Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তুমিময় ভালোবাসাতুমিময় ভালোবাসা পর্ব-৪৫ এবং শেষ পর্ব

তুমিময় ভালোবাসা পর্ব-৪৫ এবং শেষ পর্ব

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ৪৫(শেষ)
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা

আজকে শান নিজেই কোনো দ্বিধা ছাড়া সোহাকে শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। সবাই তৈরি হয়ে দুপুরের মাঝে ইতিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
ইতিদের বাড়িতে আসতেই শানদের আপ্যায়নের জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে পরে। সোহা সব ছেড়েছুরে নাইসা আর টমিকে নিয়ে লাফাতে লাফাতে ইতির রুমে চলে যায়। ইতির রুমে উঁকি দিয়ে দেখে পুরো রুম ফাকা আর ইতি মিররের সামনে বসে বসে সাজছে। সোহা একটা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে ইতিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
” আআআআ….” ইতিও ভয়ে পেয়ে চিৎকার করে উঠে। নাইসা খিলখিল করে হেসে দেয় দুজনের কাজ দেখে। সোহাও হেসে দেয় নাইসার সাথে। ইতি ক্ষেপে সোহার গায়ে থাপ্পড় দিয়ে বলে
” শাঁকচুন্নি এভাবে কেউ চিৎকার দেয় ?? আমি কতো ভয় পেয়ে গয়েছিলাম। এখনই মরে যেতাম।” ইতি বুকে হাত দিয়ে নিশ্বাস নেয়। সোহা মিটমিট করে হেসে বলে
” তুই মরে গেলে আমার বেচারা ইমন ভাইয়া তো
বিয়ের আগেই বউ হারা হয়ে যাবে। তখন ভাইয়াকে ঠিক করার জন্য নতুন বউ আনা লাগবে।” ইতি সোহার পিঠে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে
” বেশি কথা বলিস ফাজিল মেয়ে। আমাকে তাড়াতাড়ি তৈরি করে দে আমার জামাই এসে পরবে।” সোহা ফিক করে হেসে দেয়। ইতি লাজুক হাসি দিয়ে আবার মিররের সামনে বসে পরে। সোহা ইতির চুল বেধে বেলিফুলের মালাটা লাগিয়ে দিতে থাকে। নাইসা ইতির সামনে বসে বলে
” আন্টি তুমি সাজছো কেনো ??” ইতি মুচকি হেসে নাইসার গালে হাত রেখে বলে
” আজকে আমার বিয়ে বাবুই।” নাইসা খুশি হয়ে বলে
” সত্যি ?? তাহলে তুমিও মিষ্টিমনির মতো বিয়ে করে আমাদের বাড়িতে যাবে ??” সোহা আর ইতি দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে। ইতি সোহাকে কোলে তুলে বলে
” না বাবুই আমি তো অন্য বাড়িতে যাবো।” নাইসা মুখ ফুলিয়ে বলে
” কেনো, কেনো ?? তুমি অন্য বাড়িতে কেনো যাবে ?? আমার মিষ্টি মনি তো বিয়ে করে আমাদের বাড়িতে এসেছিলো তাহলে তুমি আসবে না কেনো ??” সোহা তার কাজ শেষ করে নাইসাকে কোলে তুলে বলে
” কারণ তোমার আন্টির সাথে যার বিয়ে হচ্ছে তারা বাড়ি অন্য বাড়িতে থাকে তাই। যার সাথে যার বিয়ে হবে তার স্বামীর বাড়িতে সে যাবে। আমার স্বামী হলো তোমার শান বাবাই তাই আমি তোমাদের বাড়িতে থাকি। যার ভালোবাসার ঠিকানা যেখানে সে সেখানেই থাকবে। বুঝেছো নাইসা বাবুই ??” নাইসা কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে
” আমি তো কিছু বুঝিনি।” ইতি আর সোহা আবারও হেসে দিলো। সোহা মুচকি হেসে নাইসার গালে চুমু দিয়ে বলে
” আমার নাইসু যখন বড় হবে তখন সে সবই বুঝতে পারবে। এখন কিছু বুঝতে হবে না। বুঝেছো ??” নাইসা মাথা এলিয়ে সম্মতি দেয়। হঠাৎ ইতির মা নিলা রুমে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে আসে। ইতির মা ব্যস্ত গলায় বলে
” ইতি তুই তৈরি তো ?? ওরা এসে পড়েছে একটু পরেই বিয়ে পড়াবে। নিলা মা তুমি এখানেই থাকো তাহলে ইতি অস্বস্তি কম হবে।” নিলা হেসে বলে
” আন্টি একদম চিন্তা করবেন না। আমরা আজকে আপনার মেয়েকে ইমনের হাতে তুলে দিয়েই এই রুম থেকে বের হবো।” নিলার কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। ইতি সোহা এক হাত জড়িয়ে ধরে লজ্জায় মাথা নুয়ে রেখেছে। ইতির মা আবার দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।
সোহা আর নিলা ইতিকে নিয়ে বেডে বসিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর দুই, তিনজন মেয়ে মানুষ এসে হাজির হয় রুমে। সবাই বলে ইতিকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য। ওরা নিজেরা নিয়ে যেতে চাইলে ইতি সোহার হাত ধরে অসহায় চাহনি দিয়ে বলে
” দোস্ত তুই চল নাহলে আমি কিছু করতে পারবো না।” সোহা আর নিলা ইতিকে নিয়ে বাইরে যায়।
ইমন শান আর এক কাজিনের মাঝে বসে ছিলো। কথা বলতে বলতে চোখ যায় সিরির দিকে। ইতিকে দেখেই ইমনের চোখ থমকে যায়। মেয়েটাকে আজকে শাড়ি পড়া অবস্থায় প্রথম দেখছে সে। মাথায় ঘোমটা টানা থাকলেও ঘোমটার একপাশে বেলি ফুলের মালার কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। ইতির চোখে মুখে শুভ্রতা ছড়িয়ে আছে। ইমন মুগ্ধ দৃষ্টিতে ইতিকে দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ পর শান ইমনের কানে কানে ফিসফিস করে বলে
” ভাই আগে বিয়ে করে নাও তারপর বউকে সামনে বসিয়ে এভাবে সারা দিনভর দেখতে থেকো। এখন একটু চোখটা নিচে নামাও তোমার মা, বাবা, আমার বাবা, ভাই, ভাবি সবাই হাসছে তোমাকে দেখে আর তোমার দজ্জাল শশুড় গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।” শশুড়ের নাম শুনে ইমন ইতির বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই তাই ইতির বাবা কেমন ভাবে তাকিয়ে আছেন। ইমনের মনে হলো সে তার শশুড়ের চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছে। তার শশুড় নামের অশুড় নিশ্চই ভাবছে
” বিয়ের আগেই আমার মেয়েকে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়ার সাহস কি করব হয় তোমার ?? তোমাকে যে বিয়ের পর মসলা মাখিয়ে গিলে খাবো সেটার কথা মাথায় আছে তো ??” ইমন ভাবনার মাঝে নিজেই হেসে উঠে। হুজুরের ডাকে ইমন নড়েচড়ে বসে।
এদিকে ইতি মাথা নিচু করে বসে থাকলেও একবার চোখ তুলে তাকিয়েছিলো চারপাশ দেখার জন্য। ইমনকে দেখে তার মন প্রাণ জুড়িয়ে গেলো। এই ইমনই তো নয় মাস আগে থেকে বিরক্ত করা শুরু করেছিলো। ধীরেধীরে যে কিভাবে অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো নিজেও বুঝতে পারেনি। একদিন ইমনের ফোন না পেয়ে ছটফট শুরু করলো সেই ছটফট থেকে ধীরে ধীরে সেটা সুক্ষ্ম অনুভূতি শুরু হলো আর সেই অনুভূতি থেকে আজকের এই পাগলামো ভালোবাসা। আর শেষ পর্যায়ে এই ভালোবাসা একটা #তুমিময়_ভালোবাসা এর পরিণতি নেবে।
কিছুক্ষণ পর ইতির কানেও ভেষে আসে কবুল বলার জন্য সেই অনুরোধ। ইতি কিছুক্ষণ সময় নিয়ে তিনবার কবুল বলতেই বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়।
বিয়ের পাঠ চুকে যেতেই ইশানের কাছে সামিরের ফোন আসে। সিমির পেইন উঠেছে শুনে সোহারা সবাই ইতিদের থেকে বিদায় নিয়ে নেয় সোহাদের দিক বুঝতে পেরে সবাই যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়। সোহারা সবাই দৌড়ে বেড়িয়ে যায় গাড়ি নিয়ে।

ইশানের হসপিটালের পঞ্চম তলার একদিকে করিডোরে সবাই বসে আছে। বসে আছে বললে ভুল হবে সবাই সিমি আর তার বাচ্চার জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছে। সামির করিডোরের সামনে শুধু পাইচারি করে যাচ্ছে। শীতকালের এতো ঠান্ডা আবহাওয়া থাকলেও সিমির জন্য ভয় আর চিন্তা দুটোই সামিরকে ঘামিয়ে অস্থির করে তুলছে। সোহা বসে বসে নিশ্চুপে কেঁদে যাচ্ছে। সামিরের অবস্থা দেখে যাচ্ছে সোহার মনেও প্রচণ্ড ভয় হানা দিয়েছে তাই একপ্রকার গুটিয়ে রয়েছে আর শান বারবার সামিরকে শান্তনা দিচ্ছে শান্ত হওয়ার জন্য।
ভেতর থেকে বারবার সিমিএ চিৎকার ভেসে আসছে আর সেই চিৎকারে সামির আরো অস্থির হয়ে পড়ছে। শান সামিরকে বসিয়ে শান্তনা স্বরে বলে
” ভাইয়া একটু শান্ত হও। বড় ভাইয়া তো বলেছেই ছোটভাবির নরমাল ডেলিভারি হবে আর সবই ঠিকাছে শুধু বেবির পজিশন চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে ।” সামির ঢোক গিলে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” আমার ভয় করছে কিছু যদি হয়ে যায় তাহলে আমি করবো ?? সিমির কিছু হয়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যাবো। এতো বছরে সিমি আমার অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ওকে ছাড়া আমি নিশ্বাসও নিতে পারবো না।” শান আর কিছু বললো না শুধু অভয় দিয়ে বলে
” কিছু হবে না কারো। দুজন সুস্থ ভাবেই বাড়ি ফিরবে।” বড় ভাবির ডেলিভারির সময় চট্টগ্রাম থাকায় শান তাদের এই অবস্থা ফেস করেনি কিন্তু আজকে সব নিজ চোখে দেখছে। শান বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে সোহার দিকে তাকালো। শানের ভাই ভাবির অবস্থা দেখেই তার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে সেখানে সোহাকে নিয়ে এই অবস্থার কথা ভাবতেই শানের নিশ্বাসবন্ধ হয়ে আসছে। শান মনে প্রাণে ধরে নিলো সোহাকে এখন এইসবের চিন্তা ভাবনা একদম বাদ। শান কিছুতেই তার সোহাকে হারাতে পারবে না সেটা যেকোন অবস্থায়ই হোক। প্রায় আধ ঘন্টা পর ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। সবাই হন্তদন্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর ইশান নিজের কোলে একটা টাওয়ালটা জড়ানো ফুটফুটে বাচ্চাকে নিয়ে হাসি মুখে বের হয়। সামির দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো ইশানের দিকে। ইশান মুচকি হেসে বলে
” দেখ একদম সিমি আর তোর সংমিশ্রণ তোদের ছেলে।” সামির পিটপিট করে তার বাচ্চার দিকে তাকালো। সত্যি দুজনের সংমিশ্রণে সামিরের ছেলে। এতোক্ষণে থাকা মনের ভেতরে সব ভয় চিন্তা দূড় করে সামির তৃপ্তির এক হাসি দিয়ে বাচ্চাকে কোলে তুলে নেয়। সামির বাবুর কপালে আলতোভাবে চুমু দিয়ে ইশানের দিকে ঘুরে বলে
” সিমি কেমন আছে ভাইয়া ??” ইশান আলতো হেসে বলে
” বেবি পজিশন চেঞ্জ হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত ব্লিডিং হয়েছে তাই কিছুটা দুর্বলা তবে সুস্থ রয়েছে। দুইঘন্টা পর কেবিনে দেওয়া হবে তখন দেখা করতে পারবি। সামির স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে হাসে। এর মধ্যে সবাই বাবুকে নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে গেলো। সবাই বাবুকে কোলে নিতে চাইছে। শাহানাজ বেগম বাবুকে কোলে নিয়ে বলে
” মাশাল্লাহ! আমার নাতিটার চোখ গুলো একদম সিমির মতো হয়েছে আর নাকটা সামিরের মতো।” রিয়ানা রহমান তার নাতিকে দেখতে দেখতে বলে
” হ্যা, দেখুন বেয়ান কিভাবে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।” শাহানাজ বেগম মাথা খুশিতে গদগদ তখন মুসফিক চৌধুরি এসে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বলে
” তোমরা দেখেছো এবার আমার নাতিকে আমাকে দেখতে দাও।” দুই মিনিট কোলে রাখতেই এবার ইমতিয়াজ রহমান এসে হানা দিলো। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বলে
” অনেক্ষণ নিয়েছেন ভাই এবার আমার পালা। আমি তো ছুঁতেই পারিনি।” কিছুক্ষণ পর শান এসে কোলে তুলে বলে
” তোমরা যেভাবে ওকে নিয়ে কাড়াকাড়ি করছো যেনো ও খেলনা !! নবগত শিশুকে পরিষ্কার হয়ে কোলে নিতে হয় নাহলে বেবির ইনফেকশন হবে। ভাই তোর বাচ্চাকে কোলে নে নাহলে আবার এরা কোলে নেবে।” সামির হেসে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে নেয়। শান খেয়াল করলো সোহা সামিরের পাশে দাঁড়িয়ে শুধু ড্যাবড্যাব করে বাবুকে দেখে যাচ্ছে কিন্তু সবার মতো কোলে নেওয়ার জন্য ছটফট করছে না। শান সোহাকে কিছু বলার আগেই সামির সোহাকে বলে
” সোহামনি তোমার বাবাইকে কোলে নেবে না ??” সোহা উশখুশ করতে করতে বলে
” আ-আমি তো বাবু কোলে নিতে পারি না। একবার এক্টা বাবুকে কোলে নিয়েছিলাম পড়ে গিয়েছিলো তাই আর নেই না।” বলে সোহা মন খারাপ করে নিলো বাবুকে কোলে নিতে না পারায়। সামির দুই পা এগিয়ে বলে
” কিছু হবে না। আমরা আছি তো তুমি একটু কোলে নিয়ে দেখো।” সোহা জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে ভীতু স্বরে বলে
” নাহ পরে গেলে ব্যাথা পাবে বাবু।” সামির আর জোড় করলো না শান্ত হয়ে বলে
” তাহলে যখন নিতে ইচ্ছে করবে তখন বলবে ঠিকাছে ??” সোহা হালকা হেসে মাথা নাড়ালো। শান মুচকি হাসলো।
সিমিকে বেডে দেওয়ার পর সবাই কেবিনে ঢুকলো। সিমি সামিরকে দেখেই প্রশ্ন করে উঠে
” বাবু কোথায় ??” সামির মুচকি হেসে ইশারা করে সিমি তাকিয়ে দেখে শাহানাজ বেগম কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিমির চোখ পানিতে ভরে যায়। সিমি দুই হাত বাড়াতেই শাহানাজ বেগম সিমির কোলে তুলে দেয়। সিমি বাবুকে কোলে নিয়ে তার চোখ বেয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পরে। সামির চোখ মুছিয়ে দিয়ে ব্যথিত গলায় বলে
” আবার কাঁদছো কেনো ?? এতোক্ষণ তো একজন তোমার কাঁদতে কাঁদতে চোখ,মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। এখন আবার তোমার কান্না শুরু।” সিমি অবাক হয়ে বলে
” কে কান্না করেছিলো ??” ইশান হেসে সোহার দিকে ইশারা করে। সিমি সোহার দিকে তাকিয়ে দেকে সোহা শানের বাহুতে মুখ লুকিয়ে রেখেছে। সিমি হেসে বলে
” কিরে লুকিয়ে রেখেছিস কেনো নিজেকে ?? দেখি তোর চোখ, মুখ কেমন আলু হয়ে আছে।” সিমির কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। সোহা রেগে সিমির দিকে তাকিয়ে বলে
” এই তুমি বেশি বেশি করছো। আলু হয়ে আছে মানে কি, হ্যা ?? যার জন্য কাঁদলাম এতোক্ষণ সেই এখন অপমান করছে আমাকে, হুহ !!” সিমি হেসে এক হাত বাড়িয়ে বলে
” ওলে আমার বোনটা আচ্ছা আমার কাছে আয়। আমার জন্য কেঁদেছিস যখন তাহলে একটু তো আদর করতেই পারি।” সোহা মুখ ফুলিয়ে সিমিকে জড়িয়ে ধরে। সিমি সোহার কপালে চুমু দিয়ে বলে
” নে বাবুকে কোলে নে।” সোহা মাথা নেড়ে বলে
” নাহ তুমি তো জানো বাবু নিতে পারি না আমি।” সিমি কথা শুনলো না সোহাকে জোড় করে বসিয়ে দেয় শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে সোহার হাত বাবুকে সুন্দর করে দিয়ে দেয়। সোহা কোলে নিয়ে নিজের বুকের সাথে আগলে নেয়। কিটকিট করে হেসে বলে
” বাবুটা কতো নরম তুলতুলে।” সামির হেসে বলে
” তোমার বাচ্চা হলেও এরকম হবে।” সোহার হাসার মাঝেই কান গুলো গরম হয়ে গেলো সামিরের কথা শুনে। লজ্জায় মাথা নুয়ে নেয় সোহা। সোহার এই লজ্জামাখা চেহারা শান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছে।
রাতে শাহানাজ বেগম আর রিয়ানা বেগম বাদে সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলো। আবার কালকে আসবে সবাই।

বাড়িতে এসে সবাই ফ্রেশ হতে চলে যায়। সোহা এসেই আগে ইতিকে ফোন করে কথা বলে নেহ। ইতির সাথে অনেক্ষণ কথা বলে সোহা ফ্রেশ হতে চলে যায় এসেই শানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। সোহা একসময় মুচকি মুচকি হেসে বলে
” আচ্ছা শান বাবাই অনেক হ্যান্ডসাম হবে তাই না ??” শান ভাব নিয়ে বলে
” অবশ্যই এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে ?? আমার বাবাই তো হ্যান্ডসাম হবেই। আফটার অল আমাদের বংশধর বলে কথা।” সোহা ভ্রু কুঁচকে মাথা তুলে শানের দিকে তাকিয়ে বলে
” এমন ভাবে বলছেন যেনো আপনারা ছাড়া পৃথিবীতে আর কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে, মেয়ে নেই।” শান গলা খাকড়ি দিয়ে বলে
” আরে সেটা কখন বললাম ?? আমি তো এমনি বলছিলাম।” সোহা ভেংচি কেটে শানের আঙুলে আলতো ভাবে কামড় মেরে দেয়। শান হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে
” এই পাগলে ধরেছে নাকি ?? কামড়া কামড়ি করছো কেনো ??” সোহা প্রতিউত্তরে কিছুই বললো না। কিছুক্ষণ পর উঠে বসে শানের মুখোমুখি বসে বলে
” আচ্ছা শান আমাদের বেবি হবে কবে ??” শান চমকে সোহার দিকে তাকালো। এই মেয়ের মাথায় এখনই বেবির কথা চলে এসেছে ?? ভাবতেই শান ঢোক গিললো। আমতা আমতা করে বলে
” যেদিন হবার সেদিনই হবে। এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে ??” সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে
” এটা কেমন কথা ?? যেদিন হবে মানে ?? আমার এখনই বাচ্চা চাই। আমিও মা হতে চাই ভাবি মনি আর আপুর মতো। ইতিও আজকে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন পর দেখা যাবে ইতির বাচ্চা হিয়ে গিয়েছে কিন্তু আমার হয়নি তখন আমার মান-সম্মানের কি হবে ভাবতে পারছেন ??” শান মুখ বাকিয়ে বলে
” এহ আসছে মান-সম্মানের বুলি ফুটাতে। শোনো ইতির এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চা হবে না। ওর বাবা যেই অশুর পড়ালেখা শেষ না করে বাচ্চার কথা বললেই ইমনকে মশলা মাখিয়ে খাবে। আর রইলো তোমার কথা !! তুমি তিন বছরের আগে বাচ্চা তো নিতেই পারবে না।” সোহা অবাক হয়ে বলে
” মানে ?? তিনজ বছর !!! এতো দেড়ি করে কেনো ?? আমার তো কালকেই আমার বাচ্চা চাই।” শান শব্দ করে হেসে দিলো সোহা মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে। শান হাসতে হাসতে বলে
” তুমি বলবে আর একটা বাচ্চা টুপ করে আকাশ থেকে পড়ে যাবে তাই না ?? আজকে ভাবিকে দেখেছো ?? একজন মা হতে প্রচুর কষ্ট করতে হয়। হ্যা, বাচ্চা হওয়ার পর সেই সবের কথা কারোর মনে থাকে না কিন্তু আমি তোমাকে কষ্টে থাকতে দেখতে পারবো না। তোমার একটু খানি ব্যাথা আমাকে ব্যথিত করে তোলে সেখানে এতো বড় রিস্ক কখনোই না।” সোহা রেগে বলে
” এসব কোন ধরনের কথা ?? একটা ছেলে, মেয়ে মা, বাবা হওয়ার জন্য কতো কিছুই না করে সেখানে আপনি আমাকে এসব কথা বলছেন ??” শান হালকা হাসলো সোহার মুখের সামনে দুই একটা পড়ে থাকা চুক গুলো দুই হাতে পেছনে ঠেলে দুই গালে হাত রেখে বলে
” তুমিও মা হবে আমিও বাবা হবো। তবে এখনও সেই সময় আসেনি। ধরো, তিন বা চার বছর পর আমাদের অস্তিত্ব আমাদের মাঝে থাকবে।
আচ্ছা তুমি কখনো নিজেকে দেখেছো ?? এক মাস পর আমাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হবে। এই এক বছরে আমরা তোমাকে এতো খাইয়ে খাইয়ে মোটা করার চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুই তো হলো না তুমি যেমন ছিলে তেমনই আছো। এই শরীরে কোনোদিন তুমি নাকি বাচ্চার কথা বলছো ?? তুমি তো নিজেই বাচ্চা একটু ব্যাথা পেলে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যাও সেখানে আমাদের বাচ্চা আনার প্ল্যান করছো তুমি ??” সোহা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। শান মুচকি হেসে সোহাকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো। সোহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে
” এতো ভালোবাসেন কেনো আমাকে শান ??” শান আরো শক্ত করে নিজের বুকে আগলে নিলো সোহাকে। চোখ বন্ধ করে বলে
” তোমাকেই ভালোবাসতে চাই তাই। আমার পুরোটা হৃদয় জুড়ে শুধু তুমি থাকবে। আমি তো এই #তুমিময়_ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই কতো ছটফট করেছি। তো তোমাকে ভালোবাসবো না তো কাকে ভালোবাসবো ??” সোহা শানের কথা জড়িয়ে ধরে বলে
” আর কাউকে না।” শান মুচকি হাসি দেয়।

★ আজকে সোহা আর শানের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হয়েছে সেই সাথে সিমি, সামিরের ছেলের একমাস। যদিও ওদের ছেলের গতকালকেই একমাস পূর্ণ হয়েছে কিন্তু সোহা-শানের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে বাড়িতে পার্টির আয়োজন করা হবে তাই সিমি-সামিরের ছেলের এক মাসের অনুষ্ঠান করে নিয়েছে আজকে আর ওদের ছেলের নাম করন করা হয়েছে। সবাই মিলে ছেলের নাম রেখেছে সাদনান চৌধুরি সাইফ।
রাত ১০টার কাছাকাছি বাজতে চললো।
নিচে পার্টি সব কাজ শেষে নিলা আর সিমি সোহাকে তার রুমে রেখে গেলো। আজকে দুজনের জন্য সবাই নতুন করে বাসর রুম সাজিয়েছে। দুজন অনেক্ষণ পর চলে গেলো সোহাকে একা রেখে। সোহা কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে দাঁড়ায়। ধীর পায়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে যায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বাতাস উপভোগ করতে থাকে। হঠাৎ এক জোড়া বলিষ্ঠ হাতের ছোঁয়া পেয়ে সোহা বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। শান পেছন থেকে সোহার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। সোহার শরীর ক্রমশ অবশ হয়ে আসতে চাইছে। গলাও ক্রমশ আটকে আসছে তাও সোহা বলে উঠে
” ক-ক-কি করছেন ??” শানের ভাবান্তর হলো না কিছুক্ষণ পর জড়ানো গলায় বলে উঠে
” আজ তোমায় মারাত্মক সুন্দর লাগছে সোহা। তোমার নতুন নতুন রূপে আমি তোমার মায়ায় পরে যাই। নিজেকে লাল শাড়িতে সাজিয়ে নিয়েছো আর আমার বুকে যে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তোমার খেয়াল আছে ??” সোহা ঢোক গিলে জিভ ভিজিয়ে নিলো। শান সোহাকে নিয়ে বারান্দার ডিভানে বসে পরে। সোহা শানের ফুল লাছ গুলোর দিকে তাকিয়ে হালকা লাজুক হাসি দিলো। শান হুট করে সোহাকে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। সোহা চমকে শানের পড়নে পাঞ্জাবি খামঁছে ধরে। শান মুচকি হেসে সোহাকে জড়িয়ে ধরে বলে
” জানো আজকের দিনটা আমার জন্য কতোটা পবিত্র আর বিশেষ দিন !! এই দিনে তোমাকে আমি আমার করে পেয়েছি। বুকের মাঝে যেই দহন নিয়ে আমি পুরোছিলাম সেই দহনের আগুন নিভে গিয়েছিলো তোমার জন্য তোমার একরাশ ভালোবাসার জন্য কতো ছটফট করেছি আমি। কতো করে চেয়েছিলাম তোমার ভালোবাসার মাঝে হাড়িয়ে যেতে। আমি সফল হয়েছি আমি আমার ভালোবাসা পেয়েছি। আমি #তুমিময়_ভালোবাসায় নিজেকে মুড়িয়ে নিয়েছি। আমার পুরোটাই শুধু তুমি আর #তুমিময়_ভালোবাসা। খুব ভালোবাসি সোহা। ” সোহা ছলছল চোখে তাকিয়ে আনমনেই হেসে উঠে। শানের বুকে মাথা রেখে বলে
” আমিও আপনাকে ভালোবাসি। আমি আপনার #তুমিময়_ভালোবাসা কে ভালোবাসি। বড্ড ভালোবাস শান।” শান সোহাকে নিজের সাথে আগলে নিলো।
এই #তুমিময়_ভালোবাসা এর কাহিনী আবার নতুন করে নতুন হওয়ায় শুরু হলো।

————সমাপ্ত————–

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ