Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোমারে মত্ত আমিতোমাতে মত্ত আমি পর্ব-০৯ + বোনাস পর্ব

তোমাতে মত্ত আমি পর্ব-০৯ + বোনাস পর্ব

#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০৯

কিছুক্ষণ আগে অহনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে আলফা, মেয়েটার সঙ্গে কথা বলে ভালোই লাগলো। ফারহান অনেক করে বলছে আলফাকে মিস্টার খানের সঙ্গে অহনার ব্যাপারে একটু কথা বলতে। আলফাও তাই ঠিক করেছে শীঘ্রই এ ব্যাপারে নিজের শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলবে। ফারহান ঘর থেকে যাওয়ার পরপরই ফাহাদ আলফাকে বলে..

“শোনো, ফারহান যে তোমাকে বলেছে আব্বুর সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে। তার দরকার নেই”

“আপনার ইচ্ছে নেই, না করলেন। আমাকে কেনো বাঁ’ধা দিচ্ছেন?”

“ফারহানের এখনও বিয়ের বয়স হয়েছে? বাচ্চা ছেলে একটা আর যে অহনার কথা বলছে সেও বাচ্চা মেয়ে। দুজনে আবার কিসের সংসার করবে?”

“সংসার করতে বু’ড়ো হতে হয় নাকি? আর আপনি এই কথা বলছেন? আগের দিনে যে ১০-১৫ বছরে বিয়ে করে মানুষ সংসার করতো সে বিষয়ে কি বলবেন?”

“আগের আর এখনকার সময় এক নয়”

“আচ্ছা, আপনি এসব নিয়ে কেনো এতো মাথা ঘামাচ্ছেন বুঝলাম না। আপনি তো বলেই দিয়েছেন ফারহানকে সাহায্য করবেন না, করার দরকার নেই। আমি ওকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো”

“ওর ছেলেমানুষী প্রশ্রয় কেনো দিচ্ছো বুঝলাম না। বিয়ে করলে দায়িত্ব নিতে হবে, আমি জানি ও এখনও বিয়ের দায়িত্ব নেওয়ার উপযোগী নয়। পরে দেখা যাবে অহনা আর মধ্যে স’ম’স্যা হচ্ছে”

“ফারহান যথেষ্ট বড় হয়েছে। বিয়ে করলে জে দায়িত্ব নিতে হবে সেই বোধ ওর আছে। ও যখন সাহস দেখাচ্ছে তাহলে আমার ওকে সাহায্য করতে আ’প’ত্তি নেই, আর হ্যাঁ আমি আপনার কথা কেনো শুনবো?”

“ফাইন, যা খুশি করো। কিন্তু এসবের কোনো ব্যাপারে আমাকে বলবে না”

“নিশ্চিন্ত থাকুন, আপনাকে কিছু বলা হবেনা”

“আচ্ছা যাই হোক। কাল সন্ধ্যায় আমাদের একটা পার্টি অ্যাটেন্ড করতে হবে, পারলে একটু আগেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করো”

“কেমন পার্টি?”

“বিজনেস পার্টি”

“বিজনেস পার্টি! ওখানে তো সব বিজনেস সম্পর্কিত কথাই হবে। আমি গিয়ে কি করবো?”

“যাওয়ার ইচ্ছে তো আমারও নেই কিন্তু যেতে হবে, আর আব্বু বলে দিয়েছে আমার একা যাওয়া চলবে না তোমারও সঙ্গে যেতে হবে”

“যেতেই হবে?”

“স’ম’স্যা আছে?”

“নাহ! আমি যদিও আব্বুর সঙ্গে এরকম পার্টি দু একবার অ্যাটেন্ড করেছি কিন্তু কমফোর্ট ফিল করিনি তাই আর কি। যদি যেতেই হয় তাহলে যাবো”

“যেতেই হবে”

“ঠিক আছে, আমি আগেই ফেরার চেষ্টা করবো”

পরদিন কলেজ থেকে একটু আগেই বেরিয়েছে আলফা, নাহলে রাস্তায় জ্যাম পড়লে বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তবে আজও কলেজ ক্যাম্পাসে বেরোতেই সেদিনের সেই পুরুষটিকে দেখে পা থেমে যায় আলফার!

“আপনি আবারো এখানে?”

“হ্যালো, আলফা!”

“আপনি আজকে কেনো এসেছেন?”

“আপনি জানেন আমি কেনো এসেছি”

“আমি জানিনা”

“আপনাকে এক কাপ কফির অফার করেছিলাম, মনে আছে নিশ্চয়ই? এরপর অনেকগুলো দিন কে’টে গেছে। কিন্তু আপনি সময়ই বের করতে পারলেন না!”

“আমি কিন্তু আপনাকে সেদিন একবারও বলিনি যে আপনার কফির অফার আমি অ্যাকসেপ্ট করেছি। তারমানে আপনার বুঝে নেওয়া উচিত, আই অ্যাম নট ই’ন্টা’রে’স্টে’ড”

“কিন্তু আমি আপনার ব্যাপারে ই’ন্টা’রে’স্টে’ড, সেটা মে বি আপনি বুঝেই গেছেন!”

লোকটা ঠিক কি চাইছে, কেনো এমন করছে তা বুঝতে বাকি নেই আলফার..

“আই থিঙ্ক আপনার আমার ব্যাপারে..”

“আপনি আমার ব্যাপারে কিছু জানেননা, জানলে হয়তো বারবার এখানে আসতেন না”

“আপনি তো আমাকে জানারই সুযোগ দেননি, শুরু থেকেই ইগনোর করছেন। তাহলে কিভাবে জানবো?”

“তাহলে আজ জেনে নিন, আই অ্যাম ম্যারেড”

বাঁ’কা হাসলো পুরুষটি..

“এটা আমার উত্তর না!”

“আপনি যা চাইছেন তার জন্যে এর থেকে বেটার উত্তর আর আমার কাছে নেই”

“ওকে, সো আপনি ম্যারেড?”

“আপনি বোধহয় আমার কথাটা ফান হিসেবে নিলেন। আমি সত্যিই বিবাহিতা”

“আই গেস আজ আপনার আজ আমার সঙ্গে কথা বলার মুড নেই, ফাইন! আমি আজ তবে আসছি”

“এক্সকিউজ মি মিস্টার! আপনি আর এখানে না এলে ভালো হয়। এটা আমার কাজের জায়গা, আর যেমনটা বললাম আমি ম্যারেড। আমি চাইনা আপনার জন্যে পার্সোনাল লাইফে কোনো প্র’ব’লে’ম হোক”

“আমি কি করবো না করবো সেটা আমিই ঠিক করবো মিস আলফা। এনিওয়ে, সি ইউ লেটার”

ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে লোকটা চলে গেলো, আলফা বুঝতে পারছে না লোকটা আসলে চাইছে কি আবার বিবাহিতা বলার পরও কোনো রি’য়ে’ক্ট করলো না! আপাতত ওই লোকের চিন্তা মাথা থেকে ঝে’ড়ে বাড়ির দিকে ছুটলো আলফা, নাহলে যে দেরি হয়ে যাবে। পার্কিং লটে নিজের গাড়ি দেখে আলফা ভীষন খুশী হয়, রুমে গিয়েই ফাহাদকে দেখে বলে উঠলো..

“ফাইনালি আমার গাড়ির কথা মনে পড়েছে আপনার”

“হ্যাপি এবার?”

“ভীষন! এত্তদিন পর আমি শখের গাড়িটা চোখের সামনে দেখে অনেক ভালো লাগলো”

“আমাকে আর আপনার সঙ্গে যেতে হবে না”

“জানতাম এটাই বলবে, এইজন্যেই তো এতোদিন..”

“হোয়াট?”

“নাথিং! তৈরি হয়ে নাও। মনে আছে তো পার্টির কথা?”

“আছে, এইজন্যেই তো আগে ফিরলাম”

সাতটায় বেরোবে ওরা, তো আলফা জলদি ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিলো। আসমানী রঙের একটা সিল্ক শাড়ি পড়েছে আলফা, সঙ্গে ম্যাচিং কানের দুল, এক হাতে ম্যাচিং চুড়ি। মেশিন দিয়ে চুলগুলো হালকা ওয়েভি করে নিলো, সঙ্গে হালকা মেকাপ। ফাহাদ রেডি হয়ে এসেই আলফাকে প্রশ্ন করে..

“অ্যাম আই লুকিং হ্যান্ডসাম? অবশ্য আমি জানি আমাকে হ্যান্ডসাম লাগছে”

“আপনি তো নিজেই নিজের প্রশংসা করে কুল পাননা, আমি আর কি বলবো?”

এতক্ষণ আলফার দিকে ভালোভাবে না তাকালেও এবার চোখ পড়েছে, মেয়েটাকে ভীষন মায়াবী লাগছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য চোখ আটকে গেলো ফাহাদের, আলফা ঘুরে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো..

“নিজের প্রশংসা তো করলেন, এবার বলুনতো আমায় কেমন লাগছে?”

ফাহাদের তাকানো দেখে আলফা আরেকবার আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো, ও ভেবেছে হয়তো ভালো লাগছে না তাই ফাহাদ এভাবে তাকিয়ে আছে..

“ভালো লাগছে না আমায়?”

এবার আলফার দিক থেকে চোখ সরালো ফাহাদ..

“অ্যা’ভা’রে’জ টাইপের লাগছে!”

“অ্যা’ভা’রে’জ? তাহলে তাকিয়ে ছিলেন কেনো?”

“ও হ্যালো! তুমি অতোটাও সুন্দর নও যে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো”

“আপনার থেকে এর বেশি কিছু আশা করিও না আমি”

“সেটাই বেটার! এনিওয়ে, তোমার হয়ে গেলে চলো”

“হ্যাঁ, আমার হয়ে গেছে চলুন”

পার্সটা হাতে নিয়ে নিলো আলফা, বেরোনোর সময় আবারো ফাহাদ বললো..

“বললে না কিন্তু আমাকে কেমন লাগছে”

“আপনি বলেছেন আমায়?”

“বললাম তো!”

“ফাইন! আপনাকেও অ্যা’ভা’রে’জ লাগছে”

ভেবেছিলো আলফার থেকে একটু ক’ম’প্লি’মে’ন্ট নেবে কিন্তু তা আর হলো না, এখন ফাহাদের নিজেরই নিজের ওপর রা’গ হচ্ছে। কেনো যে আলফাকে অ্যা’ভা’রে’জ বলতে গেলো! ওরা বেরোনোর সময় দেখলো ফারহানও তৈরি হয়ে তা’ড়া’হু’ড়ো করে বেরোচ্ছে বাড়ি থেকে..

“ফারহান! তুইও আমাদের সঙ্গে যাবি নাকি?”

“আমি তোমাদের সঙ্গে কেনো যাবো ভাইয়া? আমি তো আমার কাজে যাচ্ছি, অহনা ওর বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছে। ওর সঙ্গেই দেখা করতে যাচ্ছি”

“শোনো ফারহান, আমি তো অহনার সঙ্গে কথা বলে মোটামুটি সবটা ঠিক করে দিয়েছি। মনে হয় না ও আর তোমার ওপর রে’গে আছে। এরপরও কোনো ই’স্যু থাকলে তোমরা শ’র্ট আউট করে নিও এরপর আমি আঙ্কেল আন্টির সঙ্গে কথা বলবো কেমন?”

“হ্যাঁ ভাবী! আমিও সেটাই চাইছি”

“অল দ্যা বেস্ট!”

“থ্যাংক ইউ ভাবী, ইউ আর দ্যা বেস্ট”

দ্রুত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেলো ফারহান, ফাহাদ ও আলফাও পেছন পেছন বেরিয়েছে। গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়িয়েই ফাহাদ বলে উঠলো..

“তুমি থা’মো এবার আলফা, তোমার সাপোর্ট পেয়ে ও আরো মাথায় চড়ে যাচ্ছে। ব্রে’ক’আ’প হয়ে গেলে হয়ে যাক। ওর মাথায় থেকে তাহলে পা’গ’লা’মি নামবে না”

“আপনার স”ম’স্যা’র কি বলুনতো! আপনি নিজে এমন বলে কি সবাইকে নিজের মতো বানাতে চান?”

“আমি এমন মানে? কি বলতে চাইছো?”

“এখন আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছেনা? চলুন!”

পুরোটা রাস্তা ফাহাদ আলফাকে একই প্রশ্ন করেছে কিন্তু আলফা উত্তর দেয়নি, এদিকে ফাহাদ ভেবেই পাচ্ছেনা আলফা কি বোঝাতে চাইলো? প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর পার্টির ভেন্যুতে পৌঁছায় ওরা, ইতিমধ্যে অনেকে চলে এসেছে। এদের অনেককেই আলফা চেনে, আর যাদের চেনেনা তাদের ফাহাদ চেনে তো। সবার সঙ্গে মোটামুটি একটা পরিচয় পর্ব শেষ হলো। ফাহাদ লক্ষ্য করলো সবাই প্রায় এসে গেছে কিন্তু মিস্টার শাহ এর ছেলে এখনও আসেনি। সফট ড্রিংকস খেতে খেতে ফাহাদ এদিক ওদিক দেখছিলো, তা আলফার নজরে পড়ে..

“আপনি কাউকে খুঁজছেন?”

“ইয়াহ, কিন্তু সে এখনও আসেনি”

অনেকদিনের পরিচিত একজনকে পার্টিতে দেখতে পায় ফাহাদ..

“আলফা। ওয়েট অ্যা মিনিট, আই অ্যাম কামিং”

আলফা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই ফাহাদ গেলো, আলফার পরিচিত অনেকেই এসেছে। তাদের সঙ্গে টুকটাক কথা বলে সময় কা’টা’চ্ছি’লো আলফা। হঠাৎই..

“ইউ আর লুকিং প্রিটি”

পরিচিত এক পুরুষালী ক’ণ্ঠ’স্ব’র কানে পৌঁছাতেই ঘুরে তাকালো আলফা, অবাক হলো সেই পুরুষটিকে দেখে..

“আপনি..!”

“গুড ইভিনিং মিস.!”

পু’রু’ষ’টি’র ঠোঁ’টে’র কোণে সেই অমায়িক হাসি!

“আপনি এখানে কি করছেন, এক মিনিট আপনি কি আবার..”

“নো নো মিস, আমি কিন্তু মোটেও আপনাকে ফলো করছি না! এখানে আমি একজন বিজনেসম্যান হিসেবে এসেছি”

ভ্রু কুঁচকে তাকালো আলফা, যেনো এখনও বুঝে উঠতে পারেনি পুরুষটির কথা। তা বুঝতে পেরেই আরেকবার হাসলো সে..

“আমি বলেছিলাম না আপনাকে কোথাও একটা দেখেছি, মনে পড়েছে এখন। গতবছর এমনই একটা বিজনেস পার্টিতে এসেছিলেন আপনি আপনার বাবার সঙ্গে, অ্যাম আই রাইট?”

“ওহ! তারমানে আপনি আমাকে পার্টিতে দেখেছিলেন?”

“ইয়েস! তবে আমি আপনাকে দেখলেও আপনি হয়তো আমায় দেখেননি, নাহলে চেহারাটা অন্তত মনে থাকতো”

“আপনি যেভাবে বারবার আমার কলেজে যাচ্ছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে,তাতে বিঝিয়ার উপায়ই ছিলো না যে আপনি..”

“আপনি আমায় স্ট’কা’র ভেবেছিলেন তাইনা?”

“আপনি কাজগুলোই করছিলেন তেমন!”

“তাও ঠিক। বাট আই গেস, এবার প্রোপারলি পরিচিত হওয়া উচিত আমাদের”

কথাগুলো বলেই আলফার দিকে হাত বাড়ালো সে..

“আই অ্যাম হামজা, হামজা আব্বাস শাহ”

আলফা কিছু বলবে তার আগেই ফাহাদ এসে যায়..

“গুড ইভিনিং, হামজা”

“গুড ইভিনিং ফাহাদ, অনেকদিন পর দেখা হলো। নাইস টু মিট ইউ”

হ্যান্ডশেক করলো ফাহাদ ও হামজা..

“ইয়াহ! নাইস টু মিট ইউ ঠু। বাই দ্যা ওয়ে, সি ইজ আলফা। আমার ওয়াইফ”

ফাহাদের কথা শুনেই আলফার দিকে একনজর তাকালো হামজা, তার মুখের হাসিটা এখনও আছে।

“ওহ! আই সি, তারমানে আপনি সত্যিই বলছিলেন”

ভ্রু কুঁচকে নিলো ফাহাদ..

“সত্যি? কিসের সত্যি? আলফা, তুমি চেনো ওকে? তোমরা দুজনে তো মে বি কথা বলছিলে একটু আগে”

“চিনি বলতে, গত বছর বিজনেস পার্টিতে দেখা হয়েছিল মে বি আমাদের। আমার মনে ছিলো না তাই উনি নিজের পরিচয় দিচ্ছিলেন আমাকে মনে করানোর জন্যে”

“ইয়াহ, সি ইজ রাইট ফাহাদ। আমরা এই নিয়েই কথা বলছিলাম। বাই দ্যা ওয়ে, তোমার ওয়াইফের স্মৃ’তি’শ’ক্তি বেশ প্র’খ’র বলতে হবে। একটু ডি’টে’ই’ল’স বলতেই সব মনে পড়ে গেছে”

“অবাক হবার কিছু নেই, সি ইজ প্রোফেসর তাও আবার ইতিহাস বিভাগের। এতো সহজে কিছু ভুলবে না”

হামজা – ফাহাদ দুজনেই হাসলো, এদিকে আলফা হামজার দিকে দেখছে। লোকটাকে দু বার দেখেছে আর তাতেই কেমন যেনো অ’দ্ভু’ত লাগে। সবসময় ঠোঁটের কোণে কেমন এক র’হ’স্য’ম’য় হাসি, তবে সেই হাসিটাই যেনো তার সৌন্দর্য আরো দ্বি’গু’ণ বাড়িয়ে দেয়। আলফা লক্ষ্য করেছে পার্টিতে প্রতিটা সময় হামজা ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো, বুফে ডিনার টাইমে এমনকি কারো সঙ্গে কথা বলার সময়ও ওর নজর আলফার দিকেই ছিলো। বিষয়টা কেমন অ’স্ব’স্তি’ক’র লেগেছে আলফার, লোকটা কি করতে চাইছে? পার্টি শেষে বাড়ি ফিরতেই কিচেনে হালকা আলো দেখতে পেলো হামজা, বাড়ির সবাই তো ঘুমিয়ে গেছে তাহলে রান্নাঘরে কে? আস্তে আস্তে পা টিপে রান্নাঘরে যেতেই নিজের ছোটবোনকে লুকিয়ে আইসক্রি’ম খেতে দেখলো হামজা, অবশ্য এতে বিশেষ অবাক হলো না। ভাইকে দেখেই থ’ত’ম’ত খেয়ে উঠলো মেয়েটা..

“ভা..ভাইয়া!”

“তুই আবার এই রাতের বেলা লুকিয়ে আইস ক্রিম খাচ্ছিস? কদিন আগে না তোর নিউমোনিয়া হলো ভুলে গেছিস?”

“ভাইয়া, প্লি’জ প্লি’জ! একটু..”

“আম্মুকে ডাকবো?”

“ধু’র!”

ফ্রিজে আ’ই’স’ক্রি’ম রেখে দিলো মেয়েটা, হামজা ওপরে চলে গেলো। ওর পেছন পেছন ওর ছোটো বোনও গেলো। গিয়েই ভাইয়ের বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়লো..

“তুই এখানে কেনো? রুমে যা”

“এখানে একটু থাকি না, এমন করছিস কেনো!”

“বাড়িতে তো আইসক্রিম ছিলো না। কিনে এনেছিস নাকি?”

“নো, আমার বয়ফ্রেন্ড দিয়েছে”

“হোয়াট! তোর বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সব মি’টে গেছে?”

“হ্যাঁ, সব ঝা’মে’লা মি’টে গেছে”

“গত এক সপ্তাহ এত্তো ঝ’গ’ড়া হলো, এর মধ্যে আবার সব ঠিক হয়ে গেলো?”

“ইয়াহ! জানিস ভাইয়া? শুরুতে ভেবেছিলাম, আই অ্যাম ডান উইথ হিম! কিন্তু নাহ, আজ ও আমাকে খুশি করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। তাই আমিও ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি”

“তোদের ঝ’গ’ড়া করতেও দেরি নেই, ক্ষমা করতেও দেরি নেই। অ’দ্ভু’ত!”
___________________________

“আপনি অফিসে যাবেন না আজকে?”

“নাহ, তুমিও আজ বাড়িতে থাকো”

“আমি তো অন্যের আ’ন্ডা’রে চাকরি করছি তাই চাইলেও বাড়িতে বসে থাকতে পারবো না। তাছাড়া সামনে বাচ্চাদের পরীক্ষা, এখন ব’ন্ধ দেওয়া ঠিক হবে না”

“ফাইন! যাও। তবে আমি আজ ফ্রি আছি, ছুটি হলে তোমাকে পিক করতে যাবো। হোয়াট সে?”

“আমার গাড়ি এখন আমার কাছে আছে মিস্টার! আপনাকে ক’ষ্ট করে যেতে হবে না”

“ইউনিভার্সিটিতে থাকতে আমার গাড়িতে বসার জন্যে কতো মেয়ে লাইন ধরে পড়ে থাকতো তোমার ধারণাও নেই, আজ আমি তোমাকে নিজেই বলছি কিন্তু তুমি আমার অফার নিলে না। এর জন্যে প’স্তা’তে হবে একদিন, দেখে নিও”

ফাহাদের কথায় হাসলো আলফা, লোকটা ইদানিং এমন এমন কথা বলতে করতে শুরু করে যা শুনে শত মন খা’রা’প থাকলেও আলফার মন ভালো হয়ে যায়।

চলবে…

#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#বোনাস_পর্ব

কলেজ থেকে বেরিয়েই ফাহাদকে দেখতে পেলো আলফা, হাসিমুখে এগিয়ে এসে বললো..

“আপনি চলে এসেছেন?”

“ইয়াহ! বাড়িতে বসে বসে বোর হচ্ছিলাম তাই ভাবলাম চলে আসি”

“সকালে অফিসে চলে গেলেই পারতেন, তাহলে আর বোরিং লাগতো না”

“তোমার মতো সুপারওম্যান নই আমি!”

“গতকাল একটা পার্টি অ্যাটেন্ড করেই ক্লা’ন্ত হয়ে গেছেন, ভবিষ্যতে এমন কতো বিজনেস পার্টি অ্যা’টে’ন্ড করতে হবে কাজের চাপ দ্বি’গু’ণ হবে। তখন কি করবেন?”

“তখন তো অভ্যাস হয়ে যাবে”

“অভ্যাসটা এখন থেকেই করুন”

“ফাইন! এখন থেকেই অভ্যাস করবো। হয়েছে? চলো এবার, বাড়ি ফেরার আগে বিকেলের নাস্তা করে যাই”

ফাহাদের প্র’স্তা’বে রাজি হলো আলফা, দুজনে মিলে হালকা ঘো’রা’ঘু’রি করলো সঙ্গে বিকেলের নাস্তাও করে নিলো। কফি খেতে খেতে ফাহাদ প্রশ্ন করলো..

“হোয়াট ডু ইউ প্রেফার? টি অর কফি?”

“কফি!”

“সি’রি’য়া’স’লি? এতো মজার চা ছেড়ে তুমি ক’ফি’খো’র কেনো হলে? মেয়েরা তো নরমালি চা খোর হয়”

“হ্যাঁ তো? সবারই চা ভালো লাগবে তার তো মানে নেই। আমি মাঝেমধ্যে চা পছন্দ করি কিন্তু কফি অলটাইম ফেভরিট”

“এদিক থেকে আমাদের দুজনের মধ্যে তাহলে অনেক পা’র্থ’ক্য”

“হ্যাঁ জানি, আপনি চা পছন্দ করেন”

“তুমি কিভাবে জানলে?”

“আন্টি বলেছে, আপনি নাকি ৩-৪ কাপ চা দিলেও খেয়ে নেবেন। না করবেন না”

“তুমি তো দেখছি আমার সম্পর্কে ভালোই জানো, আমিই মে বি তোমার সম্পর্কে কিছু জানিনা। এনিওয়ে, একটা জিনিষ তো জানলাম। আস্তে আস্তে সব জেনে যাবো”

“আচ্ছা! তো কিভাবে জানবেন?”

“তোমার থেকে জানবো”

“আর যদি আমি না বলি?”

“তাহলে আমিও সেভাবেই তোমাকে জানার চেষ্টা করবো যেভাবে তুমি আমায় জানার চেষ্টা করেছো”

“আমি কিভাবে আপনাকে জানার চেষ্টা করলাম?”

“আমার আম্মুর থেকে আমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছো, আমিও তোমার আম্মুর থেকে জানবো”

“এক্সকিউজ মি! আমি আন্টিকে কিছু জিজ্ঞাসা করিনি ওকে! আন্টি নিজেই বলেছিলো”

“থাক থাক, এখন আর না করতে হবে না। সত্যিটা তো আর বলবে না যে আমার সম্পর্কে জানার থেকে তুমি নিজেকে ক’ন্ট্রো’ল করতে পারোনি!”

ফাহাদের কথা শুনে হাসি চলে এলো আলফার! ওর হাসি দেখে ফাহাদও হাসলো। দুজনেই প্রা’ণ’খু’লে হাসলো, আর এই সুযোগে তারা একে অপরের সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য জানারও সুযোগ পেয়েছে। মিস্টার খানের আজ সকাল থেকেই শরীরটা বিশেষ ভালো নেই। জ্ব’র জ্ব’র বোধ করছে, ফাহাদ বাবার সঙ্গে বসে তার শা’রী’রি’ক অ’ব’স্থা’র খবর নিচ্ছিলো এরই মাঝে মিস্টার খান বলেন..

“ভাবছি, কাল একবার তোমার ফুপুর বাড়িতে যাবো”

“তোমার শরীরটা তো খুব একটা ভালো নেই আব্বু, এখন অতো দূরে যাওয়ার দরকার নেই তোমার”

“কিন্তু যাওয়াটা দরকার ছিলো, ওখানে একটা কাজও ছিলো আর ও বাড়িতে কিছু জিনিস পাঠানোর ছিলো”

“কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়ে দিলেই তো হয় জিনিসগুলো”

“কুরিয়ারে পাঠানোর জন্যে নয়! আসলে অনেকদিন হলো তাদের সঙ্গে দেখা হয় না। আমি সময় পাইনা, জানিসই তো। তোমার ফুপু ফোন করে আফসোস করছিলো সেদিন”

“আচ্ছা, খুব দরকার পড়লে আমি চলে যাবো। কি জিনিস দিতে হবে আমাকে বলে দিও আর তোমার যা কাজ আছে আমাকে বুঝিয়ে দিও। আমি করে দিয়ে আসবো”

“তুমি যাবে? তোমার তো ওখানে যেতে কখনোই ভালো লাগতো না”

“স’ম’স্যা নেই আব্বু, তোমাকে এইটুকু সাহায্য যদি করতেই না পারি তাহলে আর কি করবো? আমিই চলে যাবো”

“ওকে! আমি সব গুছিয়ে নেবো কালকেই”

ফাহাদের ফুপুর বাড়ি শহর থেকে অনেকটা দূরে, যেতেই প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা লেগে যায়। ফাহাদের ওখানে যেতে কখনোই ভালো লাগেনা কিন্তু আজ শুধু বাবার দিকে তাকিয়ে যাওয়ার জন্যে রাজি হয়েছে। এবার শুরু হলো আরেক কাহিনী। সন্ধ্যা থেকে ফারহান ফাহাদকে রাজি করানোর চেষ্টা করছে অহনার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য কিন্তু ফাহাদ তো কিছুতেই রাজি হচ্ছে না

“ভাইয়া প্লী’জ প্লী’জ! এরকম করো না। অনেক ক’ষ্টে অহনার ভাই দেখা করার জন্য রাজি হয়েছে। তোমরা দুজন মিলে আগে একটু কথাবার্তা বলে নাও। তারপর..”

“কিন্তু কালকে পসিবল হবেনা, আমি কালকে কাজে যাচ্ছি শহরের বাইরে। অহনার ভাইকে বল পরে একদিন মিট করতে”

“ভাইয়া, তুমি জানো না কতো ক’ষ্টে অহনা রাজি করিয়েছে তাকে। তুমি প্লিজ কালকে কোনোভাবে ম্যানেজ করো, দরকার পড়লে সকালে যাওয়ার আগে..”

“পা’গ’ল হয়ে গেলি নাকি? আমি ভোর ছয়টায় রওনা দেবো, অতো সকালে কে আসবে? তাছাড়া তোর অহনা তো আর পা’লি’য়ে যাচ্ছেনা। একটু স’বু’র কর”

“ভাইয়া প্লীজ, তুমি তাহলে কালকে তোর যাওয়াটা ক্যা’ন’সে’ল করে দাও নাহলে দেরি করে যা!”

“আমি অলরেডি বাসের টিকিট কে’টে নিয়েছি, এখন দেরি করে যাওয়া যাবেনা”

“এবার আমি কি করবো তাহলে! আমি তো অহনাকে বলে দিয়েছি তুমি আসবে। দেখা করার জায়গাও ফি’ক্স হয়ে গেছে”

“তুই আমার যাচ্ছে জিজ্ঞাসা না করেই জায়গা ফিক্স করতে বললি কিভাবে? আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিস?”

ফাহাদের কথা শুনে ফারহান চোখ মুখের অবস্থা এমন করলো যেনো এখনই কা’ন্না করে দেবে, ছোটো ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে ফাহাদ কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। পরে কিছু একটা ভেবে বললো..

“এই এক মিনিট! এতো মে’লো’ড্রা’মা করতে হবে না। অহনার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে হবে তাইতো?”

“হ্যাঁ! তুমি যাবে ভাইয়া?”

“অহনার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করা নিয়ে কথা, আমাকেই যেতে হবে এমন কোনো মানে নেই। চি’ন্তা করিস না, কালকে ব্যবস্থা হয়ে যাবে”

ডিনার শেষে ফাহাদ আলফাকে জানায় কাল ও শহরের বাইরে যাবে, এটা জানার পর ফাহাদের ড্রেস প্যাকিংয়ে আলফা সাহায্য করে..

“তুমি যাবে আমার সঙ্গে?”

“জানেনই তো আমার কলেজ আছে, তাছাড়া আমার ম’ফ’স্ব’ল এলাকা খুব একটা ভালো লাগেনা। ছোটো থেকেই যেহেতু শহরে বড় হয়েছি। ওখানে গেলেই কেমন যেনো অ’স্থি’র লাগে”

“তুমি তো দেখছি আমার মতো, আমারও একই স’ম’স্যা। ফুপুর বাড়িতে শেষ কবে গিয়েছি মনে পড়েনা। কিন্তু আব্বুর কথা ভেবে যেতে হবে এবার”

“স’ম’স্যা নেই, ২-১ দিনেরই তো ব্যাপার। ঘু’রে আসুন। এই সুযোগে ফুপুর সঙ্গে দেখাও হয়ে যাবে”

“ইয়াহ! আচ্ছা কালকে সকালে তোমার সময় হবে?”

“কেনো?”

“ফারহান বলেছে তোমায় কিছু?”

“হ্যাঁ বলেছে তো, আপনি নাকি বলেছেন অহনার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। কিন্তু কিভাবে যাবেন? আপনি তো আরেক কাজে যাচ্ছেন”

“আমি তো যেতে পারবো না, তবে সকালে একটু সময় বের করে তুমি চলে যেও অহনার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে”

“আমি?”

“ইয়াহ! আমার যাওয়া আর তোমার যাওয়া একই কথাই তো হলো”

“কিন্তু আমি ওখানে গিয়ে কি বলবো?”

“দেখো, আমার মনে হয় আমার থেকে তোমার যাওয়াটাই বেশি ভালো হবে যেহেতু তুমি ওদের বিষয়ে আমার থেকে বেশি ই’ন্টা’রে’স্টে’ড। কথাবার্তা তুমি গুছিয়ে বলতে পারবে, আমি হয়তো ওখানে গেলে এমনকিছু বলবো যাতে ওদের ব্রে’ক’আ’প হয়ে যায়”

“ভারী অ’দ্ভু’ত মানুষ আপনি! দেখছেন ফারহান এতো চেষ্টা করছে সবটা ঠিক করার আর আপনি কিনা সারাক্ষণ ছোটো ভাইয়ের ব্রে’ক’আ’প করানোর চেষ্টায় আছেন”

“তুমি যদি একটু আগে ওকে দেখতে তাহলে বুঝতে, একটা মেয়ের জন্যে কা’ন্না’কা’টি শুরু করেছে ফারহান। সি’রি’য়া’স’লি?”

“কেনো? একটা ছেলে কি একটা মেয়ের জন্যে কা’ন্না করতে পারেনা?”

“আই ডোন্ট নো, বাট আমার এসব পছন্দ নয়”

“আচ্ছা বেশ, আপনাকে কিছু ভাবতে হবেনা এসব নিয়ে। কালকে আমি চলে যাবো আর যা কথা বলার আমিই বলবো। আপনি শুধু যে কাজে যাচ্ছেন তাতে মন দিন”

“ফারহানকে বিয়ে করানোর জন্যে তুমি কেনো ই’ন্টা’রে’স্ট দেখাচ্ছ বুঝতে পারছি না”

“ই’ন্টা’রে’স্ট দেখাচ্ছি না, ভাবী হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করছি যেটা ভাই হিসেবে আপনার করা দরকার ছিলো”

“বেশ, করো! তবে হ্যাঁ, যা কথা বলার তুমিই বলে শেষ করে এসো। আমি আবার ফিরে এসে যেনো যেতে না হয়”

“ডোন্ট ওরি, আমিই সব সেটেল করে আসবো”

আলফার ওপর এই দায়িত্ব দিয়ে নি’শ্চি’ন্ত হলো ফাহাদ নাহলে ফারহান তো ওর পিছুই ছাড়ছিলো না। রাতের প্রথম প্রহর শেষ হয়েছে মিনিট দশেক আগেই, পুরো শহর ঘুমে আচ্ছন্ন। দূর থেকে কিছু কু’কু’রের ডাক ভেসে আসছে, আর গুটিকয়েক গাড়ির শব্দ। বেশ বৃ’ষ্টি হচ্ছে বাইরে। এই দা’ব’দা’হ গ’র’মের রাতে বৃষ্টি রেশ মানেই বেশ একটা ঘুম হওয়ার কথা। কিন্তু নাহ, সবার ক্ষেত্রে রাত তো একরকম হয় না। বিশেষ করে স্বল্প নিদ্রার মানুষের জন্যে রাতটা বড়ই য’ন্ত্র’ণা’র! সময় যে কাটেনা, তেমনি হচ্ছে হামজার সাথে। রোজকার মতো আজও চোখে ঘুম নেই, পাশ ফিরে শুয়ে চেয়ে দেখছে বাইরের আকাশটা! এ যেনো নিত্যদিনের রুটিন হয়ে গেছে, ঘুম আসেনা! জোর করে কিছুক্ষণ চোখ বুজে থাকার পরও যখন ঘুম এলো না তখন বি’র’ক্ত হয়ে গেলো হামজা। ঝট করে উঠে পড়লো বিছানা থেকে, ঘরের লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে দেয়ালের সামনে থাকা বড় ক্যানভাসের ওপর থেকে ঢাকা দেওয়া কাপড়টা সরিয়ে দিলো। অর্ধ-সম্পন্ন পেইন্টিং এর দিকে মিনিট দুয়েক চেয়ে রইলো হামজা, দীর্ঘশ্বাস ফেলে কালার – প্লেটে দরকারি রংগুলো মি’শি’য়ে নিয়ে বসলো ছবিটা সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু ও জানে, আজও পুরোটা শেষ করতে পারবে না। কারণ এই পেইন্টিং করতে গিয়ে এক নি’দা’রু’ণ ক’ষ্ট অনুভব করে হামজা। যন্ত্রণা হয় বুকের ভেতর! আজও পেইন্টিংটির অল্প কিছু অংশ শেষ করলো। রাতটাও প্রায় নির্ঘুমই কাটলো হামজার..
______________________
সকালে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে ফাহাদ, আলফা দেখে ওর সব গুছিয়ে দিয়েছে। ব্রেকফাস্ট করেই বেরোবে ফাহাদ, বেরিয়ে যাওয়ার সময় কি একটা ভেবে আবার ফিরে এলো ফাহাদ..

“কি হলো?”

“ভুলে গেছি!”

“কি?”

“ক্যান আই হা’গ ইউ?”

ফাহাদের এমন কথায় অ’বা’ক হলো আলফা!

“হ্যাঁ?”

দ্বিতীয়বার উত্তর দিলো না ফাহাদ, দুহাতে হালকা করে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিলো আলফাকে..

“সি ইউ সুন”

“সা’ব’ধা’নে যাবেন”

এরপর ব্রেকফাস্ট করেই ফাহাদ বেরিয়ে গেছে, ও যাওয়ার প্রায় ঘ’ণ্টা’খা’নে’ক পর আলফাও বেরিয়েছে। অহনার ভাইয়ের সঙ্গে ফাহাদের দেখা করার কথা ছিলো, কিন্তু ফাহাদ যেহেতু যাচ্ছে তাই আলফাকে গিয়ে দেখা করে কথা বলে আসতে বলেছে। সকালেই দেখা করার সময় দিয়েছে অহনার ভাই, তাই আলফা আজ সময় হাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। প্রথমে গেছে কফিশপে! সেখানে গিয়ে দ্বিতীয় টেবিলে হামজাকে বসা দেখে একদফা অবাক হলো আলফা, হামজাও ওকে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছে বটে..

“আবারো আপনি!”

“আজ আপনি এখানে কেনো?”

“আমি তো..এক মিনিট! আপনি অহনার ভাই? ফারহান আমাকে অহনার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে পাঠিয়েছে”

“ওহ! ভাইয়ের জায়গায় তাহলে ভাবী এসেছে। ওয়েল, আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন মিস. অহনা। আমিই অহনার ভাই”

আলফা আর কথা না বাড়িয়ে হামজার মুখোমুখি চেয়ারটা টেনে বসে পড়লো, হামজা মিনিট দুয়েক আলফাকে পর্যবেক্ষণ করলো..

“তাহলে শুরু করা যাক? ফারহান..”

“বারবার আমাদের দেখা হয়ে যাচ্ছে, বিষয়টা কা’ক’তা’লী’য় বলবো না ভ’বি’ত’ব্য? বলুনতো আলফা!”

“অবশ্যই কা’ক’তা’লী’য়, অবশ্য আমার জানা ছিলো না যে আপনি অহনার ভাই। ফারহানের মুখে আপনার নাম শুনিনি এমনকি ফাহাদও কিছু বলেনি”

“আমি গতকালই জেনেছি যে অহনা কার সঙ্গে প্রে’ম করছে। ভেবেছিলাম ফাহাদ আসবে আজ কিন্তু তার বদলে দেখছি আপনি এসেছেন”

“ফাহাদ আজ বাড়িতে নেই, আর আপনিও নাকি বলেছেন আপনার হাতে আর সময় নেই তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই আসতে হয়েছে”

একটু পরে ওয়েটার এসে দু কাপ কফি দিয়ে গেলো, আলফা বুঝলো হামজা আগে থেকেই অর্ডার করে রেখেছিলো। কফি কাপের হ্যা’ন্ডে’লে হাত ঘো’রা’তে ঘোরাতে হামজা বললো..

“ইয়াহ! অ্যাজ ইউ নো, আই অ্যাম অ্যা বিজি পার্সন। শুধু আমার বোনের পা’গ’লা’মি’র জন্যে এখানে এসেছি”

“আপনিও তো দেখছি ফাহাদের মতো কথা বলছেন, দুজন মানুষ একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চাইছে এতে এতো স’ম’স্যা কেনো আপনাদের বুঝিনা”

“অহনা এখনও অনেক ছোটো, বিয়ে বিষয়টা ওর কাছে এখন ফ্যা’ন্টা’সি’র মতো কিন্তু এটা যে কতোটা দায়িত্বের ব্যাপার সেটা ও এখনও বুঝতে পারছে না আর ফারহানের ক্ষেত্রেও তাই। আর এখানেই আমার স’ম’স্যা”

“কিন্তু ফারহান দায়িত্ব নিতে ভ’য় পাচ্ছেনা আর অহনাও আস্তে আস্তে সব শিখে যাবে। বিয়ের আগে কোনো মেয়েই সংসারের কাজ শিখে আসেনা”

কফি কাপে এক চু’মু’ক দিয়েই প্রশ্ন করে বসলো হামজা..

“তারমানে আপনিও বিয়ের পরে সব শিখেছেন?”

“মিস্টার হামজা, এখানে কিন্তু কথাটা আমাকে নিয়ে হচ্ছেনা”

“আমার বোন অনেক আদরে বড় হয়েছে আলফা, ও এখনই সংসারের ঝা’মে’লা’য় যেতে পারবে না”

“বেশ তবে, অহনাকে নিয়ে আপনাকে কিছু ভাবতে হবেনা। ফারহানের ভাবী হিসেবে ওর দায়িত্ব আমি নিলাম”

“এখানে আর আলোচনার কিছু নেই। আমি আমার শ্বশুরের সঙ্গে কথা বলে নেবো, আপনি আপনার বাড়িতে কথা বলুন। ফারহান আর অহনার বিয়েটা হবে, ওরা যেভাবে চাইছে সেভাবেই হবে”

কথা শেষ হতেই আলফা উঠে আসতে গেলে হামজা বলে..

“আই গেস এটা আপনার পছন্দের কফি নয়, বললেই হতো। আমি আরেকটা অর্ডার করে দিচ্ছি”

“নো, থ্যাংকস। আমি খাবো না”

“কেনো?”

“আপনি যেমন ব্য’স্ত মানুষ, আমিও তেমনি। এখন এখানে বসে আপনার সঙ্গে কফি খেতে গেলে অনেকটা সময় ন’ষ্ট হবে সেটা আমি করতে চাইনা”

“আর আপনার জন্যে যে আমার এতো সময় ল’স হয়েছে তার ব্যাপারে কি বলবেন? কলেজে গিয়ে আপনার ক্লাস শেষ হবার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে আমায়”

“প্রথমদিনই যা বলার বলে দিয়েছিলাম, দ্বিতীয়দিন আপনার ওখানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিলো না। আপনি গেছেন, দ্যাটস ইউর প্র’ব’লে’ম”

কফি ছুঁয়েও দেখেনি আলফা, নিজের কথা শেষ হতেই উঠে চলে গেলো। গ্লাসের বাইরে দিয়ে আলফার যাওয়ার পানে দেখলো হামজা। নিজের কফি কাপে আরেক চু’মু’ক দিতে গিয়েও কেনো যেনো ইচ্ছে হলো না আর, সামনেই আলফার কফি কাপটার দিকে নজর পড়লো। মেয়েটা কফির কাপটা অব্দি ছুঁ’য়ে দেখেনি। দীর্ঘশ্বাস ফেললো হামজা..

“আজও আমার কফির অফার এ’ক’সে’প্ট করলেন না আপনি আলফা..! এই নিয়ে তিন বার! হামজা, তোর তো দেখছি ক’পা’ল’টা’ই খা’রা’প!”

চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ