গল্প-আমি কি? -লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি

0
903

#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি
গল্প-আমি কি?
#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_এপ্রিল_২০২১

আজ আকাশটা কালো রং ধারণ করেছে।বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস। আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছি।দৃষ্টি আমার আকাশের দিকে।কিন্তু মন আমার কোন ভাবনায় আছে কে জানে।মহিনের মৃত্যুর আজ ছয়দিন চলছে।মহিন আমার স্বামী।এই তো বছর খানেক আগে আমাদের বিয়ে হয়।আমরা ক্লাসমেট। অনার্স কমপ্লিট করার পর পরিবারের সম্মতিতেই আমাদের বিয়েটা হয়।বাঘ হরিণকে হঠাৎ ধাওয়া করলে যেমন চমকে যায় এমন চমকে গেলাম আমি বজ্রপাতের শব্দে।অবশ্য আলোর ঝলকানিটা প্রথমে আমার মুখে লেগেছিল। খেয়াল করিনি।ধ্যানে মগ্ন যে!

-সুমনা।

আম্মার ডাকে পিছনে ফিরলাম আমি।ছেলের শোকে মহিলাটা অর্ধেক হয়ে গেছেন।চোখের নিচে কালো দাগ,চোয়াল গুলো ডেবে গেছে। আহারে স্বামীহীন এই একমাত্র ছেলেটাই তো তার ভরসা ছিল।

-জ্বি,আম্মা।
-জানালার পাশ থেকে সরে দাঁড়া। দিন ডাকছে।
-আম্মা।আকাশটাও মনে হয় আমার দুঃখে কাদঁবে।

আম্মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম আমি।আম্মাও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিলেন।বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। প্রকৃতিও আজ আমার দুঃখে দুঃখী।

রাত ১২ টা বেজে ৫০ মিনিট।আম্মার পাশে শুয়ে আছি।মহিন মারা যাওয়ার পর থেকে আম্মার সাথেই ঘুমাই আমি।মহিনের লাশটা আমি আজো ভুলতে পারিনা।কি বিভৎস! চোখের সামনে ভাসে ছিন্ন মাথা,কত শত ক্ষত চিহ্ন! না,আর ভাবতে পারছিনা আমি।

মহিনের সাথে গত ছয়মাস ধরে আমার একটা বিষয়ে ঝামেলা চলছে। একটা ছেলেকে আমি রোজ রাতে স্বপ্ন দেখি।আমার ভাই শাওনের মতো।যে আমাকে বলে, “বুবু,ভাইয়া ভালো না রে।দেখনা আমাকে অন্ধকারে ফেলিয়ে গেছে”। আমরা এক ভাই এক বোন ছিলাম।শাওন আমার ছোট ভাই।হঠাৎ করে একদিন তার এক্সিডেন্ট হয়।আমার কলিজাটা মারা যায়।বাবার অঢেল সম্পত্তি আমাকে আর মহিনকে দিয়ে দেন। মূলত শাওনের ভাগটাই মহিন পায়।এই যে এখন যে ছয়তালা বাড়িটাতে আমরা আছি তাও তো আমার বাবার। মহিনের মোবাইলটা হাতে নিলাম।চলে এলাম বারান্দায়। শেষ বারের মতো প্লে করলাম রেকর্ডটা।

” তুমি। এই এসব কি করছো।জানপাখি মাথাটা ঠান্ডা করো।আমরা বসে কথা বলি।এই না প্লিজ আমাকে ছেড়ে দও।”

ঐখানে উপস্থিত ব্যাক্তিটির হাসির শব্দ ভাজছে।হা হা হা।

“ঠিক এইভাবে তো আমার ভাইটাও বাঁচার জন্য আকুতি মিনুতি করেছিল। ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার আগে ভাবলেনা একবারো।মা হারা ভাইটাকে সন্তানের মতো মানুষ করেছি আমি।”

মেয়েলি কন্ঠের মেয়েটার আর্তনাদ শোনা গেল।মনে হয় কেউ আচমকা আঘাত করেছে।

আবার মহিনের আওয়াজ, “তোর ভাইটারে তো শেষ করলাম এবার তুই শেষ হবি।”

কতক্ষণ নিরবতা।আচমকা আবার মহিনের আর্তনাদ। বাচাঁর আর্তনাদ।

ডিলিট করে দিলাম রেকর্ডটা।আম্মা ডাকছেন সুমনা সুমনা করে।চলে গেলাম ভিতরে। আম্মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলাম।মা হারা আমি অনেক আদর পেয়েছি আমার এই আম্মার কাছে।আজ একটা শান্তির ঘুম আসবে।মহিনের খুনটা একটা রহস্য।আমি করেছি কি?হঠাৎই অবচেতন মস্তিষ্ক প্রশ্ন করে।

(সমাপ্ত)…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে