গল্পঃ অনন্যা এবং আমি।
ভোর পাঁচটায় খবর পেলাম অনন্যার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার কেন যেন ব্যাপারটা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য লাগছিল না। তিনদিন আগে অনন্যার সাথে ফোনে কথা হল।সবকিছু স্বাভাবিক।হাসতে হাসতে বলেছিল,
-তোমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে এলাম।
-চিনলে কি করে?
-খুঁজে নিয়েছি।
-আচ্ছা। বেশ কদর দেখছি।
-জ্বী,স্যার।
মেয়েটা ভীষণ অভিমানী,রাগী, ঝগড়াটেও বটে। ওর সাথে ঝগড়া হয় নি এমন দিন হাতে গোণা যায়।অনন্যা দেখতে ভালো।চোখ,ঠোঁট,নাকের গড়ন সুন্দর। গোটা ২৭ বছরের জীবনে ওর মত হাজারো মেয়ে দেখেছি।তাহলে কেন ওকে ভালো লাগল! আসলে প্রেমে পড়ার পিছনে কারণ খুঁজতে নেই। প্রথমে পরিচয়ে মেয়েটা চোখে চোখ রেখে বলেছিল,
-আপনি দেখতে যেমন স্মার্ট,কথাবার্তায় তেমন নন।
সোজাসাপ্টা জবাব ভালো লেগেছিল। তারপর কথা হত, দেখা হত শুধু হাতে হাত রাখা হত না।আমার বন্ধুরা শুনে চোখ কপালে তুলেছিল দুই বছরের সম্পর্কে ওকে ছুঁতে ইচ্ছা করে নি।
সোহাগ বলেছিল,
-ভাই, আপনি পাগল হয়ে গেছেন।
-তা জানি না। অনন্যা মানে হৃদয়ের খুব গভীরে যার বসবাস। তাকে স্পর্শ করে আলাদা করে চিনবার প্রয়োজন হয় নি।
সেই অনন্যার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে।অনন্যাকে ফোন করলাম। দু বার, তিনবার ও রিসিভ করে না।চারবারের সময় ফোন ধরল।
-অনন্যা যা শুনলাম তা কি সত্যি?
-হ্যা ।
-কি বলছ? কেন? কিভাবে?
তিনটা প্রশ্নের জবাবে ও হড়বড় করে অনেককিছু বলল আমি কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না। কেমন যেন ভেতরটা শূন্য লাগছিল খুব। ঢোক গিললাম, গলা শুকিয়ে কাঠ। ফোন কেটে দিয়ে ঢকঢক করে একগ্লাস পানি সাবাড় করলাম। তৃষ্ণা মিটল।কিন্তু বুকের বামপাশে হাত রাখতে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।এখানে একটা ছবি আঁকা ছিল, অনন্যা আমার কাঁধে মাথা রেখে শক্ত করে হাত জড়িয়ে ধরে আছে। দুজনের দৃষ্টি সুদূরে। ছবির একটা মানুষ মিসিং।
সোহাগকে ফোন করলাম। ও বলল বাসায় আসছে।ও এসে কোনো সান্ত্বনা দিল না। ফোন থেকে অনন্যার সবগুলো ছবি ডিলেট করাল। ওর নাম্বার ব্লক করাল। ফেসবুক থেকেও ব্লক করল। বীয়ারের ক্যান খুলে এগালওগাল হাসল,
-ভাই পার্টি হবে নাকি?ব্রেক আপ পার্টি?
সারারাত আড্ডা দিয়ে কাটালাম।মাঝখানে দু’বার ওর গার্লফ্রেন্ড ফোন করল।প্রশ্ন করল,
-কীরে ফোন ধরছিস না কেন?
-ছাড়েন তো ভাই । কোনদিন দেখব আমার গার্লফ্রেন্ডেরও বিয়ে হয়ে গেছে।অগ্রীম ব্রেকআপ পার্টি।মেয়েদের একদম বিশ্বাস করতে নেই।
দিন যায়৷ অফিসে ভীষণ খাটি। বাড়ি ফিরে বেডে সটান হয়ে শুয়ে লম্বা ঘুম দেই। এক্স গার্লফ্রেন্ড আর ব্রেক আপ এসব কিছুই মাথায় থাকে না। ফ্রেন্ডলিস্টে কত মেয়ে,ওদের সাথে কথা হয়। রাস্তায় কোনো মেয়ে দেখলে আরেকবার ফিরে তাকাই।
-বাহ! সুন্দর তো।
এরমাঝে একদিন সোহাগ আসে। আমায় দেখে চমকে উঠে।
-ভাই, আপনাকে এমন লাগছে কেন?
অবাক হই৷ রোজ শেভ করি। ঝকঝকে গাল। একটু আগে কায়দা করে চুল আঁচড়েছি৷ পরনে ব্রান্ডের টিশার্ট।
দেখতে খারাপ লাগার কথা নয়।
-কেমন লাগছে?
-চলেন, ঘুরে আসি।
-চল।আজ তোকে ট্রীট দিব।
আড্ডা হল, জম্পেশ খাওয়া হল।যাবার সময় সোহাগ বলল,
-ভাই আপনি ওই মেয়েটাকে ভুলতে পারছেন না, ঠিক না? চোখমুখ হতাশ।
-ফরগেট ইট।কবেই ভুলে গেছি।
ওর দিকে না তাকিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। ওকে বলতে পারছিলাম না গত তিনমাসে একটাও মুভি দেখতে পারি নি, গান শুনতে পারি নি এমনকি সিগারেটের ধোঁয়া চোখ বন্ধ করে ছাড়ি৷ সিগারেটের ধোঁয়ায় ওর স্পষ্ট মুখ। অফিস থেকে ফিরে দুটো ডরমিন গিলে বিছানায় যাই।তন্দ্রার মত ঘুম আসে।
একা থাকলেই বুকের বা’পাশে হাত রাখি। এখানে একটা ছবি আঁকা। অনন্যার মাথাটা হেলে কারো হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।অনন্যা ঠিকই আছে,ছবিতে আমি নামক মানুষটা মিসিং।
#গল্পঃ অনন্যা এবং আমি।
হাবিবা সরকার হিলা