চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৫২
লেখা আশিকা জামান
” এটা কী পরেছো!”
অঙ্কন উত্তর না দিয়ে নিজের দিকে একবার তাকায়। একটা হালকা পাতলা টি-শার্ট আর হাটুর উপর শর্টস প্যান্ট ঝুলছে এতে এমন অবাক হয়ে তাকানোর কী আছে কে জানে! কিঞ্চিৎ সরে দাঁড়াল অনন্যার প্রবেশপথ সুগম করার জন্য।
কিন্তু সে অঙ্কনের নগ্ন পায়ের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। লম্বা লম্বা আঙ্গুলের নখগুলোও সুশ্রী সুনিপুণ। জীবনে এই প্রথম যেন নিজের এই অগুছালো রুপ নিয়ে অঙ্কনের সামনে আসতে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে।
” কী হলো! দাঁড়িয়ে থাকবে না ভেতরে আসবে। ” অঙ্কন অধৈর্য্য গলায় বলল।
অনন্যা ভেতরে ঢুকে বেডের উপর আলগোছে বসল।
” তুমি হঠাৎ! তোমাকেতো ঘুমাতে বলেছিলাম।”
” সত্যি ঘুমাতে বলেছিলে!”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
” তাহলে কি মিথ্যামিথ্যি বলেছিলাম।”
” তাহলে যাই।” অনন্যা সত্যি সত্যি উঠে দাঁড়ায়।
অঙ্কন হতবিহ্বল হয়ে তাকায়। সত্যি সত্যি চলে যাবে নাকি!
” এসে যখন পড়েছো তখন আর কিছুক্ষণ থেকে যাও।”
” কিছুক্ষণ কতক্ষন! আচ্ছা আর হাফ এন আওয়ারের মতো থাকি। পরে না-হয় চলে যাব।”
অঙ্কন এতক্ষণ দাঁড়ানো ছিল ধপ করে বসে পড়লো। মাথা নীচু করে থাকায় মুখটা অনন্যা দেখতে পেলো না।
” থাক কষ্ট করে আর আধাঘন্টা থাকতে হবেনা তুমি বরং এখনি চলে যাও।”
কথাটা শোনামাত্র অনন্যার মুখ অজান্তেই হাঁ হয়ে গেল। তবে ভেতরে ভেতরে এক পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছিলো।
অঙ্কনের মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় লাগছে। ধপ করে চাপা রাগে সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো। এই হলদে রঙ্গের আটঁসাটঁ টপস আর নীল রঙ্গা পা পর্যন্ত লম্বা স্কার্টটা যেন মাথার যন্ত্রণা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। খাঁজ কাটা দেহবল্লরীর উপর বেশীক্ষন তাকিয়ে থাকা যাচ্ছেনা। এত রাতে মাথা বিগড়ে দেয়ার জন্য তাহলে আসা হচ্ছিলো! একটু আগেই ঠিক যতোটা খুশি হয়েছিল অনন্যাকে দেখে এখন ততটাই আহত হলো। সে উঠে পড়লো রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ প্রকাশ হওয়া অবাঞ্চনীয়।
তবে এই আচরণ অনন্যার চেনা। সময়ের সাথে সাথে এই রগচটা রুপটাকেই তার একান্ত আপন মনে হয়। সে উঠে দাঁড়ায় আলতো হাতে অঙ্কনকে টানে। অঙ্কন পেছনে তাকায় চাপা রাগ বাড়তে না দিয়ে। সেই ছয় ফুট দুই ইঞ্চির লম্বা দেহটা তখন চোখ তুলে উর্ধপানে!
তাতে অনন্যা দমে যায়না বরং সাহসীভাবে তার চিবুকে নিজের ওষ্ঠ ছোঁয়াতে যায়। কিন্তু সে মাথাটা ঝুঁকিয়ে না আনলে সেটা আপাতত সম্ভব হচ্ছেনা।
” অঙ্কন!” অনন্যার গলায় অধৈর্য্য।
” কী সমস্যা!” অঙ্কন কিছুটা মাথা ঝুঁকিয়ে এনে ভ্রু কুঁচকে বলল।
” চুমু খাব।” অনন্যা নাক টানতে টানতে বলল।
” নো চান্স! এরপর আমার মাথাটা বিগড়ে দিয়ে চলে যাওয়া হবে। তখন সেই কঠিন সংযম সাধন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং দূরেই থাক। যাও যা-ও এক্ষুনি যাও।”
অনন্যা হঠাৎ অঙ্কনের পায়ের পাতায় নিজের দু’ পা ভর করে আলগোছে গলা জড়িয়ে ধরে।
” কী মুশকিল একটু ডিসটেন্স রাখতে বলছি আর তুমি কীনা গলায় ঝুলে পড়লে। হুয়াই! আমাকে না জ্বালিয়ে তুমি শান্তি পাচ্ছনা!”
” উঁহু! আমি আমার স্বামীকে জ্বালাব ইচ্ছেমতো জ্বালাব তাতে তোমার কী!”
” সিরিয়াসলি আমার কী! জোকস অফ দ্যা ইয়ার। গলা ছাড়! নাহলে কিন্তু ভালো হবেনা।”
” ভালো কিছু আজ রাতে আশাও করছিনা। বরং তুমি ভালোবেসে আজ রাতে না-হয় খারাপ কিছুই দাও। ”
অঙ্কন কিছু বললনা। আড়চোখে চেয়ে থাকল।
অনন্যা মৃদুহেসে চিবুকে আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
” তুমি কী সম্মোহন শক্তি জানো! এভাবে তাকাও কেন! আমার দু’পা যে বাধাঁ পরে গেছে। চাইলেও আর দূরে যেতে পারছিনা। আমিতো আজ রাতে যাব বলে ছুটে আসিনি।”
ঠিক সেই মুহুর্তে অনন্যার চোখেমুখে কী এক অকৃত্রিম মায়া আবিষ্কার করে বসলো অঙ্কন। এক ঝটকায় দৈত্যর মতো এসে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সে অনন্যাকে জড়িয়ে ধরলো।
★★★★
নিনিত এতোক্ষণ ব্যালকনিতেই ছিলো হুট করে দরজা নক করার শব্দে ভেবে নেয় অনন্যা এসেছে। কিন্তু না সাইমুন দাঁড়িয়ে আছে। নিনিত তাকে দেখামাত্র ফের দরজা লাগানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু সাইমুন ঠ্যালে ঠুলে রুমে ঢুকে। চোখেমুখে চাপা রাগ।
” সাইমুন, প্লিজ অনন্যা আছে। তুই যা এখান থেকে।”
সাইমুন কোন প্রতিউত্তর কাটলোনা বরং নিনিতের এক বাহু শক্ত হাতে চেপে ধরে ভেতরে প্রবেশ করলো।
” তোর ফোন কই!” চিৎকার করে বলল। এদিক সেদিক তাকাতেই ফোনটা বেডসাইড টেবিলের উপরেই পেলো। নিনিতকে ছেড়ে দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে সজোরে একটা আছাড় মারে। মুহুর্তেই ফোনের স্ক্রিন ফেটে চৌচির হয়ে গেল।
” তুই ফোন ভাঙ্গলি কেন! কোন অধিকারে ভাঙ্গলি!”
” একটা ভাঙ্গছি দশটা কিনে দেব! আমি তোকে ভালোবাসি সেই অধিকারে ভাঙ্গছি।”
” আমি তোকে ভালোবাসি না। বলেছিনা তুই কেন বিরক্ত করিস। আমার কোন কথা নাই তোর সাথে। কেন বুঝতেছিস না নেহা তোকে ভালোবাসে। এরপরেও কেন তুই আমার সাথে এমন করছিস!”
” তুই ভালোবাসিস না আমায়! সত্যি করে বল। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল!” সাইমুন নিনিতের দুই চিবুক শক্ত হাতে ধরে নিজের দিকে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল।
” নেহা অনেক সুন্দরী, স্মার্ট ভালো মেয়ে ও তোকে খুব ভালোবাসে। ”
” শাট আপ নিনিত! জাস্ট শাট আপ! তুই আমার প্রশ্নের উত্তর দে? আমাকে ভালোবাসিস অর ঘৃণা করিস!”
” ছেড়ে দে আমার লাগছে।”
” প্রশ্নের উত্তর দে! তুই আমাকে ঘৃনা করিস এই কথাটা বল।”
নিনিতের চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়লো। এই কথাটা সে বলতে পারবেনা। আবার নেহার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা সে কীভাবে করবে।
” আই লাভ ইউ! আমি তোকে ছাড়া আর কিচ্ছু চাইনা। খুব ভালোবেসে ফেলেছিরে! গত সাতটা বছর একসাথে থেকেও আমি তোকে ভালোবাসি বলতে পারিনি। এখন যদি না বলি তাহলে হয়তো আর জীবনেও বলা হবেনা। প্লিজ তুই আমাকে ফিরিয়ে দিসনা। আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস। তোর আর কিচ্ছু বলতে হবেনা।”
সাইমুনের চোখের মনিতে নিনিত ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়ে সে আর কিছু বলতে পারলোনা। নিশ্চুপ চোখের পানি ফেলতে লাগলো। সাইমুনের যেন কী হলো জীবনে প্রথমবারের মতো সে নিনিতকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত হাতে।
★★★★★
অঙ্কনের ঘুম ভাঙ্গে খুব ভোরে! এরপরই টানতে টানতে যখন অনন্যাকে ঘুম থেকে জাগাতে পারেনি তখনই কপালে একে দেয় উষ্ণ চুম্বন। এবার ঠিক অনন্যা চোখ মেলে তাকায়।
” তারমানে তুমি জেগে ছিলে!”
” নয়তো কী! চুমোটা আগে দিলে আগেই উঠে যেতাম। কিন্তু এত ভোরে ডাকছো কেন?”
অনন্যা বিছানায় উঠে বসতে বসতে বলল।
” দরকার আছে! তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”
” কিন্তু আমিতো চেইঞ্জ আনিনি।”
অঙ্কন মৃদু হেসে অনন্যার সামনে একটা বেবি পিংক কালার ফ্লোরাল প্রিন্টের একেবারে লাইট একটা শাড়ি চোখের সামনে ধরে! একেবারে সফট শাড়িটা হাতে ধরেও ভাল্লাগছিলো।
” কি পছন্দ হয়েছে!” অনন্যার চোখমুখ দেখেই অঙ্কন বুঝে যায়।
” কিন্তু ম্যাচিং ব্লাউজ!” কথাটা বলেই অনন্যা থেমে যায়।
” সুন্দরী সবই আছে! প্লিজ পরে আসুন! চক্ষুদ্বয় সার্থক করি।”
এরপর এক ঘোরের মধ্যেই টানতে টানতে অনন্যাকে নিয়ে চলে যায় সারেংকোট। সূর্যোদয় দেখার জন্য আগে থেকে অনেক পর্যটক অপেক্ষা করছিল। বরফে ঢাকা কৈলাস ও অন্নপূর্ণা পর্বতে সূর্যোদয়ের সময় আলোর বর্ণিল খেলা প্রাণ ভরে উপভোগ করলো দুজনে। অনন্যা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে ছিলো এরপর বলল,” দার্জিলিং এ কখনো গিয়েছিলে!”
অঙ্কন দু’হাতে অনন্যার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল,
” গিয়েছি তবে তোমায় নিয়ে আরেকবার যাব। ওখানের টাইগার হিলের সাথে এর পার্থক্য হলো- ওখানে কাঞ্চন জঙ্ঘা দেখা যায় বেশ দুর থেকে এবং সূর্য উঠে দুটো পাহাড়ের মাঝামাঝি অবস্থান থেকে। আর এখানে কৈলাস অনেক কাছে যেন মাথার ঠিক উপরে। বিশাল আকারে দেখা যায় এবং সূর্য উঠে পাহাড়ের নিচ থেকে। পাহাড় আর সূর্য দেখতে দেখতে কেমন রঙ বদলাচ্ছে দেখতে পাচ্ছ।”
অনন্যা মুগ্ধ হয়ে এদিক সেদিক তাকায়।
কেউ কেউ ছোট ছোট হেলিকাপ্টারে চড়ে আরো কাছ থেকে ঘুরে আসছে। অঙ্কন সেদিকে তাকিয়ে বলল,
” চলো আমরাও যাই!”
” নাহ্ ভয় লাগে৷ যাবনা হোটেলে ফিরে চলো।” অনন্যার চোখে মুখে চাপা ভয়ের ছাঁপ।
” আমার সাথে ঘুরতে ভালো লাগছেনা!”
” আশ্চর্য ভালো লাগবেনা কেন! কালরাত থেকে মিসিং। ওখানে কী অবস্থা জানিনা।সবচেয়ে বড় কথা ওদের ছাড়া এসেছি তাই খারাপ লাগছে।”
” আচ্ছা চলো।”
ফেরার পথে দেখা পাওয়া গেল বিন্দুবাসিনী মন্দিরের। ওখানে শিব স্নান করানো ও প্রভাতের সমবেত প্রার্থনা হচ্ছিলো।
চলবে!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
Next part gulo aktu tara din plzzz
Next part kokon diban??? Next part gulu aktu taratari den plzzzzzzzz ??????????
Plz plz next part gula deya den
doya kore jodi bolten golpota kobe abar diben
Next part needed yar