গল্পঃ “heart touch love 2”
২য় পর্ব
ঘুম থেকে উঠেই গেস্ট রুমের
দিকে পা বাড়ালো মিম!! রুমের
ভেজানো দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই
দেখল এখনো বেঘোরে ঘুমুচ্ছে সিহাব
ছাগলটা!! আজ একসাথে গ্রামে যাওয়ার
কথা সিহাব আর মিমের। তাদের
বাবা-মা আগেই চলে গেছে সিহাবদের
গ্রামের বাড়ি বরিশালে!! ওদের
ভার্সিটিতে কি পরীক্ষা থাকার
কারনে যেতে পারেনি ওরা!! আর যেহেতু
মিম বাসায় একা, তাই সিহাব
গতরাতে মিমদের বাসায়ই ছিলো।।
সিহাবকে ডাকতে যাবার ঠিক আগ
মুহুর্তে মিম একটা বিষয় লক্ষ্য করল!!
যা খুব ছোটবেলা ছাড়া আর কখনোই
দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার!!! আর
সেটি হচ্ছে সিহাবের ঘুমন্ত মুখখানা!!!
কারো ঘুমন্ত মুখে এত
মায়া কিভাবে থাকতে পারে বুঝতে পারেনা মিম!!
ওর খুব ইচ্ছে করছে সিহাবের ঘুমন্ত
মুখটা একটু ছুয়ে দেখতে!! কিন্তু
কি মনে করে যেন
পিছিয়ে গেলো মিম!! সিহাবকে ডাক
না দিয়েই আস্তে করে বেরিয়ে গেলো ঘর
থেকে!! কি জানি?? হয়তো ছাগলটার
আরামের ঘুমটা হারাম করার
ইচ্ছা হলোনা তার!!!
.
বাস ষ্টপেজে এসে মাওয়া ফেরী ঘাটের
পাশা-পাশি দুই সীটের টিকেট
কাটে সিহাব!! তারপর দু,জনেই
বাসে উঠে বসে।। এরকম পাশা-
পাশি বসে প্রায় প্রতিদিনই যাতায়াত
করে ওরা।। কিন্তু আজকে পাশা-
পাশি বসার পর থেকে কেমন যেন এক
অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে মিমের
ভেতরে!!! কি যেন এক অদ্ভুত
ভালো লাগায় ভরে যাচ্ছে বুক!!! কিন্তু
সিহাব তখন সম্পূর্ন অন্য রাজ্যে!!
কানে ইয়ারফোন গুজে বাইরের
দিকে তাকিয়ে আছে সে!!!
মিম বারবার ওর
দিকে তাকাচ্ছে সেদিকে যেন কোন
খেয়ালই নেই তার!!!মিম সিহাবের
চোখের দিকে তাকিয়ে আবার বাইরের
দিকে তাকালো!!!
হয়তো বুঝতে চাইলো সিহাব
আসলে কি দেখছে!! কিন্তু না, সিহাবের
দৃষ্টি যেন এখন কোন নির্দিষ্ট গন্ডির
ভেতর নেই!!! বাসের ছুটে চলার
সাথে সাথে তার দৃষ্টিও যেন
ছুটে চলেছে মাইলের পর মাইল!!!
কি জানি?? হয়তো কিছু ভাবছে!! কার
কথা ভাবছে ও এমন করে???
প্রশ্নটা মনের ভেতর জাগতেই আর চুপ
থাকা সম্ভব হলো না মিমের পক্ষে!!!
সিহাবের কান থেকে ইয়ার-
ফোনটা খুলে নিয়ে বলল,
– ওই!!! কি ভাবছিস??? আমি যে তোর
পাশে বসে আছি সেদিকে কোন খেয়াল
আছে??
– কই?? কিছুনাতো!! ( মিমের
ডাকে কিছুটা চমকে উঠল সিহাব)
– কিছুনা মানে কি?? সত্যি করে বল
কি ভাবছিস??
– এহ…. তুই কে?? যে সব
কথা তোকে বলতে হবে??
কথাটা শুনে হয়তো একটু বেশিই কষ্ট পেল
মিম!! আজকের এমন
একটা দিনে আচমকা এমন
একটা কথা হয়তো আশা করেনি সিহাবের
কাছ থেলে!!
বুকটা ফেটে যেতে চাইছে তার!! কয়েক
সেকেন্ড চুপ থাকার পর অস্ফুট
ভাবে মিম বলল,
– হ্যা, তাইতো!! আমি কে??
মিমের
জড়ানো কন্ঠে কথাটা শুনে সিহাবের আর
বুঝতে বাকি রইল না যে পাগলীটা তার
কথায় কষ্ট পেয়েছে!! সিহাব মিমের
দিকে তাকিয়ে দেখল
সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে !! বাতাস
ওর চুল
গুলো এলোমেলো করে যাচ্ছে অবিরত!!!
সিহাব অবাক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে!!! যেন
এত সুন্দর দৃশ্য সে আগে কখনো দেখেনি!!!
যেন পৃথিবীর যে কোন শিল্পীর নিপুন
হাতে আকাঁ ছবির চেয়েও
আরো অনেক,অনেক বেশি সুন্দর এ দৃশ্য!!!
কিন্তু এ দৃশ্য নিয়ে পরে থাকার
চেয়ে দৃশ্যের অবতারণা কারীর মন
ভালো করাটাকেই হয়তো শ্রেয় মনে করল
সিহাব!! তাই পাগলীটার মন
ভালো করার মহান দায়িত্বে মন-‘
নিবেশ করল সে!!
– কিরে?? রাগ করেছিস???
-…..
– শুনবি না কি ভাবছিলাম??
মিম অন্যদিকে তাকিয়েই বলল,
– আমাকে শুনিয়ে কি হবে??
যাকে ভাবছেন তাকে গিয়ে শোনান!!!
– যাকে ভাবছিলাম তাকেই
তো শোনাতে চাচ্ছি!! কিন্তু
সে তো রেগে গাল ফুলিয়ে বসে আছে!!
-….. (মিম শুধু একবার সিহাবের
দিকে তাকিয়ে আবার মুখ
ফিরিয়ে নিলো)
সিহাব এবার অবাক ভঙ্গীতে বলল,
– আচ্ছা মিম তুই রেগে গেলে তোর
গাল দুটো ফুলে উঠে কেন বলতো?? তোর
গালের ভিতর কি বরই-টরই কিছু
আছে নাকি দেখিতো!!
বলেই সিহাব মিমের গালে হাত
দিয়ে আলতো চাপ দিলো।। ওর
কথা শুনে রাগের মধ্যেও হেসে উঠল
মিম!! আসলে এই শয়তানটার এমন আজব
আজব কথা শুনে কিছুতেই ওর প্রতি রাগ
ধরে রাখতে পারেনা মিম!! মিমের
হাসি দেখে অবাক দৃষ্টিতে তার
দিকে তাকিয়ে থাকল সিহাব!!
পাগলীটার হাসিতে যেন পুরো বাসটাই
মুখর হয়ে আছে!!! হঠাৎ ব্রেকের
ধাক্কায় চমকে উঠল সিহাব।। বাস
মাওয়া ঘাটে এসে পৌছেছে!! দুজনেই
বাস থেকে নেমে ফেরীর
উদ্দেশ্যে সামনের দিকে গেলো!!!
সিহাবের অবস্থাটা এখন দেখার মত!!!
এক হাতে সব ব্যাগ-ট্যাগ নিয়ে আরেক
হাতে ধরতে হয়েছে মিমকে!!!
সিহাবের বাবার কড়া নির্দেশ,
ফেরী ঘাটে কিছুতেই মিমের হাত
ছাড়া যাবেনা!!! এতবড়
ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে নাকি হারিয়ে যাবে ভীরের
মধ্যে!! যত্তসব!!!
.
ফেরীতে উঠে সিহাব আবিষ্কার
করলো বাংলাদেশের নৌ-যানগুলোর
অবস্থা লোকাল বাসের চেয়েও খারাপ!!!
বসার যায়গাতো নেইই দাড়াবার
যায়গাও নেই!!!! দাড়ালে আবার উপরের
ছাদের
কারনে মাথা সোজা করা যায়না!!!!
সিহাব এবার মিমের দিকে তাকালো!!
ওর ও একই অবস্থা কিন্তু লম্বায়
সিহাবের তুলনায় কম হওয়ায়
সোজা হয়েই দাড়াতে পারছে মিম!!
হঠাৎ মিম বলে উঠল,
– সিহাব
– হুম
– চল ছাদে যাই!!
– তুই সাতাঁর জানিস?? – ছাদে যাওয়ার
সাথে সাতাঁর জানার কি সম্পর্ক???
– ছাদ থেকে পরে গেলে কি করবি??
– কেন?? তুই আছিস না!!
– এহ… তুই ইচ্ছে করে পানিতে পরবি আর
আমি এই শীতএর
মধ্যে তোকে পানি থেকে উদ্ধার করবো,
তাই না??
–
আমি কি বলছি আমি ইচ্ছে করে পানিতে ঝাপ
দিবো??? আচ্ছা, তোর এখানে থাকতে মন
চাইলে থাক!!! আমি ছাদে গেলাম!!
বলেই হন হন
করে ছাদে চলে গেলো মিম!! কিছুক্ষন
একা একা থাকার পরে সিহাবের
মনে হলো মিমেএ কথাই ঠিক আছে!!!
এখানে গাদা-
গাদি করে দাড়িয়ে থাকার কোন
মানে হয়না!! তাই সেও
পা বাড়ালো ছাদে যাবার উদ্দেশ্যে!!!
.
ছাদের এক কোনে রেলিংয়ে হাত
রেখে দাড়িয়ে আছে মিম!! নদীর
দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে ও!!
মাঝে মাঝে হাতের মোবাইল
ক্যামেরাটা দিয়ে নদীর
ছবি তুলছে দু,একটা।। সিহাব গিয়ে ওর
পাশে দাড়ালো!!!
সিহাবকে দেখে মিম জিজ্ঞেস করল,
– কিরে ছাদে কেন?? সাতার জানিস???
– হ্যা
– তাহলে ঝাপ দে তো!!!
– পাগল নাকি??
– পাগলই তো!!
– হুম, তোর মত!!
তারপর দু,জনেই কিছুক্ষন চুপ!!! কিছুক্ষন
পর মিম বলল,
– আচ্ছা সিহাব!
সত্যি করে একটা কথা বলবি??
– কি??
– তখন বাসে তুই কি ভাবছিলি??
– তোকে
– মিথ্যা বলছিস কেন??
– আমি সত্যি বলছি মিম
– কিন্তু আমাকে ভাবার কি কোন কারন
ছিলো?? আমিতো তোর পাশেই ছিলাম!!
– কেন?? পাশে থাকলে কি ভাবতে বারন
আছে নাকি??
– না, তা অবশ্য নেই।। আচ্ছা সিহাব
আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করবো??
– কর
– আমার বিয়েতে তুই কি দিবি??
– তোর বিয়েতে?? তোর তো বিয়েই
হবেনা!!!
– মানে কি??
– মানে কিছুনা!! আমার কেন যেন
মনে হচ্ছে তোর বিয়ে হবেন!! তাই
বললাম!!!
– বিয়ে হবেনা কেন??
– কার কাছ থেকে যেন শুনেছিলাম,
অতি সুন্দরী মেয়েদের
নাকি সহজে বিয়ে হয়না!!!
– আমি সুন্দরী তোকে কে বলল??
– অবশ্যই তুই সুন্দরী!! না হলে “কে বলল”
এই প্রশ্নটাও করতি না!!
– তাই নাকি??
– হুম
– সুন্দরী মেয়েদের সম্পর্কে অনেক
জ্ঞান দেখছি!!
– সারাদিন এমন একটা সুন্দরীর পাশা-
পাশি থাকলে জ্ঞান তো থাকবেই!!!
– আচ্ছা তুই কি চাস না আমার
বিয়ে হয়ে যাক??
– না
– কেন বলতো??
– তোর বিয়ে হলে আমার কি হবে???
কথাটা বলেই কোন এক অদ্ভুত
কারনে নীচের
দিকে তাকিয়ে থাকে সিহাব!! মিমের
মুখে সূক্ষ্ম একটা হাসি ফুটে ওঠে!!
যে হাসি চোখে পরেনা সিহাবের,
চোখে পারেনা কারো!!! কেবল
মিম আর তার আল্লাহ ছাড়া আর কেউ
দেখেনা এ হাসি!!
সিহাবকে নিয়ে ভাবনার গভীর
থেকে গভীরতর সমুদ্রে ডুব দেয় মিম!!
এক অদ্ভুত ভালো লাগা দোলা দেয় তার
মনে!!! যে ভালো লাগার কারন তার
নিজের জানা।। তবে সিহাব
কি বুঝতে পারে এ ভালো লাগা গুলো???
সেও কি মিমের কথায় অনুভব করে এমন
ভালো লাগা??? আজ খুব
জানতে ইচ্ছে করছে মিমের!!!
চলবে….