ডুমুরের ফুল ৪৩.
হেমের ঘুম ভাঙলো জাদিদের ডাকে। জাদিদ হেমের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আর মৃদুস্বরে বলছে
– হেম উঠো। এই হেম…. আমার লাজুকলতা আর কতো ঘুমাবে?
হেমলতা চোখ খুলে জাদিদের ফরশা বুকে নিজেকে আবিষ্কার করলো। তাড়াতাড়ি করে উঠতে গিয়েও পারলোনা। জাদিদ খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। জাদিদের ঠোঁটের কিনারে দুষ্ট হাসি লেগে আছে। হেম ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
– উঁহু ছাড়ো।
– এখনো ঘুমের ঘোরে আছো। একটু পরে উঠো। ঘুমের রেশ টা কাটিয়ে নাও।
হেমলতা ভাবতেই পারছেনা সে জাদিদের সাথে এভাবে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাবে। কী যে হলো হঠাৎ করে…. নিজেকেই ঘৃণা লাগতে শুরু হয়েছে। এটা কী করলো সে?
জাদিদ এখনো তার খোলা পিঠে কিছু একটা আঁকিবুঁকি করছে। নিজেকে বাজারের মেয়েদের মতো মনে হচ্ছে তার।এভাবে পরপুরুষের সাথে বিছানায় যাওয়াটা ঘোরতর পাপ। শেষ পর্যন্ত সেও এই পাপ করে বসলো? জাদিদকে সে প্রচণ্ড ভালোবাসে আর জাদিদও বাসে তাতে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু এভাবে…
জাদিদকে একবারও সে না করেনি। ছেলেরা তো চাবেই কিন্তু….
জাদিদ নরম স্বরে বলল
– উঠো হেম, সকালের নাস্তা করতে হবে। আমার পেটে ইঁদুর দৌড়ে বেড়াচ্ছে।
হেম কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না।
দোষটা তো তার নিজেরই বেশি। চুপচাপ চেয়ারে বসে থাকলেই হতো। জাদিদকে পেয়ে একেবারে নিজেকে উজাড় করে দিলো। এই অবস্থায় মানুষের সামনে যাবে কীভাবে সে?
সবাই কী ভাববে তাকে নিয়ে?
হেমলতা শব্দ করে কান্না জুড়ে দিলো। জাদিদ হতভম্ব হয়ে বলল
– কী হয়েছে এভাবে কাঁদছো কেনো?
হেম জাদিদের থেকে আলাদা হয়ে বিছানার কোণায় পরে থাকা ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিলো। কান্না থামানোর জন্য হেম অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।
সে আসলেই ক্যারেক্টর লুজ মেয়ে।
জাদিদ বিছানা থেকে নেমে হেমের জামা কাপড় এগিয়ে দিয়ে বলল
– কাঁদছো কেনো? আমি কিছু করেছি?
হেম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল
– জাদিদ আমি আসলেই ক্যারেক্টর লুজ মেয়ে।
জাদিদ অবাক হয়ে বলল
– কে বললো এই কথা? আর তুমি ক্যারেক্টর লুজ মেয়ে না। এটা আমি বিশ্বাস কোনোভাবেই করবোনা।
– জাদিদ আমি একটু আগেই পরপুরুষের সাথে বিছানায় গেছি।
– আমরা একে অপরকে ভালোবাসি তাতে…
হেম কথার মাঝে বলল
– জাদিদ, যতোই ভালোবাসি না কেন তুমি আমার কাছে পরপুরুষ আর আমিও তোমার কাছে পরনারী। জাদিদ আমি খারাপ মেয়ে। আমি এটা কী করলাম? আমার এখন মরে যেতে ইচ্ছা করছে।
জাদিদের মেজাজ এবার চড়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল
– একদম চুপ মেয়ে৷ অনেক কথা বলেছো এখন আমাকেও বলতে দাও।
হেম জাদিদের ধমকে কিছুটা দমে গেলো।
– শুনো হেম, আমি মানছি ভুল হয়েছে আমাদের দ্বারা। কিন্তু তাই বলে মরতে হবে কেনো?
– আমি এই মুখ কীভাবে দেখাবো? এখান থেকে বের হলেই তো সবাই আমার দিকে বাজেভাবে তাকাবে।
– যা হবার হয়ে গেছে। এটা নিয়ে পরেও ভাবা যাবে। তুমি ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসো। নাস্তা করতে যাবো।
হেমের হঠাৎ মনে পড়লো তার টিমের তো সকাল ১১ টায় রওনা হবার কথা।
সময় দেখার জন্য মোবাইল চেক করলো। সাড়ে এগারোটা বাজে। মিম্মা তাকে ৫-৬ বার ফোন দিয়েছে কিন্তু ফোন সাইলেন্ট ছিলো বলেই রিসিভ করতে পারেনি।
হেম জাদিদকে বলল
– আমার টিম মনে হয় আমাকে রেখেই চলে গেছে।
জাদিদ গেঞ্জি গায়ে দিতে দিতে বলল
– হ্যাঁ, মিম্মাকে আমি বলে দিয়েছি তুমি আমার সাথে ফিরবে৷
হেমলতা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থেকে বলল
– মানে কী?
হেমলতার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল
– তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই জাগায়নি। তোমার ঘুমানোর স্টাইল দেখে মনে হচ্ছিলো অনেক রাত তুমি ঘুমাওনি। তাই আর ইচ্ছে করলোনা।
– জাদিদ এখন তো ছড়াবে ব্যাপারটা।
– দেখো হেম যা হবার হয়ে গেছে। আমাদের দুজনের কারোরই নিয়ন্ত্রণ ছিলো না নিজেদের মধ্যে। এখন এসব ভেবে লাভ নেই।
হেম জাদিদের সাথে হোটেল থেকে বের হলো ঠিকই কিন্তু লজ্জায় আর ঘৃণায় মাথা উঁচু করতে পারছিলো না। শাম্মী ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল
– হেমলতার ব্যাগপত্র আমার রুমে এনে রেখেছি।
জাদিদ বলল
– বাকি সবাই কই?
– সবাই সবার মতো ঘুরতে বের হয়েছে।
– তুমিও যেতে ওদের সাথে।
– তোমার ঝামেলায় আটকে আছি আমি। আমার যাবার উপায় আছে?
হেমলতার দিকে তাকিয়ে থেকে শাম্মী ভ্রু কুঁচকে হেমলতাকে জিজ্ঞেস করলো
– আপনার ঠোঁটের কিনারে কাটলো কীভাবে?
হেমলতা চমকে উঠলো। এটাতো সে আগে খেয়াল করেনি৷ অনেক সময় যাবত এই কারণে এখানে জ্বলছিল। হুট করে সে মিথ্যা বলতে পারেনা। জাদিদ তার হয়ে বলল
– ও ত্যাড়া কথা বলতেছিল তাই রাগ নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেছিল। তারপর দিলাম কষে থাপ্পড়।
শাম্মী হেমলতাকে বলল
– এইজন্যই বলেছিলাম ওর নেশা এখনো কাটেনি। আর আপনি শুনলেনই না।
জাদিদরা আরো দুইদিন সাজেকে কাটালো। এই দুইদিন হেম শাম্মীর সাথে বেড শেয়ার করেছে। শাম্মী অবশ্য অনেক বন্ধুসুলভ আচরণ করেছে। কিন্তু রেহান খুব একটা পছন্দ করলোনা ব্যাপারটা।
শাহীন অবশ্য কিছুক্ষণ পর পর জাদিদকে খোচাচ্ছে। জাদিদ হেমলতাকে ফরিদপুর পৌঁছে দিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে গেলো।
হেমলতা এখনো ব্যাপারটা ভুলে যেতে পারেনি। জাদিদ তার ব্যস্ত জীবন কাটাতে শুরু করলো। ফ্রী টাইম পেলেই হেমের সাথে ফোনে কথা বলে।
শুক্রবার সকালে হেমলতা দেরি করে ঘুম থেকে উঠলো। রাতে ঘুম হয়নি ভালো। সাজেকের ওই ঘটনা সে ভুলতেই পারছেনা। কীভাবে এতো বড় ভুল সে করলো। এখন যদি সব জানাজানি হয়ে যায় তখন? এমনিতেই তার বদনাম পুরো এলাকা জুড়ে।
বিকালের দিকে মিম্মা আসলো। সাজেক থেকে আসার পর মিম্মার সাথে যোগাযোগ হয়নি হেমের।
মিম্মা হেমলতার বেডরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। হেমলতাকে কড়াকড়ি ভাবে বলল
– শোন, আমি তোকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো সবগুলির উত্তর ঠিকঠাক ভাবে দিবি। ওকে?
– আচ্ছা।
– জাদিদের সাথে রিসোর্টের রুমে কিছু করেছিস? আমার কেনো যেন মনে হচ্ছে তোদের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে।
হেম মাথা নিচু করে বলল
– অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমি।
– আমি এইজন্যই তোকে ওর রুমে যেতে নিষেধ করেছিলাম।
– তুই বাধা দিস নেই কেনো?
– আমার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিলোনা। ওকে এতোদিন পরে কাছে পেয়েছিলাম। জড়িয়ে ধরলাম তারপর কীভাবে যেন হয়ে গেলো সব।
মিম্মা চাপা গলায় বলল
– তুই যা করেছিস এটার পরিণাম জানিস?
জাদিদ তোকে একসেপ্ট করবে? ভাবিস না ও তোকে একসেপ্ট করবে। ওর লাইফ, ক্যারিয়ার দেখেছিস? ওর মতো ছেলের সাথে হাজারটা মেয়ে বিছানায় শোয় তাও তোর মতো যেন তেন মেয়ে না। ওর লেভেলের মেয়েরাই। তোর মতো মেয়েকে ও ইউজ করবে এখন আর তুই নিজেই সেই সুযোগটা করে দিছিস।
হেমলতা মেঝের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিম্মার প্রত্যেকটা কথা সত্যি।
– তুই জানিস ও তোকে জীবনেও বিয়ে করবেনা আবার ছাড়বেও না।
– ( নিশ্চুপ)
– আর কোনো প্রটেকশন ইউজ করছিলি ওইসময়?
হেম ভূত দেখার মতো মিম্মার দিকে তাকালো।
মিম্মা চাপা গলায় বলল
– গাধার মতো তাকিয়ে না থেকে প্রশ্নের উত্তর দে।
– না। আমাদের কারোরই কোনো হুশ ছিলোনা। প্রি – প্ল্যান করে তো না।
– এখন যদি তুই প্রেগন্যান্ট হয়ে যাস তখন কী করবি?
হেম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো মিম্মার দিকে। এটা তো সে ভেবে দেখেনি!
চলবে…
~ Maria Kabir