Monday, October 6, 2025







তুমি রবে ৫৭

তুমি রবে ৫৭
.
.
মাহি বারবারই আশফির এই অত্যন্ত মেজাজ দেখে আঁতকে উঠছে। কখনো সে এত ক্রোধের স্বীকার হয়নি কারো কাছে। আর আশফির রাগান্বিত চোখদুটো যে সব থেকে বেশি ভয়ংকর। মাহি দাঁড়িয়ে কান্না করছে অনবরত। আশফি বিছানার ওপর মাথাটা নিচু করে বসে আছে পা ঝুলিয়ে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর আশফি বেশ স্বাভাবিক সুরে কথা বলে উঠল।
– “তুমি বাসায় চলে যাও কাল। আমার সঙ্গে কোনোদিনও বাস করতে পারবে না তুমি। ফোন দাও তোমার বাড়িতে। বলো, কাল সকালেই যেন এসে তারা তোমাকে নিয়ে যায়।”
কথাগুলো একদম তিরের মতো গিয়ে বিঁধল মাহির বুকে। সে তাকিয়ে দেখল আশফির স্থির দৃষ্টি মাটিতে। আশফি বলল,
– “আসলে আমাকে বোঝার মতো ক্ষমতা তোমার নেই৷ না ভুল বললাম। আমিই ব্যর্থ আর অযোগ্য তোমাকে বোঝাতে আর তোমার জন্য।”
মাহি কান্নাটা থামানোর চেষ্টা করে বলল,
– “আমি তো আপনাকে স্বার্থপর বলিনি।”
আশফি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। মাহির কাছে এগিয়ে এসে বলল,
– “তোমার বিচার বিবেচনা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে তোমার পাশে আমাকে যায় না। আমার আজকের রাগকে তুমি তুলনা করেছো তনুজার ব্যাপারটার সঙ্গে৷ মানে আজকের পরিস্থিত আর রাগ সেদিনের পরিস্থিতি আর আমার রাগ কীভাবে কম্পেয়ার করতে পারলে আমি তা ভেবেই…! ওই সময়ে তোমার সঙ্গে যে আচরণগুলো করেছি তা আমার সত্যিই রাগের আচরণ ছিল। তোমার ওপর কেন এত ক্ষিপ্ত হয়েছিলাম সেটাও বুঝতে পারোনি! তুমি যত বেশি আমার সঙ্গে সময় নিয়ে ছিলে আমার পাশে, তত বেশি আমাকে কোনো এক অদৃশ্য কণ্ঠ এসে জানান দিচ্ছিল বারবার তোমাকে আমি পাবো না কোনোদিনও। আর এটা আমার কানে বাজতেই আমার রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিল। আর সেটাই প্রকাশ করে ফেলেছিলাম তোমার ওপর। নিজের অর্জিত সম্মানকেও আমি সত্যি খুব ভালোবাসি। তাই বলে তোমার…! না থাক, আর কিচ্ছু বলে বোঝাব না তোমাকে। আমি সত্যিই ব্যর্থ তোমাকে বোঝাতে।”
মাহি যেন কথা হারিয়ে ফেলল। ঝাপসা দৃষ্টিতে আশফির চোখের দিকে চেয়ে রইল কতক্ষণ। আশফির হাতটা ধরতে চেষ্টা করল সে। সেই সুযোগটুকু আশফি তাকে আর দিলো না। সোফার ওপর থেকে জ্যাকেটটা তুলে নিয়ে দরজার মুখে দাঁড়িয়ে মাহিকে আজ রাতের শেষ কথা বলে গেল সে,
– “ভাবনাটা আজ পরিবর্তন করলাম। আর আটকে রাখার ইচ্ছা নেই। যেতে পারো।”
আশফি রুমের বাইরে পা বাড়াতেই মাহি ছুটে গেল তার পিছে। পেছন থেকে কতবার ডাকল তাকে। আশফি একটাবারও পিছু ফিরে তাকাল না। দম বন্ধ হয়ে আসছে মাহির। তবে কি সব শেষ হয়ে গেল? নিমিষের মাঝে এই সম্পর্কটা শেষ করা আদৌ সম্ভব? সে বলে গেল তাকে আর ধরে রাখার ইচ্ছা নেই। যার অর্থ মাহি তার জীবনে থাকা বা না থাকাতে আশফি আর ভাববে না! মাহি পিছিয়ে এসে সোফার হাতলটা ধরে দাঁড়িয়ে পড়ল। স্তব্ধ আজ সেও।
.
.
মাহতীম পাগলের মতো বোনের নাম্বারে ট্রাই করে গেল হাজারবার। কোনোভাবেই ফোন রিসিভ হচ্ছে না। সব কিছু গুছিয়ে নিতে গিয়ে সে বড্ড দেরি করে ফেলেছে বোনটার সঙ্গে দেখা করতে। বোনের শ্বশুরবাড়িতে হুট করে যাওয়াটাও যে অস্বাভাবিক দেখায়। আর সব থেকে বড় কথা তারা হয়তো জানেও না তার বোনের কোনো একটি ভাই আছে। কিন্তু তার বোনটাকে নিয়ে যা চলছে তাতে সে আর এক মুহূর্তও ঘরে বসে থাকতে পারছে না। এদিকে রাত দশটা বাজে। মেয়েটাকেও একা ঘরে ফেলে সে যাবে কী করে বাইরে? কিন্তু বোনটার কাছে না যাওয়া অবধি সে শান্তি পাচ্ছে না। হঠাৎ করেই মাহতীমের মনে পড়ে গেল তার ওপরের ফ্ল্যাটের একজন পড়শীর কথা। যার সঙ্গে মেহরিন আজ কাল সকাল বিকাল খুব সময় কাটায়। সে বেশিরভাগ সময়টাতে বাচ্চাদের প্লে গ্রাউন্ডে সময় কাটায় বাচ্চাদের সঙ্গে। সেখান থেকেই মেহরিন তার সঙ্গ ভীষণ উপভোগ করে। কিন্তু তার সঙ্গে মাহতীমের সেই যে একদিন কথা হয়েছিল! এরপর তো আর তাদের মাঝে কোনো কুশল বিনিময়ও হয়নি। কী করে তার সহায়তা চাইতে যাবে সে? প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে তার মাথা টেনশানে। ফয়সাল আর তৌহিদের বাসাও এখান থেকে বহুদূর। তাদের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত বারোটা ওভারও হতে পারে।

প্রায় বিশ মিনিট ধরে মাহতীম ব্যালকনিতে বসে নানান চিন্তা করতে থাকল। শেষমেশ সে উঠে তার ওপরের ফ্ল্যাটে গিয়ে ডোরবেল বাজাল। দু’মিনিট পর দরজার ওপারের ব্যক্তি দরজা খুলে মাহতীমকে দেখে বেশভাবেই চমকে গেল। তার কিছু বলার পূর্বেই মাহতীম মুখটা খুব বিব্রত করে বলল,
– “খুবই দুঃখিত আমি মিস, এত রাতে বিরক্ত করার জন্য।”
– “সমস্যা নেই। কিছু প্রয়োজন?”
মাহতীম সহজে যেন তার সাহায্যের কথাটি বলতে পারছে না। দরজার ওপাশের ব্যক্তিটি বলল,
– “কোনো সমস্যা? আচ্ছা আপনি ভেতরে আসুন।”
– “আমি একটা বিপদে পড়ে সাহায্য নিতে এসেছি মিস।”
– “ঐন্দ্রী।”
– “স্যরি! ঐন্দ্রী আপনি কি আমার মেয়েটিকে কিছৃ সময়ের জন্য আপনার কাছে রাখতে পারবেন? আমাকে জরুরিভাবে বের হতে হবে। না বের হলেই নয়। ওকে একা রেখেও যেতে পারছি না আমি।”
– “হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আপনার ওয়াইফ? মানে উনি কি অসুস্থ?”
মাহতীম মুহূর্ত সময় চুপ থেকে তারপর বলল,
– “আমি ডিভোর্সড।”
– “ও আই অ্যাম স্যরি! আমি আসছি আপনার সঙ্গে। মেহরিন কি ঘুমিয়েছে?”
– “হ্যাঁ ঘুমিয়েছে। কিন্তু ঘন্টা দুই পরেই ঘুম ভেঙে যেতে পারে। আপনি থাকুন। আমি ওকে নিয়ে আসছি।”
– “না না, আপনাকে আর কষ্ট করে ওপরে আসতে হবে না। আমি আপনার সঙ্গে আসছি চলুন।”
– “কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আপনার কাছে। অনেক বড় উপকার করলেন।”
– “প্লিজ আমি খুব বিব্রত হচ্ছি৷ এভাবে বলবেন না।”
ঐন্দ্রী মাহতীমের সঙ্গে এসে ঘুমন্ত মেহরিনকে কোলে তুলে নিয়ে চলে গেল নিজের রুমে। মাহতীম আর সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে গেল। তার গন্তব্য মাহির শ্বশুড়বাড়ি। তাতে যে যা খুশি ভাবুক। তার ছোট বোন! তার জীবনে ভালোবাসার সর্বোচ্চ পর্যায়ে যার স্থান। তার এত বড় কঠিন সময়ে কোনোভাবেই সে তাকে একা থাকতে দেবে না।
.
.
রাত প্রায় বারোটার ওপাশে। একটি কক্ষের দুজন স্থায়ী বাসিন্দা এখন দু’টি প্রান্তে। আশফি এখন তার রুমের পাশের রুমটিতে। যেখানে তাদের ভাই আর বন্ধুমহলের সঙ্গে আড্ডা চলে। কাউচে শুয়ে আছে সে নির্ঘুম চোখে। মনটা পড়ে আছে পাশের রুমের সেই মানুষটার কাছে, যে মানুষটি তার জীবনের সুখের নীড়। যে নীড়ে থাকলে সে জীবনের প্রতিটা ব্যর্থতা, প্রতিটা গ্লানি, শত সুখ হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা নিমিষে ভুলে গিয়ে থাকতে পারে। আর আজ তাকেই সে চলে যেতে বলেছে তার কাছ থেকে। বলেছে হয়তো ঠিকই, কিন্তু সে জানে সে পারবে না তাকে যেতে দিতে। কিন্তু এ মুহূর্তে ইচ্ছাও করছে না সেই নীড়ে গিয়ে ঠাঁই নিতে। আজ আশফির আবেগী মন বলছে – সুখ মুহূর্তটি বড্ড হিংসুক। তার জীবনের সুখ, সুখ নিজেই সহ্য করতে পারে না। তাই তো সব ভালো হয়েও কিছুই ভালো হলো না। সব পেয়েও প্রাপ্তির সুখ পেলো না সে।
.
সোফাটির ঠিক সেখানেই বসে মাহি অপেক্ষা করতে থাকল সেই মানুষটার জন্য, যে মানুষটিকে সে পাবে না এমন কিছু জেনেও দিন রাত শুধু প্রার্থনা করে গিয়েছিল জীবনের শেষ মুহূর্তটুকুতেও যেন আল্লাহ পাক তার সম্পদ করে তাকে উপহার দেয় ওই মানুষটিকে। আর আজ সেই প্রার্থনা কবুল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ধরে আর রাখতে পারল না বোধহয় সেই সম্পদটিকে। কী করে পারবে? সে তো এই প্রার্থনা করেনি কখনো। যেন জীবনের শেষ মুহূর্ত অবধি ওই মানুষটিকে সে নিজের করেই পায়। হয়তো করলেও পেতো না সে তাকে। কারণ সে আজ উপলব্ধি করতে পেরেছে। তার মতো অধম কোনো নারী ওই কাচ কাটা হীরার যোগ্য নয়, যে হীরা সে বিনা পরীশ্রমে লাভ করেছিল। সে সত্যিই খুব বেমানান তার পাশে। তার অসীম প্রেম পাওয়ার উপযুক্তও নয় সে। না হলে কি আর আজ এত বড় ক্ষতি সে করতে পারতো তার?

সোফাটা ছেড়ে মাহি উঠে দাঁড়াল। আজ এ বাড়িতে পুলিশ এসেছে। কাল আবার আসবে। এরপর যখন পত্রিকার শিরোনামে থাকবে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার আশফি মাহবুবের স্ত্রী নুসরাত মাহি, তখন হবে সব থেকে বড় প্রলয়ের দিন ওই মানুষটার জীবনে। তার এত বড় আঘাত মাহি কী করে সহ্য করবে? প্রশ্নটি মাথার মধ্যে বারবার পুনরাবৃত্তি হতে থাকল তার। এ নিয়ে ভাবতে ভাবতেই মাহি বেরিয়ে গেল রুম থেকে। বাড়ির প্রতিটা সদস্য নিজ নিজ ঘরে বিশ্রামে অথবা ঘুমে। কাউকে ডাকার ইচ্ছাও নেই তার। দরজাটা খুলে সে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে। মূল ফটকের সামনে এসে গেটম্যানকে দেখল সে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। গেটের চাবিটির অর্ধেক ঝুলে বেরিয়ে আছে তার পকেটে। মাহির তাকেও ডাকতে ইচ্ছা করল না। আর ডাকলে হয়তোবা মাহিকে যেতে দেবে না সে। চাবিটি তার পকেট থেকে তুলে গেট খুলে অনায়াসে বেরিয়ে এলো সে। গেটম্যান কিচ্ছুটি বুঝল না। নিরাশ্রয় পথিকের মতো সে রাস্তার ধার ঘেষে চলতে থাকল সামনে। মাত্র পনেরো মিনিটে সে হাঁপিয়ে উঠল। তার তো হাঁটার অভ্যাস আছে প্রচুর। পা জোড়া যেন কেমন ভেঙে আসতে চাইছে। হঠাৎ এত কেন দূর্বল লাগছে তার? তবু সে থামল না। হাঁটতে হাঁটতে বহুদূর সে চলে এলো। সে আজ ফিরবে না নিজের বাড়ি। এখান থেকে হিমুর নতুন বাসাটা কাছে। সেখানেই যাবে সে। বায়পাসে উঠতেই কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগল তার। মাথা যন্ত্রণায় ছিঁড়ে পড়ছে যেন। মাইগ্রেন ব্যথার অসুখটা তার খুব ছোট থেকেই। বোধহয় সেই করুণ যন্ত্রণারই আগমন ঘটল। এত যন্ত্রণাবোধ হতে থাকল যে সে বায়পাসের ধারেই হড়বড়িয়ে বমি করে ফেলল সে। এখন তার অবস্থান যেখানে, সেখান থেকে আশফির বাসার দূরত্ব আধা ঘন্টা। মাহির ইচ্ছা করল সেখানেই ফিরে যেতে। কিন্তু মনে পড়ে গেল আশফির শেষ কথাগুলো। বায়পাসের ধারে হাঁটু দুটো উঁচু করে মাটিতেই জাপটে বসে পড়ল। হেঁটে হিমুর বাসাতে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় তার পক্ষে। কিন্তু এভাবে বসে থাকাও মানে বিপদ। কষ্ট করে সে উঠে দাঁড়াল একটা সিএনজি, রিক্সা বা ট্যাক্সির আশাতে। ফোনটাও আশফি ভেঙে ফেলেছে যার জন্য আনতে পারেনি।
কয়েক মিনিট পর সে আবার বসে পড়ল বায়পাসে। হাঁটুতে মুখ গুঁজে পড়ে রইল। আর তার কয়েক মিনিট পরই একটি গাড়ির হেড লাইটের আলো এসে মুখে পড়ল তার। কিন্তু চোখ তুলে তাকানোর সামর্থ্য আর ইচ্ছা কোনোটিই হলো না। সেই গাড়ি থেকে একটি মানব ধীর পায়ে হেঁটে আসতে থাকল তার দিকে। মানবটির কাছে দূর থেকে মাহির অবয়ব দেখে কেন যেন তার মনে হলো, খুব পরিচিত কোনো একজন ওইখানটাতে বসে আছে। মুখটা সে একটিবার দেখতে পেয়েছিল তার হাঁটুর মাঝে মুখ গোঁজার পূর্বে। একটুখানি দূরে দাঁড়িয়েই সে দেখতে থাকল হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে থাকা মাহিকে। কিছুক্ষণ বাদে যখন মাহি নীরস মুখটা তুলল, তখন মাহির মুখটা দেখে সেই মানবটির বুকের মধ্যে যেন প্রবল বেগে ধাক্কা খেয়ে উঠল। অস্ফুটে সে ডেকে উঠল মাহিকে,
– “হিরণ!”
ডাকটা অস্পষ্ট হওয়াই মাহি তা শুনতে পেলে না। কিন্তু তার পাশে একটি মানব ছায়া দেখতে পেয়ে সেদিকে নজর পড়ে সেই মানবটির মুখটা দেখে তার নির্জীব দৃষ্টি একদম স্থির হয়ে গেল নিমিষে। পলকও পড়ল না তার। মাহি হঠাৎ করেই হেসে উঠল তাকে দেখে। মানুষটার পা থেকে মাথা অবধি মাহি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকল। চুলে তার স্টাইল ব্রাশ, চোখে রিবনের চশমা, ফর্মাল স্যুট প্যান্ট। সেই চিরচেনা পুরোনো বিলাসপ্রিয় মানুষটি আজ তার এত কাছে! আর একটি ক্ষণও অপেক্ষা করল না সে। উঠে দাঁড়িয়ে এক ছুটে মাহি তার বুকে ঝাপিয়ে পড়ল।
.
.
রাত দুটোর সময় আশফি উঠে নিজের রুমে এলো। রুমে ঢুকে মাহিকে না দেখে ব্যালকনিতে উঁকি দিলো। সেখানেও না পেয়ে ভাবল বাথরুমে সে। বিছানাতে বসে নিচে পড়ে থাকা মাহির ফোনটা তুলে অন করল। তার রাগটা বশে আনা জরুরি অন্তত মাহির সামনে। এভাবে তাকে দেখে মাহি খুব আতংকিত ছিল। তার সেই ভয় আশফি তার চোখজোড়াতেও দেখতে পেয়েছিল। মেয়েটা একটু বেশিই সরল। সেই সরল মেয়েটাকে এভাবে আতংকে ফেলে তাকে দূরে সরে থাকতে দিতে পারবে না সে।

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরও মাহিকে বের হতে না দেখে আশফি বাথরুমের দরজাতে নক করল। কিন্তু তখন সে খেয়াল করল বাথরুমের দরজা খোলা। চিন্তা তখনই জড়িয়ে ধরল আশফিকে। সারা বাড়িতে, বাগানে কোথাও খুঁজতেও দেরি করল না সে। দিশানকে দ্রুত জাগিয়ে তুলে তাকে ফোন করতে বলল দিয়াকে। মাহি বেরিয়ে গেছে বাড়ি থেকে এ বিষয়ে আশফি নিশ্চিত হয়েছে গেট খোলা পেয়ে। দিশান ফোন করে জানল মাহি পৌঁছায়নি সেখানে। আর তার আগে আশফি মাহির বাসাতে লিমনের কাছে ফোন করেছিল। সেখানেও যায়নি মাহি। কাউকে যেন আগেই কিছু না জানায়, সে এ কথা বলে লিমনকে নিষেধ করে দিয়েছে। হিমুর কাছেও খোঁজ নিতে বাদ থাকল না। রাত তিনটার সময়ই আশফি আর দিশান বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। খোঁজাখুঁজির প্রায় ঘন্টাখানেকের মাথায় এক অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো আশফির ফোনে। সে ফয়সাল নামে পরিচয় প্রদান করে আশফিকে বসুন্ধরার একটি অ্যাপার্টমেন্টের ঠিকানা পাঠাল তাকে। মাহি এখন সেখানেই অবস্থান করছে। আশফির মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে বাসাতে থাকা অবস্থাতেই। ড্রাইভ করছিল দিশান। তাকে ঠিকানাটা দিয়ে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে বলল। সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর হয়ে গেল। আলো প্রায় ছড়িয়ে গেছে শহরে। মাহতীমের অতিথি পরিচয়ে আশফি সেখানে ঢুকতে পারে। আশফি আসার পূর্বেই মাহতীম সিকিউরিটির কাছে তার নাম এন্ট্রি করে এসেছিল। শুধু টেনশানে থাকবে বলেই মাহতীম ফয়সালের মাধ্যমে আশফিকে তার বোনের খবরটি পাঠিয়েছে। মাহতীমের ফ্ল্যাটের ডোরবেল চাপতেই ফয়সাল এসে দরজাটা খুলে দিলো। মাহিকে বাসায় নিয়ে আসার সময়েই মাহতীম কল করে আসতে বলে ফয়সালকে।

আশফিকে দেখে সে ভেতরে আসতে বলে মাহতীমকে ডাকল। আশফি তখন লিভিংরুমে ঢুকেই এক অভাবনীয় দৃশ্য দেখে হঠাৎ স্তম্ভিত হয়ে পড়ল। তার স্ত্রী এই মুহূর্তে একটি সুপুরুষ ছেলের বুকের মাঝে পড়ে আছে। তাও আবার একই ক্লোজেট দুজন গায়ে জড়িয়ে। দিশান নিজেও একদম নিশ্চুপ তাদের দেখে। তবে সে দুজনের মুখের আদল দেখে কিছু নির্ণয় করার চেষ্টা করল তাদের মধ্যকার সম্পর্ককে। আশফির দিকে তাকাতেই দিশান তার ভাইয়ের ঈর্ষান্বিত চাহনি আর তার থেকে বেশি স্তম্ভিত মুখ দেখে মৃদুস্বরে তাকে বলল,
– “কন্ট্রোল ইয়্যোর সেল্ফ ভাই!”

………………………………
(চলবে)
– Israt Jahan Sobrin

ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ