Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তুমিময় ভালোবাসাতুমিময় ভালোবাসা পর্ব-৪২+৪৩

তুমিময় ভালোবাসা পর্ব-৪২+৪৩

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ৪২
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা

সকালে ফোনের রিংটোন শুনে সোহার ঘুম ভেঙে যায়। সোহা হাজারো বিরক্ত নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করে কাণে ধরতেই ফোনের ওইপাশ থেকে কারোর কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।
সোহার শরীর উপরে থাকা চাদর টা আঁকড়ে ধরে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে উত্তেজিত গলায় বলে
” কি হয়েছে ইতি ?? কাঁদছিস কেনো তুই ??” ইতি কোনো কথার উত্তর দিচ্ছে না এক নাগাড়ে কেঁদেই যাচ্ছে। সোহা এবার কড়া গলায় বলে উঠে
” এই মেয়ে বলবি তো কি হয়েছে !! না বললে বুঝবো কি করে ?? ফ্যাচফ্যাচ করে কান্নাকাটি বন্ধ কর।” সোহার কথা শুনে শানের ঘুমও ভেঙে গেলো। শান হাই তুলে উঠে বসে সোহার কাধে মাথা রেখে বলে
” কি হয়েছে কে কাঁদছে ??” সোহা উত্তর না দিয়ে ফোন লাউডস্পিকারে দিলো। ইতি কান্না থামিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে থাকে
” সোহা !! বাবা আমাকে ঘরে আটকে রেখেছে।” সোহা আর শান একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে। সোহা অবাক হয়ে বলে
” আংকেল তোকে কেনো ঘরে আটকে রেখেছে ?? কি করেছিস তুই ??” ইতি আবার কান্না করতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে বলে
” ইমনের অফিসের জন্য কয়েকদিন দেখা হয়নি আমাদের তাই কালকে ইমনের সাথে একটা ক্যাফেতে গিয়েছিলাম। তুই তো জানিস আমাদের কালকে দেখা করার কথা ছিলো। বাবা নাকি কালকে আমাদের দেখে ফেলেছিলো। কালকে বাড়ি ফেরার পর অনেক বকেছে আমার কোনো কথা শোনেনি। আমি ইমনের কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাবা আমাকে সাথে সাথে ঘরে বন্দি করে রাখে।” সোহা রেগে বলে
” অদ্ভুত কথাবার্তা তো !! তুই রাতে আমাকে ফোন করিসনি কেনো ?? আর ইমন ভাইয়াকে জানিয়েছিস কিছু ??” ইতি আবারও একই ভাবে বলে
” এতোরাতে তোদের ডাকবো ভেবে আর জানাইনি। আর ইমনকে কিছু জানাতে পারিনি। ফোন লুকিয়ে রেখেছিলাম বাবা এতোক্ষণ বাসায় ছিলো তাই ফোন বের করিনি। বের করলে ফোনটা ভেঙে ফেলতো। আর ইমনকেই বা কি বলবো ফোন অন করে দেখি ফোনের উপর ফোন আর মেসেজে ভরতি হয়ে আছে।”
শান সোহার হাত থেকে ফোন নিয়ে বলে
” ইতি তোমার ইমনকে ফোন করতে হবে না। আমি ইমনকে সব জানাচ্ছি আর আমরা এখনই আসছি।” ইতি হালকা কান্না থামিয়ে বলে
” ভাইয়া ধীরেসুস্থেই আসুন আপনারা। বাবা এখন বাজারে গিয়েছে কিছুক্ষণ দেড়ি হবে হয় তো।”
” ঠিকাছে। আমরা তৈরি হয়ে আসছি তুমি শান্ত মেয়ের মতো বসে থাকো। আমরা এসে সব দেখছি।” শান কল কেটে সোহার দিকে তাকালো। সোহা চিন্তিত ভাবে গুটি মেরে বসে আছে। শান নিঃশব্দে একটা হাসি দিয়ে সোহার দিকে মুখ এগিয়ে নেয়। সোহার ঠোঁটে আলতোভাবে অধর জোড়া ছুঁয়ে দেয়। সোহা চমকে শানের দিকে তাকায়। শান দূড়ে সড়ে এসে ঠোঁট কামড়ে বলে
” খুব মিষ্টি ছিলো…তোমার ওই ঠোঁট টা।” সোহা চোখ বড় বড় তাকিয়ে আবার লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। শান মুচকি হেসে সোহার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়।
★ শান আর সোহা দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসে। টেবিলে বসে থাকা অবস্থায় শাহানাজ বেগম দুজনকে দেখে বলে
” কোথাও যাচ্ছিস নাকি তোরা ??” সোহা এগিয়ে এসে বলে
” মামনি আমরা ইতির বাড়িতে যাচ্ছি। ওর বাড়িতে কিছু প্রবলেম হয়েছে। এসে বাকি কথা বলবো।” নিলা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বলে
” তোমরা কি ব্রেকফাস্ট না করেই চলে যাবে নাকি ?? বসো আমি তোমার খাবার দিচ্ছি।” শান ব্যস্ত গলায় বলে
” না ভাবিমনি আমরা এখন খাবো না। ইতির বাড়িতে তাড়াতাড়ি গেলে ভালো হয়।” শাহানাজ বেগম চিন্তিত হয়ে বলে
” কি হয়েছে মেয়েটার ?? আচ্ছা তোরা যা আসার পর শুনবো।” শান, সোহা বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। গাড়ির ড্রাইভারকে রেখে শান নিজেই ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। সোহা ইমনকে ফোন লাগায়। একবার রিং হয়ে কেটে গেলে পরেরবার রিসিভ হয়। সোহা কিছু বলার আগেই ইমনের অস্থির গলা ভেষে আসে।
” ভাবি !! ইতির সাথে কি আপনার কথা হয়েছে ?? কালকে থেকে ফোন ধরছে না আমার। অনেকবার ট্রায় করেছি, মেসেজ দিয়েছি কিন্তু কোনো আন্সার আসেনি এখনও। আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে।” সোহা শান্তনা স্বরে বলে
” ভাইয়া তুমি চিন্তা করো না। শুধু একটা কথা বলছি একটু শান্ত হয়ে শোনো। কালকে আংকেল মানে ইতির বাবা তোমাকে আর ইতিকে একসঙ্গে দেখে নিয়েছিলো সেই নিয়ে ইতির বাড়িতে কিছু প্রবলেম হচ্ছে হচ্ছে। তুমি ইতির বাড়িতে চলে এসো আর তোমার বাবা ফ্রি থাকলে আংকেল কে নিয়ে আসবে তাহলে বেশি ভালো হবে। আর তুমি ইতিকে নিয়ে চিন্তা করো না। আমরা ইতির কাছে যাচ্ছি।” ইমন কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভয়ে ভয়ে বলে
” ঠিকাছে কিন্তু ইতির কিছু করেনি তো ??”
সোহা মিনমিন স্বরে বলে
” না কিছু করেনি তবে রাতে ইতিকে রুমে আটকে রেখেছে। সকালেই ইতি ফোন দিয়ে সব জানিয়েছে আমাদের আর ইতি সুস্থই আছে। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো।” ইমন হুম বলে কল কেটে দেয়।

কলিংবেল বাজাতেই দুই মিনিট পর একজন অল্পবয়স্ক ছেলে এসে দরজা খুলে দেয়। ছেলেটা সোহাকে দেখে চিন্তে পেরে চোখ মুখ উজ্জ্বল করে তাকিয়ে বলে
” সোহাপু তুমি !! কেমন আছো তুমি ?? ভেতরে এসো, ভেতরে এসো। ” সোহা সৌজন্যের হাসি দিয়ে ভেতরে ঢোকে শানকে নিয়ে। ছেলেটা দুই পা এগিয়ে হাক ডেকে উঠে
” আম্মু !! আম্মু দেখো সোহাপু এসেছে।” ছেলেটা হাসিমুখে সোহা আর শানকে সোফার দিকে দেখিয়ে বলে
” আপু বসো এখানে ভাইয়াকে নিয়ে।” সোহা শানকে নিয়ে বসে স্বাভাবিক ভাবে বলে
” ইয়ামিন তোমার আপু কোথায় ??” ইয়ামিনের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ইয়ামিন সোহার সামনে এসে কিছু বলতে নিলেই একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা হালকা চেঁচানো স্বরে বলতে থাকে
” কি হয়েছে ?? এমন চিৎকার করছিস কেনো তুই ??” ইয়ামিন আবারও হাসিমুখে তার দিকে এগিয়ে যায়। মহিলার হাত ধরে সোহার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলে
” এই যে মা তুমি যে এতোদিন সোহাপুকে দেখতে চাইতে। আজকে আপু নিজেই বাড়িতে এসে পড়েছে।” ইতির মা অবাক চোখে সোহার দিকে তাকায়। সোহা তার তাকানো দেখে কিছুটা ভড়কে যায় ইতস্ততবোধ করে শানের হাত খামঁছে ধরে উঠে দাঁড়ায়। দুজন ইতির মাকে সালাম দেয়। ইতির মা এবার বড় একটা হাসি দেয়। সোহার হাত ধরে তার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে সোহা থুতনিতে হাত রেখে বলে
” মাশাল্লাহ। খুব মিষ্টি দেখতে তুমি। শুধু মিষ্টি না আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে। জানো এতোদিন শুধু ইতি তোমার কথা আমাকে এসে বলতো আর তোমার ছবি দেখাতো। আমার সেই কবে থেকে তোমাকে দেখার ইচ্ছে ছিলো। ইয়ামিন তো ভার্সিটি থেকে দেখে নিয়েছিলো কিন্তু আমি দেখতে পারিনি। খুব ভালো লাগছে আমার।” সোহা লাজুক লাজুক হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে। শান মনে মনে হাসতে হাসতে ভাবে
” আমার বউটা যেখানেই যায় সেখানেই ভালোবাসার বন্যা বসিয়ে দেয় সবাই। মাঝে মাঝে নিজেকে সেলেব্রিটি মনে হয়। ইশশশ আমার বউটা কতো সুন্দর আর সুন্দর মনের।” শানের ভাবনার মাঝেই ইতির মা শানকে উদ্দেশ্য করে বলে
” সোহা মা !! উনি তোমার কে হয় ?? মনে হচ্ছে কোথাও দেখেছি কয়েকবার তাই আর কি।” সোহা থতমত খেয়ে শানের দিকে তাকিয়ে আবার ইতির মায়ের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে
” মানে ই..নি হলো আমার হ..হাসবেন্ড। শান চৌধুরি সন অফ মুসফিক চৌধুরি।” ইতির মা কিছু মুহূর্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে
” হ্যা ওনাকে তো কয়েকবার টিভিতে দেখেছিলাম। ওর বাবা, ভাইয়েদেরও দেখেছিলাম বড় ভাই তো ডক্টর তাই না ??” শান মুচকি হেসে বলে
” জি আন্টি।” ইতির মা দুজনের আপ্যায়নে লেগে পরে। সোহা শানের পাশে বসতেই শান সোহার কাণে ফিসফিস করে বলে
” সারাদিন ধরে বসে বসে আদর খেতে থাকবে নাকি ?? যেই কাজের জন্য এসেছি সেটাই তো বলা শুরু করিনি এখনও। কিছু বলো তো ??” সোহা গলা ঝেড়ে সোজা হয়ে বসে। ইতির মা হাতে নাস্তা ভরতি ট্রে নিয়ে এসে ওদের সামনে রাখে। সোহা আদুরে স্বরে বলে উঠে
” আন্টি ইতি কোথায় ?? ওকে তো দেখছি না।” ইতির মার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ইয়ামিনকে ইশারায় করে বোঝায় ইতিকে নিয়ে আসার জন্য। ইয়ামিন চলে যেতেই ইতির মা নিশ্বাস ফেলে বলে
” তুমি আজকে কেনো এসেছো সেটা বুঝতে পেরেছি আমি। ইতি আমাকে নিজের আর ইমনের সম্পর্কে প্রথম থেকেই সব বলে এসেছে। ওদের সম্পর্কে তুমিও যে সব জানো সেটাও আমি জানি। আমাদের বাড়িতে সবাই ইতির বাবাকে ভয় পায় তাই সেই ভয়ে আর কিছু বলে উঠেনি ওনাকে। কালকে দুজনকে একসাথে দেখে উনি ব্যাপারটা কিভাবে নিয়েছেন সেটাও জানি না। ইতিকে তো আটকে রেখেছেই আমরা কেউ কিছু বলে উঠলেই রেগে যায় সেই ভয়ে আমিও কিছু বলতে পারিনি। একটু পরই বাড়িতে আসবে।” ইতির মায়ের কথা বলার ধরণ দেখেই সোহার বুকের ভেতরের পানি শুকিয়ে গেলো। সোহা কিছুটা ভয়ে শানের গা ঘেঁষে গুটিশুটু মেরে বসে থাকে। শান মুখ টিপে হাসে সোহাকে দেখে। ইতির মা দুঃখি দুঃখি চেহারায় সেখান থেকে প্রস্থান করে। ঝড়ের গতিতে দৌড়ে এসে ইতি সোহাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। সোহা ভয়ে প্রথমে লাফিয়ে উঠলেও পরে বুকে থুঃথুঃ দিয়ে শান্ত হয়ে ইতিকে শান্ত করার কাজে লেগে পরে। ইতির মাথায় হায় বুলিয়ে বলতে থাকে
” কান্না থামা। ইমন ভাইয়াও চলে আসবে একটু পর। আংকেল আসুক দেখি কি করতে পারি।” ইতি মুখ তুলে জড়ানো গলায় বলে
” এভাবে বলিস না প্লিজ !! কিছু একটা কর নাহলে ইমনকে ছাড়া আমি এমনি মরে যাবো। বাবা যদি রাগের বসে আমার অন্য কারোর সাথে বিয়ের করিয়ে দেয় !!” সোহা ধমকের স্বরে বলে
” চুপ !! এসব কথা তুলে আনছিস কেনো তুই ?? এখনও কিছু শুরুই হয়নি আর তুই শেষের কথা বলছিস ??” ইতি কিছু না বলে আবার কাঁদতে থাকে। সোহা আর শানের ইতি, ইমনের জন্য খারাপ লাগতে থাকে। দুজন এতোদিন কতো দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়ার মাঝে একে অপরকে ভালোবেসেছে সেটা দুজম দেখেছে। এখন এইরকম পরিস্থিতিতে পড়ায় সত্যি কষ্ট লাগছে।
” কে আপনারা ?? আর ইতি তুমি এখানে কিভাবে এসেছো ??” অপরিচিত পুরুষের গম্ভীর গলার আওয়াজ পেয়ে শান সেদিক তাকালো। হাতে ব্যাগ ভরতী বাজার দেখে বুঝতে বাকি রইলো না ইনিই ইতির বাবা। শান উঠে গিয়ে তাকে সালাম দেয়। ইতির বাবা সালামের উত্তর দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শানের দিকে।
এদিক্ব সোহা মাথা ঘুরিয়ে তাকালোও না। গম্ভীর গলার আওয়াজ শুনেই সোহা বরফের মতো জমে গেলো। বাবাকে দেখে ইতি এবার নিজেক ছাড়াতে চাইলেও সোহা ইতিকে ছাড়লো না। ইতির হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” ওই আমাকে ছাড়বি না। তোর বাবাকে না দেখেই আমার ভয় করছে দেখলে না জানি কতো ভয় করে।” সোহার কথায় ইতির হাসি পেলেও পরিস্থিতি দেখে ইতির কিছুটা রাগ হলো। ইতি কিছিটা রেগে বলে
” হাদারাম, গাধী !! তুই আমার প্রবলেম সলভ করতে এসে নিজেই ভয়ে বরফের মতো শক্ত হয়ে আছিস।” সোহা কাঁদোকাঁদো চেহারায় ইতির দিকে তাকালো। ইতি চোখের পানি মুছে সোহার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবার বাবার দিকে ভীতু দৃষ্টিতে তাকায়।
ইতির বাবা কিছুক্ষণ ধরে শানকে দেখে অবাক স্বরে বলে
” আপনি শান চৌধুরি না ??” শান মুচকি হেসে বলে
” জি আংকেল।” ইতির বাবার চোখে মুখে উল্লাস আর বিস্ময় দেখা গেলো। অবিশ্বাস্য হয়ে বলে
” আপনি আমার বাড়িতে !! মানে সত্যি !! আপনি আমার বাড়িতে কিভাবে??” শান মেকি হাসি দিলো। ইতির বাবাকে বলে
” আপনি বসুন। আপনার সাথে কথা বলার জন্যই আসা।” ইতির মা এসে সব জিনিস পত্র ভেতরে নিয়ে গেলো। ইতির বাবা এখনও রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে বসে আছে শানের সামনে।
সোহাও এবার ভয়ে ভয়ে ইতির বাবার দিকে ঘুরে তাকালো। কিন্তু তাকে দেখে সোহার সব ভয় নিমিষেই পালিয়ে গেলো। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই থাকে। শান সোহার পাশে বসতেই ইতির বাবা এবার সোহাকে খেয়াল করে। সোহা মিষ্টি হাসি দিয়ে সালাম দিয়ে বলা শুরু করে
” আমি সোহা ইতির বেস্টফ্রেন্ড। আর আমি ওনার মানে শান চৌধুরির ওয়াইফ। আমরা আপনার সাথেই কথা বলতে এসেছি। কিন্তু একটা কথা হলো, আংকেল আপনি অনেক হ্যান্ডসাম। মানে আপনার যে বিয়ের বয়সি একটা মেয়ে আছে আবার পনেরো বছরের ছেলে আছে সেটা বোঝায় যায় না। আপনাকে দেখে এতোটাও বুড়ো মানুষ মনে হয় না। মনে হয় এখনও আপনার বিয়ে হয়নি। চাইলেই দুইটা বিয়ে দেওয়া যাবে এখনও। ” সোহার হাসি হাসি মুখে এমন কথা শুনে সবাই বিস্মিত ভাবে বোকার মতো সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে। শান কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থেকে কোনোরকমে নিজের হাসি আটকে রাখে। আর ইতি সেভাবেই তাকিয়ে থেকে ভাবতে থাকে যেই মেয়ে কিনা এতোক্ষণ ভয়ে মুখও দেখতে চাইলো না সে এখন সেই রাগি, গম্ভীর মানুষটার সাথে এভাবে কথা বলছে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ৪৩
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা

সোহার হাসি হাসি মুখে এমন কথা শুনে সবাই বিস্মিত ভাবে বোকার মতো সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে। শান কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থেকে কোনোরকমে নিজের হাসি আটকে রাখে। আর ইতি সেভাবেই তাকিয়ে থেকে ভাবতে থাকে যেই মেয়ে কিনা এতোক্ষণ ভয়ে মুখও দেখতে চাইলো না সে এখন সেই রাগি, গম্ভীর মানুষটার সাথে এভাবে কথা বলছে। ইতির বাবা এবার ধীরেধীরে তার চেহারায় গম্ভীরতা নিয়ে এলো। গম্ভীর গলায় বলে
” তুমি একটু বেশি কথা বলছো। আমি কিন্তু তোমার বন্ধু নই।” সোহা ফিক করে হেসে দেয়। শান বাদে সবাই আবারও অবাক হয়ে তাকালো। সোহা হাসতে হাসতে বলে
” আচ্ছা আংকেল সবাই আপনাকে কেনো ভয় পায় ?? আপনি গম্ভীর গম্ভীর চেহারা বানালেও আপনাকে একদমই তেমন রাগি লাগছে না।একটু আগেও আপনাকে না দেখেই আমার ভয় লাগছিলো কিন্তু দেখার পর আমার একটুও ভয় করছে না আপনাকে দেখে।” ইতির বাবা এবার গলা ঝেড়ে নড়েচড়ে বসে। মেয়েটা তার প্রশংসা করছে নাকি তাকে অপমান করছে সেটাই বুঝে উঠতে পারলো না। ইতির বাবা এবার শানের দিকে তাকিয়ে কিছুটা উৎসাহিত স্বরে বলে
” আপনাকে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। আপনাদের পরিবারের সবাইকে আমার খুব ভালো লাগে। আপনি আমার বাড়িতে এসেছেন আমার সত্যি নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।” শান হালকা হেসে ইতস্ততবোধ করে বলে
” আংকেল এভাবে বলবেন না অস্বস্তি লাগছে আমার। আমি যেহেতু আপনার অনেক ছোট সেহেতু আপনি আমাকে তুমি করেই সম্মোধন করতে পারেন।” শান ইতির বাবাকে দেখে বুঝতে পারলো তিনি শানের কথায় কিছুটা খুশিও হয়েছে। শান এবার নরম স্বরে বলে উঠে
” আংকেল আমরা ইতির ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি।” ইতির বাবার চেহারা আবারও গম্ভীরতা দেখা দিলো। ইতির বাবা গম্ভীর গলায় বলে
” কি বলবে তোমরা ?? আমি ওকে নিয়ে কিছু শুনতে চাই না। কালকেই যা দেখার দেখে নিয়েছি আমি।” বলে কিড়মিড় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইতির দিকে। ইতি তার ছলছল চোখ জোড়া নিচে নামিয়ে নেয়। শান হালকা হাসলো ইতির বাবাকে দেখে। নিশ্বাস ফেলে বলে
” আংকেল আপনি দেখেছেন সেটা তো শুনেছি কিন্তু ওদের নিয়ে কি ভাবছেন সেটা এখনও জানি না আমরা। তবে আমি বলবো ইমনের মতো ছেলে আপনি খুঁজলেই পাবেন কিন্তু একটা ছেলে হিসেবে ওর তুলনা হয় না। হাসি-খুশি, প্রাণবন্ত একটা ছেলে। অপরিচিত মানুষদের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিতেও সময় নেয় না। ইমন খুব হেল্পফুল আর আত্মনির্ভরশীল ছেলে। সব চেয়ে বড় কথা ইতি আর ইমন দুজন দুজনকে ভালোবাসে।” ইতির বাবা গম্ভীর গলায় বলে
” দেখো বাবা আমি এসব ভালোবাসা-বাসিতে বিশ্বাস করি না। তাই আমাকে এসব নিয়ে না বলাই ভালো হবে। আমি আমার মেয়েকে এসবের ধারে রাখতে চাই না।” শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” মানে ?? আপনি কি ইতিকে দূড়ে কোথাও নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন ??” ইতির বাবা স্বাভাবিক হয়ে বসে বলে
” হ্যা ইতিকে আমি দূড়ে কোথাও পাঠিয়ে দেবো।”
ইতি হতবাক হয়ে সোহা, শানের দিকে তাকালো। সোহা নিজেও অবাক হয়ে গেলো। ইতি কাঁদতে কাঁদতে বলে
” বাবা আমি কোথাও যাবো না। আমি ইমনকে ছাড়া দূড়ে কোথাও থাকতে পারবো না।” ইতির বাবা ইতির দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে। ইতি অসহায় চাহনি দিয়ে মাথা নিচু করে নেয়। ইতির বাবা রেগে কিছু বলার আগেই হুট করে বাইরে থেকে কেউ বাতাসের গতিতে ছুটে এসে ইতির বাহু চেপে ধরে। ইতির বাবা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখে এটাই কালকের দেখা ছেলেটা। ইমন অস্থির গলায় বলতে থাকে
” ইতি ঠিকাছো তুমি ?? কি হয়নি তো তোমার ? কালকে থেকে এতো কল, মেসেন দিলা। তুমি আমার একটা ফোনও ধরোনি কেনো ?? জানো আমার কতো চিন্তা হচ্ছিলো ?? ভাবি কিছু না বললে তো আজকে মরেই যেতাম।” ইতি আতংকিত দৃষ্টিতে একবার বাবার দিকে তাকালো আবার ইমনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় চুপ করতে বলে। সোহা জিভ কেটে ইতির বাবার দিকে তাকায়। ইতির বাবা রাগে ফুসফুস করছে যেকোনো সময় বোমের মতো ফেটে পরবে। ইতির ইশারা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরে ইমন ঘুরে একবার ইতি বাবার দিকে তাকিয়ে বরফের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মাথা নিচু করে। ইতির বাবা রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে
” অসভ্য ছেলে !! তোমার সাহস কি করে হয় আমার বাড়িতে পারমিশন ছাড়া ঢুকে পড়ার ??”
ইতির বাবা রাগে ফুসতে থাকে।
” আসতে পারি ?? আমার ছেলে না নিলেও আমি কিন্তু পারমিশন নিয়েছি আসার জন্য।” অপরিচিত গলা শুনে ইতির বাবা ঘুরে দরজার দিকে তাকায়। বিখ্যাত ডক্টর আসফিকুর রহমানকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইতির বাবার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। আজকে তার বাড়িতে এতোগুলো বিখ্যাত মানবের পদধূলি পড়ছে ভাবতাই তার মাথা ঘুরছে। ইতির বাবা এগিয়ে যায় তার দিকে।
” আপনি আমার বাড়িতে ?? ভেতরে আসুন বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো ??” আসফিকুর রহমান মুচকি হেসে ভেতরে আসেন। সোফায় বসে ইতির বাবাকে বলেন
” আপনিও বসুন অনেক কথা বলার বাকি।” ইতির বাবা মাথা নেড়ে সোফায় বসে। আসফিকুর রহমান ইমনের দিকে ঘুরে গম্ভীর গলায় বলে
” ইমন তুমি উনার কাছে এখনই ক্ষমা চাও। তুমি এভাবে বাড়িতে ঢুকেছো কেনো ??” ইতির বাবা অবাক হয়ে ইমনের দিকে তাকালো। ইমন মাথা নিচু করে মিনমিম স্বরে বলে
” সরি আংকেল আমার এভাবে আসা উচিত হয়নি।” ইতির বাবা প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। আসফিকুর রহমান এবার ইতির বাবার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে
” আমাকে হয়তো চিনেন আপনি। তাও আবার পরিচয় দিচ্ছি। আমি ড. আসফিকুর রহমান। আমারই একমাত্র ছেলে ইমন রহমান।” ইতির বাবা আরো চমকে ইমনের দিকে তাকায়। সোহা শানের ঘা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলে
” এখন কি হবে ??” শান বিরক্ত লুক দিয়ে বলে
” আমি কি করে জানবো ??” সোহা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। ইতির বাবা থমথমে মুখে বলে
” আপনার ছেলে আর আমার মেয়ে কি করেছে সেটা জানেন আপনি ??” আসফিকুর রহমান হেসে হেসে বলে
” হ্যা অবশ্যই জানি। জানবো না কেনো ?? আমার একমাত্র ছেলে কাউকে ভালোবাসে বলে কথা। আমার কাছে সব খবরই আছে।” ইতির বাবা প্রচণ্ড চমকালো ইমনের বাবার কথায়। লোকটা এমন ভাবে কথা বলছে জেনো ছেলে প্রেম করলেও তার কোনো আপত্তি নেই। ইতির বাবা অবাক স্বরে বলে
” আপনি সব জানেন অথচ ছেলেকে কিছু বলেননি !!” আসফিকুর রহমান আবারও হাসতে থাকে। সবাই ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। লোকটা একটু বেশিই হাসছে।
” আমি আমার ছেলেকে কিছু বলেনি আপনাকে কে বলেছে ?? আমি তো আমার ছেলেক অনেক কিছুই বলেছি।” ইতির বাবা ভ্রু কুঁচকে বলে
” আপনি অনেক কিছু বলার পরও যে আপনার ছেলে আমার মেয়ের সাথে এখনও সম্পর্ক রেখে স্থায়ী রেখেছে সেটা জানেন ??” আসফিকুর রহমান এবার হা হা করে হেসে দিলো। এবার সবাই কিছুটা বিরক্তবোধ করলো। এতো সিরিয়াস কথাবার্তার মাঝে কেউ যদি এতো হাসাহাসি করে তাহলে বিরক্ত লাগারই কথা। আসফিকুর রহমান হাসতে হাসতে বলে
” আমিই তো আমার ছেলেকে বলেছি কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসলে কখনো মাঝপথে তার হাত ছেড়ে দিও না। ইতিকে মন থেকে ভালোবাসলে মৃত্যু পর্যন্ত তার হাত আগলে রাখবে। আর নিজেকে তার বাবার সামনে এমন ভাবে পরিচালনা করবে যাতে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ না পায়। আমার ছেলে আপনার মেয়েকে ভালোবাসে তাই তাকে ছাড়ার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু আপনি দুজনকে কেনো আলাদা করতে চাইছেন ??” ইতির বাবা গম্ভীর গলায় বললো
” এসব ভালোবাসাতে আমি বিশ্বাসী নই। ভালোবাসা বলে আজকাল সবাই সবাইকে ঠকাচ্ছে সেখানে আমি একজন মেয়ের বাবা হয়ে কি করে বিশ্বাস করবো ??” আসফিকুর রহমান মুচকি মুচকি হেসে বলে
” হ্যা তা ঠিক। মেয়ের বাবা হলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা মাথায় ঘোরে। তবে এই দুশ্চিন্তার মাঝেই সব সুখ। মাঝে মাঝে আফসোস হয় আমার একটা ছোট মেয়ে হলে মন্দ হতো না কিন্তু আল্লাহ দেয়নি বোধয় আজকের দিনের জন্যই। আমার ছেলের বউ নাহয় আমার বাড়ির মেয়ে হয়েই যাবে। আপনার মেয়েটাকে দেবেন নাকি আমার ছেলের বউ আর আমাদের মেয়ে হিসেবে ??” ইতির বাবা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। আসফিকুর রহমানের কথার মাঝে আলাদা কিছু একটা আছে। কথায় রসকষ ভরা আবার কথার শুরু আর শেষে মুখে মুচকি হাসিটা বিদ্যমান থাকেই। ইতির বাবা এবার কিছুটা নুয়ে গেলো। বুঝতে পারলো এই গুণী মানবের সাথে রাগি রাগি কথায় কাজ হবে না। শান্ত গলায় বলে উঠে
” দেখুন আমি আমার মেয়েকে এসবের মাঝে রাখতে চাই না। কয়েক বছর ভালো ভালোয় কাটলেও পরে যদি আমার মেয়ের জীবন থেকে সুখ নামক জিনিসটাই চলে যায় তখন কে দায় নেবে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করার জন্য ??”
আসফিকুর রহমান এবার হালকা হেসে বলে
” আপনার পছন্দানুযায়ী ছেলেক বিয়ে করলে যে ইতি ভালো থাকবে সেটার কি গ্যারান্টি আছে ?? কোনো গ্যারান্টি নেই। আজকাল সবাই সবাইকে অন্ধবিশ্বাস করে বিয়ে করে নেয় কিন্তু সুখ নামক জিনিসটা দিতে ব্যার্থ হয়। সেখানে আমার ছেলের কথা নাই বললাম। আমি যতোটুকু বুঝতে পেরেছি আমার ছেলে আপনার মুখ চেয়ে ইতির থেকে দূড়ে থাকার চেষ্টা করলেও ও মন থেকে মরে যাবে। আপনার মেয়েও সুখে থাকবে না ইমনের থেকে দূড়ে সড়ে। দুজন একসঙ্গে থাকলে সবচেয়ে বেশি সুখী হবে সেটা আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি।” ইতির বাবা ইমন আর ইতির দিকে তাকালো। দুজন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইতির বাবা আবারও বলে
” দেখুন আপনি একজন বড়লোক নামীদামী ব্যাক্তিগন। সেখানে আমরা নিম্নবিত্ত পরিবার। আমার বাড়ির মেয়ে আপনার বাড়িতে গিয়ে মানিয়ে নিতে পারবে না।” আসফিকুর রহমান হেসে বলে
” চেষ্টা করলেই সব পারা যায়। আমি কখনোই আমার টাকা-পয়সা, গাড়ি বাড়ি নিয়ে অহংকার করি না। আমার বাবা একজন সাকসেসফুল বিজনেসম্যান সেখানে আমি একজন ড. আর আমার ছেলে নিজের যোগ্যতায় এখন একটা অফিসে ম্যানেজার পোস্টের কর্মচারী। যদিও ইমনকে বাবার ব্যবসায় যোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ইমন বলেছে সেই যায়গায় বসার সময় হলে ও নিজে বসবে সেখানে। আপনার মেয়ে আমার বাড়িতে তার ইচ্ছেমত থাকবে।”
শান এগিয়ে এসে ধীর গলায় বলে
” বড়দের মাঝে কথা বলার জন্য দুঃখিত। আংকেল ইতির ভবিষ্যৎ এখন আলনার হাতে। দয়া করে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়ের জীবনটা নষ্ট করবেন না। আমাদের মতে ইতির এখানে বিয়ে না হলে সুখি হবে না।” ইতির বাবা দাঁড়িয়ে ভেতরে চলে গেলো। সবাই তার যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে। ইতি অশ্রুসিক্ত নয়নে ইমনের দিকে তাকালো। ইমন চোখে পানি নিয়ে মলিন হাসি দিলো। ইতি ইমনকে জড়িয়ে ধরে ঢুকড়ে কেঁদে উঠে। ইমন শক্তকরে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ পর ইতিকে ছাড়িয়ে বাবার কাছে গিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” চলো পাপা।” আসফিকুর রহমান মুচকি হাস দিয়ে মাথা নাড়ালো। এখনও ওনার মুখে হাসি ফুটছে হাসিটা দেখে সবাই এতোক্ষণ বিরক্ত হলেও এখন নিতান্তই অবাক হলো। আসফিকুর রহমান শানকে উদ্দেশ্য করে বলে
” হেই ইয়াং ম্যান !! তোমার ভাই আর ফুল ফ্যামিলিকে ছেলের বিয়ের জন্য ইনভাই রইলো।”
শান মুচকি হাসি দিলো। সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে দুজনের দিকে। আসফিকুর রহমান ইমনকে ইশারায় বলে যাওয়ার জন্য ইমন মুখ বন্ধ করে পেছন ফিরে ইতির দিকে তাকালো। ইতি এখনও কাঁদছে। ইমন চোখ ফিরিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।
তখন ইতির বাবা আবারও ড্রইংরুমে প্রবেশ করে। দুজনকে চলে যেতে দেখে বলে উঠে
” যাচ্ছেন কোথায় বেয়ান, মিষ্টি মুখ না করে ??” ইতির মা,ভাই, সোহা চোখ বড়বড় করে ইতির বাবার দিকে তাকালো। শান মুচকি মুচকি হাসছে আর আসফিকুর রহমান হা হা করে হেসে দিলো। ইমন আর ইতি কান্না বন্ধ করে অবিশ্বাস্য ভাবে তাকিয়ে রইলো। ইতির বাবা হাসি মুখে এগিয়ে আসে। হাতে থাকা প্লেট থেকে আসফিকুর রহমানের মুখে মিষ্টি ঢুকিয়ে দেয় আবার শানের মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে ইমনের মুখেও মিষ্টি ঢুকিয়ে দিয়ে বলে
” এতো অনুরোধ শুনে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না। আমার মেয়ের সুখের সাক্ষী হবে সবাই। আমি বিয়েতে রাজি কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।” সোহা উৎফুল্ল কন্ঠে বলে
” কি শর্ত আংকেল, কি শর্ত ??” ইতির বাবা শান্ত গলায় বলে
” আপনারা মান্যগণ্য মানুষ তাই কেউ কিছু বলতে নাও পারে তবে আমার এলাকায় মান-সম্মানের ব্যাপার আছে। আমি চাই এক সপ্তাহের মাঝে দুজনের কাবিননামা বিয়ে হবে। বাকি সব পরে।” সবাই একটু অবাক হয় কথাটা শুনে তবে আসফিকুর রহমান হাসতে হাসতে
” আরে এক সপ্তাহের মাঝে কেনো ?? কালকেই বিয়ে হবে ওদের। শান চৌধুরি তুমি তোমার ওয়াইফ আর ফুল ফ্যামিলিকে নিয়ে উপস্থিত থাকবে আর আমি আমার ফুল ফ্যামিলি নিয়ে আসবো।” সবাই খুশি তবে হুট করে এই সিদ্ধান্তে ইতি আর ইমন বড় সড় একটা ধাক্কা খেলো।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ