খেলাঘর  পর্ব-৭

0
3170

খেলাঘর  পর্ব-৭
লেখা-সুলতানা ইতি

ইহান এসে মিথিলার পাশের সোফায় বসলো
মিনিট খানেক পর অরনি ও আসলো

অরনি বসতে বসতে বল্লো
তো মিথিলা চল রান্না করবি আজ আমরা তোর হাতের রান্না ই খাবো

ইহান- হুম, আসলে আমি কি ভুলটা ই না করছিলাম,এমন একটা সুবর্ন সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক নয় তাই আমি রাজি
সবাই হই চই করে উঠলো

সাম্মি- আমি তোকে হেল্প করবো
মিথিলা- লাগবে না তোরা বসে আড্ডা দে,
তবে অরু তুই আসতে পারিস আমার সাথে,আমার চশমার পাওয়ার টা চেঞ্জ করতে হবে এটা দিয়ে সব ক্লিয়ার দেখি না,তুই আমাকে এই কাজে হেল্প করতে পারিস চাইলে

অরনি- ও. এম. জি.কিচেনে আমি যেতে পারবো না
ইহান- তোর তো কোন গুন ই নাই অরু
অরনি গাল ফুলিয়ে কিছু বলতে যাবে…

মিথিলা তাকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– ওকে সাম্মি তাইলে তুই আয়
সাম্মি- চল,,

মিথিলা আর সাম্মি কিচেনে চলে যায়

অরনি- ভয় লাগছে খুব

ইহান- আমার ও রে,,মিথিলা যদি আমায় রিজেক্ট করে তা হলে বেঁচে থাকতে খুব কষ্ট হবে,

রাহি- এতো অলক্ষনে কথা ভাবিস কেনো তোরা, সব সময় ভালো কিছু ভাববি,দেখবি ভালো হবে

অরনি- ঠিক বলেছিস রাহি

ইহান- ঠিক না রে কিচ্ছু ঠিক না,,তোরা ও জানিস আমি ও জানি মিথিলা আমাদের মতো নয় ওর জগৎ আমাদের থেকে আলাদা
অরনি- ভাবতে পারছি না কিছু,,,

মিথিলা ফ্রিজে কি আছে দেখার জন্য ফ্রিজ খুল্লো,তিন রকম মাংস ফ্রিজ থেকে নামিয়ে রাখলো

মিথিলা- এই সাম্মি দেখ তো এই বাটিতে এগুলা কি মুড়ি?

সাম্মি-তখন মাছ পরিস্কার করছিলো, মিথিলার পাশে এসে বল্লো,মিথি তোর চশমা টা সবার আগে চেঞ্জ করা উচিত,আন্টি ভাত রান্না করে ফ্রিজে রেখে গেছে যেন ইহান খেতে পারে,,

মিথিলা চশমা খুলে মুছতে মুছতে বল্লো ঠিক বলেছিস রে
বাসায় গিয়ে বাবা কে বলতে হবে

সাম্মি- আচ্ছা এতো গুলো জিনিশ বের করলি,,কি করবি বল

মিথিলা- ইহানের জন্য ফ্রাইড রাইস,অরনির জন্য চিকেন ফ্রাইড,রাহির জন্য,খাশির রেজালা,আর তোর জন্য কি রান্না করবো তুই বললি না সাম্মি

সাম্মি- আমি ওদের মতো লাঞ্চে এগুলা খাবো না,লাঞ্চে যা খেলে ভালো লাগে আমি তা ই খাবো,

মিথিলা- সেটা কি

সাম্মি- ভাত আর গরুর মাংস ভুনা

মিথিলা- ওকে তাহলে ঠিক আছে

সাম্মি- কিন্তু অন্যের বাড়িতে এসে এই সব রান্না করবি তুই,খুঁজে পাবি তো সব মশলা,

মিথিলা- একটু খুঁজলে ই পেয়ে যাবো, চল কাজে লেগে পড়ি

মিথিলা অনেক সময় নিয়ে সবার পছন্দ মতো রান্না করলো

সাম্মি- মিথি তুই তো ঘেমে গেছিস, অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে তোকে,সত্যি রান্না করতে ও অনেক কষ্ট হয়,আজ বুঝলাম

মিথিলা- হুম তুই ইহানদের বুয়াকে ডেকে বল এগুলা টেবিলে সাজিয়ে দিতে
এর মাঝে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
সাম্মি – ওকে
মিথিলা – ফ্রেশ হতে চলে গেলো

সাম্মি ইহানদের কাছে এসে বল্লো বাহ সবাই তো বেশ ঝমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে আর ও দিকে আমরা রান্না করতে করতে হয়রান

ইহান- মিথিলা কোথায়?
সাম্মি- ওয়াশ রুমে
ইহান- ওকে তোরা থাক আমি আসছি

সাম্মি আর অরনি হেসে বল্লো যা,ভালোবেসে মিথির মুখ টা মুছিয়ে দিস, হি হি হি হি

ইহান- বেশি কথা বলিস তোরা মিথিলা শুনবে এই নিয়ে আর কোন কথা নয়

ইহান নিজের রুমে গিয়ে একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াশ রুমের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো
মিথিলা ভালো করে মুখে পানি মেরে, ফ্রেশ হয়ে বেরুতে গিয়ে সামনে ইহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু ভয় ফেলো
– তুই

ইহান- হুম আমি,

মিথিলা- কথা না বলে এ ভাবে হুট করে এসে আলিফের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো

ইহান- এই নে তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছে নে
-মিথিলা ইহানের কাছে থেকে তোয়ালে নিয়ে বল্লো
-ধন্যবাদ,বুয়া এতোক্ষনে হয়তো টেবিলে খাবার দিয়ে দিয়েছে চল সবাইকে নিয়ে ডাইনিং এ আয়

পাঁচজন মিলেই খেতে বসলো
ইহান খেতে খেতে বল্লো
– আহ মিথি দারুণ রেঁধেছিস,, কি করে শিখলি এতো ভালো রান্না

অরনি- আমি তো জানতাম তুই বই পড়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারিস না,এখন তো দেখি তুই সব ই পারিস

ইহান-তোর মতো হলে কিছুই পারতো না বুঝলি অরু, তুই তো একটা ই জানিস শুধু সাজুগুজু এই ছাড়া আর কিছু পারবি না

অরু-ইহান্নন্নন্ন
রাহি-তোরা থামতো,সারা দিন তোদের এগুলা ভালো লাগে না
ইহান আর অরু চুপ হয়ে গেলো

মিথিলা- তোরা একটু বেশি বেশি বলছিস
সাম্মি- একদম ঠিক

রাহি- মিথি সত্যি তুই ভালো রান্না পারিস,আমি তো টাস্কিত

সাম্মি- আমি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস ই করতাম না

মিথিলা- আচ্ছা তোদের এই সব কথা শুনতে ভালো লাগছে না আমার

অরনি অবাক হয়ে বল্লো
– বলিস কি মিথি প্রশংসা শুনতে কে না চায়,সবারি ভালো লাগে প্রশংসা শুনতে

মিথিলা – কিন্তু আমার ভালো লাগে না

ইহান- এই জন্য ই তো তুই সবার থেকে আলাদা
এ ভাবেই গল্পগুজবের মাঝে খাবার শেষ করলো,,
সবাই গিয়ে আবার ড্রইং রুমে বসলো
মিথিলা অরনি রাহিরা কথা বলছে কিন্তু ইহানের সে দিকে মন নেই
ইহান বার বার ঘড়ি দেখিছে

মিথিলা- এই শুন অনেক্ষন তো থাকলাম এবার আমাকে যেতে হবে

ইহান- বললেই হলো,আরেকটু সময় তোকে থাকতেই হবে

মিথিলা- কেনো?

ইহান- এই যে আমরা সবাই মিলে কতো মজা করছি তাই

মিথিলা আর কিছু বল্লো না
ইহান উঠে গেলো সবার কাছে থেকে কিছুক্ষন পর অরনি ও চলে গেলো,,রাহি আর সাম্মি ও উঠে গেলো বাসায় ফোন করবে বলে

মিথিলা- ওরা সবাই আগে পরে করে কোথায় গেলো আমি এখন একা একা কি করবো
এমন সময় উপরের একটা ঘর থেকে অরনির কন্ঠ শুনা গেলো

অরনি- মিথিলা উপরে ইহানের রুমে চলে আয়,আমরা সবাই এখানেই আছি

মিথিলা ওদের আবার কি হলো এখান থেকে ইহানের রুমে গেলো কেনো,,যাই তার পর বুঝবো কি হচ্ছে সেখানে

মিথিলা ইহানে রুমে গিয়ে দরজা নক করলো,দেখলো দরজা খোলা কিন্তু রুম অন্ধকার

মিথিলা- অরু,সাম্মি,তোরা কোথায়,এই রুম টা এতো অন্ধকার কেনো

এমন সময় রুমে আলো জ্বলে উঠলো, একি সাথে সবাই বল্লো হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মিথিলা,হ্যাপী বার্থডে টু ইউ

মিথিলা অবাক হয়ে রুমের চারি দিয়ে তাকিয়ে দেখছে,, সারা রুম আলোয় ঝলমল করছে,,রুমের চার দেয়ালের মধ্যেই মিথিলার ছবি, আর ছবির পাশে লেখা বার্থডে কুইন

মিথিলা- তোরা এই সব কখন করলি

অরনি- করেছি,তুই তখন রান্না করতে ব্যাস্ত ছিলি,তা ছাড়া এটা আমাদের অনেক আগে থেকেই প্লান ছিলো,অবশ্য অনুষ্ঠান রাতে করতে ছেয়েছিলাম, কিন্তু তোকে রাতে আর রাখা যাবে না

মিথিলা- আজকে যে আমার বার্থডে এটা তো আমার ও মনে নেই তোদের মনে আছে কি করে

রাহি- তুই যে আমাদের সবার প্রিয়,আর তোর বার্থডে মনে রাখবো না

ইহান- চল মিথিলা কেক কাটবি

অরনি- মিথিলা আমার তরফ থেকে তোর জন্য,কিছু বই,,আমার মনে হয় এগুলা পড়লে তোর ভালো লাগবে,

মিথিলা খুশি হয়ে বল্লো
– বই? ধন্যবাদ দোস্ত

সাম্মি- এটা আমার পক্ষ থেকে সামান্য একটা জিনিষ

মিথিলা- কি আছে এতে কোন বই মনে হচ্ছে

সাম্মি- বই না একটা ডায়েরী

মিথিলা- ওহ ডায়েরী, ধন্যবাদ

রাহি- আমি কিন্তু আগে থেকে জানতাম না তাই কিছু আনতে পারেনি,আমার পক্ষ থেকে তোকে দোলনচাঁপার শুভেচ্ছা

মিথিলা- ওয়াও আমার প্রিয়ো ফুল

ইহান- আমি ভাবলাম আগে কেক কাটা হবে পরে এগুলা দেয়া হবে কিন্তু তোরা তো সব গুলিয়ে দিলি

মিথিলা- কিচ্ছু গুলিয়ে যায়নি ইহান, আমার খুব ভালো লেগেছে তোদের এই পাগলামি

ইহান- ওকে নো প্রব্লেম তা হলে, আমার তরফ থেকে বার্থডে কুইনের জন্য এই সামান্য উপহার

মিথিলা- কি আছে বাক্সে, খুলে দেখবো

ইহান- দেখতে পারিস

মিথিলা বক্স টা খুলে দেখলো একটা চশমা
– তুই কি করে জানলি আমার একটা চশমার প্রয়োজন

ইহান- কেনো তুই খুশি হসনি

মিথিলা- হুম দারুন, ভালো গিফট করেছিস তুই ধন্যবাদ ইহান

ইহান- আমার একটা কথা মিথি, ফ্রেন্ডস রা ছোট করে আমাকে ইহু বলে,তুই কেন ইহান বলিস

মিথিলা- সুন্দর নাম ইহান,এটা ছোট্ট করে অসুন্দর বানাতে চাই না তাই

ইহান- ওয়াও থ্যাংস ডিয়ার

,অরনি- অনেক হয়েছে এবার চল কেক কাটবি
মিথিলা কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিলো

অরনি- আজকের এই খুশিতে একটা গান হয়ে যাক মিথি, কি বলিস?

মিথিলা -আমি গান গাইতে পারবো না দোস্ত

সাম্মি-তোকে গাইতে হবে না, ইহু গাইবে

মিথিলা- কি বলছিস,এহানের ঐ ইংরেজি গান আমি শুনবোই না

ইহান- ওয়েট মিথিলা,কাল রাত জেগে তোর জন্য একটা বাংলা গান শিখেছি,সেটা ও শুনবি না

মিথিলা- তা হলে গাইতে
পারিস

অরনি- আমি গিয়ে গিটার নিয়ে আসছি , অরনি গিটার এনে ইহান কে দিতে গিয়ে ফিস ফিস করে বল্লো,দারুণ প্লান করেছিস,গানের অর্থ যদি মিথিলা বুঝতে পারে তা হলে ই হলো আর কি

ইহান- চুপ করে গিয়ে মিথিলার পাশে বস,

মিথিলা- এই অরনি তোরা কি ফিস ফিস করিছিস

অরনি- কিছু না,অরনি এসে মিথিলার পাশে বসলো
ইহান গিটারে সুর তুলে গান শুরু করলো
“”একটু কাছে আসো,
একটু ভালোবাসো
অনুভবে রাখো আমায়
চোখে চোখ রাখো
স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখো
ভালোবাসা দিবো তোমায়
এলো মেলো মেঘে বৃষ্টি হয়ে
ভিজিয়ে গেছো তুমি আমাকে
হৃদয়ের সব কথা ভাংগে নিরাবতা
মনে পড়ে শুধু তোমাকে

হোওওওওওও
যখনি প্রথম দেখেছি তোমাকে রুপেতে গেছি হারিয়ে
ওও মায়াবি স্বপনে নিরবে
গোপনে দিয়েছি দু হাত বাড়িয়ে
ছড়ালে এ বুকের শহরে
কি যাদু আমি বোঝাতে পারি না,কিছুতেই নিজেকে
এলো মেলো মেঘে বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে গেছো তুমি আমাকে
হৃদয়ের সব কথা ভাংগে নিরাবতা মনে পড়ে শুধু তোমাকে

কতো যে আপন ভেবেছি তোমাকে
বলবো বলো কি করে
ওওও মনেরি গহিনে রেখেছি যতনে সারাটা প্রহর ধরে
ঝড়ালে এ আমায় বলো না
কি সুখে জানোকি তোমারি জ্বলেতে ভিজে কে
এলো মেলো মেঘে বৃষ্টি হয়ে
ভিজিয়ে গেছো তুমি আমাজে
হৃদয়ের সব কথা ভাংগে নিরাবতা মনে পড়ে শুধু তোমাকে,,,,

ইহানের গান শুনে সবাই খুশি হলে ও মিথিলা খুশি হতে পারেনি

ইহান- মিথি গান ভালো হয়নি

মিথিলা -আমি বাড়ি যাবো

অরনি ইহান কে ইশারা করলো, ইহান তার প্যান্টের পকেট থেকে একটা আংটি বের করে মিথিলার সামনে
হাটু মুড়ে বসে বল্লো,
– মিথি উইল ইউ মেরী মি

মিথিলা স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,তার চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে

অরনি ভাংগা গলায় বল্লো
– মিথি কিছু বল

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন