#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০৮
আলফার বাড়ি থেকে ডিনার শেষে ফাহাদ ফিরে যাওয়ার, যাওয়ার সময় মিস্টার খানের জন্যে ফাহাদের কাছে আলফা খাবার পাঠিয়ে দেয়। আজ রাতটা আলফার মা ওকে এখানে থাকার জন্যে অনুরোধ করেছে তাই ওকে থেকে যেতে হবে। ফাহাদ যাওয়ার পরই আলফার বড় ফুপু আলফার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলেন..
“যাক, অবশেষে তোর মেয়ের গতি হয়েছে। নাহলে বিয়ের পরই তোর জামাই যেভাবে চলে গেলো তাতে আমি তো ভেবেছিলাম এই মেয়ের কপাল বুঝি পু’ড়’লো, তোর বাড়িতে না তোর মেয়ে সারাজীবনের জন্যে রয়ে যায়”
তার এমন কথা শুনে আলফার মা বললেন..
“আপা, এইসব কথা এখন বলার কি খুব দরকার আছে? আলফা এই বাড়িতে আছে এখন, ওর কানে গেলে ক’ষ্ট পাবে”
“ভুল তো কিছু বলছি না, আর শোনো এই কথা শুধু আমার না আমাদের সব আত্মীয় স্বজনের কথা। আমরা তো ভেবেছিলাম ছেলে বুঝি বিদেশে বিয়ে শাদী করে আর দেশে ফিরবে না”
“আহা আপা, তুমি এবার থামো তো। জানোই তো ফাহাদ কাজের জন্যে গেছিলো, আর ও অনেক ভালো ছেলে। এমনকিছু করবে না এইটুকু বিশ্বাস অন্তত আছে ওর ওপর”
“থাক থাক! আমায় আর কিছু বোঝাতে হবেনা। অবশ্য এতো কথাই তো হতো না যদি তোর মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে যেতো। তোর মেয়ে বাপের বাড়িতে রইলো এতদিন। বিয়ের পর এতো সময় কেউ বাপের বাড়ি পড়ে থাকে?”
“আচ্ছা এখন এসব আলোচনা থাক না আপা, সব তো মিটেই গেছে এবার আস্তে আস্তে দুজনের মি’ল’মি’শ হয়ে গেলেই শু’ক’রি’য়া”
“ভালো হলেই ভালো, তবে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে শুরু থেকেই যদি এতো দুরত্ব থাকে তা সহজে মেটেনা। তোর মেয়ে এই বাড়িতে থেকে কম কথা শুনেছে? ওই বাড়ি ফিরে গেলেই হতো”
উনি এতো উ’চ্চ’স্ব’রে কথাগুলো বলছিলেন যে আলফা নিজের ঘর থেকেই সব শুনেছে, এই কারণেই আজ এখানে আসার ইচ্ছে ছিলো না আলফার। গত ছয় মাসে যতোবার ওর ফুপু বাড়িতে এসেছে ততোবারই এমন কথা শুনিয়েছেন যাতে আলফার মন ওনার প্রতি বি’ষি’য়ে উঠেছে। এতোদিন শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে না হলেও আজ এখনই সেখানে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে আলফার! ও ঠিক করলো এখানে কোনোরকম আজকের রাতটা পার করে কাল সকালেই ফিরে যাবে। ওদিকে ফাহাদের আজ ফিরতেই অনেকটা রাত হয়ে গেছিলো, মাথা ব্যথা করছিলো বলে এক কাপ কফি বানিয়ে নিলো। মিস্টার খানের রুমে একা ভালো লাগছিলো, রান্নাঘর থেকে আওয়াজ পেয়ে উনি রুম থেকে বেরিয়ে এসে ফাহাদকে দেখে ডাইনিং টেবিলে বসে কফি খাচ্ছে..
“এখানে বসে আছো কেনো এখনও?”
“তুমি এখনও ঘুমাওনি?”
“ঘুম আসছেনা আমার, কিন্তু তুই এখনও জেগে কেনো?”
“আমি একটা কথা ভাবছিলাম”
“আমার সঙ্গে শেয়ার করা যাবে?”
“অফ কোর্স আব্বু। আসলে আলফার বড় ফুপু, আমায় আজ নানানভাবে জে’রা করছিলেন। কেমন একটা আ’সা’মি টাইপের ফিল আসছিলো আমার নিজের প্রতি। বুঝলাম না কেনো!”
“জে’রা করছিলো মানে?”
“উম্ম, হ্যাঁ অনেকরকম প্রশ্ন করেছেন আমাকে। আবার আলফাকেও কিছু কথা বললেন। আমার মনে হলো উনি একটু ক’ড়া টাইপের!”
“হতেই পারে, অনেকের স্বভাব থাকে এমন”
“আই থিঙ্ক এইজন্যেই আলফা ওর ফুপুকে পছন্দ করেনা, আজ বাসায় যাওয়ার সময় ওর মু’ড অফ ছিলো। আমি জিজ্ঞাসা করায় স্বীকার করেনি”
ছেলের কথা শুনে অনেকটা স্বস্তি পেলেন মিস্টার খান, যেনো এতোদিন ধরে এটাই চাইছিলেন উনি..
“মহিলাকে আমার একটুও সুবিধার লাগেনি, আগে জানলে আলফাকে নিয়েই যেতাম না ওখানে”
এবার আর ছেলের কথায় না হেসে পারলেন না মিস্টার খান..
“যাক, ছেলের আমার বেশ উন্নতি হয়েছে বলতে হবে”
“কিসের উন্নতি?”
“এইযে, আজ তোর বউয়ের মন খা’রা’প ছিলো সেটা বুঝতে পেরেছো। এভাবেই আস্তে আস্তে আলফাকে পুরোটাই বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে বুঝেছো? মেয়েটার মন এমনিতেই ভে’ঙে গেছে, এখন তুমি যদি চেষ্টা না করো তাহলে ওর মন জু’ড়’বে না”
বাবার কথায় ফাহাদ উত্তর না দিলেও কথাটা মাথায় রাখলো, এভাবেই একটু একটু করে আলফা বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। পরদিন সকালের নাস্তা শেষেই আলফা বেরোনোর জন্য তৈরি হয়ে নেয়। তৈরি হয়ে নিচে নামতেই ফুপু সামনে পড়তে হয়। ওকে দেখামাত্রই ওর ফুপু খেঁ’কি’য়ে বলে ওঠেন..
“এই সাত সকালে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”
“কলেজ আছে আমার, ব’ন্ধ দেওয়া যাবেনা”
“ওহ, তারমানে কাজে যাচ্ছিস!”
ওর ফুপু যে এখন আরো কিছু কথা বলবেন তা বুঝতে বেশি সময় লাগলো না আলফার!
“শোনো মেয়ে, এখন এইসব ছেড়ে নিজের সংসারের দিকে মন দে। মেয়েমানুষকে সংসার করায় মানায় বাইরে চাকরি করায় নয়। এমনিতেই তোর আর তোর স্বামীর মধ্যে দূ’র’ত্ব তো কম না, সেগুলো মে’টা’নো’র চেষ্টা কর”
“ফুপু, আমি সবকিছুই সামলানোর চেষ্টা করছি। সংসার – চাকরি দুটোই ইনশা আল্লাহ ব্যা’লে’ন্স করতে পারবো আর যতদূর রইলো আমাদের সম্পর্কের কথা তা না হয় সময়ের ওপরেই ছেড়ে দিলাম। সময় সব ঠিক করে দেবে”
“মুখে বড় বড় কথা বললে সম্পর্ক ঠিক হয়না রে বো’কা মেয়ে, তুই চাকরির জন্যে সারাদিন বাড়ির বাইরে পড়ে থাকছিস এই সময়টা বাড়িতে তোর শাশুড়িকে সাহায্য করলেও তো পারিস”
“ফাহাদও কিন্তু সারাদিন বাড়ির বাইরেই থাকে ফুপু, ও পারলে আমি কেনো পারবো না? তাছাড়া আমার শাশুড়ি যথেষ্ট ভালো, আমার চাকরি নিয়ে ওনার কোনো স’ম’স্যা নেই”
“পুরুষ মানুষের সঙ্গে মহিলা মানুষের কিসের তুলনা!”
“আমি তুলনা করছি না ফুপু, শুধু এইটুকু বোঝাতে চাইছি যে তারা পারলে আমরাও পারবো। তাছাড়া যদি দেখি আমি দুটো একসঙ্গে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারছি না তখন নিজেই চাকরিটা ছেড়ে দেবো। তবে তার আগে যতোটা দূরে যেতে পারি যাবো”
“আলফা, তুই আমার মুখে মুখে ত’র্ক করছিস”
“না ফুপু, আমি শুধু তোমার বলা কথাগুলোর উত্তর দিলাম। এরপরও যদি আমার কথা শুনে তোমার অভদ্রতা মনে হয় তাহলে ক্ষ’মা চাইছি”
আলফার কথাবার্তা শুনে ভীষন রে’গে গেলেন ভদ্রমহিলা! আলফা আগেই ওর মায়ের সঙ্গে দেখা করে নিয়েছিলো তাই আর ওখানে দেরি না করে বেরিয়ে আসে। আলফা যেতেই ওর ফুপু রে’গে রান্নাঘরে গিয়ে আলফার মা’কে বললেন..
“বড়দের মুখে মুখে ত’র্ক করার শিক্ষা দিয়েছো নাকি তোমার মেয়েকে?”
“কি হয়েছে আপা?”
“তোমার মেয়ের চো’পা দেখেছো? আমাকে কথা শুনিয়ে গেলো! এরকম চ’টাং চ’টাং কথা শাশুড়ির সামনে বললে দুদিনও সংসার টি’ক’বে’না”
ড্রইং রুমে আলফার ও ফুপুর মধ্যে কি কথা হয়েছে তা রান্নাঘর থেকে আলফার মা বেশ ভালোভাবেই শুনেছেন, এখানে আলফার দো’ষ ছিলো না বিধায় আলাফর ফুপুর কথার কোনো উত্তর দিলেন না আলফার মা। আলফা নিজের বাসায় থেকে সোজা কলেজেই গেছে, কলেজ টাইম শেষে বিকেলে একটা মিটিং ছিলো। সেটা শেষ করে বাড়ি ফিরতে কিছুটা দেরি হয়েছিলো, বাড়ি ফিরে দেখলো ওর শাশুড়ি এসে গেছে..
“তোমার কোনো সমস্যা হয়নি তো আলফা?”
“কোনো সমস্যা হয়নি আন্টি, আপনি আরো কয়েকদিন থেকে এলে পারতেন”
“আরে নাহ, থেকেই তো এলাম কদিন। আসলে কি বলোতো মা বাবা বেঁ’চে না থাকলে না বাড়িতে যেতে মনই টানেনা, শুধু ভাইয়াদের অনুরোধে গিয়ে ঘুরে এলাম আর কি”
মিসেস খানের বাড়ি থেকে অনেককিছু দিয়ে দিয়েছে, সেগুলো খেয়াল করা মাত্রই আলফা বলে..
“জ্বি, আপনি এগুলো রেখে যান। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে সব গুছিয়ে রেখে দেবো”
“আরে স’ম’স্যা নেই, আমিই রাখতে পারবো। তুমি যাও আর হ্যাঁ ফাহাদের বাবা ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করেছে তো? লোকটা তো আবার আমার অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেয়ে বসে”
“আন্টি, আপনি যেভাবে বলেছেন সেভাবেই খেতে দিয়েছি আঙ্কেলকে আর ওষুধও দিয়েছি। তাই এ ব্যাপারে আপনি চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন”
মিসেস খানের সঙ্গে কথা শেষে রুমে ঢুকতেই আলফার নজর পড়লো ফাহাদের দিকে, বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ল্যাপটপে মনোযোগ সহকারে কিছু করছে সে। কাধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলো আলফা..
“সরি, ফাহাদ!”
“কেনো?”
“গতকাল আমার ফুপুর কথায় যদি আপনার খা’রা’প লাগে তার জন্যে। উনি যে আপনাকে ঐভাবে এতগুলো কথা জিজ্ঞাসা করবেন আমি ধারণা করিনি নাহলে..”
“তোমার ফুপু কি বরাবরই এমন ছিলেন নাকি আমিই প্রথম ওনার ক্রো’ধে’র শি’কা’র হলাম?”
“বরাবরই উনি এমন, যাদের ওনার পছন্দ হয় না তাদের মধ্যে প্রায় সবার সঙ্গেই এমন করে কথা বলেন”
“আমাকে অ’প’ছ’ন্দ করার কোনো বিশেষ কারণ আছে?”
“তেমন কিছুনা, বললাম না উনি একটু ওরকমই”
“তোমাকে কি আরো কিছু বলেছে?”
“না”
“তোমার আমাকে আগেই বলা উচিত ছিলো তোমার ফুপুর সম্পর্কে, তাহলে কাল ওখানে আমি বা তুমিই কেউই যেতাম না। ওনার কথাবার্তা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি”
“আপনার রা’গ হয়েছে নাকি?”
“কিছুটা তো হয়েছেই, ইউ নো হোয়াট? আমার সঙ্গে কেউ এভাবে কখনো কথা বলেনি যেভাবে তোমার ফুপু বলেছে”
ফাহাদ যে সত্যিই বি’র’ক্ত হয়েছে তা আলফা বুঝতে পেরে আর কথা বাড়ালো না। ডিনার শেষে আলফা দেখলো ফারহান মুখ শু’ক’নো করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে আর বারবার কাউকে কল করছে কিন্তু যাকে কল করছে সে হয়তো রিসিভ করছে না!
“কি ব্যাপার ফারহান? মুখটা এমন করে রেখেছো কেনো?”
“ভাবী! মেয়েরা এতো স’ন্দে’হ’বা’দী কেনো হয় আমাকে একটু বলবে প্লিজ? মানে, কারণটা কি?”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?”
“তুমি তো জানো যে গ্রামে নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকে তাইনা? ঠিকমতো কথা বলতে পারিনি তাই অহনা আমাকে স’ন্দে’হ করছে, ব্রেকআপ করতে চাইছে”
“এমনি এমনি তো আর না, কোনো কারণ নিশ্চয়ই আছে?”
“হ্যাঁ আসলে আমার মামাতো বোন আছে একটা, এর আগে একদিন অহনাকে বলেছিলাম সে আমাকে পছন্দ করে ব্যস এরপর থেকেই কিছু হলে ওকে নিয়েই স’ন্দে’হ করে!”
“তো ব্রে’ক’আ’প করে ফেল!”
“ফাহাদ! এভাবে বলছেন কেনো?”
“তো আর কি করবো? ফারহান, তোরা দুজনে পাঁচ বছর ধরে প্রেম করছিস এরপরও তোর গার্লফ্রেন্ড তোকে সন্দেহ করে। তো ওকে ধরে রেখে কি লাভ? ব্রে’ক’আ’প করে দে”
“ধু’র! ভাইয়া, আমি এখানে স’ম’স্যা’র সমাধান করতে চাইছি আর তুমি আছো তোমার কথা নিয়ে”
“তুমি এতো চিন্তা করছো কেনো ফারহান? পাঁচ বছরে এতো স’ন্দে’হ করেও যখন ব্রে’ক’আ’প করেনি এরপরও করবে না। ডোন্ট ওরি”
“আমার আর ভালো লাগছেনা ভাবী, তুমি একদিন ওর সঙ্গে দেখা করবে প্লিজ? ওকে একটু বোঝাবে”
“ওকে ফাইন! আমি একদিন অহনার সঙ্গে দেখা করবো আর তোমার যতো কথা আছে সব ওকে বলে বুঝিয়ে দেবো”
“আরেকটা হেল্প করবে ভাবী প্লিজ? আব্বুকে একটু বলো না আমার আর অহনার বিয়ের ব্যাপারে! আমি বলেছিলাম আব্বুকে কিন্তু আমার কথার পা’ত্তা’ই দিলো না”
“আমি? এটা তো ফাহাদ বললে মে বি বেশি ভালো হবে”
“আমার এসবে ই’ন্টা’রে’স্ট নেই, সো আমি বলতে পারবো না”
“দেখেছো ভাবী? ভাইয়াকে বলা আর দেওয়ালে মাথা ঠো’কা একই। প্লিজ তুমি একটু আব্বু আম্মুকে বোঝাও”
ফারহানের এই অনুরোধ ফে’ল’তে পারলো না আলফা, তাই ফারহানকে আশ্বাস দিলো যে সময় বুঝে মিস্টার ও মিসেস খানের সঙ্গে অহনা আর ওর বিয়ের কথাটা বলবে। পরদিন বান্ধবীর বিয়ের গিফট্ কিনতে এসে গোল্ড মার্কেটে এসেছে আলফা, যথারীতি ফাহাদও সঙ্গে এসেছে। ব্রেসলেট জারার ভীষন পছন্দ, ওর কাছে ব্রেসলেটের বিশাল কালেকশন আছে তাই আলফা অনেক খুজে একটা লেটেস্ট ডিজাইনের গোল্ড ব্রেসলেট কিনলো জারার বিয়ের গিফট্ হিসেবে। ফাহাদও আলাদা করে একটা গিফট দিতে চাইছিলো কিন্তু আলফার জন্যে কিনতে পারলো না!
“অল কমপ্লিট? তাহলে এবার বলো, তুমি কি চাও”
“আপাতত আমার গাড়িটা ফেরত এনে দিন, তাতেই হবে!”
“আবারো গাড়ি? আনবো না তোমার গাড়ি। বলো কি করবে?”
“ফাহাদ, সত্যি করে আমায় একটা কথা বলুনতো। আপনি আবার আমার গাড়ি বেঁ’চে-টেচে দেননি তো?”
“হোয়াট দ্যা! আমাকে কি তোমার চোর মনে হয় যে তোমার গাড়ি বে’চেঁ টাকা আনবো?”
“তার আগে তুমি আমায় একটা কথা বলো, একটা গাড়ির প্রতি এতো অ’ব’সে’শ’ন কেনো তোমার? একটাদিন এমন কাটেনি যে তুমি আমায় গাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করোনি”
“কারণ আছে”
“সেটা কি বলা যাবেনা?”
“কারণটা আপনার কাছে সি’লি মনে হতে পারে”
“তবুও বলো, আমি জানতে চাই”
খা’নি’ক নীরবতার পর ছোট্ট এক নিঃশ্বাস ফেলে আলফা বললো..
“আব্বুর কাছে দুই বছর ধরে রি’কো’য়ে’স্ট করার পর নিজের পার্সোনাল গাড়ি পেয়েছিলাম। এবার বুঝুন কেনো গাড়িটার প্রতি আমার এতো অ’ব’সে’শ’ন”
আলফার কথা শুনে হাসলো ফাহাদ!
“জানতাম আপনি হাসবেন, এইজন্যেই বলতে চাইনি”
ফাহাদ মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বললো..
“কিউট!”
“কিছু বললেন?”
“কিছুনা, চলো। এসেছি যখন আম্মুর জন্যে কিছু একটা কিনে নেই, আমি আম্মুকে এখনও গোল্ডের কিছু গিফট্ করিনি”
মিসেস খানের জন্যে গিফট্ কিনতে ফাহাদকে সাহায্য করে আলফা, এরপর টুকটাক খাওয়া দাওয়া সেরে বাড়ি ফিরেছে ওরা। আজকের দিনটা ভালোই কে’টে’ছে দুজনের। বলতে গেলে প্রথমবারের মতো অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই একটা দিন কা’টি’য়ে’ছে দুজনে। রাতে, বাবার সঙ্গে কাজের ব্যাপারে আলোচনা করতে এসেছিলো ফাহাদ..
“মিস্টার শাহ এর ডিলটা ফাইনাল হয়ে গেলে আমাদের অনেক সুবিধা হবে, তার সঙ্গে পার্টনারশিপ মানেই আমাদের অনেকটা লাভ”
“সেটাই দ্রুত করার চেষ্টা করছি আমি, কিন্তু মিস্টার শাহ দেশের বাইরে আছেন। এটাই তো স’ম’স্যা হয়ে গেলো”
“সে তো বটেই, তবে সে দেশে ফিরলেই একটা মিটিং ফি’ক্স করে ডিলটা সাইন করিয়ে নিতে হবে”
“ওহ হ্যাঁ ফাহাদ, কাল সন্ধ্যায় একটা বিজনেস পার্টি আছে। আমাদের পুরো ফ্যামিলিকে ইনভাইট করেছে কিন্তু আমার একটা কাজ আছে। যেতে পারবো না, তুমি যেও।”
“বিজনেস পার্টি? আব্বু, তুমি জানো এইসব বিজনেস পার্টি আমার প’ছ’ন্দ নয়!”
“অভ্যাস করতে হবে ফাহাদ, একটা বিজনেস পার্টিতে কতোরকমের বিজনেসম্যান আসে তোমার ধারণা নেই। সেখানে গেলে নতুন অনেকের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় তাছাড়া তুমিও এখন যেহেতু শুরু করছো তাই অন্যদের সঙ্গে তোমাকেও পরিচিত হতে হবে”
“ফাইন! তুমি যখন বলছো যাবো”
“মিস্টার শাহ এর ছেলেও আসবে পার্টিতে, তার সঙ্গে কথাবার্তা বলো। হতে পারে এতে আমাদের কিছুটা সুবিধা হবে আর হ্যা, আলফাকে সঙ্গে নিয়ে যেও। আবার একা চলে যেও না”
চলবে…