তোমাতে মত্ত আমি পর্ব-০৭

0
806

#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০৭

রাতের খাবারে সবটা সমলেই নিয়েছিলো আলফা, কিন্তু বি’প’ত্তি বাঁধলো রুটি বানাতে গিয়ে। মিস্টার খানের রাতে রুটি খেতে হয়, ফাহাদের মা রোজকার রুটি ওনাকে রোজই বানিয়ে দেন। আজ যেহেতু উনি নেই তাই আলফাকে বানাতে হচ্ছে। কিন্তু রুটির সব ধরনের শে’প’ই হচ্ছে শুধু গোলটাই হচ্ছেনা। এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লো আলফা। ফাহাদ ফ্রিজ থেকে জুসের বোতল নিতে এসেছিলো, ফোনে নিজের নতুন অ্যাসিস্টেন্টকে গাইড করতে করতে গলা প্রায় শু’কি’য়ে গেছে বে’চা’রা’র। তার মাঝেই ফাহাদ রান্নাঘরের দিকে একটু উঁকি দিলো, আলফার মুখের অবস্থা দেখে কান থেকে ব্লুটুথ খুলে এগিয়ে এলো..

“চোখমুখের এই অবস্থা কেনো তোমার?”

উত্তর দিলো না আলফা, এখন তার সকল মনোযোগ শুধু রুটি গোল করার দিকেই। ফাহাদ আলফার বানানো রুটির দিকে তাকিয়ে নিজের হাসি থামাতে পারছিলো না। তবুও অনেক ক’ষ্টে নিজেকে ক’ন্ট্রো’ল করলো। মুখ ফুলিয়ে তাকালো আলফা..

“খুব তো হাসছেন! আপনি পারেন রুটি বানাতে?”

“না!”

“তাহলে হাসছেন কেনো? আমি তো তাও চেষ্টা করছি”

ফাহাদ একটা বানানো রুটি উচু করে তুলে ধরে বললো..

“হ্যাঁ, ভালোই চেষ্টা করছো কিন্তু তুমি যেটা বানাচ্ছো সেটা রুটি না বরং কোনো একটা দেশের মানচিত্র হয়ে যাচ্ছে আর কি। ম্যাপে খুঁজে দেখতে হবে এই দেশটা কোথায় অবস্থিত!”

“খুব মজা লাগছে আপনার তাইনা?”

“ভীষন! আমি ভাবছি আমার আম্মু রান্নায় এক্সপার্ট, কিন্তু তার ছেলের বউ সামান্য গোল রুটি করেও রুটি বানাতে পারছে না। এমন মেয়েকে রাখা কি ঠিক হবে?”

“তো ডি’ভো’র্স দিয়ে দিন না, মানা কে করছে?”

“তাই করতে হবে মনে হচ্ছে”

“লয়ারের সঙ্গে যখন যোগাযোগ করবেন আমাকে জানাবেন, আমিও সঙ্গে যাবো”

“হেই, তুমি এতো সি’রি’য়া’স’লি কেনো নিচ্ছো? আমি তো মজা করে বলছিলাম। তোমাকে ডি’ভো’র্স দিতে গেলে আমাকে বাড়িছাড়া হতে হবে। তোমার প্রতি আব্বুর যে ভালোবাসা তাতে আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করতে সে দুবার ভাববে না।”

“এসব কথা এখন ছাড়ুন তো ফাহাদ, পারলে আমায় একটু সাহায্য করুন। আঙ্কেলের খাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে এদিকে আমার এখনও রুটিই বানানো হলো না”

“এতো টে’ন’শ’ন কেনো নিচ্ছো? না পারলে করার দরকার নেই, আমি বাইরে থেকে আনিয়ে নিচ্ছি”

“না! সকালে আমি আঙ্কেলকে বলেছি যে খাবার বাড়িতেই বানানো হবে তাই বাইরে থেকে আনানোর দরকার নেই”

“তাহলে কি করবে? দেখছো এতক্ষণ ধরে ট্রা’ই করেও পারলেনা তারপরও..”

“তাই বলে এতগুলো আটা ফেলে দেবো নাকি? নাহ! আমি রুটি বানিয়েই ছাড়বো”

“তুমি তো দেখছি পুরো আম্মুর মতো, আম্মুও এক চিমটি জিনিস ও’য়ে’স্ট করতে চায়না”

“হুমম! সকালে আঙ্কেলও আমাকে একই কথাই বললো”

“কি বললো আব্বু?”

“এটাই যে আমি নাকি অনেকটা আন্টির মতো”

হটাৎই আলফার মাথায় রুটি গোল করার বুদ্ধি এলো!

“পেয়েছি আইডিয়া, রুটি গোল করার। ফাহাদ, আমাকে একটা মাঝারি সাইজের প্লেট খুঁজে এনে দিন তো”

“প্লেট দিয়ে কি হবে?”

“এনে দিন না আগে”

ফাহাদ প্লেট খুঁজে এনে দিলো, এরপর আলফা ওর বানানো ওই ত্যা’রা’ব্যা’কা রুটিগুলোর ওপর প্লেট রেখে গোল করে নিলো। আলফার এই আইডিয়া দেখে ফাহাদ বেশ প্রাউড ফিল করলো! ছোটো করে দুটো তালি বাজিয়ে বললো..

“ব্রা’ভো! তোমার মতো এরকম বুদ্ধি সবার থাকলে রুটি গোল করা নিয়ে কাউকে চিন্তাই করতে হতো না”

ফাহাদের কথায় হাসলো আলফা, এরপর ও রুটিগুলো সেঁ’কে নিলো। ফাহাদ তখনও ওখানেই দাড়িয়ে, বারবার ওর ফোন আসছে কিন্তু ও রিসিভ করছে না। বিষয়টি আলফার নজর এ’ড়া’য়’নি..

“আপনি এখনও এখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো?”

“জুস নিতে এসেছিলাম”

“জুসের বোতল তো আপনার হাতেই আছে”

“ওহ ইয়াহ! অ্যাকচুয়ালি, এখন আমি তোমাকে কোম্পানি দিচ্ছি!”

“কোম্পানি দিতে এসেছেন? তাহলে দাড়িয়ে না থেকে সাহায্য করুন আমাকে রুটি সেঁ’ক’তে”

ফাহাদ আলফার কথামতো কাজ করতেই যাচ্ছিলো তখনই আবার বা’ধা দিলো আলফা..

“নাহ থাক! আপনাকে করতে হবে না। পরে দেখা যাবে রুটি পু’ড়ি’য়ে আপনি আমার কাজ বাড়াবেন”

“কিছুই হবেনা, পারবো আমি। দাও তো”

“আপনি এসব ছাড়ুন। অনেকক্ষণ ধরে ফোন আসছে আপনার, সেগুলো ই’গ’নো’র করে এখানে দাড়িয়ে না থেকে গিয়ে কল রিসিভ করুন। দরকারি কল হতে পারে”

“তুমি আমার ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলে?”

“কিছু জিনিস এমনিতেই নজরে পড়ে যায়, পর্যবেক্ষণ করতে হয় না বুঝেছেন? যান আপনি এবার”

সব শেষে ফাহাদ, আলফা ও মিস্টার খান ডিনার শুরু করেন। কিছুটা খেয়েই মিস্টার খান আলফাকে বলেন..

“রান্নাটা আজ ভালো হয়েছে আলফা”

“থ্যাংক ইউ আঙ্কেল”

আলফার সেই রুটি বানানোর দৃশ্যের কথা মনে পড়তেই বাঁ’কা হাসলো ফাহাদ..

“রুটি বানাতে গিয়ে আজ তোমার প্রিয় বৌমা কতোটা স্ট্রা’গ’ল করেছে সেটা যদি একবার দেখতে তুমি আব্বু!”

“স্ট্রা’গ’ল করেছে মানে? আলফা কি হয়েছে?”

“কিছুনা আঙ্কেল! উনি একটু বেশিই বলছেন”

চোখ গ’র’ম করে তাকালো আলফা, এদিকে ফাহাদ মজা নিচ্ছে। আলফার ভীষন রা’গ হলো, লোকটা এমন কেনো? ডিনার শেষে মিস্টার খান বাইরে যেতে যাচ্ছিলেন, এই রাতের বেলা বাবাকে বেরোতে দেখে ফাহাদ প্রশ্ন করে..

“এখন কোথায় যাচ্ছো আব্বু?”

“আমার এক বন্ধু এসেছে পাশের চায়ের দোকানে, ওর সঙ্গে দেখা করে এক ঘণ্টার মধ্যে চলে আসবো”

“তোমার বন্ধুকে বাড়িতে আসতে বললেই তো হয়, তোমার যাওয়ার কি দরকার আছে?”

“না ফাহাদ, আমিই যাবো। অনেকদিন হলো চায়ের দোকানে বসে একটু আড্ডা দেওয়া হয় না।”

“আঙ্কেল, বাইরে বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে কিন্তু এখন চা খাবেন না কিন্তু”

“এটা কি বলছো আলফা? আড্ডা দেবো চা ছাড়া?”

“আন্টি আমায় না করেছে যাতে আপনাকে রাতে চা না খেতে দেই”

“তোমার আন্টি তো সবসময়ই একটু বেশি বোঝে, এটা আন্টিকে বলার দরকার নেই। একদিন খেলে কিছুই হবেনা”

“আঙ্কেল, আমি কিন্তু আন্টিকে বলে দেবো!”

“আলফা! তুমিও?”

“আঙ্কেল, আমি আপনার ভালোর জন্যেই বলছি”

আলফার কথায় চা খাওয়ার জন্যে রাজি হলেন মিস্টার খান, এরপর বেরিয়ে গেলেন। এরপর আলফা টেবিল গোছানোর কাজে যেতেই ফাহাদ বললো..

“আব্বু তো দেখছি তোমার কথা শুনলো, একই কথা আমি বললে উল্টো ব’কা দিতো”

“আমার কথা শোনেনি, এখন যদি আন্টির কথা না বলতাম শুনতেন না”

“সেটাও ঠিক, আব্বু আম্মুকে ভীষন ভ’য় পায়!”

“এটা ভ’য় নয়, আঙ্কেল আন্টিকে ভালোবাসেন তাই তার কথার শ্র’দ্ধা করেন। এটাকে ভ’য় বলেনা”

আলফার কথার আর পা’ল্টা উত্তর দিতে পারলো না ফাহাদ, মেয়েটা তো ঠিকই বলেছে। সব কথা মানে বলেই সেটা তো আর ভ’য় নয়, তার কারণ সম্মান ও ভালোবাসাও হতে পারে!
_________________________

সকালে মিসেস খান আলফাকে ফোন করে বাড়ির সব খবরাখবর নিয়েছেন, সকালের নাস্তা শেষে আলফার আজ কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। তাই ও তা’ড়া’হু’ড়ো করে তৈরি হচ্ছিলো। তখন কি একটা ভেবে ফাহাদ বললো..

“তোমার বান্ধবীর বিয়ে কবে?”

“এক সপ্তাহ পর, কেনো?”

“কি গিফট্ দেবে কিছু ঠিক করেছো?”

“এখনও না, হাতে সময় আছে তো। পরে কিছু একটা কিনে নেবো ওর পছন্দের”

“ওকে! তোমার বান্ধবীর বিয়ের জন্যে গিফট্ যখন কিনতে যাবে আমাকে বলো, আমিও সঙ্গে যাবো”

“আপনি গিয়ে কি করবেন?”

“সঙ্গে যেতে দো’ষ আছে নাকি?”

“বেশ, আমি যখন যাবো জানাবো আপনায়। তবে প্লিজ ফাহাদ, আপনি রি’পে’য়া’রিং শপ থেকে আগে আমার গাড়ি নিয়ে আসুন আজকেই”

“কিন্তু আলফা, ওটা তো..”

“আপনার সময় না হলে ঠিকানাটা আমাকে টেক্সট করে দেবেন আমি নিয়ে আসবো”

আলফা কথাগুলো বলতে বলতেই দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে গেলো, এদিকে ওর এই গাড়ির প্রতি এতো ভালোবাসার কারণটা কি ভেবে পায়না ফাহাদ!

“অদ্ভুত মেয়ে তো, সবকিছু ভুলে গেলেও রোজ দুবেলা করে গাড়ির কথা বলতে ভুলছে না। গাড়ির প্রতি এতো কিসের অ’বে’সে’শ’ন!
________________________

লাঞ্চ টাইমে হঠাৎই আজ আলফার বাবা ফোন করেছে, বাবার ফোন দেখে কিছু সময়ের জন্য অ’বা’ক’ই হয়েছিলো আলফা। পরে আর সাত পাঁচ না ভেবে কল রিসিভ করেই…

“আসসালামু আলাইকুম আব্বু”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম, শুনলাম সেদিন নাকি বাড়িতে এসেছিলে? আর আমার সঙ্গে দেখা না করেই চলে এসেছো!”

“তেমন কিছু না আব্বু, আসলে সেদিন সন্ধ্যা হয়ে গেছিলো। বাড়ি ফিরতে দেরি হবে ভেবে..”

“আমি জানি তুমি আমার সঙ্গে দেখা করতে চাওনা, কারণটা আমার জানা তাই আর জানতে চাইবো না। আজকে সন্ধ্যায় বড় আপা বাসায় আসছেন, তোমার সঙ্গে দেখা করতে চান উনি। কলেজ শেষ হলে এখানে চলে এসো”

“ফাহাদের মা বাসায় নেই, বাসার দায়িত্ত্ব আমার ওপর এখন ও বাড়ি যাওয়ার সময় আমার হবেনা”

“ওসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবেনা, ফাহাদ আর তোমার শ্বশুরকে আজ আমাদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে দেবো রাতের খাবারের জন্যে”

“তার দরকার নেই আব্বু, আমিই না হয় ফুপুর সঙ্গে পরে..”

“দরকার আছে আলফা, এর আগে ফাহাদ আর তোমায় দাওয়াত দিয়েছিলাম কিন্তু তোমরা আসোনি। বিয়ের পর সেভাবে ফাহাদকে একবারও আমাদের বাসায় দাওয়াত দেওয়া হয়নি। সেটাই আজ দিচ্ছি। চলে এসো”

বাবাই সবটা বলে দিলো, আলফা নিজে কিছু বলার সুযোগই পেলো না। নিজের প্রয়োজনীয় কথা শেষে ফোনটা আলফার বাবাই কে’টে দিলেন। কলেজ শেষে বেরিয়েই নিজের যাওয়ার জন্যে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটা দিচ্ছিলো আলফা, কিন্তু রাস্তায় ফাহাদের গাড়ি দেখে থেকে গেলো। আলফা দেখামাত্রই গাড়ি থামালো ফাহাদ, গাড়ি থেকে নেমে দাড়াতেই আলফা বললো..

“আপনি..”

“তোমার আব্বু ফোন করেছিলো আমায়, আমারও অফিসের কাজ শেষ তাই ভাবলাম তোমায় পিক করে নেই”

“কিন্তু এটা তো উল্টো রাস্তা, আপনি আবার ঘু’রে এখানে কেনো আসতে গেলেন, সোজা আমাদের বাড়িতে চলে যেতেন”

“স’ম’স্যা নেই!”

“কিন্তু আপনি একা কেনো? আঙ্কেল কোথায়?”

“আব্বুর কাজ আছে, সে যাবেনা। আমাদের দুজনকে যেতে বলেছে”

“সে কি! আঙ্কেল একা..”

“কিছু হবেনা, আব্বু ম্যানেজ করে নেবে। তুমি চলো”

আলফা আর কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়লো গাড়িতে, ফাহাদ ড্রাইভ করতে করতে আলফার দিকে এক নজর বুলিয়ে দেখলো মেয়েটার মন খা’রা’প!

“কলেজের দিনটা আজ ভালো কা’টে’নি নাকি?”

“নাহ, ভালোই ছিলো”

“নিজের বাসায় যাচ্ছো এতদিন পর, তবুও তোমার মুড অফ কেনো?”

“মুড অফ নয়, ক্লা’ন্ত লাগছে তাই এমন দেখাচ্ছে”

“বড় ফুপি আসছে আজ ও বাড়িতে”

“তো? কোনো স’ম’স্যা আছে?”

না সূচক মাথা নে’ড়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজলো আলফা, মেয়েটা সত্যিই অনেকটা ক্লা’ন্ত। ফাহাদ তাই আর কোনো প্রশ্ন করলো না, চুপচাপ নিজের ড্রাইভে মন দিলো তবে এইটুকু বুঝেছে হয়তো কোনো এক কারণে আলফা তার বড় ফুপুকে পছন্দ করেনা!

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে