তোকে চাই❤(সিজন-২)41+42+43
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:41
.
?
.
সেদিন রোদদের গ্রামের বাড়ি থেকে ফেরার পর বাসায় ঢুকতেই চিত্রার মা একরকম টেনে ঘরে নিয়ে গেলো তাকে….দরজা লাগিয়ে আনন্দিত কন্ঠে ফিসফিস করে বলে উঠলেন –
.
চেহারার কি অবস্থা করেছিস।অসভ্য মেয়ে…নিজের খেয়াল নিতে পারিস না?(বিছানার ওপর ইশারা করে) ওই আকাশী রঙের জামদানী শাড়িটা ফটাফট পড়ে ফেল তো।
.
মায়ের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো চিত্রা।।বাসায় ফিরে মানুষ ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়…আর মা তাকে শাড়ি পড়তে বলছে?কি আশ্চর্য!! বিস্ময়মাখা কন্ঠে বলে উঠলো চিত্রা-
.
আশ্চর্য! হঠাৎ করে শাড়ি পড়তে যাবো কেন?
.
কেন?শাড়ি পড়লে কি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে?
.
পৃথিবী ধ্বংস হবে কি না জানি না মা।তবে এই মুহূর্তে যে আমি শাড়ি পড়ছি না সেটা আমি খুব ভালো করে জানি।
.
অবশ্যই পড়বি।দেখ…একদম ত্যাড়ামো করবি না বলে দিলাম।জামাই তার নানি দাদিকে নিয়ে আসছে…. উনারা প্রাচীন ধাঁচের মানুষ।ওদের সামনে যদি এমন ত্যাড়ামো করিস তো থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।
.
জামাই মানে?কিসের জামাই,কার জামাই,কি রকম জামাই??(অবাক হয়ে)
.
জামাই আবার কিসের হয়?জামাই তো জামাই ই…ওদিন ওই ছেলেটা এলো না তোকে দেখতে?ছেলেটা তোকে না খুব পছন্দ করেছে,বুঝলি?একদম বিয়ে করবে তো তোকেই করবে….কি সুন্দর ব্যবহার!!আজকে ওর নানি,দাদি আসবে… এবার ওদের পছন্দ হলেই হলো।(খুশিতে গদগদ হয়ে)
.
মা!!আমি তোমাকে বলেছি আমি বিয়ে করবো না।।তবু কেন জোর করছো বুঝতে পারছি না।আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি মা?
.
এভাবে বলছিস কেন?দেখ…তুই বড় মেয়ে।বাবা মা কি কখনও সন্তানের খারাপ চায় বল?মেয়ে হয়ে জন্মালে তো বিয়েটা একদিন করতেই হবে।তাছাড়া তোর তো পছন্দেরও কেউ নেই যে অপেক্ষা করবো। আর দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয়ে যায় বল?ওরা আসতে চাইছে আমরা কি মুখের উপর মানা করতে পারি?এটা কি ভালো দেখায় বল?এখন যদি তুই ঠিকঠাকভাবে ওদের সামনে না যাস তাহলে তোর বাবা ওদের সামনে ছোট হয়ে যাবে না??তুই কি তাই চাস?(করুণ গলায়)
.
কিন্তু মা…
.
কোনো কিন্তু নয়।ফ্রেশ হয়ে শাড়িটা পড়ে নে।ওরা এলো বলে…লক্ষী মেয়ে আমার।(কপালে চুমু দিয়ে)
.
মা বেরিয়ে যেতেই থম ধরে বসে রইলো চিত্রা।নাটকীয় সবকিছু যে তাদের সাথেই কেনো ঘটছে বুঝতে পারছে না সে?রোদের বিয়েটাও কেমন হুটহাট হয়ে গেলো…যদিও তাতে বেশ খুশিই হয়েছে চিত্রা।শুভ্র ভাইয়া যে রোদকে কতটা ভালোবাসা সেটা তো ওপেন সিক্রেট… বিয়ে হয়েই বরং ভালো হয়েছে।।কিন্তু তার সাথে এমনটা কেন হচ্ছে?একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পড়া শেষ করতেই হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে এলো মা।ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলো –
.
চল চিত্রা।ওরা চলে এসেছে….তোকে ডাকছে।ইশশ মাথায় ঘোমটা টা দিয়ে নে না বাবা!!এই মেয়েকে নিয়ে যে কি করি।(বিরক্তি নিয়ে)
.
সোফায় বসে আছে চিত্রা।আজও মাথাটা নিচু করে রেখেছে সে….তার ঠিক সামনে নীল রঙের পাঞ্জাবি পড়ে বসে আছে একটা ছেলে।আজও চিত্রা আড়চোখে লোকটার পেট পর্যন্তই দেখতে পেয়েছে।। এরচেয়ে ওপর দিকে তাকানোর সাহস তার হলো না…লজ্জাটা যেনো ঘাড়ে চেপে বসেছে তার,, সেইসাথে চরম অস্বস্তি। হুট করেই পাশে বসে থাকা সাদা শাড়ি পড়া বৃদ্ধা মহিলাটি চিত্রার হাত টেনে নিয়ে একটি আংটি পড়িয়ে দিলো।সাথে সাথেই পাশ থেকে অন্য একজন বৃদ্ধা মহিলা বলে উঠলেন –
.
আমাদের দু’জনের সতীন হয়ে গেলে তো তুমি!!আমি কিন্তু এখন থেকে তোমায় নাতবউই ডাকবো।।আমার দাদু ভাই তো এখনই তোমায় চোখে হারায়…আমাদের দু’জন থেকে তাকে তো তুমি কেড়ে নিলে ভাই!!তবে দোয়া করি সারাজীবন আঁচলে বেঁধে রাখো তাকে।
.
আচমকা কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না চিত্রা।চোখ দুটো ভরে আসছে তার…এমনটা হওয়া কি খুব প্রয়োজন ছিলো?চিত্রার মা ও হাসিমুখে সামনে বসে থাকা ছেলেটার হাতে একটা আংটি পড়িয়ে দিলেন।।চিত্রার এবার গলা ধরে এলো এভাবেও এনগেজমেন্ট হতে পারে জানায় ছিলো না তার।কিছুক্ষণ পর সামনে বসে থাকা ছেলেটি গমগমে ভরাট গলায় বলে উঠলো –
.
আমি কি উনার সাথে আলাদা কথা বলতে পারি?
.
সবার সম্মতিতে ওদের দু’জনকে চিত্রার ঘরে পাঠানো হলো।দু’জনেই ব্যালকনিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে…কিছুক্ষণ নীরবতার পর হুট করেই বলে উঠলো লোকটি-
.
আচ্ছা?আপনি কি ট্যারা?
.
লোকটির এমন কথায় অবাক হলো চিত্রা। আশ্চর্য ট্যারা হতে যাবে কেন ও?ভার্সিটির কতো ছেলেরা তার চোখের প্রশংসা করেছে…আর এই ব্যাক্তি কি না বলছে সে ট্যারা??চিত্রা অবাক হয়ে মাথা নিচু করেই বলে উঠলো –
.
ক ক কেনো?আপনার এমন মনে হচ্ছে কেন?
.
আমার দিকে তাকাচ্ছেন না তাতেই বুঝতে পারছি।।আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে কোনো মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সে তাকাবে না এটা হতেই পারে না।আর যদি তা হয় তাহলে বুঝতে হবে তার চোখে সমস্যা আছে।আপনি নির্ভয়ে আমার দিকে তাকাতে পারেন।আপনি ট্যারা হলেও আমি আপনাকেই বিয়ে করবো…আমি হলাম জনদরদী মানুষ…এসব ট্যারা প্যারা মেয়ে বিয়ে করতে আমার তেমন একটা আপত্তি নেই।(মুচকি হেসে)
.
লোকটির কথায় এবার রেগে উঠলো চিত্রা।লোকটি রীতিমতো তাকে অপমান করছে!!কতো বড় সাহস….রেগে গিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-
.
আপনাকে কি আমি বলেছি বিয়ে কর….
.
এটুকু বলেই থেমে গেলো চিত্রা।সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা তার পরিচিত।ভার্সিটিতে দেখেছে সে…তমাদের ডিপার্টমেন্টের নতুন স্যার…নামটা যেনো কি??মনেই পড়ছে না।।তবে রোদ আর সে স্যারটাকে নিয়ে বেশ মজা করেছিলো তখন।।তার একটা নেইক নেইমও দিয়েছিলো রোদ…কি জানি নাম টা?ঔষধের শিশি?হতে পারে…এমন কিছুই হবে… কিন্তু এই লোক তাকে বিয়ে করতে এসেছে কেনো?তাকে কি চিনতে পারছে?চিনতে পারার তো কথাও না।শিশির স্যারের তুরির শব্দে ঘোর কাটলো তার…
.
এই যে মিস.কি ব্যাপার? কোথায় হারিয়ে গেছেন?আমাকে কি খুব সুন্দর লাগছে?
.
চিত্রা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ভয়ে তার হাত-পা কাঁপছে।তমার কাছে শুনেছে সে সুন্দর হলে কি হবে…একদম তিতা করলা মার্কা স্যার এটা।কথায় কথায় নাকি রাগারাগি করেন খুব।শেষ পর্যন্ত কোনো জলন্ত আগ্নেয়গিরি তার স্বামী হবে?সারা জীবন টিচারদের মতো স্ট্যান্ড আপ এন্ড সিট ডাউন করবে??ভাবা যায়??চিত্রাকে চুপ করে থাকতে দেখে এবার এগিয়ে এলো শিশির….ওর একদম কাছাকাছি এসে বলে উঠলো –
.
কি ব্যাপার বলো তো…আমায় দেখলেই কি তোমার সব সিস্টেম অফ হয়ে যায় নাকি?কখনো তাকাতে ভুলে যাও….কখনো চোখ ফিরাতে ভুলে যাও…আবার কখনো কথা বলতে ভুলে যাও!!
.
কথাটা বলেই চট করে একটা চুমু দিয়ে দিলেন চিত্রার ডান গালে।ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই চোখ বড়বড় হয়ে এলো চিত্রার।হাত পা কাঁপতে লাগলো…. শরীরে যেনো ১০ মাত্রায় ভূমিকম্প শুরু হয়েছে।কি ভয়ানক একটা ঘটনা ঘটে গেলো তার সাথে!!ছি ছি।এই মুখ কাকে দেখাবে এবার সে?? কিভাবে দেখাবে??চিত্রার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে মুচকি হেসে বাম গালেও একটা চুমু দিয়ে বাঁকা হেসে বেরিয়ে গেলেন উনি।চিত্রা দুই গালে দু’হাত দিয়ে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে।এটা কি হলো??কি হলো এটা??স্যার তাকে…নননননো!!তারপর থেকে স্যারকে নিয়ে ভয় ঢুকে গেলো তার মনে…দেখলেই ভয়ে হাত-পা কেঁপে ওঠে…তার সাথে অন্যরকম একটা ফিলিংসও হয়।।একদম অন্যরকম একটা ফিলিংস…যে ফিলিংসে মনটাও কেঁপে ওঠে তার।।চোখ দুটো তাকেই খুঁজে কিন্তু দেখা মিললেই শুরু হয় কাঁপা-কাঁপি।। তারমাঝে তিনমাস কেঁটে গেছে… শিশির প্রথম কিছুদিন তার সাথে বিভিন্নভাবে কথা বলার চেষ্টা করেছে…ঘুরতে যাওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কাজ হয় নি।।চিত্রা তার সামনেই যায় নি।।তারপর থেকে শিশিরও আর চিত্রার সাথে যোগাযোগ করে নি।বাসায়ও সেই ব্যাপারে কথা উঠে নি।।তাই ব্যাপারটা আমলে আনে নি চিত্রা।কিন্তু সেদিন হঠাৎ ভার্সিটিতে দেখা হওয়ায় আবারও কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছিলো তার।।রোদকে তখন বলে নি…তাই পরে আর বলার সাহস হয় নি।।ভেবেছিলো যখন বিয়ে ফিক্সড হবে তখন একবারেই বলবে….
.
চিত্রার কাহিনীটা পুরোদস্তুর শুনে মাথা দুলালাম আমি।চিত্রা ডান কান ধরে বললো…”সরি”।। আমি আচাড়ের বয়ামটা পাশে রেখে ওকে হাত দিয়ে ডাকলাম-“এদিকে আয়” চিত্রা এগিয়ে আসতেই ওর ওড়না দিয়ে হাত মুছে শান্ত গলায় বললাম-“দুই কান ধর!”চিত্রা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুই কান ধরলো।আমি রেলিং থেকে লাফিয়ে নেমে বলে উঠলাম –
.
ঠিক আছে…. তোর সরি প্যান্ডিং অবস্থা থেকে এপ্রোব করা হবে বাট একটা শর্ত আছে।
.
কি শর্ত?
.
শর্তটা হলো শিশির স্যারের গালে চুমু দিতে হবে।তবেই সরি একসেপ্টেট।
.
কিহহহহ!!পাগল হইছিস তুই?তুই তোর জামাইকে কখনো চুমু দিয়েছিস যে আমাকে বলছিস??(রেগে তাকাতেই)প্লিজ দোস্ত…এটা কেমন হয়ে যায় না?আমায় ছ্যাচড়া ভাববে!!
.
বেশি বেশি হয়ে যাবে??
.
হুম! হবে।
.
তাহলে জড়িয়ে ধরিস তাতেই হবে।
.
কিহহ??জড়িয়ে?আর আমি??প্লিজ দোস্ত আরেকটু সহজ করা যায় না?প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
.
ওকে লাস্ট অপশন…এটা যদি না করিস তো ডিরেক্ট ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ব্যান করা হবে তোকে….রাজি?(ভ্রু নাচিয়ে)
.
আচ্ছা বল…!(মন খারাপ করে)
.
স্যারের সামনে গিয়ে সুন্দর করে বলবি “কেমন আছেন শিশির?” ব্যস এটুকুই।
.
নাম ধরে?
.
হ্যা।নাম ধরে।স্যার ট্যার বলা যাবে না।।হবু বরকে কেউ স্যার বলে?
.
তুই যে তোর পার্মানেন্ট বরকে ভাইয়া বলিস সেটা?
.
এই এদিকে আয়!!(ভ্রু কুঁচকে)
.
কেনো??(অবাক হয়ে)
.
আমি একটু এগিয়ে গিয়ে ওর গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললাম -“এইজন্য!আরে আমি কি তোর মতো লুকিয়ে কিছু করেছি নাকি?করি নি।সো আমার বেলা সব ঠিকঠাক।। বুঝলি? এবার যা করতে বলছি… লক্ষ্মী বালিকা…সরি লক্ষ্মী যুবতীর মতো সেটা করে ফেলো…নয়তো খবর আছে….ওই চিপকু মফিসের সাথে বিয়া দিয়ে দিমু…হুহ।আচ্ছা আমি একটা ব্যাপার বুঝলাম না…শিশির স্যারের মতো একটা ড্যাশিং ছেলেকে তুই বিয়ে করতে চাচ্ছিস না কেন?তোর জায়গায় আমি হলে তো গলায় ঝুলে পড়তাম…হা হা হা
.
শুভ্র ভাইয়া উনার চেয়েও ড্যাশিং…কয়েকগুন বেশি কিউট।।তাকালে তো তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে তাও তো তুই পাত্তা দেস না…আবার কথা!!
.
এই ফাজিল মেয়ে তুই উনার দিকে তাকাবি কেন,,যে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করবে?উনার দিকে তাকালে খবর আছে…. এতো ড্যাশিং জামাই রেখে সিঙ্গেল ছেলে খুঁজিস…আবার আমার বরের দিকেও তাকাস তোকে তো গণদোলাই দেওয়া উচিত….
.
তোকে গণদোলাই দেওয়া উচিত…. এতোগুলো মেয়ের মন ভেঙে শুভ্র ভাইকে বিয়ে করে নিলি…কেমনে পারলি বল তো?নির্দয়!!
.
এভাবে ঝগড়া নামক খুনসুটিতে পুরো বিকেল কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলাম আমি।।শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে আজ।।কোনোরকম কটা খেয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।।শুভ্রর কথা মনে হচ্ছে খুব…হয়তো উনার প্রেমে পড়ে গেছি আমি…বিয়ের পর প্রেম….নাকি ভালোবাসার পর প্রেম!!যায় হোক খুব অদ্ভুত বিষয় ঘটছে আমার সাথে…উনার কথা মনে হতেই উনাকে চিবিয়ে চুবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে ।।কি সাংঘাতিক ব্যাপার!!
.
?
.
রাত প্রায় ১ টা।হঠাৎই ঘুম ভেঙে গেলো আমার।কেনো ঘুম ভাঙলো বুঝতে পারছি না।হয়তো কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম।হুট করেই কি যে হলো আমার….মনে হতে লাগলো শুভ্রকে এখনই দেখতে হবে আমায়…একদম সামনে থেকে দেখতে হবে…হবেই হবে।।বালিশের নিচ থেকে ফোনটা নিয়ে হাজারো অস্বস্তিকে উড়িয়ে দিয়ে ডায়াল করেই ফেললাম।যদিও ভেবেছিলাম ফোন রিসিভ হবে না।।এতো রাতে নিশ্চয় শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছেন উনি।কিন্তু আমার ধারনা ভুল প্রমাণ করে প্রথম বারেই রিসিভ হলো.. ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন –
.
হ্যালো!তুৃমি এখনো ঘুমোও নি রোদপাখি?
.
ঘুমিয়েছিলাম তো…ওঠে গেছি।আমার না আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে….খুবববব!!
.
কি নিঃসংকোচ আবেদন আমার।কেন জানি লজ্জা জিনিসটা আমার মাঝে কাজই করছে না আজ।আচ্ছা?লজ্জার সিস্টেম টা কি নষ্ট হয়ে গেলো তবে??আমি নিঃসংকোচে কথাটা বললেও ওপাশের মানুষটি নীরব হয়ে গেলেন।আমার মুখ থেকে এমন কথা শুনবেন কল্পনাও করতে পারেন নি হয়তো।।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলেন উনি-
.
তুমি ঠিক আছো?জ্বর টর কিছু হয়নি তো?
.
আমি একদম ঠিক আছি।জ্বর কেন হতে যাবে?শুনুন না…আমি আপনাকে দেখবো…এখনই… (মুখ ফুলিয়ে)
.
ওকে ছবি পাঠাচ্ছি দেখে নাও। তোমার হাজবেন্ড চেঞ্জ হয় নি যেমন ছেড়েছিলে তেমনি আছে।।
.
না ছবি নয়…
.
তাহলে ভিডিও কল করবো?
.
না ভিডিও কলও নয়।।আমি আপনাকে একদম সরাসরি দেখতে চাই।
.
ভিডিও কলে তো সরাসরিই দেখা হলো রোদুসোনা।
.
হলো না…ভিডিও কলে শুধু দেখা যাবে।আর কিছু তো করা যাবে না।(মন খারাপ করে)
.
তুমি কি আরো কিছু করতে চাও?(হেসে দিয়ে)
.
হুম চাই তো…
.
কি করতে চাও শুনি…
.
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখতে চাই….সো আপনাকে আমার এখনই চাই…এখনই এখনই এখনই….
.
এখনই লাগবে আমায়?
.
হুম
.
আমার কথায় হুহা করে হেসে উঠলেন উনি। হাসিটা কোনোরকম থামিয়ে বলে উঠলেন –
.
তুমি পাগল হয়ে গেছো রোদ।এখন কটা বাজে জানো?১ঃ০৫।আচ্ছা!সত্যি করে বলো তো…উল্টাপাল্টা কিছু খাও নি তো??
.
একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না।।কটা বাজে সেটা জানতে ফোন দিই নি আমি….আমার এখন আপনাকে চাই মানে চাই ব্যস।(মুখ ফুলিয়ে)
.
উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন-
.
অাধাঘন্টা ওয়েট করতে পারবে?আমি এখন অফিসে আছি…অফিস থেকে তোমাদের বাড়ি যেতে আধাঘন্টা লাগবে।এখনই বের হবো অফিস থেকে…নিচে এসে কল দিবো নেমে এসো…আমি বাসায় যাবো না।।চলবে?
.
হুম কিন্তু এতো রাতে আপনি অফিসে কেন?(ভ্রু কুঁচকে)
.
আমার কথায় উনি হাসলেন।তারপর ছোট্ট একটা শ্বাস টেনে নিয়ে বললেন-
.
তুমি যে মাঝরাতে এমন পাগলামোতে মেতেছো…যে ফিলিংসটা এখন তোমার হচ্ছে সেই পাগলামোটা আমার প্রতিটি মুহূর্তে করতে ইচ্ছে করে রোদ। এই ফিলিংসটা প্রতিটি মুহূর্তে আমি ফিল করি…যেকোনো সময় ছোঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে তোমায়।বাট আই এম হেল্পলেস।তোমার এই ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব আমার উপর দিয়ে তুমি নিশ্চিন্ত কিন্তু আমি কাউকে আমার ইচ্ছে পূরণের দায়িত্ব দিতে পারি না।।তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছে আর পাগলামোগুলো আমার নিজেকেই পূরণ করতে হবে।।সেজন্য এটুকু পরিশ্রম তো করতেই হবে সোনা।
.
তাই বলে সারাদিন ভার্সিটি করে এখন, এতো রাতে…
.
উহুম.. এসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।আমি তো আছিই ভাবার জন্য।আমি অফিস থেকে বের হয়ে গেছি…আধাঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবো।। তোমার দায়িত্ব হলো আমার সামনে এসে তোমার মারাত্মক হাসিটা দিয়ে আমাকে আরেকটু পাগল করে তোলা।।হা হা হা।আমি চাই সবসময় হাসিখুশি থাকো তুমি…মাই লাভিং এঞ্জেল!!
.
থাক আসতে হবে না।কাল তো দেখা হবেই…আপনি বরং বাড়ি চলে যান।(মন খারাপ করে)
.
কেনো?(অবাক হয়ে)একটু আগেই তো পাগল হয়ে যাচ্ছিলে হঠাৎ কি হলো?
.
আমাদের বাসা তো উল্টো রাস্তায়….আপনার বাসায় পৌঁছাতে আরো লেইট হয়ে যাবে তাহলে।রেস্ট নিবেন কখন?কাল তো আবার ভার্সিটি আছে…
.
উফফো।।।আই উইল ম্যানেজ পুচকি।এতো পাকামো করতে হবে না আপনাকে…মহারানীর এক চিলতে হাসির জন্য জান হাজির!!!(হেসে)এবার রাখছি .. ড্রাইভ করবো তো…বাই।
.
আমি ফোন হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে আছি।।কেন জানি কান্না পাচ্ছে খুব।একটা মানুষ এতোটা পরিশ্রম কি করে করতে পারে?সকাল ৯ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত ভার্সিটি…কখনো এর থেকেও দেরি হয়ে যায়…ল্যাব ট্যাব কতো ঝামেলা।।তারপর ৭ টা থেকে এতোরাত পর্যন্ত অফিসে কাজ করতে থাকেন।খাবারটা খান কখন উনি?একটু রেস্টের কি প্রয়োজন নেই উনার?এতো কিছুর পরও সবসময় মুখে হাসিটা ধরে রাখেন কিভাবে…কিভাবে সম্ভব??একটুও কি বিরক্তি নেই উনার?একটুও না??আচ্ছা উনি ডিনার করেছেন তো?জিগ্যেসই তো করা হলো না।।কথাটা মনে হতেই ছুটে গেলাম কিচেনে।কি রান্না করা যায় ভাবতেই মাথায় এলো বিরিয়ানির কথা।কিন্তু না দিন শেষে বিরিয়ানি একদমই ভালো খাবার নয়।।তাহলে কি সাদা ভাত??তাই ভালো হবে ভেবে ঝটপট রাইস কুকারে ভাত বসিয়ে…চুলোয় বসালাম মাংস….অন্যচুলোয় মাছ ভাজি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আর মাত্র ১২ মিনিট বাকি।।মাংস সেদ্ধ হয়ে এসেছে…মাছও ভাজা ভাজা প্রায়…ঠিক তখনই রুম থেকে পানি নিতে এলো মা…আমাকে রান্নাঘরে দেখে অবাক হলো।।ভ্রু কুঁচকে বললো-
.
মাঝরাতে এসব কি রোদ??
.
তেমন কিছু না মা।ঘুম আসছিলো না…তাই সময় কাটানোর জন্য রান্না করছি।।।রান্না করতে বেশ ভালো লাগছে….মা তুমি যাও তো বিরক্ত করো না প্লিজ।এমনি মন মেজাজ ভালো না।
.
আম্মু কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গিয়ে পানি খেয়ে রুমে চলে গেলেন।আমি যেনো হাফ ছেঁড়ে বাঁচলাম। চুলোর আঁচ কমিয়ে দিয়ে ছুট লাগালাম রুমে।।আলমারি থেকে গোলাপী রঙের শাড়ি বের করে জড়িয়ে নিলাম গায়ে।চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক।।চুলগুলো হাতখোঁপা করতে করতে বিছানায় গিয়ে বসলাম।একদম ক্লান্ত হয়ে পড়েছি আমি।।উফফ কি ছুট টায় না করলাম।।আনমনে ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ চড়কগাছ…১০ মিনিট ওভার!!তাড়াতাড়ি ফোন খুঁজে হাতে নিতেই দেখি ফাইভ মিসডকল,, আবারও বেজে উঠতেই ঝটপট রিসিভ করে নিলাম-
.
রোদপাখি?ঘুমিয়ে গেছো?আমি কি চলে যাবো?তুমি বরং ঘুমাও…আমি..
.
এই একদম ঘুমিয়ে পড়ি নি।আপনি দাঁড়ান আমি এক্ষুনি আসছি ।জাস্ট ফাইভ মিনিটস।
.
ওকে আসো।
.
ফোনটা রেখে তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে খাবারগুলো প্যাক করে…পা টিপে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম ।গেইট খুলে বেরুতেই দেখি গাড়িতে ঠেস দিয়ে হাত বাজ করে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।গায়ে কালো শার্ট…হাতাগুলো ফোল্ট করে রেখেছেন,,হাতে কালো ডায়ালের ঘড়ি…টাই এর নাটটা ঢিলে করে উপরের দুটো বোতম খোলা…. পরনে এশ রঙের জিন্স।চুলগুলো একটু অগোছালো… মুখে ক্লান্তিমাখা হাসি।উনাকে দেখে কেনো জানি কান্না পেয়ে গেলো আমার।। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম….উনি ব্যাপারটায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন।কিছুক্ষণ পর মুচকি হেসে আলতো হাতে জড়িয়ে নিলেন আমায়….সাথে সাথে ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি….আমার কান্নার শব্দ শুনেই চমকে উঠলেন উনি।।আমাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে অস্থির হয়ে বলে উঠলেন –
.
কি হয়েছে রোদপাখি?কাঁদছো কেন?কেউ বকেছে?কি হয়েছে শুধু বলো আমায়।।প্লিজ কেঁদো না…..আমি তো আছি রে বাবা….কে কি বলেছো বলো শুধু!! নাকি শরীর খারাপ??
.
আমি কিছু না বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম উনাকে।সাথে সাথে বাড়লো কান্নার বেগ।উনি এবার জোড় করেই টেনে হালকা সোজা করে দাঁড় করালেন আমায়….গালে দু’হাত রেখে নরম গলায় বললেন-
.
কি হয়েছে বলো আমায়।।কেউ কিছু বলে…
.
উনি এটুকু বলতেই হুট করেই বলে উঠলাম আমি-“আই লাভ ইউ” আমার কথাটা কানে যেতেই যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলেন উনি।।অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন আমার মুখে….
.
#চলবে?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:42
.
?
.
কিছুক্ষণ অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই গাড়ির পেছনের দরজাটা খুলে ধপ করে বসে পড়লেন উনি।মাথা নিচু করে…হাতদুটো মুঠো করে মুখের কাছে এনে বসে আছেন চুপচাপ।আমি ততক্ষণে হেঁচকি তুলে চলেছি ক্রমাগত।কোনো ছেলে বউ এর মুখে “আই লাভ ইউ ” শুনলে এমন থম মেরে বসে থাকতে পারে জানা ছিলো না আমার।আমি এবার এগিয়ে গিয়ে উনার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কাঁপা গলায় বললাম -” কককি হয়েছে?” সাথে সাথেই আমার হাতটা টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিলেন আমায়…দু’হাত পেটে শক্ত করে চেপে ধরে কাঁধে মুখ রেখে বলে উঠলেন –
.
আমাকে পাগল বানানোর পায়তারা করছো?নাকি নিজে পাগল হয়ে গেছো?আমি পাগলামো শুরু করলে আমায় সামলাতে পারবে তো রোদসোনা?
.
উনার গরম নিঃশ্বাস তখন আমার ঘাড়ে পড়ে চলেছে বিক্ষিপ্তভাবে।কেঁপে কেঁপে উঠছি মুহূর্তে। আমায় চুপ থাকতে দেখে আবারও ফিসফিস করে বলে উঠলেন উনি-
.
কি খেয়েছো আজ, বলো তো? হাজবেন্ডের প্রতি আজ এতো ভালোবাসা….!!!
.
এবার আমার কি হলো কে জানে? উনার দিকে ঘুরে বসে উনার গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম –
.
আমার হাজবেন্ড যে কিউটটটটট তার প্রতি ভালোবাসা না এসে উপায় আছে?আমার বরের সবকিছুই একদম আদর আদর…
.
কথাটা বলেই উনার গালে টুপ করেই চুমু দিয়ে বসলাম আমি….যাকে বলে টাইট কিস!!আমার কাজে উনি হতবাক।রোবটের মতো বসে আছেন উনি…..যেনো চারপাশে কি চলছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার।।আমি মুচকি হেসে উনার চুল ঠিক করতে করতে বলে উঠলাম –
.
ডিনার করেছেন?
.
আমার কথায় যেনো স্বাভাবিক হলেন উনি।।একটা ঢোক গিলে বলে উঠলেন –
.
উহুম মনে ছিলো না ডিনারের কথা।কাজের চাপে ক্ষুধাও পায় নি তখন।কিন্তু এখন জলজ্যান্ত স্টোবেরি আইসক্রিম দেখে প্রচচচুর ক্ষুধা পাচ্ছে।।(দুষ্টু হেসে)
.
উনার কথায় আমি অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলে উঠলাম –
.
আইসক্রিম? কই আমার তো চোখে পড়ছে না!!তবে এতো রাতে আইসক্রিম খেতে হবে না।আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি খাবেন চলুন।।
.
কিহ খাবার এনেছো?রাস্তায় বসে খাবো?(অবাক হয়ে)
.
রাস্তায় খাবেন কেন?গাড়িতে বসে খাবেন…আমি খাইয়ে দিবো।প্লিজ!!
.
মহারানীর আদেশ শিরধার্য।(মুচকি হেসে)
.
গাড়িতে পাশাপাশি দুজন বসে আছি।আমি উনাকে খাওয়াচ্ছি আর উনি সিটে গা এলিয়ে দিয়ে একদৃষ্টিতে আমাকে দেখে চলেছেন।।যাকে বলে তৃষ্ণার্ত দৃষ্টি…কিছুক্ষণ ওভাবেই পড়ে থেকে সোজা হয়ে বসলেন উনি।আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন –
.
এতোরাতে খাবার গরম করে আনার কি প্রয়োজন ছিলো?(ভ্রু কুঁচকে)শুধু শুধু কষ্ট করলে…আমি এমনি খেয়ে নিতে পারতাম।
.
খাবার গরম করে এনেছি কে বললো আপনাকে?(উনি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই) নিজে রান্না করে এনেছি….একদম ফ্রেশ!!
.
কিহহ!!(অবাক হয়ে) এতো রাতে রান্না করতে গিয়েছো কেন তুমি?ঘুম বাদ দিয়ে এসব করার মানে কি?তোমার ঠিকঠাক ঘুম না হলে যে মাথা ব্যাথা করে জানো না?(রেগে) সবসময় বাচ্চামো!!
.
কেউ একজন জ্বর শরীরে সারারাত জেগে অফিস করছে আর আমি এটুকু করতেই তার এতো রাগ??ডাক্তার যে তাকে ফুল বেড রেস্ট দিয়েছে সে কি তা মানে?তাহলে আমি কেন তার কথা মানতে যাবো,, হুয়াই?(খাবার মাখতে মাখতে)
.
এবার উনি কোমরে হাত দিয়ে একটানে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন আমায়।।ডানহাতে গাল চেপে ধরে বললেন-
.
সে তার জ্বরের মেডিসিন পেতেই এতো কিছু করছে মিসেস আবরার শুভ্র।যদি তার মেডিসিনের কিছু হয়….সামান্যও শরীর খারাপ হয়….তাহলে তার চেপে খারাপ কেউ হবে না।।বুঝলেন?(ভ্রু নাঁচিয়ে)
.
উনি আমার গাল ছেড়ে দিতেই উনার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলাম –
.
দি আবরার শুভ্রর ওয়াইফকে ধমকি!!হে যুবক তোমার এতো বড় সাহস?? জানো আমার বর তোমার কি অবস্থা করবে??
.
আমার কোথায় হুহা করে হেসে উঠলেন উনি।কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলে উঠলেন –
.
রোদপাখি এমন আর করো না তো।তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে তো আমার সহ্য হবে না সোনা।(বোতল থেকে পানি খেয়ে) খাওয়া কমপ্লিট এবার বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।গো….
.
আমি অসহায় দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।উনি ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন –
.
কি হলো?যাও!!
.
নাহ…যাবো না।(মুখ কাঁচুমাচু করে)
.
যাবে না মানে?(অবাক হয়ে)
.
বলছি কি…আপনার তো এখান থেকে বাসায় যেতে প্রায় ১ ঘন্টা লেগে যাবে তাই না?এখন বাজে ২ টা ২০…. তারমানে বাসায় যেতে যেতে বাজবে ৩ টা ২০।।এরপর ফ্রেস হবেন…..ঘুমাতে যাবেন ততক্ষণে সকালই হয়ে যাবে।।তারথেকে বরং….
.
তারথেকে বরং??(ভ্রু কুঁচকে)
.
আপনি এখানেই গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়ুন না….আমি পাশে বসে পাহারা দিবো,,মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো…(হাসার চেষ্টা করে)
.
আমার কথায় শান্ত দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় বলে উঠলেন-
.
বলা শেষ?নাও গো…
.
প্লিজ প্লিজ প্লিজ….
.
চুপ…একদম চুপ।সবসময় জেদ ভালো লাগে না।আমি যখন বলেছি এখন রুমে গিয়ে ঘুমাবে তো ঘুমাবে..ব্যস। আর একটা কথাও না।গো( ধমক দিয়ে)
.
প্লিজ না….একটু থাকি।(কাঁদো কাঁদো মুখে)
.
নো মিনস নো রোদ।সবসময় বাচ্চাদের মতো বিহেভ করবে না যাও….(গম্ভীর গলায়)
.
না যাবো না আমি। এখানেই,, আপনার সাথে বসে থাকবো… যাবো না।
.
থাপ্পড় না খেতে চাইলে যাও এখান থেকে….নয়তো সত্যি সত্যি থাপ্পড় দিবো একটা।(চোখ রাঙিয়ে)
.
উনার চোখের দিকে তাকিয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো আমার।চোখ দুটো ভরে উঠলো মুহূর্তেই।কোন কথা না বলে চরম রাগ আর অভিমান নিয়ে চুপচাপ গাড়ির দরজা খুলতে গেলেই আমার বাম হাত চেপে ধরলেন উনি।করুন কন্ঠে বলে উঠলেন –
.
সরি রোদপাখি।এভাবে বলা ঠিক হয় নি….সরি।
.
হাত ছাড়ুন….(শান্ত গলায়)
.
সরি তো বাবা…. রাগ করে না।
.
হাতটা ছাড়ুন…
.
ইয়া খোদা!! এই বাচ্চাটাকে কিভাবে বোঝাবো আমি??(উপরের দিকে তাকিয়ে)
.
আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই এক ঝটকায় আমাকে সিটের সাথে চেপে ধরলেন উনি। ততক্ষণে খোঁপা খুলে চুলের অবস্থা বেকাহিল..উনি সাবধানে আমার ঘাড়ের কাছের চুলগুলো সরিয়ে গলয় মুখ ঢুবিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন –
.
তোমার আজ কি হয়েছে বলো তো?এমন পাগলামো কেন?তোমাকে দেখলে এমনিই পাগলামো শুরু হয়ে যায় আমার….এবার যদি তুমিও পাগলামো শুরু করো…তাহলে কিভাবে হবে বলো তো?আমি তো তাহলে কন্ট্রোললেস হয়ে পড়বো রোদপাখি!!আমার নিজেকে কন্ট্রোল করতে প্রবলেম হচ্ছে….তাই তোমাকে বলছি…প্লিজ চলে যাও…প্লিজজ।আর আমার রোদপাখিটাকে বকা দেওয়া জন্য এত্তোগুলো সরি….(ডানকান ধরে মাথা হেলিয়ে মিষ্টি হেসে) সরি!!
.
উনার কথায় মুখ ভেঙিয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এলাম আমি।।কোন দিক না তাকিয়ে সোজা হাঁটা দিলাম গেইটের দিকে….উনি গাড়ি থেকেই চেঁচিয়ে বলে উঠলেন –
.
রোদপাখি??তোমার বাপ আর মামুকে বলে দিও…আবরার শুভ্র তার বউ নিতে আসছে….খুব শীগ্রই আসছে….(চিৎকার করে)
.
উনার কথা কানে আসতেই মুচকি হাসলাম আমি।একটু দাঁড়িয়ে উনার দিকে না তাকিয়ে আবারও হাঁটা দিলাম আমি।।নিজেকে কেমন পরিপূর্ণ লাগছে আজ….পেছনে থাকা মানুষটি যে ভালোবাসা ঘেরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে… সেও তো এক শান্তি…মহাশান্তি!!
.
?
.
ক্লাস করে মাত্রই বেরিয়েছি।ক্লাস থেকে বেরিয়েই উঁকিঝুকি শুরু।নাহ!আজ শুভ্রকে নয় শিশির স্যারকে খুঁজ চলছে চারপাশে।চিত্রা যে উনাকে লাজুক লাজুক গলায় বলবে…”ওগো তুমি কেমন আছো?” আহ্ স্যারের কি রিয়েকশন হবে??ভাবতেই তো হাসিতে লুটোপুটি খেতে ইচ্ছে করছে আমার!! কথাগুলো ভেবে নিজের মনে হালকা হেসে চিত্রাকে নিয়ে পার্কিং এর দিকে যেতেই দেখি সামনে দাঁড়ানো ছেলে মেয়েরা উঠে দাঁড়ালো….মাঝ আড্ডায় এভাবে উঠে দাঁড়াতে দেখে অবাক হলাম দুজনেই।সাথে সাথেই তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন বলে উঠলো –
.
গুড নুন স্যার!!
.
গুড নুন…ভালো আছো তোমরা?
.
জি স্যার…
.
কথাটা বলেই সব কটা একরকম দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে। আমি আর চিত্রা মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই শকড…শুভ্র!!চিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলাতেই চোখ রাঙিয়ে তাকালাম।ব্যাগটা শক্ত করে ধরে…অন্যহাতে চিত্রার হাত টা ধরে উনাকে “গুড নুন স্যার” বলেই পাশ কাটিয়ে যেতে নিলাম।কিন্তু ওই যে ভাগ্য!!পেছনে থেকে আমার হাতটা টেনে ধরে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন –
.
শালিসাহেবা?আপনার জামাই আপনাকে খুঁজে ওইদিকে…. যান যান….
.
চিত্রা উনার দিকে অবাক চোখে তাকাতেই চোখ টিপে হেসে উঠলেন উনি।সাথে সাথে চিত্রাও হেসে উঠে উল্টো রাস্তায় হাঁটা দিলো।।আমি যে এতো ডাকলাম কানেই নিলো না।।সেলফিস বান্ধুবী।।এবার উনি আমার দিকে তাকালেন।দুষ্টু হাসি দিয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে বলে উঠলেন –
.
পালাও কেনো?কাল ছাড়তে চাইছিলে না, আজ ধরতে দিচ্ছো না…কাহিনী কি?ক্যান্টিনে চলো…খাবো ক্ষুধা লাগছে।
.
তো যান .. গিয়ে খান।আমায় টানেন কেন?আমায় খাবেন নাকি?(রাগী গলায়)
.
ইশশ…দহন বাড়িয়েও না রোদপাখি….পারলে তো প্রথম দিনই খেয়ে ফেলতাম।(চোখ টিপে)
.
ছিহ!!সব ছেলে লুচু।আপনার মতো ভুলাভালা চেহারার ছেলেরা আরো বেশি লুচু….শিশির স্যারের মতো একটা ছেলে,,যাকে দেখলে মনে হয় ভদ্রতার গোডাউন একখান….আর উনি কি করলেন?দেখতে গিয়েই চিত্রাকে চুমু দিয়ে দিলেন??ছিহ ছিহ… আর আপনার কথা তো বাদই দিলাম….আপনি তার থেকে কয়েকগুণ এগিয়ে….ক্লাসরুমে গলায় কামড়টা যে আপনি দিয়েছিলেন তা খুব ভালো করে জানি আমি…হুহ!!
.
আমার কথায় হেসে উঠলেন উনি।মাথা চুলকে বলে উঠলেন –
.
আমি তখন কন্ট্রোললেস হয়ে পড়েছিলাম…. আর তাছাড়া সব ছেলেরা তার বউয়ের চোখে লুচুই হয়…শিশির স্যার জানে সে চিত্রাকেই বিয়ে করবে…তাই ওমন বিহেভ করেছে।আর আমিও জানতাম দুনিয়া উল্টে গেলেও আমি এই এটম বোমকেই বিয়ে করবো….তাই আমিও ওমন বিহেভ করেছি।।তবে রোদপাখি….আমার কিন্তু তোমার সাথে লুচুগিরি করতেই বেশি ভালো লাগে…. এখনও করতে ইচ্ছে করছে,, করবো?(দুষ্টু হেসে)
.
ছিহ…ছাড়ুন আমায়!!
.
নো ছাড়াছাড়ি… চলো খাবো…আই মিন লান্চ করবো।।(মুচকি হেসে)
.
আমি যাবো না।খাবোও না…. ছাড়ুন আমায়….
.
তাহলে তোলে নিয়ে যাবো…
.
হোয়াটএভার….ছাড়ুন!!
.
আমার কথা শেষ হতেই কোলে তুলে নিলেন আমায়….ঘটনার আকস্মিকতায় চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম আমার।।ঢোক গিলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম…একটু দূরে রাতুল ভাইয়া আর কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে….আশেপাশে আর কেউ নেই বললেই চলে…বুঝতে আর বাকি রইলো না…মহারাজ সব ঠিকঠাক করেই এসেছেন।আমি রাগী গলায় বলে উঠলাম –
.
নামান…নামান বলছি!
.
না আগে বলো লান্চে যাবে।
.
আচ্ছা যাবো নামান….(দাঁতে দাঁত চেপে)
.
?
.
ক্যাফিটেরিয়াতে বসে আছি। একগাদা খাবার অর্ডার দিয়েছেন উনি। এখন যে খাবার নামক অত্যাচার চলবে তা বেশ বুঝতে পারছি আমি।উনি আমাকে চোখ রাঙিয়ে খেতে বলবেন ঠিক তখনই পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো –
.
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম…ভালো আছো?
.
জি ভাইয়া!ভাইয়া…আমি আপনাকে স্যার ডাকবো না ভাইয়া?
.
যা ইচ্ছে…(জোরপূর্বক হেসে)
.
আরে রোদ কেমন আছো?লান্চ করছিলে?আমি জয়েন করতে পারি?
.
ইয়াহ শ্রেয়া।প্লিজ!!
.
শ্রেয়া বসতেই আড়চোখে শুভ্রর দিকে তাকালাম আমি।উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন।বিষয়টা যে তার মোটেও ভালো লাগছে না…তা বেশ বুঝতে পারছি আমি।।শ্রেয়া হয়তো উনার মনের ভাবটা বুঝতে পারলেন না….তাই হাসিমুখে বলে উঠলো-
.
ইউ আর সো লাকি রোদ।শুভ্র ভাইয়ার মতো ভাই পাওয়াও অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।।বোনের কতো খেয়াল রাখেন উনি।।জাস্ট স্পিসলেস..
.
শ্রেয়ার কথায় প্রচুর হাসি পাচ্ছে আমার।।আগুনে ঘি ঢালার কাজটা বেশ ভালোভাবেই করেছে সে….শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন –
.
তোমাকে কে বললো আমি ওর ভাই??
.
কেনো রোদই তো সেদিন বললো….আপনি ওর কাজিন… খুব স্নেহ করেন ওকে….(মুচকি হেসে)
.
এবার আগুন মাখা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো শুভ্র।।যেনো এখনই গিলে খাবে সে….
.
#চলবে….
.
(আমার আইডি হ্যাক করেছে এটা সত্য।হ্যাকার পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করা ছাড়া আর কিছুই করে নি।।তাই আমি লগ ইন থাকার কারনে…আইডিতে আসতে কোনো সমস্যা হচ্চে না।।কিন্তু যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে৷। ব্যাপারটা ঠিক করার চেষ্টা চলছে….. সবাই দোয়া করবেন যেন ঠিক হয়ে যায়,, ধন্যবাদ)
#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:43
.
?
.
আমি একটা ঢোক গিলে উনার দিকে তাকালাম।।চোখে রাগের আগুন জ্বালিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন উনি।কি ভয়ানক সে চাহনী।।সামনে রাখা পানির গ্লাস থেকে এক ঢোক পানি খেয়ে নিয়ে কিছু একটা বলবো।ঠিক তখনই পাশ থেকে বলে উঠলো শ্রেয়া-
.
রোদ তুমি না খুব কিউট একটা মেয়ে।।তুমি ননদ হিসেবে কিন্তু অসাম হবে।।শুভ্র ভাইয়ার বউ কিন্তু খুব লাকি হতে চলেছে,, তোমার মতো ননদ পাবে বলে কথা।(মুচকি হেসে)
.
শ্রেয়ার কথায় বিষম খেলাম আমি।কাশতে কাশতেই উনার দিকে ফিরে তাকালাম।উনি চোখ মুখ শক্ত করে চুপচাপ বসে আছেন।।উনার চাহনী দেখেই ভেতরটা কেঁপে উঠলো আমার।।আজ যে কি হবে আমার কে জানে??নিজের বউকেই তার বউয়ের ননদ বানিয়ে দিয়েছে রাগ তো হবার কথায়….আমি টেনশনে টেবিলে রাখা চাটনীর বাটিটা নিয়ে ক্রমাগত চাটনী খেতে লাগলাম।কি বলবো কিছুই তো মাথায় আসছে না আমার….হুট করে কি বলে দিবো,, আমি শুভ্রর বউ??মাথায় যখন এতো এতো প্রশ্নের ছড়াছড়ি ঠিক তখনই ভাবনার চাদরকে ছিন্ন করে আবারও বলে উঠলো শ্রেয়া-
.
রোদ?তুমি কিছু মনে না করলে আমি কি শুভ্র ভাইয়ার সাথে একা কথা বলতে পারি??এক্চুয়েলি খুবই পার্সোনাল কিছু কথা।।প্লিজ!!
.
শ্রেয়ার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি।আমার বরের সাথে তার কিসের পার্সোনাল কথা??প্রোপোজ টপোজ করবে নাকি??করতেও পারে…..এজন্যই সুন্দর ছেলে বিয়ে করতে চাই নি আমি… কিন্তু ওইযে কপাল….আমার জামাইকে প্রোপোজ করতে আমার কাছেই পারমিশন চাচ্ছে ও…ভাবা যায়??আমার জায়গায় শুভ্র থাকলে নিশ্চয় এতোক্ষনে ধুয়ে দিতো ওকে??আর আমি?জড়বস্তুর মতো বসে আছি….ডাফার!!কথাগুলো ভেবে কড়া কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই পাশ থেকে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন শুভ্র –
.
না।ও কোথাও যাবে না।তোমার কিছু বলার থাকলে ওর সামনেই বলো শ্রেয়া।আমার লাইফে রোদের চেয়ে পার্সোনাল কিছু নেই। রোদ ব্যতীত অন্যকোন মেয়ের সাথে আমার প্রফেশনাল কথা থাকতে পারে কিন্তু পার্সোনাল কখনোই নয়। তাছাড়া এখন দুটোর বেশি বাজে এখনও কিছু খাই নি ও।।একটু পর আমার ক্লাস সো ওকে এখনই খাওয়াতে হবে….তুমি প্লিজ যা বলার এখানেই বলো…নয়তো বলার দরকার নেই।
.
আমি ততক্ষণে শুভ্রর চাটনির বাটিটিও সাবার করে চলেছি…চামিচ দিয়ে চাটনীগুলো নাড়তে নাড়তে শ্রেয়ার দিকে আড়চোখে তাকালাম আমি।বেচারী যে অস্বস্তির চূড়ান্তে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না আমার।।কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে মুখ কাঁচুমাচু করে কিছু বলতে গিয়েও আমার দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো শ্রেয়া।।কপাল হালকা কুঁচকে অবাক চোখে বলে উঠলো সে-
.
তুমি ঠিক আছো রোদ?এতো চাটনী খাচ্ছো কেন?ক্যান্টিনের চাটনী যে টক সেটা তুমি এমনি কি করে খাচ্ছো??শরীর খারাপ করবে তো…
.
শ্রেয়ার কথায় নিজের হাতের দিকে তাকালাম আমি। সত্যি তো!! আজ নির্ঘাত পেট ব্যাথা হবে আমার।।চাটনীর বাটিটা আস্তে করে টেবিলে রাখলাম….জোড় করে একটা হাসি দিয়ে উত্তরটা দিবো ঠিক তখনই পাশ থেকে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো শুভ্র-
.
সমস্যা নেই শ্রেয়া। প্রেগনেন্সিতে এসব চলে…
.
“প্রেগনেন্সি” শব্দটা শুনেই আমি আর শ্রেয়া চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।শ্রেয়া বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো-
.
প্রেগনেন্সি মানে?রোদ তুমি প্রেগনেন্ট?তোমার বিয়ে হয়েছে?কিন্তু কবে?আমরা তো কেউ জানি না।।
.
আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি। শুভ্র যে এমন একটা কথা কেন বললো কে জানে??আমার অস্বস্তিকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতেই আবারও বলে উঠলো শুভ্র-
.
এক্চুয়েলি হুট করে বিয়ে হয়েছে তো তাই জানো না৷। ওর হাজবেন্ড একটু বেশিই ডেস্পারেট কিনা।।ওকে জোড় করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে…
.
জোড় করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেললো??কি ডেঞ্জারাস!!! (অবাক হয়ে) আপনারা কিছু করলেন না??(আমার দিকে ফিরে)কি করে তোমার হাজবেন্ড?? কোনো গুন্ডা টুন্ডা নয় তো??
.
ওর হাজবেন্ড এই ভার্সিটিরই টিচার শ্রেয়া।।তবে গুন্ডামোও একটু আধটু করে….তবে আগের তুলনায় কম।।বিয়ে করেছে তো…বাচ্চা বউ সামলাতেই সময় যায়… এসব গুন্ডামো করার সময় কই বলো?(মুচকি হেসে)
.
কিহ!!(অবাক হয়ে) রোদের বর আমাদের ভার্সিটির টিচার??ভার্সিটির টিচার হয়ে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেললো??কি অদ্ভুত!!
.
কি আর করবে বলো??ভালোবাসা মানেই পাগলামো তা কি আর এসব টিচার,, ডাক্তার দেখে কমে যায়??তাছাড়া যখন তুলে নিয়ে গেছে তখন ওর হাজবেন্ড এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিলো।।রিসেন্টলি টিচার হয়েছে….এইতো ২০ থেকে ২৫ দিন হবে।।
.
২০ থেকে ২৫ দিন??এই কয়েকদিনে তো শুধু আপ….(চোখ বড় বড় করে) আপনি??আ আ আপনিই ওর হাজবেন্ড??
.
শুভ্র হাসলো।একটু নড়ে চড়ে বসে খাবারটা আমার দিকে ঠেলে দিয়ে খেতে ইশারা করেই বলে উঠলেন –
.
হুম আমিই ওর হাজবেন্ড।। তো শ্রেয়া,কি খাবে বলো?রোদের পক্ষ থেকে তোমায় খাওয়ানোর দায়িত্ব আজ আমার….
.
শ্রেয়া কিছু না বলে ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো উনার মুখে।।তারপর চুপচাপ উঠেই ক্যাফিটেরিয়া থেকে বেরিয়ে গেলো সে।।শুভ্র ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ইগনোর করে আমার খাওয়া নিয়ে পড়ে গেলো।।আমিও চুপচাপ উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।। একটা মেয়ের মন কি সুন্দর ভেঙে খানখান করে দিলেন উনি।।শ্রেয়ার নজরে দেখলে উনি বড্ড নির্দয়…আর আমার নজরে দেখলে??পুরো আস্ত এক ভালোবাসা….যে ভালোবাসার চাদরে আমাকে মুড়িয়ে দিচ্ছেন ক্রমাগত।।আমার ভাবনার পথেই টেবিলের নিচে দুইপা দিয়ে আমার পা দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন উনি-
.
আমি তোমার ভাই??তো আমাদের বাচ্চাকে কি মামু ডাকা শিখাবে??ডাফার!!(রাগী চোখে)
.
আ আমি যখন বলেছিলাম তখন তো ভাই ই ছি.. ছিলেন।(ভয়ে ভয়ে)
.
আমি কখনোই তোমার ভাই ছিলাম না৷।তুমিই এক ডাফার ছিলে যে প্রতি সেন্টেসে দু’বার করে ভাইয়া ডাকতে….ইচ্ছে তো করতো ধরে আছাড় দিই।।আমি কি তোমাকে বলেছি কখনো যে আমায় ভাইয়া ডাকো… মাথামোটা কোথাকার৷। আর কখনো এমন ব্লান্ডার করলে …… আজ ক্যান্টিনে আছো বলে বেঁচে গেলে।।এবার নাও খাও…. আমার খাবারগুলোও তুমি ফিনিশ করবে এটাই তোমার শাস্তি।।নাও স্টার্ট ডার্লিং…
.
এ এতো গুলো?? (করুণ চোখে)
.
আমার কথায় উনি মুচকি হাসলেন যার অর্থ “নাও ইউ আর গন বেইবি”
.
?
.
রাত কটা বাজে জানি না৷। পরম শান্তিতে ঘুমের রাজ্যে সাঁতার কাটছিলাম আমি।।কিন্তু সেই শান্তিটাকে ভেঙেচুরে ফোনটা ভেজে উঠলো তীব্র আওয়াজে।বিরক্তি নিয়ে ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে ক্লান্ত কন্ঠে বলে উঠলেন শুভ্র-
.
রোদপাখি?
.
হুম…
.
ঘুমোচ্ছো?
.
হুম…
.
একটু বারান্দায় আসবে, প্লিজ?
.
কককেন?(ঘুমু ঘুমু কন্ঠে)
.
তোমায় একটু দেখবো একটু আসো…আমি নিচেই দাঁড়িয়ে আছি…একটু আসবে?
.
আমি ঘুমের ঘুরেই আধবোজা চোখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।। ঘুমগুলো যেনো দু’চোখ চেপে ধরেছে আমার।।কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকেই বলে উঠলাম –
.
এবার যাই?ঘুমাবো!!
.
বেশি ঘুম পাচ্ছে?আরেকটু থাকবে?তোমাকে দেখে আজ চোখটা যেনো জোড়াচ্ছেই না আমার।।কেনো যেনো মনে হচ্ছে আর হয়তো দেখতে পাবো না তোমায়।।
.
কি সব বলছেন আপনি??এমন কথা কেন বলছেন??
.
কিছু না।। যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
.
হুম…
.
কথাটা বলেই কোনোরকম বিছানায় গিয়ে আবারও ঘুমের রাজ্যে ডুবে গেলাম আমি।।ঘুমের মাঝেই যেন শুনতে পেলাম কানের কাছে কেউ একজন বলে চলেছে- “ভালোবাসি রোদপাখি।অনেক বেশি ভালোবাসি।”সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই দেখি চিত্রা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে বিছানায়।।আমি মুচকি হেসে ওর দিকে তাকালাম ।। মাথার মধ্যে যেনো ” ভালোবাসি ” কথাটা ঘোরপাক খাচ্ছে।।আচ্ছা?কাল রাতে উনি সত্যি এসেছিলেন নাকি আমার স্বপ্ন ছিলো?কথাটা ভেবেই ফোন চেক করলাম ঝটপট।।নাহ….সত্যিই এসেছিলেন উনি।।ফোনটা পাশে রেখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম আমি-
.
কি রে?এতো সকাল সকাল আমার বাসায়? কাহিনী কি?
.
……………………..
.
কি ব্যাপার?মুখ ফুলিয়ে রেখেছিস কেন??হয়েছেটা কি??
.
………………………
.
এই তুই এই মুহূর্তে আমার বাসা থেকে বের হ।চুপ করে বসে থাকার হলে রাস্তায় গিয়ে চুপ করে বসে থাক।।আমার সামনে নয়।।তুই কি বলবি নাকি চড় খাবি কোনটা??
.
রোদ…..(কাঁদো কাঁদো গলায়)
.
একদম ন্যাকামো করবি না।।কি হয়েছে বল।।
.
ওই স্যার আবারও…
.
আবারও কি?(ভ্রু কুঁচকে)
.
আবারও চুমু দিয়েছে আমায়…..(কান্না কান্না গলায়)
.
চিত্রার কথায় আমি অবাক হলেও স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলাম-“অহ” আমার ওহ কথাটা ওর ঠিক পছন্দ হলো না বলেই মনে হলো।।করুণ চোখে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই মরাকান্না জুড়ে দিলো।।আমি বিছানায় পা ঝুলিয়ে ওর কান্না মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি।।শিশির স্যার থাকলে হয়তো এই কান্নামাখা মুখ দেখে সেই ভুলটা আবারও করতো…..করতে হয়তো বাধ্য হতো!!!
.
.
পুরো ভার্সিটি চষেও শুভ্রকে খুঁজে পেলাম না আমি।।রাতুল ভাই বা সাকিব ভাইও বলতে পারছেন না কোথায় আছেন উনি।।একটা জলজ্যান্ত মানুষ এভাবে হাওয়া হয়ে যায় কিভাবে শুনি??বিরক্ত হয়ে আবারও ফোনটা কানে নিলাম আমি।।গলা শুকিয়ে আসছে আমার….হার্টও বিট করছে হাজার গতিতে…
এবারও কি ফোনটা বন্ধ পাবো উনার??কিন্তু নাহ…এবার আর নিরাশ হতে হলো না আমায়।।ফোনটা রিং হলো এবং ওপাশ থেকে শান্ত আর গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন শুভ্র-
.
বিজি আছি রোদপাখি।পরে কথা বলছি।
.
বিজি মানে? যতো ব্যস্ততায় থাকুক না কেন…আগে এটা বলুন,, আপনি কোথায় আছেন??আমি আপনাকে কতো খুঁজেছি জানেন??
.
আমি চিটাগং আছি।। প্রজেক্টের কাজে এসেছি।জানি না কবে ফিরবো।।দু থেকে তিনদিন লেগে যেতো পারে।।এবার ফোনটা রাখো মিটিং রুমে আমি….
.
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলেন উনি।।সাথে সাথেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো আমার।।উনার জন্য এতো কষ্ট হচ্ছে যেন হাজার বছর দেখি না উনাকে।।কতোদিন উনার নেশা ভরা চাহনী দেখি না আমি।।ইশশ…এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে আমার??কথাটা গুলো ভাবতেই গালের উপর দু’ফোটা জলের অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম আমি….
.
#চলবে….