টেম্পরারি_বিয়ে
_পর্ব_৬
Written by Avantika Anh
আবির গোসল শেষে এসে দেখে আনহা নাই ।
আবির : আনহা কই ?
আমি : মি. আবির আমি এখানে ।
আবির : কই ?
আমি : বেলকনি তে জ্বলদি আসেন আমার ভয় লাগছে ।
আবির : এ্যা পড়ে টড়ে যাচ্ছে নাকি ।
.
.
আবির গিয়ে দেখে আমি বেলকনিতে দাড়ায় আছি শকড্ হয়ে
আবির : ভয়ের কি ?
আমি : আমার উচু জায়গায় কোণায় যেতে ভয় লাগে । আম্মু আমি এতো উপরে ।
আবির : হাহা এতে ভয়ের কি
আমি : পড়ে গেলে কি হবে ।
আবির : জনসংখ্যা কমবে ।
আমি : এ্যা
আবির : হাহা চলে আসুন এদিক ।
আমি : হাত টা দেন
আবির : হাত দিয়া কি হবে
আমি : এখান থেকে ঝাপ দিবো আপনাকে নিয়া ।
আবির : কি???
আমি : আমার ভয় লাগতেছে হাত দেন
.
আবির আমার হাত ধরে কিনার থেকে আনলো ।
আবির : এমনি তো ডেয়ারিং হন আপনি । বাট উচ্চতা এতো ভয় পান ।
আমি : আপনি নিজেও তো টিকটিকি ভয় পান ।
আবির : ম..মা..মানে কে বললো আপনাকে ?
আমি : আরোহি
আবির : এবার বাড়ি গিয়ে ওর বিয়েটা দিয়েই দিবো ।
আমি : না না না ওকে কিছু করুন খালি আপনাকে আমি ঝাটা দিয়া পিডামু ।
আবির : মানে
আমি : আপনি যা বুঝলেন ।
আবির : এই মেয়ে আমাকে পিটাবা এইটুকু একটা মেয়ে ।
আমি : এইটুকু না ৫” ৫ আছি
আবির : যাস্ট হাইটে এমনি তো ৫ বছরের বাচ্চা।
আমি : এ্যা বললেই হলো ।
আবির : যাও ফ্রেশ হও
আমি : উকে
আবির : হুম
.
আমি গোসল টা সেরে ফেললাম ।
আমি : মি. আবির
আবির : কি
আমি : চলেন চকলেট কিনতে যাই
আবির : আজ আর না কাল যাবো নে
আমি : না না না আমি আজ ই যাবো
আবির : আমার ব্যাগের পকেটে দেখো কিটক্যাট আছে
.
আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি সত্যি সত্যি আছে ।
আমি : আপনি কই পাইলেন ?
আবির : ওই যে তোমার গুলো যে লুকিয়েছিলাম তখন ।
আমি : শয়তান । আমার জিনিস চুরি করা আপনাকে আমি ছাড়ুম না
আবির : টাকা গুলো তো শেষ করছোই ।
আমি : হিহি আরও করবো ।
মি. আবির আমার ক্ষুধা লাগছে ডিনার কোথায় হবে ?
আবির : নিচে রেস্টুরেন্টে
আমি : ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করবো ।
আবির : এ্যা ক্যান্ডেল লাইট কেনো ?
আমি : আমার অনেক দিনের ইচ্ছা । ফ্রেন্ড হিসেবে ভাবুন ।
আবির : ওকে
.
.
ডিনারে…..
আবির : Excuse me .
Waiter : yes sir
Abir : can you bring two bowl of chicken soup ?
waiter : okay sir . anything more ?
Abir : Anha do you want anything more ?
Ami : I want a chocolate ice
Abir : okay bring it please .
Waiter : Sure sir
আবির : নেন আপনার ইচ্ছা পূর্ণ ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ।
আমি : মি. আবির চলেন সেল্ফি তুলি ।
আবির : সেল্ফি দিয়ে কি হবে ?
আমি : সেল্ফি আমি আরোহি আর প্রেয়সি কে দেখাবো ।
আবির : হুর আজাইরা ।
আমি : আরোহিকে ভিডিও কল দেই । ও দেখুক ।
.
আবির : ওকে ।
.
ভিডিও কলে….
আমি : হাই আরোহি
আরোহি : হাই ভাবি । wow you are looking pretty in London .
আমি : কি যে বলো । আমরা ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করতেছি । I am missing you
আরোহি : আমিও তোমাকে মিস করছি ভাবি ।
আমার মেন্টাল ভাই টা কই ?
আমি : আরে কি বলো । পাশেই
আরোহি : হিহি । ওকে দেখাও
আমি : এই নাও
আবির : এবার বাড়ি যেতে দে খালি ।
আরোহি : ভাইয়া হানিমুন কেমন হচ্ছে । জুনিয়র কাউকে নিয়ে তারপর আসিছ ।
আবির : তোর মাথায় এগুলো কই থেকে আসে ?
আরোহি : আসে যায় ।
যা তুই হানিমুন ইনজয় কর আমি রাখলাম বাই ।
.
.
আমি : ওই মি. আবির
আবির : কি
আমি : কাল শপিং এ যাবো তো
আবির : হুম
.
খাবার শেষে….
আমি : আইসক্রিম খাবেন
আবির : না
আমি : তা কেনো খাবেন । আপনি তো খেতেই পারেন না ।
আবির : আমি পারি
আমি : খেয়ে দেখান
আবির : (খেয়ে দেখালো) প্রুফ পেলেন
আমি : হ
আবির : খাওয়া ডান
আমি : হুম চলেন ঘুমাই কাল জ্বলদি উঠে শপিং এ যামু কিন্তু ।
.
রাতে ঘুমানোর আগে….
আমি : মি. আবির আমরা কি এক বিছানায় ঘুমাবো ।
আবির : ব্যাপার না মাঝে বালিশ থাকবে
আমি : ওকে
.
শুয়ে পড়ার কিছু সময় পর । আমি মি. আবির কে গুতা দিলাম ।
আবির : কি হলো ?
আমি : গান শুনান না একটা ।
আবির : ওই মেয়ে এখন গান কই থেকে আসলো ।
আমি : শুনান প্লিজ
আবির : আমি ঘুমাবো
আমি : শুনান নইলে মামনি কে ফোন দিমু । দিয়া কমু আপনি আমাকে মারছেন ।
আবির : হুহ দুই লাইন বলবো যাস্ট ।
আমি : ওকে
আবির : “পৃথিবীর যতো সুখ যতো ভালোবাসা;
সবই যে তোমায় দিবো একটাই আশা”
আমি : ওকে শুনুন না
আবির : ঘুমান
আমি : চলেন বেলকনি তে যাই ।
আবির : এই মেয়ে ঘুমা বলছি
আমি : ( ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিছি )
আমি ঘুমাচ্ছি
আবির 🙁 মুচকি হাসছে । ভাবছে.. মেয়েটা পারেও বটে)
.
সকালে….
আমি : মি. আবির ও মি. আবির
আবির : ওহো কে রে?
আমি : আমি আনহা
আবির : এতো জ্বলদি উঠছেন যে ?
আমি : আজ যে ঘুরতে যাবো আমরা মনে নাই ?
আবির : হায় রে এই মেয়েটা ?
আমি : চলেন ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে জ্বলদি যাই ।
আবির : আচ্ছা ওকে ।
.
.
কিছু সময় পর…..
আমি আর আবির রাস্তায় হাটছি ।
আমি : মি. আবির
আবির : বলেন কি চাই ম্যাডাম ?
আমি : চলেন আইস্ক্রিম খাবো ।
আবির : এখন না পরে ।
আমি : হুহ তাহলে ওই টেডি বিয়ার টা কিনে দেন ।
আবির : তুমি বাচ্চা ?
আমি : হুম দেন না ।
আবির : চলো ।
.
অনেক কিছু শপিং করলাম ।
.
শপিং শেষে…..
আবির : আনহা
আমি : হুম বলেন
আবির : এই নাও
আমি : এইটা কি ?
আবির : খুলে দেখো
আমি : ( একটা গাউন ছিলো সাদা রং এর ) আমি উরিম্মা কি কিউট কধর জন্য ?
আবির : আপনার ।
আমি : আল্লাহ গো আজ সূর্য কোনদিক উঠছে ?
আবির : আপনাকে কিছু দেওয়াই ভুল লাগবে না ফেরত দেন ।
আমি : মজা করলাম ।
আপনার জন্য কিছু একটা আমার কাছেও আছে ।
আবির : কি ?
আমি : এই ঘড়ি টা । এটায় না একটা মেসেজ সেট করা যায় । আমি সেট করছি । শুনেন তো
.
আবির অন করলো “মি. আবির থুক্কু এংরি রাক্ষস আমারে একটা কিটক্যাট দেন”
.
আবির : এটা কেমন মেসেজ ?
আমি : যখন মনে পড়বে আমার কথা অন করবেন আর আমার জন্য কিটক্যাট কিনবেন ।
আবির : হাহা মনে পড়বে না
আমি : উকে ।
.
এভাবে ৫ দিন চলে গেলো । ঘুরতে হাসি খুশিতে । আজকাল আবির আর আনহা কিছুটা ক্লোজ হয়ে এসেছে । কিন্তু খুশি যে মাঝে মাঝে সাময়িক হয় ।
.
৫ম দিন একই হোটেলে আবির একজন কে দেখে থমকে যায় । সে আর কেউ নয় নিহা ছিলো ।
.
আবিরকে দেখে নিহা এলো….
নিহা : কেমন আছো ?
আবির : ভালো তুমি?
নিহা : ভালো নেই
আবির : তা তোমার বর কই?
নিহা : We have got devorced
আবির : কেনো ?
নিহা : ও চিটার ছিলো । আমি শুধু টাকার পিছনে দৌড়েছিলাম তাই হয়তো ।
আবির : ওওওও
নিহা : জানো তোমাকে হারানোর পরে বুঝেছি ভালোবাসা কি?
আবির : ভালোবাসা মানে তো আমার কাছে তোমাকে নিয়ে গড়া স্বপ্ন ।
.
আমি চলে আসলাম ।
আমি : মি. আবির
নিহা : ইনি কে ?
আবির : ওয়াইফ
নিহা : বিয়ে করে ফেললা ।
আবির : আম্মুর ইচ্ছে
আমি : পরে আসবো আমি । যাই আচ্ছা
নিহা : না আমার কাজ আছে বাই আপনারা থাকুন ।
.
নিহা চলে যায় । আবিরের চোখ দিয়ে পানি বইতে থাকে।
আবির : আটকাতে পারলাম না
.
এ কথা শুনে আমি ডাকলাম…
আমি : নিহা দাড়াও
নিহা : কি ?
আমি : মি. আবির যে তোমাকেই ভালোবাসে ।
নিহা : তাহলে বিয়ে ।
আমি : এটা টেম্পরারি বিয়ে
নিহা : এটা কি সত্যি ?
আবির : হুম ভালোবাসি তোমাকে
নিহা : আমিও তোমাকে ভালোবাসি ।
আমি : আমি আসি আপনারা সময় কাটান ।
নিহা : ধন্যবাদ আপনাকে
আমি : জ্বী ।
.
.
.
আমি রুমে চলে আসলাম । এতোদিনে মি. আবির কে ভালোবেসে ফেলছিলাম । কিন্তু এটা যে টেম্পরারি বিয়ে ।
.
.
রুমে অনেক সময় কাঁদলাম ।
মি. আবির এলো । আজ তাকে অনেক খুশি মনে হলো । আমি ঘুমানোর ভান করে শুয়ে থাকলাম ।
.
আবিরও শুয়ে পড়লো ।
.
পরেরদিন শেষ দিন লন্ডনে অবস্থানের । সেদিন রাতে ।
আবির এসে দেখলো আমি টলটেছি ।
আবির : আনহা কি হয়েছে ?
আমি : কি যে কে জানি ?
আবির : মানে ?
আমি : এই জুস টা সেই টেস্টি খান আপনিও
আবির দেখলো ওটা এলকহল ছিলো ।
আবির : তোমাকে এটা কে দিছে?
আমি : ওয়েটার দিয়ে গেছে ডিনার ।
.
আবির ফোন করে জানলো ভুলে এসেছে…
.
আবির ভাবছে এখন আনহাকে সামলাতে হবে ।
আবির : আনহা চলো শুয়ে পড়ো
আমি : না আমি যাবো না ।
আবির : চলো
আমি : মি. আবির আপনি না সেই কিউউউউট
আবির : হুম ভালো ।
আমি : না ভালো না খুব পঁচা । আমাকে একটুও ভালোবাসেন না আপনি ।
আবির : না ভালোবাসি ( এমনি বললো )
আমি : তাইলে ওই নিহার কাছে যাচ্ছেন কেনো ? আমি কতো ভালোবাসি আপনাকে । আপনি আমার কষ্ট বুঝেনই না । আমি যে কতো কাঁদি ( বলতে বলতে কেঁদে ফেললাম )
আবির : ( ভাবছে আনহা এসব কি বলছে? )
আনহা শুয়ে পড়ো।
আমি : না না এই মি. আবির আমি একটা জিনিস চাই ।
আবির : আচ্ছা দিবো ।
আমি : সত্যি
আবির : হুম
আমি : জুনিয়র আবির দেন আমাকে । কিন্তু ও আপনার মতো পঁচা হবে না ।
আবির : হুম আমি পঁচা এবার ঘুমান ।
আমি : না আমি এখন গোসল করবো ।
আবির : না এখন না ঘুমান আগে ।
আমি : না গোসল ।
.
বলে বাথরুমে চলে গেলাম ।
.
শাওয়ার অন করে ফেললাম ।
আবির : আনহা চলুন ।
.
( কিন্তু আবিরও ভিজে গেলো )
.
আবির : আনহা কে কোলে করে রুমে নিয়ে গেলো ।
আমি : আমাকে ছাড়ুন আপনি ভালো না । আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন পঁচা ।
আবির : ( কিছু বললো না )
আমি : বলেন নইলে কামড় দিবো ।
আবির : হুম
.
আমি পুরো ভিজে ছিলাম । আবির আমার কাপড় পাল্টে দিলো । কিন্তু এর মাঝে একটা ভুল জিনিস হয়ে যায় ।
.
সকালে…
আমি নিজেকে অমন অবস্থায় দেখে থ । কিছু সময় মনে করার চেষ্টা করলাম কাল কি হয়েছে ।
.
কিছু কিছু যা মনে পড়লো তা ভেবে আমি অনুতপ্ত হয়ে পড়ি ।
.
জ্বলদি ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ।
আবিরের ঘুম ভাঙ্গে । সে সব কিছু মনে করে নিজেও অনুতপ্ত হয়ে পড়ে ।
.
আবির : সরি
আমি : আমি সরি । কিছু মনে করিয়েন না । এটা বাদ দেন । মনে রাখার প্রয়োজন নেই । আচ্ছা আমাদের ডিভোর্স কবে ? আপনার আর নিহার বিয়ে কবে ?
আবির : দেশে ফিরি আগে ।
আমি : জ্বী চলুন তৈরি হই আজই তো মনে হয় ফ্লাইট
আবির : হুম ।
.
এরপর ফ্লাইটেও বেশি একটা কথা হলো না আমার । আসলে আমি নিজেই বলি নি কারণ আমি ছিলাম অনুতপ্ত ।
.
চলবে……