ছায়া নীল!
১৪.
খাবার যা এনেছে তাতে মনে হচ্ছে বাবা না খেয়েই মার ওখান থেকেই এসেছে। দুটো প্লেটে খাবার বেড়ে টেবিলে রাখলাম। খাবার পানিও প্রায় শেষ। বাইরে টিউবওয়েল আছে ওখান থেকে পানি আনতে হবে। পানির জগ হাতে নিয়ে টিউবওয়েল এর কাছে আসার পর দেখলাম বাবা চোখেরজল মুছছে আর কথা বলছেন ফোনে।
বাবা যদি দেখে ফেলে আমি তাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলেছি তাহলে অনেক লজ্জা পাবে। তাই না দেখার ভাব করে টিউবওয়েল থেকে পানি নিলাম। এক হাত দিয়ে কাজ করা কতো যে কষ্ট বুঝতে পারছি। এর থেকেও কষ্ট মনে।
টেবিলে বসে বাবার জন্য অপেক্ষা করছি। আমার ফোন বেজে উঠলো। সৌরভ ফোন করেছে।
রুমে গিয়ে ফোন রিসিভ করলাম। আমি বললাম
– কেনো ফোন করেছো?
– আরে ফোন ধরেই ধমক?
– কী কারণে ফোন করেছো?
– শুনলাম আমাদের বাসায় নাকি আসতেছো?
– হুম। তো?
– আমাদের বাসায় তুমি আসবা না। বড় মামাকে বলো যে,তুমি ওই বাড়িতে যাবে না।
– কেনো আসবো না তোমাদের বাসায়?
– সে কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই।
– আমি তোমাদের বাসায় যাবো না যাবো সেটা আমার ব্যাপার।
– মানে তোমার লজ্জা বলতে কিছু নাই? আমার বাসায় আসতে নিষেধ করছি। আর তুমি বেহায়ার মতো আসার জন্য পাগল হয়ে আছো।
– শুনো আমি তো অস্বাভাবিক মানুষ। অস্বাভাবিক মানুষের লজ্জা থাকেনা। লজ্জা থাকলে তোমার মতো নিচু প্রকৃতির মানুষের সাথে কথা বলতাম না।
– nonsense কোথাকার।
আমি বলতে যবো আর ফোন কেটে দিলো সৌরভ।
বাবা আসছেন মনেহয়। বাবা বললেন
– খেয়ে নে মা। তোকে আজকেই পাঠিয়ে দিবো।
– বাবা তুমিও তো খাওনি।
বাবা আর আমি খেয়ে নিলাম। বাবা বললেন
– তোর ব্যাগ গুছিয়ে রাখ আর মেডিসিন নিতে ভুলিস না। সৌরভ এসে নিয়ে যাবে।
– তুমি নিয়ে গেলেই তো হয়।
– আমি চিনি না রে মা।
বাসার জামা কাপড় পড়েই যাবো। আমার এখন আর সাজগোজ এর মন নেই।
ব্যাগ গুছিয়ে মোবাইল হ্যান্ড ব্যাগে রাখলাম। বাবা বলল
– সৌরভ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
বাবা ব্যাগ নিয়ে আগে আগে গেলে। বাবা বলল
– দরজা টা ভালোভাবে লক কর। চাবি এই নে।
বাবা বেড়িয়ে গেলেন আমি লক করে চাবি নিয়ে বাবার পিছনে পিছনে ছুটলাম।
বাবা একটা সাদা রঙের গাড়ির কাছে গিয়ে থেমে গেলে।
বাবা কার সাথে যেন কথা বলছে। কাছে গিয়ে দেখি ড্রাইভার সিটে সৌরভ বসা। সৌরভ বলল
– শারলিন তুমি পিছনে বসো।
বাবাকে বলল
– বড় মামা আপনিও বসুন আপনাকেও পৌঁছে দেই।
বাবা বলল
– নাহ বাবা, আমার মেয়েটার একটু খেয়াল রেখো। তোমার মামী একটু শান্ত হলেই ওকে নিয়ে আসবো।
সৌরভ বলল
– বড় মামা সমস্যা নাই। ও যতদিন ইচ্ছা থাকবে।
বাবা বলল
– তাহলে যাও বাবা।
সৌরভ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এতো দ্রুত গাড়ি ছুটালো যে মনে হলো ওর ট্রেন ছুটে যাবে। আমার এতো গতিবেগে শরীর খারাপ লাগছে। সৌরভকে বললাম
– স্লোলি ড্রাইভ করো।
সৌরভ বলল
– আমি এভাবেই ড্রাইভ করি। অভ্যাস করে নাও।
– সৌরভ আমার খারাপ লাগছে।
– কবে তোমার ভাল লাগছিলো?
মনে হচ্ছে গাড়ি একটু স্লো করেছে ও।
– ঝড়ের বেগে কেউ ড্রাইভ করে?
– কেউ বেড়াতে গেলে ফকিন্নির মতো কাপড় পড়ে?
– আমি তো অস্বাভাবিক মানুষ।
– পাইছো এক ডায়লগ। আল্লাহ আমি কোন মুখে এই কথাটা বলছিলাম।
চলবে……!
#Maria_kabir