গল্পঃ “heart touch love 3”
পর্ব- ০২
বিকাল ৪টা ৫০ মিনিট,
পিয়াল রমনার ২য় গেইটের সামনে এসে রিক্সা থেকে নামলো। ভাড়া মিটিয়ে গেইটের সামনে চলে গেলো পিয়াল।যদিও এখানে কেউ নেই দু একজন পথচারীকে দেখা যাচ্ছে কিন্তু কোনো মেয়ে নেই। ফোনটা বের করে অপরিচিত নাম্বারটায় কল দিলো পিয়াল-
পিয়াল-হ্যালো!
ফোনের ওপাশ থেকে- দুই মিনিট দাঁড়ান আমি এসেই পরেছি।
-আচ্ছা একটু তাড়াতাড়ি আসুন।
-হ্যা! কিন্তু আপনি কয় নাম্বার গেইটে?
-আমি দুই নাম্বার গেইটে।
-আচ্ছা পাচঁ মিনিট, আমি এসে পরেছি।
মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে ফোনটা কেটে দেয় পিয়াল। ফুটপাতের একটা চায়ের দোকান থেকে সিগারেট ধরায়। দোকানের পাশে রাখা বেঞ্চিতে বসে পরে। পায়ের উপর পা তুলে সিগারেট ফুগতে থাকে। প্রায় দশ মিনিট পরে একটা রিক্সা এসে থামে গেইটের সামনে,রিক্সায় যাত্রী হিসেবে একটা অচেনা মেয়ে ছিলো। যদিও পিয়াল একটু দূরে ছিলো গেইট থেকে। কিন্তু পিয়াল ঘটনাটা দেখছিলো। মেয়েটা রিক্সায় বসেই ভাড়াটা দেয়, এরপর রিক্সা থেকে নেমে গেইটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হাতে একটা ব্যাগ, ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে কাউকে কল করছে মনে হয়। হঠাৎ পিয়ালের ফোন বেজে উঠলো। পিয়াল কলটা রিসিভ করলো-
ফোনের ওপাশ থেকে- পিয়াল ভাইয়া! আপনি কোথায়?
পিয়াল- আমি আশে পাশেই আছি। আপনি হলুদ ড্রেস আর কালো একটা হিজাব পরে আছেন, তাই না?
-হ্যা! আপনি কোথায়?
পিয়াল ফোনটা কেটে দিয়ে দোকানীর বিল মেটায়।এরপর উঠে দাঁড়ায়, আস্তে আস্তে হেটে মেয়েটার সামনে এসে দাঁড়ায়। মেয়েটার বয়স ১৯ কি ২০ হবে। চোখের নিচে কালো দাগ পরেছে। মনে হচ্ছে বেশ কয়েকদিন ঘুমায় নি। বাহির থেকেই বুঝা যায় মেয়েটা ভালো নেই। হয়তো কোনো মানষিক চাপের ভিতরে আছে। খুব চিন্তিতও মনে হচ্ছিলো।
পিয়াল-এখন আপনার পরিচয় বলুন।
অচেনা মেয়েটি- হ্যা সব বলবো! চলুন পার্কের ভিতরে গিয়ে বসি।
-দেখুন আমি আপনার সাথে আড্ডা মারতে আসি নি। যা বলার একটু তাড়াতাড়ি বলুন, আমার কাজ আছে।
-আমি অত্যন্ত পরিমাণ দূঃক্ষিত আপনাকে এতো ব্যস্ততার ভিতরে এখানে ডেকেছি।কিন্তু আমার কিছুই করার ছিলো না। প্লিজ ভাইয়া রাগ করবেন না।
-আচ্ছা আচ্ছা চলুন ভিতরে গিয়ে বসি।
পিয়াল আর অচেনা মেয়েটি পার্কের ভিতরের একটা বেঞ্চিতে গিয়ে বসলো।
অচেনা মেয়েটি -আমি জানি না কথাটা কিভাবে শুরু করবো।কিন্তু…
পিয়াল- ন্যাকামো বাদ দিবেন প্লিজ? যা বলার সরাসরি বলুন।
-আমার নাম তামান্না।
-আচ্ছা।
-আমি আপনার বন্ধু রুমির গার্লফ্রেন্ড।
-তো? আমি কি করবো? এইটা বলার জন্য এখানে ডেকেছেন?
-না না ভাইয়া!
-তাহলে?
-আমি রুমির গার্লফ্রেন্ড ছিলাম, এখনো আর ভবিষ্যতেও থাকতে চাই।
-দেখুন এইটা আপনার আর রুমির ব্যাপার, আমাকে কেনো ডেকেছেন সেইটা বলুন।
-কিন্তু রুমি আমাকে তার জীবন থেকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে।
-এটাও তো আপনাদের ব্যাপার তাই না?
-হ্যা! কিন্তু আমি তো রুমিকে ভালোবাসি। রুমিও আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু হঠাৎ করে রুমির ভিতরে একটা পরিবর্তন আসে। আর, আর আমাকে সময় দেয়া বন্ধ করে দিতে থাকে আস্তে আস্তে। একদিন হঠাতই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করে। আমার সাথে তার যে সম্পর্কটা ছিলো সেইটাও বিচ্ছেদ করতে বলে।রুমিকে ভুলে যেতে বলে। কিন্তু আমি তো এমন কোনো ভূলই করি নি যার কারনে সে আমাকে এতো বড় একটা শাস্তি দিবে।
তামান্না কেঁদে ফেলে।পিয়াল এক দৃষ্টিতে তার কান্না করা দেখতে থাকে। জীবনে পিয়াল কোনো মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখে নি। তার রিলেশনেও ব্রেকাপ হয়েছে, কিন্তু কোনো মেয়েই এভাবে তার জন্য কাদে নি। এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে পিয়ালের। মন চাচ্ছে মেয়েটাকে বুকে টেনে শান্তনা দেই। কিন্তু না এতে মেয়েটা বুঝবে সুযোগে সৎ ব্যবহার করছি। তাই নিরবে দেখে যাওয়াটাই উত্তম হবে।
পিয়াল- আপনার সাথে রুমির সম্পর্কের ব্যপারে আমি শুনেছি। আপনার নাম বলছিলো আমার কাছে। কিন্তু আপনাকে কখনোই দেখায় নি বা আমিই দেখতে চাই নি। আমি জানি না এই অবস্থায় আপনাকে আমি কিভাবে শান্তনা দিবো। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমাকে, আপনার আর রুমির সম্পর্কের ব্যাপারে শুরু থেকে একটু বলতে পারবেন?
তামান্না- হ্যা অবশ্যই! (চোখ মুছতে, মুছতে)। রুমির সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো মাত্র পাঁচ মাষ ১৩ দিনের।দিনটা ছিলো অক্টবরের দুই তারিখ-, আমি আমার কলেজের সামনে প্রায়ই একটা ছেলেকে দাঁড়ানো দেখতাম। একদম হঠাতই ছেলেটার আগমন ঘটে। প্রতিদিনই ছেলেটা দাঁড়ানো থাকতো, আমার কলেজ ছুটি হলে আমি যখন বাসায়র উদ্দেশ্যে রওনা দিতাম তখন ছেলেটা আমাকে ফলো করতো। এইরকম প্রায় একমাস আমাকে ফলো করেছিলো।আমি আমার বান্ধবীদের কাছ থেকে ছেলেটার নাম জানতে পারি।ছেলেটার নাম ছিলো রুমি। কিন্তু আমাকে ফলো করার ব্যাপারটায় আমি তেমন কোনোই গুরুত্ব দিতাম না। কারন আমার লক্ষ ছিলো আমার ক্যারিয়ার। নভেম্বরের ২৮ তারিখ ছিলো আমার জন্মদিন।আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। তখন দেখলাম ছেলেটা হঠাৎ কোথা থেকে এসে উদায় হলো। আমি আর আমার বন্ধুরা ঘোরার জন্য একটা পার্কে ঢুকলাম। রুমিও আমাকে ফলো করতে করতে পার্কের মধ্যে এসে গেলো। তখন পার্কে বসেই হাটু গেড়ে আমাকে প্রস্তাব দেয়।আমার সব বন্ধুরা হাত-তালি দিতে থাকলো। তখন বুঝলাম এইটা রুমি আর আমার বন্ধুদেরই প্লান ছিলো। যদিও আমি তখন কিছু না বলেই রাগ করে বাসায় চলে আসি। কিন্তু রাতে কি যে হলো, হঠাৎ হঠাৎ রুমির কথা মনে পরতো। এরপর কোথা দিয়ে কি হয়ে গেলো তা নিজেও জানি না।
*একজন পার্ক গার্ডের আগমন ইতোমধ্যে –
পার্ক-গার্ড :- মামা পাঁচটা বাজে। পার্ক বন্ধ হবে এখন।
পিয়াল -আচ্ছা মামা, যাচ্ছি। চলেন তামান্না বের হয়ে হাটি আর কথা বলি।
তামান্না -হ্যা চলুন।
পিয়াল এবং তামান্না পার্ক থেকে বের হলো।
পিয়াল-হ্যা! তারপর বলুন।
তামান্না – রিলেশনের প্রথম দিকে রুমি আমার অনেক দেখাশুনা করতো। অনেক ভালোবাসতো, জানি না তা অভিনয় নাকি সত্যিই ছিলো। কিন্তু ওর উপর আমার অন্ধ বিশ্বাস ছিলো। আমার মনে হয় তখন আমাকেই সবচেয়ে বেশি সময় দিতো। আমাকে কলেজে দিয়ে যেতো,আবার কলেজ থেকে বাসায় এগিয়ে দিয়ে যেতো। মাঝে মাঝে আমি রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দিলে কান্নাকাটিও করতো। রিলেশনের দুইমাস পরেই ওর নামে নানানরকম আজেবাজে কথা শুনতে শুরু করি।কেউ কেউ বলতো আমার আগেও নাকি ওর অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু এই বিষয় আমি পুরোই ইগনোর করি। এমনকি এই বিষয়ে আমি রুমিকে কোনরকম প্রশ্নও করি নি। আমি ভাবতাম সব মিথ্যে শুধুমাত্র রুমিই একমাত্র সত্য। খুব অল্প সময়ের ভিতরেই আমি রুমিকে এতোটাই ভালোবেসে ফেলি তা নিজেরও ধারণার বাহিরে। তখন রুমিকে ছাড়া কিচ্ছুই বুঝি না আমি এমন অবস্থা। পড়ালেখার কথা বাদই দিলাম, কোনো কাজই ঠিকমতো করতে পারতাম না। সব যায়গায় যেনো রুমির ছায়া দেখতে পেতাম। আমাকে বিয়ে করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলো। আর আমি বোকার মতো তা বিশ্বাস করেছিলাম।হয়তো আমার ভূল ছিলো সেই বিশ্বাসটাই করা, যার যোগ্য নয় রুমি।এভাবে ৪ মাষ সব কিছুই ভালো চলতেছিলো। আমি আমার সবটুকুই দিয়ে ভালোবেসে ছিলাম রুমিকে। যখন যা করতে বলতো তাই করতাম, যখন যা করতে চাইতো তাই-ই করতে দিতাম। একদিন আমি আর রুমি একটা রেস্টুরেন্টে বসে ছিলাম।তখন আমার কাছে ওর ফোন দিয়ে ওয়াসরুমে যায়। তখন আপনার নাম্বারটা আমি রেখে দেই।ফেইসবুকে আপনার সাথে ওর ছবি দেখেছি। আর আপনি ওর খুব ক্লোস একটা ফ্রেন্ড সেইটা বুঝতে পেরেছিলাম। নাম্বার নেয়ার কারনটা যে ভবিষতে এমন হবে তা বুঝতে পারি নি।আমি ভেবেছিলাম আপনাকে ফোন দিয়ে ওর খোজ খবর নিবো। কিন্তু আজকে তার বদলে আপনাকে আমাদের সম্পর্কের অন্তিম সময়টা বর্ণনা করতেছি। সত্যিই জীবনটা কতোটাই অদ্ভুত(দীর্ঘশ্বাস)।
পিয়াল- তারপর কি হয়েছিলো?
তামান্না- ও হ্যা! তারপর হঠাৎ করেই রুমির ভিতর পরিবর্তন ঘটে। কেনো বা কিসের জন্য বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ করে দেয়। আমি জানি না কেনো ও আমার সাথে এমনটা করেছে। এমন একটা নাটক করার জন্য আমাকেই কেনো…..?(কেদেঁ দেয় তামান্না)
পিয়াল পকেটে হাত দিয়ে একটা পকেট টিস্যু-পেপারের প্যাকেট বের করে। প্যাকেট থেকে একটা টিস্যু তামান্নার দিকে এগিয়ে দেয়। তামান্না টিস্যুটা হাতে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলে-
তামান্না – গত এক সপ্তাহ আগ থেকে আমার সাথে খারাপ-বাজে ব্যাবহার করা শুরু করে রুমি। আজকে সকালেও অনেক আজে বাজে ব্যাবহার করে। এরপর নাম্বারটা ব্লাকলিষ্টে ফালায়। অনেকবার কল দিছি,কিন্তু নাম্বার ব্যস্ত বলে। সেই গত এক সপ্তাহ থেকে ডিপ্রেশনে ভুগছি। না পারতেছি রাতে ঘুমাতে না পারতেছি কিছু খেতে। কিছুই ভালোলাগে না। মাঝে মাঝে হয় মারা যাই। কি করবো কিছুই বুঝতে পারতেছিলাম না। না পারছিলাম কারো সাথে বলতে না পারছিলাম নিজে সহ্য করতে। নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করে আপনাকে কল দেয়। আমি জানি রুমি আর আমার কাছে ফিরবে না। কিন্তু আমি কি করবো?কিছুই বুঝতে পারতেছি না। অনেক কষ্ট হয়। আমি জানি এটা আবেগ না এটা ভালোবাসা। যার কোনো দাম নেই রুমির কাছে।
পিয়াল-আপনি রিলেশন করার আগে ওর সম্পর্কে একবারও খোঁজ-খবর নিলেন না কেনো?
তামান্না- আমি ভেবেছিলাম আমার জন্য যে এতো কিছু করে সে আমাকে ধোকা দিবে কেনো? আমি আসলেই তখন বুঝতে পারি নি।(কান্না করতে করতে)
পিয়াল- আচ্ছা এখন চোখ মুছুন। চলুন কিছু খেয়ে নেই।
তামান্না – না, আমার কিছুই ভালো লাগছে না। এখন আমার জন্য বাসায় যাওয়াটাই ভালো হবে।
-আচ্ছা চলুন এগিয়ে দেই আপনাকে।
-না থাক। ধন্যবাদ, আমি একাই যেতে পারবো।তবে একটা কথা,আমার ভালোবাসাটা শুধু বুঝতে বইলেন ওরে। আর কিছুই চাই না আমি।
-হ্যা আমি আমার সর্বশেষ চেষ্টা চালাবো।
-আমাকে একটা রিক্সা করে দিতে পারলে ভালো হতো।
-হ্যা, একটু দাঁড়ান দয়া করে। আমি দেখছি।
পিয়াল একটা রিক্সা ডাক দেয়।
তামান্না – আপনাকে কষ্ট দিলাম, অনেকটা সময় নষ্ট হলো আপনার। আমি আসলেই দুঃক্ষিত।ক্ষমা করে দিয়েন ভূল হলে।
পিয়াল- না না ঠিক আছে। দুঃক্ষিত তো আমাকে বলা উচিৎ। এইরকমটা আমার সাথে হলে আমিও একই কাজ করতাম। আচ্ছা সাবধানে যাবেন। বায়।
-আচ্ছা, বায়।
তামান্না রিক্সায় উঠে পরে। রিক্সা চালক রিক্সা সামনের দিকে নিয়ে যায়। পিয়াল রিক্সার দিকে তাকিয়ে তামান্নার চলে যাওয়াটা একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে। তামান্নার রিক্সা পিয়ালের চোখের বাহিরে চলে যায়। পিয়াল একটা বাসে উঠে পরে। একটু তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরতে চায়।খুব খিদেও পেয়েছে।
বাস থামিয়ে, বাস থেকে নামে পিয়াল। সোজা বাসায় চলে যায় পিয়াল। আজকে আর আড্ডা দিবে না সে।
বাসায় ঢুকে ফ্রেস হতে যায় ওয়াশরুমে। ফ্রেস হয়ে বের হয়, ফ্রিজ খুলে একটা আপেল নিয়ে বারান্দায় যায়। কামড়ে কামড়ে আপেলটা খাচ্ছে আর ভাবছে কালকে ভার্সিটিতে গিয়ে রুমির সাথে কথা বলতে হবে…..
চলবেই