Sunday, October 5, 2025







তোকে চাই❤(সিজন -২)part: 36+37+38

তোকে চাই❤(সিজন -২)part: 36+37+38
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
.
?
.
শুভ্র ভাইয়ার মেজাজ ভীষন রকম গরম।।উনি একবার চেয়ারে বসছেন তো একবার হাঁটাহাঁটি করছেন…কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছেন না ।।সাহেল ভাইয়া ক্রমাগত হেসে চলেছেন…. আমি আর চিত্রা মুখ গোমরা করে দাঁড়িয়ে আছি।।আজকের প্ল্যান ছিলো সবাই মিলে ঘুরতে যাবো আর অভ্র ভাইয়া দিবেন ট্রিট।। আমরা সবাই তো মহা খুশি…চিত্রাও রেডি হয়ে চলে এসেছে ঝটপট কিন্তু লাস্ট মোমেন্টে কি হলো??অভ্র ভাইয়া আপুকে নিয়ে হাওয়া!! শুভ্র ভাইয়ার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না যে,,তার মায়ের পেটের ভাই তাকে এভাবে ধোঁকা দিলো??তার মাসুম ভাইটা মিরজাফর হয়ে গেলো আর উনি টেরই পেলেন না.???আফসোস!!বহুত আফসোস!!
.
সাহেল তুই হাসছিস?ভাই আমাদের এভাবে ধোঁকা দিয়ে দিলো আর তুই হাসছিস??
.
সাহেল ভাইয়া চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন-
.
তো কি করবো বল?তুই ভাবতে পারছিস?আমরা ভাইয়ের এমন অবস্থা করেছি যে তাকে রোমাঞ্চ করার জন্য বউ নিয়ে পালাতে হয়েছে…ভাবা যায়??তুই যে রাতে..
.
সাহেল ভাইয়ার কথার মধ্যেই ফট করে বলে উঠলো চিত্রা-
.
কি করেছেন আপনারা?(এক্সাইটেড হয়ে)
.
চিত্রার কথায় সাহেল ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালেন…বাঁকা হেসে বলে উঠলেন-
.
বাহ,,তোমার তো দেখি খুব ইন্টারেস্ট!!এতো ইন্টারেস্ট ভালো না বাচ্চারা…..তোমাদের ইন্টারেস্ট থাকবে রান্না ঘরে…যাও যাও আমাদের জন্য চা নিয়ে আসো..
.
আমরা কেন চা আনবো??নিজেরে নিয়ে খান যান…
.
ওহ মাই গড…শুভ্র দেখ দেখ…তোর শশুড়বাড়ি তোর কোনো ইজ্জত নাই।এক কাপ চায়ের জন্য এতো খোটা??এতো??
.
সাহেল ভাইয়ার কথায় হাসলেন শুভ্র।আমিও মুচকি হাসলাম এদিকে চিত্রা রেগে ফায়ার-
.
এই এই?আপনাকে বেইজ্জত করার মতো কি কথা বললাম শুনি??আ…
.
চিত্রাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়েই বলে উঠলাম আমি-
.
আমরা চা আনছি ভাইয়া। আপনারা গল্প করুন।
.
আমার কথা শেষ হতেই মুখ ফুলালো চিত্রা…যার অর্থ সে যাবে না।আমি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েই বলে উঠলাম-
.
তাহলে কি তুই উনাদের সাথে থাকতে চাস??তুই..
.
আমার কথা শেষ না হতেই ধুপধাপ করে নিচে নেমে গেলো সে।।শুভ্র আর সাহেল ভাইয়া হেসে ওঠে একসাথেই বলে উঠলেন- “চা নয় কফি প্লিজ” আমি হালকা হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়েই নিচে নেমে এলাম। কিচেনে এসেই আমি অবাক…আমাদের চিতা বাঘ কফি বানাচ্ছে আর গুন গুন করে গান গাইছে…”প্রেমে পড়েছে মন..প্রেমে পড়ছে/অচেনা এক মানুষ আমায় পাগল করেছে।” ওর এমন নেচে নেচে গান গাওয়া দেখেই আমার ভেতরেও কৌতূহলগুলো নেচে উঠলো…মাইয়া এতো প্রেম পায় কই??আমি আস্তে করে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে কফি কাপ রেডি করতে করতে বললাম-” তো?কার প্রেমে পড়লি?কে সে অচেনা মানুষ যে বনের চিতা বাঘকেও পাগল করে ফেললো??” চিত্রা মনের আনন্দে অন্যমনস্ক হয়ে “ওই তো ম..” এইটুকু বলেই থেমে গেলো।।আমাকে দেখে অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বলে উঠলো সে-
.
এমা…রোদ??আমি তো চায়ের জায়গায় কফি বানিয়ে ফেলেছি রে..এবার কি হবে?(অসহায় চোখে)
.
এতো প্রেম প্রেম পেলে তো তাই করবে সোনা!বাট এতো প্রেম প্রেম পায় কার উপর সেটা তো বল…(ভ্রু নাচিঁয়ে)
.
চিত্রা কিছু একটা বলতে যাবে তখনই ভাইয়া এসে হাজির।।আমার মাথায় টোকা দিয়ে বলে উঠলো -“বুড়ি!!” আমি রেগে তাকাতেই দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠলো ভাইয়া…চিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো-
.
কফি বানাচ্ছো চিত্রা?
.
জি ভাইয়া!!
.
আমার জন্যও এক কাপ প্লিজ…হবে তো?(মুচকি হেসে)
.
চিত্রা ঝটপট জবাব দিলো-” একদম” ভাইয়া আবারও আমার মাথায় একটা চাটি মেরে মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো।।চিত্রা এখনো অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে…এই মেয়ের আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি…সামথিং ইজ ফিসি হেয়ার।।কার প্রেমে পড়লো সে??আমি কি তাকে চিনি??চিত্রার হাতে ভাইয়ার কফি কাপটা ধরিয়ে দিয়ে আমি হাঁটা দিলাম ছাঁদের দিকে…. মনে মনে চিত্রার কথায় ভাবছি…সত্যি প্রেমে পড়লো বুঝি??ছাদের দরজার কাছে এসে শুভ্র ভাইয়ার মুখে চিত্রার নাম শুনেই থমকে দাঁড়ালাম।।সাহেল ভাইয়া আর শুভ্র ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।।শুভ্র ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন-
.
চিত্রাকে বিয়ে করে নে সাহেল।রোদের ধারণা ব্যাপারটা দারুন জমবে।
.
শুভ্র ভাইয়ার কথায় বিষম খেলেন সাহেল ভাই।। কাশতে কাশতে বললেন-
.
চিত্রা!লাইক সিরিয়াসলি?
.
শুভ্র ভাইয়া মুহূর্তেই হুহা করে হেসে উঠলেন।। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠলেন-
.
তো?সমস্যা কি?আরে চিত্রা নাকি ভার্সিটির বেস্ট সুন্দরীদের মধ্যে একজন…তোর তো ফাঁটা কপাল হবে রে…সুন্দরী বউ!!(চোখ টিপে)
.
তাই বুঝি?তো এক কাজ কর না…তুই-ই বিয়ে করে ফেল ওকে…সুন্দরী বউ হবে…(দাঁতে দাঁত চেপে)
.
নাউজুবিল্লাহ!!কি সব বলিস দোস্ত….রোদময় জীবন আমার…এ জীবনে অন্য কাউকে নিয়ে ভাবা মানেই মরণ…ওকে ছাড়া অন্য কিছু চোখেই পড়ে না আমার।।বাট তোর ব্যাপার তো আলাদা…
.
হুহ…তাই বলে আমার গলায় ঝুলাবি?এতো সুন্দরী মেয়ে আমার লাগবে না….আমার তো মায়াপরী চাই…(অন্যমনস্ক হয়ে)
.
শুভ্র ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকিয়েই হঠাৎ বলে উঠলেন-
.
রোদকে ভালোবাসিস সাহেল??
.
শুভ্র ভাইয়ার করা এমন প্রশ্নে সাহেল ভাইয়া যেনো চমকে উঠলেন…সাথে আমিও।।আমার হাত কাঁপছে…সাহেল ভাইয়া কি বলবেন এবার?উনাদের মধ্যে আমার জন্য প্রবলেম ক্রিয়েট হবে না তো??মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ছি আর সাহেল ভাইয়ার জবাবের অপেক্ষা করছি।সাহেল ভাইয়া একবার শুভ্রর দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আকাশের নীলে দৃষ্ট নিবদ্ধ করে চুপ করে রইলেন।।শুভ্র ভাইয়া আবারও প্রশ্ন করলেন-
.
ভালোবাসিস তাই না?নিশ্চুপ কেন তুই?কিছু তো বল সাহেল!!
.
সাহেল ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকালেন…..একটা মুচকি হাসি দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে উঠলেন-
.
আমি নিশ্চুপ কোথায়?নিশ্চুপতা মানে কি শুধুই চুপ থাকা শুভ্র??নিশ্চুপতা মানে অসংখ্য অভিযোগ যা আমি মুখে বলতে চাই না।নিশ্চুপতা মানে একবুক কষ্ট যা আমি তোকে দেখাতে চাই না।নিশ্চুপতা মানে অসংখ্য ভুলের ছড়াছড়ি যা আমি ধরিয়ে দিতে চাই না।আমি নিশ্চুপ নই শুভ্র….এই নিশ্চুপতার পেছনে আমার অনেক কথা… অনেক!!
.
সাহেল ভাইয়ার কথায় চোখ ফিরিয়ে নিলেন শুভ্র।হঠাৎই ধুম করে বসে পড়লেন নিচে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলেন-
.
কষ্ট হয় না তোর?কিভাবে পারিস সাহেল?আমি হলে তো মরে যেতাম রে!!
.
শুভ্র ভাইয়ার কথায় মুচকি হাসলেন উনি।শুভ্র ভাইয়ার পাশে রেলিং এ ঠেস দিয়ে বসে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন-
.
এইজন্যই সে এখন তোর…আর কষ্ট?সে তো কাউকেই ছাড় দেয় না শুভ্র….এই বাম পাশটায় এতো ব্যাথা করে যেন কেউ ক্রমাগত ছুড়ি চালিয়ে চলেছে…মাঝে মাঝে মনে হয় মরে যাই কষ্ট কমে যাবে…কিন্তু আমি তো তোর মতো সাহসী না রে একদম ভীতু তাই ওসব পারি না….আমি জানি তুই পারতি…এতোদিনে শেষ হয়ে যেতি….তাই ও তোর…শুধুই তোর!!
.
কথাটা বলতেই দু’ফোটা মোটা মোটা জলের বিন্দু পড়লো তার গালে।শুভ্র ভাইয়া মাথা নিচু করে চুপ করে আছেন…সাহেল ভাইয়া পানিটুকু বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে সাবধানে মুছে নিয়ে সহাস্যে বললেন-
.
তোকে আর সানসাইশনকে খুব মানিয়েছে রে।।সানশাইন যখন তোর আশেপাশে থাকে ওর মধ্যে অন্যরকম একটা খুশির ঝিলিক থাকে….ও ভালো থাকে।।এটাই তো বড় পাওনা রে।আমি কষ্টে নেই বরং ভালো আছি।তোর সাথে আমার পছন্দের মিল থাকলেও স্বভাব কিন্তু মেলে না…সানশাইন আমার হলে তুই কখনো অন্যকাউকে নিজের সাথে জড়াতে পারতি না…কিন্তু আমি পারবো।।আর যাকে জড়াবো তাকে সর্বোচ্চ ভালোবাসবো দেখে নিস…তাই সেদিক থেকে সানশাইন তোর হয়েই ভালো হয়েছে তিনটা জীবন বেঁচে গেছে।।
.
কথাটা বলেই মুচকি হাসলেন উনি।।শুভ্র ভাইয়া হুট করেই জড়িয়ে ধরলেন উনাকে…সাথে সাথে সাহেল ভাইয়াও আগলে নিলেন তাকে।।শুভ্র ভাইয়া টলমলে চোখে বলে উঠলেন-
.
এই প্রথম হেরে গেলাম তোর কাছে….খুব বাজে ভাবে হেরে গেলাম রে!!
.
সাহেল ভাইয়া হাসলেন…শুভ্র ভাইয়ার পেটে গুঁতো দিয়ে বলে উঠলেন-
.
“বলেছিলাম তোকে একদিন জিতটা আমারই হবে। দেখ..বন্ধুত্বের যুদ্ধে তোকে হারিয়ে দিয়েছি আমি…আহ্ কি আরাম!!ছোট থেকে জ্বালাচ্ছিস শালা…”
.
কথাটা বলেই হেসে উঠলেন দু’জনে।সাহেল ভাইয়া হাসতে হাসতেই বললেন- “তোর ভাবি দেখিস তোর বউয়ের মতোই হবে…একদম কার্বন কপি আনবো…আমাদের দু’জনের মতো অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে তারা…দেখে নিস!!”
.
আমি সাথেসাথেই মনে মনে বলে উঠলাম -“আমিন” বন্ধুত্ব এতোটা সুন্দর হতে পারে জানা ছিলো না।।ইতিহাস,উপন্যাস বা মহাগ্রন্থ সব জায়গায় মেয়েরা দোষী তাদের জন্যই পাপের শুরু…কিন্তু যেখানে এমন মনের মানুষ আছে…এমন বন্ধুত্ব আছে সেখানে কি নারীরা দোষী হবে?চাইলেও হয়তো পারবে না…..কখনোই না!!!আমি আর দাঁড়ালাম না….কফির ট্রে টা হাতে নিয়েই নিচে নেমে এলাম।।চিত্রাকে সামনে পেয়ে ওর হাতে ট্রে টা দিয়েই রুমে ঢুকে দরজা দিলাম।।কেন জানি খুব ক্লান্ত লাগছে নিজেকে….একটু জিরিয়ে নিই এবার…
.
?
.
রাত প্রায় তিনটা।হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ!এতে রাতে কে হতে পারে ভাবতে ভাবতে দরজা খুলেই আমি অবাক…শুভ্র!! আমাকে ঠেলে সরিয়ে ভেতরে ঢুকেই তাড়াহুড়ো করে দরজা বন্ধ করলেন উনি।।আমি কিছুক্ষন বিস্ময়মাখা চোখে তাকিয়ে থেকে….নিজেকে কোনো রকম সামলে নিয়ে ফিসফিস করে বললাম-
.
আপনি??
.
উনি আমার থেকেও দ্বিগুণ ফিসফিসিয়ে বললেন-
.
হুম ঘুমোবো…
.
তো ঘুমান…এখানে কেন?
.
তোমার সাথে ঘুমাবো…(আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই)আই মিন এ ঘরে ঘুমাবো…ও ঘরে অনেক মশা!!!(হাত বাড়িয়ে দিয়ে) দেখো তোমার বরের রক্ত অর্ধেক খেয়ে ফেলছে…মায়া লাগে না?(মুখ ফুলিয়ে)
.
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই পেছন থেকে ঘুমু ঘুমু গলায় বলে উঠলো চিত্রা-
.
একটা পাপ্পি দিয়ে দে রোদু…ভাইয়ার রক্ত যা গিয়েছে তার দ্বিগুণ চলে আসবে,, তাই না ভাইয়া??
.
চিত্রার কন্ঠে চমকে উঠলেন শুভ্র ভাইয়া।।বিস্ফারিত চোখে বললেন-
.
ও এখানে কি করছে??
.
আমি স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম-“ঘুমোচ্ছে!!”
.
ওর ঘুমানোর জন্য কি পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো জায়গা নেই??সোজা আমার বউয়ের বিছানায়??(অসহায় মুখে)
.
আপনি যাবেন??(রাগী গলায়)
.
না গিয়ে উপায় কি?আচ্ছা?ওকে সাহেলের রুমে পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়??(আমি রেগে তাকাতেই) আব আব তাহলে তোমার ভাইয়ার রুমে??
.
এবার আমি কোমরে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম…ভেতরটা হাসিতে ফেটে যাচ্ছিলো আমার…তবু নিজেকে শক্ত রেখে রাগী চোখে তাকাতেই আবারও বলে উঠলেন উনি-
.
তাহলে ফুপা-ফুপ্পির রুমে??
.
আপনি যাবেনননন???
.
ওকে বাবা যাচ্ছি তো…ওমন করো কেন??ভালোবাসা তো নাই-ই। একটু মায়া দয়াও তো দেখাতে পারো নাকি??(করুণ কন্ঠে)
.
উনি পেঁচার মতো মুখ করে রুম থেকে বেরুতে বেরুতে চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
.
শালিসাহেবা??আমারও সময় আসবে…তোমার বাসর ঘরে আমাদের বাচ্চাদেরকে শুইয়ে দিয়ে আসবো হুহ…
.
উনি আবারও আমার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেলেন।।উনি বেরিয়ে যেতেই দরজাটা আটকিয়েই দুজনে হাসিতে ফেটে পড়লাম।।শুধু হাসি নয় একে বলে বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়া টাইপ হাসি!!
.
#চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:37
.
?
.
ভার্সিটির মাঠের মাঝ বরাবর হাঁটছি সাথে আছে চিত্রা।কিন্তু বেচারীর মন আসলেই আমার সাথে আছে কিনা তাতে বেশ সন্দেহ হচ্ছে আমার।সে চারদিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে কাউকে খু্ঁজছে।আমি কিছু জিগ্যেস করতেই অমায়িক হাসি দিয়ে মাথা নিচু করছে।।আমার চোখও যে চারপাশে কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে না, তা কিন্তু নয়।আমিও খুঁজচ্ছি, শুভ্রকে!!জানি পাবো না তবু খুঁজছি….যদি পেয়ে যাই….. একটা বার যদি উনার নেশাভরা চোখের দেখা মেলে!!কিন্তু বারবারই হতাশ হতে হচ্ছে আমায়….এইযে আমি এখানে জ্বলে মরছি,,উনাকে একবার দেখার জন্য পাগল হচ্ছি..উনার কি সেদিকে খেয়াল আছে?সে নিশ্চয় বইয়ের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে এখন….এতো বইয়ের মেলায় রোদ নামক বউয়ের কথা তার কি মনে আছে??নিশ্চয় নেই!!একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে তাকাতেই দেখি কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের শিশির স্যার।আমাদের ভার্সিটির সবচেয়ে ইয়াং স্যার বলা যেতে পারে উনাকে…দেখতে একদমই বাচ্চা বাচ্চা লাগে। গায়ে সাদা শার্ট,কালো প্যান্ট হাতে কালো ডায়ালের ঘড়ি আর কালো ব্যাগ।চোখে কালো ফ্রেমের চশমা…বেশ গোছালো!!আমরা কাছাকাছি যেতেই হাসিমুখে বললেন-
.
গুড মর্নিং গার্লস.
.
উনার কথায় আমি আর চিত্রা দুজনেই থতমত খেয়ে গেলাম।উনি খুবই স্বল্পবাসী ব্যক্তি,,উনার সাথে আমাদের কোনো দিন সামনাসামনি দেখা হয় নি বললেই চলে।।ভার্সিটির এতো এতো মেয়ের মধ্যে আমাদের মতো অপরিচিত মেয়েকেই কেন যে গুড মর্নিং জানাতে হলো উনার কে জানে??চিত্রা তো রীতিমতো কাঁপছে..আমার হাত খামচে ধরে আছে সে।।আমি ভ্রু কুঁচকে চিত্রার দিকে তাকালাম….ওর এই বাড়াবাড়ি ধরনের নার্ভাসনেসের কারণটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না আমি।।তারপর স্যারের দিকে ফিরে হাসিমুখে থেমে থেমে বললাম-
.
গুড মর্নিং স্যার!!ভালো আছেন?
.
ইয়াহ…আই এম গুড! তো তোমরা কেমন আছো?
.
জি স্যার ভালো।
.
গুড…তোমার নামটা যেনো কি?নৌশিন আহমেদ রোদেলা রাইট?ব্রেভ গার্ল…ভার্সিটির প্রথম দিনই সিনিয়রের গালে চড়!!আই লাইক ইট…
.
স্যারের কথায় বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম আমি।উনি আসলেই আমার প্রশংসা করছেন নাকি খোঁচা দিচ্ছেন বুঝতে পারছি না।।আমি কয়েকটা ঢোক গিলে বললাম-
.
এক্চুয়েলি স্যার!দেট ওয়াজ আ মিসটেক …আসলে..
.
কুল মিস. আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড (মুচকি হেসে)বাট ইউ আর লাকি বিকজ দেট পার্সোন ওয়াজ শুভ্র!!এনিওয়ে বাসার সবাই কেমন আছে??
.
এবার বেশ বিরক্ত লাগছে আমার।আমার বাসার খবর জেনে উনার কি লাভ শুনি?বাসায় কি ত্রান পাঠাবেন নাকি??তাহলে বলুক না একটা লিস্ট করে গলায় ঝুলিয়ে দিই উনার।।এদিকে চিত্রা খামচাতে খামচাতে হাতের অবস্থা বেকাহিল করে তুলেছে আমার….অলরেডি জ্বালা পুড়া শুরু করে দিয়েছে উফফ…..তবু মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললাম-
.
জি স্যার ভালো।।
.
স্যারও মুচকে হেসে বিদায় নিলেন।উনার মুখের প্রশান্তি দেখে মনে হচ্ছে আমার বাসার মানুষ ভালো আছে শুনে তার সকালটা আজ ধন্য হয়ে গেলো।।স্যার যেতেই এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়েই রাগী চোখে তাকালাম।।চিত্রা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…..আমি তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে রাগী গলায় বলে উঠলাম –
.
খবরদার কাছে ঘেষবি না।তিনহাত দূরে গিয়ে দাঁড়া…অসভ্য মেয়ে! হাতের কি অবস্থা করেছিস দেখ।।তোর জামাইয়ের সম্পত্তি নাকি আমার হাত???ইশশ রীতিমতো জ্বলছে…
.
সরি রে দোস্ত।স্যারকে দেখে আমি একটু বেশিই নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম তাই…
.
স্যার কতো কিউট একটা ছেলে।তাকে দেখে এতো নার্ভাস হওয়ার কি আছে বুঝলাম না।।তোর ভাব দেখে মনে হচ্ছে উনি তোকে পিটাতে আসছে…(ভ্রু কুচঁকে)
.
চিত্রা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই পেছনে কারো ফিসফিসানোতে দু’জনেই ঘাড় বেকিয়ে তাকালাম।।আমাদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রাতুল ভাইয়া ফোনে ফিসফিস করে কথা বলে চলেছেন।।আমরা ভ্রু কুঁচকে কান খাড়া করতেই কানে এলো…
.
দুলাভাই?থুক্কু ভাই? ভাবি শিশির স্যারকে কিউট বলছে এক মিনিট আগে।।না না ভাই ওই বুইড়া শিশির স্যার না…ওইযে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের মুহিব চৌধুরী শিশির আছে না??ওইটা!!
.
উনার কথা শুনে বুঝতে আর বাকি রইলো না যে উনি ঠিক কার সাথে কথা বলছেন।।ওপাশে কি বলা হলো জানি না।তবে রাতুল ভাইয়া উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন –
.
ভাই?আমার কিন্তু ব্যাপারটা কেমন জানি লাগছে….এই স্যার…
.
এইটুকু বলার সাথে সাথেই আমি আর চিত্রা উনার সামনে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ালাম।উনি আমাদের দেখে যেনো চমকে গেলেন…..একটা ঢোক গিলে জোড়পূর্বক হাসি দিলেন।।আমি আর চিত্রা একসাথে ভ্রু নাঁচাতেই বলে উঠলেন উনি-
.
স্যার তো অনেক ভালো মানুষ ভাই।।উনার মতো ভালোমানুষ এই দুনিয়াতে নাই।উনি তো ভাবির দিকে মা মা থুক্কু বোন বোন নজরে তাকায় ভাই।। হে হে আপনি একদম চিন্তা কইরেন না ভাই…..সব সেট!! রাখি তাহলে ভাই?
.
আমি আর চিত্রা হাত ভাঁজ করে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।রাতুল ভাই ডানহাতের উল্টোপাশ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বেক্কলের মতো হাসি দিয়ে বলে উঠলেন –
.
দুলাভাই থুক্কু ভাবি ভালো আছেন??
.
কাহিনী কি? আপনি আমাদের ফলো করছেন??(রাগী গলায়)
.
নাহ নাহ আস্তাগফিরুল্লাহ!!! (আমি রেগে তাকাতেই) আসলে জি ভাবি!
.
উনার কথায় চিত্রা হিসহিসিয়ে বলে উঠলো-
.
কেনো?আপনি কি দুদকের লোক?যে গোয়েন্দাগিরি করছেন!!কি সাংঘাতিক ব্যাপার রোদ….উনি আমাদের ইনফরমেশন লিক করছেন… আমার ব্যাগে যে এক ডজন চকলেট আছে তাও নিশ্চয় লিক করে দিয়েছেন উনি!!ওহ মাই গড…আজ সকালেই ছোট বোনের ড্রয়ার থেকে সরিয়ে ছিলাম ওগুলো।।এখন আমার কি হবে??উনাকে এক্ষনি পুলিশে দেওয়া উচিত রোদু….হুহ
.
চিত্রার কথায় রাতুল ভাই অসহায় মুখে বললেন….
.
ভাবি?আমি কোনো ইনফরমেশন লিক করি নাই।ভাই আমাকে বলছে আমি যেনো ভার্সিটি থাকাকালীন আপনার পেছনে ছায়ার মতো লেগে থাকি আর একঘন্টা পর পর আপনি কি কি করলেন,, কার সাথে কথা বললেন সব রিপোর্ট করি,,নয়তো মাইর!! কঠিন মাইর।।একদম হার গুঁড়ো করা টাইপ মাইর ভাবি।।আমি তো শুধু মার থেকে বাঁচার জন্য ফলো করছিলাম,(আমি ভ্রু কুঁচকাতেই) কসম ভাবি!!.
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম শুভ্রকে এই মুহূর্তে জাস্ট খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার।একে তো নিজে বইয়ের রাজ্যে ডুবে আছেন,,তার উপর আমার কাছে পাঠিয়েছে এক জলদস্যু,, ভাবা যায়??
.
?
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে মাত্রই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো।।বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এলো আমার,,,এই ফোন অলওয়েজ রং টাইমেই বাজে কেন?হুয়াই?ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই দেখি আননোন নাম্বার…মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম…এই ব্যাটাকে ইচ্ছে মতো ঝারবো আজ…আমার ইচ্ছেয় এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে ওপাশ থেকে অস্থির গলায় বলে উঠলো কেউ-
.
রোদপাখি?জাস্ট পাঁচমিনিট!! আমি তোমার সাথে জাস্ট পাঁচ মিনিট কথা বলবো…..একদমই টাইম নেই বুঝলে?এতো পড়া…উফফ!! আবার তোমার কন্ঠটা না শুনেও থাকতে পারছিলাম না….একদম নিঃশ্বাস আটকে আসছিলো আমার….এতো জ্বালাও কেন আমায় বলো তো??কলিজা টা ভাজা ভাজা করে দিলে আমার….
.
#চলবে….
.
(অনেকেই প্রশ্ন করে আপু তুমি রিয়েল লাইফে কেমন?গল্পের রোদের মতো?? তাদের জন্য আমার লাস্ট দুই দিনের ঘটনা বলি…..
প্রায় একসপ্তাহ থেকে ফোন নষ্ট আমার।কিন্তু নতুন ফোন কেনার কিড়া উঠলো দু’দিন আগে।যখন থেকে মাথায় এলো মোবাইল কিনতে হবে….তখন থেকে কান্না শুরু…এমনি এমনি কান্না নয় বই,খাতা, বালিশ ছুঁড়াছুঁড়ি করে কান্না।।বাবা-মা অস্থির এখন ফোন কোথায় পাওয়া যায়??শেষমেষ আমার ফোনের চিরশত্রু আমার মা মাস্ক,গ্লাবস পড়ে গেলেন মার্কেট….পুরো তিনঘন্টা পুরো মার্কেট খুঁজেও কোনো ফোনের দোকান খোলা না পেয়ে বাসায় ফিরলেন।।এদিকে আমার কান্নার স্প্রিড দ্বিগুণ হলো…..ব্রেন বুঝতেছে ফাও কান্না কানতেছি বাট মন তো বুঝে না।।অবশেষে ভাইয়া এসে বললো,, “বোন তুই আমার ফোন নিয়ে নে,,,লক ডাউন পর্যন্ত আমার ফোন তোর।।আমি ল্যাপট্যাপ দিয়ে চালিয়ে দিবো তবু কান্না থামা!!” আমি ফোন হাতে নিলাম…..কিন্তু দু’মিনিট পর আবার চিৎকার….তার কারণ হলো ভাইয়ার ফোন আমার ভালো লাগছে না,,,ওর ফোন কেমন পর পর লাগে…এটা দিয়ে চলবে না আমার নিজের ফোন চাই,,এবং এক্ষনি চাই।।আপু বললো আমার ফোন রাখ,,নয়তো ল্যাবট্যাবে লিখালিখি কর।।কিন্তু নাহ্ আমার থামার নাম গন্ধ নেই।একপর্যায়ে আমরা শেরপুর জেলায় এলাম,, আব্বু এক পরিচিত দোকানের মালিককে ফোন দিয়ে দোকান হালকা খুলে একটা ফোন এনে দিলেন।কিন্তু কথায় আছে না?মারে আল্লাহ রাখে কে??আমার সাথেও তাই হলো…..নতুন ফোনটাও নাটকীয় ভাবে ভাঙলো…ডিসপ্লের অবস্থা খুবই খারাপ।।বাবার কাছে ফোনের দোকানের নাম্বার থাকলেও মেকারের নাম্বার তো আর নাই,,কি বিপদ!! এইদিকে শেরপুরে দু’জন করোনা রুগি ধরা পড়ায় পুরো মহল্লা লকডাউন…আর্মিও স্ট্রিক্ট এক্যাশন নিচ্ছেন নাকি।।সব শেষে ভাইয়ার ফোনটায় লক ডাউন পর্যন্ত আমার হলো….আর ভাঙা ফোনদুটোর জায়গা হলো ড্রয়ারে।।এই দু’দিনের কার্যকলাপে এখন আমি নিজেই লজ্জিত।। আসলে কি? আমি একেক সময় একেক রকম।কখনো খুবই ম্যাচিয়ুর বিহেভ করি কখনো বা বাচ্চাদের মতো।তাই আমি নিজেও জানি না আমি ঠিক কেমন।।আমি একেক জনের কাছেও একেক রকম,,,আমার অনেক কাজিনদের ধারনা আমি খুবই ম্যাচিয়ুর একটা মেয়ে…আবার অনেকের ধারনা আমি একদমই বাচ্চাদের মতো।।এখন আপনারা যে দিকটা গ্রহন করুন লেখিকাকে নিয়ে আপনাদের লেকিকা ঠিক তেমনই ….ভালো থাকবেন,,ভালোবাসা রইলো…স্টে সেইভ!!)

#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:38
.
?
.
আপনাকে জ্বালাচ্ছি আর আমি??ইম্পসিবল… সারাদিনে একবারও আপনার সাথে দেখা হয় নি আমার….তাহলে জ্বালালাম কিভাবে শুনি??
.
আমার কথায় হয়তো হাসলেন উনি…কিছুক্ষণ পর বলে উঠলেন –
.
তুমি তো প্রাণনাশীনি….দূর থেকেও খুন করে দিতে পারো আমায়….তারমধ্যে বসে আছো আমার বুকের এই মধ্যে খানটায়…আর ক্রমাগত আঘাত করে চলেছো।এই মেয়ে সত্যি বলো তো?মায়া দয়া নেই বুঝি তোমার??
.
উনার কথায় থতমত খেয়ে গেলাম আমি…কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না একদম। আচ্ছা আমি কি লজ্জা পাচ্ছি??এমা!!আমি তো সত্যিই লজ্জা পাচ্ছি…ইশশ।নিজের লজ্জাকে ধামাচাপা দিয়ে মিনমিন করে বলে উঠলাম –
.
আমার যথেষ্ট দয়া মায়া আছে।।আপনি জানেন? আমি সবাইকে কতো হেল্প করি…ভিক্ষুককে ভিক্ষাও দেই…যারা মিথ্যে বলে ভিক্ষা চায় তাদেরও দিই….তাহলে আমি নির্দয় কি করে হলাম বলুন?
.
সবার প্রতি এতো দয়া?শুধু আমার প্রতিই তুমি এতো নির্দয়??কেন বউ কেন?
.
উনার মুখে “বউ” ওয়ার্ডটা শুনেই কেঁপে উঠলাম আমি।।কথাগুলো আটকে গেলো গলায়…তবু কাঁপা গলায় বললাম-
.
কি চায় আপনার??কি করলে নির্দয় থেকে সহৃদয়বান হবো আমি?
.
তোমাকে চাই।। এই তুমি টাকেই দিয়ে দাও আমায়…দিবে??
.
উনার কথায় আবারও থম মেরে গেলাম আমি….উফফ..এই লোকটা অলওয়েজ এমন সব কথা বলে কেন শুনি??আমাকে লজ্জায় ফেলার কতো প্রচেষ্টা তার…কিছুক্ষণ চুপ থেকে “আপনার পাঁচমিনিট হয়ে গেছে” কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলাম আমি।।ফোনটা কেটে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েই চোখদুটো বুজে নিলাম। ।চোখ বুঝতেই ঘুমেরা যেনো পালালো আর মাথায় চাপলো উনার বলা কথাগুলো…”উফফ কি লজ্জা!!” কথাটা বলেই কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে নিলাম আমি।।আজ যে আর ঘুম হবে না তা বেশ বুঝা হয়ে গেছে আমার….
.
?
.
সাহেল ভাইয়া দেশ ছেড়েছে আজ একসপ্তাহ হতে চললো।।।শুভ্রও খুব বিজি থাকে এখন…দিনে ভার্সিটিতে ক্লাস নেয় আর সন্ধ্যা থেকে অফিস।।ভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে যোগ দেওয়ার কোনো ইচ্ছেয় ছিলো না তার কিন্তু ভার্সিটি স্যারদের রিকুয়েষ্টে একরকম বাধ্যই হয়েছেন উনি।।এখন উনার পাত্তা পাওয়ায় দায় হয়েছে আমার….এখন ভার্সিটিতে স্টুডেন্ট নয় টিচার হিসেবে যান উনি… শুধু শুধু যান না….একদম সেজেগুজে সং সেজে যান….উনাকে ফর্মাল গেটাপে দেখে আমার সামনেই হাজারো মেয়েরা হা-হুতাশ করে মরে…..ইচ্ছে তো করে একেকটাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি।।এজন্যই বলেছিলাম এতো হ্যান্ডসাম পোলা বিয়ে করবো না…কিন্তু ওইযে?কপাল!!আগের মতো এখন আর সুযোগ পেলে আমার কাছে আসার সুযোগ নেই তার….. টিচার মানুষ… এখন কি আর রোমিও গিরি করলে চলে??আমি যে উনার লাইফে এক্সিট করি তাই হয়তো ভুলে গেছেন উনি।।মাঝে মাঝে কান্না পায় খুব…আমাদের সম্পর্কটা ঠিক কেমন সম্পর্ক তাই বুঝে উঠতে পারি না আমি।।সত্যিই কি স্বামী স্ত্রী আমরা??হাজারো অভিমান নিয়ে আজ তিন ধরে আমিও বন্ধ করেছি ফোন..বন্ধ করেছি ভার্সিটি যাওয়া,,,,,রাত প্রায় ১১ঃ৩০ বাজে। বেঘোরে ঘুমোচ্ছিলাম আমি…শরীরে কারো নিঃশ্বাস পড়ায় হঠাৎ ই ঘুমটা ছুটে গেলো আমার….চমকে গিয়ে চোখ মেলতেই দেখি শুভ্র!!চোখদুটো লাল হয়ে আছে তার…চোখে যেনো হাজারো তৃষ্ণা আর নেশার ছড়াছড়ি!!এতো রাতে উনাকে আমার বিছানার উপর দেখে হালকা চেঁচিয়েই বলে উঠলাম আমি-
.
আপনি??
.
আমার চেঁচানোতে যেনো বেশ বিরক্ত হলেন উনি।আমার উপর থেকে সরে গিয়ে কপাল কুঁচকে বললেন-
.
আহ্ রোদ…অযথা চেঁচাচ্ছ কেন?আমি চুরি করে ঢুকি নি তোমার রুমে….সবার সামনে দিয়েই ঢুকেছি…দেখি সরো তো শুতে দাও আমায়।।তিনদিন যাবৎ ঘুমাই না….একটু ঘুম পাড়াও তো আমায়….
.
এবার আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম উনার দিকে,,, ফর্মাল গেটাপেই আছেন উনি….অফিস থেকে এলেন বুঝি??জুতোটাও তো খুলেন নি দেখি…ব্লু শার্ট আর ইয়েলো জিন্সে একদম চকলেট বয় লাগছে উনাকে…কিন্তু মুখটা কেমন যেনো শুকনো ফ্যাকাশে হয়ে আছে তার….আমি নরম গলায় বললাম-
.
এভাবেই ঘুমাবেন?ড্রেস চেঞ্জ করবেন না?খেয়েছেন এসে?
.
এবার উনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকালেন –
.
ও মাই গড…আমার খাওয়া নিয়েও তাহলে চিন্তা হয় তোমার??আমি তো ভেবেছিলাম,, আমি মরে গেলেও তেমন একটা যায় আসবে না তোমার…
.
এভাবে কথা বলছেন কেন?কি…
.
আমি এটুকু বলতেই আবারও আমার উপরে এসে পড়লেন উনি….বিছানায় চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন –
.
বুঝো না তুমি কেন বলি??সত্যি বুঝো না??তুমি তো বাচ্চা নও রোদ…যথেষ্ট এডাল্ট।।তবু কেন এমন করো??তিন তিনটা দিন ধরে তোমার মুখ দেখা তো দূর কন্ঠটাও শুনতে দাও নি আমায়…কেন বলো তো?কি করেছি আমি?সারাদিন এতো কাজের চাপের পর এই মানুষিক যন্ত্রণা সহ্য হয় না আমার,, রোদ।। তুমি কি পাগল করে ফেলতে চাও আমায়??নাকি মেরে ফেলতে চাও??যা ইচ্ছে করো…কিচ্ছু বলবো না…মেরেই ফেলো…
.
উনি কি বলছেন কিছুই যেনো কানে ঢুকছে না আমার।আমি হতভম্ব চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি …কোনোরকম ডান হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে উনার কপালে হাত রেখে কাঁপা গলায় বলে উঠলাম আমি-
.
আপনার তো জ্বর….. অনেক জ্বর!!!এতো জ্বর নিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন??
.
উনি বাঁকা হেসে আমার হাতটা সরিয়ে দিয়েই পাশে শুয়ে পড়লেন।।চোখদুটো বন্ধ করে বললেন-
.
তাতে তোমার কি?হতে দাও জ্বর….পুড়ে যাক শরীর… এমনিতেও তো পুড়েই মরছি।।(জোরে শ্বাস নিয়ে) মাথায় একটু হাত রাখো তো রোদপাখি….এবার একটু ঘুমোতে চাই আমি।।শান্তির ঘুম!
.
আমি এবার উঠে বসে আবারও উনার কপালে হাত রাখলাম।হাত-পা কাঁপছে আমার….কি ভয়ানক জ্বর উনার।।শরীরটা যে পুড়ে যাচ্ছে উনার।।নিজের অজান্তেই চোখ ভরে এলো আমার….কান্না পাচ্ছে খুব কান্না পাচ্ছে আমার।।কেন জ্বর হবে উনার?পুরো পৃথিবীতে কি মানুষের অভাব হয়েছিলো যে উনারই জ্বর হতে হলো??মুখ-চোখটা কেমন শুকিয়ে গেছে উনার….কথাটা ভেবেই মুখটা চেপে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠলাম আমি।।এবার উনি চোখ মেলে তাকালেন…..আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন –
.
কাঁদছো কেন রোদপাখি??
.
আমি মাথা নিচু করে কেঁদেই চলেছি….উনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলেন –
.
আমার জন্য কাঁদছো?আরে বাবা…এই সামান্য জ্বরের জন্য কাঁদতে হয় নাকি??মরে তো যাই নি…. কান্না বন্ধ করো নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় আমার….
.
উনার কথায় কান্নার গতি বাড়লো বয় কমলো না।।উনি এবার আমার হাতটা টেনে নিজের কাছে নিয়ে একহাতে জড়িয়ে নিলেন আমায়..মুচকি হেসে বলে উঠলেন –
.
এই পাগলী কাঁদছো কেন?তুমি আছো তো পাশে….ঠিক হয়ে যাবো আমি।।সামান্যই তো জ্বর…
.
উনার কথার জবাবে নাক টেনে বলে উঠলাম আমি-
.
একদম সামান্য নয়…অনেক জ্বর উঠেছে আপনার।।এখন কি করি আমি??(অসহায় মুখে)
.
আমার কথা শুনে হাসলেন উনি।।বুঝতে পারলাম হাসতেও কষ্ট হচ্ছে উনার….আমাকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন –
.
কিচ্ছু করতে হবে না তোমায়….শুধু আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকো রোদপাখি।।
.
উনার কথাগুলো জড়িয়ে যাচ্ছে এবার…আমি উনাকে কোনোরকম সরিয়েই বাথরুম থেকে পানি আর টাওয়াল ভিজিয়ে আনলাম।।উনি আমার কান্ড দেখে হাসছেন…. আশ্চর্য হাসার মতো কিছু করেছি নাকি আমি??উনার জুতো মোজা খুলে…শার্টের বাটনে হাত দিতেই বলে উঠলেন উনি-
.
তোমার মতলব কি রোদপাখি??আমার অসুস্থতার সুযোগ নিবে না তো??(দুর্বল হাসি দিয়ে)
.
আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকালাম।জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে তবু উনার ফাজলামো যায় নি মোটে।।এদিকে নিজেই লজ্জায় মরে যাচ্ছি তার উপর কিসব বলছেন উনি…অনেক কষ্টে শার্টটা খুলে শরীর মুছে দিয়ে কপালে জলপট্টি জড়ালাম….কিন্তু কিছুতেই জ্বর কমছে না…বরং আরো বেড়েই চলেছে….ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে কেঁপে উঠছে আমার।।আবারও কান্নারা বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে….মাকে ডাকতে হবে…এক্ষুনি ডাকতে হবে!!কথাটা ভেবে বিছানা থেকে নামার জন্য পা বাড়াতেই উনি হাত চেপে ধরলেন আমার….. আধো আধো কন্ঠে বলে উঠলেন –
.
কককোথায় যাচ্ছো?
.
মাকে ডাকতে….আপনি থাকুন আমি এক্ষুনি আসছি…এক্ষুনি!!
.
না…যাবে না তুমি।।আমার সাথে থাকো প্লিজ….তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে চাই আমি…তোমার শরীরের ঘ্রাণ পেতে চাই।।যেয়ো না কোথাও…যেয়ো না…
.
উনার হাতটা ছাড়িয়ে দৌড়ে মার রুমের সামনে এসে দাঁড়ালাম।।কান্না আটকাতেই পাচ্ছি না আমি…মার রুমে কয়েকবার নক করেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি….কিছুক্ষণ পরেই খুলে গেলো দরজা।।আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে অবাক চোখে বলে উঠলেন বাবা-
.
কাঁদছিস কেন মামনি?ভয় পেয়েছিস?ভয় পাবি কি করে?তোর রুমে না শুভ্র আছে!!
.
কান্নার চোটে কথায় বলতে পারছি আমি… গলায় কথাগুলো আটকে আছে যেনো।।মা চুলের খোপা করতে করতে এসে দাঁড়ালেন বাবার পাশে….উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলেন –
.
কাঁদছিস কেন রোদ??কি হয়েছে?শান্ত হো মা…
.
মমা…উনার খুব জ্বর…প্লিজ ডক্টরকে ফোন করো…প্লিজ!!
.
ঠিক তখনই দরজা খুলে উঁকি দিলো ভাইয়া….ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো –
.
কাঁদছিস কেন বুড়ি??কি হয়েছে?
.
উনার খুব জ্বর ভাইয়া….
.
উনি টা কে??
.
শুভ্র ভাইয়া….
.
শুভ্র তার ভাই হয় নাকি??আশ্চর্য!! আমি তো ভেবেছিলাম ও তোর বর…
.
ফাজলামো বাদ দে ভাইয়া….উনার এই অবস্থায় তুই মজা করছিস?? (কাঁদতে কাঁদতে)
.
?
.
ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে আছি আমি….আর মাঝে মাঝে হেঁচকি তুলে চলেছি।।আমার পাশে মা….টেনশনে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আছে আমার।।জ্বরের তীব্রতায় জ্ঞান হারিয়েছেন শুভ্র…ডক্টর প্রায় আধাঘন্টা ধরে চেকাপ করে চলেছেন….একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন ডক্টর..
.
নিউ জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা নিজেদের যত্ন নিতেই ভুলে গেছে….এমনি এখন জ্বরের মৌসুম…. তারওপর সারাদিন নিশ্চয় বেগার খাটে।। অতিরিক্ত শারীরিক এবং মানুষিক পরিশ্রমের জন্য এমনটা হয়েছে….তারমধ্যে কিছুদিন যাবৎ হয়তো খাওয়া দাওয়া ঘুম কিছুই ঠিক ভাবে করে না।।প্রেশারের অবস্থাও ভয়াবহ….কিছুদিন ফুল রেস্টে রাখুন উনাকে…খাবারে দাবারের দিকেও খেয়াল রাখবেন… আমি সিম্পল কিছু মেডিসিন দিচ্ছি…ঠিকঠাক কেয়ার নিলে জলদি সেরে উঠবেন ইনশাআল্লাহ!!
.
ডক্টর বেরিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ আমার সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রেখে বলে উঠলেন –
.
কে হয় তোমার?স্বামী?(আমি মাথা নাড়তেই মুচকি হাসলেন উনি) ঠিক হয়ে যাবে মা…চিন্তা করো না!!এখন বুঝতে পারছি কেনো এতো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন উনি….বউ যদি একটু অসুস্থতায় এতো কাঁদে…তাহলে বউয়ের আদরমাখা কান্না দেখতে যেকোনো ছেলেই অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে রাজি হয়ে যাবে….আমি তো এই বয়সেও রাজি…হা হা হা!!
.
উনার কথায় হালকা হাসলাম আমি।।
.
.
রাত প্রায় ১ঃ৩০…. আমি রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে আছি,,উদ্দেশ্য উনার জন্য স্যুপ বানাবো ….স্যুপটা চুলোয় দিতেই চিন্তিত মুখে মা এসে দাঁড়ালেন আমার পাশে।।আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন-
.
আমি একটা জিনিস ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না রোদ…(আমি চোখে প্রশ্নবোধক চিন্হ ঝুলিয়ে উনার দিকে তাকাতেই)শুভ্রদের খুঁজে পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি কখনোও তোকে আর শুভ্রকে একসাথে দেখি নি।।তোদের মধ্যে কখনো “কেমন আছো” টাইপ কথাও হয় না…দুজন অলওয়েজ দু’দিকে।।শুধু মাত্র রুহির এনগেজমেন্টে আদিবের ওমন বিহেভিয়ারের পর শুভ্র কিছুক্ষণের জন্য তোর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো তবুও সেটা ছিলো সাময়িক।।তুই ওর বন্ধু সাহেলের সাথে যতটা কথা বলিস শুভ্রর সাথে তার তিন ভাগের একভাগও বলিস না….আমার তো সন্দেহ হয় তোদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত কোনো কথায় হয় নি….তবুও তোদের দেখে মনে হয় তোদের দু’জনের মধ্যে খুব ভালো একটা কেমিস্ট্রি আছে…কিন্তু কিভাবে??অদ্ভুত…
.
মার এমন একটা কথার উত্তর হিসেবে ঠিক কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না আমি।।সত্যিই তো ফ্যামিলি মেম্বারদের সামনে কখনো কথা বলি নি আমরা….হয়তো প্রয়োজনই পড়ে নি।।মাকে যে কি করে বলি…তিনি তার ভাতিজাকে যতোটা ভদ্র ভাবেন সে ততটা ভদ্র নয় আস্ত শয়তান…..তাদের অগোচরে অনেক কিছুই করে সে….অনেক ভয়ানক কিছু…কিন্তু চোখে পড়ে না মোটেই।।থেংক গড চোখে পড়ে না…নয়তো নিজের মেয়ের সাথে কি কি করেছে তা দেখলে নির্ঘাত হার্ট করতেন উনি।।নিজের মনেই একটু হেসে স্যুপটা বাটিতে নিয়েই মার দিকে তাকালাম।।উনি এখনও বেশ চিন্তিত যেনো নিউটনের সূত্রের মতো মহামূল্যবান কোনো সূত্র এখনি আবিষ্কার করে ফেলবেন উনি….আমি মুচকি হেসে মাকে বললাম-
.
মা উনি একা আছেন….তুমি চিন্তা করতে থাকো…আমি গেলাম…
.
মা চিন্তিত মুখেই ঘাড় নাড়ালেন…রুমে এসে স্যুপটা টেবিলে রেখে উনার কাছে যেতেই দেখি জেগে গেছেন উনি…আমাকে দেখেই হেঁচকা টানে নিজের উপর ফেলে শক্ত করে চেপে ধরলেন আমায়….এতো জ্বরেও এতো জোড়?? নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাতেই বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন উনি-
.
একদম নড়বে না…ছাড়বো না আমি।।ছাড়বো না…ছাড়বো না।।তুমি সুযোগ পেলেই পালিয়ে যাও কেন?
.
আমি কখন পালালাম??(অবাক হয়ে)
.
পালালেই তো…আমায় রেখে কোথায় গিয়েছিলে তুমি??তুমি না আমার বউ??তুমি শুধু আমার কাছে থাকবে…আর কোথাও যাবে না।।সাহেলের কাছেও না….ওই ওই হারের ডাক্তারের কাছেও না…তুমি শুধু শুভ্রর সাথে থাকবে…শুভ্রর সাথে থাকবে…শুভ্রর সাথে থাকবে…নয়তো শুভ্র কাঁদবে….(মুখ ফুলিয়ে)
.
আমি এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম।উনার কপালে হাত রেখে বুঝলাম জ্বর বেড়েছে…তাই এতো পাগল পাগল কথা…এখনি মেডিসিন দিতে হবে উনাকে….নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে উনাকে উঠে বসতে বললাম….সাথে সাথেই আমাকে আরো জোরে চেপে ধরে বলে উঠলেন –
.
নাহহহহহহ….উঠবো না।।কেনো উঠবো??কিছুতেই উঠবো না….তুমিও উঠবে না… দুজনেই শুয়ে থাকবো….তুমি জানো না…”তুমি আমি পাশাপাশি আছি বলেই জীবন হয়েছে মধুময়” তাই পাশাপাশি থাকতে হবে… উঠা যাবে না।।
.
এবার যেনো কেঁদেই উঠবো আমি….একদিকে উনার গায়ে এতো তাপ তারওপর এতো শক্ত করে ধরে আছেন….শ্বাস আটকে আসছে আমার।।এমন পাগলামো কেউ করে??শেষমেষ পাগলের বউ হলাম আমি?আমাকে কাঁদতে দেখে অস্থির হয়ে বলে উঠলেন উনি-
.
রোদপাখি??কাঁদছো কেন তুমি??
.
আপনি উঠছেন না…খাবার খাচ্ছেন না…তাই কাঁদছি।।(মুখ ফুলিয়ে) আপনি আমার কোনো কথায় শুনেন না…কখনোই না..
.
শুনি তো!!আচ্ছা উঠবো আমি…কিন্তু তোমায় ছাড়বো না…তাহলে তুমি পালিয়ে যাবে…তোমাকে ধরে রাখতে হবে বুঝলে??
.
আমাকে না ছাড়লে উঠবেন কিভাবে??(অধৈর্য হয়ে)
.
না ছাড়বো না…ছাড়বো না….
.
আচ্ছা ঠিক আছে না ছেড়েই উঠুন তবু উঠুন প্লিজ।।
.
উনি খাটের সাথে হেলান দিয়ে আমাকে কোলের উপর বসিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে বসে আছেন…আর বাচ্চাদের মতো চপচপ করে স্যুপ খাচ্ছেন।।উনাকে একদমই বাচ্চাদের মতো লাগছে…কিউট বাচ্চা!! এই মুহূর্তে একটা কথায় মনে হচ্ছে আমার…আমার যখন বেবি হবে বেবিটা যেনো একদম উনার মতোই কিউট হয়….কথাটা ভেবেই মনের আনন্দে চুমু এঁকে দিলাম উনার কপালে…সাথে সাথেই খাওয়া বন্ধ করে..ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন উনি-
.
তুমি আমায় আদর দিচ্ছো রোদপাখি??
.
.
#চলবে….?

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ