খোলা চিঠি শেষ পর্ব
——- ??আমার আর আজাদের মধ্যে মোটামুটি অনেক কথাই হয়, তবে এসব কথার মাঝে আজাদের একবার ও মনে হলো না এসব হলো তার প্রাণ প্রিয় ভাইয়ের সাথে শেষ কথা!
আর কোনোদিন ভাইয়ার সাথে তার কথা হবেনা!
★আজাদ শুধু একবার বলেছিলো—
“এসব আমায় এখন কেনো বলছো ভাইয়া?
তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?
আমি বললাম হুম যাবো,
আজাদ জিগ্যেস করে কোথায় যাবে?
–আমি বলি–
আছে এখন বলা যাবেনা গেলেই বুঝবি,
আজাদঃ হুম ওকে ভাইয়া,,,
আমি আজাদকে বলি,
আমার অবর্তমানে তুই তোর ভাবি আর আমার আরহামকে দেখবি কথা দে ভাই!
আজাদঃ এভাবে কেনো বলছো ভাইয়া?
আসাদঃ আরে বল না!!
আজাদঃ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে,
“”হুম গুড এখন যা আমাকে একা থাকতে দে,
আর যা যা বলেছি ভুলে যাসনা কিন্তু!!
আজাদঃ হুম ভুলবো না ভাইয়া তুমি নিশ্চিন্তে যেতে পারো,,,
গর্ধোবটা তখনো জানেনা তার ভাইয়াকে সে কোথায় যাবার কথা বলছে???
তবে আজাদ যেতে যেতে বলে—
মনে হয় বিলেত যাচ্ছে!
ভাইয়ার যা কথা!!!
“”হুম আজাদ কিছুই বুঝেনি আমার কথা,
তবে আমি জানি আমার চলে যাবার পর ও ঠিক সব সামলে নিবে আমি জানি,,,
তবে একটা কথা কি জানো নীলু?
আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো!
মন চাইছিলো না তোমাদের সবাইকে ছেড়ে যেতে,
হঠাৎ করে লোভ কাজ করলো যাব না!
তবে সে লোভ মাথাচাড়া দিয়ে উঠার আগে ডিসিশন ফাইনাল করে ফেলেছি,,,
★আমার ডিসিশন যখন ফাইনাল তোমার আর আরহামের ছবি নিয়ে অনেক্ষন কান্না করলাম,
আমার পাশেই দেখো ছবিটা,
নীলিমা পাশে তাকিয়ে দেখে ছবিটা আসাদের নিথর দেহের পাশে পরে আছে,
ছবিটা ভেজা,
দেখে বুঝাই যাচ্চে অনেক কেঁদেছিলো আসাদ এই ছবিটা হাতে করে কারন চোখের পানি গুলো শুকিয়ে গেছে ঠিকই তবে স্পট রয়ে গেছে,,,
★আমি জানি ঠিক এই মুহূর্তে তুমি অনেক কাঁদছ!
আচ্ছা নীলু শোনো,
কান্না করে না লক্ষিটি,
আমিতো তোমাদের কথা ভেবেই যাচ্ছি!
তোমাকে যেনো আর আমার সাথে সমঝোতার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে না হয় তাইতো আমার চলে যাওয়া!
একটা কথা কি জানো সোনা?
মানুষ যদি শখ করে একটি বিড়াল বা কুকুর পালে আর সেই শখের প্রাণীটা একটা সময় সব মায়া কাটিয়ে হারিয়ে যায় বা মারা যায় তখন তার জন্য আমাদের কতোটা কষ্ট হয় বলো?
আর আমি তো একজন মানুষ ছিলাম!
তাও সামাজিক ও ধর্মীয় দিগ থেকে তোমার স্বামী ছিলাম তাহলে আমার জন্য একটু মায়া তো তোমার হবেই,,,
এতো গুলো বছরে ভালবাসার না হোক মায়া বা সহানুভূতির একটা সম্পর্কতো আমাদের মাঝে হয়েছে কি বলো?
কাঁদেনা এমন করে!
আমার কষ্ট হচ্ছে তো!
তুমিতো আমার স্ট্রং বউ কাঁদেনা,
আমাকে দেখো পরম শান্তিতে তোমার পাশে শুয়ে আছি,
পৃথিবীর কোনো গ্লানি আমাকে স্পর্শ করতে পারবেনা,
আজ আমি শুধু তোমার একান্ত একজন হয়ে তোমার পরিচয়ের সাথে চলে যাচ্ছি,
এটাই আমার পরম শান্তি আর এই শান্তিটুকু আমার একান্ত এখানে কিন্তু আজাদের কোনো ভাগ নাই নিলু,,,,,
★যাক হাতে সময় খুব কম,
একটা কথা ছিলো নীলু রাখবে?
বলবো তোমাকে?
আচ্ছা বলি—-
আমাকে এখন নিবে গোসল করাতে,
আমি জানিনা গোসলের পর লাশ দেখতে দেয় কিনা তবে আমার শেষ ইচ্ছা আমার গোসলের পর তুমি আমার কপালে একটা চুমু খাবে,
আমি তোমার এই শেষ পরশ টুকু সাথে নিয়ে যেতে চাই কি পারবে না?
তোমার আমার এক সাথে চলার সফরটা এতো সংক্ষিপ্ত হবে বুঝিনি নীলু!
অনেক না পাওয়া আর এক বুক হতাশা নিয়ে চলে যাচ্ছি আমার লক্ষি বউ!
আসলে এক জীবনে সবাই সব সুখ পায়না!
আমিও সেই না পাওয়াদের দলে নাম লিখালাম!
আমার সমস্ত শরীর থেকে ঘাম ঝরছে!
অনেক যন্ত্রণা হচ্ছে নীলু!!!
ঠিক এই সময়টা তোমাকে ছেড়ে যাবার জন্য আফসোস হচ্ছে!
কিন্তু আর কিছু করার নাই গো সোনা বউ!!!
নিশ্বাসটা আটকে যাচ্চে আমার!
চোখ গুলো ঘোলাটে লাগছে!
মনের কথা গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্চে,,
আর কিছু বলার পরিস্থিতিতে নাই আমি-
শুধু বলবো “অনেক বেশি ভালবা………
আর কিছু লিখতে পারলনা আসাদ!
ভালবাসি কথাটা অব্যক্তই রয়ে গেলো!
মৃত্যুর সময়টাতে নিজের ভিতর নীলিলার জন্য যে অনুভূতি তা পুরোপুরি প্রকাশে অক্ষম রয়ে গেলো!
তবে পুরোপুরি অব্যক্ত এই ভাষা অনেক কিছুই বলে দিয়ে গেছে নীলিমাকে,,,
★এইবার নীলিমার হাত থেকে চিঠিটা উড়ে যায় আর তা বাতাসে উড়ে ঠিক আজাদের সামনে পরে,
কেউ দেখে ফেলার আগে আজাদ তা সরিয়ে ফেলে,
আজাদ এখন তার ভাইয়ের কথা গুলোর মিনিং বুঝতে পারে কোথায় চলে যাবার কথা বলছিলো!
আজাদের চোখ থেকেও পানি ঝরছে,
সে মনে মনে বলে-
“একটি বারের জন্য ও যদি বুঝতে পারতাম তুমি কোথায় যাবার কথা বলছিলে!
বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি তোমাকে কোনো কিছুর বিনিময়ে যেতে দিতাম না,,,
আমি ভুল করেছিলাম তুমি আমাকে বকতে!
মারতে!
বাসা থেকে বের করে দিতে কিন্তু তুমি কেনো এমন করে চলে গেলে ভাইয়া???
আজাদ নিজের চোখের পানি মুছে বলে-
“না আমি কাঁদব না,
কোন মুখে কাঁদব?
আজ যা কিছু হয়েছে তার জন্য আমি দায়ি!
মরে যাওয়া আমার উচিৎ ছিলো অনেক আগে!
কতোটা যন্ত্রণা বুকে লালন করে আমার ভাই এতো গুলো বছর হাসি মুখে সব স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছে?
কতোটা মহৎ মনের হলে একটা মানুষ এতোটা অমায়িক ও ধৈর্যশীল হতে পারে আমার জানা নাই!
তবে আমি আমার ভাইয়াকে দেওয়া কথা রাখবো,
আমি আরহাম আর ভাবির খেয়াল রাখবো,
সে তার ভাইয়ের কথা অনুযায়ি বাকি কাজ গুলো সম্পন্ন করে,
★নীলিমা এখনো সেই জায়গাতেই বসা,
দুচোখ বেয়ে নিরবে পানি ঝরছে আর তারবকান্না গুলো যেনো বলছে —-
“”কেনো এমন করে চলে গেলে আসাদ?
কেনো আমাকে একটা বার সাফাই শুনার প্রয়োজন মনে করলে না?
আমি জানি আমি অপরাধী কিন্তু কেনো একটি অনিচ্ছাকৃত ভুলের মাশুল আমাকে এমন করে দিতে হলো?
হঠাৎ খুব চিৎকার করে কেঁদে উঠে নীলিমা,
জোরে কান্না করে কিছু বলতে যাবে-
তখনই আজাদ এসে নীলিমাকে বলে–
“”কেনো ভাইয়ার আত্মা কে কষ্ট দিচ্ছো ভাবি?
ভাইয়ার এমন করে চলে যাওয়া ব্যর্থ করে দিচ্ছো কেনো?
বেচে থাকতে একটু মানষিক শান্তি পায়নি আজ মরে যাবার পর তো তার আত্নাকে শান্তি দিতে পারি!
নীলিমা মুখ চেপে কান্না থামিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়,,,
বাথরুম থেকে বের হয়ে নীলিমা একটা সাদা পোশাক পরে,
নাকের ফুল, হাতে গলার সব খুলে পুরোপুরি একজন বিধবা সাজে বের হয় নীলিমা,
আসাদ বেচে থাকা অবস্থায় আসাদের পরিপূর্ণ স্ত্রী হতে পারেনি ঠিক তবে আসাদ মরে যাবার পর আসাদের বিধবা হয়েছে পুরোপুরি ভাবে,,,
ছেলেকে শেষ বারের মতো বাবাকে দেখালো নীলিমা,
পরম যত্নে আসাদের কপালে চুমু খেলো নীলিমা,
হয়তো এখন যদি মানুষটা একটু শান্তি পায়!!!
আজাদ সব সম্পন্ন করে ঘরে এলো,
নীলিমা আসাদের শেষ ইচ্ছা টুকু পূরণ করলো!
কিন্তু নিজেকে সব কিছু থেকে গুটিয়ে নিলো,
আজাদ তার ভাইকে দেওয়া সব কথা রাখলো তবে সে নীলিমা কে একজন ভাবি এবং আরহামকে ভাইয়ের ছেলে হিসেবেই আগলে রাখলো,
সমাপ্ত
? প্রিয় পাঠক!
আসলে কি জানেন?
আমরা যখন কোনো কাজ করি তার ফলাফল সম্পর্কে একবার ও ভাবিনা,
আমারা সব সময় নিজেরটা ষোলআনা ভাবি আর এতে অন্যের হৃদয়ে যে কতোটা ক্ষত হবে তা একটিবার ও ভাবিনা,,,
আমি মানছি আমাদের চাহিদা গুলোর মধ্যে শারীরিক চাহিদা অন্যতম তবে এমনটা কিন্তু না এ ছাড়া আমরা অচল!
জীবনে একজন ভালো জীবন সঙ্গী,
সাপোর্টার হিসেবে একজন বন্ধু!
ভালবেসে আগলে রাখার মতো একটি সুন্দর মন সবার মাঝে থাকেনা,
গল্পে আসাদ একজন আদর্শ স্বামী হবার সত্বেও শুধু একটি অপারগতার জন্য আজ সে বাধ্য হয়েছে এ সুন্দর পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে,
এর দ্বায়ভার আমরা কাকে দিবো?
এসব কি শুধুই আজাদ আর নীলিমার ভুল ছিলো?
আসলে কিছু ভুলের মাশুল হয়না,
এমনকি কারো জীবনের বিনিময়ে ও সেই মাশুল দেওয়া সম্ভব হয়না।
।
#ধন্যবাদ
লেখা : মুসকান