#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ৪০
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা
সোহা শানের শার্টের কোণা শক্ত করে ধরে। ভীতু স্বরে বলে
” না, আপনি কোথও যাবেন না প্লিজ !! আমি আর এমন কিছু করবো না কথা দিচ্ছি। আপনিও কথা দিন আর কোথাও যাবেন না !!” শান মুচকি হেসে বলে
” নাহ কোথাও যাবো না।” সোহা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে শানকে জড়িয়ে ধরে।
সোহার স্যালাইন খুলে নার্স চলে যায়। সোহা শানের দিকে তাকিয়ে মুখ লটকিয়ে বলে
” আমার খিদে পেয়েছে তাড়াতাড়ি খাবার দিন।” শান ভ্রু কুঁচকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে
” একটু পর মা ভাবিমনিরা খাবার নিয়ে আসবে তোমার জন্য ততোক্ষণ ওয়েট করো প্লিজ !!” সোহা শানের দিকে তাকিয়ে সন্দেহী বাজের মতো বলে
” আপনি কি কালকে থেকে কিছু খেয়েছেন এখনো ??” শান মাথা নেড়ে বলে
” হ্যা খেয়েছি তো সকালে ছোটভাবি জোড় করে খাইয়ে দিয়ে গিয়েছে।” সোহা চোখ বড়বড় করে তাকায় শানের দিকে। শান ভেবে খুঁজে পায় না সোহা এভাবে কেনো তাকিয়ে আছে। সোহা ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে বলে
” আল্লাহহহ !! সিমিপু আপনাকে খাইয়ে দিয়েছে ?? কি খারাপ, কি খারাপ। আমার সাথে কি রেগে কথাটাই না বললো !! আর আপনাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে গিয়েছে ?? আপনি জানেন !! আজ পর্যন্ত কোনোদিন আমাকে খাইয়ে দেয়নি শাঁকচুন্নি টা। আর আপনাকে খাইয়ে দিয়ে গিয়েছে। এমনি এমনি কি আর হিংসুটে বলি ?? এই মেয়ে তো সত্যি হিংসুটে। আসুক আজকে চুল টেনে দরজায় বেধে রাখবো।” শান সোহার রিয়েকশন দেখে মিটমিট করে হাসতে থাকে। সোহা আরো সিমিকে নিয়ে বকবক করতে থাকে। এক সময় মুখ ফুলিয়ে কেঁদে দেয়। শান নিজের কপালে বাড়ি দেয়। মেয়েটার খিদে পেলে মুড সুইং হওয়ার কথা সবাই জানে তবুও ওরা এখনও আসছে না ভেবে শান বিরক্ত বোধ করলো। দরজা লক করে সোহার সামনে বসে সোহার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে।
” থাক আর কাঁদতে হবে না।” সোহা আবার চোখের পানি ফেলতে নেবে আর আগে শান সোহা কোমড় জড়িয়ে ধরে সোহাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। সোহা অবাক চোখে তাকাতেই শান বাকা হাসি দিয়ে সোহার অধর জোড়া নিজের আয়েত্তে নিয়ে নেয়। সোহাও খুধার বশে শানের অধর জোড়া খুব করে চুসে নিতে থাকে। শান এই অবস্থার মাঝেই হালকা হাসি তোলে ঠোঁটের কোণে। সোহার কোমড়ে রাখা হাতটা দিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেয় সোহাকে।
প্রায় অনেক্ষণ পর সোহার শরীরে আবার দুর্বলতা ভর করে। শানকে ছেড়ে মাথা এলিয়ে পরে যেতে নিলে শান তাকে আঁকড়ে ধরে নেয়। অস্থির গলায় বলে
” কি হয়েছে সোহা !! খারাপ লাগছে তোমার ?? ভাইয়াকে ডাকবো ??” সোহা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে ডান,বা দিকে মাথা নাড়িয়ে না বলে। শান সোহাকে শুয়ে দিয়ে বলে
” তাহলে কি হয়েছে ?? দাঁড়াও ভাইয়াকে ডাকছি।” শান নিজের ঠোঁট মুছতে মুছতে এক ছুটে বেড়িয়ে যায় কেবিন থেকে। শরীরে শক্তি না থাকায় সোহা আধবোজা চোখে শুয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর ইশানের কণ্ঠ কাণে ভেষে আসে। সোহা চোখ খুলে সামনে তাকায়।
ইশান্র সোহার দিকে একটা হাসি দিয়ে তাকায়। পরে শানকে বলে
” সোহা একটু বেশি দুর্বল তাই এমন হচ্ছে। রাতে আরো একটা স্যালাইন দেওয়া হবে। আর সোহা এখনও কি খাওয়া দাওয়া করবে না ?? কয়েকদিন পর দেখবে রক্তশুন্যতা দেখা দিয়েছে তখন কিন্তু খুব বেশি প্রবলেম হবে।” সোহা দুর্বল গলায় বলে
” ভাইয়া আমি তো এখন খাওয়া দাওয়া করি।” ইশান বিরক্ত ভঙিতে বলে
” হ্যা দেখি তো তুমি কি খাও। খেতে খেতে মোটা যে হয়ে গিয়েছো !!” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” ভাইয়া আমাকে ছাড়বে কবে বলো তো !! আমার এখানে ভালোলাগছে না। বারবার ওই বজ্জাত নার্সটা আসে আর আমাকে বকা দেয়, বিরক্ত করে, হুহ !!” ইশান শব্দ করে হেসে দেয় সোহার কথায়। হাসতে হাসতে বলে
” আরো দুইদিন এই অত্যাচার সহ্য করতে হবে তোমাকে। আর কোন নার্স তোমাকে বকা দেয় আমাকে চিনিয়ে দেবে আমি তাকে বদলে দেবো।”
সোহা চোখ বড়বড় করে বলে
” আরে ভাইয়া ওই যে একজন আছে না !! যাকে দেখতে কিছুটা বুড়ি বুড়ি কিন্তু নায়িকা সেজে আসে। জানো তুমি ?? বুড়িটা শানের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে হয় চোখ দিয়েই গিলে ফেলবে। আমি রেগে তাকালে আমাকে শুধু শুধু কেয়ারলেস, বাদর এসব বলে বকতে বকতে বেড়িয়ে যায়।” ইশানের হাসির শব্দ আরো বেড়ে গেলো। শান সোহার কথা গুলো শুনে কিছুটা অবাক হলেও ইশানকে হাসতে দেখে হেসে দেয়। ইশান হেসে বলে
” সেই নার্সের বিয়ে হয়নি। তিনি নাকি তার মন মতো লাইফ পার্টনার খুঁজে পান না তাই এখনও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি। মনে হচ্ছে শানকে নিজের লাইফ পার্টনার বানানোর চিন্তা করছে। তবে তুমি চিন্তা করো না আমি তাকে সাবধান করে দেবো আর তোমার জন্য অন্য একজন বিবাহিত নার্সকে পাঠাবো।” ইশান হাসতে হাসতে বেড়িয়ে যায়। শান সোহার দিকে তাকালো। সোহা নিশ্চিন্তে তার মোবাইল বের করে টিপছে। সোহাকে দেখে মনে হলো ইশানের কথা গুলো শুনে সোহা তার খুব বড় চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছে। শান সোহার সামনে এসে দাঁড়ায়। বুকে দুই হাত গুঁজে এক ভ্রু নাচিয়ে বলে
” এটা কি ছিলো ?? একটু আগে তোমার মুড সুইং করছিলো। একবার ছোটভাবিকে নিয়ে বকলে, একবার কাঁদলে, একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে। আর এখন এমন ভাব করছো তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ।” সোহা বড় একটা হাসি দিয়ে বলে
” হ্যা সত্যিই তো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। আমার সব আছে আমার কিছু নিয়েই চিন্তা নেই। খাবো দাবো, ঘুমাবো, সবাইকে ভালোবাসবো, ভালোবাসা নেবো আর কোনো চিন্তাই নেই। কিন্তু এখন আমার অনেক খিধে পেয়েছে।” শান মাথা নেড়ে হতাশার নিশ্বাস ফেলে বলে
” দাঁড়াও বাড়িতে ফোন দিয়ে দেখছি কখন আসবে।” শান সোহার হাত থেকে ফোন নিতে নিতে শুনতে পেলো
” আর বাড়িতে ফোন করতে হবে না আমরা চলে এসেছি।” দুজন তাকিয়ে দেখে বাড়ির সব মেয়েরা চলে এসেছে। নিলা আর সিমি দুই হাতে দুই ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে এলো। ব্যাগ গুলো সোহার পাশের টেবিলে রাখতেই শান বলে
” তোমরা এতো দেড়ি করলে কেনো ?? ম্যাডাম আমাকে পাগল বানিয়ে দিয়েছে। একবার রাগারাগি করে, একবার কাঁদে আবার ইশান ভাইয়ার সামনে কতো কি বললো। পাগল মেয়ে।” সবাই শানের কথায় হাসতে থাকে। শান সোহার খাবার বের করে সোহার সামনে দেয়। সিমি বাকা চোখে তাকিয়ে বলে
” তুমি এখন বুঝতে পারলে এই মেয়ে পাগল !! আমি তো ছোট বেলা থেকেই চিনি একে।”
সোহা রেগে চেঁচিয়ে বলে
” আম্মু !! তোমার মেয়েকে কিছু বলো নয়তো আমি ওর মাথা ফাটিয়ে দেবো। শাঁকচুন্নি মেয়ে একটা। আমাকে আজ পর্যন্ত কোনোদিন খাইয়ে দেয়নি। আবার পাগল ঝগড়া করতে এসেছে।” সিমি ঢোক গিলে শানের দিকে তাকালো। সোহা কথাটা জানতে পেরেছে মানেই এখন সিমির হাতে না খাওয়া পর্যন্ত ও থামবে না খোঁটা দিয়েই যাবে।
সোহা খিধের জন্য আর কথা না বাড়িয়ে শানের হাতে খেতে থাকে।
দুইদিন পর সোহাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
———————
শান অফিস থেকে রুমে এসে সোহাকে দেখতে না পেয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। শান ওয়াসরুমে যেতেই সোহা পা টিপেটিপে রুমে ঢোকে। শানকে রুমে না দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে টেবিলে বসে পরে। শান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখতে পায় সোহা টেবিলে বসে গুনগুন করে পড়ছে। শান হাতের টাওয়ালটা সোফায় রেখে সোহার কাছে গিয়ে পেছম থেকে সোহার কান টেনে ধরে সোহা চেঁচিয়ে উঠে শানের এমন আক্রমণে। চোখ বড়বড় করে বলে
” আরে আরে কি করছেন কি ?? আমার কান ছিড়ে যাবে তো ছাড়ুন, ছাড়ুন !! পরে সবাই আপনাকে কান কাটা বউ এর জামাই বলবে। তখন কি আপনার ভালো লাগবে ??” শান সোহা কান ছেড়ে দিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বলে
” তাই না !! আমি কিছু বললেই মানুষ এই বলবে সেই বলবে আর নিজে যখন উল্টো পাল্টা কাজ করে বেড়াও তখন কেউ কিছু বলে না বুঝি ?” সোহা দাঁত কেলিয়ে বলে
” আমাকে কেউ কিছু বলে নাকি ?? আর কেউ বললেও কি আমি শুনবো নাকি ?? তাদের স্বাভাবই তো এসব করা। আমার সামনে ভালো আর পেছনে খারাপ কথা বলা । তাহলে আমাদের পেছনে ফিরে তাকানোর কি দরকার বলুন তো ??” শান মাথা নেড়ে বলে
” ঠিকই বলেছো। আমরা কেনো পেছনে ফিরে তাকাবো। তাহলে আমার কি দরকার পেছনে ফিরে তাকানোর?? আমিও তো ওদের কথায় কান দেবো না তাহলে আমার বউ কান কাটা হোক আর ঠোঁট কাটা হোক সেটা আমার ব্যাপার তাই না ??” শানের ঠোঁটের বাকা হাসি দেখে। সোহা চোখ বড়বড় করে নিজের কানে হাত দেয়। নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গিয়েছে। সোহা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
” আপনি আমার মতো একটা ইনোসেন্ট মেয়ের কান কেটে দেবেন ??” শান রেগে বলে
” ইনোসেন্ট মেয়ে তুমি ?? ইনোসেন্ট আর তোমার মধ্যে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি পার্থক্য সেখানে তুমি কিনা ইনোসেন্ট ?? কালকে একটু বকা দিয়েছিলাম বলে তুমি কালকে রাতে আমার ফাইলে কি এঁকেছ এগুলো ?? মিকিমাউস কার্টুন, ফুল গাছ আরো কতো কি !! এটা কি তুমি তোমার স্কুলের ড্রইং খাতা পেয়েছো ?? ভাগ্য ভালো ছিলো আমার। মিটিং এর আগে আমি ফাইলটা চেক করে সব পেপারস ঠিক করেছি। নাহলে আজকে তোমার জন্য আমার মান-সম্মানের বারোটা বেজে যেতো। ভাবতে পারছো তুমি কতো ভয়ানক কাজ করেছো ??” সোহা মিটমিট করে হাসছিলো শানের কথা শুনে। শানের শেষের প্রশ্ন শুনে হাসি থামিয়ে বলে
” না। আমি তো ভালোকাজ করেছি। আপনার উপর রাগ হয়েছিলো তাই এমন করেছি। বেশ করেছি।” শান সোহার হাত টেনে ধরে নিজের বুকে ফেলে মেকি হাসি দিয়ে বলে
” তাই না !! তাহলে এবার যেই শাস্তি দেবো তা চুপচাপ সহ্য করতে থাকুন।” সোহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শান সোহার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। সোহা চোখ বন্ধ করে শানের হাত খামঁছে ধরে। শান সোহার গলায় ছোট ছোট চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতে থাকে। সোহা শানকে খামঁছে ধরে লজ্জায় নুয়ে যেতে থাকে। শান তার স্পর্শ ধীরে ধীরে গভীর করতে থাকে। সোহার নাকে আলতো ভাবে কামড় দিয়ে সোহার অধর জোড়া নিজের করে নেয়। কতো সময় এভাবে ছিলো দুজন জানে না। অনেক সময় পর দুজন একে অপরকে ছেড়ে দিয়্ব ঘনঘন নিশ্বাস নিতে থাকে। স্বাভাবিক হতেই শান মুচকি হেসে সোহাকে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। সোহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে
” সময় কিভাবে কেটে গেলো তাই না ?? আরো সাত সাতটা মাস পেড়িয়ে গেলো আমাদের ভালোবাসা দিয়ে।”
চলবে~ইনশাল্লাহ…….
#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ৪১
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা
সোহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে
” সময় কিভাবে কেটে গেলো তাই না ?? আরো সাত সাতটা মাস পেড়িয়ে গেলো।”
সোহা শানের বুকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শানের হাতের উপর হাত রেখে ধীর গলায় বলে
” হুম। কিভাবে সময় পেরিয়ে গেলো বুঝতেও পারিনি। আমার ছোট বাবাটাও তো পৃথিবীর আলো দেখবে কয়েকদিন পরই। ইশশশ, আপু যে কেনো একা আম্মুর কাছে গেলো ?? আমাকে নিয়ে যেতে পারলো না ?? আমার একদম ভালো লাগেনা বাবুকে ছাড়া।” শান বাকা চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” নিয়ে গিয়েছে একদম ভালো হয়েছে। তোমার জন্যই তো ভাইয়া ছোটভাবি নিজেরা আলাদা টাইম স্পেন্ড করতে পারতো না। তুমি নাইসাকে নিয়ে সারাদিন ছোটভাবির কাছে বসে থাকতে বাবুর জন্য। সারাদিনে তো আমার কাছেও আসতে না।” সোহা ফিকফিক করে হেসে দেয়। শান গম্ভীর চাহনি নিক্ষেপ করে সোহার দিকে। সোহা মুখে হাত দিয়ে হাসি থামানোর চেষ্টা করে এবং সফলও হয়। সোহা ঘুরে শানের গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে
” শান !!” শান ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে যে ‘ কি হয়েছে ??’ সোহা বুঝেও আবার একই ভাবে বলে
” শান !! শুনুন” শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি হয়েছে ?? আবার কোন ভূতে ধরেছে ?? আবার কি চাই তোমার ?? এখন ভাবিকে এনে দিতে পারবো না। দুদিন পর ভাবির ডেলিভারি।” সোহা চোখ ছোট করে তাকিয়ে বলে
” আমি কি একবারও বলেছি যে আপুকে এনে দিতে ??” শান বিরক্তকর চেহারা বানিয়ে বলে
” তোমার চাওয়া পাওয়া তো এসবই। একবার বলেছিলে আপুকে এনে দিন আমি আপুর বাবুর সাথে কথা বলবো। আবার বলেছিলে নাইসাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো নিয়ে চলুন আর দুইদিন আগে বলেছিলে টমির জন্য একটা জামাই খুঁজে আনতে। এসব উল্টো পাল্টা জিনিস ছাড়া আর কি চাও তুমি ?? একবারও কি আমার বা তোমার জন্য ভালো কিছু চেয়েছো ??” সোহা শানের কাধের উপর থেকে দুই হাত সরিয়ে নেয়। দুই দিকে মাথা নেড়ে না জানায়। পরক্ষণেই আবার একহাতে শানের বাহু আর অন্য হাতে শানের পড়নে গেঞ্জি খামঁছে ধরে শানের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ায়। শান অবাক হয়ে বলে
” কি করছো এসব ??” সোহা মাথা নেড়ে বলে
” কিছু না। আচ্ছা বলুন তো আপনার কি চাই ?? আপনি যা চাইবেন আমি তাই দেবো।” শান অবাক হয়ে বলে
” সত্যি ?? যা চাইবো তাই দেবে ??” সোহা জোড়ে জোড়ে মাথ্ব ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানায়। শান ঠোঁট কামড়ে ধরে বাকা হেসে বলে
” ভেবে দেখো কিন্তু !! পরে লজ্জা পেয়ে তুমি পিছিয়ে গেলেও আমি কিন্তু পিছপা হবো না !!” সোহা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে
” কেনো কি চাইবেন আপনি ??” শান বাকা হেসে সোহার কোমড়ে হাত রাখে। এই শীতের রাতে গা কাঁপানো আবহাওয়া তার উপর শানের ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া সোহার গায়ে শিহরণ বইয়ে দেয়। সোহা চোখ বন্ধ করে শানের বুকে মাথা রাখে। শান মাথা নিচু করে সোহাকে দেখতে দেখতে বলে
” ভাবছিলাম আমাদের বিয়ের তো একছর পূর্ণ হতে আর মাত্র এক মাস বাকি তাই আমি হানিমুনে যাওয়ার প্লেন করছি। তুমি কি বলো ??” সোহা চোখ বড়বড় করে শানের দিকে তাকায়। শানের ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি দেখে সোহা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। লজ্জা পেয়ে শানকে ছেড়ে কিছুটা দূড়ে সরে আসতে চাইলে শান আবারও সোহাকে নিজের কাছে টেনে আনে। সোহার মুখে স্লাইড করতে করতে বলে
” কি হলো ?? এখনই পিছিয়ে যাচ্ছো যে !! তাহলে ধরবো তুমি কি আমাকে আমার ইচ্ছে পূরণ করতে দেবে না ??” সোহা চোখ বন্ধ করে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” আআবার এসসবের ককি দরকার ?? আমি তো এখন সম্পূর্ণ ভাবেই আপনার হয়ে গিয়েছি।এএসবের মানে কি ??” শান বাচ্চাদের মতো মাথা নেড়ে বলে
” না এসব বললে চলবে না। এসবের অনেক মানে। এতোদিন ঘরে বসে বসে রোমেন্স করেছি। হানিমুনে গিয়ে ওপেনলি রোমেন্স করবো।” সোহা লজ্জা পেলেও সেটা প্রকাশ না করে নাক মুখ কুঁচকে বলে উঠে
” ছিঃ !! আপনার লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই নাকি ?? এসব কি কথা !! আমার সামনে এসব কথা বলছেন কেনো ??” শান চোখ বড়বড় করে বলে
” কি কথা এগুলো মানে ?? তোমার সামনে বলবো না তো আমি কি আমার ক্লাইন্টের ওই মেয়েটার কাছে গিয়ে এসব কথা বলবো নাকি ??” বলেই শান জিভ কাটে। সোহা রেগে শানের বুকে ধাক্কা মেরে শানকে সরিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে
” জান ওখানে গিয়েই বলুন। একবার বলেছি না আপনি কারোর কথা বলবেন না তাও আপনি অন্য মেয়েদের কথা বলছেন ?? আপনি খুব খারাপ শান। আমি আর কোনোদিন আপনার সাথে কথা বলবো না।” সোহা এক জোড়া অশ্রুসিক্ত নয়ন নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। শান কপালে হাত দিয়ে বসে। সোহার রাগ ভাঙাতে কি কি করা লাগবে সেটা আগে থেকে পরিকল্পনা করার চেষ্টা করে কিন্তু সেটা করতে পারলো না। তার আগেই নিচ থেকে মায়ের ডাক শুনে ছুটে নিচে চলে গেলো। যেতে যেতে ভাবতে থাকে সোহা নিশ্চই সব দিয়েছে মায়ের কাছে কিন্তু নিচে গিয়ে সবাইকে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখে বুঝতে পারলো সোহা কিছুই বলেনি। শান শাহানাজ বেগমের সামনে এগিয়ে বলে
” ডাকছিলে মা ??” শাহানাজ বেগম স্থির চাহনিতে শানকে দেখে নিয়ে বলে
” হুম বসো কিছু কথা বলবো।” শান শান্ত ছেলের মতো মায়ের পাশে বসে। শাহানাজ বেগম গম্ভীর গলায় বলতে থাকে
” কালকে আমি সিমির কাছে চলে যাচ্ছি। আমি না আশা পর্যন্ত তুমি এখন বাড়ির সবাইকে দেখে রাখবে। নাইসা আর সোহাকে একদম বকাবকি করবে না। টমিকে নিয়েও কোনো ঝামেলা কিরবে না। আমি এসে ওর থেকে কোনো অভিযোগ শুনলেই তোমার বাবাকে বলে তোমাকে চট্টগ্রাম ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করে দেবো। বুঝেছো ??”
শান ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে নিচু স্বরে বলে
” ঠিকাছে কিন্তু মা আমার একটা কথা ছিলো।”
” কি কথা বলো।” শান মাথা চুলকে মুখ বাকিয়ে বলে
” তোমার কার্যকলাপ দেখে আমার মাঝেমাঝে মনে হয় তুমি আমাদের মা নও তোমার বউমা দের মা।” শাহানাজ বেগম শানের কান টেনে ধরে। শান লাফানো শুরু করে ছাড়া পাওয়ার জন্য।শাহানাজ বেগম চোখ রাঙিয়ে বলে
” তুমি আজকাল বেশি কথা বলো। আমার বউমা রা এমনি এমনি এতো আদর পায় না !! তারা নিজেদের মা,বাবা পরিবারকে ছেড়ে স্বামীর বাড়িতে এসে নিজেদের পরিবার তৈরি করে নেয়। তাদের ভালোবাসবো না তো কি পাশের বাড়ির ঢঙি মেয়েটাকে ভালোবাসবো আমি ??” শান নিজের কান ছাড়িয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আবার মুচকি হেসে শাহানাজ বেগমের গাল টেনে বলে
” ইশশ !! পৃথিবীর সব শাশুড়ি বউমা রা তোমাদের মতো হয় না কেনো ?? হলে আর এই ঝগড়া বিবাধ ঘটনা। পৃথিবীর নকশাটাই হতো অন্যরকম।” শাহানাজ বেগম হালকা হেসে বলে
” সবাই একরকম হয়নি দেখেই তো আমরা ভালোবাসা, ঝগড়ার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারি। আচ্ছা এসব কথা বাদ দাও। সোহা যে মন খারাপ করে আছে সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারছি আমরা। কি হয়েছে সেটা মিটমাট করে নাও নাহলে একটু পর তোমার বাবা আর ইশান এসে তোমাকেই আচ্ছা মতো ঝাড়বে।” শান দুই গালে হাত রেখে সোহার দিকে তাকালো। সোহা নিলা আর সালমার সাথে হাতে হাতে ডিনারের জন্য টেবিল সাজাচ্ছে। সাথে নাইসা আর টমির সাথে দুষ্টুমি করছে কিন্তু একবারও শানের দিকে ফিরে তাকালো না। শান উঠে সোহার পেছন পেছন ঘুরতে থাকে। সোহা রান্নাঘরে গেলে শানও পেছন পেছন রান্নাঘরে যায়। কিছুক্ষণ এমন করার পরও সোহা কিছু বললো না চুপচাপ নিজের কাজ করতে থাকে। নিলা আর সালমা মিটমিট করে হাসতে থাকে শানের দিকে তাকিয়ে। শান এক সময় অসহায় ভাবে নিলার দিকে তাকিয়ে বলে
” ভাবিমনি, সালমা হাসছো কেনো তোমরা ?? আমার বউটা রাগ করেছে ওকে আমি ঠিক করে নেই !! নাহলে একটু পর ভাইয়া আর আব্বু এসে রামধোলাই দেবে আমাকে। ছোট ভাইয়া নেই নাহলে আরো বেশি দিতো। এখন এখান থেকে গিয়ে আমাকে একটু স্পেস করে দাও।” সালমা নিজের হাসি থামাতে না পেরে এবার শব্দ করে হেসে দিলো। নিলা চোখ রাঙিয়ে ইশারা করে হাসি থামাতে বলে। সোহা ছুড়ি দিয়ে শষা কাটতে কাটতে গম্ভীর গলায় বলে উঠে
” ভাবিমনি কোথাও যাবে না তোমরা। যার স্পেস দরকার সে যেনো এখান থেকে বেড়িয়ে যায় আর নিজের রুমে গিয়ে বেশি বেশি স্পেস নেয়।” শান অসহায় ভাবে নিলার দিকে তাকালো। নিলা মাথা নেড়ে সালমাকে নিয়ে চলে গেলো। নিলার যেতেই শান সোহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সোহার কাধে থুতনি রাখে। সোহার চলতি হাতও থেমে যায়। সোহা কিড়মিড় দৃষ্টি নিয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। শান সোহার ঘাড়ে চুমু বসিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বলে
” প্লিজ বউ আমার রাগ করে থেকো না !! তখন কি বলে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না। কথা বলতে বলতে সেই কথা মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছে। প্লিজ ক্ষমা করে দাও !!” সোহা কোনো উত্তর না দিয়ে নিজেকে শানের বাধন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। শান হতাশার নিশ্বাস ফেলে নিজেও সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে।
কিছুক্ষণ পর…..
টেবিলে সবাই এসে উপস্থিত হয়েছে। সবাই খাওয়া দাওয়া করছে কিন্তু ইশান চিন্তিত হয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। সোহার চেহারা দেখেই বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে ওর। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারে না
” সোহা !! কি হয়েছে তোমার ?? এমন মন মরা লাগছে কেনো তোমাকে ?? শান কি আবার তোমাকে বকাবকি করেছে তোমাকে ??” সোহা আড়চোখে একবার শানের দিকে তাকালো। শান মাথা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছে। সোহা হালকা হেসে বলে
” না তো আমার কিছুই হয়নি। এমনিই এমন লাগছে।” ইশান কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো না। মুসফিক চৌধুরি এ
” শোন মা শান কিছু বললে আমার কাছে বা ইশানের কাছে বলবি। ওর ট্রান্সফার করিয়ে দেবো আমি। ঠিকাছে ??” সোহা হেসে মাথা নাড়ালো।
রাতে সবাই যার যার রুমে ঘুমিয়ে গেলেও সোহা রাগ দেখিয়ে সিমির রুমে ঘুমাতে চলে গিয়েছে। শান তখন বুঝতে পারলো এটা সোহার রাগ নয়। সোহা প্রথমে রেগে থাকলেও সেই রাগ পরে গিয়েছে এখন কারণে অন্য কারণে আপসেট হয়ে আছে তাই শানের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। শান নিঃশব্দে সিমির রুমের সামনে গিয়ে হাজির হলো। দরজায় হাত রাখতেই দরজা খুলে গেলো। শান ভেতরে ঢুকে দেখে সোহা গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে খাটের কোণায়। মুখের উপর বালিশ রাখা মানে সোহা সেটা নিজের মুখের উপর ধরে রেখেছে। শান কিছু বললো না শুধু সোহার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে সোহাকে কোলে তুলে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। সোহার নিশ্বাসের শব্দ শুনেই বুঝতে পারলো সোহা এঝনও ঘুমায়নি। শান সোহাকে নিজের বিছানায় শুয়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে সোহার পাশে এসে ঘুমায়। সোহা চোখ বন্ধ রেখেই অপরপাশে ফিরে গেলো। শান এবার সোহার কাছে এসে সোহার হাত টেনে সোজা করে শুয়ে দেয়। সোহা তাও চোখ খোলে না। শাম সোহার দিকে ঝুকে বলে
” কি হয়েছে আজকে ভার্সিটিতে ?? দেখো সওহা কথা বলো। আমি খুব ভালো করেই জানি আমার উপর তুমি কতোক্ষণ রাগ করে থাকতো পারো আর কখন লুকিয়ে থাকতে যাও।” কথাটা সোহার কর্ণপাত হতেই সোহা শানের উপর হামলে পরে। শানের গলা জড়িয়ে ধরে ঢুকড়ে কেঁদে উঠে। সোহার কান্নার আওয়াজ শানের বুকে তোলপাড় সৃষ্টি করে দিলেও শান সোহাকে থামালো না। সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম স্বরে বলে
” কি হয়েছে সোহামনি ??” সোহা হিচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আজকে একটা ছেলে আমার সাথে ফ্লার্ট করেছে আবার শেষে অনেক বাজে বাজে কথা বলে অফারও দিয়েছে।” সোহার কান্নার মাঝে কথা গুলো প্রথমের অস্পষ্ট লাগলেও পরে সব স্পষ্ট হয়ে যায় শানের কাছে। শানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। শান দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” কোন ছেলে এটা ?? আমার সোহার সাথে এসব করে ?? কালকে ওই শ**** এর ব্যবস্থা করবো আমি।” সোহা শানের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে। শান নিজেকে কন্ট্রোল করে সোহাকে চুমু দিতে থাকে। সোহার ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে
” সোহামনি কান্না থামাও নাহলে আদর করবো কিভাবে ??” সোহা কান্নার মাঝেই চমকে শানের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর লাজুক হাসি দেয়। শান মুচকি হেসে নিজেদের ভালোবাসার তৃষ্ণা মেটাতে মেতে উঠে।
সকালে ফোনের রিংটোন শুনে সোহার ঘুম ভেঙে যায়। সোহা হাজারো বিরক্ত নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করে কাণে ধরতেই ফোনের ওইপাশ থেকে কারোর কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।
চলবে~ইনশাল্লাহ……..