গল্পঃ “heart touch love 2” ১ম পর্ব

2
3444

গল্পঃ “heart touch love 2”

১ম পর্ব

মোবাইলটা ভাইব্রেশন করেই যাচ্ছে!!!
কিন্তু ফোনটা ধরার নূন্যতম ইচ্ছাও যেন
নেই সিহাবের!! অবশ্য এখন
ইচ্ছা থাকলেও কোন উপায় নেই!!! এই
শীতের সকালে কিছুতেই কম্বলের নিচ
থেকে বের হতে পারবে না সে!!
ভাইব্রেশনের কারনে বিছানার পাশের
টেবিলের উপরেই ঘুরতে লাগল
মোবাইলটা !!! এক
মনে সেদিকে তাকিয়ে আছে সিহাব!!!
এত সকালে কে ফোন করতে পারে খুব
ভালো করেই জানা আছে তার!! কিন্তু
কেমন যেনো ঘোরের
মধ্যে পরে গেছে সে!!! চোখের
তন্দ্রা ভাবটা এখনো কাটেনি।। চোখের
সামনে মিমের রেগে যাওয়া আর
ঠান্ডায় ফর্সা গাল দুটোর
আরো ফর্সা হয়ে যাওয়া মুখটা ভেসে উঠল
হঠাৎ করেই!! ভাবনায় ছেদ ঘটালো কিছু
একটা পরে যাওয়ার শব্দ!! ধুর,
মোবাইলটা ঘুরতে ঘুরতে পরে গেছে টেবিলের
উপর থেকে!!
তারাতারি বিছানা থেকে উঠে কোনমতে মোবাইলটা ঠিক
করে রেখেই ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে ঢুকল
সিহাব!!!
.
রাস্তায় বের হয়েই মেজাজটা খারাপ
হয়ে গেলো সিহাবের!! কুয়াশার
কারনে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা ঠিকমত!!
তবুও যথা সম্ভব দ্রুত হাটতে লাগল সে।।
হাটতে হাটতে পকেট
থেকে মোবাইলটা বের করে সুইচ অন করল
সিহাব!!! কানেক্ট করার চেষ্টা করল
মিমকে। রিং হচ্ছে.. কিন্তু
ফোনটা পিক করছে না পাগলীটা!! এত
সকালে এই পাগলামীর কোন মানে হয়!!!
সামনের
মোড়ে এসে একটা রিকশা নিলো সিহাব।
কিন্তু রিকশাও যেন আজ
আস্তে আস্তে চলছে!! হয়তো কুশার
কারনে!!! রিকশায় উঠে আবার কানেক্ট
করার চেষ্টা করল মিমকে।। এবার
ফোনটা পিক করল মিম,
– হ্যালো
– কিরে এত সকালে ফোন করেছিস কেন??
– ওই, তোর কয়টায় আসার কথা??
– সাড়ে ৯টায়!!!
– তো??
– তো কি?? ০৬ টা বাজে ফোন করা শুরু
করছিস কেন??
– থাপ্পর খাবি শয়তান!!! দেখ
কয়টা বাজে!!
সিহাব তার হাতের ঘড়ির
দিকে তাকালো!!! ১০ টা বাজতে ৫
মিনিট বাকি!!! যদিও সময়টা তার
জানাই ছিলো!! বাসা থেকে বের হওয়ার
সময়ই দেখে এসেছে!!
– কিরে কথা বলছিস না কেন??
কয়টা বাজে??
– সরি, আমি মনে করেছিলাম এখনো অনেক
সকাল!!
– মনে করবি কেন??? ঘড়ির কি অভাব
পরেছে তোর বাসায়??
– না, তেমন কিছু না!! কিন্তু ঘড়ি দেখার
ইচ্ছার অভাব পরেছে খুব!!!
– ফাইজলামি বাদ দে!! কই তুই এখন??
– আমি তো বাসায়!!!
– কি??? এখনো বাসায়!! ওই তুই
আমারে ফোন করছিস কেন??
– আমি কই ফোন করলাম তুই তো ফোন
করলি!!!
– আবার মিথ্যা কথা!!! ফোন রাখ!!
কথাটা বলেই ফোনটা ডিসকানেক্ট
করে দিলো মিম!
ফোনটা ব্যাগে রেখে সামনের
দিকে তাকাতেই দেখল রিকশায়
বসে আছে সিহাব!
– ওই তুই নাকি বাসায়??
– বাসায় না, বাসার সামনে!!
– কই বাসার সামনে?? তুই
তো এখানে দাড়িয়ে আছিস!!
– আরে আমি কি বলছি আমার বাসার
সামনে??
– তাহলে??
– আরে তোর বাসার সামনে!! আয় রিকশায়
ওঠ!!
আর কোন কথা না বলে রিকশায় উঠে বসল
মিম!! রিকশা ওয়ালাকে চালানোর
ইশারা করল সিহাব!!
মনে মনে ভাবছে পাগলীটার রাগ
মনে হয় পরে গেছে।। কিন্তু তার
ভাবনাকে ভুল প্রমান
করে দিয়ে একটা কথাও বলল
না মিম! আসলেই কি রাগ
করেছে নাকি রাগের ভান
করছে বুঝতে পারল না সিহাব!!!
নিরবতা ভাঙতে সিহাব বলল,
– কিরে রাগ করেছিস, নাকি রাগের ভান
করছিস???
-……. (শুধু একবার ওর দিকে তাকিয়ে মুখ
ঘুরিয়ে নিলো মিম)
– কিরে?? কথা বলবি না??
-…….
– মাত্র তো ২৫ মিনিট লেট হয়েছে!!!
তাও আমি ইচ্ছা করে করিনি!!!
-…..
– ঠিক আছে!! কথা না বললে নাই!!!
সিহাব অন্য দিকে তাকিয়ে দাঁত
দিয়ে হাতের নখ কাটতে লাগল!!!
সিহাব জানে এখন আর তার
সাথে কথা না বলে পারবে না মিম ।।
কারন এই জিনিসটা একদম পছন্দ
করে না সে!!!
কিন্তু সমস্যা একটাই!! মিম এখন হয়
তার চুল ধরে টান দিবে!! না হয় হাতের
ব্যাগ দিয়ে মাথায় বাড়ি মারবে!!!
মাথায় বাড়ি দিলে তাও সহ্য করা যায়
কিন্তু চুল ধরে টান দেওয়াটা একদম সহ্য
করতে পারেনা সিহাব।
শুনেছে মেয়েদের
শক্তি নাকি চুলে থাকে!! চুল ধরলে সব
শক্তি শেষ!! কিন্তু ও তো ছেলে!! ও কেন
ব্যথা পায় তাই
বুঝে উঠতে পারেনা সিহাব!!!
.
আর এদিকে মিম বেশ কয়েকবার
খেয়াল করেছে সিহাবের দাঁত দিয়ে নখ
কাটার বিষয়টা।। কিন্তু আজ ইচ্ছা করেই
কিছু বলছেনা!!! সে নিজেও একটা বিষয়
নিয়ে কনফিউজড!! সে আসলেই রাগ
করেছে কিনা!!! দাঁত দিয়ে নখ কাটার
বিষয়টা যদিও তার খুব খারাপ
লাগে কিন্তু এই মুহুর্তে কোন এক অদ্ভুত
কারনে বিষয়টা খুব ভালো লাগছে তার!!
পাগলটা তার রাগ ভাঙানোর জন্য এক
মনে নখ কেটেই চলেছে।।
মিম মনে মনে ঠিক করল আজ
দেখবে সবগুলো নখ
কাটা হয়ে গেলে কি করে সিহাব!! তাই
চুপ-চাপ বসে আড় চোখে সিহাবের নখ
কাটা দেখছে!!
.
হঠাৎ করেই সিহাব খেয়াল করল তার এক
হাতের নখ প্রায় শেষ হয়ে এলো, কিন্তু
মিম তাকে মারধর করছেনা!!!
তাহলে মিম কি তাকে দেখেনি??
কি জানি?? দেখেনি হয়তো!!!
নাকি দেখেও অন্যদিকে ঘুরে আছে!!!
দেখলে তো বিষয়টা মিমের সহ্য করার
কথা না!!! কি যেন ভেবে মিমের বাহু
ধরে আলতো ঝাকুনি দিয়ে ওকে ডাক
দিলো সিহাব!! মিম ওর
দিকে ঘুরতেই
ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে দাঁত দিয়ে নখ
কাটতে লাগল!!! আর চুপ থাকতে পারল
না মিম। হেসে উঠলো পাগলটার
কান্ড দেখে।। ওর হাসি দেখে সিহাবও
হেসে উঠল!!! তারপর সিহাব বলল,
-কিরে কি কিনবি ঠিক করেছিস??
– হ্যা, সব ঠিক করা আছে
– সব সময়ই তো ঠিক করা থাকে!!!
তারপরও তো সারাদিন লাগিয়ে দিস
একটা জামা কিনতে!!
– ওই, তোর কি??
– আমার কিছু না!! কিন্তু তোর
সাথে তো আমাকেই দৌড়াতে হয় পিছন
পিছন!!!
– তোকে তো আনছিই দৌড়ানোর জন্য!!!
বলেই হেসে ওঠে মিম! ওর দিকে এক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সিহাব।
মনে মনে ভাবে, ওর এই হাসিটুকুর জন্য
যদি তাকে সারা জীবন
মার্কেটে মার্কেটে দৌড়াতে হয় তাতেও
রাজি আছে সে!!! ধুর, কি আবল-তাবল
ভাবছে সে!!! আজ একদিন ওর
সাথে মার্কেটে গিয়ে ক,দিন বিছানায়
থাকতে হয় কে জানে!!!!
.
সিহাব আর মিম!! ওদের প্রথম
পরিচয় ওরা দুজন খালাতো ভাই-বোন। খুব
ছোট বেলা থেকেই দু,জন খুব ভালো বন্ধু।।
দুজনে একই স্কুলে পড়েছে, তারপর একই
কলেজ, এখন ভার্সিটিতেও দুজনে একই
সাথে।। মনে মনে দুজনেই দুজনকে খুব
ভালোবাসে।। কিন্তু কেউ
কাউকে বলতে পারছে না কোন এক অদ্ভুত
কারনে!! কিন্তু দুজনেই একে অপরের
ভালোবাসা খুব ভালো করেই
উপলব্ধি করতে পারে।।
আগামী সপ্তাহে সিহাবের
ফুপাতো বোনের বিয়ে।। তাই আজ সকাল
সকাল শপিং এ যাওয়া!!! সিহাবের
আজকের দিনটাই যেন বরবাদ
করে দিলো মিম!!!

চলবে….

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে