গল্পঃ “heart touch love 2”
৩য় পর্ব:
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা প্রায়!! পশ্চিম
আকাশে ডোবার অপেক্ষায় সূর্য!!! দিনের সেই
তপ্ত আলো এখন নেই!! কিন্তু এই
গোধূলী লগ্নে সূর্যের লাল আভা আর আকাশের নীল
রঙ মিলে এক অদ্ভুত আবহ তৈরী করেছে পশ্চিম
আকাশে!!! জানালার পাশে বসে আছে সিহাব!!
বসে বসে বাড়ির সবার আনন্দ উৎসব দেখছে!!!
আসলে আত্মীয়-স্বজন সবাইকে কখনোই
একসাথে এমন আনন্দ করতে দেখেনি সে।। এই দেখার
মাঝেই যেন আনন্দ খুজে পেয়েছে সিহাব!! বিয়ের
যদিও আরোও একদিন বাকি কিন্তু গ্রামের
বিয়ে বলে কথা!!! বিয়ের তিন/চার দিন আগে থেকেই
শুরু হয়েছে উৎসব।। সেই উৎসবের অংশ হিসেবেই
আজকে নানা ধরনের পিঠা বানানো হচ্ছে এখানে!!!
হঠাৎ করেই সিহাবের চোখ পড়ল নিধির দিকে!! আজ
বাদে কাল বিয়ে কিন্তু ওর মুখে তার বিন্দু মাত্র
ছাপ নেই!! সেই আগের মতই
দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে ও!! হাসছে, কথা বলছে ঠিক
সেই আগের মতই!!! তাহলে কি গ্রামের মেয়েগুলোও
মর্ডান হয়ে গেলো শহুরে মেয়েদের মত??? ভাবনায়
ছেদ ঘটালো কারো পায়ের শব্দ!!! পাশ ফিরে দেখল
নিধি এসেছে তার ঘরে!! হাতে খাবারের প্লেট!!
সিহাবের দিকে তাকিয়ে ঠায় দাড়িয়ে আছে!!! চোখে-
মুখে সেই উজ্জলতা!!! সিহাব বলল,
– কিরে দাড়িয়ে আছিস কেন??
নিধি কিছু না বলে প্লেটটা রেখে দাড়িয়েই থাকল
আগের মত!!সিহাব আবার বলল,
– কিরে কিছু বলবি??
নিধি হ্যা সূচক মাথা ঝাকালো।।
– আচ্ছা, তাহলে বসে বল!!
নিধি সিহাবের কথা শুনে খাটের এক কোনে বসল!!
তারপর সিহাবকে জিজ্ঞেস করল,
– এতক্ষন কি ভাবছিলে ভাইয়া??
– সত্যি করে বলবো??
আবার মাথা ঝাকালো নিধি!!
– তোর কথা!!
– আমার কথা??
– হ্যা
– ও!!
– কি ভাবছিলাম জানতে চাইলি না??
– কি ভাবছিলে??
– এই যে তোর বিয়ে হয়ে যাবে!! দূরে চলে যাবি!!
এগুলোই আরকি!!!
– হইছে এবার আমার কথা রেখে নিজের
কথা ভাবেন!!! নিজের মনে হয় বিয়ে হবে না!!!
– আরে আমার বিয়েতো অনেক দেরী!!
তাছাড়া আমি তো আর তোর মত
দূরে চলে যাবোনা!!
– হুম
– আচ্ছা নিধি, তুই সবাইকে ছেড়ে চলে যাবি, তোর
কষ্ট হবেনা??
– তা তো হবেই!! কিন্তু হলেই বা কি করার আছে??
সব মেয়েদেরই একদিন পরের বাড়ি যেতে হয়!!! তাই
আমারো যেতে হচ্ছে!!
নিধির সাথে কথা বলে সিহাব বুঝতে পারল আগের
মত সেই ছোট্টটি নেই নিধি!! এখন অনেক বড়
হয়েছে!!! সিহাব আবার নিধিকে বলল,
– আচ্ছা, তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি??
– করো
– তুই যাবার সময় কাদবি না??
– কেদেঁ কি লাভ?? কাদঁলে কি বিয়ে বন্ধ
হয়ে যাবে নাকি আমাকে এ বাড়িতে রেখে যাবে??
আজিব!!!
বলেই নিধি চলে গেলো!!! শেষের “আজিব”
শব্দটা অন্যকোন সময় শুনলে সিহাব বেশ অবাকই
হতো!! কিন্তু এখন হলোনা!! কারন সে জানে এই
একদিন মিমের সাথে থেকেই এই
শব্দটা শিখেছে নিধি!!! এখন শ্বশুর বাড়ির
কারো সামনে না বললেই হলো!!!
নিধি যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই ঘরে ঢুকল মিম!
ওকে আজ পুরো-পুরি গ্রামের মেয়ের মত লাগছে!!!
গ্রামের সাজে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে পাগলীটাকে!!
ঘরে ঢুকে সিহাবকে উদ্দেশ্য করে প্রায় চেচিয়েই
বলল,
– কিরে গাধা!!! এই সময় ঘরে বসে আছিস কেন??
– ইচ্ছা হইছে তাই!! তুই ষাড়ের মত চিল্লাছিস
কেন??
– ওই শয়তান!! আমি ষাড়ের মত চিল্লাই??
– না ছাগলের মত!! এখন কি বলবি বল??
– বাইরে চল
– বাইরে কোথায়??
– আমার সাথে!!
– কেন??
– আমি যেতে বলছি যাবি!! এত প্যাচাল পারছিস
কেন??
– আমি এখন পারব না!!
– তুই পারবি না তোর ঘাড় পারবে!! চল!!
বলেই সিহাবকে টানতে লাগল মিম!!! সিহাবও
ইচ্ছাকৃত কিছুটা শক্ত হয়ে বসল!! বসে বসে মিমের
টানা-টানি এক রকম উপভোগই করছে ও!!! ওর এই
বাচ্চাদের মত কিছু স্বভাবের কারনে ওকে আরোও
বেশি ভালো লাগে সিহাবের!!! এরকম
আরেকটা স্বভাব হচ্ছে এক রকম কিছু
দেখলে চিমটি কাটা!! কিছুক্ষন টানা-টানির পর
সিহাব শক্ত করে ধরল মিমের হাত দুটো!!!
তারপর ওর চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল
কিছুক্ষন!! হঠাৎ এমন
করাতে মিমের প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে গেলো।।
তারপর আলতো একটা হাসি দিয়ে বলল,
– কি দেখছিস ওমন করে?
– তোকে
– আমাকে এমন করে দেখার কি আছে??
– তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে!!
– আমাকে তো তোর সব সময়ই সুন্দর লাগে!!! এখন
চল, দুজনে মিলে ঘুরব কিছুক্ষন!!
– চল
পুকুরের পাকা ঘাটে পাশা-পাশি বসে আছে সিহাব আর
মিম।। মাঝে মাঝে ঢিল মারছে পুকুরে।। কিছুক্ষন
পর দুজনেই উঠে দাড়ালো!! তারপর পাশা-
পাশি হাটতে লাগল পুকুরের পাশ দিয়ে।।
হাটতে হাটতে বাম দিকে ঘন জঙ্গল আর ডান
দিকে একটা বাধানো পুরনো কবরকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে চলল
ওরা!!! কেন জানি আজ খুব
বেশি ভালো লাগছে মিমের !!কেন জানি অদ্ভুত এক
ভালো লাগা তৈরী হচ্ছে মনে!!! এতদিন পর গ্রামের
বাড়িতে, গ্রামের মেঠো পথ
বেয়ে হাটছে খালি পায়ে!!! আর সাথে আছে তার
ভালোবাসার মানুষটি!! মানুষ না বলে ছাগল বললেই
বোধ হয় ভালো হতো!!! সেই
ছোটবেলা থেকে একসাথে থাকছে অথচ এখনো বুঝতেই
পারেনি যে কেউ একজন তাকে পাগলের মত
ভালোবাসে!!!তানহ া ভাবে, ওকে ছাগল বললেও
ছাগলের অপমান করা হবে!!! কিন্তু দুঃখ না, সুখের
বিষয়ই বটে!! এই মুহুর্তে সিহাব ছাগলটার হাত
ধরেই পরম শান্তিতে গ্রামের মেঠো পথ
ধরে এগিয়ে যাচ্ছে মিম!!! ওর হাতেই যেন
খুজছে আজীবন মেয়াদী সেই প্রকৃত সুখ!! মিমের
এখন শুধু একটাই কামনা!!! সারাটা জীবন চলতে চায়
এই গাধাটার হাতে হাত রেখে!!!!
চলবে….