Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"ছোটঘরের ভালোবাসা সিজন ২ছোটঘরের_ভালোবাসা সিজন_২পর্বঃ ০৫

ছোটঘরের_ভালোবাসা সিজন_২পর্বঃ ০৫

ছোটঘরের_ভালোবাসা সিজন_২পর্বঃ ০৫
– আবির খান

একটুপরই হঠাৎ আবির দৌড়ে এসে রিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। রিয়া আবিরকে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়। আর বিকট করে একটা শব্দ হয়। আবিরের বুকের বাম পাশ থেকে রক্ত ঝরছে। আবির ঠাস করে নিচে পরে যায়।

রিয়াঃ আবিরররর……..(বলে জোরে চিৎকার দেয়)

আবির সেখানে অজ্ঞান হয়ে পরে যায়। আবিরকে খুব তারাতারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এর মাঝে রিয়ার বাবাও চলে আসেন।

হাসপাতালে,

বাবাঃ তোকে কত বার না করেছি বাইরে বের হতে। আজ আবার আবির প্রমাণ করে দিলো যে ওর মতো আর কেউ হয় না। আজ ও ওর নিজের জীবন দিয়ে তোকে বাচালো। এখন ছেলেটার কি হবে?? তুই বুঝতে পারছিস??ওর বুকের বাম পাশে গুলি লেগেছে। বুকের বামপাশে কি থাকে জানিস তো??(রাগী ভাবে বলল)

রিয়া ওর বাবার কথা শুনে অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙে পরে। রিয়া ভাবে, সবই রিয়ার দোষ। আজ ওর কারণেই আবির মরতে বসেছে। আবির বারবার যেতে চাচ্ছিল না কিন্তু রিয়ার জোরাজোরিতেই আবির এসেছিলো। আর তার ফলস্বরূপ আবির এখন মৃত্যুপথযাত্রী।

এদিকে আবিরের বিশেষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন চলছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। আবির কি আদও বেচে আছে নাকি মারা গেছে তাও কেউ বলতে পারছে না। সেই যে ভিতরে ডাক্তাররা ঢুকেছেন আর বেরই হননি। দীর্ঘ টানা ৪ ঘন্টা অপারেশনের পর ডাক্তার বেরিয়ে আসে।

রিয়া ডাক্তারকে দেখে তার কাছে দৌড়ে যায়।

রিয়াঃ ডাক্তার আ…আ..আবির???

ডাক্তারঃ শেষ।

রিয়া ডাক্তারের কাছ থেকে “শেষ” শুনে ঠাস করে নিচে পরে যায়। রিয়া কাদতে কাদতে ভাবছে, তাহলে শেষ তার ভালোবাসা??আবিকেতো ও পেলোই না ঠিক মতো। পারলো না হতে সারাজীবনের সঙ্গী। পারলো না তাকে আপন করে নিতে। রিয়া আরো জোরে জোরে কেদে উঠে।

ডাক্তারঃ আহ আপনি কাদছেন কেন???

বাবাঃ আপনি না বললেন শেষ?? (কাদো কণ্ঠে)

ডাক্তারঃ হ্যাঁ বলেছি যে অপারেশন শেষ। মানে অপারেশন সাক্সেস্ফুল।

রিয়াঃ কিহ। (উঠে দাঁড়িয়ে)

ডাক্তারঃ জ্বি হ্যাঁ। মাহমুদ সাহেব জানেন, কোটিতে একজন মানুষের হার্ট বুকের ডান পাশে থাকে। আর আবির সেই একজন। ভাগ্যক্রমে আবিরের বামপাশে হার্ট না থাকায় এ যাত্রায় আবির বেচে গিয়েছে। কিন্তু ওকে ২ মাস বেড রেস্ট প্লাস ওর খুব যত্ন নিতে হবে।

রিয়াঃ আমি ওর সব খেয়াল রাখবো ডাক্তার। ও এখন ভালো আছে তো??(খুব খুশি হয়ে)

ডাক্তারঃ হ্যাঁ মা ও এখন একদম ভালো আছে। ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। কয়েক ঘন্টা পরই ওর জ্ঞান ফিরে আসবে আশা করি।

রিয়াঃ আমি কি একটু ওর কাছে যেতে পারি??(অনুনয়ের স্বরে)

ডাক্তারঃ একটুপর যাও মা।

ডাক্তারের কথা মতো রিয়া ১ ঘন্টা পর আবিরের কাছে যায়। আঘাত প্রাপ্ত আবিরকে দেখে রিয়া আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না কেদে দেয়। কাদতে কাদতে আবিরের কাছে গিয়ে বসে। আবিরের হাতটা রিয়া ওর দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আর বলতে শুরু করে,

রিয়াঃ আবির আমাকে মাফ করে দেও। সব দোষ আমার। আমার জন্যই আজ তোমার এই অবস্থা। ভালোবাসার মানুষটাকে নিজে বিপদে ফেলেছি। কেন আমাকে বাচাতে গেলে?? মরে যেতে দিতে। (কান্না করতে করতে)

ঠিক তখনই আবির হাতটা কেপে উঠে। রিয়া সাথে সাথে আবিরের দিকে তাকায়। আবিরের জ্ঞান ফিরেছে। আবির ইশারায় রিয়াকে কাদতে না করছে। রিয়া আরো বেশি আবেগি হয়ে পরে। তাই আবিরের বুকের ডান পাশে মাথা রেখে কাদতে থাকে। আর আবির রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্তনা দেয়।

আসলে রিয়ার বাবার শত্রুরা রিয়াকে মার‍তে গিয়ে আবিরকে মারে। কিন্তু এরপর রিয়ার বাবা স্পেশাল ফোর্স লাগিয়ে তাদের যারা ক্ষতি করতে চাচ্ছিলো তাদেরকে ধরে সবাইকে আইনের হাতে তুলে দেন। এখন আর তার কোনো সমস্যা নেই।

এরপর রিয়া দীর্ঘ ২/৩ মাস আবিরের অনেক যত্ন নেয়। আবিরের গোসল থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া সব রিয়াই দেখা শুনা করতো। লজ্জা-সরম ভুলে দিন-রাত আবিরের সেবা করে আবিরকে সম্পুর্ন সুস্থ করে তুলে।

একদিন রাতে,
আবির বিছানায় শুয়ে আছে। রিয়া আবিরের রুমে এসে আবিরের গায়ে কাথা টেনে দিয়ে চলে নিতে নিলেই আবির রিয়ার হাতটা ধরে ফেলে। আবির উঠে বসছে।

রিয়াঃ আহ উঠছো কেন??শুয়ে থাকো।

আবিরঃ রিয়া তুমি কি ভুলে গেছো আমি এখন সুস্থ। তুমি এদিকে আমার কাছে আসো।

আবির রিয়াকে টেনে ওর একদম কাছে নিয়ে বসলো। রিয়াকে আবির নিজ থেকেই জড়িয়ে ধরে বসে আছে। যা অবশ্য রিয়াকে অবাক করছে।

আবিরঃ একটা মানুষকে কেউ এতটা ভালোবাসে কিভাবে রিয়া??

রিয়াঃ কে কাকে এতো ভালোবাসে??

আবিরঃ কেনো তুমি।

রিয়াঃ আমি কাউকে ভালোবাসি না।

আবিরঃ আমাকে বাসো না??

রিয়াঃ নাহ। (অভিমানী কণ্ঠে)

আবিরঃ আমি জানি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো। জানো ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করলে সে ভালোবাসার মূল্যটা বুঝা যায় না। আমার প্রতি তুমি যে যত্ন করেছে, দিন-রাত এক করে আমার যে সেবা করেছো বিন্দু মাত্র ক্লান্ত হওনি। বাইরের কোন নার্স রাখতে দেওনি ভয়ে। জানো এসবের মাঝে আমি তোমার সীমাহীন ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছি। আমার মতো সামান্য একটা ছেলেকে তোমার মতো এত্তো সুন্দরী একটা পরী যে এতো ভালোবাসবে তা আমি সত্যিই কোনোদিন কল্পনা করি নি। রিয়া আমারতো এখন দেওয়ার মতো কিছু নেই। আছে শুধু তোমার জন্য সীমাহীন ভালোবাসা। রিয়া আমিও তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। ভালোবেসে ফেলেছি সেই প্রথমদিন যেদিন তোমার উপর পরে তোমাকে দেখে ছিলাম সেদিন থেকে। ভালোবাসি রিয়া অনেক ভালোবাসি। আমার শুধু তোমাকে চাই এই পথচলায়। তোমার সয় সম্পত্তির কিছুই আমার প্রয়োজন নেই। চাই শুধু তোমাকে। হবে কি এই আবিরের রিয়া সারাজীবনের জন্য??

রিয়া এতোক্ষন আবিরের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। কেউ যে এভাবে কাউকে প্রপোজ করতে পারে তা রিয়ার জানা ছিলো না। রিয়ার আবিরের কথা শুনে নয়নজোড়া ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। রিয়া কি বলবে আবিরকে। সেওতো আবিরের সাথে সারাজীবন পাড় করার স্বপ্ন দেখছে সেই রাতেই।

আবির রিয়াকে ওর দিকে ঘুরিয়ে দেখে রিয়া নিরবে কাদছে।

আবিরঃ বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন??আমি কি কাঁদার কিছু বলেছি??

রিয়াঃ এভাবে কাউকে প্রপোজ করে?? (কাদো কণ্ঠে)

আবির রিয়ার চোখদুটো মুছে দিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে রিয়াকে ওর বুকে জড়িয়ে নেয়।

আবিরঃ তুমি যে আমাকে কতটা ভালোবাসো তা বলেছি। তোমার এই ভালোবাসার সামনে আমার ভালোবাসা সত্যিই মূল্যহীন।

রিয়াঃ হুম আসছে। আপনি যে আমাকে কতটা ভালোবাসেন তা আমাকে না বললেও আমি বুঝি। এই দুনিয়াতে কজন প্রেমিক আছে যারা তার ভালোবাসার মানুষকে বাচাতে নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পিছ পা হয়না। তুমিই তো সেই প্রেমিক। আর সেই তুমি বলো আমি তোমাকে বেশি ভালোবাসি। বরং তুমি আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসো।

আবিরঃ তাহলে একটি বার বলো না ভালোবাসি।

রিয়াঃ নাহ আমার লজ্জা লাগে।(লজ্জা ভাব নিয়ে)

আবিরঃ এহ আসছে, হুটহাট কিস করে দেও আর ভালোবাসি বলতে লজ্জা পাচ্ছে। প্লিজ বলো না।

রিয়াঃ বলবো তবে একটু আগে যেটার কথা বলেছো ওটা দিতে হবে। তাহলে বলবো। (দুষ্ট হাসি দিয়ে)

আবিরঃ না আমি খেলবো না তুমি এমন করলে।

রিয়াঃ না খেললে নাই।(মজা করে)

আবিরঃ প্লিজ বলো না একবার।

রিয়াঃ আগে বলো ওটা দিবা??

আবিরঃ আচ্ছা তবে কপালে।

রিয়াঃ এহ না না। এখানে।

আবিরঃ ওখানে বিয়ের পর।

রিয়াঃ তাহলে আমিও বিয়ের পরই বলবো।

আবিরঃ এমন করবা। আচ্ছা যাও রাজি। এখন বলো।

রিয়াঃ আমাকে কি বোকা মনে হয়?? আগে তুমি দিবে তারপর বলবো।

আবিরঃ কিন্তু তুমি যদি না বলো??

রিয়াঃ না বললে না হয় আরেকটা দিও। (মজা করে)

আবিরঃ রিয়া তুমি অনেক দুষ্ট।

রিয়াঃ ভালোবাসা পেতে হলে একটু এমনই হতে হয়। এখন তারাতারি দেও।

আবিরঃ আচ্ছা আচ্ছা দিচ্ছি। আগে তুমি চোখ বন্ধ করো।

রিয়াঃ আচ্ছা যাও করলাম।

অনেকটা সময় হলো কিন্তু রিয়া কোনো স্পর্শ অনুভব করছে না। রিয়া এক চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আবির ওর দিকে তাকিয়ে আছে কেমন করে জানি।

রিয়াঃ কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো যে??

আবিরঃ তোমাকে এভাবে অনেক সুন্দর লাগছে। মনে চাচ্ছে এভাবেই তোমাকে দেখে পুরো রাতটা পাড় করে দেই।

রিয়াঃ বুঝছি আমার জিনিস আমারই আদায় করে নিতে হবে।

আবির কিছু বুঝে উঠার আগেই রিয়া আবিরের ঠোঁটজোড়াকে তার করে নেয়। রিয়া আর আবির হারিয়ে যায় এক অন্যরকম অনুভূতিতে।

অনেকটা সময় পর রিয়া আবিরকে ছেড়ে দিয়ে ওর কানের কাছে গিয়ে বলে, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। নিজের থেকেও অনেক বেশি।

আবির রিয়াকে টেনে ওর বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে।

আবিরঃ এখন থেকে এটাই তোমার জায়গা।

রিয়াঃ সবসময় থাকতে দিবে তো??নাকি আবার অন্য কেউ এসে পরবে এখানে??

আবিরঃ কি যে বলো না। কেউ আসবে না এখানে। এ জায়গাটুকু শুধু তোমার আর তোমার। আর কারো না।

রিয়াঃ সত্যি??

আবিরঃ ৩ হাজার সত্যি।

রিয়াঃ আচ্ছা তাহলে এখন আমি যাই। তুমি ঘুমাও কাল কিন্তু চেকাপ আছে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

আবিরঃ আচ্ছা যাবো। কিন্তু তুমি আজ কোথাও যাচ্ছো না। আসো আমার কাছেই আজ ঘুমাবে।

রিয়াঃ বাবাহ। আজ দেখি তুমি অনেক রোমান্টিক মুডে আছো। আমি কিন্তু জানি না বাবা রাতে যদি আবার কিছু হয়ে যায়। (মজা করে)

আবিরঃ হাহা। কিছুই হবে না। আজ তোমাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাবো। জানো তুমি এ বুকে থাকলে সব কষ্ট দূরে চলে যায়। খুব শান্তিতে ঘুম হয়।

রিয়াঃ আমারো।

এরপর আবির রিয়াকে ওর বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পরে। খুব আরামেই সেদিনের রাতটা ঘুমিয়ে ছিলো ওরা। অনেক রাত অব্ধি দুষ্ট মিষ্টি কথা বলেছিলো। তারপর হারিয়ে গিয়েছিলো ঘুমের দেশে।

সকালে নাস্তার টেবিলে,

আবিরঃ বাবা আপনার সাথে একটা কথা ছিলো।

বাবাঃ হ্যাঁ বাবা একটা কেনো অনেকগুলো বলো।

আবিরঃ বাবা আমি চাকরি করতে চাই। তাই আজ একজায়গায় ইন্টারভিউ দিতে যাবো।

আবিরের কথায় মনে হয় রিয়ার বাবা অনেকটা কষ্ট পেলেন।

আবিরঃ বাবা আপনি কি আমার কথায় কষ্ট পেলেন??

বাবাঃ পাবো না কেন বলো??আমার যা আছে সবই তো তোমার আর রিয়ার। আমি ভেবেছিলাম তুমি বলবে, তুমি আমার অফিসের দায়িত্বটা নিতে চাও। তাহলে আমি একটু রেস্ট নিতে পারবো। কিন্তু তুমিতো।

আবিরঃ বাবা মানুষ কি বলবে??একে তো আমি আপনাদের বাসায় থাকি, আপনাদের টা খাই এখন আবার পুরো অফিস যদি আমি চালাই। ব্যাপারটা কেমন দেখায় না??

বাবাঃ মানুষের কথায় আমি চলি না। তুমি আমার মেয়ের জামাই। সো আমার যা আছে সবই এখন থেকে তোমার। আর আমি আরেকটা ডিসিশন নিয়েছি।

রিয়া সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,

রিয়াঃ কি বাবা??

বাবাঃ তোর আর আবিরের বিয়েটা খুব তারাতারিই দিয়ে দিবো। তাহলে আমি একটু চিন্তা মুক্ত হতে পারবো।

রিয়া বিয়ের কথা শুনে অনেক খুশি হয় আর বেশ লজ্জাও পায়। রিয়া ওর বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

রিয়াঃ আমি তো রাজি কিন্তু তোমার জামাই বাবাজিকে দেখো কি নিয়া যেন চিন্তা করছে।

বাবাঃ কি আবির কি ভাবছো???

আবিরঃ বাবা আমি আপনার সব কথাতেই রাজি তবে আমার একটা ইচ্ছা আছে?? প্লিজ না করবেন নাহ??

বাবাঃ হুম বলো।

রিয়া খুব চিন্তিত হয়ে ওর বাবার পাশের চেয়ারটাতে বসলো।

আবিরঃ বাবা আমার খুব ইচ্ছে, আমার একটা ছোট বাসা হবে সেটা আমি নিজে সাজাবো আর রিয়াকে নিয়ে সেখানে থাকবো। এখন আপনি যদি পারমিশন দেন তাহলে আমি বিয়ের আগ পর্যন্ত আমি আমার সেই ছোটঘরে থাকতে চাই। বিয়ে করে রিয়াকে আমার সেই ছোটঘরে নিয়ে যেতে চাই।

রিয়াঃ না বাবা আমি এতে রাজি না। ওকে ছাড়া এতোদিন আমি একা থাকতে পারবো না।

বাবাঃ আহ মা। ছেলেটা কত ভালো দেখ। ওকে রানী সহ রাজ্য দিচ্ছি ও তাও না করছে। ও তোকে ওর নিজের বাসায় নিয়ে যেতে যায়। কি করে ওকে না করি বল??

আবিরঃ রিয়া তুমি মন খারাপ করো না। আমি খুব তারাতারি তোমাকে আমার সেই ছোটঘরে নিয়ে যাবো। তাহলে বাবা আমি কি??

বাবাঃ হ্যাঁ বাবা যাও তোমাকে পারমিশন দিলাম। তবে তার সাথে কিন্তু আমার অফিসের সব দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে।

আবিরঃ আচ্ছা বাবা।

রিয়াঃ আমি কিন্তু প্রতিদিন সেখানে যাবো।

বাবাঃ আচ্ছা আচ্ছা যাস। কি পাগল তোমার জন্য দেখেছো।

আবির কিছুটা লজ্জা পায়।

গাড়িতে,
ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে আবিরের চেকাপের জন্য।

রিয়াঃ এটা কি হলো??

আবিরঃ কোনটা??

রিয়াঃ এই যে আলাদা থাকা??

আবিরঃ ওহ। কি করবো বলো, বিয়ের আগে তোমার কাছে থাকলে তুমি নিশ্চিত কিছু একটা করে ফেলবে তাই আলাদা হয়ে যাচ্ছি।

রিয়াঃ কিহহহহহ….(রেগেমেগে)

আবিরঃ আরে আরে মারছো কেনো??মজা করছি তো। আসলে তখন যেটা বললাম, যে তোমার জন্য আমার ছোটঘরটা বানাতে চাই। যেখানে বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে যাবো। আমি ঘর জামাই হতে চাইনা। মানুষ পরে তোমাকে খোটা দিবে।

রিয়াঃ তুমি এতো কিছু ভাবো কখন হ্যাঁ??

আবিরঃ যখন তুমি অনেকক্ষন বসে আদর করো তখন হাহা। (মজা করে)

রিয়াঃ কিহহহহ। (রেগে)

আবিরঃ বোকা মেয়ে মজা করছি।

রিয়া আবিরের কাধে মাথা রেখে বসে থাকে।

ডাক্তারের কাছে,

ডাক্তারঃ আবির এখন তোমার অবস্থা ভালো তবে ১৫ দিন পরপর তোমাকে চেকাপের জন্য আসতে হবে। যদি কোনো ইনফেকশন করে তার জন্য।

আবিরঃ আচ্ছা।

রিয়াঃ কিন্তু স্যার এভাবে কতদিন আসতে হবে??

ডাক্তারঃ আর ২/৩ বার আসলেই হবে। ওর ঘা টা শুকিয়ে গেলেই হবে।

রিয়াঃ আচ্ছা স্যার।

আবিরঃ তাহলে আমরা আজ উঠি। ধন্যবাদ আপনাকে।

ডাক্তারঃ ভালো থাকবেন।

এরপর আবির আর রিয়া বাসায় চলে যায়। আবির রিয়ার বাবার অফিসের সব দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। খুব ভালো ভাবে অফিস দেখা শুনা করছে। আবির এখন ওর নিজের বাসায় থাকে। খুব সুন্দর একটা বাসা নিয়েছে আবির। ১টা বেড রুম, একটা বিশাল বারান্দা,কিচেন, একটা ডাইনিং রুম আর ড্রইংরুম এই। আবির ওর মন মতো সব সাজিয়েছে।

এভাবে ১৫ দিন কেটে যায়। এর মাঝে রিয়া আর আবিরের বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায়। আগামী মাসের ১৫ তারিখ বিয়ে। মানে আর ১ মাস বাকি ওদের বিয়ের। রিয়া এবং আবির দুজনেই অনেক খুশি। আবিরও প্রায় ওর ঘর সাজিয়ে ফেলেছে।

পরদিন খুব সকালে রিয়ার ফোন,

আবিরঃ হ্যালো রিয়া, এতো সকালে ফোন দিলে কোনো সমস্যা হয়েছে?? (চিন্তিত কণ্ঠে)

রিয়াঃ আরে না। আজ কার সাথে দেখা করার কথা মনে আছে তো??

আবিরঃ ইমমম….তোমার সাথে নাকি??

রিয়াঃ তুমি আবার ভুলে গিয়েছো তাই না??

আবিরঃ প্লিজ বলো না। একদমই মনে আসছে না।

রিয়াঃ আচ্ছা বলছি। আজ ডক্টর এর সাথে দেখা করার কথা না তোমার চেকাপের জন্য??

আবিরঃ ওহ হ্যাঁ। আচ্ছা। অনেক থ্যাংকস আমার বাবুটাকে মনে করিয়ে দেওয়া জন্য। সত্যিই একদম ভুলে গিয়েছিলাম।

রিয়াঃ বউ হতে যাচ্ছি। তাই আগে থেকেই বউয়ের দায়িত্ব পালন করা শুরু করে দিয়েছি।(মজা করে)

আবিরঃ বাবাহ। ওরে আমার বউরে কত্তো ভালো। চিন্তা করো না খুব তারাতারি বউটাকে নিয়ে আসবো তার স্বামীর বাসাতে।

রিয়াঃ ইসস শখ কতো। বউ ঠিক করেছে সে আর জামাই বাড়ি যাবে না। বাপের বাড়িই থাকবে।

আবিরঃ ধুহ মজা করো না।

রিয়াঃ মজা না সত্যিই।

আবির টেনশনে পরে যায়। আর ওদিকে রিয়া বেশ মজা পাচ্ছে।

আবিরঃ প্লিজ বাবুটা এমন বলো না। তোমার জন্য এ ঘরটা সাজিয়েছি। আমাদের ছোটঘরের ভালোবাসা হবে বলে। প্লিজ এরকমটা বলো না।

এদিকে রিয়া হাসতে হাসতে শেষ। বেটাকে আরেকটু জ্বালাই। আমাকে একা ফেলে থাকা না।

রিয়াঃ না আমি ওখানে যাবো না। আমি বাবার কাছেই থাকবো। আমার জামাইটা অনেক পঁচা। আমাকে একা ফেলে সে ওখানে মজা করে থাকছে। যাবো না তার কাছে।

আবিরঃ কি বলছো কি এসব রিয়া?? আমি এখনই আসছি দাড়াও তোমার কাছে।

রিয়াঃ বেটা আসলেই বোকা বুঝে না যে মজা করছি। একে দিয়ে যে কি হবে নে। সব আমারই করতে হবে। হিহি। (মনে মনে)

রিয়াঃ থাক থাক আর আসতে হবে না। বিয়ের আগে মেয়ের বাড়ি আসতে নেই। মানুষ খারাপ বলবে। জামাই বাড়ি আসি তারপর দেখা কইরেন।হিহি

আবিরঃ ওফফ। তার মানে তুমি এতোক্ষন মজা করছিলে??আমিতো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহ।

রিয়াঃ তুমি ভাবলে কি করে তোমাকে ছাড়া থাকবো। বোকা ছেলে। এখন তারাতারি রেডি হয়ে অফিসে যাও। তারপর ডক্টরের কাছে যেও।

আবিরঃ আচ্ছা।

বিকেল ৫ টা,

রিয়া আবিরকে অনবরত ফোন দিচ্ছে কিন্তু আবির ফোন তুলছে না। অনেক বার ফোন দিলো কিন্তু ধরছেই না। রিয়ার অনেক চিন্তা হচ্ছে। অফিসে ফোন দিয়ে জানতে পারে আবির গাড়ি নিয়ে ৩ টার সময়ই বের হয়েছে। রিয়ার কেন জানি অনেক চিন্তা হচ্ছে।

রাত ৭ টা,

রিয়া আবিরকে অনবরত ফোন দিচ্ছে কিন্তু আবির ফোন তুলছে না। অনেক বার ফোন দিলো কিন্তু ধরছেই না। রিয়ার অনেক চিন্তা হচ্ছে। রাত এখন প্রায় ১০ টা। রিয়া আর নিজে ধরে রাখতে পারছে না। চিন্তায় শরীর কাপছে। ডক্টর আঙ্কেল বলেছে আবির বিকেল ৫ টাই বের হয়েগিয়েছে। কিন্তু আবির ফোন ধরছে না কেন।

রিয়া আর না পেরে রওনা দেয় আবিরের বাসায়। রিয়া আবিরের বাসা চিনে। কারণ মাঝে মাঝে শুক্রবার যেতো আবিরের সাথে সময় কাটাতে। তবে খারাপ কিছু করতো না।

১১ঃ৪৫ রিয়া আবিরের মেইন গেইটের সামনে। দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। মানে আবির দরজা লাগায় নি। কিন্তু কেন?? রিয়া আস্তে করে আবিরের বেড রুমের দিকে আগায়।

এরপর রিয়া যা দেখে, সে তার নিজ চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। রিয়া দেখে,

আবিরের বিছানায় একটা মেয়ে শুয়ে আছে। আর আবির তার পাশে বসে কেমন করে যেন কাঁদছে।

চলবে….?

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ