তোমাতে মত্ত আমি পর্ব-১০

0
910

#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১০

লাঞ্চ টাইমে মিস্টার শাহের কেবিনে আসে হামজা, উদ্দেশ্য অহনার ব্যাপারে কথা বলা। ছেলেকে দেখেই মিস্টার শাহ বলে উঠলেন..

“আরে হামজা, আয়। একই অফিসে থাকার পরও সারাদিন তো তোর দেখাই পাওয়া যায় না”

“স’রি ড্যাড, একটু বি’জি ছিলাম”

“তা এই সময়ে তুই এখানে কেনো? কিছু বলবি?”

“হ্যাঁ, আমার অহনার ব্যাপারে কিছু কথা আছে”

“অহনা? ও কি আবার তোর ক্রে’ডি’ট কার্ড চু’রি করে নিয়ে গেছে?”

“নাহ ড্যাড, এবার কথাটা অন্য বিষয় নিয়ে”

এরপর হামজা ওর বাবাকে অহনা ও ফারহানের সম্পর্কের ব্যাপারে জানায়, ফারহানের পরিচয়ও বলে। সবটা মনোযোগ দিয়ে শোনার পর মিস্টার শাহ্ বলেন..

“মিস্টার খানে সঙ্গে আমার মোটামুটি চেনাজানা আছে, কিন্তু অহনার যে তার ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সেটা তো আগে কখনো বলেনি”

“ও বলার সাহস পায়নি, ইন ফ্যা’ক্ট এখনও পাচ্ছেনা তাই আমি তোমাকে সবটা জানালাম। ছেলের সম্পর্কে আমি খোঁজ নিয়েছি, ভালোই সে। যদিও অহনার এই বিয়ের ব্যাপারে আমি আগ্রহী নই। এখনই এতো কম বয়সে..”

“না হামজা, আমিও অহনার বিয়ের কথাই ভাবছিলাম। ও এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে, আর ও যদি কাউকে পছন্দ করে থাকে তাতে আমার আ’প’ত্তি নেই”

“ওহ, তারমানে এতে তোমার কোনো স’ম’স্যা নেই?”

“এখানে সমস্যার কি আছে? মেয়ে বড় হয়েছে, বিয়ে করতে চাইছে আর তুই বলছিস ছেলেও ভালো। তাহলে বাবা হিসেবে আমার দায়িত্ব ওকে বিয়ে দেওয়ার”

“ফাইন! তুমি তাহলে আম্মুর সঙ্গে কথা বলে তার মতামতও নিয়ে নিও”

“তোর মা এতে আ’প’ত্তি করবে না”

“ওকে, মিস্টার খানের সঙ্গে যেহেতু তোমার জানাশোনা আছে তাহলে তোমরা নিজেরাই এই ব্যাপারে কথা বলে নিতে পারবে”

“মিস্টার খান জানেন সব?”

“উনিও জেনে যাবেন শীঘ্রই”

“বেশ, মেয়ের দিক থেকে চি’ন্তা’মু’ক্ত হলাম। এবার তাহলে অহনার বিয়ের আগে তুই বিয়েটা করে নে। তাহলে আমি চি’ন্তা’মু’ক্ত হবো”

“এখানে আমার বিয়ের কথা কেনো উঠছে?”

“তুই অহনার বড় ভাই, তাই ছোটো বোনের আগে বড় ভাইয়ের বিয়ে করাটা কি স্বাভাবিক নয়?”

“এরকম বাঁ’ধা কোনো নিয়ম নেই”

“হামজা, আমার মনে হয় তোর এবার আমার কথাটা শোনা উচিত”

“ড্যাড প্লি’জ, ডো’ন্ট ফো’র্স মি”

“আমি তোকে ফো’র্স করছি না হামজা, তোর বিয়ে করার উপযুক্ত সময় হয়েছে আর এতো ভালো ভালো মেয়ের সমন্ধ আসছে তুই বারবার তাদের রি’জে’ক্ট করে দিচ্ছিস। কারণটা কি?”

“তুমি জানো আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা”

“তাহলে? আচ্ছা তুই কি কাওকে পছন্দ করিস?”

বাবার প্রশ্নের উত্তর দিলো না হামজা..

“দেখ তুই যদি কাউকে পছন্দ করে থাকিস তাহলে বল আমায়, আমি তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলবো”

“ড্যাড, আমি চাই তুমি এখন আমার ব্যাপারে এইসব এইসব ভাবনা বাদ দিয়ে অহনার চিন্তা করো। সবটা তোমাকে বললাম, বাকীটা তুমি যা করার করো”

মিস্টার শাহ্ আরো কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু হামজা তার আগেই ওখান থেকে চলে এলো, গত এক বছর ধরে ছেলেকে বিয়ের জন্যে রাজি করানোর চেষ্টায় ব্য’র্থ হচ্ছেন আব্বাস সাহেব তবুও ছেলের এই বিয়ের প্রতি অনীহার কারণ জানতে পারেননি!
________________________

সন্ধ্যায় ফাহাদ ফোন করেছিলো, ওর সঙ্গেই কিছুটা সময় কথা বলে নিলো আলফা..

“কাল তো ছুটি, সারাদিন আরাম করবে নিশ্চয়ই!”

“ভুলে গেলেন? কালকে আমার ফুরসৎ নেই কারণ কাল জারার বিয়ে আছে, তো কাল সারাদিন ভীষন ব্য’স্ত থাকবো”

“ওহ, আমি তাহলে তোমার বান্ধবীর বিয়ে মি’স করতে যাচ্ছি!”

“হুমম! তবে আমি আপনাকে ওর বিয়ের সব আপডেট দেবো। ছবিও পাঠিয়ে দেবো, সেগুলো দেখেই ক’ল্প’না করে নেবেন যে আপনি ওখানেই উপস্থিত আছেন”

“ক’ল্প’না করা আর সরাসরি থাকা তো এক নয়!”

“আপনি মন খা’রা’প করছেন নাকি?”

“কি মনে হচ্ছে? তুমি ওখানে মজা করবে আর আমি এখানে আ’ট’কা পড়ে আছি। মন কেমন থাকা উচিত আমার?”

“আচ্ছা থাক, এখন এসব ভেবে আর মন খা’রা’প করতে হবে না। একদিনের তো ব্যাপার, পরশুই তো ফিরছেন”

“ওকে, সো এবার একটা কথা বলো তো। আমাকে মিস করছো তুমি?”

“ওহ! তারমানে আপনি আমায় মিস করছেন”

“হেই, আমি তোমাকে কেনো মিস করতে হবে”

“অবশ্যই আপনি আমাকে মিস করছেন, তাইতো একই প্রশ্ন আমায় করছেন”

“আমি কাউকে মিস টিস্ করিনা ওকে! আর তোমাকে কেনো মিস করতে যাবো! ইউ আর নট সাম ওয়ান স্পেশাল ফর মি”

“তাহলে আপনি যখন আমায় মিস করছেন না, আমি কেনো করতে যাবো হুম? এমনিতেও আপনাকে মিস করা ছাড়া অনেক কাজ আছে আমার। আজ ফারহানের ব্যাপারটা নিয়ে আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলবো”

“ওহ! তারমানে তুমি সব সেটেল করে এসেছো?”

“অ’ল’মো’স্ট! এবার শুধু আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলা বাকি। আমি চাইছি শীঘ্রই সবটা হোক, ফারহানের এই ক’ষ্ট আর দেখতে ভালো লাগছেনা আমার”

“ফারহানের ব্যাপারটা নিয়ে মনে হচ্ছে তুমি একটু বেশিই সি’রি’য়া’স হয়ে গেছো, ওদের বিয়ে না করানো অব্দি দ’ম নেবে না”

“ভাই হিসেবে দায়িত্বটা আপনার ছিলো কিন্তু আপনি যেহেতু পালন করলেন না, তাহলে আমাকেই তো করতে হবে!”

ফাহাদের সঙ্গে প্রায় ৩০-৩৫ মিনিট কথা বললো আলফা, এটাই প্রথমবারের মতো দুজনের ফোনালাপ। ভালোই একটা সময় কা’টা’লো দুজনে। রাতে, ডিনার টেবিলে ফারহানের কথা তুললো আলফা। মিস্টার ও মিসেস খান কে সব বললো, বাবা যদি কিছু বলে এই ভ’য়ে ফারহান আজ খাওয়ার টেবিলে এসে বসেনি। সবটা শোনার পর মিস্টার খান স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন..

“দেখেছো? এইসব কান্ড করে বেড়াচ্ছে তোমার ছেলে। দেখো আজ ডিনার টেবিলেও আসেনি”

“আহা, ছেলে হয়তো ভ’য় পাচ্ছে। তুমি যদি কিছু বলে বসো তাই”

“হ্যাঁ আঙ্কেল, ফারহান ভ’য় তো পাচ্ছে। আসলে ফাহাদও ওর কথায় সায় দেয়নি তাই ভাবছে আপনিও যদি..”

“ফারহান এর আগে কয়েকবার বলেছিলো আমায় কিন্তু আমি পাত্তা দেইনি। ভেবেছিলাম মজা করছে কিন্তু এখন তো দেখছি বিষয়টা গুরুতর। অনেকদূর অব্দি এগিয়ে গেছে ওদের সম্পর্ক”

“আঙ্কেল, অহনা ভীষন ভালো মেয়ে। আর ও মিস্টার আব্বাস শাহ্ এর মেয়ে, আপনাদের চেনা পরিচিত। আমার মনে হয় সম্পর্কটা করলে ম’ন্দ হবেনা”

“হ্যাঁ, মিস্টার শাহ্ এর সঙ্গে আমার পরিচয় আছে বলতে হবে। ওনার সঙ্গে একটা ডিল সাইনিং এর জন্যে অনেকদিন ধরে কথা চলছে। কিন্তু ছেলে যে আমার তার মেয়ের সঙ্গেই প্রে’ম করছে ভাবতেই পারছি না!”

“কিন্তু আলফা, ফারহানের তো বয়স এখনও কম। এখন কি এই বিষয়টা নিয়ে এগোনো ঠিক হবে?”

“আন্টি, ফাহাদও এই একই কথা বলেছে কিন্তু আমি অহনা আর ফারহান দুজনের সঙ্গেই কথা বলে দেখেছি। দুজনেই বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহিত আর ওরা তো আমাদের থেকে কিছু গো’প’ন করেনি। সরাসরি জানাচ্ছে যে তারা বিয়ে করতে চায়। একবার বিয়ে হয়ে গেলে দেখা যাবে দুজনেই দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছে”

“এটা ভালো বললে আলফা, ফারহান এখন ছ’ন্ন’ছা’ড়া জীবন কা’টা’চ্ছে। কোনদিকে ওর খেয়াল নেই, ফাহাদের মতো ও নয়। তবে আমারও মনে হয় বিয়ে হলে হয়তো ও নিজের দায়িত্বের প্রতি অবগত হবে”

“হ্যাঁ আঙ্কেল! আমিও এটাই বোঝাতে চাইছি”

“ফাইন! আমি মিস্টার শাহ্ এর সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলে এগিয়ে রাখবো। ফাহাদ ফিরলে না হয় দুই পক্ষের অফিসিয়ালি দেখা সাক্ষাৎ হবে”

ছোটো ছেলের পছন্দের ক্ষেত্রে দ্বিমত পো’ষ’ণ করেননি মিস্টার শাহ্, এভাবে আলফা সুষ্ঠুভাবেই ফারহানকে দেওয়া কথা রাখতে সক্ষম হয়েছে। খবরটা প্রথমেই আলফা গিয়ে ফারহানকে জানায়, ফারহান তো খুশিতে আ’ট’খা’না। ফারহানও জানায় যে অহনা ওর বাড়িতে জানিয়েছে আর ওর বাবাও রাজি হয়েছে। উভয়পক্ষ থেকেই প’জি’টি’ভ রি’য়ে’ক’শ’ন এসেছে শুনে আলফাও বেশ খুশি হলো।
________________________

ব্রী’জে’র ওপরের এক পাশে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে কোনো এক গভীর ভাবনায় ম’গ্ন হয়ে আছে হামজা, এতটাই ম’গ্ন ছিলো যে আকাশে মেঘ ডাকছে সেদিকেও খেয়াল নেই। সঙ্গেই ছিলো ওর বন্ধু ইমরান, এতো মেঘ ডাকা সত্বেও হামজার কোনো হেলদোল নেই দেখে ইমরান বললো..

“হামজা, মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে। তোর এবার বাড়ি ফেরা উচিত”

“তোর দেরি হলে চলে যা”

“আর তুই কি করবি?”

“আমি এখানে আরো কিছুক্ষণ দাড়াতে চাই”

“আকাশের অবস্থা দেখেছিস? কিভাবে মে’ঘ ডাকছে? আর পাঁচ মিনিট দাড়ালেই বৃষ্টিতে ভিজে যাবি”

“বললাম তো তোর দেরি হলে চলে যা”

বন্ধুর এমন উদাস উত্তরে বি’র’ক্ত হলো ইমরান..

“হামজা, কি হয়েছে তোর বলতো। কদিন ধরে আবার আগের মতো অ’দ্ভু’ত আচরণ শুরু করেছিস”

“তোর কেনো মনে হচ্ছে আমি অ’দ্ভু’ত আচরণ করছি? একদম ঠিক আছি আমি”

“তুই ঠিক নেই, এর আগেও তোর এই রূপ আমি দেখেছি মাঝে ঠিক হয়ে গেছিলি আবারো সেই আগের মতো করছিস। কেমন যেনো অন্য ম’ন’স্ক থাকিস আর আমার বলা কোনো কথাই পাত্তা দিস না”

“তুই আমায় নিয়ে হয়তো একটু বেশিই ভাবছিস তাই ওরকম মনে হচ্ছে। আমার কিছুই হয়নি”

“হামজা, যা তোর হবার নয় তা নিয়ে ভেবে কেনো নিজের মনটাকে পো’ড়া’চ্ছি’স? ইন ফ্যা’ক্ট তোর কখনোই কিছু ছিলো না”

“তার জন্যেও আমিই দায়ী ছিলাম!”

“আচ্ছা, বাদ দে এসব। এখন এগুলো ভাবা শুধু সময় ন’ষ্ট ছাড়া আর কিছুই না”

ইমরানের কথায় খানিকটা তা’চ্ছি’ল্যে’র হাসি হাসলো হামজা..

“আমি কিছুই ভাবছি না”

“হামজা, স্ট’প দিজ! তোর কি মনে হয় আমি কিছুই জানিনা? সব জানি, তাই বলছি এসব ভাবনা বাদ দে।

“এখন এসব নিয়ে যখন ভাবি, তখন রি’য়া’লা’ই’জ করি যে ভুল আমারই ছিলো। আমি সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু এটা বুঝিনি যে সময় তো আর আমার ইচ্ছেমতো চলবে না”

“হামজা..!”

“ও বরাবরই ভীষন ম্যা’চি’ও’র টাইপের। সামনে দাড়ানো মানুষটাকে যে ওর নানাভাবে জাজ করার অভ্যাস আছে সেটা বুঝে গেছিলাম সেই মুহূর্তে জানিস তখন আমি কি ভেবেছিলাম? নিজেকে তখনও ওর উ’প’যু’ক্ত ভাবিনি, ভেবেছিলাম আগে নিজে সেটেল হই তারপর ওর সামনাসামনি দাড়িয়ে সব বলবো। একটা সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম, কিন্তু দেখ। সময়ই আমার সঙ্গে বে’ই’মা’নি করলো”

“ইমরান, অনেকটা সময় কেটে গেছে। সি ইজ ম্যারেড নাও। বাদ দে না”

“একবার যদি কাউকে মনে ধরে যায় তাহলে সবকিছু এতো সহজেই ভোলা যায় না ইমরান। জানিস সেদিন পা’র্টি’তে দেখলাম ওকে ওর হাসবেন্ডের সঙ্গে, মনে হলো দুজনে অনেক ভালো আছে। আমিও ওদের ভালো থাকা দেখে ওই মুহূর্তে নিজের সঙ্গে একটু নাটক করলাম। মনকে বোঝালাম যে আমিও ভালো আছি। কিন্তু বুঝটা বেশি সময় দিতে পারিনি”

একটু থামলো হামজা, ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো..

“আমি অনেকের কাছেই শুনেছি যে এক তরফা বিষয়টা বেশ য’ন্ত্র’ণা দেয় কিন্তু তখন মানে বুঝিনি। কিন্তু নিজে যখন ফিল করলাম তখন বুঝেছি কতোটা য’ন্ত্র’ণা’দা’য়’ক। কি অ’দ্ভু’ত একটা ব্যাপার তাইনা ইমরান? ও এসবের কিছুই জানেনা, ইন ফ্যা’ক্ট ও তো আমাকে ভালোভাবে চেনে না অব্দি। আর সেই মানুষটার কথা ভাবলেই আমার বুকের মধ্যে তী’ব্র য’ন্ত্র’ণা হয়। এই অনুভূতিটা হয়তো আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না, এতোটা য’ন্ত্র’ণা’র”

“তাহলে কি? এসব ভেবেই ক’ষ্ট পাবি আর কিছুনা?”

“কি করতে পারবো জানিনা, তবে সব যখন আমার এক তরফা ছিলো সেভাবেই থাক। ওকে হয়তো এতো সহজে আমি ভুলতে পারবো না, শুধু আজ কেনো হয়তো কখনোই পারবো না”

কথাগুলো বলতে গিয়েই হামজা চোখমুখে ক’ষ্টে’র স্প’ষ্ট ছা’প ফুটে উঠেছে যা ইমরানের নজর এ’ড়া’য়’নি। বন্ধুর কথা শুনে আর কিছু বলার সাহস পেলো না ও। ওদিকে ঘুমানোর আগে ফেসবুক স্ক্রল করছিলো আলফা, তখনই ফাহাদের মেসেজ এলো। ঝি’রি’ঝি’রি বৃষ্টি সমেত রাতের আকাশের একটা ছোট্ট ভিডিও ক্লি’প পাঠিয়েছে ফাহাদ। আলফা ভিডিওটা দেখে একটু হাসলো, বুঝলো ফাহাদ বুঝি সত্যিই ওকে অনেক মি’স করছে তাইতো ঘুমোতে যাওয়ার আগেও মেসেজ দিলো। আলফাই ফিরতি মেসেজে কিছু একটা লিখলো, কিন্তু রিপ্লাই এলো না। তাই ও ধরে নিলো হয়তো বৃষ্টির জন্যে নেটওয়ার্ক স্লো হয়ে গেছে বা ফাহাদ ঘুমিয়ে গেছে। তাই ও আর ফোন করে বি’র’ক্ত করলো না ফাহাদকে, ঘুমিয়ে পড়লো। কারণ কালকে জারার বিয়ে। সকাল সকাল যেতে হবে ওখানে। পরদিন ভোর হতেই জারার ফোন আসতে শুরু হয়ে গেছে, আলফা তৈরি হওয়ার সময়টুকু পায়নি। পরে জারাকে স্পিকারে রেখে ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই তৈরি হয়েছে। মেয়েটা ভীষন না’র্ভা’স, হবে নাই বা কেনো? বিয়ে বলে কথা! আলফার সঙ্গে কথা বলে তাও একটু ভালো লাগছে জারার। তৈরি হয়েই আলফা বেরোতে যাচ্ছিলো, কিন্তু মিসেস খান ব্রেকফাস্ট করা ছাড়া তো ওকে বেরোতেই দেবে না। কোনোরকম ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়ে পড়ে আলফা। ওদিকে হামজা আজ অনেকটা দেরিতে উঠেছে, রাতে ঠিকমতো ঘুম না হওয়ায় মাথা য’ন্ত্র’ণা করছে ওর। ব্রেকফাস্টের জন্যে এসে বসতেই মিসেস শাহ্ ছেলের মুখ দেখে বললো..

“চোখমুখের এই অবস্থা কেনো তোর হামজা? রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি নাকি?”

“হ্যাঁ, মাম্মা! রাতে ঘুমোতে পারিনি”

ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে প্লেটটা ছেলেকে দিয়ে মিসেস শাহ্ ও চেয়ার টেনে বসলেন, মিস্টার শাহ্ ও তখন ওখানেই ব্রেকফাস্ট করতে ব্যস্ত..

“কাল রা’তে তো অনেক দেরি করে বাড়ি ফিরেছিস। কোথায় ছিলি এতক্ষণ?”

“ইমরানের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম”

“কয়েকদিন আগে না ইমরান বিয়ে করলো, এখন তো ওর আগে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা তাহলে এতো রা’ত অব্দি তোর সঙ্গে কি করে?”

“বিয়ে করেছে বলে কি সারাক্ষণ বাড়িতে বসে থাকবে? তুমি জানো ও শুধু আমার বন্ধু নয়, পা’র্সো’না’ল অ্যা’সি’স’টে’ন্ট ও। ওর তো আমার সঙ্গেই বেশিরভাগ সময় থাকতে হবে”

ছেলের কথা শুনে খেতেই খেতেই মিস্টার শাহ্ বললেন..

“ইমরানকে এখন এতো প্রে’শা’র দিও না হামজা, ওকে কিছুদিন জলদি ছুটি দিয়ে দিও”

“কেনো?”

“তুমি তো আর বিবাহিত নও, তাই এই কেনো উত্তরটা আমি তোমায় দিলেও বুঝবে না। আগে বিয়ে করো তারপর বুঝতে পারবে”

বাবার কথার মানে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে হামজা, তবুও কোনো উত্তর দিলো না কারণ ও জানে এখন কিছু বললেই বাবা আবার ওর বিয়ের কথা তুলতে পারে আর এসব নিয়ে সকাল সকাল কথা বলার ইচ্ছে হামজার নেই! ওদিকে আলফা জারার বাড়িতে পৌঁছে গেছে, জারার হলুদ + বিয়ে একই দিনেই হচ্ছে। সকালে হলুদ হবে আর রাতে বিয়ে। সে অনুযায়ী আলফা নিজের ড্রেসও নিয়ে এসেছে। রুমে ঢু’ক’তে’ই আলফাকে দেখে ছুটে এসে জ’ড়ি’য়ে ধরে জারা..

“বান্ধবী তুই এসেছিস! তোকে দেখে যে কি শান্তি পেলাম বোঝাতে পারবো না”

“হ্যাঁ রে বাবা, আমি চলে এসেছি। এবার তুই একটু শা’ন্ত হয়ে থাক”

“কিভাবে শান্ত হবো বল তো, জানিস সবাই আমাকে কেমন ভ’য় দেখাচ্ছে? বিয়ের পর এই হবে সেই হবে, এত্তো দায়িত্ব ঘা’ড়ে এসে পড়বে। এসব শুনে আমার ভালো লাগছেনা”

বান্ধবীর এই না’র্ভা’স’নে’স ভালোভাবেই বুঝতে পারছে আলফা, পুরোটা না হলেও এই একই অনুভূতি বিয়ের সময় আলফার ও হয়েছিলো। তাই সেই মুহূর্তে আলফা জারার ভী’তি দূর করার পুরো চেষ্টা করে..

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে