গল্প: বেলাশেষে
তানজিম শাহরিয়ার
প্রেমটা শুরু হয়েছিলো অাপনি ডাকা থেকে। কয়েক বছরের পুরতন প্রেম। কিছু সময় অাপনি কিছু দিন তুমি অার এই দীর্ঘ সময় নিয়ে রাজত্ব করছে তই শব্দটি। ঝগড়া করতে করতে কখনযে ভালোবাসার মধুটা বিষ হয়েছে বুঝতে পারেনি মুরাদ। তনিমা যদিও কখনো ছেরে যেতে চায়নি মুরাদকে কিন্তু এমন সম্পর্ক যেন সেও অার এগিয়ে নিতে পারছেনা। কত হাহাকার তার হৃদয়ে। কখনো বিষের বোতল দেখে তো কখনো দড়ি। অাবার কখনো একা একা হাসতে থাকে।
বাসায় বিয়ের কথা চলছে। এর অাগেও অনেক প্রস্তাব এসেছিলো। কখনো বাহানা অার কখনো নিজেই মুখ ফুটে বলে দিয়েছে পরিবারকে সে বিয়ে করবেনা। কিন্তু অাজ অার ভালো লাগেনা প্রেম পিরিত, ভালো লাগেনা কারো জন্যে অপেক্ষা করতে। তাই এবার রাজি হয়েছে বিয়েতে ।
মুরাদ জানতো তনিমা অভিমান করে। কিন্ত তাকে ভালোও বাসে সীমাহীন।
এটা যে অভিমান নয়। নয় কোন মিথ্যে রাগ।তনিমা যে ভালোবাসার অাসল রুপ দেখতে পেয়েছে বুঝতে শিখেছে প্রেমের অর্থ।অনেক দিন হতে চললো তবু তনিমা দেখা করেনি। সারাদিন বাসার মধ্যে সবার সাথে গল্প করে সময় পার করে। তবু যেন অতীত কথা গুলো ভুলতে পারছেনা। এ কষ্ট যেন মৃত্যুর থেকেও কষ্টদায়ী।
বিয়ের দিন যত এগিয়ে অাসতে থাকে তনিমা ততচিন্তায় পরে যায়। কত রাত যে কান্না করে পার করে দিয়েছে সেটা বলার কোন অবকাশ নেই।
বিয়ের দিন চলে এলো। মুরাদ তখনো কিছু জানেনা। তনিমা সারারাত বিছানায় পিঠ রাখেনি। সকালে সোজা রান্না ঘরে গিয়ে মা কে জরিয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করলো।
মেয়ের কান্না দেখে বুঝতে পারলো জোলেখা বেগম। মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বললেন কি হয়েছে মা?,,,
তনিমা শুধু কান্না করছে। কোন উত্তর করলোনা।
জোলেখা অাবার বললো, ” কিরে মা মুরাদের কথা মনে পরছে বুঝি?”
“হ্যাঁ মা পাগলটাকে যে ধোকা দিলাম অামি “— বলেই হাউ মাউ করে কেঁদে ফেললো তনিমা।
বেশ কিছুক্ষন পরে তনিমা কান্না কন্ঠে বললো,” মা মুরাদ কে জানানো উচিত অামি বিয়ে করছি । তুমি যদি অনুমতি দাও তো অামি যাবো একটু ওর কাছে। ”
“কিন্তু একটু পরে তো বর পক্ষ অাসবে! “– জোলেখা বললো।
অামি যাবো অার অাসবো মা। তুমি বিশ্বাস রাখো তোমাদের অসন্মান অামি করবোনা।
মায়ের মন গলে যেতে কতক্ষন! জোলেখার চোখেও জল অাসলো মেয়েকে চুপি চুপি বের করে দিয়ে বললো তারাতারি অাসতে।
তনিমার ডাক শুনে বাহিরে অাসলো মুরাদ। হাসতে হাসতে বললো, “পারলেনা তো অভিমান করে থাকতে। ” – বলেই হাসতে শুরু করলো মুরাদ।
তনিমা তখনই ফট করে বলে দিলো, অামি বিয়ে করছি। হাসি যেন একেবারে হারিয়ে গেলে বিস্ময়ে।
মুরাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তনিমার দিকে। কাছে এসে বললো, ” তুমি কি যা বলছো সেটা সত্যি? ”
” হ্যাঁ হ্যাঁ,,, সত্যি। অাজ অামার বিয়ে অার তোমার দাওয়াত রইলো। ”
মুরাদ তনিমার হাত ধরে বললো,,, ” তুমি বিয়ে করতে পারোনা! ওগো,, তুমি কি অামায় ভালো বাসোনা? তুমি কি পারবে অামার সামনে কবুল বলতে? ”
” না,,, অামি কাউকে ভালোবাসিনা!… “— বলেই চলে গেলো তনিমা।
বর এসে গেছে কনে নিতে। বিয়ে পড়াতে মুরব্বিরা সবায় গেলেন তনিমার কাছে। ইমাম তনিমাকে কবুল পড়তে বলছে কিন্তু তনিমা কবুল বলছেনা। বারবার অনুরোধ সত্তেও কবুল বলছেনা তনিমা। সব মুরব্বি তাকিয়ে অাছে তার দিকে। সব চোখের মধ্যে দুটি চোখ ছিলো মুরাদ এর। তার সামনে যে মুরাদও দারিয়ে অাছে। তনিমা নিজেও জানে সে পারবেনা তার সামনে কবুল বলতে।
তনিমা তাই বাবাকে কাছে ডেকে কানে কি যেন বললো। অার তার বাবা মুরাদকে ডেকে নিয়ে বাহিরে অাসতেই সবায় বলে উঠলো, অালহামদুলিল্লাহ!
মুরব্বিরা অাজও অনেক বিয়েতেই অালহামদুলিল্লাহ বলছে।
কিন্তু মুরাদ অাজও বিস্বাস করেনা। পাগল হয়ে ঘোরে ফিরে পথে ঘাটে। অার বলতে থাকে, ” সবায় শুনেছে অামি শুনিনি –অালহামদুলিল্লাহ
অালহামদুলিল্লাহ!
(সমাপ্ত)