তোকে চাই❤(সিজন-২)part:44+45+46

0
4617

তোকে চাই❤(সিজন-২)part:44+45+46
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
?
.
জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আমি।।আকাশে মস্ত এক চাঁদ ওঠেছে… এই বিশাল চাঁদটাকে বারবার ঢেকে দিচ্ছে এক টুকরো মেঘ।তাদের দেখে মনে হচ্ছে চাঁদের সাথে তারা এক অদ্ভুত লুকোচুরি খেলায় মত্ত হয়েছে।যেমন খেলায় মত্ত হয়েছে শুভ্র।।আজ দু’দিন হতে চললো উনি চট্টগ্রামে আছেন।।প্রতিদিন তিনবার ফোন করেন আমায়….সকাল,দুপুর,রাত….এই বিষয়ে একফোঁটা অনিয়ম নেই তার।।প্রতিবার ফোন দিয়ে গম্ভীর স্বরে বলবেন-” রোদপাখি খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।খেয়ে নাও প্লিজ।একদম অনিয়ম করবে না।।সাবধানে থেকো… রাখছি” ব্যস এটুকু বলেই প্রতিবার ফোন কাটেন উনি… আমার কিছু বলার সুযোগই নেই।।আমার যে বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে…উনাকে দেখার জন্য দম বন্ধ হয়ে আসছে তা শোনার সময় আছে নাকি তার?একদমই নেই….কতো ব্যস্ত মানুষ সে…বউয়ের পিছে পড়ে থাকলে কি চলবে তার??কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই দরজার বাইরে থেকে চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো মা-
.
রোদ?এই রোদ? দরজা খোলে খেতে আয়…খাবারে মাছি বসছে তো।কখন থেকে ডাকছি…আর পারি না বাপু।এই ধিংগি মেয়ে হয়েছে তবু পিছে দৌড়ে খাওয়াতে হয়…কি রে এলি না??
.
মা তুমি যাবে প্লিজ?যাও এখান থেকে…খাবো না আমি…(বিরক্ত হয়ে)
.
খাবি না?কেন খাবি না কেন? খাওয়ার সাথে কিসের শত্রুতা তোর?চুপচাপ এসে খেয়ে যা বলছি।
.
প্লিজ মা যাও তো।খবরদার বিরক্ত করবে না আমায়।কি পেয়েছো টা কি তোমরা? যা বলবে তাই মানতে হবে?খেতে বললে খেতে হবে,,উঠতে বললে উঠতে হবে…এমনটা কেন??আমার একটা জীবন আছে মা…আমি কোনো রোবট নয়…প্লিজ যাও মা….(চিৎকার করে)
.
ওপাশ থেকে মার বকাঝকা শোনা যাচ্ছে।। ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যে এই টেপরেকর্ডার চলতেই থাকবে তা বেশ বুঝতে পারছি আমি।তাই সেদিকে কান না দিয়ে ঘোলাটে চোখে দেয়ালে ঠেস দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম আমি।চোখ দুটো বন্ধ করতেই গালে দু’ফোটা বড় বড় অশ্রুর অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম…মনের সাথে সাথে চোখদুটোও জ্বালা করছে খুব…একগুচ্ছ জমানো আবদার নিয়ে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছি…ইচ্ছে হচ্ছে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে একদম বুকের মাঝে গুটিশুটি হয়ে পড়ে থাকি….জানালা দিয়ে হালকা শীতল বাতাস বয়ে চলেছে,, যার ধাক্কায় পর্দার সাথে সাথে আমার শরীরের লোমগুলোও কেঁপে উঠছে বারংবার…এই বাতাসটাকেও অসহনীয় লাগছে আজ….বাতাসের তালে যখন উড়ছে আমার চুল ঠিক তখনই হাতে থাকা মোবাইলটাও কেঁপে উঠলো মৃদু ভাবে।।আমি একদৃষ্টে সেদিকেই তাকিয়ে আছি…স্ক্রিনে “সাদা বিলাই” নামটা ভাসছে নিঃসংকোচে সাথে ভাসছে নীল পাঞ্জাবি গায়ে জড়ানো তার হাসি মুখ।।কি সুন্দর নিঃশব্দে হাসছেন উনি…সামনের দাঁতগুলো যেনো ঝলমল করছে….ডানপাশে একটা ত্যাড়াবাঁকা দাঁত আর বামগালে পড়া টোল।।ছবিটি দেখেই বুকের বা’পাশটায় চিনচিনে এক ব্যাথা খেলে গেলো।।কিছুক্ষণ নিঃশব্দে সেদিকে তাকিয়ে থেকেই ধীর হাতে ফোনটা তুলে নিলাম আমি….ওপাশ থেকে “রো” বলার সাথে সাথেই চাপা চিৎকার করে বলে উঠলাম আমি-
.
খাবো না আমি।।শুনেছেন আপনি?খাবো না।আপনার যদি ইচ্ছে হয় তো আপনি খান।।চাইলে খাবারের মাঝে ঢুবে থাকুন বাট আমাকে খেতে বলবেন না।
.
রোদ তুমি কি রেগে আছো?(শান্ত কন্ঠে)
.
নাহ একদম না।।রেগে থাকবো কেন?আমি তো খুবই আনন্দিত।আপনি জানেন?আমি রীতিমতো আনন্দে নাচানাচি করছি।এইযে,, আপনি ফোন রাখার পর…লাউড মিউজিকে লুঙ্গি ডান্স দিবো।।হেভ ইউ এনি প্রবলেম?
.
আমার কথায় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকেই হালকা কন্ঠে বলে উঠলেন উনি-
.
আমার রোদপাখিটার কি হয়েছে, সে কি বলবে আমায়?তার কি আমার উপর রাগ হচ্ছে??সে…
.
কতোদিন পর উনার মুখে এমন কথাশুনে শরীরটা কেঁপে উঠলো আমার।।কান্নারা অবাধ্য হয়ে নেমে গেলো গাল বেয়ে…গলার কথাগুলোও জড়িয়ে আসছে বারবার….যেনো এইতো এখনি শ্বাসবন্ধ হয়ে মরে যাবো আমি।।তবু তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে অনেক কষ্টে ভাঙা ভাঙা গলায় বলে উঠলাম আমি-
.
খখখবরদার আমায় রোদপাখি ডাকবেন না।আমি কারো রোদপাখি নই।।আআআর আমাকে কলও করবেন না।আমাকে খাবার কথাও জিগ্যেস করবেন না।।আমার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াবেনও না…..
.
তারপর?(মুচকি হেসে)
.
ত তারপর আমায় একদম জড়িয়ে ধরবেন না।টাচও করবেন না আমায়।হুট করে আমার শাড়ির আঁচলে টানও দিবেন না।।তা..
.
তোমাকে মন ভরে দেখতে তো পারবো?সেটাই বা কম কিসে??
.
না কিচ্ছু পারবেন না।কিচ্ছু না….
.
কথাটা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লাম আমি।।এ এক অযাচিত কান্না।।না চাইতেও যে কান্নাটা বুক ফেটে বেরিয়ে আসে এ যে সেই আকস্মিক কান্না।।ওপাশ থেকে চুপচাপ আমার কান্নার শব্দ শুনে চলেছেন উনি….কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে উঠলেন উনি-
.
আমি আসছি রোদু!!
.
উনার এই কথা কানে যেতেই কান্নার গতি যেনো দ্বিগুণ হয়ে গেলো আমার…. উনি ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন –
.
এই দেখো বউকে আমি এতো ভালো খবর একটা দিলাম কই সে খুশিতে নাঁচবে তা না মরা কান্না জুড়ে দিয়েছে।আমি আসছি বলে কাঁদছো?? তাহলে কি আর আসবো না?এখানেই থেকে যাবো?
.
থাথাকুন..ওখানেই থাকুন।খবরদার আমার শহরে আসবেন না আপনি…একদম না।
.
বললেই হলো?তোমার শহরেই তো আমার বসবাস সুন্দরী….ওই শহরটাতেই রেখে এসেছি আমার প্রাণভোমরা.. তাকে ছেড়ে কি আমার চলে বলো?মরে যাবো তো…..
.
উনার কথায় চুপ হয়ে গেলাম আমি।।কিছুক্ষণ পর পর শুধু হেঁচকির শব্দই ওঠে আসছে কানে…উনি বেশ মনোযোগ দিয়ে শব্দগুলো শুনছেন… .. কয়েক সেকেন্ড পর গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন –
.
তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। সকাল ৬ টার আগে আমি তোমার সামনে থাকবো।ট্রেন রাত ২ টোয় কিন্তু আমি এখনই বেরিয়ে যাচ্ছি….. নিজেই ড্রাইভ করে চলে আসবো…কতক্ষণ আর লাগবে বলো?ততক্ষণ কি আমার বউটা একটু ঘুমিয়ে নিবে??প্লিজ!!
.
উনার কথায় হেসে দিলাম আমি।নাক টেনে বললাম-
.
থাক…ড্রাইভ করে আসতে হবে না।।ট্রেনেই আসুন…চট্টগ্রাম টু ঢাকা কতোখানি পথ…এতোরাতে ড্রাইভ করা খুব রিস্ক…আপনি প্লিজ ট্রেন দিয়েই আসুন।
.
সরি সুন্দরী।সুন্দরী বউয়ের কান্নামাখা কিউট কন্ঠ শুনে আবরার শুভ্রের পক্ষে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
.
আপনি এতো বেশি বুঝেন কেন অলওয়েজ?? সারাদিন কাজ করার পর টায়ার্ড শরীরে ড্রাইভ করবেন?পাগল হয়েছেন আপনি?খবরদার এমন কিছু করবেন…নয়তো..
.
আমার কথা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে.. দুষ্টুমি মাখা কন্ঠে বলে উঠলেন উনি-
.
তুমি এই কথাগুলো আমার সামনে বসে বলবে প্লিজ?তোমার কন্ঠ টা একদম বউ বউ লাগছে গো।।এতোদিনে মনে হচ্ছে আমি বিয়ে করেছি।।এখন তো একসেকেন্ডও দেরি করা যাবে না….আই এম কামিং সুন্দরী…রেডি থাকো।
.
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলেন উনি।।কিছুক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে আবারও ডায়াল করতেই ফোন কেটে ম্যাসেজ পাঠালেন উনি-” ড্রায়িব করছি রোদপাখি।কল দিও না…গিয়ে কথা হবে… এখন খেয়ে শুয়ে পড়ো প্লিজ!!” আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিন্তামাখা মুখে উঠে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।।এই চিন্তিত মনে গলা দিয়ে খাবার নামাটা ইম্পসিবল!! কে জানে এতো রাতে কিভাবে ফিরবেন উনি??সত্যিই আজকেই প্রথম নিজেকে কারো স্ত্রী বলে মনে হচ্ছে… স্বামীর জন্য দুশ্চিন্তা কাকে বলে তা আমার অস্তিত্বে মিশে যাচ্ছে।।প্রতিটি হৃৎস্পন্দনের সাথে তারজন্য দোয়া করছে এ মন….”সে ভালো থাকুক,,,সুস্থ থাকুক”
.
?
.
ঘুমের মাঝেই মুখে কিছুর ছোঁয়া লাগায় লাফিয়ে উঠলাম আমি।নিশ্চয় শুভ্র চলে এসেছে? কিন্তু চারপাশে তাকিয়েও কাউকে দেখতে পেলাম না আমি।।জানালার পর্দাটা বারবার আছড়ে পড়ছে গায়ে…বুঝতে পারলাম শুভ্র নয়…জানালার পর্দা ছিলো ওটা।।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯ টা ২০ প্রায়…এতো বেলা হয়ে গেছে??রাতে জানালাটা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি…জানালা গলিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে বাইরেটা অন্ধকার…আকাশটা ঘন মেঘে ডাকা…হয়তো ঝড় হবে…ভীষন ঝড়।।হঠাৎ শুভ্রর কথা মনে পড়ায় ফোনটা হাতে নিয়ে চেক করলাম ফোন বা ম্যাসেজ কিছু আছে কি না?কিন্তু একি সব ফাঁকা।।কিন্তু এতোক্ষণে তো উনার পৌঁছে যাওয়ার কথা৷ তবে কি উনি এসেই ঘুম দিয়েছেন??ফোনটা হাতে নিয়ে কি মনে করে ডায়াল করেই ফেললাম।।দুবার কেটে গিয়ে তিনবারের সময় রিসিভ হলো।।রিসিভ হওয়ার সাথে সাথেই বলতে শুরু করলাম আমি-
.
হ্যালো?কোথায় আপনি?ঘুমোচ্ছেন?কখন ফিরেছেন?আমায় ফোন দেন নি কেন?আপনি কি আজ ভার্সিটি আসবেন??
.
আমার প্রশ্নের বহর থামলে আমাকে অবাক করে দিয়ে ওপাশ থেকে মোটা স্বরে কথা বলে উঠলেন এক ভাদ্রলোক-
.
সরি ম্যাম।আমি আবরার শুভ্র নই।আমি ডক্টর রাহিম আলম।
.
উনার ফোন আপনার কাছে কেনো?(অবাক হয়ে)
.
এক্চুয়েলি উনি এখন ফোন ধরার পজিশনে নেই তা…
.
উনার সম্পূর্ণ কথা শেষ না হতেই বলে উঠলাম আমি-
.
কোন হসপিটাল!!
.
কথাটা শুনেই হাত থেকে ফোনটা খসে পড়লো আমার।মাথাটা কেমন ভো ভো করছে আমার…চিন্তা শক্তি যেনো লোপ পাচ্ছে ক্রমাগত…ব্রেনটা যেন ক্রমাগত ঘুম পারিয়ে দিতে চাচ্ছে আমায়…কিন্তু আমায় তো যেতে হবে।।শুভ্রর কাছে যেতে হবে।।যেতেই হবে….কথাটা ভেবেই বালিশের পাশে রাখা ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে।।ডায়নিং এ বসে থাকা বাবা-মা,ভাইয়া সবাই যে অবাক চোখে দেখছে বেশ বুঝতে পারছি….কিন্তু আমায় তো থামলে চলবে না…যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌছুতে হবে আমায়….তাকে যে আমার চাই!!খুব বেশি চাই।
.
#চলবে?

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:45
.
?
.
গেইট থেকে দৌঁড়ে বেরিয়েই রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম।আশেপাশে রিক্সার টিকিটারও দেখা মিললো না আমার।বাসা থেকে সিটি হসপিটাল প্রায় ১ ঘন্টার পথ।সেখানে হেঁটে যাওয়া মানেই ডাবল টাইম।তবুও কি ভেবে দৌড়াতে লাগলাম আমি।।বুকে দামদুম শব্দ করছে ক্রমাগত….নিশ্বাসটা এই বুঝি আটকে যাবে আমার।।কতোক্ষণ দৌঁড়েছি জানি না হয়তো ১৫ মিনিট হবে।।প্রায় ১৫ মিনিট পর একটা সিএনজির দেখা মিললো আমার….আকাশের অবস্থা খুব খারাপ।ঝড় হওয়ার পূর্বাভাস স্পষ্ট… এমন একটা আবহাওয়ায়,,, সিএনজি ড্রাইভার কিছুতেই এতোদূর যেতে রাজি নয় …অবশেষে আমার কাঁদোকাঁদো চেহারা আর ডাবল ভাড়ার লোভে পড়ে রাজি হলো সে।।দম আটকে বসে পড়লাম সিএনজিতে….সাথে সাথেই শুরু হলো তুমুল ঝড়…বাতাসের ধাক্কায় যেনো সিএনজি এগেনোয় দায়।।ড্রাইবার আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন –
.
ম্যাডাম! সিএনজি কোথাও থামাই…ঝড় একটু কমলে আবার স্টার্ট দিমু।এমনে তো এক্সিডেন্ট হইতে পারে।
.
নাহ প্লিজ মামা চলেন।।আমার স্বামী হসপিটালে একা।দরকার পড়লে তিনডবল ভাড়া দিবো আপনাকে…..আমায় একটু পৌঁছে দিন।।প্লিজ!!
.
ড্রাইভার কিছু একটা বলতে গিয়েও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলো না।।মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলো সে।।গলা শুকিয়ে কাঠ,,, বুকের মাঝেও ঝড় হচ্ছে তুমুল গতিতে,,,প্রতিটি সেকেন্ডকে একদিন পরিমান লম্বা লেগেছিলো আমার।।কখন পৌঁছাবো আমি?কখন দেখবো তাকে?মনের মধ্যে অচেনা এক ভয় কড়া নাড়ছিলো বারবার।নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় লাগছে আমার…..আজ শুভ্র আমার পাশে থাকলে হাসিমুখে বলে উঠতো-” এই রোদপাখি?মুখটা এমন কালো করে রেখেছো কেন বলো তো?আমি তো আছি….. এতো চিন্তা কিসের,, সব চিন্তা আমায় দিয়ে দাও তো…” কথাটা ভেবেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি,,না নেই।আজ আপনি নেই আমার পাশে।।আপনার রোদপাখি কাঁদছে আর আপনি তার পাশে নেই…. আমি কক্ষনো কথা বলবো না আপনার সাথে.. খুব রাগ করেছি আমি,, খুব।এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আপনাকে ছাড়া কিভাবে চলবে আমার??আমার কান্নার শব্দে ফিরে তাকালো ড্রাইবার।অবাক কন্ঠে বলে উঠলেন উনি-
.
ম্যাডাম আপনি ঠিক আছেন?
.
জি আমি ঠিক আছি।আআপনি চালান….
.
কিছুক্ষণ পরেই সিএনজি হসপিটালের সামনে এসে দাঁড়ালো ।ড্রাইভারকে ভাড়া টা দিয়েই দৌড়ে গেলাম ভেতরে।।কি করবো,,কোথায় যাবো,,কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না আমি।।শুভ্রর ফোনে আবারও ফোন দিতেই ফোনটা বন্ধ পেলাম।।এখন কি হবে?ডক্টর রাহিম আলমকে কিভাবে খুঁজে পাবো আমি??একটা ঢোক গিলে রিসেপশনের দিকে এগিয়ে গেলাম।।ভয়ে আত্মা কাঁপছে আমার….কোনোরকম ভাঙা গলায় বলে উঠলাম -“এক্সকিউজ মি?” রিসেপশনিস্ট মেয়েটা অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো।।অবাক হওয়ারই কথা…আমার গায়ে টি-শার্ট আর ঢোলা প্লাজু….তারওপর ওড়নাটা কোনোরকম পেঁচিয়ে রেখেছি আমি।চুলগুলো কোনোরকম খোঁপায় আটকানো….কাপড়গুলোও ভিজে একাকার…পায়ে বাসায় পড়া স্লিপার।।চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে আছে…..মেয়েটা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো –
.
হাও ক্যান আই হেল্প ইউ ম্যাম?
.
এবার যেনো গলায় কথা আটকে আসছে আমার। শুভ্রর নামটা কিছুতেই গলা থেকে বেরুচ্ছে না ।।অনেক চেষ্টায় শেষমেষ বলে উঠলাম আমি-
.
এএক্সিডেন্ট পপপেশেন্ট….শশুভ্র কোথায়?
.
কাল রাতে এক্সিডেন্ট হয়েছে? শুভ্র আহমেদ?
.
আমি তুমুল গতিতে মাথা নাড়িয়ে বললাম জি!!এবার মেয়েটির মুখে তীব্র বেদনার ছাপ ফুটে উঠলো।।মুখ কালো করে বললো -“আপনি কে হোন উনার?মিসেস শুভ্র?”
.
আমি আবারও টলমলে চোখে মাথা নাড়লাম।এবার মেয়েটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো-
.
ফর্মটা পূরণ করে দিন মেম।ডেডবডি রেডি আছে…ফর্মটা পূরণ করলেই সব ফর্মালিটিস শেষ…আপনি উনাকে নিয়ে যেতে পারেন।।উনার কাছে একটা রিং বক্স ছিলো… সেটা আমাদের কাছে আছে…আপনি যাওয়ার সময় মনে করে নিয়ে যাবেন ম্যাম।
.
মেয়েটার মুখে “ডেড বডি” কথাটা শুনেই ফ্রিজড হয়ে গেলাম আমি।।কি বলছে এসব?পাগল হয়ে গেছে নাকি এই মেয়ে?শুভ্র আর ডেডবডি?এরা কি মজা করছে আমার সাথে?এটা কি করে হতে পারে?বললেই হলো নাকি?আমার শুভ্র এতোটা সেলফিশ হতেই পারে না …তার রোদপাখিকে মাঝপথে,, এতোটা অসহায় করে দিয়ে চলে যেতে পারে না সে।।আমি তো প্রতি নামাযে একটাই দোয়া করে এসেছি প্রতিনিয়ত যেন তার আগে মৃত্যু হয় আমার….আমার এই দোয়া ব্যর্থ হতে পারে না।কখনো না….মেয়েটা আমার সামনে একটা প্যাকেট রাখলো…..হাতে ফর্ম নাচিয়ে কিছু একটা বলছে…কিন্তু কিছুই কানে আসছে না আমার।।সবকিছু কেমন ঝাপসা ঘোলাটে লাগছে….কেন হচ্ছে এমন??হাতের ফোনটা কাঁপছে….তার থেকেও বেশি কাঁপছে আমার শরীর।।শূন্য চোখে ফোনের দিকে তাকিতেই স্ক্রিনে “সাহেল ভাইয়া” নামটা ভেসে উঠলো।শরীরে কোনো শক্তি পাচ্চি না আমি।।হাত থেকে খসে পড়লো ফোন।।ফ্লোরে আছাড় খেয়েই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো প্রতিটি টুকরো।।আমি ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছি….শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ক্রমাগত।।হয়তো মরে যাচ্ছি আমি….হারিয়ে যাচ্ছি অতল গহ্বরে…. সেখানেই হয়তো আছে জীবনের শেষ অধ্যায়…জীবনের শেষ সত্য!!
.
#চলবে?

#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:46
.
?
.
ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়লাম আমি।চারপাশের কিছুই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না আমার।চোখের পানিগুলোও শোক জানাতে নারাজ।আমাকে এভাবে বসে পড়তে দেখে ছুটে এলো রিসেপশনিস্ট…. কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলো –
.
ম্যাম আর ইউ ওকে?আপনি ঠিক আছেন?আপনার বাসার কাউকে জানাতে হলে প্লিজ বলুন আমায়….আপনার শরীর সুস্থ মনে হচ্ছে না।।
.
আমি কোনো কথা না বলে চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।।চোখে আমার শূন্যদৃষ্টি….মাথাও কেমন ফাঁকা!!মেয়েটা আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে ফোনের টুকরোগুলো জড়ো করে…. টুকরোগুলো একের পর এক লাগিয়ে আবারও আগের মতো করে নিলো সেটা।।ফোনটা অন করতেই আবারও কেঁপে উঠলো সেটা।।মেয়েটা ফোনটা রিসিভ করে আমার কানে ধরে বললো কথা বলুন ম্যাম….আমি ফোন কানে নিয়ে ভাবলেশহীনভাবে বসে আছি।।ওপাশ থেকে ভেসে আসছে সাহেল ভাইয়ার উচ্ছ্বাসিত কন্ঠ…
.
কেমন আছো সানশাইন?তোমাদের দু’জনের কি হয়েছে বলো তো?কখন থেকে ট্রাই করছি বাট কাউকে পাচ্ছি না। জানো?দারুন একটা খবর আছে তোমাদের জন্য….এখানে আমার ফাস্ট সেমিস্টারে অসাধারণ ভালো রেজাল্ট করেছি আমি।।সাইশাইন??শুনতে পাচ্ছো??হ্যালো??
.
পরিচিত কারো গলার আওয়াজে কান্নারা বাঁধ ভাঙলো আমার।।নিজের অজান্তেই ফুঁপিয়ে উঠলাম আমি।।আমার কান্নার আওয়াজে উনি যেনো চমকে উঠলেন…. ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন –
.
কি হয়েছে সানশাইন?তুমি কাঁদছো কেন?শুভ্র কোথায়?শুভ্র থাকতে তুমি কাঁদছো? ইম্পসিবল!! আচ্ছা কেউ কিছু বলেছে তোমায়?তোমার শরীর ঠিক আছে তো?এই শুভ্র শালা করছে টা কি?বউ কাঁদছে তার খেয়াল নেই?আবার ফোনটাও অফ করে রেখেছে….ওকে তো আমি..
.
এটুকু বলতেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি।।আবারও মনে পড়লো…ডেড বডির কথা….দুনিয়াটা অন্ধকার লাগতে লাগলো আমার।।আবারও ধম বন্ধ হয়ে এলো আমার…কান থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে নিশ্চুপ বসে রইলাম….ওপাশ থেকে সাহেল ভাইয়ার চিন্তিত কন্ঠস্বর ভেসে আসছে ক্রমাগত..
.
সাইশাইন?শুভ্র ঠিক আছে তো?শুভ্র কোথায়?প্লিজ চুপ থেকো না…শুভ্র কোথায় বলো প্লিজ…ওর কিছু হয় নি তো?দোহায় লাগে কিছু বলো…আমি আর ভাবতে পারছি না সানশাইন.. আমার শরীর কাঁপছে…শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।।বলো না শুভ্র কই!!সাইনশাইন?হ্যালো?হ্যালো?ওহ শিট… ড্যামেড!!
.
ফোনটা না কেটেই হয়তো আছড়ে মারলেন উনি…একটা বিকট শব্দ এলো কানে….তারপরই আবারও শোনা গেলো সাহেল ভাইয়ার কন্ঠ…কাউকে উদ্দেশ্য করে কথা বলছেন উনি।।কে হতে পারে?রুমমেট?
.
হেই হ্যারি?আই এম গোয়িং টু বাংলাদেশ।।ইট’স ইমার্জেন্সি… মাই ফ্রেন্ড ইজ ইন ডেঞ্জার… আই হেভ টু গো…. ক্যান ইউ ম্যানেজ আ ফ্লাইট টিকেট ফর মি?প্লিজ?
.
সাহেল ভাইয়ার বলা কথাগুলো কানে যাচ্ছে আমার কিন্তু ব্রেন যেনো কথাগুলোর অর্থ বুঝাতে ব্যর্থ হচ্ছে।।আমার চারপাশে ভাসছে শুভ্রর বলা কন্ঠ…”তুমিই তো আমার প্রাণভোমরা”…… “এই দেখো বউকে আমি এতো ভালো খবর একটা দিলাম কই সে খুশিতে নাঁচবে তা না মরা কান্না জুড়ে দিয়েছে।আমি আসছি বলে কাঁদছো?? তাহলে কি আর আসবো না?এখানেই থেকে যাবো?”…….”বললেই হলো?তোমার শহরেই তো আমার বসবাস সুন্দরী….ওই শহরটাতেই রেখে এসেছি আমার প্রাণভোমরা.. তাকে ছেড়ে কি আমার চলে বলো?মরে যাবো তো…..”চারদিক থেকে যেনো শুভ্রর শরীরের গন্ধ কাবু করে চলেছে আমায়…ঝাপসা চোখে এখানে ওখানে ফুটে ওঠছে শুভ্রর হাসি মুখ আর তার বলা..” এই রোদপাখি?” আমি জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছি গলা শুকিয়ে কাঠ…চারপাশটা কেমন অচেনা লাগছে….খুব অপরিচিত লাগছে সব।।হঠাৎ করেই সামনে তাকিয়ে দেখি শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে।। পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে সে…শার্টের হাতা ফোল্ড করে ডানহাতেও ব্যান্ডেজ….কপালেও ব্যান্ডেজের মোটা পরদ।মুখে সেই বাঁকা দাঁতের হাসি।।সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে কপালের ব্যান্ডেজটা ঢেকে গেছে অনেকটায়।।উনি হাত নাড়িয়ে হাসি মুখে কথা বলছেন মধ্যবয়স্ক এক ডাক্তারের সাথে….উনাকে দেখে উঠে দাঁড়ালাম আমি…ফোনটা আবারও নিচে পড়ে সিটকে গেলো।।আমি জানি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি আমার হিলোসিনেশন তবুও আমার শুভ্র তো!!আমি কাঁপাকাঁপা পায়ে কয়েক পা এগিয়েই ছুটে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।।আমার ধাক্কা সামলাতে না পেরে কয়েকপা পিছিয়ে গেলো লোকটি।।তারপর সব নিস্তব্ধ… আমি চুপচাপ তার বুকের হৃদস্পন্দনের ঢিপঢিপ সংগীত শুনে চলেছি….কত পরিচিত এই সংগীত।।কতো পরিচিত তার ধারা।আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি…যেনো ছাড়লেই হারিয়ে যাবে বহুদূরে!!বেশকিছুক্ষন পর আমার পিঠে হালকা ভাবে হাত রাখলেন উনি।।হালকাভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় একটা চুমু দিয়েই বলে উঠলেন –
.
রোদপাখি?তুমি এখানে কি করছো?আর কি অবস্থা শরীরের…এভাবে কেউ বাইরে আসে?মানুষ তো পাগল বলবে বউ।
.
উনার মুখে “রোদপাখি” কথাটা শুনেই চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম আমি।।মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী ভরে উঠেছে আমার…. এতো খুশি…এতো আনন্দ কোথায় রাখবো আমি??এই খুশির মুহূর্তটা যেনো থেমে যায়….এই মুহূর্তে যেনো আমার মৃত্যু হয়….মৃত্যু হয়!!উনি আমাকে টেনে সোজা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়েই আঁতকে উঠলেন….অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা বলতে যাবেন ঠিক তখনই একটা অল্পবয়সী মেয়ে এসে দাঁড়ালো রিসেপশনের সামনে।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো….”শুভ্র!! এক এক্সিডেন্ট প পেশেন্ট শুভ্র আহমেদ?”রিসেপশনিস্ট মেয়েটি অবাক হয়ে বললেন..”আপনি কে হোন উনার?” মেয়েটি কাঁপা গলায় বললো -“ওয়াইফ” রিসেপশনিস্ট মেয়েটি একবার আমার দিকে তাকিয়ে একটা ফর্ম এগিয়ে দিয়ে বললো-
.
ম্যাম?ওইতো আপনার হাজবেন্ডের ডেড বডি রেডি আছে…. এটা ফিলাপ করেই নিয়ে যেতে পারেন উনাকে।।
.
মেয়েটা ফ্যাল ফ্যাল চোখে একবার রিসেপশনিস্ট আর একবার পাশে এনে রাখা লাশটির দিকে তাকালো।।তার সারা শরীর কাঁপছে…. ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে লাশটির মুখের কাপড় সরালো…আমি একদৃষ্টে মেয়েটিকে দেখছি….একদম পুতুলের মতো মেয়ে….কি সুন্দর তার চেহারা।।আমার থেকে বয়সে বড় হবে না…হয়তো সমবয়সীই হবে….আমি শুভ্রকে আবারও আকড়ে ধরে তার বুকে মুখ লুকালাম…. যেনো এই মেয়েটি আমার শুভ্রটাকেই ছিনিয়ে নিয়ে যাবে এখন।মেয়েটা কাঁপা হাতে লাশটির মুখে হাত ছোঁয়ালো…কপালে হালকা ঠোঁটের পরশ ছুঁইয়ে ধীর গলায় বলে উঠলো –
.
শুভ্র?এই শুভ্র? উঠো বলছি!!আজ না আমাদের বিবাহ বার্ষিকি…তুমি না বলেছিলে সারপ্রাইজ দিবে আমায়?এভাবে শুয়ে থাকলে হবে বলো??উঠো না…প্লিজজ!!
.
আমি শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে আড়চোখে তাকিয়ে আছি।।মেয়েটার মাঝে যেনো নিজেকেই খুঁজে পাচ্ছি আমি।।আজ আমার শুভ্র বেঁচে গেলেও কোনো এক রোদের শুভ্র প্রাণ হারালো….এই মেয়েটাও নিশ্চয় কোন এক শুভ্রর রোদপাখি??তখনই মেয়েটির পরিবারের লোকজন এলো বলে মনে হলো।।তাদের মধ্যে একজন মেয়েটির কাঁধে হাত রেখে বললো-“নীর?মা শান্ত হো” মেয়েটা সেদিকে না তাকিয়েই ছেলেটির গালে হাত রেখে জাগানোর চেষ্টা করছে তাকে আর মুখে বলে চলেছে-“মা দেখো তোমার ছেলে কতো ফাজিল হয়েছে।।কেমন ফাজলামো করছে….আমার জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করতে গিয়ে এখানে শুয়ে আছে।।একবার আমার প্রিন্সটা আসুক দুজন মিলে খুব করে বকবো তাকে।।আর তো ৮ টা মাস মাত্র….তারপর বুঝবে মজা….এই শুভ্র ওঠো না…”
.
আমি মেয়েটার পাগলামো দেখছি আর চোখ থেকে ক্রমাগত পানি ঝরছে।।শুভ্রর ছোঁয়ায় ঘোর কাটলো আমার…আমার গায়ে নিজের হাতে রাখা কোটটা পড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো -” দুদিনে নিজের কি অবস্থা করেছো রোদপাখি।।যার কারণে এক্সিডেন্টের খবরটাও তোমায় দেই নি….তবু ম্যাডামের এই অবস্থা।।আ…” শুভ্রর আর কোনো কথা কানে এলো না আমার।।চারদিককে অন্ধকার করে পরম শান্তিতে লুটিয়ে পড়লাম শুভ্রর বুকে।। আহ্ কি শান্তি!!কতো ক্লান্তির পর এই অবসাদ।।চারপাশের শব্দগুলোও আস্তে আস্তে ধীর হয়ে এলো আমার কানে…আমি হয়তো হারিয়ে যাচ্ছি কোনো এক অতল গহ্বরে…
.
#চলবে..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে