জোরপূর্বক ভালোবাসা পর্বঃ ০৪

0
2784

জোরপূর্বক ভালোবাসা পর্বঃ ০৪
– আবির খান

আবিরের বাসায়…
শুভঃ দেখ ভাই ডাক্তার তোকে ৩ দিনের রেস্টে থাকতে বলছে…সো সব বন্ধ..
আবিরঃ আরে ধুর..খালি হাতেইতো…
শুভঃ হুম খালি হাতেইতো না…রক্ত গুলা যে ফালাইলা তার হিসাব করবা না??
আবিরঃ মজা করতাছোছ..
শুভঃ না দোস্ত…আচ্ছা তুই এতো রেগে গেলি কেন তখন??কখনো এতো রাগতেতো তোকে দেখিনি…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


এরপর আবির শুভকে সব বলল…
শুভঃ আচ্ছা বুঝছি…মেয়ে মানুষ…বোকা একটা..আসলে ওকে বোকা বলা ঠিক হবেনা…কারণ দোস্ত শুরুটাতো আমরাই করছি তাইনা..আর ওকে সবার সামনে এভাবে ইন্সল্ট ও তো করলাম..স্বাভাবিক ওর সম্মানেতো লাগবেই…
আবিরঃ এর জন্যইতো সরি বলতে গেসিলাম…বাট ও কি বিহেবটাই না করলো আমার সাথে মানে আবির খানের সাথে…ওর খবর আছে…
শুভঃ তা ওর খবর কেমনে করবি শুনি??
আবিরঃ ওরে এমন ভালোবাসা বাসমু ও পাগল হয়ে পাবনা চলে যাবে…হাহাহা…
শুভঃ হাহাহাহা…যাক ভাই এট লাস্ট তোর রাগটা কমলো…
আবিরঃ শালা তুই থাকতে আর রাগ করতে পারি..
শুভঃ আমি আবার তোর শালা হইলাম কেমনে?? তোরতো কোন বোন নাই..খালি একটা ভাই আছে…তুই কি বলতে চাচ্ছিস হ্যা…হিহি…
আবিরঃ শালা..কেন আমার জানের বান্ধবী আছে না…হুম কি…গুতো দিয়ে…?
শুভঃ যাহ বেটা…?
আবিরঃ তোর ওকে পছন্দ হইছে তাই না???
শুভঃ জানি না…বাদ দেতো ভাই…তুই তারাতাড়ি সুস্থ হ..
আবিরঃ আরে শালা বাবু দেখি লজ্জা পাচ্ছে ..বোকা তুই ছেলে হয়ে লজ্জা পেলে হবে..
শুভঃ তুই না…মজা করা শুরু করলে আর থামস না…
আবিরঃ থামলে হবে…শুন ওদের দুইজনকে আমরা একি সাথে বিয়া করবো…কি বলিস??
শুভঃ হুম ভালো বলছিস…মন্দ হয়না…
আবিরঃ এইতো ধরা খাইছো…মন্দ হয়না না…হুম…গুতো দিয়ে…
শুভঃ না ভাই আমি যাই…আমার শরীর গরম বানায়া ফালাইছোছ বেটা…তুই ঠিক মতো থাকিস আর বাইরে বের হবি না..প্লিজ.. আমি যাই তাহলে..
আবিরঃ দোস্ত একটা কথা বলবো??
শুভঃ ভাইরে ভাই..আবার দেখি জিজ্ঞেসও করে…বল বেটা…
আবিরঃ শালা বাবু তুমি অনেক ভালো… হাহা…তোমার মতো শালা পেয়ে আমি ধন্য…
শুভঃ শালারে..ভালো হবিনা না…
আবিরঃ না যাহ…??
শুভ চলে গেলো….আবিরের হাতটা অনেক ব্যাথা করছিলো এতোক্ষন..কিন্তু শুভকে বুঝতে দেয়নি..কারণ শালাবাবু আবার একটু বেশি চিন্তা করে আবিরকে নিয়ে…

আসলে আবির আর শুভ সেই ছোট কালের বন্ধু… এমনকি ওদের বাবাও একে অপরের খুব ভালো বন্ধু…শুভর বাবা ঢাকাতে অনেক বড় বিজনেসম্যান..জাহাজের ব্যবসা করে..আবিরের প্রতি শুভর এতো কেয়ার আর এতো ভালোবাসার কারণ হলো… শুভর একবার অনেক রক্তের প্রয়োজন হয়েছিলো তখন একমাত্র আবিরই তাকে রক্ত দিয়েছিলো নিঃস্বার্থভাবে…তখন থেকে আবিরের প্রতি শুভ অনেক দূর্বল…

আবির ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খেয়ে তার রুমের সব লাইট অফ করে রকিং চেয়ারে বসে আছে খোলা বারান্দায়…আর তমার কথা ভাবছে…

আবিরঃ মেয়েটা কত সুন্দর কিন্তু আমার সাথে এভাবে করাটা কি ওর ঠিক হলো…কিছু যে বলবো তাও পারি না..চশমিশটাকে যে মনে ধরেছে…
আজ আকাশে অনেক বড় একটা চাঁদ উঠেছে…চারদিকটা কেমন আলোকিত এই রাতের আধারে…আবির ওই চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে.. চাঁদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছে তমার ওই চশমা পরা বাচ্চাবাচ্চা মায়াবী মুখটা..দেখলেই শুধু ভালোবাসতে মন চায়…আবির ভাবে…
আবিরঃ কত মেয়ের সাথে কত প্রেম করলাম..সবারই শুধু আমার টাকার আর আমার প্রতিলোভ ছিলো…তাদের কাউকেই মনে ধরেনি…তাহলে এই সামান্য একটা মেয়েকে মনে ধরে গেলো.. যার জন্য নিজেকেও এতো কষ্ট দিয়ে ফেললাম..কি আছে তার মধ্যে…কিছুতো একটা আছে তার মধ্যে যা আমাকে এভাবে তার প্রতি টানছে..নাহ ওকে আমায় যেভাবে হোক পেতেই হবে..শুধু একরাতের জন্য না হাজার হাজার রাতের জন্য… তাকে ভোগ করার জন্য না তাকে ভালোবাসার জন্য…কোন এক জোসনাসিক্ত রাতে ওর কোলে মাথা রেখে চাঁদকে না শুধু ওকেই দেখবো কারণ তখন যে চাঁদটাও ওর পাশে অসুন্দর লাগবে…ওর মায়া ভরা ওই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবো পুরো রাত…আর হয়তো মাঝে মধ্যে ভুল করে কিছু স্পর্শ বিতরনও হতে পারে..হয়তো ওই স্পর্শে থাকবে ভালোবাসার পূর্ণতা…

৩ দিন পর…ভারসিটিতে….
তিশাঃ কিরে তমা…আবির ভাইকেতো সেদিনের পর আর দেখছিনা…তুই দেখেছিস??
তমাঃ আমার ওই ফালতুদের দেখার সময় নাই..পচা একটা…আমার রাগটা নিজের হাতের উপর উঠিয়ে এখন বাসায় পরে রয়েছে মনে হয়..ফালতু একটা…
তিশাঃ বুঝলাম না তুই আবির ভাইয়ের প্রতি এতো আপসেট কেন??দেখতেতো পুরাই হিরো… ওনার মতো সুন্দর আর হ্যান্ডসাম ছেলেতো আর এই ভারসিটিতে একটাও দেখিনা…কত মেয়ে তার পিছনে ঘুরে..
তমাঃ হুমহ…হিরো না জিরো..আমার একদমই সহ্য হয়না তাকে…আর কেমন কেমন করে ওইদিন যেনো তাকিয়ে ছিলো…
তিশাঃ তুমি যে সুন্দরী… হয়তো তোকে ভালো লাগেছে…প্রেম করবি নাকি…
তমাঃ মরে যাবো বোন তাও ওনার সাথে ইম্পসিবল…
তিশাঃ দেখা যাবে নে…
তমাঃ হুম আমিও দেখবো নে…
তিশাঃ দাড়া বান্ধবী..ওই দেখ শুভ ভাই আসতাছে তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসি আবির ভাইয়ের কথা…
তমাঃ হুম যান আপনার প্রেমিক এসেছে…
তিশাঃ তমা…..

তিশা তারাতাড়ি উঠে শুভর কাছে গেলো…
তিশাঃ হায় কেমন আছেন ভাইয়া???
শুভঃ এই মেয়ে তোমাকে না বলছি আমাকে ভাইয়া বলবা না…আমি সবার ভাইয়া হলেও তোমার ভাইয়া না বুঝছো…
তিশাঃ বুঝলাম… কিন্তু কেন??
শুভঃ এইরে এখন কি বলবো??ওকে যে ভালোবাসি…ও যে আমার কাছে অনেক এস্পেসাল যদি বুঝে যায়…বুঝলেতো ভালোই..মনে মনে..
তিশাঃ কি হলো বলেন না কেন???বেটা বলনা যে আমাকে পছন্দ করিস..এখন ধরা খেয়ে চুপ মেরে আছে…মনে মনে…
শুভঃ সব কিছু বলতে হয়না..বুঝে নিতে হয় বুঝছো…
তিশাঃ বুঝতে গিয়ে একদিন অন্য কারো হয়ে যাবো… আস্তে করে বলল..
শুভঃ কিছু বললা??
তিশাঃ নাহ…আচ্ছা আবির ভাইয়ের কি খবর??
শুভঃ কি আর খবর আছে..তোমার বন্ধবীর উপর খেপে আছে…
তিশাঃ হাহা..তাকে বইলেন ওকে মাফ করে দিতে ও বুঝে নায়..তাহলে আমি এখন যাই..
শুভঃ চলে যাবে??
তিশাঃ হ্যা তা না হলে এখানে দাড়িয়ে কি করবো??
শুভঃ ওহ…
তিশাঃ আচ্ছা যাই…
তিশা পিছে ঘুরে চলে যেতে নিলেই..
শুভঃ তিশা…
তিশাঃ জ্বি কিছু বলবেন???শুভর দিকে তাকিয়ে…
শুভ কিছুক্ষণ তিশার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো..তারপর
শুভঃ না মানে তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে…একদম পরীর মতো…
তিশাঃ কিহ…উনি বলল কি এটা??কি লজ্জার মধ্যে ফেলে দিলো আমায়…দুষ্ট একটা..মনে মনে
শুভঃ ধ্যাত কি বলে ফেললাম…এভাবে কেউ বলে নাকি…মনে মনে…
তিশা শুভর কথায় কিছুটা লজ্জা পেলো..
তিশাঃ ধন্যবাদ আপনাকে…আর আপনাকেও দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে…বলেই তিশা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে গেলো…আর শুভ মুগ্ধ হয়ে দাড়িয়ে তা দেখলো…

এরপরে দিন….
আবিরের বাসায়…
শুভঃ দোস্ত এখনতো তুই মোটামুটি সুস্থ…চল আজকে ভারসিটিতে যাবি…
আবিরঃ হুম যাবো তবে আজকে না কাল থেকে…
শুভঃ কেনো?? আজকে কি?
আবিরঃ আজ ওদের কাছে যাবো…আর তুইও যাবি সাথে..
শুভঃ ওহ…আচ্ছা ঠিক আছে…চল তাহলে…
আবির ফ্রেশ হয়ে শুভকে নিয়ে গাড়ি করে চলে যায় আবিরের বানানো অনাথাশ্রমে..

আজ থেকে ৩ বছর আগে একদিন আবির তার বন্ধুদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাচ্ছিলো..খাওয়ার এক পর্যায় আবির খেয়াল করে…কাচের স্বচ্ছ গ্লাসের বাইরে একটা ৫/৬ বছরের বাচ্চা তাদের দিকে খুব অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে…আবির এক মুহূর্ত দেরি না করে বাচ্চাটির কাছে চলে যায়…বাচ্চাটা প্রথমে আবিরকে দেখে ভয় পেলেও পরে আবির তাকে স্বাভাবিক করে…ওকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে আবিরের পাশে বসায়…বাকি বন্ধুরা সবাই অবাক হয়ে যায় আবিরের কাজ দেখে….আবির বলে…
আবিরঃ কিরে এভাবে তাকিয়ে ছিলি কেনো??
বাচ্চাঃ আমার অনেক খিদা লাগছে…আমারে কিছু খাইতে দিবেন…
বাচ্চাটার এভাবে বলায় আবিরের প্রচুর মায়া হয়..চোখের কোনায় নোনা জলে ভরে যায়..
আবিরঃ তুই যত খুশি তত খা এখানে যা আছে মানে পুরা রেস্টুরেন্ট আজ তোর জন্য ফ্রী…
বাচ্চাঃ ভাইয়া তাইলে আমার বন্ধুগোও নিয়ে আসি ওরাও না খায়া বইসা আছে…
এবার আবিরের বন্ধুরাও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না….সবার চোখই নোনা জলে ভেসে যাচ্ছে…
শুভঃ যা ভাই যা…তোর যত বন্ধু আছে আজকে সবাইকে নিয়া আস…

এরপর প্রায় ১০ টা ওর মতো বাচ্চা আসলো… আবির আর ওর বন্ধুরা মিলে ওদের সবাইকে খাওয়ালো…
এরপর আবির এই পথ শিশুদের জন্য ওই রেস্টুরেন্টটা কিনে নেয়…এবং সব পথ শিশুদের জন্য খাবার ফ্রী করে দেয়…ওই রেস্টুরেন্টের পাশেই বিশাল এক যায়গা কিনে সেখানে একটা অনাথাশ্রম করে দেয়…সেখানে আজ প্রায় ৯৮৭ জন অনাথ শিশু বাচ্চাদের দেখা শুনা প্লাস শিক্ষা দেওয়া হয়…

আমরা হয়তো আবিরের মতো এতো বড়লোক নই..আমাদের সামার্থ একটু কম..তবে গুটি কয়েক অনাথ পথ শিশুদের পাশে দাড়ানোর সামার্থ আমাদের সবারই আছে…তাই আমরা শুধু একদিন আমাদের অর্থগুলো অযথা বিভিন্ন ইচ্ছাপূরনে খরচ না করে এই অনাথ পথ শিশুদের যদি অন্তত একবেলা পেট ভরে খাওয়াই তবে তারাও আমাদের মতো একটু আরাম করে বাচতে পারবে..এভাবে আমরা যদি সবাই এগিয়ে যাই তাহলে তাদেরও একটা সুন্দর ভবিষ্যত হবে…কি পারবো না আমরা??

আবির শুভকে নিয়ে পৌছে যায় তাদের অনাথাশ্রম এ…আবির ভিতরে ঢুকতেই অনাথ শিশু-বাচ্চারা ওদের কাছে দৌরে এসে জরিয়ে ধরে…আবির আর শুভও ওদের সাথে মিশে যায়..ওদেরকে অনেক ধরনের খেলনা দেয়…অনেক কিছু খাওয়ায়…পুরোদিন ওরা ওদের সাথে থাকে…অনেক মজা করে ওদের সাথে খেলাধুলা করে…সবাই ওদেরকে ছাড়তেই চাচ্ছিলো না…সবাইকে বুঝিয়ে তৃপ্তির জল চোখে নিয়ে আবির আর শুভ ফিরে যায় তাদের বাসায়…

এরপরের দিন ভারসিটিতে…
তমা আর তিশা ক্লাসের বাইরে হাটছিলো..হঠাৎ তমাকে….

চলবে…?

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে