টেম্পরারি_বিয়ে _পর্ব_২

0
4229

টেম্পরারি_বিয়ে
_পর্ব_২
Written by Avantika Anha
কিছু সময় পর আমি , আরোহি আর আবির বের হলাম । কারে বসে ছিলাম । আমি আর আরোহি পাশাপাশি বসেছিলাম । আবির ড্রাইভ করছিলো । দুই মেয়ে আমরা মানে আমাদের গল্প তো চলবেই । আরোহি আর আমি গল্প করছিলাম ।
.
আবির : হায় কপাল এতো কথা মানুষ কেমনে বলে‌
আমি : মুখ দিয়ে
আরোহি : হুম ঠিক ভাবি মুখ দিয়া ।
আবির : কম কথা বলো তোমরা ।
আমি : বেশিই বলবো হিহি
আরোহি : বলবো বলবো আমরা কথা বলবো ।
আবির : আমি যে কেনো আসছি ।
আরোহি : আমাদের ব্যাগ ক্যারি করতে
আবির : আরোহি বেশি কথা বলবি না একদম বিয়ে দিয়ে দিবো ।
আমি : ডোন্ট ওয়ারি আরোহি বিয়ে ভাঙ্গে দিবো
আরোহি : থেংকু ভাবি‌
আবির : দুই মেয়ে একসাথে হইলেই হইলো ।
আমরা একসাথে : হিহি
.
শপিং মলে
আমি কালার চুজ করতে পারছিলাম না ।
আরোহি দেখে বললো : ভাইয়া তুই চুজ কর
ভাইয়া : আমি কেনো ?
আরোহি : বাহ রে তোর বউ তুই চুজ করবি না । জ্বলদি চুজ কর ।
ভাইয়া : আচ্ছা এই নীল টা নে ।
আরোহি : বাহ জানিস ভাবিরও প্রিয় কালার নীল ।
আমি : আরোহি তুমি কিছু নেও
আরোহি : আমার সব আছে
আমি : নেও প্লিজ
আবির : নিয়ে নে পরে আর চান্স পাবি না‌
আরোহি : ওকে আমি তিনটা নিবো
আমি : তিনটা কেনো ৫ টা নাও বিল তো আর আমরা দিবো না হিহি
আবির : (দুইটাই এক গোয়ালের গরু আমার পকেট আজ ফাঁকা) হুর নে যা ইচ্ছা নে
.
শপিং শেষে আমরা গেলাম ফুচকা খেতে ।
আবিরের মন খারাপ হয়ে গেলো । সে ভাবতে লাগলো নিহার সাথেও তো আমি এভাবেই আসতাম ।
আমি দেখলাম উনার মন খারাপ তাই মন ভালো করার চেষ্টা করলাম ।
আমি : আরোহি তোমার ভাই মনে হয় না ফুচকা খেতে পারে
আরোহি : হুম ভাবি ঠিক বলছো ।
আবির : মোটেও না
আমি : বললেই হলো
আবির : আমি ফুচকা খেতে পারি
আমি : তাহলে প্রতিযোগিতা হোক আপনার আর আমার আর আরোহির ।
আরোহি : হুম হোক হোক ।
আবির : ( খাইছে রে আমি তো ওতো ফুচকা খাইতাম না ) হুম হোক
.
ফুচকা খাওয়া শুরু হলো । আমি জিতলাম তারপর আরোহি ।‌
.
আবির হেরে গেলো ।
আবির : যাই হোক আমি হারছি তো কি দেখ আমার এখনো কতো গুলো বাকী । তোমরা দেখো আর আমি খাই ।
আরোহি : ভাবি এখন কি হবে আমার তো এখনো খেতে ইচ্ছে করছে ।
আমি : এটা আর এমন কি উঠায় নাও
আরোহি : বুঝছি ভাবি আইডিয়া সেই
আবির : কি আইডিয়া ? কি উঠাবে ?
আমি আর আরোহি আবিরের প্লেট থেকে ফুচকা খেয়ে নিলাম ।
.
আবির হা করে ছিলো ।
এটা দেখে আমি আর আরোহি হেসেই দিলাম ।
.
আরোহি এমন সময় ওর কোন বান্ধবী কে দেখে চলে গেলো ।
আমি আর আবির বাড়ি ফিরছিলাম ।
আবির : আপনি তো খুব ফাজিল
আমি : এখন জানলেন ?
আবির : হুম
আমি : মি. আবির
আবির : বলুন
আমি : ফুচকার দোকানে কি নিহা কে মিস করছিলেন ?
আবির : আপনি জানলেন কীভাবে ?
আমি : হাহা মনে হলো ।
আবির : ওওওও
আমি : গ্লাস এর বাইরে দেখছিলাম ।
.
এমন সময়….
আমি : গাড়ি থামান
আবির : কেনো?
আমি : আরে থামান
আবির : কি হয়েছে ?
আমি : থামান তারপর বলছি
আবির : এই যে থামালাম
.
আমি দৌড়ে গেলাম । আসলে আইস্ক্রিম দেখছি আর কি আমি ঠিক থাকি নাকি ।
.
যেয়েই দুটো আইস্ক্রিম নিলাম । মি. আবির বিল টা পে করেন ।
আবির : ( ভাবছে কি আর করার করতেই হবে । বাট এই মেয়ে বাচ্চা নাকি । এতো বাচ্চামি স্বভাব )
আচ্ছা
.
বিল পে করে ।
আমি কারে বসে আইস্ক্রিম খাচ্ছিলাম ।
আবির : ওহো আপনি কি বাচ্চা
আমি : বড় হলাম কবে ( আইস্ক্রিম খেতে খেতে )
আবির : খান খান
আমি : এমা গো
আবির : কি
আমি : আপনি খাবেন না এই নিন একটা আপনার জন্যও কিনছি
আবির : আমি এসব বাচ্চাদের জিনিস খাই না ।
আমি : তাই তো আপনি বুড়া
আবির : কিইইইই
আমি : খেলে কি হয় ( বলেই জোড় করে মুখে ঢুকায় দিলাম )
আবির : এসব কি আপনি পাগল নাকি ?
আমি : না আমি পাগল কেনো হবো
আবির : তো ?
আমি : আমি তো পাগলি । জানেন না আমি মেয়ে ।
আবির : হায় কপাল ।
.
.
বাড়ি ফিরলাম……..
মা : কি রে শপিং হলো তোদের
আবির : হুম মা ।
আমি : আপনার জন্য এই শাড়ি টা এনেছিলাম ।
মা : আপনি বলছিস কেন রে মা । আমি তো তোর মা এখন । আম্মু বলবি ।
আমি : মামনি বলি ?
মা : যা ইচ্ছে বল মা । দেখি শাড়িটি
আমি : এই যে
মা : বাহ দারুণ তো ।
ধন্যবাদ যা ফ্রেশ হয়ে নে । কাল আবির আর তুই তোর বাপের বাড়ি যাবি । ঘুরে আসবি ।
আমি : সত্যি ?
মা : হুম
.
রুমে….
আবির : শুনুন কথা ছিলো ।
আমি : জ্বী বলতে থাকেন টেম্পরারি হাসবেন্ড
আবির : মানে ?
আমি : এটা টেম্পরারি বিয়ে মানে আপনি টেম্পরারি হাসবেন্ড
আবির : ওহ
শুনুন ধন্যবাদ আমি মায়ের জন্য শাড়ি কিনতে ভুলে গেছিলাম ।
আমি : ব্যাপার না উনি আমারো মা
আবির : টেম্পরারি
আমি : হুম হুম টেম্পরারি
.
আমি : আমি ফ্রেশ হবো টাটা ।
আবির : আমি যাবো
আমি : আমি আগে
আবির : না আমি
আমি : আরে মামনি তুমি
.
আবির যেই পিছনে ঘুরলো আমি দৌড় টু বাথরুম ।
আবির পিছনে দেখে কেউ নাই ।
আবির : কই কেউ তো নাই ।
এ্যা আমাকে বোকা বানায় গেলো ।
.
ফ্রেশ হয়ে এসে
আমি : হিহি বোকা বানাইছি
আবির : হুহ
আমি : চলেন ডিনারে
আবির : জ্বী
.
ডিনারে…
আমি একটু কম খাই ।
মা : এতো কম কেনো ? আরেকটু নে
আমি : আমার এটাই যথেষ্ঠ আমি এটুকুই খাই ।
আবির : এই জন্য তো হাড্ডি ওয়ালি
আমি : মোটেও না
আবির : মিস হাড্ডি বাহ দারুণ নাম তো
আমি : আপনি যে মি. বুড়া
আবির : মোটেও আমি বুড়া না
আমি : তো আমিও মিস হাড্ডি না
আবির : আপনি মিস হাড্ডি
আমি : না না না আপনি বুড়া
আবির : না
মা : এই তোরা থামবি । দুটোই বাচ্চা
আমি : মামনি উনিই প্রথম আমাকে বললো
মা : আবির এমন আর বলবি না আমার মেয়ে কে
আবির : ও তোমার মেয়ে হলে আমি কি ?
মা : তুই জামাই
আরোহি : হাহা দুলাভাই ।
আবির : সব মেয়েই এক দুর আমার পক্ষে কেউ নাই ।
মা : তোর ছেলে হলে ও তোর পক্ষে হবে যা
আবির : হুর
.
খাওয়া শেষে রাত্রে
আমি : ইয়ো ইয়ো কি মজা কাল যাবো বাড়ি
আবির : ঘুমায় পড়ুন কাল উঠতে হবে ।
আমি : আমার না খুশি হলে‌ ঘুম পায় দেরিতে
আবির : তো আপনি জেগে থাকুন আমি ঘুমালাম ।
আমি : না না তখন ভুত আসলে আমার কি হবে ?
আবির : ওহো এতো ভয় ?
আমি : আমি মরলে কি হপ্পে ?
আবির : জনসংখ্যা কমবে
আমি : হুহ‌
আবির : আমি ঘুমালাম
.
আমি : না না না
এই বলে মি. আবির কে জ্বালাতে লাগলাম যেন তিনি না ঘুমান ।
আবির : ইসসস নিজে ঘুমাবে না আমাকেও ঘুমাতে দিবে না
আমি : হুম
আবির : তা জেগে কি করবো
আমি : চলেন মুভি দেখি
আবির : আচ্ছা
.
মুভি টা একটু ইমোশোনাল‌
.
আবির : ( কে জানি কাঁদছে । পাশে তাকায় দেখি আনহা কাঁদছে । মেয়েটাকে কাঁদলে একদম মানায় না । ফাজলামি করলেই ভালো লাগে )
কাঁদছেন কেন ?
আমি : ওদের কতো কষ্ট হচ্ছে ( বলেই আবার কেঁদে দিলাম )
আবির : এটা তো সত্যি না
আমি : তবুও
আবির : হুম আপনি তো কাঁদবেনই কাঁদুরি
আমি : না না না
আবির : হ্যা হ্যা হ্যা
আমি : কথা‌ বলাই বেকার
আবির : মুভি টা কন্টিনিউ করি
আমি : হুম
.
দেখতে দেখতে আমি ঘুমিয়ে পড়ছি‌।
.
.
আবির তাকায় দেখে আমি ঘুমায় পড়ছি । (ভাবছে মেয়েটা বড় আজব । কষ্টে নাকি সুখে বুঝাই যায় না । নিশ্চুপ পরি লাগতেছে ঘুমিয়ে তাকে । নাহ মায়ায় জড়ানো যাবে না । আমি তো অন্যের মায়ায় আবদ্ধ )
.
আবির শোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো
.
পরেরদিন সকালে
আমি : মি. আবির ও মি. আবির উঠুন উঠুন ।
আবির : কে রে এতো সকালে
আমি : নামায পড়বেন না
আবির : আমি নামায পড়ি না ঘুমালাম
আমি : না পড়তেই হবে
.
আবির জবাব দিলো না ।
আমি : পড়বেন না তাইতো
.
বলেই বাথরুম থেকে পানি এনে ঢেলে দিলাম ।
.
আবির : উঠে বলে কি হলো এসব
আমি : গোসল হিহি
আবির : এটা কেনো
আমি : নামায পড়েন নইলে গোবর এনে ঢেলে দিবো ।
আবির : ( ভাবছে এই মেয়ের ভরসা নাই । তাই উঠে নামায পড়তে গেলো )
.
(আমি ভাবছি জানি এই বিয়ের মানে নাই । কিন্তু কিছু পারি আর না পারি আপনাকে ভালো করেই যাবো)
.
বিকেলে….
আমি আর আবির বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলাম
.
বাড়ি গিয়ে আম্মু আর সবাই হ্যাপি । আম্মু হ্যাপি আমাকে দেখে । বাকীরা হ্যাপি টাকাওয়ালা জামাই দেখে বুঝতে পারলাম ।
.
মা একা ডেকে বললো ” তুই খুশি আছিস ?”
আমি : হবো না কেনো ? টাকাওয়ালা জামাই দিছো
মা : এভাবে বলছিস কেনো ? সবাই জোড় করলো তাই তো
আমি : বাদ দাও
মা : জামাই বড় ভালো
আমি : হুম
.
.
সব আত্মীয় রা চলে গেলো । আম্মু জামাই আদর করতে লাগলো ।
.
আবির পা উঠায় বসে আছে
আমি : আম্মু আমিও এসেছি একটু তাকাও
আম্মু : জামাই প্রথম এসেছে তুই তো আছিসই
আমি : হায় আল্লাহ মেরি মা না রাহি
আম্মু : চুপ কর তো
আমি : দুর আম্মু মিমি আসে নাই ?
আম্মু : আসবে একটু পর
আমি : ইয়াহু তোমরা যাই হও আমার বেস্টু আমারি থাকবে ।
.
কিছু সময় পর মিমি আসলো ।
হায় কপাল হেইডাও দুলাভাই দুলাভাই ।
আমি : আমি আর থাকবো না এই বাড়িতে গেলাম আমি ।
.
বের হয়ে যাচ্ছিলাম । কেউ আটকায় না কেনো ?
আমি : আমি কিন্তু সত্যি যাচ্ছি
মিমি : টাটা
আমি : গেলাম আমি
মিমি : যা
আমি : আমার বাড়ি আমি কেন যাবো দুররর‌ আমি গেলাম আমার রুমে
.
আমি চলে গেলাম….
.
আবির : আনহা মনে হয় রাগ করলো.
আম্মু : না বাবা ও এমনি একটু বাচ্চার মতো
আবির : হুম দুই দিনে বুঝে গেছি
আম্মু : বাবা ও না চাপা স্বভাবের একটু । একটুতেই কেঁদে ফেলে ওর খেয়াল রেখো ।
আবির : জ্বী (মনে মনে বললো এটা যে হবে না । এটা টেম্পরারি বিয়ে )
.
সবাই চলে গেলো ।
আবির আমার রুমে গিয়ে দেখে আমি কিটক্যাট খাচ্ছি ।
আবির কিছু না বলে বসে পড়লো বেডে
.
আমি কিটক্যাট খেয়ে যাচ্ছি
আবির : এতো খাচ্ছেন কেনো ?
আমি : আমার প্রিয় আর আমি রাগ করছি তাই
আবির : দাঁত সব যাবে
আমি : না যাবে না পমি গেলাম ব্রাশ করতে টাটা ।
.
বলেই বাথরুমে দৌড় ।
আবির আমাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে হেসেই ফেললো ।
আবির ভাবছে পাগলি মেয়ে এটা ফুল ।
.
চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে