Sunday, October 5, 2025







তোকে চাই❤(সিজন -২)part:32+33+34+35

তোকে চাই❤(সিজন -২)part:32+33+34+35
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
.
?
.
জানালা দিয়ে রহিমা খালাকে ডেকে দরজা খুলতে বললাম।।রুম থেকে বেরিয়েই সোজা হাঁটা দিলাম আঙিনায়।আপুর বিয়েটা এখনও শেষ হয় নি।সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত।চুপ থেকে যে অন্যায়টা আমি করেছি তার মাশুল দেবো এবার।নিজের প্রতি ঘৃণা জাগছে আমার….নিজের ভালোবাসার মানুষটার জন্য প্রতিবাদই যখন করতে পারলাম না কেমন মানুষ আমি??নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।।আমার জন্য শুভ্র ভাইয়ার চোখে জল…!! ছি রোদ ছি।আঙিনায় রাখা চেয়ারে মুরুব্বীরা বসে আছে।আমি সোজা মামুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম….. কাঁপা গলায় বলে উঠলাম-
.
মামু?
.
মামু আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন।মামুর দৃষ্টিতেই কান্না পেয়ে গেলো আমার।নিজেকে সংযত করে বলে উঠলাম –
.
মামু?গ্রামের সবাইকে জড়ো করো প্লিজ। একঘন্টা আগে যেমনটা ছিলো ঠিক তেমন… প্লিজ মামু…প্লিজজ(করুণ গলায়)
.
মামু কিছু বললেন না।কেউ একজনকে কিছু একটা ইশারা করলেন।।দশ পনের মিনিটের মধ্যেই বিয়ে বাড়ির সব লোক এক জায়গায় জড়ো হয়ে গেলো।আমি মামুর দিকে তাকিয়ে কান্না মিশ্র গলায় বলে উঠলাম-
.
সরি মামু?আই এক্সট্রিমলি সরি।শুভ্র ভাইয়া আমার সাথে কিচ্ছু করে নি।উনি তো কখনো আমার দিকে খারাপ নজরে তাকায়ও নি….আর অসভ্যতামো?? ছি! মামু?আমার জন্য তোমাদের এতো অপমানিত হতে হলো প্লিজ মাফ করে দাও…প্লিজজ।
.
কথাগুলো বলতে বলতেই শরীরটা নিস্তেজ হয়ে এলো আমার হাঁটু ভেঙে নিচে বসে পড়েই হাত জোড় করে বলে উঠলাম –
.
আ..আমি সাডেন শক গুলো নিতে পারি না।এই সমস্যাটা আমার ছোট থেকেই…সাডেন কোনো পরিস্থিতিতে ডিসিশন নিতে গেলে আমি নার্ভাস হয়ে যাই… আমার নার্ভাসনেসটা এতো বেশি হয়ে যায় যে কথায় বলতে পারি না…মনে হয় গলায়,কেউ জোরে চেপে ধরে আছে।। ঘুম থেকে উঠা মাত্রই এমন একটা সিচুয়েশন ফেইস করতে হয়েছে যে আমার সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো….সবকিছু।যার কারণে তখন কিছু বলতেই পারি নি আর শুধু আমার ফলিসনেসের জন্য শুভ্র ভাইয়ার এতো অপমান!!! আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে মামু!এই মুহূর্তে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।।মরে ফেলো তো আমায়…খুবই খারাপ মেয়ে আমি মামু…খুইব।
.
কি মনে করে সটান উঠে দাঁড়ালাম।চোখের পানি মুছে রহিমা খালাকে ডেকে উঠলাম।উনি পাশে এসে দাঁড়াতেই উনার হাতটা আমার হাতে নিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলাম –
.
আমাকে ছুঁয়ে বলো তো রহিমাখালা শুভ্র ভাইয়াকে এমন কিছু করতে দেখেছো কখনো??
.
রহিমা খালা মাথা নিচু করে মাথা নেড়ে বলে উঠলেন-
.
না ছুডু আম্মা দেহি নাই।
.
উনাকে কখনো আমার দিকে বাজে নজরে তাকাতে দেখেছো?তুমি না সবসময় আমার সাথে সাথেই থাকো!!বলো দেখেছো?
.
জি না আম্মা দেহি নাই।।উনি তো কোনো মাইয়ার দিকেই তাহায় না।।সবসময় কামের মধ্যেই থাহে..
.
তাহলে এমনটা বললে কেনো রহিমা খালা?কেনো?(কঠিন গলায়)
.
আ..আপনে বুকে দুক্কুর কতা কইলেন এইজন্য আমি ভাবচি যে….মাফ কইরা দেন আম্মা!!ভুল হইয়া গেছে..
.
মাফটা যাকে দোষারোপ করেছো তার কাছেই না হয় চাইবে।।আর এই যে মজিদ চাচা?(মজিদ চাচাকে ইশারা করে) আপনি না রহিমা খালাকে ভালোবাসেন….তো উনার দোহায় দিয়েই বলুন তো.. আপনি কি কখনোই এমন কিছু দেখেছিলেন?? কখনো??
.
মজিদ চাচা মাথা নিচু করে মুখ কাচুমাচু করে বলে উঠলেন-
.
জে না আম্মা! দেহি নাই
.
তাহলে বললেন কেনো??এতো নিঃসংকোচ মিথ্যা কেন??(রাগী গলায়)
.
আসলে রহিমা আমারে আর কমলার মারে এমনডায় কইতে কইছিলো এর লাইগ্যা।মাফ করবেন আম্মা।।আমি শুভ বাজানের কাছে মাফ চামু আম্মা…মাফ কইরা দেন…এমন কাজ আর করতাম না।জিন্দিগিতেও না…এই কানে ধরলাম!
.
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাকালাম আমি।।কি বলবো বুঝতেই পারছি না।এতোকিছুর পরও কি কিছু বলার বাকি আছে?সামনে দাঁড়ানো লোকদের মাঝে চাপা গুঞ্জন।আমি আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলাম-
.
এবার তো ঘটনার সত্যটা জানলেন আপনারা।আফসোস হচ্ছে না আপনাদের?? একটি নির্দোষ মানুষকে এভাবে হেনস্তা করার দায়ে সামন্য অনুশোচনা তো থাকা উচিত।।শুভ্র ভাইয়ার মতো একটা মানুষ যিনি মেয়েদের সাথে হাসি ছাড়া কথায় বলে না….তাকে নিয়ে এতো জঘন্য কুৎসা??লজ্জায় আমারই মাথা কাটা যাচ্ছে।।নিজের এই অপরাধবোধটা মেরে ফেলছে আমায়।আপনারা কি প্লিজ শুভ্র ভাইয়ার সামনে একবার বলবেন যে উনি নির্দোষ…ভুল ছিলো আপনাদের উনার নয়… প্লিজজ!! আমি হাতজোড় করছি আপনাদের কাছে…একটু বলবেন?
.
আবারও চাপা গুঞ্জন করে উঠলো সবাই।তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন বলে উঠলেন-
.
অবশ্যই কইবো। কইবো না কেন?একটা নির্দোষ মানুসরে এতো কতা হুনাইলাম।মাফ চাইমু না?সক্কলে মাফ চাইবো….
.
আমি মামুর দিকে করুণ চোখে তাকালাম মামু জলভরা চোখে মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত রেখে বলে উঠলেন-
.
থেংকিউ মা! থেংকিউ সো মাচ!!
.
আমি অনেক কষ্টে একটু হেসে নিয়েই সাকিব ভাইয়াকে জিগ্যেস করলাম “শুভ্র ভাই কোথায়?” উনি বললেন “ছাদে!” সাথেসাথেই দৌড় লাগালাম ছাঁদের দিকে।
.
?
.
ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন শুভ্র ভাই।উনার সামনে যাওয়ার সাহসটাও হচ্ছে না আজ।কোনোরকম কাঁপা পায়ে উনার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিভাবে ডাকবো বুঝতে পারছিলাম না।ইতস্ততভাবে এদিকসেদিক তাকাচ্ছিলাম…চোখ ফেটে কান্না পাচ্ছে…ঠিক তখনই এদিকে না ফিরেই বলে উঠলেন শুভ্র ভাই-
.
কেন করলে এমন রোদ? কেনো??
.
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না…কাঁপা স্বরে বলে উঠলাম- “সরি” সাথে সাথে পেছন ফিরে খুব শক্ত করে চেপে ধরলেন আমার হাত….রাগী কন্ঠে বলে উঠলেন-
.
শুধু সরি??আমার সব শেষ করে দিয়ে শুধু সরি রোদেলা??একটাবার ভাবলে না ফুপ্পি,ফুপা,গ্রামের লোক সবার সামনে আমি কতটা নিচে নেমে যাবো…কতোটা!!বাবার মাথাটাও তো হেট হয়ে গেলো শুধু আমার জন্য।এই অপমান কি সহ্য করা যায়??
.
স স সরি!!আ আমি আসলে..
.
আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ছাদের রেলিং এ একপ্রকার ছুঁড়ে ফেললেন আমায়।সাথে সাথেই আবার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন-
.
আই সয়ার রোদেলা।তোমার জায়গায় অন্যকোনো মেয়ে হলে জাস্ট খুন করে ফেলতাম তাকে…জাস্ট খুন করে ফেলতাম।কিন্তু ভাগ্য দেখো আমার..তোমার গায়ে হাত তুলতেও বুক কাঁপে আমার।।বউ বলে কথা!(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
.
কথাটা বলেই ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের চুল টেনে ধরে ফুলের টপে লাফি মারলেন উনি…ফিরে এসে আবারও চেপে ধরে চলে উঠলেন-
.
মিসেস আবরার শুভ্র?? আই জাস্ট হেইট ইউ।।জাস্ট হেইট ইউ….
.
কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই হুট করে জড়িয়ে দড়লেন আমায়!!ফিসফিস করে বলে উঠলেন- “কাঁদছো কেন? তোমার এই কান্নায় রাগ কমবে না আমার।স্টপ ক্রায়িং..জাস্ট স্টপ!!” আমার কান্নার বাঁধ যেনো ভেঙে গেলো এবার।নিজেকে কোনোভাবে আটকাতেই পারছিলাম না।ঠিক তখনই ছাঁদের দরজা থেকে কেউ একজন বলে উঠলো-
.
ভাই?আঙ্কেল নিচে ডাকছে….আর্জেন্ট!!
.
শুভ্র ভাইয়া আমায় ছেড়ে একরকম ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েই সিঁড়ির দিকে হাঁটা দিলেন।আমার মাথা গিয়ে লাগলো ছাদের রেলিং এর কোণে।সাথে সাথেই ঝিমঝিম করে উঠলো মাথা…তবুও কোনোরকমে ছাদের ডানপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম…. এখান থেকে আঙিনাটা দেখা যায় স্পষ্ট।শুভ্র ভাইয়া নিচে গিয়ে দাঁড়াতেই রহিমা খালা দৌড়ে গিয়ে উনার হাত চেপে ধরলেন…উনার দেখাদেখি মজিদ চাচাও অন্যহাতটা চেপে ধরলেন।সবাই কিছু একটা বলছিলো উনাকে আর উনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন।।মামু গভীর আবেগ নিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তাকে।মাকেও দেখলাম উনার মাথায় হাত রেখে মুচকি হাসলেন।আমি আর দাঁড়ালাম না,,, ছাঁদের ওই কোনটাতেই গুটিশুটি মেরে বসে পড়লাম।মাথাটা ব্যাথা করছে খুব….হয়তো ফুলে গেছে।।যাক ফুলে… যা হওয়ার হোক।শুভ্র ভাইয়ার পাওয়া ব্যাথার তুলনায় এই ব্যাথা কি খুবই তুচ্ছ নয়??
.
?
.
হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসেছিলাম ছাদের এককোণে।হঠাৎই মনে হলো কেউ একজন এসে বসেছে আমার পাশে।মাথাটা তুলে মানুষটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে না মোটে।মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে যেনো।তিন চার ঘন্টা যাবৎ একভাবেই বসে থাকায় পা,ঘাড় দুইই ব্যাথা করছে খুব…শরীর নাড়াতেও কষ্ট হচ্ছে।তবুও মাথাটা কাত করে আড়চোখে তাকালাম।শুভ্র ভাইয়া!! রেলিং এ মাথা ঠেস দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।।উনাকে দেখেই মাথা সোজা করে বসলাম…চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে খেয়ালই করি নি আমি।পা দুটো সোজা করে রেলিং এ ঠেস দিয়ে বসে উনার দিকে তাকালাম।এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ছেলেটায় হয়তো আমার পাশে বসে আছে আনমনে।সন্ধ্যার হালকা আলোয় স্বর্গীয় দূতের মতো লাগছে তাকে।মাথাটা আরেকটু হেলিয়া ডান কানটা ধরে দুর্বল গলায় বলে উঠলাম আমি-“সরি!!ক্ষমা করবেন না আমায়?লাস্টবারের মতো প্লিজ।” উনি এবার আমার দিকে তাকালেন…উনার শীতল চাহনীতে সারা শরীরটাই ঠান্ডা হয়ে আসছিলো আমার।উনি খুব স্বাভাবিকভাবেই একহাতে কোমর জড়িয়ে বুকে টেনে নিলেন আমায়।ঠান্ডা গলায় বলে উঠলেন- “বেশি ব্যাথা লেগেছে মাথায়?একদম ফুলে গেছে তো।।সরি!! আর হবে না।” আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি…উনি আমায় সরি বলছেন?এতোকিছুর পরও??এতোটা ভালো হতে কে বলেছে উনাকে??ঋণের পাল্লা যে ভারি হয়ে চলেছে ক্রমাগত!!
.
#চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 33
.
.
?
.
আপু আর অভ্র ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে?
.
তো?তোমার কি মনে হয় এখনো বসে আছে?বাসর ঘরেও ঢুকে গেছে এতোক্ষণে। বুঝো না গ্রামে সন্ধ্যা সময়ই মধ্যরাত।।ভাইয়া তো বেচারা আরেকটু হলে কেঁদেই দিতো….যতবারই সে কবুল বলতে যায় কিছু না কিছু প্রবলেম শুরু হয়ে যায়।।প্রথম বার যখন কবুল বলতে গেলো রহিমা খালা চেঁচামেচি করে আমাকে অলমোস্ট রেপিস্ট বানিয়ে দিলো…আর সেকেন্ড টাইম তুমি….হা হা হা..
.
কথাটা বলেই ভুবন কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন উনি।কিন্তু আমার মুখে হাসি নেই।চোখ ভার হয়ে আসছে আমার…অশ্রু দেবী এই এলো বলে।।আমি উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি… আমায় এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি বন্ধ করে চোখের ইশারায় জিগ্যেস করলেন-
.
কি হয়েছে?
.
আই এম সরি!!আমার জন্য এতো কিছু..
.
উনি মুচকি হেসে আবারও নিজের সাথে জড়িয়ে নিলেন আমায়…একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন-
.
তুমি না আই এম সরি রোদপাখি…এতোটা রিয়েক্ট করা উচিত হয় নি আমার।মাথায় কতোটা ব্যাথা পেয়ে গেছো দেখলে??ইশশ!!কতোটা ফুলে গেছে..(কপালে ঠোঁট ছুইয়ে).আচ্ছা?তুমি রহিমা খালাকে এক্জেক্টলি কি বলেছিলে শুনি??যার জন্য উনি এতো কিছু ভেবে নিলেন!!
.
উনার কথায় লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।এখন কি বলবো?রহিমা খালাকে যা বলেছি তা কি আর উনাকে বলা যাবে নাকি??আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলেন-
.
কি হলো?বললে না তো…কি বলেছিলে?
.
কিছু না।।চলুন নিচে যাবো।অন্ধকার হয়ে গেছে তো!!
.
কথাটা বলে উঠতে নিলেই আমার বামহাতটা ধরে একটানে আবারও বসিয়ে দিলেন উনার পাশে….কোমরটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন-
.
কোথায় যাচ্ছো?চুপচাপ বসে থাকো।হোক রাত…তাতে কি??নিচে যে যার মতো কাজ করছে তোমার সেখানে কোনো কাজ নেই।।সো আমার পাশে বসে থাকো।।আজ সারারাত তোমায় নিয়ে চন্দ্র বিলাস করবো…দেখো কতোবড় চাঁদ উঠেছে!! (আকাশের দিকে ইশারা করে)
.
পাগল নাকি?কেউ চলে এলে কি বিশ্রী অবস্থা হবে…ভেবেছেন একবার??গ্রামে ছেলে মেয়ে একসাথে বসাটাও খারাপ নজরে দেখা হয়….তারউপর এখন তো রাত!!দেখি ছাড়ুন তো…
.
রাত তো কি হয়েছে?তুমি কি অন্যকোনো ছেলের সাথে বসে আছো??এই গ্রামের সবাই অলরেডি জেনে গেছে যে তুমি আমার ওয়ানপিস বউ..যে কাহিনী করে বিয়ে হলো…. মাই গড!!…এতো কাহিনীর পর আমার তো মনে হয় শুধু এই গ্রাম না আশেপাশের দশ গ্রামের মানুষও জেনে গেছে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা।।সো আমাদের এভাবে বসে থাকতে দেখলেও কেউ কিচ্ছু ভাববে না… নো টেনশন।।তাছাড়া রাতের বেলা গ্রামের কেউ ছাদে আসে না…গ্রামের মানুষদের ছাদভীতি আছে বুঝলে?ওদের ধারনা ছাদ মানেই ভূতের বাসা…আর কেউ শখ করে ভূতের হাতে মরতে আসবে না নিশ্চয়?আর তবু যদি ভুল করে চলে আসে তাতেও সফল হতে পারবে না…রাতুল আর সাকিবকে বলে দিয়েছি আজ রাতে যদি কেউ ছাদে ওঠে তো ওদের দুটোর হাত পা ভেঙে নদীতে ফেলে দিবো… সো ওরাই হ্যান্ডেল করবে সব….
.
আচ্ছা তা নাহয় হলো…কেউ ছাদে না এলেও তো আমাদের নিচে যেতে হবে নাকি??আমি সারাদিন কিচ্ছু খায় নি…ক্ষুধা পেয়েছে তো….(মুখ ফুলিয়ে)
.
তোমার কি মনে হয় আমি এতো বোকা??ওই দোলনার দিকে তাকাও…খাবার টাবার সব এনেছি রোদপাখি…আমি থাকতে বউ আমার না খেয়ে থাকবে হতেই পারে না।।(চোখ টিপে)
.
উনার মুখে “বউ” কথাটা শুনেই কেঁপে উঠলাম আমি।।সত্যিই আমি উনার বউ??কয়েকঘন্টার ব্যবধানে কারো জীবনের সাথে কতো সহজেই মিশে গেছি…এখন আমি অন্যের অধিকার…কপালে ঠান্ডা কিছুর ছোঁয়ায় ঘোর কাটলো আমার।।শুভ্র রুমালে বরফ পেচিয়ে,, বরফ লাগাচ্ছে আমার কপালে…কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি বরফ কোথা থেকে পেলেন উনি??ভ্রু কুঁচকে যখনই কথাটা জিগ্যেস করতে যাবো তখনই দেখি উনার পাশে একটা আইস বক্স.…তাতে দুটো আইসক্রিম ও দুটো কোকও আছে…বাহ্ উনি তো দেখি পুরো ব্যবস্থা করেই এসেছেন।।করবেনই তো… দেখতে হবে না বরটা কার!! কথাটা ভেবে নিজের মনে একটু হেসেই মনোযোগী হলাম উনার কথায়…উনি খাবারের প্লেটটা আমার হাতে তুলে দিয়ে বলে উঠলেন-
.
খাইয়ে দাও…উফফ কি হাত ব্যাথা..আমার প্রচুর হাত ব্যাথা বুঝলে রোদপাখি??ভাত মুখে তুলতে পারবো বলে মনে হয় না।।(ঠোঁট উল্টে)
.
আমি অবাক চোখে উনাকে দেখছি।লেম এক্সকিউজ!! হাত দিয়ে দুনিয়ার কাজ করছেন উনি আর খাবার সময়ই হাতে ব্যাথা??অদ্ভুত!! আমি খাবারের ঢাকনাটা খুলে আবারও অবাক হলাম…সব গ্রাম্য খাবার…কচুশাকের চচ্চড়ি,,ছোট মাছ..ডালের বড়া… আমি কৌতুহলী কন্ঠে বলে উঠলাম-
.
এসব কোথায় পেলেন?বিয়ে বাড়িতে তো এসব রান্না হয় না…তাহলে??
.
জোগার করেছি।বিয়ে বাড়ির এসব ভারি খাবারে বিরক্ত হয়ে গেছি একদম।।আর আমি এটাও জানি মিসেস আবরার শুভ্রও এসবে বোর.. রাইট??
.
আমি হাসলাম।।সত্যিই বিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম এসব পোলাও,,মাংস হাবিজাবি খেয়ে।।আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলেন উনি-
.
একটু কষ্ট হয়েছে বাট তিনজনের জন্য ম্যানেজ হয়ে গেছে।।(মুচকি হেসে)
.
তিনজন??আমরা তো দুজন…তাহলে তিনজন বললেন কেন??(ভ্রু কুচঁকে)
.
আরেকজন হলো সাহেল।খুবই অদ্ভুতভাবে সাহেল আর আমার পছন্দ এক।আমি কোনোকিছু এক দেখায় বলে দিতে পারবো কোনটা ওর পছন্দ হবে আর কোনটা হবে না।।কারণ আমার যা পছন্দ ওর ও তাই পছন্দ…তুমি খেয়াল করে দেখো…আমরা প্রায় সব অকেশনে সেইম ড্রেইস পড়ি…আজও কিন্তু পড়েছিলাম।।কিনতে গেলেও একই রকম কিনি।আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানো??ও তোমাকেও পছন্দ করে(চিন্তিত হয়ে) তোমার মনে হয় না?
.
আরে ধুর!! উনি আমায় কেনো পছন্দ করতে যাবেন।।সাহেল ভাইয়ার সাথে চিত্রার বিয়েটা হয়ে গেলে দারুন হবে।।আমরা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড…. আপনারাও…দারুন হবে না??(কৌতূহলী হয়ে)
.
উনি হাসলেন।আমার হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে আমার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বলে উঠলেন-
.
দারুণই হবে বাট চিত্রাকে ওর পছন্দ না।ও বিয়ে করবে না।
.
কেন কেন??আমার বেস্টুর মধ্যে খারাপটা কি??ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে।।সব ছেলের উচিত ওর পেছনে লাইন মারা…..আর সাহেল ভাইয়া এভাবে রিজেক্ট করে দিবেন??ইম্পসিবল….
.
আমার কথায় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে শুভ্র।। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।।এমন কি বললাম যে একদম হেসে মরে যেতে হবে?? উনি কোনোরকম হাসি কন্ট্রোল করে বলে উঠলেন-
.
ছেলেরা কি শুধু সৌন্দর্যই দেখে নাকি??তাছাড়া সাহেল অন্যান্য ছেলেদের মতো না একটু ডিফারেন্ট …এন্ড মেইন পয়েন্ট ইজ হি ডোন্ট লাইক চিত্রা…
.
কেনো লাইক করে না??অদ্ভুত!! আচ্ছা আপনাদের দুজনের চয়েজ তো সেইম তাই না??তাহলে আপনিও কি চিত্রাকে লাইক করেন না??
.
না….
.
কেনো?(ভ্রু কুচঁকে)
.
উনি হাসলেন…ফু দিয়ে আমার কপালে এসে পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন-
.
কারণ আমার বউ আছে আর আমি আমার বউকেই পছন্দ করি।অন্যকাউকে দেখার সময় কোথায়??
.
তাই বলে পছন্দই করবেন না??(অবাক হয়ে)
.
আরে বাবা!! সেই পছন্দ বলেছি নাকি…..এই পছন্দ সেই পছন্দ নয় বোকা!!এজ আ পার্সন আমি ওকে পছন্দ করি বাট নট আ স্পেশাল ওয়ান….. আর অপছন্দই বা কেন করবো বলো তো??
.
ওহ…আচ্ছা আপনি কি জানেন আপনার চয়েজ খুবই বাজে?
.
আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।প্লেটটা হাত থেকে রেখে আমার হাতে মেডিসিন ধরিয়ে দিতে দিতে বললেন.. ” কেনো?”
.
কেনো আবার??চিত্রা তো বেশ সুন্দরী কিন্তু আপনি তার প্রেমে পড়লেন না??চিত্রার কথা ছেড়েই দিলাম…শ্রেয়াকেই ধরুন না…আপনি ওর নামটাই ভুলে গেলেন??যেখানে শ্রেয়ার জন্য সবাই পাগল!!
.
আমার কথায় হাসলেন উনি।।নিজের মুখে খাবার পুড়ে নিতে নিতে বললেন…
.
রোদপাখি.?ভালোবাসাটা একটা ভয়ঙ্কর নেশা বুঝলে!! তুমি কাকে কখন কিভাবে ভালোবেসে ফেলবে তা তোমার হাতে নেই।।ভালোবাসাটা জাস্ট হয়ে যায়…আর যখন এই ভালোবাসা নামক নেশাটা রক্তে রক্তে ঘুরে তখন পৃথিবীর সব সৌন্দর্যের পাশে ভালোবাসার মানুষটির প্রতিচ্ছবিই ভেসে উঠে বারবার।।আর আমি জানি আমার চয়েজটা কতোটা মারাত্মক …… তাই এতো ভয়ে থাকি….আমার মায়ার জালটা আবার কেউ চুরি করে না নিয়ে যায়….একবার চুরি হলেও তো আমি শেষ…একেবারেই নিঃশ্ব!!
.
আমি স্তব্ধ হয়ে উনার কথাগুলো গিলে চলেছি।।কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলেন উনি।।খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে…হাতটা আমার আচঁলে মুছেই একটা আইসক্রিম ধরিয়ে দিলেন আমার হাতে…নিজের জন্য একটা নিয়েই আমার কোলে মাথা রেখে সটান শুয়ে পড়লেন উনি আবার কি ভেবে চট করে উঠেই বলে উঠলেন-
.
তুমি শোয় রোদ।তোমার তো মাথা ব্যাথা করছে।।ইউ নিড স্লিপ।নিচে এত্তো এত্তো মানুষের মধ্যে তোমার ঘুম হবে না।তাই এখানেই ঘুমাও আমি তো আছিই…
.
কথাটা বলে এক মিনিটও দেরি না করে একরকম জোর জবরদস্তি করেই আমাকে উনার কোলে মাথা রাখতে বাধ্য করলেন।।উনার এতো কাছে এভাবে কখনো ভাবিনি নিজেকে… বড্ড অস্বস্তি হচ্ছিলো মনে।।কিন্তু মাথায় উনার হাতের স্পর্শ আর উনার ননস্টপ বলা কথায় অস্বস্তিটা যেনো দৌড়ে পালালো।।সাথে সাথেই ঘুমেরা ধরা দিলো চোখে।শান্তির ঘুম!!
.
?
.
ঘুমটা হঠাৎই ছুটে গেলো আমার…হঠাৎ ঘুম ভাঙায় নিজেকে ঠিক আবিষ্কার করতে পারছিলাম না ঠিক কোথায় আছি আমি?মুখের উপর কাপড় জাতীয় কিছু ফিল হওয়ায় হাত দিয়ে সরিয়ে আনলাম জিনিসটা…রুমাল??রুমালটির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই কোথা থেকে কেউ একজন বলে উঠলো –
.
গুড মর্নিং রোদপাখি…
.
কথাটা শুনে চোখ তুলে উপরের দিকে তাকাতেই শুভ্র ভাইয়ার মুখ ভেসে উঠলো।মুখে ক্লান্তিমাখা হাসি।।উনার মুখ দেখেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো আমার।।উনি ঠিক রাতের মতোই বসে আছেন৷।। ইশশশ….উনি সারারাতই জেগেছিলেন নাকি??চারদিকে ভোরের আমেজ শুরু হয়েছে মাত্রই…একেই হয়তো বলে কাক ডাকা ভোর।।কিন্তু চারপাশে কাকের ডাক শুনা যাচ্ছে না মোটেই।।চারপাশে তো পাখির কিচিরমিচিরের শব্দ….এই রকম একটা ভোরের কথায় হয়তো…উপন্যাসিকরা লিখতেন তাদের উপন্যাস পটে…!! আমি মুগ্ধ চোখজোড়া নিয়ে উঠে বসতেই উনি শুয়ে পড়লেন আমার কোলে…আমার আঁচল টা টেনে নিলেন উনার মুখে।।আচঁলে মুখ ঢেকেই বলে উঠলেন..
.
ডোন্ট ডিস্টার্ব…. পুরো একঘন্টা ঘুমাবো আমি।আর এই আচঁল সরাবে না একদম…এই স্মেল টা আমার নেশা!!!
.
?
.
আজ আবারও ঢাকার গন্তব্যে পাড়ি জমিয়েছি সবাই।।শুভ্র ভাইয়ার মুখটা দেখার মতো হয়েছে…তার প্রধান কারণ হলো আমাদের বিয়ে!! আমাদের বিয়েটার কথা যেনো সবাই ভুলেই গিয়েছে।। তাদের ধারনা এই এক্সিডেন্টালি বিয়ে হওয়াটা আমরা কেউই মেনে নিতে পারি নি।।আর এই বিয়ে কোনো বিয়ের পর্যায়ে পড়ে নি।।পাত্র পাত্রীর অসম্মতিতে বিয়ে ঠিক নয়।।তাই আমাদের বিয়েটাও ঠিক নয়।।ব্যাপারটায় আমার ভাবাবেগ না হলেও শুভ্র ভাইয়া চরম বিরক্ত।।উনি বেশ কয়েকবার আমার কানে ফিসফিস করে বলেও দিয়েছেন-
.
লুক রোদপাখি!! আজ যদি বিয়েটা আমার… তুমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সাথে হতো তো বিয়ের দু’মিনিট পরই বাবা চড় থাপড়া দিয়ে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিতো।।আর মা তো আরো একধাপ এগিয়ে…নির্ঘাত স্টার জলসার মা’দের মতো কসম দিয়ে বলতো…খোকা!! কথা দে…একবছরে নাতি নাতনীর মুখ দেখাবি…কথা দে!! আর এখন যখন আমি রাজি আছি তখন দেখো?দুনিয়ার সবাই বিয়েটাই ভুলে গেলো??বাসর তো বহুত দূরের কথা…এটাই আমার কপাল বুঝলে??(মুখ ফুলিয়)
.
উনার কথায় বারবারই হুহা করে হেসে উঠেছি আমি….কি বাচ্চাদের মতো কথাবার্তা!!
.
#চলবে…

#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 34
.
.
?
.
ব্রেকফাস্ট করে ছাদে গিয়ে বসতেই মা এসে হাতে একটা পার্সেল ধরিয়ে দিলো।।আমি অবাক চোখে আম্মুর দিকে তাকাতেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলেন উনি-
.
তোর নামে এসেছে…দেখ তো কে পাঠালো!!
.
কথাটা বলে আবারও ব্যস্ত ভঙ্গিতে নিচে নেমে গেলেন আম্মু। আম্মুর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পার্সেলটার দিকে তাকালাম।আমার জন্য পার্সেল??কে পাঠাবে??মনের মাঝে হাজারও প্রশ্ন নিয়ে চোখদুটো কুঁচকে দূরের নীল আকাশটির দিকে তাকালাম।পার্সেলটা খুলে মনের কৌতূহলটা মিটাতে ইচ্ছে করছে না মোটে।থাকুক না কিছু কৌতূহল!! এই অচেনা প্রশ্নগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে বেশ লাগছে!!ছাদের পাশের আম গাছটায় লাল নীল রঙের একটি পাখি এসে বসেছে প্রায় আধা ঘন্টা হলো।কি অলস তার চালচলণ,, আচ্ছা?? এই ঢাকা নামক কাকের দেশে এই রূপসী পাখিটা এলো কিভাবে??তারও কি আমার মতো অস্তিমজ্জায় অলসতা ভর করেছে??তারও কি একজন শুভ্র আছে??পাগলাটে টাইপ শুভ্র!!অসম্ভব সুন্দর এই পাখিটার নামটা জানতে ইচ্ছে করছে খুব।।মা নিশ্চয় জানে নামটা,, কিন্তু মাকে ডেকে জিগ্যেসই করতে ইচ্ছে করছে না মোটেই।।থাকুক না নামটা অজানা….সব সৌন্দর্যই কি নাম দিয়ে বিচার করা জরুরি??থাকুক না কিছু নাম হীন সৌন্দর্য…নাম হীন অনুভূতি।।কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর পার্সেলের বাদামী রং এর আবরণটা খুলে চোখ রাখলাম ভেতরের জিনিসটিতে।।ডায়েরি!!অসম্ভব রকম কৌতূহল নিয়ে ঝটপট হাতে নিলাম ডায়েরীটা…ডায়েরীর উপরে আাঠা দিয়ে লাগানো ক্যাম্পাস লাইব্রেরীর টেবিলে মাথা রেখে ঘুমন্ত আমার ছবি…তার নিচে ছোট ছোট গোটা গোটা অক্ষরে লেখা “❤For sunshine ” “সানসাইন” শব্দটা দেখেই যে মানুষটার কথা প্রথম মনে হলো সে হলো সাহেল ভাইয়া। তাহলে কি সাহেল ভাইয়াই পাঠিয়েছে এই পার্সেল?এটাই কি উনার বলা গিফ্ট!!অধীর আগ্রহ নিয়ে ডায়েরীটা খুললাম…তাতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা-
.
❤সাইনশাইন,
.
“সানশাইন” নামটা শুধুই আমার জন্য…এই নামের অধিকার আর কাউকে দিও না প্লিজ।থাকুক কিছু আমার ঝুলিতে খুব গোপনে।।ভার্সিটির প্রথম দিনটিতে ক্যান্টিনে ঠিক আমার সামনের চেয়ারটাতে বসা মেয়েটির বাচ্চাদের মতো ঘন ঘন পলক ফেলে ভয় ভয় দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকানো!!হঠাৎ করে রেগে ওঠা…আর কি জেদ!! বাচ্চা একটা মেয়ের এতো উত্তাপ?এতো সাহস?সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম আমার আর রক্ষে নেই….এবার তো মরণ নিশ্চিত। দ্বিতীয় দিনটিতে হলুদ জামা পড়ে গুটি গুটি পায়ে হাজারো অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়ালো আমাদের সামনে।দ্বিধা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো-” সরি ভাইয়া!!” বলো তো .. এতো সুন্দর করে সরি বললে কি রেগে থাকা যায়??তোমার বলা ওই সরি কথাটা বুকে গিয়ে লেগেছিলো সেদিন….কি মিষ্টি সে স্বর!!শুভ্ররও হয়তো সেইম ফিলিংসটায় হয়েছিলো তাই তো বিনা বাক্যে ক্ষমা করে দিলো তোমায়।।যদিও এর পেছনে আরেকটা কারণও ছিলো…সেদিন শুভ্র জানতো তুমি ওর ফুপ্পির মেয়ে…সাথে জানতাম আমিও।।সেদিন সেই মুহূর্তে দুটো মন কেঁপেছিলো একইসাথে….আমার মনে ছিলো ভালোবাসা আর শুভ্রর মনে ছিলো ভালোবাসা আর পাগলামো।।তোমাকে পাওয়ার পাগলামো।।তুমি ওর সাথে নিজ থেকে কথা বলবে শুধুমাত্র এই কারণটার জন্য দিনের পর দিন নিকৃষ্ট ব্যবহার উপহার দিয়েছে তোমায়….তার উদ্দেশ্য একটায়.. রেগে হোক,,হেসে হোক বা প্রতিশোধ নেওয়ার আশায় হোক তুমি তার সাথে কথা বলো!!প্রতিটি দিন তুমি ক্লাস থেকে বের হতেই দুটো মানুষের দৃষ্টি তোমার উপর পড়তো সবার আগে….সেদিন লাইব্রেরীতে শুভ্র নিজের বেস্ট এসাইনমেন্টটায় দিয়ে দিয়েছিলো তোমায়…ভাগ্যিস আমিও গিয়েছিলাম খাতা হাতে…দেখেছিলাম তোমার সাথে ওর অন্তরঙ্গ মুহূর্ত।। জানতে পেরেছিলাম তোমার প্রতি শুভ্রর ফিলিংস…আর থমকে গিয়েছিলো হৃদয়!!তারপরও হাল ছাড়ি নি আমি ভেবেছিলাম বলবো তোমায় কিন্তু দিন দিন বাড়ছিলো তোমার প্রতি শুভ্রর পাগলামো।তুমি চিন্তাও করতে পারবে না কতোটা পাগল সে তোমার জন্য!! তোমার অগোচরেও যারা ভুলেও তোমার দিকে তাকিয়েছে তাদের অবস্থা কতটা বাজে করেছে তা শুধু আমি জানি।।তোমায় দেখে শিষ দিয়ে উঠার অপরাধে ভার্সিটির এক জুনিয়রকে ১০ দিন হসপিটালাইজড থাকতে হয়েছে।।নিজের পরিচয় গোপন করে তোমার কাছে যাওয়ার ওর চেষ্টাও আমার চোখে পড়েছিলো…তার সাথে পড়েছিলো অনেক দীর্ঘশ্বাস!!যেদিন রাতে তোমার সাথে ইনসিডেন্টটা হলো…সেদিন পিলে চমকে গিয়েছিলো আমার….শুভ্রর রিয়েকশন ছিলো তার থেকেও ভয়ানক।।সেদিন আরেক শুভ্রকে দেখেছিলাম আমি…কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সে!! তোমায় হসপিটালে এডমিট করার পর সারাটা রাত জানোয়ারের মতো মেরেছিলো ওদের।।চিৎকার করে কেঁদেছিলো তোমাকে হারানোর ভয়ে….নিজের হাতের কি অবস্থা করেছিলো দেখেছিলে নিশ্চয়??তোমার জানার বাইরেও কতো ধরনের পাগলামো করে সে শুধু তোমার জন্য তা হয়তো শুধু আমিই জানি….তুমি কি জানো??রাত ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত তোমাদের বাসার জামরুল গাছটার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে শুভ্র! একঝাঁক মশার কামড় খায়…এরমধ্যে কফি হাতে তুমি বেলকনিতে আসো…এতো দূর থেকে রাতের অন্ধকারে তোমার ছায়াটা দেখেই বাড়ি ফিরে সে…রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য তোমার বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষাও একটা আগ্রহের বস্তু ওর…তাই তো কখনোই আধাঘন্টার আগে রিকশা পাও না তুমি…কারণটা বুঝেছো নিশ্চয়!!আমার আর শুভ্রর পছন্দগুলো সেইম…ড্রেস কিনতে গেলে সেইম ড্রেস ডাবল না হলে অর্ডার দিয়ে হলেও বানিয়ে নিতাম আমরা…কিন্তু ভাগ্য দেখো…লাইফের সবচেয়ে এক্সপেন্সিভ জিনিসটায় তো ডাবল পেলাম না।।তোমাকে পাওয়া হলো না।।যদি লাইফের অর্ধেক হায়াত দিয়ে হলেও আল্লাহর কাছে আরো একটা “তোমাকে” অর্ডার করতে পারতাম তবু করে নিতাম সানশাইন!! কিন্তু এমন তো আর হওয়ার নয় তাই না?? কখন সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় জানো?যখন মনে হয় তোমাকে নিয়ে নিজের কল্পনায়ও ভাবার অধিকার নেই আমার তোমার সবটাতেই শুধু শুভ্রর অধিকার,…তখন ক্ষতবিক্ষত হই আমি…মারাত্মকভাবে ক্ষতবিক্ষত হই।। তবু সরে দাঁড়িয়েছে কারণ আমি জানি…শুভ্র তোমাকে না পেলে পাগল হয়ে যাবে…কিন্তু আমি হবো না।।যতবার তুমি সামনে আসো নিজেকে বলি তাকাবো না,, দেখবো না তোমায়…কিন্তু চোখটা শুনলে তো!!বেহায়া চোখ বারবার ঘুরেফিরে সেদিকেই যায়।।এই চিন্তা করো না…আমি কিন্তু খারাপ নেই বরং ভালো আছি।।বাচ্চাদের মতো ভাবি কি জানো?কোন এক পরি আসবে আর তার ম্যাজিক দিয়ে তোমাকে ভুলিয়ে দিবে…আসবে তো সানশাইন??নিশ্চয় আসবে তাই না??এক সপ্তাহ পর ফাইনাল এক্সাম শেষ হচ্ছে…পাড়ি জমাবো অনেক দূরের দেশে।ভাবলাম যাওয়ার আগে ফিলিংসগুলো জানিয়ে দিই তোমায় আপাতত বুকের ভারটা তো হালকা হবে।।শুভ্রও পেয়েছিলো স্কলারশিপ কিছু না ভেবেই রিজেক্ট করলো।।তোমায় ছাড়া নাকি থাকতে পারবে না সে…বড্ড হারানোর ভয় ওর…।।তোমার পছন্দ করে দেওয়া শাড়িটা বড্ড সুন্দর ছিলো… আমি দেশে ফিরলে আমার বউ এর শাড়িটা তুমিই পছন্দ করে দিও…দিবে তো??আর একটা কথা,, প্লিজ দেখা হলে স্বাভাবিক থেকো একদম আগের মতো…নয়তো লজ্জা পাবো বেশ!!
.
সাহেল?
.
ডায়েরীর এই পৃষ্ঠা টা পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম আমি…সাহেল ভাইয়া??কিছু কিছু সত্য না শুনাটায় যে মঙ্গল তা আজ বুঝতে পারছি আমি।।কোনো জানলাম শুধু?কোনো খুললাম পার্সেলটা? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদের কোণে গিয়ে দাঁড়ালাম… মনটা বলে উঠছে বার বার…পরিটা যেনো আসে!! খুব শীঘ্রই আসে!! মার ডাকে ঘোর ভাঙলো আমার…তৈরি হওয়ার জন্য চেচাচ্ছে মা…আজ নাকি আপুকে আনতে যাবো আমরা…আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে নেমে গেলাম আমি….
.
?
.
খাবার টেবিলে বসে আছি…সবাই খাবার নিয়ে ব্যস্ত মামুদের কিছু গেস্টও আছে সাথে।।পানিটা মুখে নিয়ে গিলতে যাবো ঠিক তখনই ধুমধুম করে নিচে নেমে এলেন শুভ্র ভাইয়া।।উনাকে দেখেই গলায় পানি আটকে এলো আমার…এলোমেলো চুল…সাদা টি-শার্ট,, লাল থ্রী কোয়াটার প্যান্ট পড়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে চেয়ারে বসেই বলে উঠলেন উনি-
.
মা?তাড়াতাড়ি খেতে দাও…পড়া এখনও কমপ্লিট হয় নি আমার…আই হেভ টু ফিনিশ মাই সিলেবাস…
.
কথাটা বলেই নিচু হয়ে খেতে শুরু করলেন উনি।।এদিক ওদিক একটুও তাকালেন না…ঢং!! হঠাৎ করেই উনার সেই দূরসম্পর্কের মামি বলে উঠলেন-
.
দুলাভাই?অভ্রর তো বিয়ে হয়েই গেছে এবার শুভ্রর বিয়েটাও তো দিতে হবে।।আপনি একদম চিন্তা করবেন না দুলাভাই…আমি মেয়ে ঠিক করে নিয়েছি!! খুবই লক্ষি একটা মেয়ে।।শুভ্র বাবা?ওর সাথে একটু দেখা করবি?এনি টাইম দেখা করতে রাজি সে।
.
মহিলার কথা শুনে গলায় খাবার আটকে গেলো আমার।।শুভ্রও বিষম খেলো…আমার দিকে আড়চোখে তাকালো।।মামু কিছু বলতে যাবে তার আগেই মহিলাটা আবারও বলে উঠলেন…
.
দেখা না করলেও ফোনে আপাতত কথা বলে নে ….লক্ষি ছেলে!
.
শুভ্র বিরক্ত মুখে বললো….
.
আমি কেবল স্টাডি করছি মামি…সো আমার বিয়ে নিয়ে এতো টেনশন করতে হবে না তোমায়।।আগে স্যাটেল হই তারপর বউ আমার ঘরে আপনাআপনিই চলে আসবে…
.
আরে তোর আবার স্যাটেল কি রে??তোর তো সব স্যাটেলই…আমি ফোন লাগিয়ে দিচ্ছি..খেতে খেতেই কথা বলে নে না।।তোর অবশ্যই পছন্দ হবে।।মেয়েটা তুই বলতে পাগল!!
.
মামির কথায় বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলেন শুভ্র-
.

আমার পছন্দের সিস্টেমটা ওয়ানটাইমার…একবার উইজ হলে আর কাজ করে না।।আর তোমার ভাগ্য খারাপ সেটা ইউজ হয়ে গেছে…এখন রাণী এলিজাবেথ কে এনে দিলেও কাজ হবে না।।আর আমি কোনো পাগল ছাগল কে বিয়ে করবো না।।সো লিভ ইট।
.
আরে কথা তো বল।।আমার মান রাখতে আপাতত একটু কথা বল বাবা!! কতো বড় মুখ করে বললাম তোর সাথে কথা বলাবো।।প্লিজ বাবা!!
.
শুভ্র এবার ভ্রু কুঁচকে তাকালেন…ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলেন-
.
ওকে দাও!! ইউ হেভ জাস্ট ফাইভ মিনিটস…
.
মামি খুশিতে গদগদ হয়ে ফোনটা ডায়াল করেই উনার হাতে ধরিয়ে দিলেন।।রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো আমার।।শুভ্র খুব স্বাভাবিকভাবে ফোনটা নিয়ে টেবিলে রেখে লাউডে দিলেন…হয়তো উনি আমার মনের অভিপ্রায় বুঝতে পারছিলেন।।কিছুক্ষণ পরই রিনরিনে কন্ঠে একটা মেয়ে বলে উঠলো-
.
হ্যালো??
.
হ্যালো আই এম আবরার শুভ্র….আমার মামি বললো আপনি আমার সাথে কথা বলতে চান।বলুন প্লিজ….
.
ওহ মাই গড! আপনি?কেমন আছেন?এক্চুয়েলি আমি খুবই নার্ভাস ফিল করছি।
.
মেয়েটির কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।ফাজিল মাইয়া এতো নার্ভাসনেস আসে কই থেকে তোর??কি বুঝাতে চাস তুই??উনি আমার দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসলেন তারপর প্লেটের দিকে তাকিয়ে খাওয়ায় মনোযোগী হয়ে বলে উঠলেন-
.
এতো নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই মিস! কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন…আই এম বিজি।
.
আপনি কি ওলওয়েজ গম্ভীর মুখে থাকেন?হাসেন না??
.
হাসি তো…বউয়ের পাশে থাকলে অলওয়েজ হাসি হাসি মুডে থাকি গম্ভীরতা সিস্টেমটা তখন আর কাজ করে না।।নেক্সট!”
.
বউ?বউ মানে??
.
আপনি কি প্রাইমারিতে পড়েন??প্রাইমারি পড়া ছেলেমেয়েরাও তো বউ মানে বুঝে… আপনি বুঝেন না??স্ট্রেঞ্জ!!
.
উনার কথায় সবাই মুখ চেপে হাসছেন আর আমি লজ্জায় লাল রং ধারন করছি।।মেয়েটা আবারও বলে উঠলো-
.
ওকে লিভ ইট।আমরা কি কোথাও দেখা করতে পারি??
.
না পারি না।
.
কেনো??
.
আপনার সাথে দেখা করার কোনোই রিজন নেই।তাই দেখা করতে পারি না।
.
তাহলে ফোনে কথা বলছেন কেন?
.
মামির সম্মান বাঁচাতে…
.
হা হা হা…আপনি আসলেই অনেক কিউট।।আচ্ছা বলুন তো…এমন কে আছে…যাকে রিকুয়েষ্ট করলে আপনি আমার সাথে দেখা করবেন.. আমি তাকে পা ধরে রিকুয়েষ্ট করবো।।প্লিজ বলুন
.
এমন কেউ নেই। আপাতত আমি কারো রিকুয়েষ্ট শুনছি না।।একজনের টা শুনবো বাট সে এই রিকুয়েষ্ট টা করবে না…সো প্রশ্নই আসছে না।
.
উনি কথাটা বলার সাথে সাথেই সবাই আমার দিকে তাকালো…আমি মাথা নিচু করে খাবার খেতে শুরু করলাম…কি অস্বস্তিকর পরিবেশ!!এই মাইয়া মরে না কেন??অসভ্য!! খুব দেখা করার শখ না?তোকে তো আমি..
.
কে সে একজন??
.
মাই ওয়াইফ…এন্ড ইউর টাইম ইজ ফিনিশ!! বাই..
.
কথাটা বলেই ফোনটা ডিসকানেক্ট করে উঠে দাঁড়ালেন উনি।।মামানির দিকে তাকিয়ে বললেন-
.
মা?আগামী তিনঘন্টার মধ্যে আমার রুমে যেনো কেউ না ঢুকে আমি ঘুমোবো…
.
মামনি ভ্রু কুঁচকে রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বললেন.. ” কেউই ঢুকতে পারবে না?” মামনির কথায় হেসে উঠলেন শুভ্র।।আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়েই ব্যস্ত ভঙ্গিতে সিঁড়ি ভেঙে নিজের রুমে ঢুকে গেলেন,, যেতে যেতে বলে উঠলেন- “যার কথা বলছো সে এনিটাইম এলাউড মা…” উনার মামি এখনও শক খাওয়া চোখে তাকিয়ে আছেন।সাথে অন্যান্য গেস্টরাও..” ওয়াইফ” শব্দটা নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তাদের।আমি মাথা নিচু করে আড়চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছি।সবাই ঠোঁট চেপে হেসে চলেছে এমন কি মামুও!! ছি কি লজ্জা!!!
.
#চলবে..

#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 35
.
.
?
.
দুপুরের খাবার পর শুভ্র ভাইয়ার দরজায় উঁকিঝুঁকি দিচ্ছি।ভেতরে ঢুকবো কি না বুঝতে পারছি না। উনি নিশ্চয় ঘুমিয়ে গেছেন এতোক্ষণে… ভেতরে গিয়ে রুমটা কি দেখে আসবো?আগে কখনো দেখা হয় নি রুমটা।।তুমুল অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি ঠিক তখনই চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে ছাদে যেতে যেতে মাধবী বলে উঠলো-
.
ছোট ভাবি আপনে ভেতরে যাইতে পারেন।।ছোট ভাইজান আপনারে কিছু কইতো না…আপনি ছাড়া কারো ঘরে ঢুকার পারমিশন নাই।
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসেই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেলাম।এই মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে এসব কথা শুনার চেয়ে ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় উত্তম বলে মনে হয়েছে আমার।ভেতরে ঢুকেই অবাক হলাম আমি…. কি সুন্দর গোছানো চারপাশ!!ছেলেদের ঘর এতো গোছানো থাকে বুঝি??ঘরের দেওয়াল টা পিংক এন্ড ব্লু রঙে সাজানো।।বিশাল জানালায় সাদা পর্দা টানায় রুমের মধ্যে একটা শীতল শীতল ভাব।।ঘরের সোফা..আলামারি,,বিছানার চাঁদর -কুশন,, এমনকি বুক সেল্ফটাও সাদা রঙের।।বেড সাইড টেবিলে রাখা সাদা ফুলদানিতে শুধু টকটকে লাল ফুল!!ডানপাশের দেয়ালে উনার বিভিন্ন বয়সের ছবি।।তারমধ্যে থেকে ব্লু শার্ট পড়া ছবিটিতে চোখ আটকে গেলো আমার।।ইশশ!! মানুষ এতো সুন্দর হয় কি করে??দাঁতগুলোও কেমন ঝকঝকে…. বিছানার উপরের দেয়ালে চোখ যেতেই অবাক হলাম আমি….সেখানে টানানো আমার সেই ঘুমন্ত ছবিটি…. আরেকটু কাছে গিয়ে চোখদুটো ছোট ছোট করে অসীম কৌতূহল নিয়ে পর্যবেক্ষন করেই মুগ্ধ হলাম আমি….অসাধারণ একটা ছবি!!সাহেল ভাইয়ার ছবির হাত যে অসাধারণ তা মানতেই হবে!!ছবির নিচের ফ্রেমটাতে সোনালি রঙে গুটি গুটি অক্ষরে লেখা “ঘুমন্তপরী!!…From sahel❤” লেখাটা পড়েই বিস্মিত হলাম আমি।।ছবিটা সাহেল ভাইয়া দিয়েছে?ছবিটির আশেপাশে আরো কিছু ছবি লাগানো…সবকটায় আপুর এনগেজমেন্টের পার্টির বা লুকিয়ে তোলা।।সবগুলো ছবিতেই আমি শুভ্র পাশাপাশি!! সাজানোর স্টাইলটার জন্যই ছবিগুলো আরো প্রাণোবন্ত হয়ে উঠেছে যেনো।ইশশ!! আমার এতো ছবি টানিয়েছেন উনি??বাড়ির সবাই দেখেছে নিশ্চয় !! কি লজ্জা…হঠাৎ করেই হাতে খুব জোড়ে টান পড়ায় বিছানায় গিয়ে পড়লাম আমি….বিছানায় পড়তেই আমায় কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিলেন শুভ্র!!মুখে বললেন-” চলো ঘুমাই” ঘটনার আকস্মিকতায় আমি স্তব্ধ…আমার গলায় শুভ্র মুখ ঢুবিয়ে দিতেই ঘোর কাটলো আমার।।নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু ফলাফল শূন্য!!উনি আমায় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন-
.
এতো নরম কেন তুমি…উফফ…মনে তো হচ্ছে…শরীরের মধ্যে ঢুকে যাবে।আচ্ছা তুলো টুলো খাও নাকি??তুমি তো দেখি তুলোর থেকেও নরম !!
.
আমি কিছু বললাম না…এক্চুয়েলি কিছু বলতে পারছি না…উনার প্রতিটি নিশ্বাস পড়ছে আমার গলায়…আর সাথে সাথেই ফ্রিজড হয়ে যাচ্ছি আমি।।কথাগুলো যেনো গলার ভেতর আটকে যাচ্ছে কি নিষ্ঠুরভাবে।।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বাম সাইডের গলায় ঠোঁট দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে উঠলেন-
.
তোমার এই তিলটা সবসময় ঢেকে রাখবে বুঝলে?এটা খুবই বিরক্ত করে আমায়।।খুইবব!!
.
কথাটা বলে নিয়েই গলার বাম সাইডটায় কামড়ে দিলেন উনি।আমি “আহ্” করে উঠতেই মুখ চেপে ধরলেন আমার।।ফিসফিস করে বলে উঠলেন-
.
এই এসব উহ আহ শব্দ করো না তো।।বাড়ি ভর্তি মানুষ…ছি ছি কি ভাববে আমায়!!
.
তো এভাবে কামড়াচ্ছেন কেন শুনি?ছাড়ুন আমায়…(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
.
কি করবো বলো?তোমার শরীর এতো নরম যে মাঝে মাঝেই আমি কনফিউজড হয়ে পড়ি এক্চুয়েলি এটা শরীর নাকি কোনো সফ্ট কেক।।তাই মাঝে মাঝে কামড় দিয়ে চেইক করে নিই ইজ ইট ইউ অর নট!!..টেইক ইট ইজি রোদপাখি…বেশি ব্যাথা লেগেছে??দেখি!
.
উনার কথায় মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আমার।ব্যাটায় বলে কি?আমি আর কেক??উফফ অসহ্য…এই খাটাসটাকে এই মুহূর্তে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার…এই মুহূর্তে!!একরাশ রাগ নিয়ে আবারও নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম আমি।কিন্তু তাতে বিপত্তি বাড়লো বয় কমলো না।। উনি আমায় আরো শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলেন।।আমার হারগুর ভেঙে যাওয়ার উপক্রম।এই এখনই বুঝি মট করে ভেঙে যাবে সব!!উনি গলায় মুখ ডুবিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন-
.
ইশশ এতো নড়াচড়া করছো কেনো রোদপাখি?একটু ঘুমাতে দাও না প্লিজ।।ইউ নো রোদু?কাল রাত ১২ টা থেকে আজ দুপুর ১ টা পর্যন্ত কন্টিনিউয়াসলি পড়াশোনা করছি৷। মাথাটা একদম ধপধপ করছে বুঝলে?আই নিড আ সাউন্ড স্লিপ…সো নো নড়াচড়া.. লেট মি স্লিপ।
.
আপনি ঘুমোন না।। আমি কি ধরে রেখেছি আপনাকে??দরকার হলে ঘুমোতে ঘুমোতে শহীদ হয়ে যান বাট আমাকে যেতে দিন।।ছাঁড়ুন প্লিজ!!(করুণ কন্ঠে) মা নির্ঘাত খুঁজছে আমায়।
.
উহুম.. খুঁজলো খুঁজুক… খুঁজতে দাও…ছাড়ছি না এখন।আমি ঘুমিয়ে গেলে চলে যেও এর আগে নয়।
.
আপনি আসলেই একটা পাগল।ছাড়ুন তো! রাগ লাগছে আমার।উফফ!!(দাঁতে দাঁত চেপে)
.
পাগল?পাগল হতে কিন্তু দোষের কিছু নেই রোদপাখি।শেক্সপিয়ারের মতে পাগল,প্রেমিক আর কবি একসূত্রে গাঁথা।। তিনি বলেছেন কি জানো??তিনি বলেছেন- “The lunatic, the lover and the poet/ are the imagination all compact.”
সেই হিসেবে পাগল হতে আমার তেমন একটা আপত্তি নেই।।আমি তো তোমাকে দেখার সাথে সাথেই পাগল থেকে শুরু করে কবি পর্যন্ত সবই হয়ে গেছি রোদপাখি।(চোখ টিপে)
.
আমি রাগ কন্ট্রোল করে চুপচাপ শুয়ে আছি।।ইচ্ছে করছে এটাকে এক লাথি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিই।।যে শয়তানের বদবুদ্ধিতে এই রুমে ঢুকেছিলাম আমি…আই সয়ার তাকে পেলে ঢাকার নিকৃষ্টতম ড্রেনটাতে গুণে গুণে ২০ বার চুবাবো।।শয়তানের শয়তানীগিরি ছুটিয়ে ছাড়বো আমি…. তার জন্যই তো ফেঁসে গেলাম ।।ও মোর খোদা!!প্লিজ এবারের মতো রক্ষা করো আমায়…এই খচ্চরটার আশেপাশেই আসবো না আমি আর…প্লিজ!!””
.
?
.
ড্রয়িংরুমে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।সবাই ছাদে তারমানে এখনো খুঁজ পড়ে নি আমার।।একটা ছোট শ্বাস নিয়ে সোফার দিকে তাকাতেই দেখি সাহেল ভাইয়া গালে হাত দিয়ে বসে আছেন।।আমাকে দেখেই মিষ্টি হেসে…সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন-
.
কেমন আছো সানশাইন??
.
উনাকে দেখে কিছুটা অস্বস্তি হলেও মুখে হাসি টেনে উনার পাশের সোফায় বসতে বসতে বললাম-
.
আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া আপনি??
.
ভালো নেই গো।।খুবই করুণ অবস্থা আমার!!
.
কেনো কি হয়েছে ভাইয়া?
.
সারারাত পড়াশোনা করার পর দুপুরে এই বাড়ির সোফায় বসে ঝিমুতে হলে কিভাবে ভালো থাকি বলো??বুঝলা সানশাইন?? এরা না অলওয়েজ আমায় ফাঁসিয়ে দেয়।।এই দেখো,, শালা হারামি শুভ্রটা আমাকে ফোন দিয়ে জোর করে ঢেকে এনে এখন নিজেই নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে।। ইচ্ছে করছে শালাকে এক ঘুষিতে নাক ফাটিয়ে দিই।
.
ফাটিয়ে দিন না মানা করেছে কে?উনার নাক ফাটানোই উচিত।।কিন্তু আপনাকে ডেকে পাঠানোর কারন?
.
তোমাদের বাসায় যাওয়ার জন্য।নতুন জামাইয়ের সাথে নাকি যেতে হয়??সেই নিয়ম রক্ষার্থে আমি আর শুভ্র যাচ্ছি অভ্র ভাইয়ের পিছু পিছু।।এই শোন না?বউয়ের বাড়ি যাওয়ার পর নাকি….বরের সঙ্গীদের উদ্ভট আর ভয়ঙ্কর সব জিনিস খেতে দেওয়া হয়??লাইক.. মরিচের জোস??(ভয়ার্ত দৃষ্টিতে)
.
উনার এমন ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে অবাক হলাম আমি।।একটু সিরিয়াস ফেইস নিয়ে বলে উঠলাম-
.
হ্যা তা তো খেতে দেওয়া হয়ই….
.
ও মাই গড!! সানশাইন?? লুক আমায় এসব খেতে দিও না…শুনেছি ভাইয়ের শালীরাই এমন করে…সেই হিসেবে তুমিই তো হবে তার লিডার…তাই তোমাকেই বলছি যা খাওয়ানোর তোমার জামাইকেই খাইয়েও আমাকে নয়…আমি কিন্তু সম্পর্কে তোমার ভাসুর হই…শুভ্র থেকে ১ দিনের বড় আমি।।(বাচ্চাদের মতো মুখ করে)
.
উনার কথায় হুহা করে হেসে উঠলাম আমি।উনি কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই হুট করে উঠে দাঁড়িয়েই হাঁটা দিলেন সিঁড়ির দিকে।।আমি উনার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারও হেসে উঠলাম-“এরা সবাই ই পাগল নাকি??”
.
?
.
সন্ধ্যা ৭ টা।।আমি,শুভ্র ভাইয়া আর সাহেল ভাইয়া বসে আছি আমাদের ছাদে।।উনাদের দুজনের গায়েই বেগুনি রঙের পাঞ্জাবী।দুজন ক্রমাগত বাদাম চিবোচ্ছেন আর আমি খুব মনোযোগ দিয়ে উনাদের কথা শুনছি।শুভ্র ভাইয়ার ব্যাপক আফসেস হচ্ছে।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি রীতিমতো আফসোসের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন –
.
দেখলি তো সাহেল??ভাই জাতি এমনই হয়…আমদের এক্সামের পড়া বাদ দিয়ে আমাদের সাথে এনে এখন হাওয়া!!বউ নিয়ে দরজা লাগিয়ে খোলার নামই নেই।।বলি আমাদেরও তো কিছু হক আছে নাকি??এতো তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে আমাদের??
.
এতো ঢং মাইরো না মামা!!আজকে তোমার বিয়ে মেনে নিলে তুমিও আমায় একা ফেলে ওই দরজায় লাগাইতা।
.
ছিহ সাহেল!!তুই আমাকে এমন ভাবিস?দেখ…আমার বউ যে আমার সামনে বসে আছে আমি কি একবারও তাকিয়েছি??সেই কখন থেকে তো তোকেই দেখে যাচ্ছি!!(কাঁধে হাত রেখে)
.
আগলা পিরিত চুরের লক্ষ্মণ। শালা হাত সরা…..
.
এমন করিস কেন দোস্ত….
.
শুভ্র ভাইয়ার কথার মাঝপথেই চিত্রা ছাদে এসে মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো –
.
আমি মেয়ে হিসেবে কেমন??
.
চিত্রার হঠাৎ এমন কথায় আমরা তিনজনই অবাক।।হঠাৎ ও কোথা থেকে টপকালো তাও বুঝতে পারছি না আমি।।ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে কিছু একটা বলতে যাবো ঠিক তখনই শুভ্র আর সাহেল ভাইয়া একসাথেই বলে উঠলেন-
.
গোলাপের মতো….
.
কথাটা বলে দুজন একসাথেই হুহা করে হেসে উঠলেন। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নিজেদের সামলে নিয়ে মুখ চেপে হাসতে লাগলেন।।চিত্রা এবার আমার পাশের চেয়ারটাতে বসে চোখ থেকে চশমা খুলে নিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো-
.
দেখ তো…আমার চোখ কি ট্যারা??
.
চিত্রার কথায় আবারও অবাক হলাম আমি এমন একটা টপিক কোথা থেকে এলো বুঝতে পারছি না।ভ্রু কুচঁকে কিছু একটা বলতে যাবো ঠিক তখনই আবারও দু’জনে একসাথে বলে উঠলেন-
.
না বইন! তোমার চোখ দুটি অতিব স্বচ্ছ!!
.
কথাটা বলে খিলখিল করে হেসে উঠলেন দু’জনে।একদম প্রাণবন্ত হাসি।।চাঁদের আলোই দু’জনকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে,,,এরা যেন কোন স্বর্গীয়দূত!!ওদের হাসিতে রেগেমেগে উঠে দাঁড়ালো চিত্রা।।কান্না কান্না ভাব নিয়ে বলে উঠলো-
.
দেখেছিস রোদ?উনারা কেমন মজা করছে আমায় নিয়ে….থাকবো না আমি,,এক্ষনি চলে যাবো।।
.
কথাটা বলেই চিত্রা হাঁটা দিলো সিড়ি ঘরের দিকে।আমি উঠে দাঁড়িয়ে বার কয়েক চিত্রাকে ডেকেই কোমরে হাত রেখে রাগী চোখে উনাদের দিকে তাকালাম। দুজনেই হাসি চেপে চুপ করে বসলেন।।শুভ্র ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলেন-
.
কি??
.
চিত্রাকে ওভাবে বললেন কেন??
.
কি বললাম??(অবাক হয়ে)সাহেল??আমরা কি খারাপ কিছু বলেছি??
.
নাহ,,একদম না(মাথা নেড়ে)
.
দেখলে তো,, সাহেলও বলছে,,খারাপ কিছু বলি নি।।
.
আমি রাগী চোখে তাকাতেই সাহেল ভাইয়া বলে উঠলেন-
.
বুঝলি শুভ্র?আজকালকার জেনারেশনে ভালোর কোনো খাওয়া নেই।।এইযে সাধু ভাষায় কতো সুন্দর একটা প্রসংশা করলাম… বুঝলো?বুঝলো না…উল্টো দেখ কেমন রেগে রেগে তাকায়…
.
বোথ অফ ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল!!
.
কথাটা বলেই ঘুরে দাঁড়িয়ে হাঁটা দিলাম সিঁড়ির দিকে।।চিত্রাকে আটকাতে তো হবে!!আমি ঘুরে দাঁড়াতেই দু’জন আবারও খিলখিল করে হেসে উঠলেন।। আমি ভ্রু কুঁচকে ফিরে তাকাতেই ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে চুপ হয়ে গেলেন দুজনই।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও হাঁটা দিলাম আমি।।সিঁড়ির দু’ধাপ পেড়োতেই আবারও কানে এলো তাদের প্রাণ খোলা হাসি।।দুটো আলাদা মানুষের মধ্যে এতো মিল কি করে হয় কে জানে??দুজনেই আস্ত শয়তান….একজন একটু চুপচাপ হলেও আরেকজন পুরাই রাক্ষস।। নিজের কষ্টকে এতো সহজে ভুলে গিয়ে কি বন্ধুর সাথে এভাবে গলা মিলিয়ে হাসা যায়??এই বন্ধুত্বটা যেনো অটুট থাকে সারাটা জীবন।।
.
#চলবে?
.
(❤
এই… এই টাকলা,,,আপনি আপনার এই হিরো মহোদয়কে বলে দিন।আমাকে যেনো যেতে দেওয়া হয়…নয়তো ভালো হবে না বলে দিচ্ছি!(আঙ্গুল উচিয়ে)
.
রোদেলার কথায় মুচকি হাসলো শুভ্র।।কোটটা খুলে পাশের সোফায় রেখে…শার্টের উপরের দুটো বাটন খুলে সোফায় বসতে বসতে বলে উঠলো সে-
.
সজিব?মিস রোদেলা কে বলুন ওমন একটা বাজে নিউজ কেন ছাপিয়েছেন উনি??কি চায় উনি?পুপালিরিটি?অর মানি??
.
ইয়েস স্যার!! ম্যাম স্যার বল..
.
শাট আপ…আমি বয়রা না কানে শুনি…(রাগী গলায়) এই যে মিস্টার পি.এ নায়ক সাহেবকে বলুন আমি এসব খবর টবর ছাপাই নি…আর ছাপালেই বা কি??সসত্যই তো ছিলো…
.
হোয়াট??সত্য??সজীব?
.
ইয়েস স্যার!
উনাকে বলুন… কি প্রোভ আছে উনার কাছে??আজাইরা!!
.
হোয়াট আজাইরা??আমার কাছে প্রোফ আছে…আপনি যে আপনার নিউ জিএফের সাথে প্রাইভেট টাইম কাটাচ্ছেন সেটা আমি জানি… আই উইল মেইক আ নিউজ অন ইট…
.
ইটস আ মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং মিস রোদেলা…উই ক্যান মেইক আ ডিল…আই উইল গিভ ইউ মানি ফর দেট…কতো টাকা চায় আপনার??(সানগ্লাস খুলতে খুলতে)
.
শুভ্রর কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো রোদেলা।।চোখ-মুখ গরম করে বলে উঠলো সে-
.
আমাকে ঘোষ দেওয়া হচ্চে??ওহ মাই গড!! এতো বড় সাহস??একজন জার্নালিস্টের মেয়েকে ঘোষ দেওয়া হচ্ছে??লিসেন… আই ডোন্ট ওয়ান্ট ইউর মানি…ডাফার!!
.
এবার উঠে দাঁড়ালো শুভ্র…শার্টটা ঠিক করে পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা তুলে নিয়ে বলে উঠলো-
.
দেন? হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট??ডু ইউ ওয়ান্ট টু ম্যারি মি??
.
হোয়াট??বিয়ে আর আপনাকে??আস্তাগফিরুল্লাহ…এসব নায়ক টায়ক কে বিয়ে করার চেয়ে সুইসাইড করা বেটার।।অলওয়েজ হিরোয়িনদের সাথে জড়াজড়ি…চুম্মাচুম্মি ছিহ..ইয়াককক…
.
কথাটা বলেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো রোদেলা যেনো কেউ করলার জুস খাইয়ে দিয়েছে তাকে।শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো…তাকে নিয়ে কেউ এমন কিছু ভাবে চিন্তারও বাইরে ছিলো তার!!
.
#এক টুকরো মেঘ ও সে❤(খন্ডাংশ)
.
[আমার ফোনটা যে নষ্ট বলেছি আপনাদের তবু আপনাদের হাজারো অভিযোগ।একটা গল্প দিলে অন্যটা কেন দিলাম না??পার্ট ছোটো কেন হলো??এতো দেরি কেন হলো??কতো অভিযোগ।।কিন্তু আমি পার্সোনালি মনে করি আমি অনেক ফাস্ট গল্প দিই…প্রায় প্রতিদিনই গল্প দেওয়া হয়… এটা আপনারা মানুন বা না মানুন আই ডোন্ট কেয়ার।।অনেক রাইটাররা তো ২/৩ দিন পর গল্প দেয় তাদের নিয়ে তো আপনাদের কোনো অবজেকশন নেই,,,তাহলে আমার বেলা কেন??])

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ