ছায়া
রুস্তম মিয়ার এখনকার নিবাস এই সড়কদ্বীপের খেজুরগাছ গুলো যেখানে ঠিক সেখানে।
চন্দ্রিমা উদ্যান ছাড়িয়ে বিজয় সরণীর শুরুতে যেখানে প্লেনটা রাখা আছে, ওর পাশেই তিন চারটা খেজুরগাছ।
রুস্তম মিয়া এখানেই থাকে।
সেটা অবশ্য কোন সমস্যা না, এই ঢাকা শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার পাশে শুয়ে থাকে।
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় তাদের নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।
রুস্তম মিয়াকে নিয়েও কারো মাথা ব্যথা নেই।
রুস্তম মিয়া আগে চন্দ্রিমা উদ্যানে বাদাম বেচতো।
তারপর কিছুদিন রিক্সা চালিয়েছে, এখন অবশ্য কিছু করে না।
রুস্তম মিয়া সারাদিন এই ব্যস্ত রাস্তায় চলা গাড়ি গুলো দেখে।
এই রুটে চলে এয়ারপোর্ট রোডের বাস গুলো, আর মিরপুর রোডের বাসগুলো, সেফটি, ১০-১১-১২, বিকাশ আরো কত নামের কত বাস।
সেসব বাসের মানুষগুলো রুস্তম মিয়া দেখে সারাদিন রাত।
দিনে অবশ্য দেখে না, রাতেই বেশি দেখে।
এই সড়কদ্বীপটা অন্ধকার।
এখানে যতবার সোডিয়াম বাতি দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন, রুস্তম মিয়া ভেঙে দিয়েছে।
এখন কর্পোরেশনের লোকেরাও জানে এখানে বাতি দিলে টিকবে না, লাইনে কোন সমস্যা আছে।
অন্ধকার গাছের কাছে বসে লাইট জ্বলা বাস আর গাড়ি গুলো দেখতে রুস্তম মিয়ার খুব ভালো লাগে।
আশেপাশে আর কেউ থাকে না।কয়েকদিন ধরে একটা বুড়িও পাশে এসে শুয়ে থাকা শুরু করেছিলো, পরে তাকে তার আত্মীয় স্বজনরা কোথাও নিয়ে চলে গেলো।
রুস্তম মিয়ার পরিচিত কয়েকজন থাকে চন্দ্রিমার ভেতরে।
বড় ঝাপরা দেওয়া নাগেশ্বরী গাছের নিচে।
রাত হলেই ওসব গাছে অন্ধকার জমাট বাঁধে।
রুস্তম মিয়াকে কয়েকবার ডেকেছে ওরা, সে যায়নি।
তার ভালো লাগে এখানে।
রাত বাড়লে বাসের যাত্রীরা চিন্তিত মুখে সিগনালে বসে থাকে।
একটা বাচ্চা মেয়ে এখানে ফুল বিক্রি করে, আছাদ নামে একজন পানি বিক্রি করে, আর আমড়া পপকর্ণ নিয়ে আসে মাইনু আর আক্কাস। ওরা এখানে বসে না, আরো কিছুটা দূরে জটলা করে বসে সবাই।
সিগনালে গাড়ি থামলেই সবাই দৌড়ে আসে।
যে মেয়েটা ফুল বিক্রি করে, তার নাম পপি।
ছোট্ট মেয়ে, নয় দশ বছর হবে।
রুস্তমের মেয়ের বয়সী।
রুস্তম রেখে এসেছিলো তিন বছরের।
কে জানে কতটা বড় হলো সে!
রুস্তম জানে না খবরও পায় না আজকাল।
সেই মেয়ের মা নাকি বিয়ে করেছে আবার।
রুস্তম এর দোস্ত মিজানকে।
করুক গা মাঝে মাঝে মেয়েটার কথা মনে হয় পপিকে দেখে।
বাসগুলোর কাছে যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু এত মানুষের ভীর, গাদাগাদি, রুস্তমের ভালো লাগে না।
এখানে একা থাকাই শান্তি
রুস্তম দেখে বাসে বসা মানুষেরা মোবাইল চালায় , কি সুন্দর ঝকঝকা রঙ !
রুস্তমের একটা ফোন ছিল নোকিয়া এগারশ মডেলের।
রুস্তম তখন বাদাম বেচতো, মাঝে মাঝেই মোবাইলের সাপটা নিয়ে খেলতো, কি যে উত্তেজনা।
একটু অসাবধানে খেললেই সাপ শেষ!
রুস্তম সেদিন দেখে বাসে একটা বাচ্চা মেয়ে জানলা দিয়ে হাত বাড়ালো, এখনি অন্য একটা বাস পাশ দিয়ে যাবে। রুস্তম তাড়াতাড়ি গিয়ে মেয়েটার হাত ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে গেলো, মেয়েটা কান্নাকাটি করে একাকার অবস্থা। এরা সবাই তাকে ভয় পায়! পপি মেয়েটাও কয়োকদিন বেশি একটা এদিকে আসে না। আসলে ভালো লাগত।
রুস্তম হঠাৎ দেখে, পপি আস্তে আস্তে এসে গাছের নিচে বসে।
রুস্তম অনেকক্ষণ খেয়াল করে তারপর কাছে গেলো।
পপি অবশ্য ভয় পেলো না!
রুস্তম জিজ্ঞেস করলো, এখানে এলি কিভাবে?
পপি আস্তে আস্তে উত্তর দিলো, জ্বর হইছিলো, কয়দিন জ্বরে শুইয়া আছিলাম।
হেরপর দেখি এই জাগাত!
তোর কি ভয় লাগেতেছ?
পপি বললো, না, ভয় লাগতেছে না, আপনে দেখি ভালা মানুষ, সবাইরে সাহায্য করতে যান।
রুস্তম নিশ্চিন্ত হলো। যাক এই ছেড়ি ভয় পাচ্ছে না।
একসিডেন্টে মরে যাওয়ার পরে চেহারাটা এমন বিভৎস হয়েছে!!
সবাই শুধু ভয় পেয়ে দূরে সরে থাকে।
ছায়া
লেখিকা : শানজানা আলম
( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/shanjana.alam