গল্প খোলা চিঠি পর্ব ০১
———
???প্রিয় নীলিমা—-
চিঠিটা যখন তোমার হাতে তখন হয়তো আমি অনেক অনেক অনেক দূরে চলে গেছি,
তুমি চাইলেও আমাকে কাছে পাবেনা,
তোমার ডাক আমার পর্যন্ত পৌঁছাবে না,
আমার নিথর দেহ মাটিতে পরে থাকবে তুমি চাইলেও আমাকে ডেকে তুলতে পারবেনা,
অনেকটা না পাওয়ার আক্ষেপ আর হতাশা নিয়ে চলে যাচ্ছি আমি এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে,
তবে ভেবোনা আমি তোমার উপর রাগ করে চলে গেছি,
অনেক স্বাধের আর স্বপ্নে বউ ছিলে তুমি আমার,
তোমার উপর কি রাগ করতে পারি বলো?
আসলে খুব বেশি ভালবাসি বলে স্বার্থপরের মতো নিজের ভালবাসাটুকু সঙ্গে নিয়ে চলে যাচ্ছি পাছে যদি এই পাওয়া টুকু ও হারিয়ে ফেলি!!!
জীবনে বেচে থাকতে হয়তো তোমার হৃদয় নিঃসৃত ভালবাসা পাবোনা তাই পাবার আশাটুকুকে পুঁজি করেই আমার এই চলে যাওয়া,,,
আমাকে ভুল বুঝনা প্লিজ!
সত্যিকার ভালবাসা মনে হয় আসলেই অন্ধ হয়!
নয়তো তোমার সব জেনেও কি করে আমি দিনের পর দিন না দেখার ভান করে শুক্ষ একজন অভিনেতার মতো অভিনয় করে গেছি??
–আচ্ছা এসব বাদ দাও!!
নীলিমা তোমার কি মনে আছে তোমাকে দেখতে যাওয়া সেই প্রথম দিনের কথা?
–আমার সামনে তোমাকে যখন আনা হলো বউ দেখানোর জন্য আমি এতোটাই নার্ভাস ছিলাম যে, আমার হাত থেকে চায়ের পেয়ালা পরে গিয়েছিলো?
“হাঃহাঃ হাঃ”
কি কান্ড বলো দেখি??
আমি তো বিশাল লজ্জায় পরে যাই!!!
–আচ্ছা আমার কি দোষ বলো?
তুমি ছিলেই এমন নজরকাড়া অপরূপা সুন্দরি আমি কি করবো বলো?
অবশ্য তোমাকে যে সেইদিনই আমি প্রথম দেখি তা কিন্তু ভেবো না,,,
তুমি তো আমার মনের রাজ্যে অনেক আগেই বসতবাড়ি করে বাস করছিলে!
সেটা তো শুধু একটা ফরমাল দেখা এই আরকি!!!
আজো মনে পরলে হাসি পায় জানো?
কি বোকা আর টিনএইজারের মতো তোমাকে এক পলক দেখার জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকতাম আমি!
অন্য কোনো নেশা নয় শুধু একনজর দেখার জন্য ব্যাকুল থাকতাম আমি,
আমি জানি সেটা আমার একতরফা পাগলামি ছিলো,
আর তাই নিজের বয়স আর তোমার বয়সের তারতম্য না করেই তোমার সাথে নিজেকে জড়ানোর ভাবনাকে বাস্তবে রূপদান করতে ব্যস্ত হয়ে পরি,
একবার ও ভাবিনি তোমার ভালবাসায় বয়সটা ও অন্তরায় হয়ে দাড়ায়!!
তবে আমি খুব রাগ করেছি জানো?
রাগ এই জন্য করেছি যে,,,
আমাকে যদি তোমার ভালো না-ই লাগবে তাহলে সেদিন কেনো মানা করে দিলে না?
অন্তত আজকে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে আমাকে এমন করে চলে যেতে হতো না!!!
–যাক সেসব কথা,,,
তোমাকে দেখার পর থেকেই তোমাকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে সারা জীবনের জন্য কাছে পাবার ব্যাকুলতা আমাকে ঘিরে ধরলো,
সারাক্ষণ শুধু তুমি আর তুমি!!!
আমি তোমার ভাবনায় মত্ত থাকতাম সারাটিক্ষণ সেটাকি তুমি বুঝতে?
“”ধূর আমি ও কি বোকা!!
তুমি কি করে বুঝবে?
আমি যে তোমাকে কতটা ভালবাসতাম তা আমি নিজেই তোমাকে কখনো বুঝতে দেইনি,
তার কারন কি জানো?
কারন তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়া,
প্রথমে আমিও বুঝতে পারিনি তোমাকে ছেড়ে একদিন আমাকে এমন করে চলে যেতে হবে!!!
–যখন বুঝতে পারলাম তোমার জীবনে আসাদ চৌধুরি শুধু মাত্র একটি দীর্ঘশ্বাস নিজের ভালবাসাকে তিল তিল করে হত্যা করেছি প্রতিনিয়ত আর আফসোস করেছি নীলিমা নামের সাথে কেন নীলিমা চৌধুরি মিথ্যা টাইটেল লাগালাম???
কিন্তু আমার কষ্ট কি জানো?
তুমি আমাকে একটি বারের জন্য বলতে!
এমন করে পিছনে ছুরি মারার কোনো মানে ছিলো বলো তো!!!
খামাখা তুমিই কষ্ট পেলে!
কি দরকার ছিলো সমঝোতার সম্পর্কের?
যেখানে ভালবাসাই ছিলনা সমঝোতার সম্পর্ক করে কি লাভ হলো বলো?
যাই আমার কথায় মন খারাপ করোনা প্লিজ!!!
–অনেক কষ্ট হচ্ছে জান আমার চিঠিটা পড়তে?
কিন্তু আজ যে তোমাকে এই কষ্টটুকু করতে হবে!
কারন আমার ভিতরের প্রতিনিয়ত আমারই খন্জণ এর তিল তিল করে আঘাতের কি যে তীব্র যন্ত্রণা তা সারা জীবনের জন্য তোমার কাছে অজানা হয়ে থেকে যাবে,,
কি যে অসহনীয় যন্ত্রণা নিজের বিবাহিতা স্ত্রীকে নিজের সম্মুখে অন্যের বাহুতে সমার্পণ করা তা তুমি বুঝবেনা নিলু,,,
–নীলিমার হাতে তার স্বামী আসাদ চৌধুরীর চিঠিটা,
নিলীমা কাঁদছে অঝোরে,
কি করবে সে বুঝতে পারছে না,
চিৎকার ও করতে পারছেনা আবার চুপ ও থাকতে পারছেনা,
প্রচণ্ড অপরাধ বোধ তাকে ঘীরে ধরেছে,,,
শুধু নিরবে জল ফেলছে আর ভাবছে একটা মানুষ কেমন করে এতোটা অমায়িক এতোটা ভালো ও বড় মনের হতে পারে???
–স্ত্রীকে ভালবেসে এযাবৎ কাল অনেকে অনেক কিছু করেছে কিন্তু এই প্রথম মনে হয় কোনো লোক তার নিজের স্ত্রীকে ভালোবেসে তাকে খুশি রাখার জন্য এমন ভাবে জীবন উৎসর্গ করে বড় ত্যাগ করলো!!
–কারন আসাদ ছিলেনই এমন একজন যে সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও আদর্শ একজন স্বামী যে স্ত্রীর মুখের এক চিলতে হাসির জন্য নিজেকে বিষর্জণ দিতে ও পিছুপা হয়নি,,,
★★★
–আজ থেকে ছয় বছর আগের কথা,
আসাদ চৌধুরি সুশিক্ষিত ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত একজনদের মাঝে ছিলেন,,,
নিজের জীবনটাকে সাবলীল ও সুন্দর করার প্রচেষ্টায় প্রেম ঘটিত বিষয় থেকে দূরে ছিলো আসাদ,
সব কিছুর মাঝখানে কখন যে তার বয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই সে বুঝতে ও পারেনি,
–নীলিমা ও তার এলাকারই একটি মেয়ে,
রাস্তা ঘাটে চলাচলের মধ্যেই আসাদ চৌধুরি নীলিমাকে খুব পছন্দ করতে শুরু করে,
খুব সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় কথা বলতো নীলিমা,
দেখতেও অনেক মিষ্টি ছিলো,
আর তাই ঘটকের মাধ্যমোই নীলিমার বাসায় প্রস্তাব যায় পাঠানো হয়,
–ছেলের নাম যশ আর শিক্ষাগত যোগ্যতার কারনে নীলিমার ফ্যামেলি ও আর দ্বিমত পোষন করেনা,,,
কারন প্রতিটা বাবা মায়ের মতো নীলিমার বাবা মা ও সব সময়ই চাইতেন মেয়েকে এমন কারো সাথে বিয়ে দিবেন যেনো মেয়ে সারা জীবন অনেক সুখে থাকে এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়,
একদিন বিকেলে আসাদ ও তার একমাত্র ছোটভাই আজাদ চৌধুরি আসে নীলিমাকে দেখতে,
–দুই ভাইয়ের যথেষ্ট মিল থাকলেও ব্যক্তিগত ভাবে দুজন দুই মেরুর,
আসাদ চৌধুরি শান্ত ও মার্জিত স্বভাবের,
নিজের সুখের আগে সে সবসময় পরিবার পরিজনের সুখের কথা চিন্তা করতো আসাদ,
অন্যদিকে আজাদ চৌধুরি একটু চটপটে স্বভাবের,
সব কিছুতেই ধৈর্য কম আর অস্থিরতা কাজ করতো তার মাঝে সারাক্ষণ,
পড়াশোনায় বড় ভাইয়ের মতো ছিলোনা কখনোই,
অল্পতেই রেগে যাওয়ার কারনে প্রায় ভুল করে বসতো আর সেই ভুলের মাশুল গুনতে হতো বড় ভাইকে,
ছোটবেলা থেকেই ছোট ভাইয়ের ভুলের মাশুল গুনে আসছে বড় ভাই আসাদ,
মুলত বড় ভাউয়ের অতিরিক্ত আশকারা পেয়ে বিগড়ে যায় ছোট ভাই,
আর একটা সময় তার এই প্রশ্রয়ের মাশুল তাকে জীবন দিয়ে গুনতে হবে এটা আসাদ চৌধুরি কোনোদিন স্বপ্নেও চিন্তা করেনি,,,
।
(চলবে)।
।
লেখা : মুসকান