চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪৫
লেখা আশিকা জামান
খুব ভোরে সবাই রেডি হয়ে গিয়েছিলো। উত্তেজনায় সারা রাত কারো ঘুম হয়নি। তবে অনন্যার ব্যাপারটা আলাদা।
তার ঘুম হয়নি অন্য কারণে যা সবার বুঝার কথা নয়। ফলে সকালে বেরিয়ে এসেছিল লাল টকটকে চোখ নিয়ে। সারারাত না ঘুমালে অনন্যার এমন হয় বন্ধুরা জানে। প্রত্যেক পরীক্ষার সময় এমন টকটকে চোখেই অনন্যাকে দেখা যেত।
” কী রে উত্তেজনায় সারারাত ঘুমাস নাই নাকী? কি লাল চোখ!” নিনিত বলল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
অনন্যা চোখ ডলতে ডলতে বলল,
” ওই, আর কী! জানিসই তো!”
সাইমুন আর দীশা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। কিছু বলল না। অনন্যা ভয়ই পেল এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে।
তানভীর, অনীহার হাত ধরে আগাতে আগাতে বলল,
” চল, চল লেট হয়ে যাবে।”
সবাই কথা না বাড়িয়ে ওঁদের পেছন পেছন যাওয়া শুরু করল।
তানভীর আর সাইমুন বেশ এক্সাইটেড! এতদিন কেবল বাঞ্জি জাম্প আর ক্যানয়ন সুইং এর ভিডিও দেখেছে। এবার নিজেরা করে দেখাবে। এটা নেপাল ভ্রমনের সবচেয়ে এক্সাইটিং দিন হতে যাচ্ছে। এক্টিভিটি ছাড়াও দ্যা লাস্ট রিসোর্ট টা অনেক সুন্দর। মেয়েদের জন্য ডে ট্যুরটা নেয়া হয়েছে।
ওঁরা দ্যা লাস্ট রিসোর্ট এর অফিসে যখন চলে এলো তখন পাঁচটা পঁয়তাল্লিশ বাজে। অবশ্য দুই/ তিনদিন আগেই বুক করে রাখতে হয়। ওঁরা একে একে বাসে উঠছিলো। বাসে উঠে অনন্যা থমকে দাঁড়াল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বাসের ঠিক মাঝামাঝিতে বসে থাকা অঙ্কনের দিকে।
” অনন্যা তুই কি হার্ট ফেইল করলি! সামনে যাস্ না ক্যালা?” তানভীর দাঁত বের করতে করতে বলল।
অনন্যা কিছু বলল না কেবল চোখ বড়বড় করে তানভীরের দিকে তাকিয়ে ফের চোখ নামিয়ে নেয়। এক পার্শ্বে সরে দাঁড়ায়।
অঙ্কন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকল অনন্যার বদলে যাওয়া মুখশ্রীর দিকে।
তানভীর উচ্ছ্বাসের সাথে অঙ্কনকে জড়িয়ে ধরে,
” হেই ব্রো! আ’ম সো মাচ এক্সাইটেড! তুমি যাচ্ছ আর কি লাগে!”
অঙ্কনও ফিঁচেল হেসে তানভীরকে জড়িয়ে ধরে।
অনীহা অদূরে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসে।
” আন্তরিকভাবে দুঃখিত তোদের সময় দিতে পারছি না বলে। অনেক কষ্টে আজ আসলাম। মনে কিছু নিস না ভাই। অনীহাকে বুঝিয়ে বলিস।”
বাকি সবাই আড়চোখে একবার অনন্যার দিকে আরেকবার অঙ্কনের দিকে দেখছিল। ওঁদের এতোক্ষণে এই নেপাল ট্যুরে আসার কাহিনি বুঝা হয়ে গিয়েছে। বাকি সবার মুখেই দুষ্টু হাসি ফুটে উঠলো। কেবল দীশা আর সাইমুন বাদে।
” তোর বন্ধুদের সাথে পরিচয় করাবি না।” অঙ্কন বলল।
” ওহ্ হ্যাঁ। আসো।”
তানভীর একে একে সবার সাথেই পরিচয় করালো। অনন্যার কাছে এসে বলল,
” ভাই এই শাকচুন্নীটার সাথেও পরিচয় করাতে হবে!”
তানভীরের মুখে দুষ্টু হাসি। অঙ্কন যেন লজ্জা পেল। অনন্যা তানভীরের হাতে খাঁমচি দিয়ে বলল,
” তুই একটা খাটাশ!”
তানভীর নিচুস্বরে চিৎকার করে উঠে বলল,
” কি শাকচুন্নীরে আমার হাতের মাংস নিয়ে নিছে।” অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে আবার বলল,
” ভাই, এই শাকচুন্নীর থেকে সাবধান! শরীরে এক ছটাক মাংসও রাখব না।”
কথাটা বলেই তানভীর এক দৌড়ে নিজের সিটে বসে পড়ে। অনন্যা রাগে ফুঁসতে থাকে সেখানে দাঁড়িয়ে। অঙ্কন মৃদু হেসে নিজের যায়গায় বসে পড়ে।
দীশা আর সাইমুন একসাথে বসে পড়ে। তানভীর আর অনীহা একসাথে বসে হিসেব মতোই। তবে নিনিত আর নেহার একসাথে বসার কথা থাকলেও অনন্যা নেহাকে বসতে না দিয়ে নিজেই বসে পড়ে। যারপরনাই সবাই বিস্মিত।
অঙ্কন একরকম নিশ্চিন্তই ছিল অনন্যা তার পাশে বসবে। কিন্তু এই উদ্ভট কান্ডে সে খুবই বিরক্ত এবং মনে মনে অপমানিত বোধ করতে লাগল। কাল রাত থেকে অনন্যার প্রতি মেজাজ চটে আছে। তবুও ভেবেছিলো কিছু বলবে না আজকে সব মিটমাট করে নিবে। এখন মনে হচ্ছে, ” কিসের মিটমাট! এইরকম একগুঁয়ে জেদি মেয়ের সাথে কোন মিটমাট করার দরকারই নেই। যাচ্ছে তাই একটা!”
এখন আরো বেশি করে রাগ লাগছে। মুখ চোখ অন্ধকার করে সে বসে থাকল।
” নিনিতের সাথে আমার প্রাইভেট কথা আছে। তুই এখানে বসলি কেন?”
অনন্যা ভ্রুকুঁচকে তাকায়। নেহা আবার বলল,
” উঠ ছুড়ি! ভাইয়ার পাশের সিটটা তোর জন্যই ফাঁকা পড়ে আছে। যা নারে! আর লজ্জা পেতে হবে না। এবার উঠো!”
নেহা অনন্যার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে ফের নিনিতের পাশে বসে পড়ে। অনন্যার রাগে, ঘৃণায় মূর্ছা যেতে ইচ্ছে করল।
” সব কয়টা খাটাশ! স্বার্থপর।” অনন্যা বিড়বিড় করতে করতে একরাশ শঙ্কা, ভয়, লজ্জা কাটিয়ে অঙ্কনের পাশে বসে পড়ল। মুহুর্তের মাঝেই এক দলা অস্বস্তি কোথা থেকে এসে যেন অনন্যার গলা চেপে ধরল। কোন কথাই বের হলো না।
অঙ্কন একবার অনন্যার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকল।
বাস ছেড়ে দিলো। ছয়টা ত্রিশ বাজে। অনন্যার হাতঘড়ির দিকে তাকাল। তানভীরের মুখে শুনেছে দ্যা লাস্ট রিসোর্ট এ পৌছাতে ৪/৫ ঘন্টা লাগতে পারে। এতোক্ষন বাসে, চুপচাপ থাকবে কি করে! অভিমানগুলো যে বুকের উপর শক্ত পাথর হয়ে চেপে ধরে আছে। অঙ্কন কি পারে না অভিমানের পাহাড় গলাতে!
পরক্ষণেই মনে হলো, না সেতো কেবল কষ্টই দিতে পারে! সাজানো গুছানো জীবনটা কেমন এলোমেলো, অবিন্যস্ত হয়ে পড়েছে। কেন সে প্রেমে পড়লো! কেন এতোটা ভালোবাসলো! ভালোবাসায় এত কষ্ট কেন?
এইসব অগুছালো প্রশ্নের কোন উত্তর সে পেলোনা।
” ইচ্ছে না করলে অন্যকোথাও বসতে পারো! পেছনে মনে হয় একটা সিট খালি আছে!” অঙ্কন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল।
অনন্যার চোখ দু’টো যেন কোটর থেকে বের হতে চাচ্ছে। অঙ্কন জানালার দিকে তাকিয়ে আছে তাই তার মুখভঙ্গি অনন্যা বুঝতে পারলো না। তবে সে ও দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” তোমার ইচ্ছে হলে তুমি যাও!”
অঙ্কনের যেন কি হলো মুহুর্তের মাঝেই অনন্যার হাত চেপে ধরে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে আসলো। অনন্যা চোখ তুলে তাকালো। অঙ্কন চোয়াল শক্ত করে বলল,
” তোমার মনে হয় আমি অন্যকোথাও বসব বলে এখানে জায়গা খালি রেখেছিলাম! এটাই মনে হচ্ছে!”
অঙ্কনের চোখের কালো কুচকুচে মণির দিকে তাকিয়ে অনন্যা ঠিক কী খুঁজে পেল সে জানেনা। হয়তো ভালোবাসার প্রতিচ্ছায়া। নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল।
” কিছু বলো! ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
” বন্ধুদের সাথে এসেছি। ওঁদের সাথে বসব এটাই কী স্বাভাবিক নয়!”
হাতের বাধঁন আলগা হয়ে যায়। অঙ্কন বেশ জোরে নিঃশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকায়।
বাস চলছে আপন গতিতে থামেল থেকে প্রায় ১০০ কি.মি দুরত্বে দ্যা লাস্ট রিসোর্ট। এত সুন্দর রাস্তা আর রাস্তার দু’পাশের যে দৃশ্য নিশ্চিতভাবেই পুলকিত অনুভব করতে বাধ্য। সৃষ্টিকর্তা যে মহান, তিনি যে সৌন্দর্য নিজ হাতে নেপালের উপরে ঢেলে দিয়েছেন সেটা নিজ চোখে না দেখলে বুঝা যেতোনা। আঁকাবাঁকা পথ ধরে বাস , এই পাহাড়ের চূড়ায় তো এই পাহাড়ের খাদে, এই নদীর ধারে তো এই ব্রিজের উপর উঠছে। আর প্রত্যেকবার ঝাঁকুনি খেয়ে অনন্যা অঙ্কনের বুকের উপর আছড়ে পড়ছে। অঙ্কন কি যেন কি মনে করে অনন্যার কোমড় জড়িয়ে ধরে পাশাপাশি বসে থাকল। এতোটাই কাছে যেখানে চুল পরিমাণ দূরত্বও অবশিষ্ট থাকল না। অনন্যাও কেমন যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। তবে মানসিক দূরত্ব ঘুঁচানোর চেষ্টাও কেউ করল ন।
বাস যখন পাহাড়ের চূড়ায় তখন মেঘেরা কেমন যেন গায়ে একটা প্রশান্তির পরশ দিয়ে গেল। রাস্তা দেখা যাচ্ছিলো না। গাড়ির লাইট জ্বালাতে হলো মেঘের মধ্যে চিরচেনা সেই রাস্তা দেখার জন্য। ব্যাপার টা এমন হলো যে মেঘের উপর থেকে দাঁড়িয়ে মেঘ দেখা হচ্ছে। আবার যখন নীচে নামলো তখন গাড়ির জানালা দিয়ে উপরে তাকিয়ে দেখা গেল মেঘেরা কেমন পাহাড়ের গায়ে ছোপ ছোপ লেগে আছে। এই উপরে তো এই নীচে! এভাবেই বাস এগিয়ে চলছে।
” অনন্যা, তোমার ফোনটা ফেলে দিচ্ছো না কেন? ওটার কোন প্রয়োজন আছে কী?” অঙ্কন হঠাৎ বলে উঠল।
কাল সে অঙ্কনের ফোন তুলেনি। ইচ্ছে করেই তুলেনি। তবে আজ কিছুতেই ভাবে নি অঙ্কন সাথে আসবে। অনন্যা বলল,
“প্রয়োজন আছে তো! বন্ধুরা ফোন করে! ওদের আমাকে প্রয়োজন। আফটার অল ওদের সাথে এসেছি।”
রাগে অঙ্কনের শরীরের জ্বলে গেল। তবে মুখে কিচ্ছু বলল না। কিছুক্ষণ পর আবার বলল,
” তোমার রুম লক করে কোথায় গিয়েছিলে! আমি রাতে কতবার ১০ তলা থেকে নেমে তোমার রুমের সামনে পায়চারি করেছি তোমার কোন আইডিয়া আছে! ৮ তলা তো ১০ তলা এই করে গোটা রাত পার হয়েছে। রুমে আসলে মনে হয়েছে তুমি বুঝি ফিরেছো। আবার নেমে দেখি নেই! বুঝো এই সিচুয়েশনটা কতটা পেইনফুল!”
কথাটা শোনামাত্র কষ্টে অনন্যার বুকের রক্ত ছলকে উঠল। তবে স্বাভাবিক থাকার ভাণ ধরে বলল,
” তাই বুঝি, খুউব পেইনফুল! তুমি আমার রুমের সামনে কি করছিলে! কি দরকার ছিলো।”
মুহুর্তেই অঙ্কনের মস্তিষ্কে বেয়ে উঠা সুক্ষ্ম রাগের রেখা শরীরেও দৃশ্যমান হলো। চোয়াল শক্ত রেখে বলল,
” কীসের দরকার তুমি বুঝোনা! এটা তোমাকে বলে দিতে হবে? ”
অনন্যাকে ছেড়ে দিয়ে সে একেবারে জানালা ঘেঁষে বসে পড়ল। মাঝে অনেক অনেক ফাঁকা স্থান। অঙ্কনের নাকের ডগায় রাগের লম্ফঝম্প দেখে অনন্যার হাসি পেল। খুব খুউব হাসি পেলো। তবে সে এখন হাসবে না।
” দেখ আমরা কিন্তু হানিমুনে আসিনি। আমি বন্ধুদের সাথে এসেছি তাই রাতে ওঁদের সাথেই থেকেছি। তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? এটাইতো হওয়ার কথা ছিল।”
” শাট আপ! কথা বলবে না। ”
ভীষণ ভীষণ রাগে অঙ্কন মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। অনন্যা ওঁদিকে নিনিতের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগল।
চলবে….
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/