#চিরেকুটের শব্দ (পর্ব ৭)
#মেহেদী হাসান রিয়াদ
এতটুকু বলেই একটা নিশ্বাস নিলো অর্ণব। আর তার সামনে বসে আছে ইনন্সপেক্টর সাঈদ। সে কুচকানো কপালে হাত রাখলো। চোখে মুখে ভাবান্তর স্পষ্ট। হয়তো অর্থির জন্য মায়া হচ্ছে তার। মেয়েটা কতো অবহেলা সহ্য করেছে। পায়নি বাবার বাড়ির ভালোবাসা আর পায়নি স্বামীর কাছে একটু সুখ।
অর্ণব একটু হেসে বললো,
– অর্থির কষ্ট এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। এর পর যে কষ্ট পেয়েছে তার কাছে এগুলো কিছুই না।
সাঈদ একটু অবাক হয়ে বললো,
– এতো কষ্ট দিয়েছেন কেন মেয়েটাকে। তাকে তো সৃষ্টি কর্তাই সৃষ্টি করেছে এমন করে। তার তো কোনো দোষ ছিলো না।
অর্ণব একটা দির্ঘশ্বাস নিলো। তার পর বললো,
– আমি অনুতপ্ত, নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না আমি। আমার মতো পাপির শাস্তি হওয়া উচিৎ। চার চারটা প্রান আমার জন্য চলে গেল। আমার উপযুক্ত শাস্তি না হলে আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না।
সাঈদ একটু আগ্রহ নিয়ে বললো,
– এর পর কি হয়েছিলো?
অর্ণব একটু হেসে বললো,
– বলছি সব বলছি এক এক করে।
,
,
সেদিন সারা রাত ঘুমাতে পারেনি অর্থি। কারণ হাসপাতাল থেকে প্রান্তকে দেখে আসার পর সেদিন সন্ধায় নাকি প্রান্ত খুব করে অর্থিকে দেখতে চেয়েছিলো। কিন্তু অর্থি আর যায় নি। সেদিন রাত ৯ টার সময় মারা গেলো প্রান্ত।
প্রান্ত তাকে কতো ভালোবাসতো, অথচ সে প্রান্তর শেষ ইচ্ছে টা পুরণ করেনি।
এর দুই দিন পর অর্থিকে নিয়ে যায় তার শশুর বাড়ি। এই বাড়িতে বন্ধি থেকে অর্থি কিছু না জানতে পারলেও, বাবার বাড়িতে গিয়ে অর্থি অর্ণবের সম্পর্কে খোজ নিয়ে অনেক কিছুই জানতে পেরেছিলো।
বাইরে একটা মেয়ের সাথে রিলেশন আছে অর্ণবের। আছে তার সাথে অবৈধ মেলামেশা।
প্রথমে অর্থির বিশ্বাস না হলেও, পর দিন অর্ণবকে ফলো করলো সে। দেখে একটা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো অর্ণব। তার পর একটা মেয়ে বেড়িয়ে আসতেই মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। অর্থি কিছুক্ষন সক্ড হয়ে দাড়িয়ে থাকে ওখানে। কিছু বলার ভাষা নেই তার। তবুও এটা কি যাস্ট ফ্রেন্ডশিপ নাকি, অন্য কিছু তা নিজেকে মানাতে পারছে না সে। তার বিশ্বাস অর্ণব এমন টা কখনোই করতে পারে না।
এর পর শিউর হতে বাড়ির ভেতরে গেলো অর্থি। ভেতরে গিয়ে যা দেখলো তাতে আর কিছুই অবিশ্বাস করতে পারছিলো না সে। ইচ্ছে করছিলো ওই মেয়েটার থেকে অর্ণব কে ছাড়িয়ে বলে উঠতে, এমনটা করবেন না প্লিজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু অর্থি চুপচাপ বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো। রাস্তায় আসতেই দু,চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে থাকে তার। এতোক্ষন খুব কষ্টে আটকে রেখেছিলো। অর্থির কষ্ট হচ্ছে খুব আজ।
রাতের খাবার শেষ করে রুমে গেলো অর্থি। দেখলো অর্ণব বেলকনিতে দাড়িয়ে। হুট করে অর্ণবের কাছে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁন্না করে দিলো অর্থি। অর্ণবকে অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু আল্লাহ্ যে তাকে সেই শক্তি টুকু দেয় নি।
এর পর অর্ণবকে ছেরে রুমে আসে অর্থি। আবার অর্ণবের কাছে গিয়ে কি যেন লিখে কাগজটা অড়ণবের দিকে বাড়িয়ে দিলো।
‘আপনি যা করেন না কেন। আমার কোনো অভিযোগ নেই। যদি আপনি সব ছেরে দেন তাহলে আমি সব মেনে নিবো। প্লিজ এমন করবেন না। আপনাকে আমার অন্য মেয়ের সাথে সহ্য হয় না।’
কাগজটা হাত দিয়ে মুচড়ে অর্থির মুখের দিকে ছুড়ে মারে অর্ণব। আর বলে উঠে,
– তোমাকে আমি প্রথম রাতেই বলেছি, আমার স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই। এখন আমি চাইলেই যে কোনো সময় তোমায় ডিবোর্স দিতে পারি। সো চুপচাপ সব মেনে নাও, আর যেভাবে আছো ওভাবেই থাকো। বেশি এগুতে চেষ্টা করো না। রক্ষিতা রক্ষিতার মতোই থাকো।
বলেই রুমে চলে গেলো অর্নব। অর্ণবের শেষ কথাটা খুব গায়ে লাগলো অর্থির। হুম, আমি তো মাত্রই তার রক্ষিতা। যখন ইচ্ছে ব্যবহার করবে, আর যখন ইচ্ছে তখন ছুড়ে ফেলে দিবে।
,
,
আজ অর্ণবের অফিসের বস আসবে এই বাড়িতে। ওই দিন অর্ণব যখন অর্থিকে পার্টিতে নিয়ে গেলো, ওখানেই অর্থিকে দেখেছিলো তার বস। এর পর অর্ণবের মুখে শুনলো অর্থির রান্নার হাত খুবই ভালো। সেখান থেকেই তার বস আগ্রহ জানালো অর্থির রান্নার টেস্ট করতে।
তাই এই ডিনারের আয়োজন। সেই সন্ধা থেকে রান্না করছে অর্থি। বার বার কাপর দিয়ে কপালের ঘাম মুছে আবার রান্নায় মন দিলো।
তার শাশুড়ি বার বার এসে দেখে যাচ্ছে রান্না কতটুক হলো। অর্ণব তো সেই সন্ধা থেকে অস্থির তার বস নিজে থেকেই তার বাড়িতে আসছে।
বাইরে গাড়ির হর্ণ কানে আসতেই অর্ণব দরজা খুলে বাইরে যায়। দেখলো তার বস চলে এসেছে। সে তাকে গিয়ে এগিয়ে এনে বাড়ির সবার সাথে পরিচিত করে দেয়।
অর্থি তখন ক্লান্তি নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
শাশুড়ির ডাকে তারাতারি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয় সে। একটা নীল রংয়ের শাড়ি পরে নিল। তার পর তাড়াহুরা করে কিচেনে চলে যায়। একে একে খাবার এনে টেবিলে সাজিয়ে দিতে শুরু করলো সে। যদিও সে পর পুরুষের সামনে যায় না, তবুও অর্ণবের কথায় সব করছে সে।
অর্ণবের বস ফরহাদ চৌধুরী সেই দিন পার্টিতে অর্থিকে প্রথম দেখেছিলো। কিন্তু সেদিন বোরকা হিজাব পড়ায় পুরোপুরি দেখেনি তাকে। আজ এখানে অর্থিকে দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তার দৃষ্টিতে বোঝাই যাচ্ছে, শাড়ি পরিহিত এই চমৎকার নারীর রুপে মুগ্ধ সে। চোখ ই ফেরাচ্ছে না।
তার এমন অদ্ভুত দৃষ্টি চোখে পরলো অর্থির। ধিরে ধিরে তারও অস্বস্থি লাগতে শুরু করলো।
তবুও কিছু বলতে পারছে না সে। চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেলো।
খাবার শেষেও প্রায় এক ঘন্টা এ বাড়িতে বসে ছিলো ফরহাদ চৌধুরী। এর ওর সাথে কথা বলছে, কিন্তু তার লক্ষ অর্থিকে দেখা। তার চোখে যেন এতো সুন্দরী রমনি আর ধরা পরেনি।
অর্ণবকে বললো, সে সারা বাড়ি ঘুরে দেখতে চায়। অর্ণবও খুশি মনে এক এক করে সারা বাড়ি দেখাচ্ছে তাকে। অর্ণবের রুমে ঢুকেই অর্থির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে। অর্থি বসা থেকে উঠে চুপচাপ এক পাশে দাড়িয়ে রইলো।
ফরহাদ চৌধুরীর চোখ যেন অর্থির সারা শরির জুড়ে বিচরণ করছে। অর্থি না পারছে কিছু বলতে, আর না পারছে সইতে।
যাওয়ার সময় ফরহাদ চৌধুরী অর্ণব কে ডেকে বাইরে নিয়ে যায়। একটা ডিল করবে। তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ডিল।
– আপনার স্ত্রীকে আমার ভালো লেগেছে অর্ণব সাহেব।
অর্ণব হুটহাট এমন কথা শুনে মাথা তুলে তাকালো। ফরহাদ চৌধুরী আবার বললো,
– এক রাতের জন্য আমার বিছানায় পাঠাতে হবে তাকে। বিনিময়ে আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন।
অর্ণব এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন একটা কথা শুনতে হবে তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি সে। নিরবতা ভেঙে অর্ণব বললো,
– সরি স্যার আমি আমার স্ত্রীর সাথে এমন টা করতে পারবো না।
– অর্ণব সাহেব, আপনি কি ভুলে গেছেন, যে কি ছিলেন আপনি? জিরো থেকে হিরো হয়েছেন আপনি। আর সেটাও আমি দয়া করেছিলাম বলে। এখন আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি না হলে আপনাকে চাকরিটা ছেরে দিতে হবে। আর অফিস থেকে দেওয়া বাড়ি ও গাড়ি দুটুই ছেড়ে দিতে হবে।
– প্লিজ স্যার এমন টা করবেন না।
– তাহলে আমি যা বলেছি তাই আপনাকে চুপচাপ করতে হবে। আপনার বেতন আগের তুলনায় দ্বিগুন করে দেওয়া হবে। এখন আপনিই ডিসিশন নিন, কোন অপশন টা বেছে নিবেন আপনি। কালকে অফিসে মতামত জানাবেন। ভাবার জন্য আজ সারা রাত সময় আছে আপনার কাছে।
অর্ণব নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে। হয়তো ভাবছে, এমন চান্স দুইবার আসবে না। আর অর্থিকে তো সে এমনিতেই ডিবোর্স দিয়ে দিবে। তাহলে নিজের সফলতার মাঝে টোক হিসেবে ব্যবহার করতে প্রব্লেম কি?
To be continue…..