তুমি রবে ৩৭
.
.
– “এটা কী করে করতে পারে উনি? উনি কেন ঐন্দ্রীকে রিং পরিয়ে দিলো?”
– “গাঁধার মতো প্রশ্ন করো না তো দিয়া। জানলেই তো সেদিন কী হয়েছে ওদের মাঝে।”
– “তাই বলে আংটিটা ঐন্দ্রীকে পরাতে হবে?”
– “তোমার বান্ধবী কী বলে এসেছিল শোনোনি?”
– “হ্যাঁ শুনেছি। তুমি কেন বাঁধা দিলে না তোমার ভাইকে?”
– “আশ্চর্য! আমি কী করে বাঁধা দেবো? আমি কি জানতাম এমন কিছু করবে ও? তাহলে আমি এখন জিজ্ঞেস করি তুমি কেন সোমের ব্যাপারটা জানালে না আমাকে আগে থেকে? তাহলে তো কিছু চিন্তাভাবনা হলেও করতে পারতাম।”
– “আরে আজব! আমি কি জানতাম সোম এমন কিছু করে গেছে? মাহি অনেকবার বলতে চেয়েছিল কিন্তু আমরাই তখন শুনিনি।”
– “তাহলে আমার ব্যাপারটাও এবার বিচার করো।”
– “রাগের বশে যে কাজটা উনি করেছে তার কি কোনো সমাধান আছে?”
– “হ্যাঁ নেই বলেই তো সেদিন রুমে ভেতর ভাঙচুর করেছে। কারণ ভাইয়া নিজেও বুঝতে পেরেছে যে রাগের বশে একটা মস্ত বড় বোকামি সে করে ফেলেছে।”
দিশানের কাঁধে হাত রেখে দিয়া তার পিছে এসে দাঁড়াল। বেশ ব্যথিত সুরে বলল,
– “এখন কী হবে ওদের বলো তো?”
– “মাহির কী হবে আমি জানি না। কিন্তু ঐন্দ্রী যে খুব শীঘ্রই আমার ভাবি হচ্ছে তা জানি। কারণ আমার ভাই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার মানুষ নয়। ও যেহেতু বলে ফেলেছে ঐন্দ্রীকে ও বিয়ে করবে তাহলে নিজের কথা রাখার জন্য আর ঐন্দ্রীকে হার্ট না করার জন্য হলেও ঐন্দ্রীকেই বিয়ে করব ও। মাহি যদি ফিরেও আসতে চায় তাও সে মাহিকে গ্রহণ করবে না।”
দিয়া আর বলার মতো কিছু খুঁজে পেলো না। দিশান ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,
– “সেদিন সকালে ও যে সোমের হাত ধরে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল ও কি শুনেছিল না ভাইয়া ইনজুরড হয়েছে? এত নির্দয় কী করে হতে পারে মানুষ?”
এবার দিয়া তার বান্ধবীর প্রতি অভিযোগটা গ্রহণ করতে পারল না। চেতে উঠে বলল,
– “আচ্ছা তখন থেকে তোমরা দু ভাই যে ওকে অথর্ব, পঙ্গু, নির্দয় বলে যাচ্ছো একবার জানতে চাচ্ছো না কেন ও হঠাৎ ওইভাবে সোমের হাত ধরে কেন চলে গেল? শুধু ভাইয়ের ব্যথা নিয়ে চিন্তিত না?”
– “সোমের সাথে ওকে যেতে দেখে আমার মাথা বিগড়ে গিয়েছিল বিশ্বাস করো।”
– “দাদু অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল সেদিন হঠাৎ করেই। আর সোম তো সেদিন আর ঢাকা ফিরেছিল না। তাই সোমও ওই খবর জানতে পেরে ও সরাসরি মাহিকে নিতে চলে আসে। আর শুধু নিজের ভাইয়ের ক্ষত দেখলে! আমরা সেদিন রাতে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখি ও ওয়াশরুমে সেন্সলেস হয়ে পড়েছিল। মাথা কেটে গিয়েছিল কতখানি। হাতের কব্জিতেও চোট পেয়েছিল।”
– “একটাবার ফোন করে বলে দেখতো বাড়িতে। যদি মেনে নাই নিতো তাহলেও বুঝ দেওয়ার মতো কিছু পেতাম। আমার ভাইটা সেই ছোট থাকতে একবার খুব কষ্ট পেয়েছিল যেদিন আমাদের মা আমাদের ছেড়ে চলে যায়। আমি তো খুব ছোট তখন। ভাইয়া মা’কে আটকানোর জন্য রাস্তায়ও চলে গিয়েছিল মায়ের পিছু পিছু দৌঁড়ে। মা সেদিন নাকি ফিরেও তাকিয়েছিল না। এসব শুনেছি দাদীবুর কাছ থেকে। আর আজ আবার দেখলাম ভাইয়ের সেই কষ্টটা।”
– “কী করে বলবে বলো তো। মাহি ওর দাদু মানুষটাকে খুব ভালোবাসে। সেদিন যখন দাদুকে দেখার জন্য আমি আর হিমু গিয়েছিলাম সেদিন দাদুর ইতিহাস যা শুনেছি তারপর তো পুরো স্তব্ধ আমরা। দাদুর প্রথম স্ত্রী মাহির দাদী নয়। উনি তারও পূর্বে একজনকে বিয়ে করেছিলেন ভলোবেসে। অনেক সমস্যার কারণে বিয়েটা গোপনে করেছিলেন ওনারা। তার ঠিক এক মাস পরই ওই দাদীর বাসা থেকে কীভাবে যেন জেনে যায় এই কথা। ওনার বাড়ির লোক ওনাকে জোর করে কোথায় যেন নিয়ে গিয়েছিল গ্রাম থেকে। দাদু পাগলের মতো ব্যবসা বাণিজ্য ছেড়ে ছুড়ে খুঁজে বেরিয়েছিলেন। কোথাও কারো কাছ থেকে কোনো খোঁজ পাননি। প্রায় সাতমাস পর যখন খোঁজ পায় তখন দাদু জানতে পারেন ওনাকে অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর চার মাসের গর্ভবতী উনি। এরপর অবশ্য দাদুর জীবন থেমে থাকেনি৷ দাদু বিয়ে করে নেন মাহির দাদীকে। বিয়ে করার পর থেকে উনি আর ওই প্রথম দাদীর খোঁজ নেননি। আর মাহির দাদীর সঙ্গে উনি এমনভাবে সংসার করেছেন যে দাদী কখনোই বুঝতে পারেননি তার স্বামী মানুষটার জীবনে প্রথম ভালোবাসা বলে কিছু ছিল। কখনোই দাদু ওনাকে কষ্ট পেতে দেননি। আর আজকে এত বছর পর দাদু হঠাৎ জানতে পারেন ওনার প্রথম স্ত্রী আজ এতগুলো বছর স্বামী ছাড়া বেঁচে ছিলেন। ওনার প্রথম ছেলে হওয়ার পর ওই সংসার উনি আর করতে পারেননি। স্বামী ভালো ছিল না। একটাই ছেলে ওনার আর তিনি এখন অ্যামেরিকা সেটেল। এতদিন বাবার বাড়ি, শ্বশুড় বাড়ি লাথি গুতা খেয়ে খেয়ে উনি বেঁচে ছিলেন৷ কিছুদিন পূর্বে ওনার ক্যান্সার ধরা পড়ে। একটা পয়সা খরচ করে কেউ ওষুধ খাওয়াতে ব্যর্থ। ছেলে এসে নিয়ে যায় তাকে অ্যামেরিকা। আর তার কিছুদিন পর ওখানেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি। এর সবটাই সর্বপ্রথম মাহি জানতে পেরেছে। এ সত্য আজ অবধি কেউ জানতো না।”
– “মাহি কী করে জানলো এসব?”
– “আসলে পুরোনো প্রেমগুলো অমর। এই ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর সবকিছু হার মানতে বাধ্য। দাদীটা এতগুলো বছরেও ভুলতে পারেনি দাদুকে। শেষ সময়ে উনি এসে একটা চিঠি লিখেছিলেন দাদুর জন্য। কিন্তু তা পৌঁছে দেওয়ার মতো ক্ষমতা ওনার ছিল না। ওনার ছেলে ওনাকে অ্যামেরিকা নিয়ে যাওয়ার পর ওনার মায়ের জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করে দেখার সময় দাদুর কিছু জিনিস আর ওনার মায়ের লেখা ওই চিঠিটা পায়। সারাজীবন মা’কে অবহেলা করে মায়ের অতীত জানার পর উনি প্রচন্ড অপরাধবোধ করছিলেন। তার বাবার কাছ থেকেও তার মা সুখ পায়নি আর সন্তানের কাছ থেকেও না। তাই মায়ের শেষ ইচ্ছা পূ্রণের দায়িত্ব নেন। দাদুর খোঁজ, তার ঠিকানা আর ফোন নাম্বার জোগাড় করলেও চিঠি পৌঁছে দেওয়ার মতো স্কোপ উনি পায়নি। তাই দাদুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করে সবটা জানায় ওনাকে। আর তা জানার পরই দাদু প্রথমবার স্ট্রোক করেন। এরপর দাদু মাহিকে একদিন রাতে ডাকে। ওই আঙ্কেলের সঙ্গে মাহির ফোনে কথা বলিয়ে দেয়। আঙ্কেলটা মাহির ফেসবুক আইডি নেম চেয়ে মাহির সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করে। মেসেঞ্জারে মাহিকে ওই চিঠিটার ছবি তুলে পাঠায় উনি। দাদু বলে ওকে চিঠিটা পড়ে ওকে শোনাতে। আর সেদিনই মাহি জানতে পারে এত কিছু। দাদীর সারাজীবন কষ্টে পার হওয়া, চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু এসব দাদু নিতে পারেননি। লাস্ট টাইম দাদু সেদিন আবার স্ট্রোক করেন। ডক্টর জানিয়েছে আর একবার এমন হলে বাঁচানো অসম্ভব। ওনার বেঁচে থাকার আগ্রহ নেই আর। দাদুর জীবনের এই অতীতগুলো আর বর্তমান দাদুর এই অবস্থার পর মাহি নিজেও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। কাউকে জানাতে পারেনি। কারণ দাদুর বারণ ছিল। এখন বলো ও কী করে সরাসরি বলতে পারতো সোমকে ও বিয়ে করতে চায় না? মাহির ভাই দাদুর পছন্দকে উপেক্ষা করে মান সম্মান নষ্ট করে একটা মেয়ের জীবনও নষ্ট করে দিয়ে চলে গেছে। ভাইয়াকে না পাওয়ার শোকে ওই মেয়েটা আজ পাগল। এত বড় অপরাধবোধ নিয়ে দাদু আজও তাদের সামনে মাথা নিচু করে চলেন। এরপর তাঁর পছন্দকে যদি মাহিও প্রত্যাখ্যান করে তাও আবার তাঁর এই শরীরের ওপর, সেখানে কী অবস্থা হতে পারে দাদুর? ভাবো একবার দিশান।”
দিশান নীরবে কথাগুলো শুনল শুধু। এরপর তার বলার মতো আর মাহিকে দোষ দেওয়ার মতো কোনো জায়গা সে পেলো না। একটা কষ্টের দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে দিশান তাও বলল,
– “আজ যদি ওই দাদীর মতোই মাহির জীবনটাও হয় তখন? সোম মানুষটা কেমন তা তোমরা এখনো জানো না।”
– “কী করার আছে এখানে? জন্ম, মৃত্যু আর বিয়ে তো আল্লাহর হাতেই। আমি তুমি কী করতে পারি? মাহি তো এখন কাঁদতেও ভুলে গেছে। সেদিন ওয়াশরুমে ঢুকে চিৎকার করে কাঁদার পর ওর চোখে আর এক ফোঁটাও পানি দেখিনি আমি। নিজেকে ভালো রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে শুধু। কারণ ও ধরেই নিয়েছে এটাই ওর জীবন।”
.
.
ট্যুর থেকে আসার পর প্রায় তিনদিন কেটে গেছে। আলহাজের শরীরটা এখনো ঠিক হয়নি। বিছানা থেকে ওঠার মতো ক্ষমতা তিনি হারিয়েছেন। সোমও তার কাজ শেষ করে বেশিরভাগ সময় এ বাড়িতেই পড়ে থাকে। মাহির অফিস শুরু হয়েছে কাল থেকেই। কিন্তু সে যেতে পারেনি৷ আজ আলহাজ ডেকে তাকে বলল অফিস আর কামায় না করতে। দাদুর সামনে মাহি একটাবারের জন্য মুখটা নারাজ রাখে না৷ বরং সোম এলে খু্ব হাসি তামাশা করে কথা বলে তার সাথে। তা দেখে আলহাজ মাঝে মাঝে হাসে। খুব সকালে ঘুম থেকে জেগে দাদুর পাশে বসে দাদুকে কিতাব পড়ে শোনাতে হয় তাঁকে। এতে দাদুর মনটা কিছুটা হলেও তৃপ্তি পায়। আজ কিতাব পড়া শেষে মাহি খু্ব অভিমানের সুরে তাঁকে একটা কথা বলল,
– “আমার ছেলেপুলে নিয়ে খেলবার শখ নেই তোমার তাই না দাদু?”
আলহাজ নাতনির অভিমান বুঝতে পেরে নিজেও কিছু উপলব্ধি করলেন৷ একজন দুজন ভালোবাসার মানুষ তাঁর জীবন থেকে চলে গেছে। তাই সে জীবনের প্রতি অনাগ্রহী হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আরও যে কতগুলো মানুষ যে তাঁকে পাগলের মতো ভালোবাসে তা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। তাদের জন্য হলেও তো তাঁর বেঁচে থাকা উচিত। নাতি, নাতনিদের সুখী জীবন, তাদের সন্তানদের নিয়ে জীবনের শেষ সময়গুলো তিনি না কাটিয়ে জীবনের প্রতি অবহেলা করছেন। এ যে তিনি অন্যায় করছেন এই মানুষগুলোর সাথে।
– “তোদের সুখ দেখেই মরব রে দাদু। আর কষ্ট পাবো না।”
মাহি দাদুর হাতটা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল।
– “যা অফিস যা। আর খুব শীঘ্রই আমি সুস্থ হবো। তোর বিয়েতে আনন্দ উল্লাস করতে হবে না?”
মাহি মুখে কৃত্তিম হাসি ফুটিয়ে মাথা নাড়াল। দাদুর ঘর থেকে বেরিয়ে দৌঁড়ে সোজা নিজের ঘরে চলে এলো। এই খুশি থাকার নাটকটাও যে প্রচন্ড কষ্টের। এত নাটক কী করে করবে সে? অফিসের জন্য তৈরি হলো মাহি। মনের কোণে এক ভীতি, এক জড়তা কাজ করছে তার। কারণ তো একটাই। আশফির মুখোমুখি হতে হবে তাকে৷ কী করে পারবে সে তার সম্মুখে বসে সারাটাদিন পার করতে? চুলগুলো খোঁপা করতে করতে ভাবতে থাকে মাহি এই কথাগুলো। এত বড় আঘাত সামলে যদি সে পরিবারকে খুশিমুখ দেখানোর নাটকটা করতে পারে তবে আশফির সামনেও নিজেকে শক্ত রাখতে পারবে সে।
মুমু অনেকবার ডেকে গেল মাহিকে সকালের নাস্তা করার জন্য। কিন্তু সেদিকে কর্ণপাত করল না মাহি। ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মুমু পেছন থেকে ডেকে তাকে বলল,
– “না খেয়েই ছুটছিস অফিসে? খেতে ডাকলাম কতবার?”
– “ভালো লাগছে না মা। অফিসে গিয়ে খেয়ে নেবো।”
– “শুধু শুধু কাহিনী করিস না তো। খেয়ে-দেয়ে তারপর যা অফিসে।”
মায়ের শেষ কথাগুলো শুনে হঠাৎ যেন মাহির মাথা বিগড়ে গেল। চেঁচিয়ে উঠে বলল সে,
– “কীসের কাহিনী দেখলে? খেতে ভালো না লাগলেও কাহিনী লাগে তোমাদের? খাওয়া-দাওয়া, গোসল, ঘুম সবই তোমাদের মর্জিতে করতে পারলে খুশি তোমরা!”
কথাগুলো বলে বেরিয়ো গেল মাহি। খাবারের টেবিলে বসা সবাই কিছু মুহূর্তের জন্য নীরব হয়ে গেল। মুমু নিজেও মেয়ের এই আচরণের অর্থ বুঝতে পারল না।
গাড়িতে উঠে বসার পর থেকেই প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে মাহির আজ। ঘরে সারাদিন বসে থাকার পরও তো কখনো কাঁদতে পারেনি। অথচ মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করার মুহূর্তটুকু, আর আশফিকে সেদিন ফেলে আসার মুহূর্তটুকু এখন মনে পড়েই চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কাঁদতে মন চাইছে তার। এই অবস্থায় সে ওই মানুষটার সামনে কী করে থাকবে?
.
.
– “আমার ঘর গোছাতে কে বলে? একটা জিনিস সহজে হাতের কাছে পাচ্ছি না। খুঁজতে খুঁজতে অফিস যাওয়ার সময় শেষ।”
নিচ থেকে হীরা ছুটতে ছুটতে এলো নাতনির ঘরে। নাতিটা তার সকাল থেকে একটা না একটার দোষ ধরে চিল্লিয়ে মাথায় করে রাখছে বাড়ি। রুমে ঢুকেই নাতির ওপর খ্যাক মেরে বলল সে,
– “কী হয়েছে রে ভাই তোমার? এত মেজাজ দেখাচ্ছো কেন? রুম তো কাল এলোমেলো করে কোথায় কোথায় পড়ে ছিলে। গুছিয়ে রাখা হয়েছে তাও ওনার পছন্দ হচ্ছে না।”
– “না পছন্দ হচ্ছে না। একটা জিনিসও আমি ঠিকঠাক খুঁজে পাচ্ছি না। কে বলেছিল আপনাকে রুম গোছাতে?”
আশফির কথায় হীরা এবার চোটে গেল। চেঁচিয়ে বলল,
– “ঘোর অন্যায় হয়েছে আমার। বিয়ে করে বউ তাড়াতাড়ি আনলেই তো পারিস। তাহলে আর এই বুড়ির সেবাযত্ন নিতে হবে না।”
আশফি আর কোনো উত্তর দিলো না হীরাকে। হীরা বকরবকর করতে করতে নিচে নেমে গেল। দশ মিনিট পর আশফি অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতেই ড্রয়িংরুমে বসে থাকা সবাই স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইল তার দিকে। দিশান রেডি হয়ে নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। ভাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
– “আরে দাঁড়াও তুমি কি এভাবে যাবে অফিসে?”
দিশান তার পরনের প্যান্টের দিকে ইশারা করল। ট্রাওজারের ওপর সে শার্ট আর স্যুট পরে চলে এসেছে। শাওন তো খিলখিল করে হেসে ফেলল। চাচি জেবা হাসতে হাসতে আশফির কাছে এসে বলল,
– “ট্যুর থেকে ফেরার পর দেখছি মনের খুব উন্নতি হয়েছে। কী করল হঠাৎ ঐন্দ্রী?”
আশফি দাদীবুর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
– “আপনি দেখলেন আমি জামা চেঞ্জ করছি তাহলে বলবেন না আমি প্যান্ট চেঞ্জ করিনি?”
হীরা এবার আরও এক ধাপ রাগ দেখিয়ে বলল,
– “একটা থাপ্পড় লাগাব কানের নিচে। আমি কি তোর জামা কাপড় চেঞ্জ করা অবধি দাঁড়িয়ে ছিলাম?”
আশফি হাতের ব্যাগটা সোফার ওপর ছুঁড়ে ফেলে দ্রুত ওপরে গেল। মিনিটের মধ্যেই প্যান্ট চেঞ্জ করে নিচে নামতেই চাচা শিহাব বলল,
– “আরে এত অন্যমনষ্ক হলে হয়?”
জেবা মুচকি হেসে বলল,
– “আর তো ক’টা দিন। বউ আসলে ঝামেলা শেষ।”
শাওন আশফির দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে বলল,
– “এত্ত দারুণ করে ঐন্দ্রী আপুকে তুমি প্রপোজ করেছো। আমাকে নিয়ে গেলে কী হতো? আমি কত মিস করছি তোমাদের ওই মোমেন্টগুলো তুমি জানো?”
দিশান তাকিয়ে রইল ভাইয়ের দিকে। আশফি কতক্ষণ পর গম্ভীরমুখে উত্তর দিলো,
– “পুষিয়ে দেবো।”
.
বেলা এগারোটার বেশি বেজে গেছে আজ অফিস আসতে। ভেতরে আসতেই একটা দৃশ্য দেখার পর আশফির মেজাজ আরও খিঁচে উঠল। রাতুল, মিলি, রূপা মাহির ডেস্কে দাঁড়িয়ে ফোনে যেন কী দেখে তার হেসে একে অন্যের গায়ে পড়ছে। মাহিকে এমন হেসে লুটোপুটি খেতে দেখতে পেয়ে আশফির মনে হলো একটা ভুল স্থানে সে নিজের অনুভূতিগুলো ব্যায় করেছে এতদিন। একটা শোক কাটিয়ে উঠতেও মানুষের সপ্তাহখানেক লাগা উচিত। কেবল অনুভূতিশূন্য মানুষই পারে এভাবে হেসেখেলে ঢলাঢলি করে বেড়াতে। এমনটাই বিচার করল সে মাহিকে। তাদের পিছে এসে দাঁড়িয়ে অনেকটা টান দিয়ে বলে উঠল সে,
– “ব্যাপক বিনোদন!”
সবাই চমকে উঠে ঘুরে তাকাল। তাকে মর্নিং জানিয়ে মাথা নুইয়ে যে যার ডেস্কে গিয়ে বসলো। তিরিক্ষি দৃষ্টিতে এক মুহূর্ত মাহির দিকে তাকিয়ে চলে গেল সে নিজের কেবিনে। কিছুক্ষণ পরই মাহি হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে আশফির কেবিনে ঢুকল।
– “দুঃখিত বিরক্ত করার জন্য। অফিস ছাড়া এটা দেওয়ার মতো কোনো সুযোগ নেই বলে অফিসে আনতে বাধ্য হয়েছি।”
এতক্ষণে আশফি দৃষ্টি উঁচু করে তাকাল। মাহির হাতের ব্যাগটার দিকে প্রশ্নবিধ চোখে তাকাতে মাহি বলল,
– “সেদিন সন্ধ্যায় যে শাড়িটা দিয়েছিলেন সেটা ফেরত দিতে এসেছি।”
আশফির শীতল দৃষ্টির মাঝেই তার প্রচন্ড ক্রোধও দেখতে পেলো মাহি। একটু ভয় পেলো সে। তবুও শাড়ির ব্যাগটা টেবিলের এক পাশে রেখে দিলো। মাহির দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আশফি বলল,
– “ডাস্টবিন ছিল না কোথাও? না কি আরও একবার অথর্বতার পরিচয় দিতে মন চাইলো?”
শান্ত কণ্ঠে মাহি জবাব দিলো,
– “আমার জিনিস হলে এতদূর কষ্ট করে বহন করে আনতাম না। জিনিসটা অন্য কারো৷ ডাস্টবিনে ফেলার মতো হলে বিন আপনার পাশেও আছে।”
কথাটা শুনতেই আশফি মুহূর্তের মধ্যে ব্যাগটা তুলে শাড়িটা বের করে নিলো। টেবিলের ওপর ছোট দানি থেকে কাচি নিয়ে শাড়ির এক পাশ কেটে হাত দিয়ে টেনে শাড়ির এক অংশ অনেকখানি ছিঁড়ে তা ছুঁড়ে ফেলল বিনের মধ্যে। একদম অবরুদ্ধ হয়ে দেখল মাহি এই দৃশ্য। আশফি চেয়ে রইল তার দিকে ঔদাসীন্য দৃষ্টিতে।
সে জানে তাকে এখন থেকে এমন আরও অনেক যন্ত্রণাকর কিছু সহ্য করতে হবে। বিষের চেয়েও তিক্ত সে এখন ওই মানুষটার চোখে। তার মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মেয়েদের কোনো যোগ্যতা নেই ওই মানুষটার মতো কাউকে জীবনসঙ্গীরূপে পাওয়ার। সেখানে সেই মানুষটা নিজে তার সুখের রাজ্যের সুখ মুঠো ভরে নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল তার সামনে। কিন্তু তা উপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে। এত বড় স্পর্ধা দেখানোর ক্ষমতা যে তার নেই। কিন্তু তাও সে দেখিয়েছে। তবে কী করে আর এই ধৃষ্টতা মানবে সেই সুখ রাজ্যের বাহাদুর?
দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের সময় মাহি মাথা যন্ত্রণায় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছিল। দৃষ্টি ছিল তার আশফির কেবিনের দিকেই। হঠাৎ দেখতে পেলো কেবিন থেকে আশফি আর ঐন্দ্রী এক সঙ্গে বেরিয়ে আসছে। একটু পর দিশানও বেরিয়ে এলো। মাহি দ্রুত সোজা হয়ে বসে কানে এয়ারফোন গুঁজে নিয়ে তারপর ডেস্কে রাখা ফাইলগুলো এলোমেলোভাবে হাতাহাতি করতে থাকল। আশফি আর ঐন্দ্রী তার পাশ দিয়ে চলে যেতেই দিশান তাকে প্রশ্ন করল,
– “লাঞ্চ করবে না?”
মাহি মুচকি হেসে ইশারায় জানালো,
– “ফোনে কথা বলছি।”
দিশান ভ্রুজোড়া উঁচিয়ে ‘ও’ শব্দ বলার মতো করে ঠোঁট চোঁখা করল। সে চলে যেতেই মাহি চোখের কোণে আসা পানিটুকু দ্রুত মুছে নিয়ে লাঞ্চ করার জন্য বেরিয়ে গেল। তার সঙ্গে এলো রাতুল আর মিলি। রেস্টুরেন্ট ঢুকে তারা একপাশে বসে খাবার অর্ডার করতেই রাতুল আর মিলি আশফি আর ঐন্দ্রীকে দেখে তাদের নিয়ে আলোচনায় পড়ল। দুজনের জুটি বেশ চমৎকার। মিলি আগে থেকেই জানতো তাদের স্যার ঐন্দ্রীকে পছন্দ করে। বিয়েটাও খু্ব দ্রুত করে নেবে তারা। এমন আরও কথা চলতে থাকল তাদের মাঝে।
.
– “আশফি তুমি হাতের ড্রেসিংটা চেঞ্জ করোনি?”
আশফি হাতটার দিকে একবার চেয়ে খেতে খেতে বলল,
– “সময় পাইনি।”
– “কী অদ্ভুত না দিশান তোমার ভাই! এতখানি কেটেছে অথচ সে এর খেয়াল রাখতেও নাকি সময় পায়নি। আর কী করে যে কাটলো তাও জানতে পারলাম না তার থেকে।”
দিশান জবাব দিলো,
– “কেটে তো গেছেই। জেনে আর কী হবে?”
মাহি দূর থেকেই আশফির কাটা হাতটা দেখতে থাকল। খাওয়া বলতে একটা বার্গার খেয়ে সে দ্রুত বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে। অফিস ছুটির আগ মুহূর্তে হৃদয় হাসান যে কিছুদিন পূর্বে পদোন্নতি পেয়েছে তার সঙ্গে মাহির কাজের কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে বেশ বড় আকারের তর্কাতর্কি হয়ে গেল। হৃদয় মাহির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এলো আশফির কেবিনে। তার অভিযোগ জানালো আশফিকে। মাহি তাকে খুব অপমান করে কথা বলেছে, একজন সিনিয়র হয়েও মাহি তাকে রেসপেক্ট করে কথা বলে না এবং নিজের কাজ ফেলে রেখে সে তার কাজের ভুল-ত্রুটি দেখে বেড়ায়। আশফি সবকিছু শুনে ডেকে পাঠাল মাহিকে। মাহি কেন তাকে রেসপেক্ট করে কথা বলে না? সবার সামনে কেন অপমান করেছে এবং নিজের কাজ ফেলে সে কেন অন্যের কাজে নাক গলিয়ে বেড়ায়? প্রতিটা প্রশ্নের কৈফিয়ত চাইলো আশফি। মাহি জবাব দিলো,
– “ওনার প্রতিটা অভিযোগ মিথ্যা। ওনার ডেক্সটপে প্রবলেম হওয়ার জন্য উনি আমার ডেক্সটপটা কিছু সময়ের জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। আমি ওনাকে অনুমতি দিই। ওনার কাজ শেষে ফাইলটা উনি পেনড্রাইভে নেওয়ার পর আমার ডেক্সটপ থেকে তা ডিস্কার্ড করে যাননি। ওটা ডিস্কার্ড করার মুহূর্তে ওনার কাজগুলোর মাঝে আমি কিছু ভুল পাই। আর সেটাই আমি জানাই ওনাকে। কিন্তু উনি তা মানতে নারাজ। উল্টে আমি জুনিয়র বলে আমাকে কথা শুনাতে লাগলেন।”
আশফি হৃদয়কে বলল,
– “ফাইলটা নিয়ে আসুন আমার কাছে।”
ফাইলটা দেখে আশফি হৃদয়কে তার ভুলগুলো ধরিয়ে দিলো। হৃদয় তখন চুপসে গেলেও আশফি তাকে বেশি কথা শোনালো না। হৃদয় চলে যেতেই আশফি মাহিকে বলল,
– “যার মর্যাদা যতটুকু তাকে ততটুকু মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। উনি ভুলগুলো করেছেন আর আপনি তা দেখিয়ে দিয়েছেন। বেশ ভালো। উনি যখন নিজের ভুল মানতে নারাজ তখন আপনি কেন জোর করে তাকে তার ভুল স্বীকার করাতে উঠে পড়ে লাগলেন?”
মাহি খুব দৃঢ় কণ্ঠে এবার জবাব দিলো,
– “ভুল স্বীকার করাতে আমি একদমই উঠে পড়ে লাগিনি। উনি আমাকে ছোট বড় কথা শোনাচ্ছিলেন। তা আমি নিতে পারিনি। আর আমি তো ওনার মতো করে ওনাকে অপমানসূচক কথা বলিনি।”
– “বাহ্! আপনার কথার দাপট দেখে যেন মনে হয় আমি আপনার ঘরের স্বামী। অফিসের বসের সাথে এভাবে গলা উঁচু করে কথা বলাই কি আপনার ম্যানার?”
– “স্যরি। কিন্তু আমার ম্যানার নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন। তাই একটু রুড হয়ে গিয়েছিলাম।”
– “মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হই একজন অথর্ব মানুষ হঠাৎ হঠাৎ কব(বলিষ্ঠ ঘোড়া) হয়ে যায় কী করে?”
– “এক সেকেন্ড। বারবার আমাকে এই অথর্ব শব্দটা সম্বোধন করার মানে কী? আমি কি বিকলঙ্গ? আমার হাত পা নেই না কি আমি অন্ধ?”
আশফি হালকা অবজ্ঞাসূচক হাসি হেসে হাতের ফাইলগুলো মাহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
– “একজন অন্ধ আর একজন বিকলঙ্গ মানুষেরও ক্ষমতা থাকে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার, নিজের মর্জিতে বেঁচে থাকার; আর আপনার তাও নেই।”
কথাগুলো বলে আশফি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে মাহিকে বলল,
– “আসতে পারেন।”
মাহি চলে যেতে গিয়েও মাঝপথে দাঁড়িয়ে ফাইলগুলো হাতে ধরে তাকে জবাব দিলো,
– “একজন স্বাভাবিক মানুষ কখন অথর্ব হয়ে যায় তা কি কোনো নির্বোধ বা কোনো রিপ(অকর্মণ্য ঘোড়া) বুঝতে পারে? সে ক্ষমতা কি তাদের আছে?”
খুব শান্ত দৃষ্টি মেলে মাহির কাছে এগিয়ে এসে তার হাতের ফাইলগুলো ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে আশফি বলল,
– “হাত, পা, চোখ, কান, জ্ঞান, যোগ্যতা সবই থাকতেও যে অন্যের আদেশ-নিষেধ, অন্যের রুচিতে চলে আমার ভাষায় তাকে বলে ‘রিপ’।”
আশফির উগ্র আচরণগুলো মাহির সহ্য সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। একে তো বুকে পাথর চেপে চলতে হচ্ছে আবার তার উপর এই মানুষটার ঘৃণা। আশফি চলে যেতে গেলে মাহি তার পথ আগলে দাঁড়াল। মাহির সাথে কথা বলার মতো রুচিবোধ আপাতত আশফির আর নেই। তাই সে এড়িয়ে মাহিকে পাশ কাটাতে চাইলে মাহি আবারও তার পধ রোধ করে দাঁড়ায়৷ আশফি প্রচন্ড ক্রুদ্ধ হয়ে তাকাল তার দিকে। মাহি তেজি সুরে বলল,
– “ফাইলগুলো উঠিয়ে তারপর যাবেন।”
– “কী?”
– “ফাইলগুলো আমার হাতে তুলে দিয়ে তারপর আপনি যাবেন।”
আশফি কিছু মুহূর্ত ভয়ংকরভাবে চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে থাকল মাহির দিকে। কোনো কথা না বলেই আশফি বেরিয়ে আসতে গেলে মাহি আবারও তার পথ রোধ করল।
– “কী হলো শুনতে পাননি? ফাইলগুলো উঠিয়ে দিতে বলেছি আমি। আপনি অফিসের বস হলেও এমন অভদ্র আচরণ অফিসের এমপ্লয়ির সঙ্গে করতে পারেন না। ফাইলগুলো আমার হাতে তুলে দিয়ে তারপরই আপনি যেতে পারবেন।”
– “না হলে কি যেতে পারব না?”
– “না।”
আশফি মাহির দৃষ্টিতে পরিপূর্ণ দৃষ্টি মেলে দাঁড়িয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত। এরপর আচমকা সে এমনভাবে মাহির সামনে কিছুটা ঝুঁকে পড়ল মাহি চমকে উঠে দু’পা পিছিয়ে গেল। একে তো সে ফাইল উঠিয়ে দিলোই না উল্টে প্রচন্ড লজ্জাও পেতে হলো মাহিকে। আর আশফি কয়েক সেকেন্ড তার ক্রুদ্ধ দৃষ্টি মাহির দিকে ছুঁড়ে তার চলে যাওয়ার মুহূর্তে এমন কিছু করে গেল, মাহি যেন পুরো বোবা দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়ার পথে কেবল স্তব্ধ চাহনি মেলে চেয়ে রইল।
…………………………….
(চলবে)
– Israt Jahan Sobrin
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.