গল্পঃ “heart touch love 3” পর্ব:- ০৩

0
1990

গল্পঃ “heart touch love 3”

পর্ব:- ০৩

১৬ই জুন ২০১৫,
পিয়াল আজকে ভার্সিটিতে অনেক আগেই উপস্থিত। এতো তাড়াতাড়ি কখনই আসে না, কিন্তু আজকে এসেছে। ভার্সিটির গেইটের সামনে বসে রুমির আসার অপেক্ষা করছে। রুমির উপরে বিশ্বাস নেই আজকে যদি আবার না আসে, তাহলে? পিয়াল তৎক্ষণাৎ পকেট থেকে মোবাইল বের করে রুমির নাম্বারটা ডায়েল করে। রিঙ হচ্ছে কিন্তু রুমি ফোন তুলছে না। পিয়ালের আরো বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ফল একই দাঁড়ায়।
দেখতে দেখতে ক্লাসমেট সবাই এসে গিয়েছে। কিন্তু রুমির দেখা নাই। পিয়াল আবারো কল দেয় রুমির ফোনে, কিন্তু চেষ্টা বৃথা। একপ্রকার রাগ করেই ক্লাসে ঢুকে পরে পিয়াল।
প্রায় একঘন্টা পরেই পিয়ালের ফোনে রুমির ফোন থেকে কল আসে। পিয়াল ক্লাসের মধ্যেই কলটা রিসিভ করে –
পিয়াল- হ্যালো! রুমি।
রুমি- হ্যা বল!
– কই তুই?
-আমি বাসায় মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।
-এতো দেরিতে কেনো?
-আর বলিস না, কালকে বন্ধুদের সাথে একটু গিলতে গেছিলাম।তাই সকালে উঠতে পারি নি।
-তুই ভার্সিটিতে আসবি না?
-ইচ্ছা তো নাই!!
-তোর সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। তুই ভার্সিটি আসলে ভালো হতো।
– কি কথা? ফোনেই বল।
-ভার্সিটি আয়। সামনা-সামনি বলবো।
-আচ্ছা ৩০ মিনিটের মধ্যেই আসতেছি।
-আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়। রাখলাম।
-আচ্ছা।
ওপাশ থেকে রুমিই ফোনটা কেটে দেয়।
প্রায় ৪০ মিনিট পরে আবারো পিয়ালের ফোনে রুমির ফোন থেকে কল আসে –
রুমি- হ্যালো পিয়াল, বের হ! আমি ক্যাম্পাসেই আছি।
পিয়াল -আচ্ছা দারা আসতেছি।
পিয়াল বই-খাতা সব ব্যাগে তুলে নেয়।অতঃপর ক্লাসের পিছনের দরজা থেকে বের হয়ে যায়। বের হতে না হতেই রুমিকে ভার্সিটির মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। হয়তো কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। পিয়াল দৌড়ে রুমির কাছে যায়।
রুমি – কি খবর? (হাত মিলিয়ে)
পিয়াল- এইতো! ফোনে কথা বলা শেষ কর।
রুমি- আচ্ছা একটু দাঁড়া। হ্যালো, জান। হ্যা! তোমার সাথে একটু পরে কথা বলি সোনা? আই লাভ ইউ, বায়।
ফোন কেটে দিয়ে পিয়ালের মুখের দিকে তাকায় রুমি।
রুমি- হ্যা বল, কি এমন জরুরী কথা।
পিয়াল – চল সামনের গাছতলায় গিয়ে বসি।
রুমি- হ্যা চল।
রুমি এবং পিয়াল সামনের একটা গোড়া বাধানো গাছের নিচে গিয়ে বসে।
পিয়াল- এবার তোর ফোনটা কিছুক্ষনের জন্য সুইচ অফ রাখ।
রুমি -ক্যান বলতো।
-যা বলছি তা কর।
-আচ্ছা করতেছি।
ফোন সুইচ অফ করে রুমি।
রুমি – এখন বল।
পিয়াল – তোর সাথে কি তামান্নার ব্রেকাপ হইছে?
-হ্যা! কালকে শেষ কথা বলছিলাম, এরপর ব্লাকলিষ্টে নাম্বার রেখে দিছি।মনে নাই তোর? তুই তো আমার সাথেই ছিলি তখন।
-ব্রেকাপ করার কারনটা কি ছিলো?
-ওরে বাবা! পিয়াল দেখি আমার কাছে ব্রেকাপের কারন জানতে চাচ্ছে। ব্যাপার কি বল তো?
-আমি যা জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর দে শুধু।
-আরে ভাই! এক মাল আর কতোদিন? নতুন একটারে পটাইছি। সেই দেখতে। দেখবি?
-না থাক। কিন্তু তামান্না তোরে ভালোবাসে।
-তো? আমি কি করবো?
-ওর সাথে এমন কেনো করলি? ধোকা দিলি কেনো?
-আচ্ছা তোর সাথে তামান্নার কথা হয়েছে নাকি?
-হ্যা! গতকালকে তামান্না আমাকে রমনায় ডেকেছিলো। তখন অনেক কান্নাকাটি করেছে।
-ও আচ্ছা! তাই বলি! আচ্ছা বাদ দে। ছেড়ে দিছি তো দিছি। এখন আর কিছু করার নেই।
-কিন্তু তাই বলে এভাবে ধোকা দিবি?
-পিয়াল,তোর সমস্যাটা কোথায়? হ্যা আমি দিছি। আমার ভালো লেগেছে আমি দিছি।আর এটা তো আমার পার্সোনাল ব্যাপার তাই না? তুই কেনো এর ভিতরে ঢুকছিস? আজকে একটা মেয়ের কাছে আমাদের বন্ধুত্বটাকে ছোট করে দিলি? আমাকে প্রশ্ন করতেছিস?
-কিন্তু তোর এই কাজটা করা উচিৎ হয় নি। আমি আমাদের বন্ধুত্ব ছোট করছি না, আমি তোকে ভূলটা দেখাচ্ছি। আর এইটা তোর ভূল। একটা মেয়েকে শুধু শুধু স্বপ্ন দেখিয়ে তা ভাঙ্গার কোনো অধিকারই তোর নেই।
-তুই আমাকে স্বপ্ন ভাঙ্গার কথা বলছিস? তুই কতোটুকু ভালো বল তো? তুই তো আমার থেকেও বেশি। আগে নিজেকে ঠিক কর পিয়াল, এরপর অন্যকে ঠিক কর। কেমন?
-রুমি, আমি এমন মেয়েদের সাথে রিলেশন করি যারা অন্যকে ঠকায়। কিন্তু তামান্না তো নির্দোষ। ওকে কেনো কষ্ট দিচ্ছিস? তুই একটা চিটার মেয়ের সাথে রিলেশন করে তাকে ধোকা দিতি আমি কিচ্ছুই বলতাম না। কিন্তু ও তো কারো ক্ষতি করে নি। বরং তোকে ভালোবেসে আজকে নিজের ক্ষতিটাকেই ডেকে এনেছে।
-থাম ভাই! প্লিজ! আমি এই নিয়ে আর একটাও কথা শুনতে চাই না। যদি তোর ইচ্ছে হয় তাহলে তুই গিয়ে রিলেশন কর আর মেয়েটাকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচা। আমার এর প্রতি কোনোই ইন্টারেস্ট নেই। প্লিজ ভাই! মাফ চাই।
-রুমি মাফটা তামান্নার কাছে চাইলে খুবই ভালো হতো। একদিন তুই তোর ভূলটা ঠিকই বুঝতে পারবি।
-আমি ভূল বুঝবো কিনা সেইটাও আমার ব্যাপার, দয়া করে আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে তোমার না ঘাটাই উত্তম হবে। আমার আর কিছু শুনতে ইচ্ছে করছে না। আমি যাচ্ছি।
পিয়াল নিশ্চুপ বসে আছে, রুমি ব্যাগ নিয়ে ভার্সিটির গেইটের দিকে অগ্রসর হলো। পিয়াল অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলো। তামান্নার জন্য কিছুই না করতে পেরে পিয়ালের খুবই খারাপ লাগছে। সে জানে না তামান্নার কি হবে। হয়তো এই দাগ নিয়ে তার সারাজীবন কাটাতে হবে। পিয়ালের কিছুই ভালোলাগছে না । উঠে দাঁড়ালো পিয়াল,কাঁধে ব্যাটটা নিয়ে গেইটের দিকে অগ্রসর হলো। মাথাটা ব্যাথা করছে পিয়ালের। তামান্না রুমির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে কি বলবে? তামান্না এইসব কথা শুনে কি করবে? এইসব ভেবে পিয়ালের আরো বেশি মাথা ব্যাথা করছে।পিয়ালের ফোন বেজে ওঠে। জেরিন কল দিয়েছে –
পিয়াল- হ্যালো!
জেরিন- হ্যালো বাবু!
-হ্যা বলো।
-কি করো?
-এইতো ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছি।
-ওওও!
-হ্যা! বাসায় গিয়ে ফ্রী হয়ে কল দিচ্ছি তোমাকে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোন কেটে দিয়ে একটা বাসে উঠে পরে পিয়াল।
বাসায় এসে কাঁধ থেকে ব্যাগটা বিছানার উপরে ছুড়ে মারে পিয়াল। এরপর নিজেকেও এলিয়ে দেয় বিছানার উপড়ে।যদিও একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে। ঘুমালে হয়তো মাথা ব্যাথাটা কমে যাবে। একটু ফেইসবুকে ঢুকে পিয়াল।ভার্সিটির একটা গ্রুপে কয়েকটা বন্ধু পোষ্ট করেছে, কালকে থেকে টানা ৮ দিন ভার্সিটি বন্ধ থাকবে। পিয়াল পোষ্টটা দেখে একটু মুচকি হাসলো, ফোনের স্ক্রিন অফ করে চোখ বুঝলো ঘুমানোর চেষ্টায়।
একটু ঘুমাতে না ঘুমাতেই পিয়ালের আম্মু ডাক দিলো পিয়ালকে। –
পিয়ালের মা- পিয়াল, খেয়ে ঘুমা।
পিয়াল – ঘুম থেকে উঠে খাবো আম্মু।যাও তো এখন। (ঘুম জড়ানো কন্ঠে)
পিয়ালের মা- না ঠান্ডা হয়ে যাবে। এখন খেয়ে নে। এরপর ঘুমা।
পিয়াল – আচ্ছা যাও আমি আসছি।
পিয়াল উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে-মুখে পানি দেয়। এরপর খাওয়ার টেবিলে গিয়ে বসে পরে।
খেয়ে উঠে আবারো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। চোখ বুঝে ভাবতে থাকে, বিকালে ঘুম থেকে উঠে আড্ডা মারতে যাবে বন্ধুদের সাথে। একটু পরেই ঘুমের জগতে পা বাড়ালো পিয়াল।

চলবেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে