চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪৪

0
2245

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪৪
লেখা আশিকা জামান

দরজার ওপাশে স্নিগ্ধ নীলাম্বরীর মতো অনন্যা দাঁড়িয়ে আছে। যদিও তার গায়ে নেই নীল শাড়ী পরেছে নীল টপ্স আর জিন্স! বুকের উপর কয়েকগাছি ভেজা চুল। হয়তো মাত্রই স্নান সেরেছে। অঙ্কন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো। হয়তো পৃথিবীর সমস্ত রুপ এখানেই থমকে গেছে।
অনন্যা কিছুটা অপ্রস্তুত বনে যায়। মনটা বিষন্ন হয়ে ছিলো ঠিক কিছুক্ষণ আগেও। যেখানে বিষন্নতার দেয়াল টপকে স্বয়ং অঙ্কন ডাল পালা গেড়ে বসে থাকে সেখানে পুরো দুনিয়া অর্থহীন! একমাত্র সত্যি এই মানুষটাই। চোখে চোখ রেখে আর তাকিয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। লজ্জা কুঁড়ে কুঁড়ে খায় এভাবে যখন অঙ্কন তাকায়। সে পেছন ঘুরে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


“নিজের চুল ও মুছতে পারে না! পুরো পিঠটাই তো ভিজিয়ে ফেলেছ।” অঙ্কন বলতে বলতে ঘরে প্রবেশ করলো।
শব্দ করে দরজা লাগানো হলো। ঠিক কেমন যেন কেঁপে উঠে অনন্যা ঘুরে তাকায়। অঙ্কনের ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা। অনন্যা ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে থাকল। অঙ্কন ভ্রুঁ নাচিয়ে প্রশ্ন করলো,
” কি ব্যাপার মুখে কথা নাই ক্যান! কিছু তো বলেছিলাম না কি?”
” মাত্রই গোসল করেছি। চুল মুছার টাইম পাই নি।”
” নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা। যাও টাওয়েল নিয়াসো”
” আমি পারব।”
অনন্যা টাওয়াল হাতে নিয়ে নিজের চুল নিজেই মুছতে লাগল।
অঙ্কন এক টানে কেড়ে নিয়ে নিজেই মুছার চেষ্টা চালায়।
অনন্যা বাধা দেয়। বলে,
” আমি পারব। ছাড়। ”
” কেন কালকে তো দিলাম আজকে কি সমস্যা!”
” কিছু না তুমি দাও।” অনন্যা সরে যায়।
নিজের চুল এক পাশ করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজেই মুছতে লাগে।
অঙ্কন হতাশ হয়ে বিছানায় বসে অনন্যার দিকে তাকিয়ে থাকে। সমস্ত চুল ডানপাশে কাত হয়ে থাকায় বাম পাশের গলা আর ঘাড় এর নীলচে রগ স্পষ্ট হয়ে দেখা যাচ্ছে। সেই সাথে লালচে দাগগুলো চোখে পড়তেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে। ঠোঁট বাকিয়ে সে হাসতে থাকে। শব্দ করে নয় অনেকটা মুখ টিপে হাসির মত।
অঙ্কন এবার আর বসে থাকতে পারে না। অধৈর্য্য হয়ে অনন্যার কাছে গিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে। এতোক্ষন চুল মুছার ধ্যাণে থাকায় হঠাৎ স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে। তোয়ালে হাত থেকে পরে যায়। অঙ্কনের চোখের দিকে সরাসরি তাকায়। ওর চোখ তখন মুদে আসছে। ফর্সা গালে যেন রক্ত জমে আছে। ঠোঁট দুটো রক্তিম। কারো ঠোঁট এত লাল কি করে হতে পারে অনন্যার জানা নেই। নাকের লালচে ডগা তখন অনন্যার গ্রীবাদেশ ছুঁয়েছে । উষ্ণ নিঃশ্বাস গ্রীবা, কর্ন অতিক্রম করে চিবুক ছুঁয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে ছুঁয়েও যাচ্ছে অনন্যার তৃষ্ণার্ত হৃদয়। বাড়িয়ে দিচ্ছে হৃদস্পন্দন। শিহরণে কিছুক্ষণ ভাষাশূন্য হয়ে রইল। অস্বস্তি হচ্ছে কিন্তু তবে ভালো লাগাটা আরো বেশি প্রবল হচ্ছে। অঙ্কন গুনে গুনে ঠিক ততোটাই চুমু খেল যতগুলো দাগ গলায় দেখা গেল। প্রত্যেকবার চুমুতে অনন্যা কেঁপে উঠলো এবং সরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। অঙ্কন, অনন্যার দুই বাহু শক্ত হাতে ধরে নিজের দিকে ঘোরায়। এবার আর ছুটে যেতে পারেনা। অঙ্কন আধখোলা চোখে তাকিয়ে হঠাৎ অধৈর্য্য হয়ে অনন্যার ওষ্ঠ দখল করতে চায়। অবগাহন করে শুষে নিতে চায় আশ্চর্য সেই সমুদ্র লবনের স্বাদ। অনন্যা বাধা দেয়। অঙ্কন ভ্রু কুঁচকিয়ে অভিমানী দৃষ্টিতে তাকায়।
” আমি মাত্রই গোসল করেছি।” বলতে বলতে ঠোঁট কাঁপছিলো। কোনরকমে বলা শেষ করে আবার উপরের দিকে তাকায়।
” তো! গোসল করলে কি চুমু খাওয়া বারণ। কোথায় লেখা আছে শুনি।” অঙ্কনের অব্যর্থ যুক্তি! অনন্যার লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। কি বলবে সে! কি উত্তর দেবে।
অনন্যা ইতস্তত করে বলল,
” আমার অস্বস্তি হচ্ছে।!”
” আমারও। এত কাছে এসে এভাবে দূরে সরিয়ে দিলে আমারও অস্বস্তি হয়। একবার মাথায় কিছু চেপে বসলে সামহাউ না করতে পারলে অস্বস্তি হয় বুঝো তুমি!”

অনন্যা সচকিত তাকায়। মেরুদণ্ড বেয়ে যেন শীতল স্রোতের হাওয়া বয়ে গেল।।কি যেন কি মনে করে অনন্যা অঙ্কনের বুকে ঝাপিয়ে পড়ল!
অঙ্কন নিজেও দু’হাত বাড়ায়। ঠিক তখনি ফোনটা বেজে উঠে। অনন্যা সরে যায়। দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।
অঙ্কন তাড়াহুড়ো করে রিসিভ করে। ডিরেক্টর ফোন করেছে।

” অঙ্কন, তুমি সম্ভবতঃ ভুলে গেছো তোমার আর একঘন্টা পর শুটিং। আজকের শট টা কতোটা ইম্পোর্টেন্ট এটা জানার পরও যদি তুমি ক্যানসেল করতে চাও তাহলে আমার তোমাকে কিছুই বলার নাই। আমার যা ক্ষতি হবার হোক। এতগুলো মানুষের এত এত শ্রম, পরিশ্রমের কোন মূল্যই যদি তোমার কাছে না থেকে থাকে তাহলে আর কি বলব বলো!”
” শুধু, আজকের দিনটা! আমার একটা ব্যাক্তিগত কাজ পরে গেছে হঠাৎই। না হলে কখনো আমি এমন করতে চাইতাম না। আপনিই বলুন আমি কখনও এমন করেছি!”
” আমার প্রশ্ন ও তো সেটাই। তোমাকে নিয়ে আমি কেন সবাই সন্তুষ্ট। কিন্তু তাই বলে তুমি একঘন্টা আগে শুটিং ক্যানসেল করতে পারো না। তুমি আমাকে দু’দিন আগে ইনফর্ম করতে পারতে। কিংবা চাইলে তোমার ব্যাক্তিগত কাজটা কালকেও করতে পারো। আজ সেটা কোনমতেই পসিবল নয় ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। ”
” হ্যাঁ, বুঝে গেছি আমি রাখছি।”
” মানে, তুমি কি রেগে গেলে! আমি কোন অযৌক্তিক কিছু বলিনি।”
” হ্যাঁ, সেটাই। আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।”
” ওঁকে, দ্যাটস গুড!”

অনন্যা অঙ্কনের দিকে তাকায়। রাগান্বিত দৃষ্টিতে সে ফোন কানে তুলে নেয়। কি হয়েছে বুঝতে না পারলেও এটুকু বুঝতে পারছে কোন কিছু অঙ্কনের ফেভারে হয়নি তাই হয়তো সে রেগে গেছে। অঙ্কনের এই রগচটা স্বভাবকে অনন্যা ভীষণ ভয় পায়। হঠাৎ চিৎকারের শব্দে অনন্যা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।
” জিহাদ জাস্ট, শাট আপ। এই তোমার ম্যানেজের নমুনা। সাত পাঁচ ভুজুংভাজুং কিছুই বুঝাতে পারলে না তুমি। এইজন্যই তোমাকে রেখেছিলাম। এতোদিনেও কিচ্ছু শিখতে পারলে না।”
” সরি। আর অযৌক্তিক কিছু যখন তখন আবদার করলে কি সবাই মেনে নিবে।”
” তুমি আমাকে যৌক্তিক অযৌক্তিক ব্যাপার শেখাবে। আমি সবাইকে কথা দিয়েছিলাম ওদের সাথে যাব, এখন কথা রাখতে পারলাম না। বুঝতে পারছো মাথা ঠিক কতোটা খারাপ হইছে। অসুস্থ ঠসুস্থ, পেট খারাপ হাবিজাবি কিছু বলতে পারলা না।”
” হ্যাঁ সেটাই বাকি ছিল আপনি পেট খারাপ হয়ে ভাবির হাত ধরে ঘুর বেড়াচ্ছেন এটা কেউ দেখে নিলে খুব সম্মানজনক ব্যাপার হতো তাই না!
আর অধৈর্য্য হচ্ছেন কেন কালকে আপনারা শট নেই। যেতে তো পারবেন। প্লিজ মুড ঠিক করেন। আমি আসছি।”
অঙ্কন ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারে। অনন্যা চমকে উঠে বলে,
” কি হয়েছে? কোন সমস্যা।”
” না এভ্রিথিং ইজ ফাইন। ওঁকে। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসেছো না! যাও ঘুরো, মাস্তি করো যা খুশি তাই করো। এরমধ্যে আমাকে টানবে না। একদম গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে না। আমি তোমাকে কোন সময় দিতে পারব না। বুঝেছো তুমি! আর এখানে আমরা হানিমুনে আসিনি কথা ক্লিয়ার। বুঝা গেলো। যাও বন্ধুদের কাছে যাও। এক্ষুনি যাও।”
অঙ্কন উদ্ধত ভাবে কথাগুলো বলে হনহন করে দরজার দিকে পা বাড়ায়। বিড়বিড় করে বলল,
” নিজে যা বুঝবে তাই করবে! কেন এসেছে সে? তাকে দেখলে যে আমার মাথা বিগড়ে যায় এটা যেন সে বুঝেও বুঝে না!”

” তোমার ফোন।”
অনন্যা হাত বাড়িয়ে ফোনটা দিতে যায়। অঙ্কন ছুঁ মেরে ফোনটা নিয়ে আবার চলে যায়।
অঙ্কনের এই হঠাৎ বদলে যাওয়া মুখ আর অসংলগ্ন আচরণের কোন হেতু সে বুঝলো না। তবে দু’চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে