তুমি রবে ৪১

0
1884
তুমি রবে ৪১ . . বিয়ের মুহূর্তগুলো প্রতিটা মানুষের জীবনেই চিরস্মরণীয় কিছু মুহূর্তের মতোই। যা মানুষের মৃত্যুর আগ অবধি মনে থাকে। কত ইচ্ছা ছিল আশফির, যে মানুষটা তার জীবনে সব থেকে বেশি বিশেষ কিছু ছিল। তাকে ঠিক সেই বিশেষভাবেই তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নেবে। ইচ্ছা তো পূরণ হলো ঠিকই। তবে খুবই সাধারণভাবে। প্রতিটা বর যেমন কনের বাড়িতে এসে বিয়ে করে। তাকেও ঠিক সেভাবেই বিয়ে করতে যেতে হবে কনের বাড়িতেই। শুধু বিয়ের কোনো সাজ-সজ্জা থাকবে না। সেই বিশেষ মানুষটাকেও নববধূ বেশে আর দেখা হবে না। মাহি সাফ জানিয়ে দিয়েছে। কোনো বিয়ের আয়োজন সে করতে দেবে না। তবে অভর্থ্যনা জানানোর জন্য প্রোগ্রামের আয়োজন করতে হবে। মাহির কোনো চাওয়া-পাওয়াই আশফি সঠিকভাবে বুঝতে পারছে না। . অফিস থেকে ফিরে আশফিকে যেতে হলো তার দাদার বাড়িতেই। বিয়ে না হওয়া অবধি তাকে ওখানেই থাকতে হবে কিছুদিন। বাড়িতে আসার পর এক থমথমে পরিবেশ উপলব্ধি করতে পারল সে। দিশানকে কী এক দরকারি কাজে দাদা ফোন করে ডেকে নেন৷ তারপর দিশানের সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি তার। দাদার সঙ্গে কী কথা হলো তা জানার জন্যই দিশানের ঘরে গেল আশফি। রুমে ঢুকেই শুনতে পেলো দিশান ফোনে কাউকে বলছে, – “তুমি শুনতে পাচ্ছো আমি কী বলছি? এ ছাড়া আর কিছু করার নেই আমার। আর আমরা তো পালিয়ে গিয়ে চিরকাল সেখানেই থাকব না। ফিরে তো আসবই না কি?” আশফি হেঁটে এসে বিছানায় বসলো। দিশান তাকে দেখে ফোনের ওপাশের ব্যক্তিকে বলল, – “আমি এক ঘন্টা সময় দিচ্ছি। জলদি ভাবো৷ তারপর আমাকে ফোন দাও।” ফোন রাখতেই আশফি জিজ্ঞেস করল, – “ঘটনা কী?” দিশান ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে চেঁচিয়ে উঠে বলল, – “পাগল হয়ে গেছে এ বাড়ির মানুষ। সিনেমা করে ফেলছে আমাদের জীবন তারা।” – “আস্তে! এত চিল্লাচ্ছিস কেন? কী হয়েছে আগে বল।” চোখের পাতা আঙুল দিয়ে কিছুক্ষণ চেপে রেখে কিছুটা শান্ত করল নিজেকে সে। তারপর ভাইকে বলল, – “ঐন্দ্রী সুইসাইড অ্যাটেম্পট করেছিল।” এমন কিছু হতে পারে তা বোধহয় আশফি জানতো। তাই ক্ষণিকের জন্য সে বিস্মিত হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, – “দাদার মতামত এখন কী?” – “আমি মানছি ঐন্দ্রীর সঙ্গে যেটা হয়েছে সেটা মেনে নেওয়া কোনো মেয়ের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই বলে তাকে সুস্থ করার দায়িত্বও নিশ্চয় আমাদের পরিবারের নয়।” আশফি গম্ভীর আওয়াজে বলল, – “খোলাখুলিভাবে বল।” – “দাদা দেখতে গিয়েছিলেন। আঙ্কেল কথা বলেননি শুরুতে তাঁর সঙ্গে। দাদা যখন তাঁর কাছে মাফ চেয়েছেন আঙ্কেল কেঁদে ফেলেছেন। আর এরপর দাদা কী করেছেন জানো?” আশফি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল দিশানের দিকে। – “ঐন্দ্রী এই বাড়িতেই নাতবউ হয়ে আসবে; আমার বউ হয়ে। মাহি, ঐন্দ্রী কারো সঙ্গেই তিনি কোনো অন্যায় করবেন না। অন্যায় করবেন শুধু নাতি আর ছেলেদের সঙ্গে। আমি পারব না ভাই। আমার পক্ষে সম্ভব না মাহবুব সাহবে হওয়া। আশফি মাহবুবও আমার পক্ষে হওয়া সম্ভব না। আমি তা জানিয়ে দিয়েছি দাদীবুকে। দিয়ার ব্যাপারে তাঁরা যদি অনায়াসে মেনে নেয় তো ভালো। না হলে আমি চলে যাব।”
হঠাৎ নিচে থেকে শায়খের ডাক শোনা গেল। চিল্লিয়ে সে আশফি আর দিশানকে ডাকছে। যখন দুজন শুনতে পেলো ‘দাদার শরীর ঠিক নেই।’ দু’ভাই ছুটে চলে এলো নিচে। রুমে ঢুকে দেখল জেবা আবরারের পায়ের তালু ঘষছে। হীরা কাঁদছেন আর হাতের তালু ঘষছেন। শাওন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। আধা ঘন্টার মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছাল। আশফি, দিশান, শায়খ তাঁকে ধরে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে নিলো। রাত হলে এ বিষয়ে খবর পেলেন আলহাজ। মাহিকে সঙ্গে করে আলহাজ আর মমিন এলেন তাঁকে দেখতে। মিনহাজ সেই হসপিটালেই মেয়েকে নিয়ে ছিলেন। তিনিও ছুটে এসেছেন আবরারকে দেখতে। আজ যেন মাহির নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে বড় পাপী বলে মনে হচ্ছে। তার ক্রোধ আর জিদ থেকে করা কর্মের ফল আজ সবাইকে ভোগ করতে হচ্ছে। এত নীচ তো সে নয়। প্রতিটা মানুষের সুখ কেড়ে নিয়ে সে নিজে ভালো থাকতে চায়নি। এখানে আসার পর ঐন্দ্রীর খবরটাও সে শুনেছে। হসপিটালের বাইরে এসে দিয়াকে সে ফোন করে সবটা জানাল। এদিকে দিয়া নিজেও এক বেহাল পরিস্থির মাঝে। মাহির কাছে এত কিছু শোনার পর তার শুধু এটাই মনে হলো। দিশানকে সে হারিয়ে ফেলছে। মাহি কাঁদতে কাঁদতে তাকে বলল, – “কত বড় স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি আমি দেখেছিস। আজ আমার সবকিছু আমি ফেরত পাচ্ছি অন্যের অনিষ্ট করে।” মাহির এ কথাগুলো শুনতেই দিয়ারও নিজেকে স্বার্থপর বলেই মনে হলো৷ এই মানুষগুলোর এই খারাপ অবস্থার কথা একবারও তার মাথায় না এসে শুধু মনে হতে থাকল তার, সে তার প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে ফেলবে কিনা। দিয়া নিজের কান্না আটকিয়ে বলল, – “একদম ভেঙে পড়িস না। ধৈর্য রাখ। আমি এখনি আসছি।” আশফি মেডিসিন আনার জন্য বাইরে বের হতেই দেখতে পেলো মাহিকে। মাথা ঝুঁকিয়ে সিঁড়িতে বসে সে কাঁদছে। একই অপরাধবোধে যে আশফি নিজেও অনুতপ্ত। তবুও তার মন চাইছে না এই মানুষটাকে ফিরে পাওয়ার সুযোগটা ছাড়তে। নিজেকে প্রচন্ড স্বার্থপর লাগছে তার। আজ তার জন্য না হয়তো ভাইটাকে কষ্ট পেতে দেখতে হয়! মাহির সঙ্গে কোনো কথা না বলে সে চলে গেল। মাহি তাকে দেখেও একবার মুখ তুলে তাকাল না তার দিকে৷ সব কিছু যেন ছেড়ে-ছুড়ে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করছে তার। কিছুক্ষণ পরই দিয়া এলো। মাহির সঙ্গে কথা বলে ঐন্দ্রীকেও একবার দেখে এলো সে। আবরারকে দেখতে যাওয়ার সাহস নেই তার। আর দিশানের সামনেও কেন যেন তার যেতে ইচ্ছে করছে না। মাহির থেকে আবরারের শরীরের খোঁজ নিয়ে কিছুক্ষণ মাহির সঙ্গে থেকে সে চলে গেল। ঠিক যাওয়ার মুহূর্তে তার দেখা হয়েছিল দিশানের সঙ্গে। কিন্তু একদমই তাকে এড়িয়ে ট্যাক্সিতে উঠে যায় সে। দিয়ার এই নতুন আচরণ বুঝতে দিশানের এক মুহূর্ত সময়ও লাগল না। প্রচন্ড অসহ্য লাগছে তার সবকিছু। সামনে বসে থাকা কান্নারত মেয়েটিকে দেখেও তার কষ্ট হচ্ছে। দিয়ার এই এড়িয়ে চলা আচরণও তাকে প্রচন্ড কষ্ট দিচ্ছে। . . – “শরীর ঠিক না হতেই কোথায় যাবে? কাল যে অবস্থা হয়েছিল তোমার! এখন পর্যন্ত খাবার খেতে পারছো না।” – “হেঁটে আসি ভালো লাগবে। কতগুলো বছর নাতিদের নিয়ে মর্নিও ওয়াকে বের হই না। যাও তো ওদের চারজনকে ডেকে ওঠাও।” – “শাওনের সামনে পরীক্ষা। পড়তে বসেছে ও। শায়খ তো ডিউটিতে।” – “ওদের দুজনকেই ডাকো।” হীরা স্বামীর আদেশ মতো উপরে গিয়ে আশফি আর দিশানকে ডেকে ওঠালেন। রাতে ঠিক মতো কেউই ঘুমায়নি। তবু দাদা ডেকেছে শুনে আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে উঠে এলো তারা। সেই আগের মতোই দাদার দু’পাশে দুজন হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে গেল বাইরে। কালকের দিনের সব গ্লানি যেন তাদের তিনজনের মাঝে থেকেই হঠাৎ উবে গেছে। তারা যখন ঘরে ফিরল তিনজনকেই প্রচন্ড প্রফুল্ল দেখে অনেকটা স্বস্তি পেলেন হীরা। আশফি নিজের রুমে যাওয়ার পর দিশান গেল দাদার কাছে। – “দাদা লেমোনেড না খেয়ে চলে এলেন যে?” আবরার ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলেন তাঁর ছোট নাতি হাতে লেবুর শরবত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। – “ভুলে গিয়েছিলাম। দে আমার কাছে।” দিশান শরবতটা দিয়ে চলে যেতে গেলে আবরার তাকে পেছন থেকে ডেকে বললেন, – “তোজো! কী বলবি বল?” দিশান এসে সোফাতে বসলে তাকে উঠে এসে বিছানাতে বসতে বললেন তিনি। দিশান তাঁর কাছে এসে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে কান্না আটকে রাখা কণ্ঠে তাঁকে বলল, – “আমাকে মাফ করে দিন দাদা। আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আর দিতে চাইও না।” আবরার বললেন, – “তোদের ধারণা আমি তোদের সাথে অন্যায় করছি। তোর বাবার সাথেও অন্যায় করেছি তাই না?” – “না, আমাদের সাথে কোনো অন্যায় করেননি আপনি। আর বাবার কথা আমি জানি না। তাঁকে আর আমাদের মাকে আমরা দু’ভাই কোনোদিনও ছোট বড় করে দেখিনি। দুজনেই সমান অপরাধী আমাদের কাছে। সব থেকে বেশি কষ্ট পেতে দেখেছি আমি ভাইকে। তাও ভাইয়াকে কখনো তাদের বিপরীতে একটা শব্দ বলতে শুনিনি। এমনকি আমি বললেও রাগ করেছে আমায়৷ বাবা-মায়ের ভালোবাসা আমরা দু’ভাই আপনার আর দাদীবুর থেকে পেয়েছি। কিন্তু তারপরও আমি আমার ভাইকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি। দাদা! আপনি মত বদলাবেন না। ঐন্দ্রী হয়তো মানতে পারবে না আমাকে। কিন্তু আমি বলছি, তার যা প্রাপ্য তা সে আমার থেকে পাবে।” . এটুকু বলেই দিশান বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। কাল রাত্রে বলা দিয়ার কথাগুলো ছিল দিশানের জন্য সব থেকে বড় শিক্ষা। এই বাড়ির ছেলে হয়ে যা সে উপলব্ধি করতে পারেনি, তা দিয়া খুব সুন্দরভাবে উপলব্ধি করেছে। আর সে তা আরও ভালোভাবে বুঝিয়েও দিয়েছে দিশানকে। রুমে এসে ঢুকতেই আশফিকে পেলো সে। আশফির পাশে এসে বসার পর আশফি তাকে বলল, – “কেন বললি না ওর কথা?” – “বললে কী হতো? সেই তো বলতো এসব ভালোবাসা জীবনে আসে আর যায়। কপালে যাকে লিখে রেখেছেন আল্লাহ, সেই তো আসবে জীবনে স্থায়ীভাবে।” আশফি উঠতে যেতেই দিশান তার হাতটা টেনে ধরল। বলল, – “মাহিকে ফিরিয়ে দিও না। তুমি ভালো থাকবে না।” – “আমি স্বার্থপর অন্যসব ক্ষেত্রে। কিন্তু আমার ভাইয়ের ক্ষেত্রে নই। ছাড় আমাকে।” – “ঐন্দ্রীও নির্দোষ।” – “আর দিয়া দোষী?” দিশান ভাইয়ের হাতটা ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলল, – “ওই মেয়েটাকে আমি পৃথিবীর সব থেকে বড় বোকা জানতাম জানো। কাল রাতে যখন ও মেসেজ করেছিল ফ্রি হয়ে কল করার জন্য। আমি ভেবেছিলাম আজ থেকেই হয়তো ওকে আমি সারাজীবনের জন্য ওকে পেতে যাচ্ছি।” দিশান বিছানার পাশ থেকে একটা আংটির বক্স হাতে নিয়ে আশফিকে বলল, – “নিজেদের মতো করে সব শুরু করব বলে কোনো কিছুর কম রাখতে চাইনি৷ এই আংটিটাও বাসায় ফেরার পথে কিনে এনেছিলাম। রাতে যখন ওর সাথে কথা হলো তখন সে আমাকে কী বলেছে শুনবে? আমি যেন আর সবার মতো স্বার্থপর না হই। দাদা কাল হঠাৎ কী কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তা আমি না ভাবলেও ওই বোকা মেয়েটা ঠিক বুঝেছে। আমাদের বাবাকে নিয়েও একদিন এমন একটা ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। সেদিন সারা গ্রামের মানুষ দাদাকে ছিঃ! ছিঃ! করেছে সবাই। আজও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। আবারও তাকে সবাই ছিঃ! ছিঃ! বলবে। আর এসব ভাবতে গিয়েই দাদা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তুমি নিশ্চয় এটা বুঝতে পেরেছিলে তাই না ভাইয়া?” – “হুঁ।” এরপর দিশান নিশ্চুপ। আশফি কিছু সময় পর বলল, – “দিয়ার সঙ্গে আমি কথা বলব। তার আগে আমাকে দাদার সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি ভেবে অবাক হচ্ছি ঐন্দ্রী কী করে রাজি হতে পারল এ প্রস্তাবে? ওর কি মনে হলো না ওকে করুণা করা হচ্ছে? ও কি একবার আমার সঙ্গেও কথা বলতে পারতো না?” – “ভাগ্যিস বলেনি। বললে আজ আবার তুমি আর মাহি আলাদা হয়ে যেতে। আর এবার হলে তোমাদের আর কোনো সুযোগ ছিল না।” – “খুব খুশি হয়ে কিন্তু সে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। তাই আমাকে না পেলে তার যে খুব কষ্ট হবে সেটা অন্তত বলিস না।” – “তুমি কেন ওকে বুঝতে চাইছো না? ওর কি এখানে এই রাগ থাকাটা অস্বাভাবিক? কখনোই না। ও ওর জায়গাতে একদম ঠিক। আর তুমি খুব ভালো করেই জানো ওর কাছে তুমি কী? আর এইযে বলছো ওকে ফিরিয়ে দিয়ে ঐন্দ্রীকেই বিয়েটা করতে। তাতে ঐন্দ্রীর কতটা ভালো হতো? বিয়েটা হওয়ার পর ওর সঙ্গে কী হতো সেটা ভেবে এই কথাগুলো বলো।” আশফির কাছে এগিয়ে এসে ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল দিশান, – “এই গল্পটাতে কাউকে না কাউকে তো বলির পাঠা হতেই হবে ভাই। সবাইকে তো খুশি করতে পারবে না তুমি। আমিও পারব না।” – “গল্পটার শুরু আমাদের নিয়ে। বলির পাঠা তোরা কেন হবি?” – “কারণ আমিও চাই না আমার ভাইটা কারো অভিশাপ নিয়ে বাঁচুক। আমি চাই না আমার ভাইয়ের জীবনটাও আমাদের বাবার মতো হোক। দিয়া খুব স্ট্রং ভাইয়া। আমার থেকেও। ও যখন আমার সঙ্গে কথা বলছিল আমি ওর কণ্ঠে এক ফোঁটাও কান্নার আভাস পাইনি। দাদা ঠিকই বলেছেন। এমন ভালোবাসা জীবনে বহুবার আসে আবার চলেও যায়। এগুলো কিছুই না। ঐন্দ্রীকে মানিয়ে নিতে হয়তো সময় লাগবে। কিন্ত হয়ে যাবে৷ এক সঙ্গে থাকতে থাকতে মায়া, ভালোবাসা এগুলো তো হয়েই যায়। তাই না ভাইয়া?” – “বড় আমি। তুই না। এগুলো বাদ দে।” . আশফি সেদিন সত্যিই দিয়াকে ফোন করেছিল। দিয়া সেদিন হাসতে হাসতে বলেছিল, – “মাত্র কয়েক মাসের সম্পর্ক আমাদের ভাইয়া। এই সম্পর্কের মায়া বেশিদিন থাকে না। অস্বীকার করব না। কষ্ট লাগছে। কিন্তু তা কিছুদিন পরই সয়ে যাবে। আপনার কাছে আমি নিজেই ফোন করতাম। ভাইয়া আপনার আর মাহির মাঝে যা হয়ে গেছে, এরপর একটা স্বাভাবিক সম্পর্কে আসতে একটু সময় লেগে যাবে হয়তো। কিন্তু আমি জানি আপনি ওকে খুব চান। তাই বলছি, ওকে যেতে দেবেন না আর। ও কিন্তু এই বিয়ে নিয়ে এখনো দোনোমনার মাঝে আছে৷ যে কোনো সময় হয়তো বলে বসবে এই বিয়েটা ও করতে চায় না। তাই আমার আর দিশানের এই ব্যাপার ওর কাছে প্লিজ এখন বলবেন না। ও তাহলে সত্যি এই বিয়েটা জীবনেও করবে না।” দিয়া কথাগুলো শেষ করেই ফোনটা রেখে দিলো৷ এখন তার কান্না আটকানো মুশকিল। এখন যে সে কোনোভাবেই কান্না ধরে রাখতে পারছে না। দরজাটা আটকে মুখে বালিশ নিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে আরম্ভ করল সে। ওদিকে আশফি এই ছোট ছোট দুটো মানুষের ত্যাগ দেখে আর মাহিকে আবার হারিয়ে ফেলার শঙ্কাতে তার যেন পাগলপ্রায় অবস্থা। না পারবে সে মাহিকে হারাতে আর না পারবে সে ভাইটার এই কষ্ট সহ্য করতে। ভাইটা তার কাছে যত নাটকই করুক, সে জানে দিশানটা কী পরিমাণ পাগল দিয়ার জন্য। এদের মাঝে তার ঐন্দ্রীর কথাও একবার মনে পড়ল। সে তো পুরোপুরি নির্দোষ। মাঝখান থেকে একই কষ্টের সামলি তাকেও হতে হলো শুধু তার আর মাহির ভুল সিদ্ধান্তগুলোর জন্য। সেদিন যদি মাহি তাকে ফিরিয়ে না দিতো, আর সেই রাগের বশে সে যদি আংটিটা ঐন্দ্রীকে পরিয়ে না দিতো তবে আজ এত ঘোলাটে হতো না পরিবেশটা। . দু’দিন পর মাহি হঠাৎ দিয়ার বাসায় এলো। দিলরুবা দরজা খুলে মাহিকে দেখে তার চোখে মুখে প্রচন্ড রাগ ফুটে উঠল। কিন্তু কিছু প্রকাশ করল না সে। দিয়ার খোঁজ করতেই খুব গম্ভীর কণ্ঠে সে উত্তর দিয়ে চলে গেল। মাহি কিছুটা বুঝতে পারল তার রাগটা। কিন্তু রাগটার কারণ কী তা সে বুঝল না। দিয়া পিসির সামনে বসে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। মাহি একবার ডাকল তাকে। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়েছে সে। মাহি বিছানাতে এসে বসলো। আবার উঠে এসে দিয়ার চোখ থেকে চশমাটা খুলে টেবিলে রাখতেই দিয়া চোখ খুলে তাকাল। – “কখন এলি? ডাকবি না আমাকে?” – “ভেবেছিলাম ঘুমিয়েছিস।” মাহির মলিন মুখটা দেখে দিয়া বেশ কড়া কণ্ঠে তাকে বলল, – “যদি আর একবার বলিস এই বিয়েটা তুই করতে পারবি না। বিশ্বাস কর, চারটা থাপ্পড় মেরে তোর সাথে আমার বন্ধুত্বই নষ্ট করে দেবো।” মাহি বিছানায় বসে কেঁদে ফেলল। কান্নারত কণ্ঠেই বলল, – “এত পরিমাণ অপরাধবোধ নিয়ে কী করে থাকব বল তো ওর সঙ্গে?” – “তুই কেন বিশ্বাস করছিস না ভাইয়া তোকে প্রচন্ডভাবে চায় তার জীবনে।” – “আর ঐন্দ্রী?” – “সেও সুখী থাকবে।” – “কোনোদিনও না। আমি দেখেছি ওর প্রতি ঐন্দ্রীর কী পরিমাণ দূর্বলতা।” – “ভালোবাসা পেলে ওই দূর্বলতা কাটতে বেশি সময় লাগবে না রে।” – “আরে কার ভালোবাসা পাবে ও? আমি সেদিন দেখেছিলাম আশফির প্রতি ওর চাউনি। কী পরিমাণ অপরাধবোধ হচ্ছিল সেদিন তোকে বোঝাতে পারব না।” হঠাৎ ফোন বেজে উঠল দিয়ার। দিশান কল করছে তাকে। আজ কাল দিশানের থেকে কল এলে বুকের ভেতরটা কেমন ধক্ করে উঠে তার। এখন এই ফোনকলটা তাকে ভীষণভাবে এড়িয়ে চলতে হয়। কে জানতো এই দুটো মানুষের সঙ্গে তাদের দুজনকেও জ্বলতে হবে? মাহির মতোই দিয়াও ঠিক একইভাবে ঐন্দ্রীর কথা ভেবেছে। ভেবেছে দিশানের দাদার কথা। এমনকি মাহির কথাও ভেবেছে দিয়া। দাদার এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে যদি আশফি আবার সেই ঐন্দ্রীকেই গ্রহণ করে? – “ফোনটা তুলছিস না কেন? ঝগড়া করেছিস আবার দুজন?” – “না।” – “তো রিসিভ কর।” দিয়া অনিচ্ছাকৃতভাবেই ফোনটা রিসিভ করল। ওপাশ থেকে দিশান বলল, – “পাঁচ মিনিটের জন্য একবার নিচে এসো।” – “কেন?” – “আসতে বলছি এসো। আসার পরই তো দেখতে পাবে।” – “আমি ব্যস্ত আছি।” দিশান এবার রেগে গিয়ে বলল, – “চলেই তো যাব। এরপর তো আর এভাবে কোনোদিন ডাকব না। যদি আসতে বেশি কষ্ট হয় তো আমি নিজেই আসছি তোমার বাসায়। তখন কিন্ত আটকাতে পারবে না।” দিয়া কিছুক্ষণ পর ‘আসছি’ বলে ফোনটা কেটে দিলো। মাহিকে বলল, – “বস, আমি নিচে থেকে আসছি।” – “ও কি নিচে?” – “হ্যাঁ।” মাহি একটু হেসে বলল, – “আচ্ছা পাগল একটা।” দিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে নিচে এলো। লিফ্ট ওপেন হতেই দিশানকে দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও দিয়ার বুকটা ফেঁটে কান্না আসার উপক্রম। যে ছেলে সবসময় মাথা থেকে পা অবধি ব্র্যান্ড নিয়ে চলে সে আজ একটা টি শার্ট আর ট্রাওজার পরে দেখা করতে চলে এসেছে। ক্রিম ছাড়া চুলগুলো এলোমেলোভাবে পরে আছে কপাল জুড়ে। দিশান তাকে দেখে দিয়ার বের হওয়ার পূর্বেই লিফ্টে ঢুকে লিফ্ট বন্ধ করে দিলো। দিয়া তাকে কিছুই বলল না। দিশান খুব কাছে এসে দাঁড়াল তার। দিয়ার মলিন মুখটা একটু স্পর্শ করে বলল, – “এই বোকা মেয়েটা যে এত শক্ত তা সত্যিই কখনো বুঝিনি। আজ কাল সে আমার ফোন রিসিভ না করেও থাকতে পারে।” দিয়া বেশ স্বাভাবিক সুরে বলল, – “ফোনের কাছে থাকি না। পরে এসে আর ব্যাক করা হয় না।” – “তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সাথে রেগুলারলি কথা বললে তোমাকে ছাড়তে পারব না? ঐন্দ্রীকে বিয়ে করতে পারব না?” দিয়া চকিতে একবার দিশানের দিকে তাকাল। শীতল চোখ মেলে তাকিয়েছে সে দিয়ার দিকে। – “এই মেয়েটা যে কী পরিমাণ আসক্ত এই দিশানের প্রতি তা এই দিশান খুব ভালোভাবেই জানে। সেদিন যা বলেছিলে তা খুবই সত্য দিয়া। আমি যদি ঐন্দ্রীকে বিয়েটা করতে রাজি না হই তবে আজ সত্যিই ঐন্দ্রীকে আমার ভাই তার বউ করে নিয়ে আসবে শুধু আমার ভালোবাসা আর ভালো থাকা রক্ষা করার জন্য। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি জানো। এই সময়তেও এত ভালো একটা মানুষ আছে এই দুনিয়াতে? যাদের জন্য আমাকে ছাড়লে তারা কেউই তোমার আপন নয়।” – “দিশান আমি কারো চোখের কাঁটা হয়ে যেতে চাই না ওই ঘরে৷ আমাকে তোমার দাদা তোমার দাদীবু যতবার দেখতো ততবার তাদের মনে পড়তো ঐন্দ্রীর সাথে হওয়া অন্যায়টা। ওনারা আমার সঙ্গে কোনোদিনও সুখী হতে পারতেন না। আর তুমি কেন এসেছে? আমি কিন্তু যা বলার সেদিন রাতেই বলে দিয়েছি। নতুন করে আমার মুখ থেকে আর হ্যাঁ শুনতে পারবে না। আমি খারাপ নেই। আর খারাপ থাকবও না৷ এই যে এখন তুমি যে কষ্টটা অনুভব করছো, দু’দিন পর এই কষ্টটা আর অনুভব হবে না। আমিও ভুলে যাব আর তুমিও ভুলে যাবে। আমিও একদিন অন্য কারো ঘর করব আর তুমিও সেদিন ঐন্দ্রীকে নিয়ে একটা হ্যাপি ফ্যামিলি তৈরি করে ফেলবে। তাহলে কেন এত সময় ব্যয় করছো?” দিশান শুধু চেয়ে থাকল দিয়ার মুখটার দিকে। তারপর পকেট থেকে আংটিটা বের করে দিয়াকে বলল, – “একদিন তুমিও কারো ঘর করবে আর আমিও, তাই না? একদিন এই কষ্টটা আমিও আর অনুভব করব না আর তুমিও না। খুব বাস্তবসম্মত কথা ছিল।” দিয়া চেয়ে আছে অন্যদিকে। আসার পর থেকে সে দু একবার ছাড়া দিশানের মুখটার দিকে আর তাকায়নি। দিশান তাকে বলল, – “একটু তাকাও আমার দিকে।” দিয়া তাকাল ঠিকই তবে তার দৃষ্টি নিচে। দিশান এবার তার আরও কাছে এসে বলল, – “এখন এই চোখে পানি কেন?” দিয়া ভারী কণ্ঠে বলল, – “কোথায় কাঁদছি?” কথাটা বলেই এবার দিয়া চোখের পানিটুকু ছেড়ে দিলো। দিশান তার হাতটা ধরে বলল, – “সেদিন রাত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভেবেছিলাম আজকে হয়তো এই মিঠাই তার মিঠাইওয়ালার কাছেই থাকবে। ভেবেছিলাম ভাইয়ের আগে বিয়ে করে ভাইকে বলব আজ থেকে আমি তোমার বড় ভাই। কারণ তোমার আগে আমার বিয়ে হয়েছে। আমাদের ছেলে মেয়েগুলোও তোমাদের ছেলে মেয়ে আসার আগেই আনব।” দিয়া মাথাটা দিশানের বুকে ঠেঁকিয়ে নিচু রেখে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠল এবার। দিশানের চোখেও এবার পানি। শুধু দিয়ার মতো গাল বেঁয়ে পড়তে দিচ্ছে না সে। তার কান্না জড়ানো কম্পিত কণ্ঠে বলল, – “এই আংটিটা কিনেছিলাম আজকের দিনে এই হাতের আঙুলে পরাব বলে। সেই অধিকার এখন আমার না থাকলেও আমি পরিয়ে তবেই এখান থেকে যাব। যেদিন অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধবে সেদিন না হয় খুলে ফেলে দিও।” দিয়া বাঁধা দিলো না দিশানকে। আংটিটা পরানোর পর এবার দুজনের কান্না আরও বেড়ে যায়। দিশান কাঁদতে কাঁদতে বলল, – “কাগজে কলমে লেখা বৈধ স্ত্রী না হলেও আমি তোমাকে আজীবন আমার স্ত্রী এর স্থানেই রাখব। হয়তো সেই অধিকারবোধ দেখাতে পারব না। তবুও আমি মানি আর মানব।” দিয়া কান্নার চোটে আর কথা বলতে পারল না। দিশান আরও বলল, – “বলব না আমাকে ভুলে যেও। আমি পারব না কখনো তোমার পাশে অন্য কাউকে দেখতে। তোমাকে না পাই কিন্তু আমার জায়গা তুমি কখনো কাউকে দিও না দিয়া। তাকে সুখে রেখো। কিন্তু আমাকে ভুলে নয়। ভালো থাকো আর নিজের স্বপ্নও পূরণ করো। চেয়েছিলাম আমি নিজে আমার এই মিঠাইয়ের সব স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নেবো।” দিশানও এবার আর কথা বলতে পারল না কান্নার জন্য। কাঁদতে কাঁদতে বলল, – “ভালো থেকো।” লিফ্ট ওপেন করে দিশান বেরিয়ে যেতে গিয়েও আবার ফিরে এসে দিয়াকে জাপটে ধরে তার ওষ্ঠে দিয়ার অধর বন্দি করে নিলো। এবারও দিয়া তাকে বাঁধা দিতে পারল না। . . ঠিক সেই দিনটা চলে এলো। ঐন্দ্রী সুস্থ হওয়ার পরই বিয়ের দিনটা নির্ধারিত হয়। ঐন্দ্রীর বাবার কাছে আশফি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। আর দিশান চেয়ে নিয়েছে ঐন্দ্রীর হাত। তবে এই বিয়েতে দিশানও কোনো আয়োজন চায় না। কিন্তু বিয়েটা এক জায়গাতেই হবে। আর সেটা আবরারের বাড়িতেই। এ প্রস্তাবে মাহি রাজি হলো না। যে আত্মীয়দের সামনে তাকে অপমান করা হয়েছিল তাদের প্রত্যেকে এ বিয়েতে নিমন্ত্রিত। তাদের সামনেই এ বিয়েটা আশফিকে করতে হবে। আবরার তাই-ই নির্দেশ করলেন নাতিকে। আশফিসহ পরিবারের প্রত্যেকে প্রথমে মাহির বাসায় এলো। শুধু জেবা আর হীরা ছাড়া। আসার পর দুজন দু রুমে বসে কবুল পাঠ করে বিয়ের কাগজে সই করল। দিয়া সেদিন তার নানা অসুস্থ, তাকে নানা বাড়ি চলে আসতে হয়েছে। এই বাহানায় সে এলো না মাহির বিয়েতে। বিয়েটা হওয়ার পর দিশান আশফিকে জড়িয়ে ধরে বলল, – “কতগুলো তনয়ার হৃদয় ভাঙলে জানো?” আশফি হাসতে পারল না ভাইয়ের কথাতে। কারণ তার ভাইটা দারুণ এক চরিত্রে অভিনয় করছে এখন৷ যা সে জেনেও আর বুঝেও একদম নিরুপায়। মায়ের অনুরোধে মাহি একটা সুন্দর শাড়ি পরেছিল শুধু। তাছাড়া এক ফোঁটা সাজও তার চেহারাতে পরেনি। আশফি নিচে এসে দাঁড়িয়ে আছে শায়খ আর দিশানের সঙ্গে। সমস্ত কিছু এত বিষাক্ত লাগছে তার কাছে যা সে কাউকে বলেও প্রকাশ করতে পারছে না। সন্ধা নামার পরই মাহি নেমে এলো নিচে। আশফি একবার ঘুরে তাকিয়ে আর চোখ ফেরাতে পারল না সে। এ কেমন সাজ তার? বিয়েতে সে বউ সাজতে রাজি নয় তা মেনে নেওয়া যায়। তাই বলে কালো শাড়ি পরতে হবে তাকে? দিশানও তাকিয়ে আছে মাহির দিকে। তার মিষ্টি মুখটাতে আজ কোনো হাসি নেই। তবে চোখে তার গাঢ় কাজল আর সেই চোখের চাহনি খুব তীক্ষ্ণ। এই মুহূর্তে আশফির বিক্ষিপ্ত মেজাজ আরও বেশি ক্ষিপ্র হয়ে উঠল। মাহি আসতেই সে গাড়িতে উঠে এসে বসলো। প্রত্যেকে খুব কাঁদছে মাহিকে জড়িয়ে ধরে। শুধু কান্না নেই তার চোখে। . বাড়ির সামনে আসতেই আশফি গাড়ি থেকে নেমে কারো সাথে কোনো কথা না বলে, মাহির জন্যও অপেক্ষা না করেই হেঁটে চলে গেল ভেতরে৷ জেবা আর হীরা দাঁড়িয়েছিল তাদের বরণ করার জন্য। কিন্তু আশফির ক্রুদ্ধ দৃষ্টি দেখে তাকে আর দাঁড়াতে বলার সাহস পায়নি তারা। মাহিকে নিয়ে প্রথমে হীরা নিজের ঘরে বসতে দিলো। মিনহাজ আর তার পরিবার চলে এসেছে। ঐন্দ্রী খুব সুন্দরভাবে ব্রাইডাল সাজে এসেছে। তার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি। সে এসেই সবার সঙ্গে খুব সুন্দরভাবে কুশলতা বিনিময় করে শাওনের কাছে জিজ্ঞেস করল, – “মিসেস আশফি মাহবুব কোথায় ডিয়ার?” – “বিগ ভাবি?” – “হুঁ।” – “দাদীবুর ঘরে।” – “আমাকে কি নিয়ে যাওয়া যাবে? তোমার বিগ ভাবির সঙ্গে একটু কথা বলতাম।” – “কেন নয়? চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।” মাহি সোফায় হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে বসেছিল। – “এ কী সাজ তোর?” আচমকা আওয়াজে চমকে তাকাল মাহি। আর তাকাতেই ঐন্দ্রীকে বধূ সাজে দেখে এক বড়-সড় ধাক্কা খেলো সে। ঐন্দ্রী বলল, – “চমকে উঠলি যে?” মাহি নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে তাকে জিজ্ঞেস করল, – “কেমন আছিস?” এর উত্তরে ঐন্দ্রী তাকে যা বলল তাতে মাহি আর এক মুহূর্ত ওই জায়গাতে থাকতে পারল না। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো সে যা হওয়ার হবে, তবু এই বাড়িতে সে ফিরে আসবে না। কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে কেউ একজন তার হাত টেনে ধরল। এরপরের ঘটনার জন্য মাহি ছিল একদমই অপ্রস্তুত। …………………………… (চলবে) – Israt Jahan Sobrin এত বড় লেখার মাঝে অনেক সময় জানা বানানও ভুল হয়ে যায়। তাই অনুরোধ ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে