ফারহানকে দেখলো আলফা, ফারহানের চোখেমুখে হতাশার ছা’প। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে আলফা বসলো ওর সামনে..
“অফিসে কিছু হয়েছে?”
পানি টুকু খেয়েই দী’র্ঘ’শ্বা’স ফেললো ফারহান..
“ভাইয়া আর আব্বুর মতো কিছু হ্যা’ন্ডে’ল করতে পারছি না আমি, আই অ্যাম জাস্ট অ্যা ই’উ’জ’লে’স ফেলো। একটা কাজ ঠিকমতো করতে পারছি না”
“কি হয়েছে বলবে তো!”
“অনেকগুলো ডি’ল হাত ছাড়া হয়ে গেছে, গত চার মাসে। আমাদের বড় অঙ্কের ল’স হয়েছে। আজ কোম্পানির মেইন অ্যা’কা’উ’ন্ট চেক করার পর জানলাম হিসেবে গ’ড়’মি’ল। একে তো ডিল হাতছাড়া হওয়ার লস আবার কোম্পানির টাকার হিসেব উল্টোপাল্টা। আমি কিছু বুঝতে পারছি না ভাবী, কিভাবে কি করা উচিৎ কিছুই মাথায় ঢু’ক’ছে না। আব্বুও অসুস্থ, এখন এসব নিয়ে তার সঙ্গে কিভাবে কথা বলবো?”
“আঙ্কেলের সঙ্গে বিজনেসের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করার সময় এখনও আসেনি, ডাক্তার ওনাকে স্ট্রে’স নিতে মানা করেছেন”
“তাইতো কিছু বলতে পারছি না, আব্বু এসব নিয়ে ভেবে যদি আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে! কিন্তু কিছু একটা তো করতে হবে ভাবী, এভাবে চলতে থাকলে তো..”
“টাকার দায়িত্বের যে আছে তিনি কি বললেন?”
“সে তো কিছুই স্বী’কা’র করছে না। আব্বুর অ’নু’প’স্থি’তি’তে সবাই নিজেদের খেয়ালখুশি মতো চলেছে এতদিন। এখন মনে হচ্ছে আমারই ভু’ল হয়েছে, আরো আগে অফিসে যাওয়া উচিত ছিলো তাহলে হয়তো এতো ঘটনা ঘটতো না”
“চিন্তা করো না ফারহান, ব্যবস্থা একটা না একটা হয়েই যাবে। তুমি এক কাজ করো, যাদের সাথে ডি’ল ফাইনাল হওয়ার কথা ছিলো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করো”
“তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কি এখন কোনো লাভ আছে ভাবী? তারা হয়তো অন্য কারো সঙ্গে ডিল ফাইনাল করে ফেলেছে এতোদিনে”
“একবার চে’ষ্টা তো করে দেখো, উপকার হলেও হতে পারে। একবার যোগাযোগ করার চে’ষ্টা করো”
আলফার প্রস্তাবে একবার চে’ষ্টা করতে রাজি হলো ফারহান, এদিকে আলফাও চিন্তিত। বাড়ি না হয় ও সামলে নেবে কিন্তু বি’জ’নে’সে’র কি হবে? ফারহানের যা অবস্থা দেখলো তাতে ও একা সামলাতে পারবে না। আরেক নতুন চিন্তা চে’পে বসলো আলফার মাথায়। আজ নিজের অনেকগুলো কাপড় ধু’য়ে’ছি’লো আলফা, সেগুলোই কাবার্ডে গুছিয়ে রাখতে গিয়ে নজরে পড়লো ফাহাদকে দেওয়া সেই প্যাকেটটা যেটা আলফা জারার বিয়ের শপিং করতে গিয়ে কিনে এনেছিলো। ফাহাদ প্যাকেটটা খুলে দেখেনি কোনোদিন আর কখনো সেই সুযোগই পাবেনা! প্যাকেটটার ওপর হাত বুলালো আলফা, হঠাৎই সেদিন ফাহাদের বলা কথাগুলো যেনো আলফার কানে বেজে উঠলো, চোখদুটো ভিজে উঠলো মেয়েটার। ওদিকে রাতে হামজার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে ইমরান। ছেলের মুখটা ভা’র হয়ে আছে দেখেই হামজা প্রশ্ন করলো..
“কি হয়েছে তোর?”
“আর বলিস না, তোর কাজের চক্করে বাড়ি যেতে রা’ত হয়ে যায় বলে বউয়ের সাথে ভীষন ঝা’মে’লা হচ্ছে”
“লা’ভ ম্যা’রে’জ করার পরও যদি তোর বউ তোর ওপর ভরসা – বি’শ্বা’স না রাখতে পারে তাহলে প্রে’মে’র বিয়ের কি লাভ হলো?”
“তুই এসব বুঝবি না হামজা!”
“আমাকে কিছু বোঝাতে হবেনা, কাজের কথা বল এবার। ওখানকার কি খবর?”
“ওদের অনেকগুলো ডি’ল হাত ছাড়া হয়ে গেছে, আবার শুনলাম কোম্পানির হিসেবে গ’ড়’মি’ল ও হয়েছে। মিস্টার খান এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি, বাড়িতেই আছেন তাই ফারহান অফিসের দায়িত্ব নিয়েছে”
“সেগুলোর লিস্ট এনেছিস?”
“হ্যাঁ, সব নিয়ে এসেছি”
হামজা লিস্টে নজর বুলিয়ে বললো..
“এগুলোর মধ্যে থেকেই কিছু ডি’ল আমাদের কোম্পানির সাথে সাইনিং এর ই’ন্টা’রে’স্ট দেখাচ্ছে, কিন্তু বিশেষ লাভ হবেনা দেখে ড্যাড এখনও সা’ই’ন করেনি”
“হ্যাঁ, কিন্তু তুই হঠাৎ মিস্টার খানের কোম্পানির প্রতি এতো ই’ন্টা’রে’স্ট কেনো দেখাচ্ছিস? গত কয়েকমাস ধরে দুবেলা করে আমাকে খোজ নিতে পাঠাচ্ছিস”
“কারণ আমি ওখানকার সব তথ্য জানতে চাইছি, কিভাবে কি হচ্ছে সব”
“তুই কি কোনোভাবে তাদের সাহায্য করার প্ল্যা’ন করছিস?”
“এখনও কিছু ঠিক করিনি”
“কিন্তু তোর প্রস্তুতি দেখে তো মনে হচ্ছে মনস্থির করে ফেলেছিস, কারণ কি?”
“কারণ আছে ইমরান। তুই তো জানিস অহনার সাথে ফারহানের বিয়ের কথা প্রায় হয়েই গেছে। যদিও এখন প’রি’স্থি’তি’র কারণে ব্যাপারটা পি’ছি’য়ে যাচ্ছে কিন্তু একদিন না একদিন তো অহনা ও বাড়িতে কবেই। ওর কথা ভেবে ফারহানকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি”
“শুধু অহনার কথা ভেবে? তুই সিওর এছাড়া আর কোনো কারণ নেই?”
“সব যখন জানিস তখন অযথা প্র’শ্ন কেনো করছিস? তোকে যে কাজ দিয়েছি সেটা ভালোভাবে কর। কোম্পানিতে কি হচ্ছে, ফারহান কিভাবে কি করছে সব খবর ঠিকঠাক চাই আমি। কিছু যেনো মিস না হয়, কথাটা মাথায় থাকে যেনো”
“এতো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলবি না?”
“এখনও আমি কিছু ঠিক করিনি বললাম তো আর যখন করবো তখন অবশ্যই ড্যাডের সঙ্গে কথা বলবো। আর আমার মনে হয় না ড্যাড আমার প্রস্তাবে অ’স’ম্ম:’তি জানাবে। আপাতত সেগুলো পরের ব্যাপার, তুই আগে এখনকার কাজগুলো কর”
হামজার কথামতো ইমরান সকল খবর এনে সময়মতো পৌঁছে দিচ্ছে, হামজা এখন ইমরানকে এই কাজেই লাগিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তৈরি থাকতে চাইছে যাতে ভবিষ্যতে সাহায্য করতে পারে। ওদিকে দিনদিন কোম্পানির অবস্থা ত’লা’নি’তে গিয়ে ঠে’ক’ছি’লো। কিছুদিন পর মিস্টার খানও অফিসে যাওয়া শুরু করেন কিন্তু অবস্থার তখন এতোই অ’ব’ন’তি হয়ে গেছে যে সবটা আগের মতো করা ওনার পক্ষে মু’শ’কি’ল হয়ে পড়ে..
_________________________
ব্রেকফাস্ট টেবিলে মিস্টার শাহ্ ছেলেকে বলেন..
“মিস্টার খানের কোম্পানির খবর শুনেছিস? আজ আমার অ্যাসিস্টেন্ট বললো, বিশাল ঝা’মে’লা হচ্ছে ওখানে”
“হুমম, জানি”
“মিস্টার খানের মনের অবস্থা ভালো নয়, উনি অফিসে যাচ্ছেন ঠিকই তবে সেভাবে কাজে মন বসাতে পারছেন না। আর কোম্পানির যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে না বেশিদিন টি’ক’তে পারবে”
“ড্যাড, আমি একটা কথা ভাবছিলাম। যদিও ব্যাপারটা রি’স্কি হয়ে যায় তবে আমার মনে হয় রি’স্ক নিলে ম’ন্দ হবেনা”
“কি ভাবছিস?”
“ড্যাড, আমি ভাবছি ওনাদের সা’হা’য্য করতে করবো। ওনাদের কোম্পানিতে ই’ন’ভে’স্ট করতে চাইছি”
“কি বলছিস হামজা? ওই কোম্পানির কি অবস্থা এখন জানিস তুই। কতোটা ল’সে চলছে, যতো পার্টনারশিপ ছিলো সবই একে একে হা’ত’ছা’ড়া হয়ে যাচ্ছে। এতো বি’শৃ’ঙ্খ’লা ওখানে আর তুই কিনা..”
“সবই জানি আমি ড্যাড, কিন্তু বললাম না রি’স্ক একটা নিতে চাই। হতে পারে আমাদের সাহায্যে কোম্পানির লাভ হলো, ওনাদের উপকার হবে আবার আমাদেরও প্রফিট হবে”
“কিন্তু হামজা..”
“ড্যাড প্লিজ, আজ অব্দি তুমি আমার সকল সিদ্ধান্তের ওপর ভরসা করেছো। আমি চাই এবারও ভরসা করো, আমি ভালো কিছু করার চেষ্টা করছি”
“তোর এই বিষয়টা নিয়ে আরেকবার ভাবা দরকার, অনেকগুলো টাকার ব্যাপার!”
“আমি সব ভেবেই নিয়েছি ড্যাড, ইন ফ্যা’ক্ট আরো আগেই বলতাম তোমাকে সব কিন্তু নিজেই সিওর ছিলাম না তাই বলিনি। তবে, সবার আগে আমি এই ব্যাপারে মিস্টার খানের সঙ্গেও কথা বলবো। কারণ ওনার মতামত ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়”
“বেশ! বিজনেসটা তুই ভালোই করতে পারো তাই তোকে বা’ধা দেবো না আমি”
“আমি শুধু বিজনেসের জন্যে এসব করতে চাইছি না ড্যাড, আমি চাইছি অহনা যে বাড়িতে যাবে তার আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসুক। ব্যস এইটুকুই”
“ওকে, দেখ তুই কিভাবে কি করবে। আচ্ছা তার আগে এক কাজ কর তো হামজা, তুমি আজ গিয়ে একবার দেখা করে আয় ওনাদের সঙ্গে। অনেকদিন হলো দেখা হয় না, খোঁ’জ নেওয়া উচিত আমাদের”
“তুমিও যাবে সঙ্গে?”
“আজ সময় হবেনা, আমি পরে কখনো চলে যাবো আজ তুমি গিয়ে দেখা করে এসো। আর হ্যাঁ মিস্টার খান এর সঙ্গে পারলে একটু কোম্পানির বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করো। দেখো ওনার কি অভিমত”
“ওকে, আমি অফিস শেষে চলে যাবো”
অফিস থেকে আজ আগেই বেরিয়েছে হামজা, সোজা খান ম্যানশনের সামনে এসে গাড়ি থামালো। আলফাও তখন কোনো একটা কাজে বাইরে যাচ্ছিলো। বেরিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় আসতেই হামজাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখলো আলফা। ওকে দেখামাত্রই সা’ন’গ্লা’স খুলে তাকালো হামজা, অনেকদিন পর আলফাকে চোখের সামনে দেখতে পেলো হামজা। শেষবারের মতো ওকে দেখেছিলো ফাহাদের চল্লিশ দিনের মিলাদে। সেদিনের পর আলফাকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ আর মেলেনি, আজ মিললো। দুচোখ ভরে একবার চেয়ে দেখলো মেয়েটাকে। মুখখানি ম্লা’ন হয়ে আছে মেয়েটার, তবুও যেনো সুন্দর লাগছে।
“আপনি?”
“ভালো আছেন আলফা?”
“ভালো থাকার চেষ্টা করছি”
“আচ্ছা! আব..আঙ্কেল বাড়িতে আছেন?”
“হ্যাঁ, আপনি কি আঙ্কেলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন?”
“আমি সবার সঙ্গেই দেখা করতে এসেছি, যেহেতু এই বাড়ির সঙ্গে আমাদের আ’ত্মী’য়’তা’র সম্পর্ক প্রায় তৈরি হয়েই গেছে তাই এখানকার খোঁজ নেওয়াও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে”
“আসার জন্যে ধন্যবাদ, ভেতরে যান। আঙ্কেল আন্টি দুজনেই আছেন”
“আপনি কোথাও যাচ্ছেন?”
“হুমম, বাড়ির জন্যে কিছু জিনিস কেনার আছে। এছাড়াও কিছু কাজ আছে। আমি আসছি, আপনি ভেতরে যান”
আলফা দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেলো, হামজাও ভেতরে গিয়ে মিস্টার ও মিসেস শাহ্ এর সঙ্গে দেখা করলেন। ওনারা আগের তুলনায় এখন কিছুটা স্বাভাবিক আছেন। কথার এক পর্যায়ে মিস্টার খানের সঙ্গে ওনাদের বিজনেসের কথা আলোচনা করে হামজা..
“ফারহান চে’ষ্টা করছে কিন্তু বিজনেসে অবস্থা একবার নিচে নেমে গেলে সেটা ওপরে তোলা প্রায় অ’স’ম্ভ’ব। অনেক টাকার হিসেবে গ’ড়’মি’ল হয়েছে তাই ইম্প্লয়দের বেতন দেওয়া নিয়েও স’ম’স্যা হচ্ছে”
“ফারহানের এখানে বিশেষ দো’ষ নেই, হুট করেই এতো দায়িত্ব ওর কাধে এসে পড়েছে। শিখতে সময় লাগবে”
“সে তো লাগবে বটেই তবে ফাহাদ যেভাবে আমার সঙ্গে থেকে সব সামলেছে ফারহান পারবে না, কারণ ফাহাদের মতো প্যা’শ’ন ফারহানের মধ্যে নেই। এখন একা যতোটা করার আমাকেই করতে হবে”
“আঙ্কেল, যদি আপনি ক’ন’সি’ডা’র করেন তাহলে আমার একটা প্রস্তাব ছিলো”
“কেমন প্রস্তাব?”
“আমি আপনাদের কোম্পানিতে ইনভেস্ট করতে চাই, এতে করে আপনাদের কোম্পানির ফা’ই’ন্যা’ন্সি’য়া’ল প্র’ব’লে’ম ব্যা’লে’ন্স হবে। এরপর আপনি না হয় আস্তে আস্তে আবার সবটা আগের মতো করার চেষ্টা করবেন”
“আমাদের কোম্পানির অবস্থা জেনেও তুমি টাকা ইনভেস্ট করতে চাইছো কেনো?”
“তেমন কিছুই না আঙ্কেল, বলতে পারেন আমার বোনের জন্যে করছি আমি। দেখুন, ফাহাদের শূ’ন্য জায়গাটা কখনো পূরণ হবেনা জানি। কিন্তু আমি চাই আপনারা অন্তত আগের মতো সুস্থ স্বাভাবিক এবং চি’ন্তা’মু’ক্ত থাকুন। আমি আমার বোনের ভবিষ্যৎ পরিবারকে সাহায্য করতে চাইছি ব্যস এইটুকুই”
“বোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছো বুঝলাম কিন্তু হামজা..”
“আঙ্কেল, আমি সবদিক ভেবে বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাকীটা আপনার সিদ্ধান্তের ওপর নি’র্ভ’র করছে”
হামজার এহেন প্রস্তাবে মিস্টার খান এখনও পুরোপুরি ভেবে উঠতে পারছেন না কি করবেন, তো উনি সময় নিলেন। এর মধ্যে মিসেস খান হামজার জন্যে কিছু নাস্তা বানিয়ে আনেন। হামজা অনেকক্ষণ ওখানে ছিলো, মিস্টার ও মিসেস খানের সঙ্গে সময় কা’টি’য়ে’ছে এর মধ্যে আলফা ফিরে এসেছে তার কাজ শে’ষে। আলফা এসেই সোজা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো, মিসেস খান বলে উঠলেন..
“আমি সাহায্য করছি আলফা”
“লাগবে না আন্টি, আপনি বসুন। আমিই করে নেবো”
আলফা নিজেই রান্নাঘরে গিয়ে সব গুছিয়ে রাখলো, এসবের কিছুই হামজার নজর এ’ড়া’য়’নি। আলফাকে এখন আগের থেকেও বেশি ম্যা’চি’ও’র লাগছে হামজার! মিসেস খান বললেন..
“এতগুলো মাস ধরে মেয়েটা নিজেই দায়িত্ব নিয়ে সব করছে, আমাদের কথা চিন্তা করতে গিয়ে হয়তো নিজেকে নিয়ে ভাবতেই ভুলে গেছে”
“হ্যাঁ, মেয়েটা আমাদের জন্যে অনেক করছে। এরকম একটা মেয়েকে বৌমা হিসেবে পাওয়া সত্যিই ভা’গ্যে’র ব্যাপার”
মিস্টার ও মিসেস খানের কথা শুনে কিছু সময় চু’প রইলো হামজা, এরপর বলে উঠলো..
“আঙ্কেল, আন্টি আমি তাহলে আজ আসছি”
“সে কি! এখনই চলে যাবে? আরেকটু বসো”
“না আন্টি, অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। এরপর রাস্তায় জ্যা’ম পড়লে ফিরতে আরো দেরি হবে”
রান্নাঘর থেকে আলফা শুনেছে সব, তো ও বেরিয়ে এসেই বললো..
“ডিনার করেই যান, আমি একটু পরেই রান্না বসাবো”
“আজ থাক, অন্য একদিন আসবো। সেদিন ডিনার করে যাবো”
মিস্টার ও মিসেস খানের থেকে বি’দা’য় নিয়ে হামজা পা বাড়ালো বাইরের দিকে, আলফাও পেছন পেছন যায় দরজা ব’ন্ধ করবে বলে। তখন হামজাকে বলে..
“আপনি এতোটা সময় দিয়েছেন আজ আঙ্কেল আন্টিকে, কথাবার্তার মধ্যে থাকলে তারা দুজনেই তাও কিছুটা ভালো থাকেন। তাদের এতোটা সময় দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ”
“ধন্যবাদের কিছু নেই, আমারও ভালো লেগেছে”
“অহনা যদি এখানে আসতে চায় ওকে আসতে বলবেন”
“অফ কো’র্স, আমি আসছি তাহলে”
হামজা দরজার বাইরে পা রাখে, আলফা দরজা ব’ন্ধ করতেই যাচ্ছিলো তখনই..
“আলফা..!”
থে’মে গেলো আলফা, সেকেন্ড কয়েক আলফাকে দেখে হামজা বললো..
“টেক কেয়ার অফ ই’উ’র’সে’ল’ফ”
স্মি’ত হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা না’ড়া’লো আলফা, আর ওর ঠোঁটের কো’ণে এ’ক’টু’খা’নি হাসির ঝ’ল’ক দেখেই যেনো হামজার বুকটা ভ’রে গেলো। মেয়েটাকে প্রা’ণ’খু’লে হাসতে দেখার সৌভাগ্য আজ অব্দি হয়ে ওঠেনি হামজার তাই এইটুকুতেই তৃ’প্ত সে। রাতে মিস্টার খান ফারহান ও আলফাকে নিয়ে বসেন এবং হামজার প্রস্তাব সম্পর্কে জানায়..
“আঙ্কেল, উনি আপনাকে নিজে এই প্রস্তাব দিয়েছে?”
“হ্যাঁ আলফা। হামজার এই প্রস্তাবটা যদিও আমাদের জন্যে সম্পূর্ন লাভবান নয় তবে এই মুহূর্তে আমাদের কোম্পানির সব আবার সে’টে’ল করার জন্যে ই’ন’ভে’স্ট’মে’ন্ট প্রয়োজন আর এতো বড় অ’ঙ্কে’র টাকা ই’ন’ভে’স্ট করার জন্য আগ্রহী কেউ নেই।”
আলফা এবার বুঝলো হামজা কেনো ফাহাদের বাবার সঙ্গে দেখা করতে চাইছিলো, সবটা শোনার পর ফারহান বললো..
“হামজার প্রস্তাব তো ম’ন্দ নয়, আর সে কেনো সাহায্য করতে চাইছে তার কারণও তো বলেছে। এছাড়া এই মু’হূ’র্তে আমাদের জন্যে এই সাহায্য ভী’ষ’ন দরকার”
“তো তুমি বলতে চাইছো হামজার অফার অ্যা’ক’সে’প্ট করলে আমাদেরই ভালো হবে?”
“হ্যা আব্বু, ভাবী এই ব্যাপারে তুমি কি বলো?”
“এসব ব্যাপারে তো আমার বিশেষ ধা’র’ণা নেই, তবে এই মু’হূ’র্তে আমাদের অবস্থা বিবেচনায় সাহায্য করার মতো কেউ যখন নেই তখন মনে হয় প্রস্তাবটা গ্রহণ করা ম’ন্দ হবেনা। যদিও এতে উভয়পক্ষের লাভ হতে পারে”
“তাতে স’ম’স্যা নেই, এতে আমাদের কোম্পানি বর্তমান ক্রা’ই’সি’স থেকে মু’ক্তি পেতে পারে। তার আগে আমি নিজে তো সিদ্ধান্ত নেবোই এবং তোমাদের মতামতও জানতে চাইছি। তাহলে কি হামজার সঙ্গে কথা বলবো?”
কোম্পানির বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে ফারহান ও আলফা উভয়ই স’ম্ম’তি জানালো হামজার প্রস্তাবে, ওদিকে হামজা ওর বাবার সঙ্গে সব কথা বলে নিয়েছে। যদিও ছেলের এই সিদ্ধান্তে মিস্টার শাহ্ এর আ’প’ত্তি রয়েছে, তবে ছেলে যে একবার নিয়ে ফেলা সিদ্ধান্ত বদলাবে না তাও ওনার ভালোভাবেই জানা তাই আর বাঁ’ধা দিলেন না!
চলবে…