খেলাঘর পর্ব-৪৫
লেখা- সুলতানা ইতি
মিথিলার ভয়ের শেষ নেই ইভান কি নিয়ে ৭২ ঘন্টা পরে কি হয়? এই ভেবেই দিশেহারা অবস্থা মিথিলার কিন্তু কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দিচ্ছে না
উপরে উপরে খুব শক্ত ভাব প্রকাশ করলে ও ভিতরে ধুমড়ে মুচড়ে সব শেষ
মিথিলার হতাশা প্রার্থনা ভয় সব কিছুর কাছে হার মেনে তিন দিন পর ইভানের সেন্স ফিরে আসে ইভান কে ক্যাবিনে শিপ্ট করা হয়
ইভানের ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে ঝোড়া লাগতে সময় লাগবে,মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে পাজরের হাড় ভেঙে গেছে এই সব কিছু থেকে সেরে উঠতে অনেক সময় লাগবে মাস খানেকের মতো হসপিটালে থাকতে হবে তাকে
আপাদত ডক্টর কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছে মিথিলাকে সেগুলো আনতে গেছে,
ইভানের সেন্স ফিরলে ও ইভান এখনো কথা বলেনি কি বলবে মিথিলা কে যাকে এতো টা অবহেলা করেছে আজ বিপদে সেই এসে পাশে দাড়িয়েছে, ঐ ডাইনি টা আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে,যদি মিথিলা আর আমার সম্পর্ক টা আগের মতো থাকতো হয়তো আজকের দিনে বাবা মা ও আমার পাশে থাকতো
মিথিলা ওষুধ নিয়ে ফেরার পথে সাম্মির সাথে দেখা সাম্মি ও হসপিটালে ইভান কে দেখতে আসছিলো
সাম্মি- কিরে ইভানের কি খবর, তোকে ফোন করেছি তুই রিসিভ করিস নি,ইহান বল্লো দেখে যেতে তাই চলে এলাম
মিথিলা- আসলে খেয়াল করিনি তুই কষ্ট করে আসতে গেলি কেনো আমি নিজেই তোকে ফোন করতাম, ইভানের সেন্স ফিরেছে ক্যাবিনে শিপ্ট করেছে আমি ওষুধ নিতে এলাম
সাম্মি- হুম চল তোর জন্য রান্না করে এনেছি চল খাবি
মিথিলা- তুই আবার এতো কষ্ট করতে গেলি কেনো
সাম্মি- তুই উদারতা দেখিয়ে সবার জন্য করবি আমরা একটু করতে গেলেই দোষ
মিথিলা – ঠিক আছে চল
খাওয়া দাওয়া শেষ করে মিথিলা বল্লো
– সাম্মি ইভানের ওষুধের সময় হয়েছে, ওকে আগে তরল খাবার টা খাইয়ে দিই কি বলিস পরে ওষুধ খাওয়াবো
সাম্মি- হুম চল আমি তোকে হেল্প করি
ইভান কে শোয়া থেকে উঠিয়ে আধা শোয়া করে বসালো খাওয়া শেষে ওষুধ খাইয়ে আবার ইভান কে শুয়ে দিলো
এমন সময় ইহান হন্তদন্ত হয়ে ক্যাবিনে ডুকলো
মিথিলা- কিরে ইহান কোন খবর না দিয়ে এলি,তুই সাম্মি কে আসতে বললি আবার নিজে এলি কেনো?
ইহান মিথিলার কথায় জবাব না দিয়ে বল্লো
সাম্মি তোর সাথে একটু কথা আছে একটু বাইরে আসবি
সাম্মি- আসছি
ইহান- সাম্মি আজ ভোরে অরণি এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছে
সাম্মি কথা টা শুনে দু হাতে মুখ ঢেকে বসে পড়লো
ইহান – সাম্মি নিজেকে কন্ট্রোল কর মিথিলা এতো ছাপ এক সাথে নিতে পারবে না ভেবে তোকে বলা, এখন তুই যদি ভেঙে পড়িস তা হলে মিথিলা কে ব্যাপার টা বুঝাবে কে?
সাম্মি চোখ মুছে উঠে দাড়ালো
– তুই আমায় আগে বলিস নি কেনো, এখন কোথায় অরণি
ইহান- ওদের গ্রামের বাড়িতে রওনা করেছে, অরণির ভাই আমাকে ডেকে এই দুটো চিঠি ধরিয়ে দিলো, একটা মিথিলা কে দিয়েছে,একটা আমাকে, তুই মিথিলা কে বুঝিয়ে ওর চিঠি টা দিস, আমি এখন আসি
সাম্মি- তুই কোথায় যাবি,আর মিথিলার সাথে কথা না বলেই চলে যাবি?.
ইহান- আমি এখন মিথিলার সাথে কথা বলতে পারবো না সাম্মি,
সাম্মি ইহানের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ইহান অনেক কষ্টে কান্না ছেপে রেখেছে, তাই আর ইহান কে আটকায় নি
ইহান গাড়ি নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে আজ আর অফিস করতে ইচ্ছে করছে না
প্রিয়ো অপ্রিয়ো ইহান,ভাবছিস অপ্রিয়ো বললাম কেনো তাই তো? ভালোবাসি তোকে ইহু, কিন্তু তুই আমায় যেদিন থেকে ভুল বুঝেছিস সেদিন থেকে তুই আমার অপ্রিয়ো বিশ্বাস কর এতো অপ্রিয়ো বললে শেষ নিশ্বাসের আগে পর্যন্ত তোকে ভালোবেসেছি শুধু প্রকাশ করতে পারিনি। সে তো কোন দিন প্রকাশ করিনি, ভেবেছি তুই আমায় বুঝবি! কিন্তু একজন ভালো বন্ধু ছাড়া কোন দিন তোর কাছের মানুষ হতে পারিনি,
মনে পড়ে স্কুলে একদিন শাড়ি পরেছি
শুধু তোর জন্য সেদিন আমার শাড়ি পরা।
তুই শাড়ি পছন্দ করতিস বলে,কিন্তু তুই আমার দিকে চোখ তুলে ও তাকাসনি, আমি নিজে সেধে জিজ্ঞাস করলাম আমায় কেমন লাগছে তুই আমার দিকে না তাকিয়ে বললি আমি যেমন আমাকে তেমন ই লাগছে বিশ্বাস কর তোর এই কথা টা ই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া ছিলো
তুই সবার অলক্ষে মিথিলার প্রশংসা করলি সেটা শুনে একটু খারাপ লেগেছে তবু ও মন কে বুঝালাম আমার শাড়ি পরা কে ও তুই ভালো বলেছিস,আমি কখনো ই আমার জন্য তোর সময় নষ্ট করতে চাইনি চিঠি টা খুব বড় হয়ে গেছে তাই না, এটা ই শেষ রে আর কখনো এই অরনি তোকে জ্বালাতে আসবে না অরু নামের প্যারা টা ই হারিয়ে যাবে আজকের পরে, আর শেষ একটা কথা বলবো তোকে
তোর আর সাম্মির বিয়ে টা আমি মানতে পারিনি রে কেনো জানি তোর সাথে কাউকে দেখলেই আমার হিংসে হতো, হয়তো তুই বলবি মৃত্যুর পথযাত্রী হয়ে ও আমি হিংসে করেছি তোকে কিন্তু কি করবো বড্ড ভালোবাসি যে তোকে বড্ড ভালোবাসি
চিঠি পড়া শেষ ইহানের চোখ দিয়ে দু ফোটা অশ্রু বেরিয়ে গেলো এই অশ্রু টা আসলে কিসের সেটা ইহান বুঝতে পারছে না, অরনি নিরবে আমায় এতো ভালোবেসেছে, আমি কিনা? অরু একবার ফিরে আয় আমাদের মাঝে তুই নিরবে যত কষ্ট মনে ছাপা দিয়ে রেখে ছিলি সব কষ্ট মুছে দিবো প্লিজ ফিরে আয়
ইহান কাঁদছে এই কান্না যে বড্ড অবুঝ তাই ইহান আটকাতে চায় না কান্না কে
ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে
সাম্মি নির্বাক দৃষ্টিতে ছেয়ে আছে ইহানের যাওয়ার পথে, মিথিলার কথায় সাম্মির ঘোর কাটে
মিথিলা- সাম্মি কি হয়েছে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস যে
সাম্মি-ওহ,তুই? কিছু না চল রিসেপশন রুমে গিয়ে বসি
মিথিলা আর সাম্মি গিয়ে বসলো
– সাম্মি তোকে দেখে মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু হয়েছে, কি হয়েছে বল
সাম্মি- কিছু হয়নি সব ঠিক আছে ইহান তোকে একটা চিঠি দিয়ে গেছে
মিথিলার ভ্রু কুঁচকে গেলো
– ইহান আমায় চিঠি দিয়েছে দেখি তো কি লেখা আছে
সাম্মি মিথিলা কে চিঠি দিলো
মিথিলা লেখা দেখে মনে হচ্ছে এটা অরনির চিঠি
তুই মিথ্যে বললি কেনো
সাম্মি- তুই পড়, পড়লেই বুঝবি
মিথিলা তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলি, অবশ্য মৃত্যুর পরে ও থাকবি, পরকালে যেন আমি তোকে পাই এটা আমি আল্লাহর কাছে ছেয়ে নিবো,তুই যে আমার সত্তিকারের বন্ধু
ইহান তোকে ভালোবাসতো এই জন্য তোকে আমার হিংসে হতো কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হওয়ার ভয়ে তোদের বুঝতে দিইনি,তুই ইহান কে ফিরিয়ে দিয়েছিস কেনো দিয়েছিস সেটা বুঝতে পেরেছি তোর বিয়ের দিন আমি সত্যি খুব লাকি রে তোর মতো একটা বেষ্ট ফ্রেন্ড পেয়ে, তুই সত্যি আমার কথা গুলো বুঝতি, আমার জন্য ইহান কে ফিরিয়ে দিয়ে ইভানের মতো একজন মানুষ কে বিয়ে করে আজ ও তুই জীবনের সাথে খেলছিস,জানি না তোর এই খেলায় তুই কবে জিতবি তোর জন্য অনেক শুভ কামনা রেখে গেলাম, তুই তো আমার মনের কথা বুঝতে পারিস তুই নিশ্চয়ইই বুঝেছিস সাম্মি আর ইহানের বিয়েটা মানতে পারিনি আমি,জানিস যখন থেকে নিজের জীবনের পাওয়ার আশা গুলো শেষ হয়েছে তখন থেকে চাইতাম যদি ইহানের সাথে তোর বাকি জীবন তুই কাটাতে পারতি, কিন্তু সাম্মি ইহান কে বিয়ে করে নিয়েছে ওর কারো কথা ভাবার সময় হয়নি
কি সব আবল তাবল বলছি তাই না,মরে গিয়ে শান্তি পাবো না এই ভেবে যে তুই আমার জন্য তোর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ টা সেক্রিফাইজ করেছিস, আচ্ছা বাদ দে এই সব আমি ছেয়েছি তোদের মাঝে সারা জীবন বেছে থাকতে তাই তো আমার লাশ যেন তোরা না দেখিস সে ব্যাবস্থা করে গেছি,আমার চিঠি টা যখন পড়বি তখন হয়তো আমি আর তোদের মাঝে থাকবো না তবু ও আমি তোদের মাঝে বেছে থাকতে চাই যেন তোরা ভাবিস আমি আছি হয়তো তোদের আড্ডার আসরে মিশে, নয়তো তোর বিরহে মিশে
ভালো থাকিস, ভালোবাসি বান্ধুবী তোকে
চিঠি পড়া শেষ করে মিথিলা হাউ মাউ করে কাঁদত শুরু করলো
সাম্মি- মিথিলা এটা একটা হসপিটাল প্লিজ এমন করে কাঁদিস না
আজ কোন বাধা ই মিথিলা শুনছে না জীবনে প্রিয়ো মানুষ গুলো হারাতে হারাতে আজ মিথিলা নিঃস্ব হয়ে গেছে আর যে এই কষ্ট নিতে পারছে না
এভাবে অনেক টা সময় পার হয়ে গেলো মিথিলার কান্না কিছু টা কমে এসেছে
সাম্মি- মিথিলা প্লিজ নিজেকে কন্ট্রোল কর, এভাবে কাঁদিস অরুর আত্মা কষ্ট পাবে,
মিথিলা নিজেকে শান্ত করলো
না আমি কাঁদবো না, অরু আমাদের মাঝে বেছে আছে আমি কাঁদলে অরুর অভিমান হবে আমি আর কাঁদবো না
মিথিলা চিঠি টা যত্ন করে রেখে দিলো নিজের কাছে
সাম্মি- মিথি ইভান ভাইয়ার ওষুধের টাইম হয়েছে
মিথিলা- হুম আমি যাচ্ছি তুই বাসায় যা ইহান একা বাসায় কি করছে কে জানে ওকে দেখে রাখিস
সাম্মি- ঠিক বলেছিস আমি তা হলে যাই, সাম্মি চলে গেলো
মিথিলা ইভানের কাছে এলো
মিথিলার দিকে তাকিয়ে ইভান চিন্তায় পড়ে গেলো, কি হয়েছে মিথিলা মনে হচ্ছে খুব কেঁদেছে আমি কি জিজ্ঞাস করবো? জিজ্ঞাস করলে কি উত্তর পাবো?
– মিথি কেঁদেছো কেনো?
মিথিলা ইভানের কথায় পাত্তা না দিয়ে বল্লো
– আপনার ওষুধের সময় হয়েছে, এই নিন ওষুধ টা খান
ইভান- আমি ততক্ষন ওষুধ খাবো না যতক্ষণ না তুমি বলবে তুমি কেঁদেছো কেনো
মিথিলা – আপনি এখন অসুস্থ, আমার কঠিন কথা গুলো আপনার মধ্যে আপেক্ট করবে নইলে আপনাকে আমি, বাদ দিন নিন হা করুন আর ওষুধ টা খান,
আর হা,আপনার বিপদের সময় আপনার পাশে আছি বলে এটা ভাববেন না আপনার সব অপরাধ মাপ হয়ে গেছে,আপনার বাবা মা ও আপনাকে ক্ষমা করেনি ওকে,যেমন আছেন তেমন থেকে সুস্থ হয়ে উঠুন,হাজবেন্ড সাজার চেষ্টা করবেন না, বুঝতে পেরেছেন?
চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android