গল্প : “heart touch love 3” পর্ব:- ০৫

0
1997

গল্প : “heart touch love 3”

পর্ব:- ০৫

২৭শে জুন ২০১৫,
পিয়ালের ভার্সিটি আজকে খুলেছে। তাই খুব সকালেই উঠতে হলো। মাথাটা খুবই ভারী লাগছে। গত বেশ কয়েকদিন ভালো ঘুম হয় নি। রুমির বোন টিয়ার এভাবে চলে যাওয়াটা পিয়ালের উপরেও কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। এই কয়েকদিন রুমির সাথেও তেমন কথাও হয় নি। দুইদিন আগে ফোনে কথা হয়েছিলো। রুমি বলেছিল ভার্সিটি আসলে দেখা হবে। এরপর থেকে ফোন অফ পাচ্ছে পিয়াল।তাই গত দুইদিন কোনো রকমেরই যোগাযোগ হয় নি রুমির সাথে। আজকে ভার্সিটি আসলে হয়তো দেখা হয়েও যেতে পারে। পিয়াল আজকে একটু তাড়াতাড়িই ভার্সিটি যাবে। ফ্রেস হয়ে, নাস্তা করে ঝটপট বেড়িয়ে পরলো।বাসা থেকে ভার্সিটি যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু সকালবেলা বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।আজকেও তার বিপরীত হলো না। লাইনে দাঁড়িয়ে যায় পিয়াল।
প্রায় একঘন্টার মধ্যেই ভার্সিটি পৌঁছে যায় পিয়াল।যতটা তাড়াতাড়ি আসতে চেয়েছিলো ততটা তাড়াতাড়ি আসাটা ব্যর্থ হলো। আজকে ক্লাসের সবাই এসেছে মোটামুটি। কিন্তু রুমি আসে নি। হয়তো রোজকার মতো আজকেও দেরীতে আসবে।
২ ঘন্টা পরে,
এখনো রুমির আসার কোনো নাম নেই। পিয়াল রুমিকে কল দিলো। এইবার রুমির ফোনটা খোলা পাওয়া গেলো।
পিয়াল- অই বেটা তোর না আজকে ভার্সিটি আসার কথা।
রুমি- এমনিতেই আসি নি।
পিয়াল – এমনিতেই মানে। তুই কই এখন?
– বাসায়।
– বাসায় বসে কি করছ?
– কিছু না।
– কি হইছে বলবি তো।
– ভাল্লাগে না দোস্ত। রাখি এখন পরে কথা বলবো।
-আচ্ছা, আমি বিকালে তোর বাসায় আসতেছি, কেমন?
– আচ্ছা আয়।
পিয়াল ফোন কেটে দিয়ে বই-খাতা ব্যাগে রাখলো। ব্যাগটা কাধে নিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলো। পিয়ালের ক্লাস করতে ভালো লাগছে না। বাসায় গিয়ে গোসল করে খেয়ে রুমির বাসায় যাবে। পিয়াল বাসে উঠলো। যদিও বাসটা যাত্রিতে পরিপূর্ণ ছিলো তারপরও ঠাসাঠাসি করে উঠলো। বাসায় খুব দ্রুত যেতে হবে।
বাস থামিয়ে নামলো পিয়াল। দ্রুত হেটে বাসায় চলে আসলো পিয়াল।পিয়ালের মা পিয়ালকে জিজ্ঞাসা করলো-
পিয়ালের মা – কিরে আজকে এতো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলি?
পিয়াল – রুমিদের বাসায় যাওয়া লাগবে একটু।
– রুমি কেমন আছে?
– ভালো নেই এতোটুকু জানি। এখন বাকিটুকু গিয়ে দেখতে হবে।
-আচ্ছা। কখন যাবি?
– গোসলটা করবো এখন, এরপর খাওয়াদাওয়া করেই বের হয়ে পরবো।
– এতো তাড়াতাড়ি? রান্না শেষ হয় নি তো।
– যা হয়েছে তাই খেয়ে যাবো।
– আরে শোন। খেয়ে এরপর বের হ।বেশি সময় লাগবে না রান্না শেষ হতে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি যাই গোসলটা সেরে নেই।
– আচ্ছা যা।
পিয়াল রুমে ঢুকে পরে। প্রতিদিনের মতই ব্যাগটা বিছানার উপরে ছুড়ে মারে। ভাগ্যিস পিয়াল বাহিরে যাওয়ার পর ওর মা সব কিছু গুছিয়ে রাখে। শার্ট-প্যান্ট খুলেই বাথরুমে ঢুকে পরে পিয়াল। গোসল সেরে মাথা মুছতে মুছতে বিছানায় এসে বসে। ফোনটা হাতে নিয়ে জেরিনকে কল দেয় পিয়াল।
জেরিন – হ্যালো বাবু! কেমন আছো?
পিয়াল- হ্যা ভালো। তুমি?
– এইতো আছি। কি করছো?
– ভার্সিটি থেকে এসে গোসল করলাম, এখন তোমার সাথে কথা বলছি।তুমি কি করছো?
– আমি? আমি রান্না করছি।
– রান্না করছো? কি রান্না?
– এইতো মুরগি রান্না করছি। জানো তো! আমার হাতটা না পুরে গেছে। খুব ব্যথা করতেছে। উফ!
– হাতে ঔষধ লাগাও।
-লাগাইছি তো! মুরগি রান্না করতে যে এতো কষ্ট তা আগে জানতামই না।
– আচ্ছা মুরগি কিভাবে রান্না করে?
– মুরগি?
– হুম।
– মুরগি রান্না করা তো অনেক সহজ, তুমি পারো না?
– সহজ এর জন্যই জিজ্ঞাসা করছি, কিভাবে রান্না করে?
– তুমি কি ভাবো আমি রান্না করতে পারি না?
– পারো বলেই তো জিজ্ঞাসা করলাম।
– আমি হাতে ব্যথা পেয়েছি তা তো জিজ্ঞাসা করলা না। মুরগি রান্না করে কিভাবে সেইটাই জিজ্ঞাসা করলা শুধু।
– একটা কথা বলবো?
– হ্যা বলো। (অভিমানী সুরে)
– রান্না এমন একটা জিনিস যা বাঙ্গালী নারীদের অহংকার, যা বাঙ্গালী নারীদের একটা গুন। আর সেই গুনটা তোমার ভিতরে নেই।
– কি!! তুমি কি বললা? তুমি কি বুঝাতে চাও?
– আমি এতোটুকুই শুধু বুঝাতে চাই, মেকাপ আর টাইট- ছোট ড্রেস পরাটাকেই গুন বা অহংকার বলে না।একজন পরিপূর্ণ নারী হতে যা লাগে তা তোমার নেই। তুমি একা না এই দেশে এমন অনেক আছে। এরা একপ্রকার এলিয়েন (ভিনগ্রহের প্রানি)। এদের গুন বলতে কিছুই নেই কিন্তু এরা প্রমান করতে চায় এদের সব গুন আছে। যে রাঁধে সে চুলও বাধে। কিন্তু তোমরা শুধু চুলটাকেই বিভিন্ন স্টাইলে বাধতে পেরেছো, আর কিছুই পারো নি।
– তুমি!!! তুমি!!!
জেরিন কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে দিলো পিয়াল। রুমের সামনে থেকে পিয়ালের মা, পিয়ালকে ডাক দিলো –
পিয়ালের মা – পিয়াল, খেতে আয়।
পিয়াল – হ্যা আম্মু, আসতেছি।
পিয়াল ফোন রেখে খেতে চলে গেলো। খেয়ে উঠে শার্ট-প্যান্ট পরলো, উদ্দেশ্য রুমির বাসা। তৈরী হয়ে ঘড়ির সময়টা দেখলো। দুপুর তিনটা বাজে। এখনই বের হয়ে পরাটা উত্তম হবে। পিয়াল আর দেরী না করে বাসা থেকে বের হয়ে পরলো। রাস্তার পাশে বাসের অপেক্ষায় পিয়াল। দুপুরবেলা বাস পাওয়াটা আরেকটা ঝামেলা।যদিও কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা বাস চলে আসলো। বাসে উঠে সিটে বসে পরলো পিয়াল। পকেট থেকে হেডফোন বের করে ফোনে সেট করে নিলো।
বিশ মিনিটের মধ্যেই বাস রুমির বাসার সামনে এসে থামলো। পিয়াল বাস থেকে নেমে রুমির বাসার দিকে পা বাড়ালো। বাসার সামনে এসে কলিংবেলে চাপ প্রয়োগ করলো। কিছুক্ষন পরেই দরজার ওপাশ থেকে –
রুমির মা – কে?
পিয়াল – আন্টি আমি! পিয়াল!
– ওহ! তুমি! ভিতরে আসো বাবা। (দরজা খুলে)
– জ্বি আন্টি। পিয়াল কোথায়?
– ও তো ছাদে গেলো কিছুক্ষন আগে।
– ছাদে কেনো?
– জানি না। টিয়ার ওই কাহিনীর পর থেকে রুমি কেমন যেনো হয়ে গেছে। সারাক্ষণ রুমে থাকে, আমাদের সাথেও কম কথা বলে।আর বিকালে ছাদে গিয়ে বসে থাকে। মাঝে মাঝে রাতেও যায়। অনেক রাত পর্যন্ত ছাদে বসে থাকে।
-আচ্ছা আন্টি আমি ছাদে যাই, দেখি কি করে।
-আচ্ছা বাবা, যাও।
পিয়াল রুমির বাসা থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ায়। দৌড়ে ছাদে চলে আসে পিয়াল। ছাদে এসে হাপাতে থাকে, ছাদের এক কর্নারে রুমিকে বসে থাকতে দেখা গেলো। পিয়াল আস্তে আস্তে হেটে রুমির কাছে গেলো।
পিয়াল – অই!
রুমি – ও তুই এসেছিস? (চমকে উঠে)
– হ্যা! কি হইছে বল তো তোর!
– একটু বিশ্রাম নে, হাপাচ্ছিস তো!
– আরেহ না, সমস্যা নাই আমি ঠিক আছি। এখন বল কি হইছে তোর?
– কিছুই হয় নি।
কিছুক্ষন দুজনেই নিশ্চুপ।
পিয়াল – আন্টি বললো তুই নাকি কি রকম হয়ে গেছিস।
রুমি – আরে কই না তো আগের মতই আছি।
-তুই কাকে বোকা বানাচ্ছিস?
– বোকা বানাবো কেনো?
– কষ্টটা নিজের ভিতরে রাখিস না, আমাকে বল।
– কি বলবো কিছুই ভালো লাগে না। টিয়ার জন্য মনটা অনেক খারাপ।( কেঁদে)
– ও! আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো তোরে?
– কি প্রশ্ন?
– তুই জানস টিয়া এই কাজটা কেনো করেছিলো?
– না জানি না, আর জানতেও চাই না।
– না জানলেও তোর আজকে জানতে হবে। টিয়ার এই করুন অবস্থার জন্য আজকে তুই দায়ি। একমাত্র তুই!
– আমি?
– হ্যা তুই! রুমি আমরা অন্য মেয়েদেরকে ঠকাতে ঠকাতে ভূলেই গিয়েছিলাম আমাদের ঘরেও মা-বোন আছে। অন্য মেয়েদের যেমন মন আছে, স্বপ্ন আছে, আশা আছে তেমন তোর বোনেরও ছিলো। আমরা একসময় ভূলেই গিয়েছিলাম উপরে আল্লাহ/ভগবান/যিশু বলতে কিছু একটা আছে। আমরা গুনাহ/পাপ করেছি তার ফল আজকে আমাদের বোনকে ভোগ করতে হলো।এখন দেখ তাহলে দোষটা কার?
– হ্যা দোষটা আমারই, আমি ভাই নামে একটা খুনি। আমি অন্যের স্বপ্ন,আশা খুন করেছি। তার ফলে আজ আমার এই অবস্থা। এই পাপ/গুনাহ থেকে আমি জিবনেও রেহাই পাবো না। আমি জানি! (কান্নায় ভেঙ্গে পরে)
– ভূল, তোর হাতে এখনো সময় আছে এই ভূল শুধরানোর। হয়তো অন্তত তাতে আমাদের মরা বোন শান্তি পাবে।
– কি করলে, বল? আমি সব করতে রাজি আছি।
– আমি যা বলবো তা করতে পারবি তো?
– হ্যা পারবো বল।
– তুই তামান্নার কাছে ফিরে যা।
– কি?
– হ্যা! তুই তামান্নার কাছে ফিরে যাবি। তামান্নাও একটা মেয়ে। টিয়ার মতো তামান্নারও আছে একটা মন, আছে কিছু স্বপ্ন,চাওয়া-পাওয়া। রুমি, এখনো সময় আছে আমি যা বলছি তা কর।
– এটা সম্ভব না, তামান্না আমাকে জীবনেও ক্ষমা করবে না।
– রুমি, এটা তোর ভূল ধারনা, সব ঠিক হয়ে যাবে। তামান্না তোকে ভালোবাসে, ও তোকে ক্ষমা করে দিবে।
রুমি নিশ্চুপ।
-এখনো কি ভাবছিস?
– হ্যা তুই ঠিকই বলেছিস।
রুমি পকেট থেকে ফোন বের করে তামান্নার নাম্বার ডায়েল করে। কিন্তু ফোনের সুইচড অফ।
রুমি- তামান্নার ফোনের সুইচড অফ। কি করবো?
পিয়াল – কালকে ওর বাসায় যাবো। সাথে তুইও যাবি।
– আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু কখন যাবি? ওর বাসায় ওর বাবা-মা আছেন তো।
– সেইটা আমি দেখবো। কালকে সকালেই যাবো। তুই রেডি হয়ে থাকিস আমি এখান থেকে তোকে নিয়ে যাবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে (চোখ মুছতে মুছতে)
– আচ্ছা আমি এখন আসি বাসায় যাবো। একটু কাজ আছে।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– বায়।
– বায়।
পিয়াল, রুমির বাসা থেকে বের হলো। একটা দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে বাসস্টপের দিকে হাটা শুরু করলো। সিগারেটটা অর্ধেক টেনে ফেলে দিয়ে বাসে উঠে পরলো।
পরের দিন সকালে,
রুমির ফোনে পিয়ালের ঘুম ভাঙ্গে।
রুমি – কিরে তুই ঘুম থেকে উঠিস নাই?
পিয়াল – না, তোর কলেই ঘুম ভাঙ্গলো।
– তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে তৈরী হয়ে নে তামান্নার বাসায় যেতে হবে।
– বাহ! রুমি ভাইয়ের দেখি তামান্নার প্রতি ফিলিংস এসে গেছে।
– হাহাহাহা!
– আচ্ছা রাখলাম ফ্রেস হতে যাই।
– আচ্ছা যা।
পিয়াল ফোন রেখে ফ্রেস হয়ে তৈরী হয়ে নেয়। সকালের নাস্তা করে বের হয়ে পরে। একটা সিএনজি নিয়ে রুমি বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়।
পিয়াল- হ্যালো রুমি!
রুমি – হ্যা বল। কই তুই।
– আমি তোর বাসার নিচে। তাড়াতাড়ি নিচে নাম।
রুমি বাসা থেকে বের হয়। পিয়াল এবং রুমি সিএনজিতেই করে রওনা হলো তামান্নার বাসার উদ্দেশ্যে। জানেন তো তামান্নার বাসায় গিয়ে কি হলো।জানতে হলে পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করুণ।

চলবেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে