Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"গহন কুসুম কুঞ্জেগহন কুসুম কুঞ্জে পর্ব-৩৬+৩৭

গহন কুসুম কুঞ্জে পর্ব-৩৬+৩৭

#গহন_কুসুম_কুঞ্জে
৩৬.

দ্বিতীয় কলিংবেলটা বাজল কয়েক সেকেন্ড পরেই। রওনক বিরক্ত হয়ে উঠল। দরজা খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সে। বাইরে যে দাঁড়িয়ে আছে তাকে এখানে এই মুহূর্তে সে কষ্মিনকালেও আশা করেনি।

তাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফাত জিজ্ঞেস করল, “মিলি এখানে?”

রওনক কথা বলতে পারল না। সরে গেল দরজা থেকে। ভেতরে ঢুকল সাফাত। মিলি সোফায় বসে বাঁকা হেসে তার দিকে তাকাল। সাফাত অত্যন্ত রূঢ় গলায় বলল, “সমস্যা কী? এখানে কেন আসতে বলেছ?”

“বসো। বলছি।”

“বসবার সময় নেই।”

“আহা বসো, তোমার প্রিয় গার্লফ্রেন্ড, না স্যরি শয্যাসঙ্গীকে মিস করছ নাকি?”

রওনক এগিয়ে এলো, “হচ্ছেটা কী এসব?”

“সেটা আপনি একটু পরেই বুঝতে পারবেন।”

সাফাত আর রওনক দুজনেই অবাক হয়ে রহস্যময়ীর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা চাইছে কী? সাফাত খেয়াল করল মিলিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। এত সেজেছে কেন? মানুষকে দেখাতে ইচ্ছে করে রূপ?

আবারও বাজল কলিংবেল। রওনক এগিয়ে গেল। দরজা খুলতেই ওপাশ থেকে মানুষটা ঝাঁপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। কাঁদতে কাঁদতে রওনকের মুখে চুমু খেতে থাকল। বলল, “ঠিক আছো তুমি বেইবী? ভালো আছো? তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছে শুনলাম…”

মেয়েটা প্রথমে খেয়াল করেনি ভেতরে আরও মানুষ আছে৷ যখন দেখল তাদের, তখন ঝট করে সরে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো দাঁড়িয়ে গেল।

সাফাত আর মিলি চেয়ে চেয়ে দেখছিল সাফাতের প্রেমিকা শিখাকে।

সাফাত চিৎকার করে উঠল, “হোয়াট দ্য হেল ইজ গোইং অন?”

দরজা খোলাই ছিল। এবার স্বরূপ ভেতরে ঢুকে সবার দিকে চেয়ে বলল, “হ্যালো!”

মিলি হাসল। বলল, “বোস। কাহিনী বলি। তুই তো জানিস হালকা পাতলা। পুরোটা বললে বুঝবি।”

সাফাত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, “পুরোটা কী?”

মিলি একটু কেশে গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে বলল, “শিখা আর রওনক বিবাহিত৷ তাদের প্রেমের বিয়ে ছিল। বিয়েটা হয় আরও প্রায় নয় বছর আগে৷ ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন ফার্স্ট ইয়ারে তারা বিয়ে করে।”

সাফাত শিখার দিকে চেয়ে বলল, “কিন্তু শিখা, তুমি..তুমি তো বলেছিলে…”

মিলি বলল, “ও নিজেকে অবিবাহিতা বলেই বরাবর পরিচয় দিয়ে আসছে। বিয়ের কথা এমনকি ওর পরিবারও জানে না। সম্ভবত বিয়ের কয়েক বছর পর তারা একে অপরের ওপর আগ্রহ হারায় এবং বিভিন্ন মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়ায়৷ ওরা নিজেরা এক্ষেত্রে নিজেদের কাছে সৎ ছিল। দু’জনই জানত অপরজন কখন কাকে ডেট করছে।

রওনক বাবার বিজনেসের উত্তরাধিকার হয়েছে। কিন্তু তার ফুর্তিবাজ স্বভাব৷ প্রচুর টাকা সে তার প্রেমিকাদের পেছনে খরচ করে। শিখা বুদ্ধিমতী। সে বুঝতে পারে এভাবে চলতে থাকলে একসময় রওনকের কিছুই থাকবে না৷ এদিকে শিখার লেটেস্ট আবিষ্কার ছিল সাফাত। সাফাত তার পুরানো কলিগ৷ সে বহুদিন অবজার্ভ করার পর বুঝতে পারে সাফতের ধৈর্য আছে, কাজের ডেডিকেশন আছে, সে অনেকদূর যাবে৷ এদিকে তার পৈতৃক সম্পত্তিও কম নয়৷ শিখা তাই ঠিক করল সে রওনককে ছেড়ে দিয়ে সাফাতকে বিয়ে করবে৷

এমনিতে রিলেশনে থাকলেও সে কোনে ছেলের সংসার ভাঙত না৷ কিন্তু সাফাতকে বিয়ে করতে হলে আমাকে পথ থেকে সরাতেই হতো। এজন্য সে খুব ডেস্পারেট হয়ে ওঠে। অল্প সময়েই এদের নোংরামি তুঙ্গে উঠে যায়। সাফাত মানুষ হিসেবে খারাপ ছিল না, কিন্তু একটা ট্রেইনড মেয়ের ক্রমাগত ছলাকলা ইগনোর করার মতো শক্ত মানসিকতাও রাখত না৷ শিখা ওকে ভড়কেছে, আমার বিরুদ্ধে কানপড়া দিয়েছে৷ শেষে আমার বাসায় এসে উঠেছে৷

রওনক আবার এতকিছু জানত না৷ শুধু জানত সাফত শিখার বর্তমান বয়ফ্রেন্ড। শিখার থেকেই সে আমার কথা জানতে পারে। আমার ছোটো ছোটো ডিটেইলস সম্ভবত সাফাতের থেকে শিখা হয়ে রওনকের কাছে পৌঁছায়। আমাকে তার পছন্দ হয়৷ সে আমার সাথে ফ্লার্টিং করার চেষ্টা করতে থাকে।”

সাফাত যেন এতকিছু দেখে শুনেও মানবে না। সে তার মনপ্রাণ দিয়ে শিখাকে বিশ্বাস করে বসে আছে। শিখার কাছে গিয়ে সে হাত ধরে বলল, “শিখা, এসব কি সত্যি? কেমন করে হয়? তুমি তো আমাকে ভালোবাসো। সত্যটা তুমি বলো। একজন এসব মিথ্যে কথা বলবে আর তুমি কিছুই বলবে না?”

শিখা চুপ করে রইল। তার বোধহয় কথা সাজিয়ে বলার ক্ষমতা হারিয়ে গেছে।

মিলি তার ব্যাগ থেকে কাগজ বের করল যেটা রওনকের আলমারি থেকে পাওয়া গেছে। রওনক আর শিখার বিয়ের সার্টিফিকেট। আর অ্যালবামে তাদের বেশকিছু যুগল ছবি।

সাফাতকে দেখিয়ে বলল, “এরপরেও বিশ্বাস না হলে তোমার মরে যাওয়া উচিত৷ এত কম ব্রেইনওয়ালা লোকের সাথে এতদিন থেকেছি ভেবে নিজের ওপর রাগ লাগছে।”

স্বরূপ এবার জিজ্ঞেস করল, “তুই এতকিছু বের করলি কী করে?”

“এরা নিজেরাই এসে ধরা দিয়েছে। আমার সাথে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করছিল রওনক। প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে আমার এক স্কুলফ্রেন্ড, তুই চিনিস হয়তো রিফাতকে, আইটি সেকশনে চাকরি করে। ওকে বলেছিলাম নাম্বার ট্রেস করে লোকটার পরিচয় বের করে দিতে। তবে রওনক চালাক। সে ইন্টারনেট থেকে নিজের মতো নাম্বার বানিয়ে কল করত যেগুলোর বাস্তবে অস্তিত্ব নেই। তবে সে ভুল করে একবার নিজের নাম্বার থেকেই কল করে ফেলে। তখনই ধরা খায়৷

ওর কললিস্ট আমাকে দিয়েছিল রিফাত। সেখানে আমও শিখার নাম্বারটা দেখি৷ সাফাতকে রাত বিরাতে কল করা এই নাম্বার আমার পরিচিত। তখন বুঝতে পারি এদের লিংক আছে।

এরপর বাকি গল্পের কিছুটা গোয়েন্দাগিরি করে বের হয়ে গেছে, কিছুটা আন্দাজ করে নিয়েছি।”

স্বরূপ জোরে হাততালি দিল, “প্রাউড অফ ইউ মাই ফ্রেন্ড।”

মিলি হেসে বলল, “তোর প্ল্যানটাও খারাপ ছিল না। দুজনকে টোপ ফেলে এনেছি। রওনককে নিচে পাঠিয়ে কাগজটা জোগাড় করেছি। এসব তো তোরই আইডিয়া ছিল।”

স্বরূপ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “তাহলে যাওয়া যাক! এদের প্রবলেম এরা সলভ করুক বসে বসে।”

ওরা তিনজনের কেউই কিছু বলল না। দাঁড়িয়ে রইল যার যার মতো। মিলি আর স্বরূপ বেরিয়ে গেল। যাবার সময় সাফাত খেয়াল করল মিলির জামাটা কালো রঙের। হঠাৎ মনে পড়ে গেল, প্রিন্সেস ডায়ানার কথা। সেও তার স্বামীর পরকীয়ার কথা জানার পর কালো রঙের ড্রেস পরে পার্টিতে গিয়েছিল যেটা পরিচিত ‘রিভেঞ্জ ড্রেস’ হিসেবে। ডায়ানার স্বামীর কখনো আফসোস হয়েছে কি না জানে না, কিন্তু তার নিজের মনে হলো, সে সবকিছুই হারিয়েছে।

*

তনয়ার খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়। রাতে এখন জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। ইউটিউব দেখে দেখে কিছু পদ্ধতিতে ঘুম আনানোর চেষ্টা করলে ঘুম একসময় চলে আসে। সবচেয়ে কাজ করে সব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে দূর করে হাত পা রিলাক্স করে লম্বা লম্বা শ্বাস নিলে। বাচ্চার কথা ভেবে মনটাও সে ভালো রাখার চেষ্টা করে। তবে ঘুম যত রাতেই আসুক না কেন, ভেঙে যায় কাকভোরে।

ইদানিং ঘুম থেকে উঠেই তার প্রচন্ড খিদে লাগে। মনে হয় পেটের ভেতর ড্রাম বাজতে থাকে। ফল বা বিস্কুট খেলে খিদে মোটেও যায় না। মা তাই নামাজ পড়তে উঠে আগে ভাত বসিয়ে দেন৷ আগের দিনের তরকারি গরম করে রাখেন কিংবা ডিম ভেজে দেন৷

খাওয়া শেষে শান্তি লাগে তনয়ার। শরীরে আরাম লাগতে থাকে। সে এরপর এক কাপ চা বা কফি বানিয়ে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে। সকালের সতেজতা তাকে দিনের অর্ধেকটা সময় ভালো রাখে।

সমস্যা শুরু হয় দুপুরের পর থেকে। কেমন যেন অবসাদ গ্রাস করতে থাকে তাকে একটু একটু করে। কিছুই ভালো লাগে না। কিছুই সহ্য হয় না। সে ছটফট করতে থাকে। মায়ের সাথে বসে, বাবার সাথে বসে, ঘরে শুয়ে থাকে, মোবাইল/ টিভি দেখার চেষ্টা করে, সবকিছুই বিরক্ত লাগে। এমনও না যে স্বরূপের কথা তার মনে পড়ে। ওর কথা ভাবলে আরও অসহ্য লাগে। তার কেন যেন মনে হয় দিন দিন ডিপ্রেশন পেয়ে বসছে তাকে। কিন্তু এখন এরকম হলে চলবে? বাচ্চার কথাও তো তাকে ভাবতে হবে।

স্বরূপ যখন রাতে এসে বসে থাকত, প্রথম প্রথম সে দেখা করত। কিন্তু সেই একই কথা, “আমি স্যরি, অনেক ভুল হয়ে গেছে। ফিরে চলো, ফিরে চলো, ফিরে চলো…”

তনয়ার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হতো, “কেন ফিরব? বাচ্চাটা না থাকলে তুমি ফিরতে বলতে? ওর খবর জানার আগে দেখতে এসেছিলে?”

সে অবশ্য কিছু বলত না। চুপচাপ স্বরূপের কথা শুনত। ওর ঘ্যানঘ্যান শুনলে রাতে আর ঘুম আসত না। মাথার মধ্যে একটাই গান বাজতে থাকত, “ফিরে চলো..ফিরে চলো…”

একসময় সে দেখা করা বন্ধ করে দিল। তারপরেও স্বরূপ রোজ আসত। তনয়ার কান্না পেত ওকে দেখলে। শুধু মনে হতো ওর জন্য তার বাচ্চাটার এত কঠিন অবস্থা। যদি সেদিন মিসক্যারেজ হয়ে যেত? কার দোষ হতো?

এরপর স্বরূপ আসা বন্ধ করে দিল। তনয়ার তাতেও অস্বস্তি। সন্ধ্যা থেকে মনে হতো, আজ আসবে। এসে বসে থাকবে। তনয়া কখনো উঁকি দিয়ে দেখে আসত তাকে। ওকে দেখলে আরও কষ্ট হতো, তবুও। কী এক অদ্ভূত পরিস্থিতি! সে বুঝতে পারে না।

একদিন সে সকাল সকাল বসেছে বারান্দায়। হঠাৎ গলির একপাশে পার্ক করা কালো গাড়িটা চোখে পড়ল তার। স্বরূপের গাড়ি এটা! দূর থেকেও চিনতে পারল তনয়া।

এরপর খেয়াল করল মানুষটাকেও৷ দোকানের ঝাঁপি আর বৈদ্যুতিক খুঁটির আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে চিনতে অসুবিধা হলো না৷ সে অবশ্য খুব চেষ্টা করেছে নিজেকে লুকোবার, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে৷

তখন থেকে তনয়া প্রতিদিনই তাকে আসতে দেখে। ওর কাজকর্ম দেখে তার এত হাসি পায়! ভাবে তনয়া তাকে দেখে না৷ তনয়া ইচ্ছে করেই না দেখার ভান করে থাকে। কিন্তু দেখতে পায় সবই। নিজের বউকে দেখতে কত লুকোছাপা! হাস্যকর!

তনয়ার এই সকালের অভিসার মন্দ লাগে না। রাতে তাকে যতটা অসহ্য লাগে তেমন সকালে লাগে না। বরং ভালোই লাগে।

এখন সন্ধ্যা৷ তার আবারও সেই অস্বস্তি শুরু হয়েছে। এমন লাগে কেন? কেন মনটা এত ভার হয়ে থাকে?

মোবাইল হাতে ফেসবুকে ঢুকল সে। স্বরূপের পোস্ট পড়ল সবার সামনে। সে অনেকদিন কোনো পোস্ট বা ছবি দেয় না৷ আজ দুটোই দিয়েছে। ব্যাপার কী?

পোস্টটা অতি আজব!

“শহর থেকে আপনি সব মশা মেরে ফেলতে পারবেন না। কিন্তু একটিও যদি মারেন, ধরে নিতে পারেন একজন মানুষকে ডেঙ্গু থেকে বাঁচিয়ে দিলেন।”

তনয়া কিছুই বুঝল না। কমেন্ট দেখেও মাথায় কিছু ঢুকল না।

আর যে ছবি পোস্ট করেছে সেটাতে স্বরূপ একা না, ওর সাথে মিলি। হাসিমুখের সেলফি। মিলিকে ভয়াক সুন্দর লাগছে। এই ছবির ক্যাপশনে লেখা, মিশন সাকসেসফুল৷

তনয়ার ভীষণ কৌতুহল হলো। ঘটনাটা কী? স্বরূপকে জিজ্ঞেস করা যাবে না। সে কি মিলিকে একটা ফোন করবে?

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু

#গহন_কুসুম_কুঞ্জে
৩৭.

মিলিকে কয়েকবার ফোন করেও পাওয়া গেল না। তনয়া কৌতুহল চেপে রাখল। কখনো না কখনো তো পাওয়া যাবে তাকে। সে জানালার বাইরে তাকাল। সন্ধ্যার শেষ আলোটুকু মুছে গেছে কখন যেন৷ তারা ফোটেনি আজ। আকাশ মেঘে ঢেকে আছে।

মা ডাকলেন৷ “তনয়া…চা খেতে এসো…”

তনয়া উঠল। চায়ের সাথে কী করেছে মা? এত ক্ষুধা লাগে তার এখন! চব্বিশ ঘন্টার বারো ঘন্টা বোধহয় সে খাওয়ার কথাই ভাবতে থাকে।

ওদের বাড়িতে সন্ধ্যার চা নাস্তা বরাবর বসার ঘরেই করা হয়৷ টি টেবিল ঘিরে সোফায় বসে কথা বলতে বলতে চা খাওয়া হয়, কখনো টিভিতে ভালো প্রোগ্রাম চললে সেটা দেখা হয়৷ তবে তনয়ার ওই ঘরোয়া আড্ডাটাই ভালো লাগে। আজ বন্ধের দিন। বাবা বাসায়ই আছেন। বাবা থাকলে আসর জমে যায়। বাবা ভালো গল্প জানেন না, তবে যতটুকুই কথা বলেন, মন ভরে যায়।

তনয়া বসার ঘরে গিয়ে দেখল বাবা বসে আছেন৷ হাতে একটা বই৷ বইয়ের নাম ‘মানসিক শান্তি কেন পাচ্ছেন না?’

তনয়া বইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, “এটা আজ কিনে এনেছ বুঝি?”

“হুম। বিকেলে হাঁটতে বের হলাম, তখন পেয়ে গেছি সবুজের বইয়ের দোকানে।”

তনয়া কৌতুহলী হয়ে উঠল, “ভালো নতুন বইয়ের কালেকশন এসেছে?”

“কি জানি! খেয়াল করিনি।”

“বাবা, তুমি কি খুব অশান্তিতে আছ?”

“না তো মা।”

“তাহলে এই বইটা পড়ছো কেন?”

বাবা হেসে বললেন, “নামটা ইন্টারেস্টিং লাগল তাই।”

তনয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার বিয়ের সময় বাবা খুব স্বস্তি পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন ভালো পাত্রের হাতে মেয়ে তুলে দিচ্ছেন, এবার তিনি নিশ্চিন্ত। কিন্তু ক’দিন যেতে না যেতেই সে বাড়িতে ফিরে এসেছে। বাবা নিশ্চয়ই এটা আশা করেননি। বাবা তাকে ভীষণ সাপোর্ট করেন এটা সত্যি, আবার তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তাও কম করেন না৷ মায়ের কাছে সে শুনেছে, বাবা নাকি স্বরূপকে আচ্ছামতো ঝাড়ি দিয়ে এসেছে৷ বাবা তাকে এতটা ভালোবাসে যে সে যেতে চায় না বলে তাকে কখনো স্বরূপের সাথে জোর করে পাঠিয়ে দেয়নি। স্বরূপের সাথে দেখা করার জন্য পর্যন্ত জোর করেননি৷ এরকম সাপোর্ট ক’জন পায়? বেশিরভাগ বাবা মা তো ‘মানিয়ে নে’ বলেই উদ্ধার পেতে চায়। মেয়ের মানসিক অবস্থার কথা ভাবে না। বাবা মা যতই তাকে সাপোর্ট করুক, তারাও ভেতরে ভেতরে চান তার স্বরূপের সাথে মিলমিশ হয়ে যাক৷ সে স্বামীর বাড়িতে ফিরে গিয়ে সুখে সংসার করুক। সম্ভবত স্বরূপ তাদের এতটা বিশ্বাস অর্জন করে ফেলেছে। এখন শুধু তার রাজি হবার পালা। সে নিজেকে প্রশ্ন করে, তার কি চলে যাওয়া উচিত? গেলে কি সে এই অসহ্য ডিপ্রেসড লাইফ থেকে মুক্তি পাবে? স্বরূপের ওপর বিতৃষ্ণা যে এখনো কাটেনি তার কী হবে?

চায়ে চুমুক দিয়ে বাবা বললেন, “আজকের একটা নিউজ দেখেছ তনয়া?”

“কোনটা? আমি নিউজ দেখি না।”

“না দেখলে কোনটা জিজ্ঞেস করলে কেন? ঠিক নিউজ না, বিজ্ঞাপন। লালটিলায় নতুন একটা রিসোর্ট হয়েছে। ভেতরটা খুবই সুন্দর। পাশে একটা নদী বয়ে গেছে। নৌকাভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। ছোটো ছোটো কুটিরে থাকার ব্যবস্থা৷ ঘরগুলো মাটির, তবে ভেতরটা আধুনিক। এইসব আরকি। যাবে? চলো সবাই মিলে ঘুরে আসি।”

তনয়ার ইচ্ছে করে না এসব কিছুই। কিন্তু বাবা তার মন ভালো করার জন্য কী না করতে চাইছে। সে আগে হলে যেরকম উৎসাহে লাফিয়ে উঠত, সেরকম উৎসাহে চোখমুখ উজ্জ্বল করে বলল, “অবশ্যই যাব।”

“নেক্সর ফ্রাইডে?”

“ওকে ওকে!”

তনয়া ধীরেসুস্থে চা শেষ করে পেয়ালার শেষ কেকের টুকরোটা হাতে নিয়ে কামড় বসাল। এমন সময় ডোরবেল বাজল। মা ইদানীং জামাকাপড় বানানো শিখছেন৷ সপ্তাহে তিনদিন এক মহিলা এসে শিখিয়ে দিয়ে যায়। তারই আসার সময় এটা। মা উঠে দরজা খুলে দিলেন। তনয়া তখন কেকের পুরোটা একেবারে মুখে পুরে দিয়েছে। গেট খোলার পরপর যখন স্বরূপ ভেতরে ঢুকল তখন তার মুখ ফোলা। না পারছে চিবুতে, না পারছে গিলতে।

স্বরূপ ওর চেহারা দেখে হেসে ফেলল।

বাবা বললেন, “আরে স্বরূপ যে, এসো এসো। তনয়ার মা, নতুন করে চা নাস্তা আনো তো।”

মা আগেই রান্নাঘরে গিয়ে দরজি আন্টির জন্য রাখা চা ঢেলে নিয়ে এলেন। পিরিচ গুলো ভর্তি করে দিলেন।

দেখা গেল স্বরূপ ক্ষুধার্ত ছিল। একটু পরেই প্লেটগুলো খালি হতে থাকল। তনয়ার অবশ্য ইচ্ছে করছিল ভাগ বসাতে, নেহায়েতই পার্সোনালিটির প্রশ্ন বলে কিছু করল না। তবে মন চাইল একটু কেক খেতে। উঠে গিয়ে খেয়ে আসবে নাকি? স্বরূপ সব খেয়ে এক পিস কেক আবার রেখে দিল কেন?

বাবা স্বরূপের সাথে টুকটাক কথা বলে কাজের অজুহাত চলে গেলেন৷ মা রান্নার কথা বলে রান্নাঘরে গেলেন। রয়ে গেল স্বরূপ আর তনয়া।

স্বরূপ তার দিকে কেকের টুকরো এগিয়ে দিয়ে বলল, “খাও।”

তনয়া মুখ ঘুরিয়ে নিল, “থ্যাংস!”

স্বরূপ তার একেবারে সামনে পিরিচটা রেখে দিয়ে বলল, “কেকটা যা মজা! তুমি না খেলে আমিই খেয়ে নেব৷ আজ যা ধকল গেল!”

তনয়ার চাপা দেয়া কৌতুহল আবার মাথাচাড়া দিল। সে না জিজ্ঞেস করে থাকতে পারল না, “কিসের ধকল?”

“জানতে চাও? লম্বা স্টোরি।”

“ইচ্ছে হলে বলো।”

স্বরূপ মুচকি হাসল। সে দুই তিনদিন ধরে লক্ষ্য করেছে তনয়া তার সকালের অভিসার ধরে ফেলেছে। আঁড়চোখে সেও তার দিকে তাকায়। সে না এলে অপেক্ষা করে বসে থাকে। মাঝেমধ্যে মুচকি হাসে। আজ সে ভেবেই এসেছিল একেবারে খালি হাতে ফিরে যেতে হবে না।

সে কাহিনীটা বলা শুরু করেছে, এমন সময় মা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন৷ বললেন, “তোর খালা মাথা ঘুরে পড়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে। কি কান্ড দেখ! হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।”

“বলো কী!”

“হ্যাঁ৷ আমি যাচ্ছি এখন৷ তোর বাবাও যাবে।”

“আমিও যাব।” বলে উঠল তনয়া।

“তোকে ডাক্তার বেড রেস্ট দিয়েছে না? তুই কোথায় যাবি আবার? তোকে একা রেখে যেতে পারতাম না। ভাগ্যিস স্বরূপ চলে এসেছে। তোরা থাক, আমরা যাই। রাতে আমি যদি নাও ফিরি, তোর বাবা ফিরে আসবে। স্বরূপ বাবা, তুমি ততক্ষণ থেকো।”

স্বরূপ সবকটা দাঁত বের করে বলল, “মা আপনি যান। আমি থাকতে কোনো চিন্তা নেই।”

মা চলে যেতেই তনয়া স্বরূপের হাতে জোর চিমটি দিয়ে বলল, “আমার খালা অসুস্থ আর তুমি এমন দাঁত কেলিয়ে হাসছ কেন? অসভ্য কোথাকার!”

স্বরূপ মুখ গম্ভীর করে বলল, “স্যরি স্যরি।”

মা বাবা বেরিয়ে গেলে স্বরূপ দরজা আটকে দিয়ে এসে বসল। বলল, “কাহিনীটা বলি এবার? একেবারে শ্বাসরুদ্ধকর স্টোরি।”

তনয়া গলায় ইচ্ছে করে নিরুৎসাহ ঢেলে বলল, “আচ্ছা।”

স্বরূপ বলতে শুরু করল, “গতকাল রাতে হঠাৎ মিলি ফোন করে বলে বসল কে নাকি তাকে রুমডেটের ইনভাইটেশন দিয়েছে, সে সেখানে যাবে। আমার তো চোখ কপালে! বলে কী মেয়ে! পরে শোনাল আসল কাহিনী…”

স্বরূপ বলতে বলতে খেয়াল করল তনয়া কেকের টুকরোটা মুখে পুরে দিয়েছে। হয়তো নিজের অজান্তেই। মেয়েটা কিছুটা মোটা হয়েছে। পেট বোঝা যায় না এখনো, তবে চোখমুখ অন্যরকম হয়ে গেছে। ভীষণরকম আদুরে লাগছে তাকে। মোটাসোটা টেডি বিয়ারের মতো। ইশ! বাসায় থাকলে সারাদিন একে জড়িয়ে ধরে বসে থাকা যেত!

তনয়া হা করে কাহিনী গিলছিল। এবার বলল, “আচ্ছা, তাহলে এখন সাফাত ভাইয়া কী করবে?”

“সেটা তার ব্যাপার।”

“আর মিলি আপু?”

“জিজ্ঞেস করেছিলাম৷ বলেছে আর কিছুই করবে না।”

“সাফাত ভাইয়া যদি তাকে ফিরিয়ে নিতে চায়? ডিভোর্স তো হয়নি।”

“জানি না। খুব সম্ভবত যাবে না। যে একবার চিট করতে পারে সে বারবারই পাবে।”

“হুম।” দীর্ঘশ্বাস ফেলল তনয়া।

এমন সময় জানালার পাল্লা জোরে ধাক্কা খেল। ঝড়ো বাতাস বসে গেল ঘরে। স্বরূপ উঠে জানালা লাগিয়ে দিল। “আজ দিনে যা গরম পড়েছিল! বোঝাই যাচ্ছে ঝড় হবে।”

তনয়াও উঠল। স্বরূপ বলল, “আমি করছি, তুমি উঠো না।”

তনয়া পাত্তা দিল না। মা বাবার ঘরের জানালাগুলো আটকে দিয়ে এসে দেখল স্বরূপ তার ঘরের জানালা বন্ধ করছে।

তনয়াকে ঢুকতে দেখে স্বরূপ একটু সংকুচিত হয়ে বলল, “জানালা বন্ধ করতে এসেছিলাম।”

“ঠিক আছে।”

তনয়া বিছানায় বসে পড়ল। স্বরূপও বসল। স্বরূপ এবার যেন অন্যরকম গলায় বলল, “আজ আমার খুব শান্তি লাগছে জানো?”

“কেন?”

“পুরানো কথা তুলব বলে আগেই স্যরি৷ তুমি প্লিজ ট্রমাটাইজ হয়ে যেও না। আমি খুব ইমোশনাল টাইপ ছিলাম একসময়। এখন অন্যরকম হয়ে গেছি যদিও। লোপার সাথে সেই ঘটনার পর বরাবরই ইচ্ছে ছিল ওর ওপর একটা প্রতিশোধ নেবার। কিন্তু বিভিন্ন কারনে পেরে উঠিনি। আজ সাফাতের যেমন চেহারা হয়েছিল, সেটা দেখেই শান্তি পেয়েছি। সাফাত আরও শাস্তি পাবে। প্রতিটা চিটারের সাথে এমন হওয়া উচিত। আমি আমার সাথে হওয়া অন্যায়ের কোনো প্রতিকার করতে পারিনি৷ কিন্তু অন্য কেউ পেরেছে সেটা দেখে ভালো লাগছে। আমার ভেতরে সবসময় একটা চাপা রাগ ছিল, অশান্তি ছিল, সেটা মিটে গেছে। সাফাতকে ইচ্ছেমতো গালাগাল করেছি ফেরার সময়। ও কিছুই বলেনি। ব্যাপারটা আরও আরামের ছিল। আর এই কথাটা কারো সাথে শেয়ার করারও ভীষণ ইচ্ছে করছিল। তাই চলে এলাম। তুমি ছাড়া আর কে আছে আমার এসব বলার মতো?”

শেষ কথাটা স্বরূপ এত আন্তরিকভাবে বলল যে তনয়ার চোখে পানি চলে এলো। সে অশ্রু লুকাতে অন্যদিকে চাইল। স্বরূপ আরও কাছে চলে এলো তার। হাত ধরল। তনয়া মৃদু প্রতিবাদ করতে গিয়েও করল না। ভেঙেচুরে কান্না পাচ্ছে তার।

আকাশ গর্জন করে উঠল। প্রবল ধারায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। লোডশেডিং হওয়ায় অন্ধকারে ডুবে গেল নগরী। আবার যখন বিদ্যুৎ চমকালো, তখন সেই আলোয় দেখা গেল তারা দু’জন খুব কাছাকাছি বসে এখন। দুজনেই কাঁদছে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে।

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ