গল্পঃ “heart touch love 3”
পর্ব: (৮ ও ৯)এক সাথে
১৩ই জুলাই ২০১৫,
একটা চেয়ারে বসে আছে পিয়াল,ঠিক তার পাশের চেয়ারেই বসে পরলেন বাসায় আগত সেই ডক্টর।পিয়াল একেরপর এক নাম্বার মনোযোগ দিয়ে দেখছে আর রুমির নাম্বারটা খুঁজছে।
ডক্টর – পিয়াল!
পিয়াল আড়চোখে ডাক্টরের দিকে তাকালো।
ডক্টর – কি? রুমিকে স্বপ্নে দেখেছিলে বুঝি?
পিয়াল – আপনি জানলেন কিভাবে? (ডক্টরের দিকে বড় বড় দৃষ্টিতে তাকালো পিয়াল)
– রুমির নাম্বারটাও আমিই ডিলেট করেছি।
– আপনি? কেনো? আমার ফোন ধরার অধিকার তো আপনার নেই।তাই না?
– শুধু রুমির নাম্বার নয়, তোমার সাথে তোলা ছবিগুলোও ডিলেট করে দিয়েছি।
– আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আপনি কে এইসব করার? (চেঁচিয়ে)
– পিয়াল, যার কোনো অস্তিত্বই এই পৃথিবীতে নেই তার স্মৃতি রেখে কি লাভ? বলো।
– অস্তিত্ব নেই মানে? আমি স্বপ্ন দেখেছি ঠিক আছে। কিন্তু এটা তো আর সত্যি না, তাই না?
– কোনটা সত্যি না? রুমি বেঁচে নেই সেইটা? আর সত্যিটা যদি স্বপ্ন হতো তাহলে আমাদের চেয়ে বেশী খুশি হয়তো আর কেউ হতো না।
– আবারো আপনি বলছেন রুমি বেঁচে নেই। আপনি কি চান বলুন তো? টাকা দিচ্ছি আপনি বিদায় হোন এখান থেকে। প্লিজ!
– টাকাই যদি সব হতো তাহলে হয়তো তোমার বন্ধু রুমিকে তোমার সামনেই দেখতে পেতে।
– আম্মু, উনি কি বলছেন এসব?
পিয়ালের মা- পিয়াল, মাথা ঠান্ডা কর বাবা। রুমি সত্যিই এই পৃথিবীতে নেই। (কান্না)
পিয়াল- আমার বিশ্বাস হয় না। আমি এখনই রুমির বাসায় যেতে চাই।
পিয়াল উঠে দাঁড়ায়। পিয়ালের মা তার ছেলেকে রুমির বাসায় যাওয়া থেকে আটকাতে আসেন।
ডক্টর – দাঁড়ান,পিয়ালকে যেতে দিন। সত্যটা নিজেই দেখে আসুক।
পিয়ালের মা সরে দাঁড়ায়। পিয়াল দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়। একটা সিএনজি নিয়ে রওনা হয় রুমির বাসায়।
সকাল ১০টা, পিয়াল রুমির বাসার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা দিলো। রুমির বাবা দরজা খুললেন।
পিয়াল – আংকেল রুমি কোথায়?
রুমির বাবা নিশ্চুপ। পিয়াল দ্রুত চলে যায় রুমির রুমে। রুমে রুমির মা বসে বসে কাঁদছেন। পিয়ালের মাথায় হাজারও প্রশ্নের ভিড় জমে আছে। রুমির বিছানার পাশেই একটা ডায়রী রাখা। কাঁপা হাতে ডায়রীটা তুলে নেয়। রুমির রুমে রুমির বাবার আগমন। তিনি রুমির মাকে নিয়ে তাদের রুমে চলে গেলেন। রুমির রুম থেকে ডায়রী হাতে বের হলো পিয়াল। সামনের রুমের একটা সোফায় বসে পরলো। কিছুক্ষন পরেই রুমির বাবা এসে পিয়ালের পাশে বসলেন।
রুমির বাবা – কালকে তুমি রুমিকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিলে তখন হঠাতই তুমি অজ্ঞান হয়ে যাও। তখন তোমাকে তোমার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
পিয়াল- আমি রুমিকে….?
– বুকটা ফাঁকা করে মেয়েটাও চলে গেলো আর এবার ছেলেটাও। জানি না কি পাপ করেছিলাম যার ফল এখন পাচ্ছি। (কেঁদে)
– তাহলে আমি যা স্বপ্নে দেখেছিলাম তা সত্য! (চোখ বড় বড় করে)
রুমির আব্বু তার ফোন বের করে একটা ছবি বের করেন। পিয়ালের সামনে ফোনটা রেখে উঠে চলে যান।পিয়াল হাতে ফোনটা নিলো। মাথা থেঁতলানো একটা লাশের ছবি। গতকালকে এই লাশটাই দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো পিয়াল। লাশটার মুখটা রক্তে লাল হয়ে আছে। মাথার মগজও বের হয়ে আছে। পিয়ালের বমি আসছে, সে ফোনটা হাত থেকে রেখে দৌড়ে রুমির বাসা থেকে বের হলো। আবারো সব কিছু যেনো ঝাপসা হয়ে আসছে। তারমানে আবারো জ্ঞান হারাচ্ছে পিয়াল। নিজেকে সামলে নেয়ার শেষ চেষ্টা করলো, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে পরলো পিয়াল।চারদিক থেকে মানুষ এসে ধরে উঠালো পিয়ালকে।
সন্ধ্যা ৭টা,
পিয়াল চোখ খুললো, পাশেই সেই ডক্টরকে দেখতে পেলেন। চোখ খুলতে দেখে ডক্টর মুচকি একটা হাসি দিলেন। পিয়ালকে উঠে বসতে সাহায্য করলেন ডক্টর। এক গ্লাস পানি হাতে ধরিয়ে দিলেন পিয়ালের।
ডক্টর – দেখলে তো? সত্যটা কতোই কঠিন?
পিয়াল – আমার এখনো বিশ্বাস হয় না! (কান্না-কন্ঠে)
– সত্যের গভীরতা খুব কম। কিন্তু কষ্ট অনেক। তাই আমরা অনেক সময় মিথ্যা বলি কষ্টটাকে কমানোর জন্য। কিন্তু সত্য তো এক সময় প্রকাশ পায়ই।যে অন্যকে কষ্ট থেকে দূরে রাখতে সত্যকে চাপা দেয় তার চেয়ে বড় ব্যক্তি হয়তো এই পৃথিবীতে নেই। যদিও মিথ্যা বলাটা অনেক খারাপ,কিন্তু কারো কষ্ট লুকাতে মিথ্যা বলাটা ততটাও খারাপ নয়। কিন্তু হ্যা! যে সত্যে কষ্ট আছে তা নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি না করাই ভালো, তাতে সুখ নেই, দুঃখই বেশী।
– আমি রুমির বাসা থেকে বের হবার সময় একটা ডায়রী এনেছিলাম ওটা কোথায়?
– একটু আগেই বললাম, যে সত্যে কষ্ট থাকে সেই সত্য নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করা উচিৎ নয়।
– আমি ডায়রীটা চাই, কোথায়?
– আস্তে, মাথা ঠান্ডা করো পিয়াল। আমার কাছেই আছে।
ডাক্তার তার ব্যাগ থেকে একটা ডায়রী বের করে পিয়ালের হাতে দিলেন। পিয়াল ভালো করে দেখে নিলো। হ্যা! এই সেই ডায়রী, তামান্নার ডায়রী।
ডক্টর – আচ্ছা আমি আজকে আসি তাহলে,কেমন?
পিয়াল – জ্বি আসুন। ধন্যবাদ।
– ডায়রীটার প্রথম কয়েকটা পাতা পড়তে পারো কিন্তু এরপরের গুলো না পড়াই ভালো। একদম শেষের পাতাটা খুলবেই না। আমার এই কথাটা একটু মনে রেখো। কেমন?
– আচ্ছা, আপনি এখন আসুন।
ডাক্তার মুচকি একটা হাসি দিয়ে পিয়ালের রুম থেকে বের হলেন। পিয়াল ডায়রীটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সাদা রঙের ডায়রীটায় তামান্নার রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে।
ডাক্তার যাওয়ার সাথে সাথেই পিয়ালের মা হাতে একটা প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকলেন। পিয়াল তার দিকে বিরক্তের চোখ দিয়ে তাকালেন। পিয়ালের মা এসে পিয়ালের পাশে বসলেন।
পিয়ালের মা – নে কিছু খেয়ে নে। কয়েকদিন ধরেই ভালো মতো কিচ্ছুই খাস না।
পিয়াল – ভালো লাগছে না মা। খিদে নেই।
– খেয়ে নিতে বলেছি চুপচাপ খেয়ে নে।
পিয়াল না খাওয়ার জোরজবরদস্তি করলেও মায়ের কান্নাকাটির কাছে হেরে যায়। খাওয়ার অনিচ্ছা সত্যেও খেয়ে নেয়।পিয়ালের হাতে ডাক্তারের দেয়া ঔষধ তুলে দেয়া হলো। পিয়াল এক গ্লাস পানি দিয়ে সব ঔষধগুলো মুখে পুরে নিলো। পিয়ালের মা পিয়ালকে শুয়িয়ে দিয়ে রুমের আলোটা নিভিয়ে দিলো। পিয়াল শুয়ে আছে, অন্ধকার রুমটায় জানালার পর্দার ফাকা থেকে একটু চাঁদের আলো ঢুকেছে, সেই দিকে তাকিয়ে আছে। শরীর দূর্বল থাকার কারনে ঘুম পিয়ালকে ঘিরে ধরলো,পিয়াল ঘুমিয়ে পরলো।
–
পিয়াল একা একটা খোলা রাস্তায় হাটছে, রাস্তাটা একটু নোংরা।কিন্তু একটা মিষ্টি সুগন্ধি পাওয়া যাচ্ছিলো। খুবই পরিচিত সুগন্ধিটা। হঠাতই পিছন থেকে কেউ পিয়ালের নাম ধরে ডাক দিলো, পিয়াল পিছু ফিরলো। দূরে রুমি দাঁড়িয়ে আছে। মাথাটা থেঁতলানো, রক্ত ঝরছে। পিয়াল দাঁড়িয়ে আছে, দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পা নড়ছে না। রুমি হাত বাড়িয়ে পিয়ালকে বুকে টেনে নেবার জন্য সামনের দিকে এগোচ্ছে।
–
পিয়াল এক লাফে বিছানায় উঠে বসলো, এদিকে ওদিকে তাকালো। চারদিক অন্ধকারে ঘেরা। মনে হচ্ছে কেউ একজন বলছে “ভয় পেয়েছিস? “। পিয়াল এদিকওদিক হাত দিতেই বুঝে যায় সে তার রুমেই আছে। এক লাফে উঠে রুমের আলোটা জ্বালায়। খুব পানি পিপাসা পেয়েছে। টেবিল থেকে গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক চুমুকেই সবটুকু পানিই খেয়ে নিলো।পিয়াল নিজেকে বুঝালো এটা স্বপ্ন ছিলো। আস্তে আস্তে হেটে বিছানায় গিয়ে বসলো। সেই পরিচিত সুগন্ধির ঘ্রানটা এখনো নাকে আসছে। সুগন্ধিটার উৎপত্তিস্থান খুজতে খুজতে বিছানার পাশের টেবিলের কাছে যায়। সেখানে তামান্নার সেই ডায়রীটা রাখা। হাতে নিয়ে নাকের একটু কাছে আছে। হ্যা! ডায়রীটা থেকেই ঘ্রানটা আসছে! ডায়রীটা একটা টেবিল ড্রয়ারের ভিতর ঢুকিয়ে রাখে। ড্রয়ারটা লক করে দিয়ে চাবিটা বালিশের নিচে রাখে। ঘুম আসছে না, তারপরও শুয়ে থাকে। উপরে একটা সিলিং ফ্যানটা সজোরে ঘুরছে।পিয়ালের দৃষ্টি সেইদিকেই।
সকাল ৮টা ঘুম ঘুম চোখে বারান্দায় বসে আছে। ছাইদানিটা সিগারেটের ছাইতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। বুকের বাম পাশে হালকা চিনচিনে ব্যথা করছে। চোখদুটো প্রচন্ড পোড়াচ্ছে, বেশ লাল হয়েও আছে। রাতে দুচোখের পাতা এক মুহূর্তের জন্য এক করতে পারে নি পিয়াল। যখনই ঘুমানোর চেষ্টা করেছে তখনই আজেবাজে স্বপ্ন দেখে জেগে উঠেছে। এখন ঘুমাতেও ভয় করে। চোখের সামনে রুমির সেই মৃত দেহটাই ভেসে ওঠে। এই মূহুর্তে একজন মনো বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়াটা খুবই প্রয়োজন।
ফ্রেস হয়ে নিলো পিয়াল, তৈরী হয়ে বেরিয়ে পরলো একজন মনো-বিশেষজ্ঞের খোঁজে।
বন্ধুর দেয়া ঠিকানায় পৌঁছে যায় পিয়াল। কিন্তু এটা তো একটা এপার্টমেন্ট। যাই-হোক পিয়াল ঢুকে পরে। খয়রি রঙের দরকার উপর স্টিলে খোদাই করে মিলা আহসান লেখা। পিয়াল দরজার পাশের কলিংবেল চাপলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই পিয়ালের বয়সী একজন মেয়ে এসে দরজা খুললো।পিয়ালের মেয়েটাকে খুবই পরিচিত লাগছে, হয়তো এর আগেও কোথাও দেখেছে।
মেয়েটি – জ্বি কাকে চান?
পিয়াল – আমি পিয়াল! এখানের ঠিকানাটা আমাকে আমার বন্ধু দিয়েছে।
– ও আচ্ছা আপনিই পিয়াল। আসুন,ভিতরে আসুন।
– ধন্যবাদ।
ভিতরে ঢুকলো পিয়াল। মেয়েটি পিয়ালকে বসতে বলে একটা রুমে ঢুকলো। পিয়াল চারদিকে দেখলো একটু। রুমটা একটু ক্লাসিক ভাবেই সাজানো। হয়তো ডক্টর মিলা একটু ক্লাসিক-ই।কিছুক্ষন পরেই মেয়েটি পিয়ালের সামনে এসে বসলো। কিন্তু মেয়েটি এবার চোখে চশমা পরা।
মেয়েটি – আমিই মিলা। (হাত বাড়িয়ে দেয় পিয়াল)
পিয়াল – ও আচ্ছা আচ্ছা, আপনার কথাই বলেছিলো আমার বন্ধুটি। (মিলার সাথে হাত মিলায় পিয়াল)
– আপনার বন্ধুটি আমাকে সব বলেছেন।
– ও আচ্ছা।
– একটা কথা কি! আপনই আমার প্রথম রোগী, এর আগে কোনো রোগী পাই নি। আসলে আমি এই বিষয়ে পড়াশুনা করছি। তাই এমন রোগী খুঁজি। এরজন্য আপনাদের কলেজেও গেছিলাম সেইদিনটা হয়তো নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের এডমিশন চলছিলো। আমি আবার একটু ব্যাকডেটেড মানুষ। তাই শাড়ী পরেই গিয়েছিলাম, সবাই তো হাঁ করে তাকিয়ে ছিলো। হাহাহা…..
– লাল শাড়ি!
– হ্যা! আপনি জানলেন কিভাবে? (বিশ্ময়)
– আপনাকে, সেইদিন আমি দেখেছিলাম।
– ও আচ্ছা, যাই হোক। চা খাবেন?
– হ্যা!
– আমি আবার চা’র খুবই ভক্ত। প্রচুর বকবকও করি।
মিলা চা বানাতে গেলো। এভাবেই চলতে থাকলো, একসময় মিলা আর পিয়াল ভালো বন্ধুও হয়ে উঠলো।
০৪ আগস্ট ২০১৫,
বিকাল ৫টা,
পিয়ালের মধ্যে এখন অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো মন-মরা বা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠে না। বলতে গেলে, মিলা পিয়ালকে প্রায় সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে।পিয়ালের পরিবর্তনটা পিয়ালকেই মাঝে মাঝে চমকে দেয়।এখন আর রুমি,তামান্না অথবা টিয়াকে নিয়ে আজেবাজে স্বপ্ন দেখে না। মিলা পিয়ালকে যথেষ্ট সময় দেয়। দিনের বেশীরভাগ সময়ই মিলা পিয়ালের সাথেই থাকে। সারাক্ষণ দুজনে এদিকওদিক ঘোরাঘুরি, কথাবার্তা দিয়ে ব্যস্ত রাখে পিয়ালকে। মিলার উদ্দেশ্য পিয়ালকে পুরোপুরিভাবে সুস্থ করাটা। পিয়ালকে তার অতীত ভূলিয়ে নতুন একটা বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ দেয়া। পিয়ালও বাধ্য ছেলের মতো মিলার সব কথা শোনে। মিলার প্রতি পিয়ালও কিছুটা দূর্বল হয়ে পরে। হয়তো মিলারও একই অবস্থা, কিন্তু সব মনের কথা দুজন-দুজনাকে বললেও শুধু এই একটা কথাই লুকিয়ে রাখে।
পিয়াল তার রুমে কিছু একটা খুঁজছে। বিছানার পাশের টেবিলের ড্রয়ারটা খুললো। ভিতর থেকে একটা ডায়রী বের করলো। এখনো ডায়রীটায় তামান্নার রক্তের দাগ লেগে আছে। পিয়াল বিছানার উপর বসে পরলো। ডায়রীটা খুললো, প্রথম পৃষ্ঠায় মেয়েলী ধরনের আঁকিবুঁকি। পৃষ্টা উল্টালো পিয়াল, এই পৃষ্টায়ই বোঝা গেলো এটা তামান্নার ডায়রী। তার নাম বিভিন্ন ভাবে,বিভিন্ন রঙে লেখা। পিয়ার পরের পৃষ্টা উল্টালো যেখানে অল্প কিছু কথা লেখা আছে।
ডায়রী-
ভালোবাসা কি? এই প্রশ্ন বহুবার বহু মানুষকে করেছি। কিন্তু কেউ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নি। আজকে আমি বুঝছি ভালোবাসা কি। ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যার অনুভূতি না যায় কাউকে দেয়া, না যায় কাউকে বলা। একবার ভালোবাসার ছোঁয়া পেলে মনে হয় কিছুক্ষণ পর,পরই হাওয়ায় ভাসছি।
পিয়াল ডায়রী থেকে চোখ উঠায়। প্রথম পৃষ্টাটা পড়ে ভালই লাগলো পিয়ালের। অবশ্য ভালো লাগারই কথা। পিয়ালের অনুভূতির সাথে মিলে যাচ্ছে ব্যাপারটা। বাকি লেখাগুলো পড়ার জন্য পৃষ্টা উল্টাতে থাকে পিয়াল-
ডায়রী –
ভালোবাসা জিনিসটাই অন্যরকম। যাকে একবার ভালোবেসে ফেলা যায় তাকে সব কিছুতেই ভালো লাগে। একসময় ভালোবাসার মানুষটার প্রতি একপ্রকার নেশা লেগে যায়। প্রথমে অল্প অল্প মিস করা তারপর আস্তে আস্তে এর পরিমান বাড়তেই থাকে। সব জায়গার তার ছোঁয়া পাওয়া যায়,সব জায়গায়।
একটা সময় আসে যখন ভালোবাসার মানুষটাকেই কাছে পেতে মন চায়। তাকে ছাড়া সব কিছুই অসম্ভব মনে হয়।তখন তার দেয়া কষ্টটুকুও ভালো লাগে। ভালো লাগে তার হাসি, ভালো লাগে তার কান্না।এমনকি তার সব খারাপ কাজগুলোকেও ভালো লাগে।
ভালো লাগার মানুষটা এমন হয় যাকে পেয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ মনে হয়। মনে হয় কোনো এক স্বপ্নের ভিতরে আছি। আর এটা যদি সত্যিই কোনো স্বপ্ন হয় তাহলে এই স্বপ্ন আমি বার বার -হাজারবার দেখতে চাই। স্বপ্নটাকে বাস্তব করে দেখতে চাই না, শুনেছি বাস্তব নাকি অনেক কঠিন হয়। আর আমি চাই না এই কঠিনতাকে।
কখনো যদি ভালোবাসার মানুষটা রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দেয় তখন মনে হয় কেউ আমার দম বন্ধ করে রেখেছে। এক মিনিট হাজার বছরের মতো লাগে।হয়তো এটাই ভালোবাসা। কান্না করতে ইচ্ছে করে তখন, খুব কান্না করতে ইচ্ছে করে।
পিয়াল কয়েকটা পৃষ্টা পড়ে ফেলে, কিন্তু হঠাতই করে পরের পৃষ্টাগুলোতে অন্যকিছু লেখা। যা ভালোবাসার অপর দিকে। পিয়াল ডায়রীটা বন্ধ করে রাখে। পিয়ালের খুব ভালো লাগছে হঠাৎ করে। অন্যরকম একটা সুখ জাগ্রত হয়েছে। পিয়াল নিজেকে প্রশ্ন করলো এটাই কি তাহলে ভালোবাসা? যার জন্য তিনটা মানুষ জীবন দিয়েছিলো। পিয়ালের খুব মিলার কথা মনে পরছে। আজকে একবারও দেখা হয় নি। পিয়াল নিজের মনকে স্থির করে ভাবলো,সে এখন মিলার সাথে দেখা করতে যাবে। মিলা এখন ওর বাসায়ই আছে। সেহেতু পিয়ালের উদ্দেশ্য মিলার বাসা। পিয়াল আজকে একটু অন্যরকম ভাবে সাজলো,কিছুটা ক্লাসিক স্টাইলে। মিলার খুবই পছন্দের। পিয়াল বেড়িয়ে পরলো মিলার বাসার উদ্দেশ্যে। ♥ 🙂
.
.
♥………..To be continue….. ♥
গল্পের নামঃ “heart touch
love 3”
??
Writer: Riyad Ahmed Shihab
…হিমাদ্রির মেঘ
______অসাধারণ_একটি_গল্প 🙂
★——————- —পর্ব:- ০৯ ~~~~ 🙂
০৪ই আগস্ট ২০১৫,
রাত ৮টা, পিয়াল একটা ফুলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। একগুচ্ছ গোলাপ ফুল কিনে এসে মিলার বাসার সামনে দাঁড়ালো। কলিংবেল চাপলো পিয়াল,কিছুক্ষণ পরেই দরজা খুললো মিলা।
মিলা :- আরে পিয়াল! তুমি এই সময়?
পিয়াল :- কেনো ডিস্টার্ব করলাম নাকি?
– আরেহ না! কি যে বলো না তুমি।
– মনে হয় জ্বালাতন করছি, আচ্ছা যাই তাহলে। (পিছু ঘুরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো পিয়াল)
– অই! কই যাও। (পিয়ালের হাত ধরে মিলা)
– যাবো না?
– না! ভিতরে এসো।
পিয়াল, মিলার বাসার ভিতরে ঢোকে।মিলা একাই থাকে বাসায়। ওর মা-বাবা সবাই ইতালি থাকে। মিলা বাংলাদেশী সংস্কৃতি ছাড়তে পারে নি।তাই সে দেশেই থেকে যায়। তবে মাঝে মাঝে ওর বাবা-মা দেশে আসে, শুধুমাত্র তাদের আদুরে মেয়েকে দেখতে। পিয়াল, মিলার হাতে গোলাপগুচ্ছ তুলে দেয়।
মিলা- গোলাপফুল! হঠাৎ? (গোলাপের ঘ্রাণ নিতে নিতে)
পিয়াল – তোমার মুখের এইসুন্দর হাসিটা দেখার জন্য। (মিলার গাল ধরে হাল্কা টান)
– হুম্ম!!! আমি জানি তুমি কেনো এসেছো।
– কেনো? বলতো!
– আমাকে মিস করছিলা, তাই না?
– না, মোটেই না!
– দেখেন মিস্টার! আমি কিন্তু একজন মনো- বিশেষজ্ঞ। আমাকে মিথ্যা বলে এড়িয়ে যেতে পারবেন না।
– আচ্ছা বাবা! হ্যা আমি মিস করছিলাম তাই এসেছি।
হঠাতই বাহিরে বৃষ্টি শুরু হলো। মিলা উঠে জানালাটা একটু ফাক করে দেখলো।
মিলা – দেখো বৃষ্টি হচ্ছে।
পিয়াল – হ্যা হচ্ছে তো।
– ভিজবা?
– এখন? এই রাতে?
– হ্যা! চলো।
পিয়াল বাধ্য ছেলের মতো মিলার পিছু পিছু বাসার ছাদে ওঠে। পিয়াল,মিলা ভিজছে। পিয়াল, মিলার দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভেজার পর মিলাকে যেনো আরো বেশি সুন্দর লাগছে।পিয়ালের মন চাচ্ছে এখনই সজোরে চিৎকার দিয়ে মিলাকে প্রেম নিবেদন করতে।কিন্তু সাহস হচ্ছে না পিয়ালের। আচ্ছা!মিলা নাকি মনো- বিশেষজ্ঞ। সে কি পিয়ালের মনের কথাটা জানে না? নাকি জেনেও না জানার ভান করছে? আমি বাপু! লেখক! আমি মন- বিশেষজ্ঞ না, দেখা যাক কি হয়!
প্রায় আধাঘণ্টা বৃষ্টিতে ভেজার পর বাসার ভিতরে আসে ওরা। পিয়ালের জামা-কাপড় ভিজে একাকার।
পিয়াল – আমার জামাকাপড় ভিজে গেছে! এবার কি করবো?
মিলা – এভাবেই বসে থাকেন!
মিলা তার রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। কিছুক্ষণ পর মিলা বের হলো। সেই লাল শাড়ী, কপালে একটা কালো টিপ দেয়া।হাতে একটা শপিং ব্যাগ। পিয়াল হাঁ করে মিলাকে দেখছে।
মিলা – এই যে!
পিয়াল – হ্যা! বলো।
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
– এমনি। (লজ্জাকর ভাব)
– এইটা ধর! (কাগজের ব্যাগটা তুলে ধরে)
– এইটা কি? (হাতে নেয় পিয়াল)
– তোমার জন্যই কিনেছিলাম।
– হুম্ম, তাই বুঝি?
– হ্যা! এবার এগুলো পরেন। না হলে ঠান্ডা লাগবে। আমি খাবার দিচ্ছি, বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে বাসায় যাওয়ার দরকার নেই। আমি আন্টিকে ফোন দিয়ে বলে দিচ্ছি।
– আচ্ছা যাচ্ছি।
পিয়াল নতুন জামাকাপড়ের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরলো।মিলা পিয়ালের আম্মুকে কল করলো।
মিলা – হ্যালো আন্টি!
পিয়ালের মা – হ্যালো মিলা! পিয়াল তো বাসায় নেই।
– আন্টি পিয়াল আমার বাসাতেই আছে। বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে,মনে হয় এতো তাড়াতাড়ি থামবে না ।
– হ্যা! পিয়ালকে তোমার বাসায় রেখে দাও, এই বৃষ্টিতে বাইরে নামার কোনো দরকার নেই।
– জ্বি আন্টি! এইটা জানানোর জন্যই কল দিয়েছিলাম। তা আন্টি রাতে খেয়েছেন।
– না এখনো খাই নি। তোমরা খেয়েছো?
– না আন্টি, এখনই খেতে বসবো। আপনি খেয়ে নিয়েন।
– হ্যা মা খেয়ে নিবো।
– আচ্ছা আন্টি রাখি তাহলে?
– আচ্ছা মা!
মিলা ফোন কেটে দেয়। জামাকাপড় পরিবর্তন করে বের হলো পিয়াল। মিলা টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখলো। পিয়াল,মিলা খেতে বসে পরলো।
পিয়াল- আম্মুকে ফোন দিছিলা?
মিলা – হ্যা! তোমাকে এখানেই থাকতে বললো।
– আচ্ছা।
পিয়াল মিলা খেয়ে উঠলো। মিলা একটা ঔষধ এনে পিয়ালের হাতে ধরিয়ে দিলো।
মিলা – আপনি তো আপনার ঔষধ আনেন নি।
পিয়াল – হ্যা! কে বুঝছিলো এমন বৃষ্টি নামবে।
– যাই হোক! খেয়ে নিন এটা। আমার কাছে ছিলো।
– হুম্ম দাও।
পিয়াল হাত বাড়িয়ে ঔষধটা নেয়। ঔষধটা খেয়ে নেয় পিয়াল। রুমির সেই ঘটনার পর থেকেই এই ঔষধটা খেয়ে আসছে। ভালো ঘুমের জন্য ডাক্তার এই ঔষধটা দিয়েছিলেন। পিয়ালকে অন্য একটা রুমে যায় মিলা।
মিলা – এখন লক্ষী ছেলের মতো শুয়ে পরেন।
পিয়াল – তুমি ঘুমাবা না?
– হ্যা ঘুমাবো তো! তুমি ঘুমাও।আমি আমার রুমে ঘুমাবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে। শুভরাত্রি।
– শুভরাত্রি।
পিয়াল পাশ ফিরে শোয়।মিলা রুমের আলো নিভিয়ে তার রুমে চলে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমের দেশে পা বাড়ায় পিয়াল।
–
পিয়াল, মিলা একটা খোলা রাস্তায় হাটছে, একে অপরের হাত ধরে। হঠাৎ করেই একটা রুমের মধ্যে চলে আসে পিয়াল,মিলা। কোথা দিয়ে বা কিভাবে আসলো তা বুঝতে পারলো না তারা। রুমের ফ্যানের সাথে রুমির বোন টিয়ার লাশটা ঝুলছে।তাঁর চোখদুটো যেনো মাথা থেকে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে। একটু পরেই দূর থেকে ভাইয়া নামে কেউ একজন ডাক দিলো। পিয়াল মনোযোগ দিয়ে দেখলো দূরে তামান্না দাঁড়িয়ে আছে।এক হাতে একটা রক্তমাখা চাকু। অন্য হাত থেকে ফিনকী দিয়ে রক্ত ঝরছে। পিয়াল, মিলাকে নিয়ে পালানোর জন্য মিলার হাত ধরতে গেলো, কিন্তু সেখানে মিলা নেই। সেখানে…. সেখানে রুমি দাঁড়িয়ে আছে।রুমির থেঁতলানো মাথাটা থেকে মগজ বের হয়ে গিয়েছে,রক্তে রক্তাক্ত রুমির মুখ। কিন্তু মিলা কোথায়? পিয়াল মিলাকে খোঁজার জন্য তামান্নার দিকে তাকায়। মিলা,তামান্নার পাশেই দাঁড়ানো। তামান্নার রক্তমাখা হাতটা মিলার একটা হাত ধরে আছে। তামান্না কি করতে যাচ্ছে তা ভেবে পাচ্ছে না পিয়াল। তামান্না, মিলার হাতটা একটু উপরে উঠালো। পিয়াল কিছু একটা বুঝতে পেরে দৌড়ে মিলার কাছে যেতে চাইলো। কিন্তু পিছন থেকে কোনো প্রচন্ড শক্তি তাকে সামনে এগুতে দিচ্ছে না। পিয়াল পিছে তাকালো, সেখানে রুমি দাঁড়িয়ে আছে। পিয়ালের এক হাত আটকে রেখেছে। পিয়াল নিজের হাত ছাড়িয়ে মিলার কাছে যাওয়ার সব চেষ্টা চালাতে থাকলো। হঠাৎ করেই মিলার চিৎকার। পিয়াল, মিলার দিকে তাকালো। মিলার হাত থেকে রক্ত ঝরছে। একটু পরেই মিলার দেহটা মাটিতে গড়িয়ে পরলো।
–
পিয়াল,মিলা বলে চেঁচিয়ে উঠে বসে পরে।পাশে মিলাকে বসে থাকতে দেখে একপ্রকার চমকে যায় পিয়াল।মিলাকে সজোরে জড়িয়ে ধরেই বাচ্চাদের মতো কান্না জুড়ে দেয় পিয়াল। মিলা বুঝতে পারলো, হয়তো আবারও তাকে নিয়েই কোনো আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছে। মিলাও পিয়ালকে জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষন এভাবেই দুজন, দুজকে জড়িয়ে থাকলো,পিয়াল কান্না করেই চলছে। এইবার মিলা, পিয়ালের মাথাটা নিজের কাঁধ থেকে তুলে সামনে আনলো। পিয়াল কান্না করে চোখ-মুখ ভিজিয়ে ফেলেছে, অসহায় লাগছে তাকে। দুজন – দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। পিয়াল এই প্রথম মিলাকে এতো কাছ থেকে দেখছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিলার ঘন গরম নিশ্বাস আছড়ে পরে পিয়ালের ঠোঁটে। সব কিছু যেনো কিছুক্ষনের জন্য থমকে যায়। পিয়াল, মিলাকে টেনে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে।
বাহিরে ঝরছে অঝোর বৃষ্টি, মাঝে মাঝে দু-একটা বাজ পরছে এর মধ্যেই জন্ম হলো নতুন এক ভালোবাসার।যেনো এক অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা। শুধুমাত্র এই নতুন দুজন ভালোবাসার দূতকে স্বাগতম জানানোর জন্যই।
চলবে