কাঠগোলাপ?
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব পঁচিশ
?
“আমার ভাইয়ের খুনের বদলা আমি ওই আশরিক আলফাজ ধ্রুভের কাছ থেকে নিবোই!!” স্টিভ বলে উঠলো।।
“শিসসস!!দেয়ালেরও কান আছে,এটাকে রহস্যই থাকতে দাও!!” বব উত্তর দিলো।।
স্টিভ রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো বাহিরে..বব চেয়ারে বসে নিজের পায়ের উপর পা তুললো।।
“ধ্রুভের উপর এক্সপেরিমেন্ট করে আমার কার্য হাসিল করবো আর ধ্রুভের সমস্ত কিছু আমার হাতের মুঠোই করে নিব তার মাইন্ড কন্ট্রোল আমার হাতে!!সে তার মীরাকেও ভুলে যাবে!!এক ঢিলে দুই পাখি!!” বব উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো।।
রাহি ক্লিনিকের বেডে শুয়ে আছে,ধ্রুভ ধীর পায়ে রাহির দিক একটু একটু করে এগিয়ে আসছে..রাহির কাছে আসার পর,রাহির বেডে একটু জায়গা করে নিয়ে সেখানে শুয়ে পরলো সে..ন্যামিয়ানকে সে বলে এসেছে কেও যাতে তাদের বিরক্ত না করে।।
ধ্রুভ একধ্যানে রাহির কপালের সেলাইয়ের ব্যান্ডেজের দিকে তাকিয়ে আছে,তার কাছে পানির মতো খোলাসা সবকিছু..তার মাথায় অন্য খেলা চলছে,যে খেলায় মারাত্নক ভাবে সবকিছু শেষ হবে..তার প্রথম কাজ হলো,স্মিথ বেঁচে আছে কি না।।
“আমি দুনিয়াতে আমার অস্তিত্ব ভুলে যাবো কিন্তু তোমার অস্তিত্ব আমি কোনদিন ভুলবো না!!তোমাকে ভুলানোর ক্ষমতা এই সামান্য মেডিসিনের ও নাই!!তুমি ধ্রুভের জান মীরা!!যে তোমাকে আমার মস্তিষ্ক থেকে মুছার জন্য ব্যবহার করতে চায়,তাকে আমি ভুলিয়ে দিব সে কার সাথে পাঙ্গা নিতে এসেছে!!টাইম উইল শো ইউ এভ্রিথিং মীরা!!প্লিজ ইউ ডোন্ট স্টে এওয়ে ফ্রম মি!!” ধ্রুভ বিড়বিড় করে কথাগুলো বললো।।
ধ্রুভ রাহির সাথে ওই ক্লিনিকের বেডেই শুয়ে পরলো,রাহির গলাতে ধ্রুভের গরম নিঃশ্বাস পরছে.. ধ্রুভ রাহিকে এটে ধরে ওখানেই ঘুমিয়ে গেলো কারন আজকের রাতটা এখানেই থাকতে হবে তাদের।।
মাঝরাতে রাহির ঘুম ভাঙলো মাথার পেইনের কারনে,সেলাই করার সময় অবশ করা হয়ছিলো এক সাইড যা এখন ছুটতে শুরু করেছে,সেটার ফলে ব্যাথাটা নাড়া দিয়ে উঠেছে..পিটপিট চোখে দেখছে সে কোথায় আছে,নিজের উপর ভারী কিছু অনুভব করছে সে..বুঝলো রাহি সে ক্লিনিকে আছে আর তার উপরে ধ্রুভ আছে,ধ্রুভকে দেখে রাহির চোখে জল চলে আসছে..নিজের অজান্তে এই মানুষটার উপর এতো মায়া জন্মে গেছে যে এখন উনি যদি সুস্থ হয়ে তাকে ভুলে যায় আর সে নিঃশ্বাস নিতে পারবে না..সামির নামে কোন ছেলেকে কখনো সে মনে রেখেছে কি না এখন সন্দেহ,ধ্রুভ তার পাগলামিতে ওই কুকুরকে রাহির মন থেকে মুছে ফেলেছে।।
রাহি তার একটা হাত ধ্রুভের কোমরে দিলো,নিজে থেকে চোখ ভর্তি জল নিয়ে ধ্রুভের কপালে চুমু খেলো..মাথার চুল গুলো ফু দিল হালকা..এইসবের শেষ সে চায় না,ধ্রুভের সাথে বাকিটা জীবনে এইভাবে পার করতে চায় সে..রাহি আস্তে আস্তে চোখ বুঝলো হয়তো নতুন সকালের অপেক্ষায়।।
বেশ কয়েকদিন পর রাহি মোটামুটি সুস্থ ফিল করছে..ধ্রুভ তাকে পরের দিন বাড়ি নিয়ে চলে এসেছে,এই কয়দিন ধ্রুভ রাহিকে এক সেকেন্ডের জন্য চোখের আড়াল করে নি উল্টো অফিসের কাজগুলো বাড়ি নিয়ে চলে আসছে।।
কয়েক সপ্তাহ পর,আজ প্রান্ত আর রাশনার আকদ হয়ে গেলো..প্রান্ত এক প্রকার উঠে পরে লেগেছে রাশনারকে বিয়ে করার,রাশনার টেস্ট এক্সাম পর্যন্ত সে ওয়েট করতে পারলো না..বাসর ঘরে বসে আছে রাশনা,অপেক্ষা করছে প্রান্তের জন্য বুকটা কেমন ধুকপুক করছে..কি হবে ওর ভিতরে এসে এইটা ভেবে..বেশকিছুক্ষন পর প্রান্ত আসলো ঘরে।।
রাশনার দরজার খুট করে আওগাজে ধ্যান ভাঙলো,চোখ মেলে তার দিকে তাকালো..বিছানা থেকে নেমে তার দিকে তাকালো,উঠে এসে সালাম করলো সে।।
“চল তোকে বাবুর মা বানিয়ে দেয়ার প্ল্যান করি!!”প্রান্ত কথাটা বলে রাশনাকে কোলে নিয়ে দরজা লক করে,বাবুর বাবু ডাক শোনার কাজে লেগে গেলো।।
লন্ডন রাতেরবেলা,
ইদানীং ধ্রুভ মাঝরাতে কোথাও যেন যায়..রাহির মাঝরাতে উঠে ধ্রুভকে পাশে পায় না,সে যখন ঘরে আসে তখন রাহি ঘুমের ভান ধরে থাকে যে সে কোথায় যায় তা দেখার জন্য..আজও ধ্রুভ বাহিরে গেছে, রাহি এই সময়টার অপেক্ষায় আছে যে কখন ধ্রুভ বাহিরে যাবে আর তার পিছু নিবে..ধ্রুভ বের হলে,রাহি তার পিছু পিছু যায়।।
ধ্রুভ নিজের বাড়ির গার্ডেন এরিয়া ছেড়ে কোনার ঘরে দিকে গেলো,সেখানে রাহিও গেলো..ধ্রুভ একটা ছোট্ট রুমের মধ্যে ঢুকলো,রাহিও পা টিপে টিপে সেখানে গেলো।।
ভিতরে রাহি যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না..চোখটা বিস্ময়ে বড়বড় হয়ে গেছে তার।।
ধ্রুভ হকিস্টিক নিয়ে সামনে বসে থাকা চেয়ারের মানুষটাকে খুব মারছে,ব্যাথায় লোকটা খুব আর্তনাদ করছে তবুও ধ্রুভ থামছে,এইগুলো থেকে রাহির হাত পা কাপঁতে লেগেছে।।
“ধ্রুভ!” রাহি অস্ফুটস্বরে ডাকলো।।
রাহির ডাকের আওয়াজে ধ্রুভ পিছন ফিরে তাকালো,রাহিকে দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না..রাহিকে এখানে দেখে তার মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো,সে তার হাতে থাকা হকিস্টিক টাকে এতো জোরে নিচে ফেলেছে যে মেঝেটা আরেকটু হলে মাটি ফাক হয়ে যেতো।।
ধ্রুব ধপাধপ পা ফেলে রাহির দিকে এগিয়ে আসলো,তার মেজাজ এখনো চরম খারাপ একে ত ঠিকমতো মারতে পারলো না এইজন্য আবার রাহির উপস্থিতিতে,সব মিলিয়ে শরীরের ভেতরের রগগুলো কেমন টগবগ করছে..ইচ্ছা করছে সব দুনিয়ার লোকগুলোকে একসাথে শেষ করে দিতে।।
“তুমি কেনো গেছো ওখানে??তোমাকে আমি বারন করি নাই আমার অনুমতি ছাড়া কোথায় যেন না যেতে??তাহলে কেনো গেছো তুমি সেখানে??” ধ্রুভ রাহির কাধ ঝুকিয়ে চিল্লিয়ে জিজ্ঞেস করছে,রাহি এদিকে ভয়ে জুবুথুবু হয়ে গেছে।।
“আ..আপনি কেন ডাক্তার স্মিথকে মারছিলেন আর সাথের ওই ছেলেটাকে??” রাহি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো।।
“ড্যাম ইট!!কেন মারছি শুনবা ত শুনো?” ধ্রুভ চিল্লিয়ে বললো।।
“তোমার সাথে আমি যতবার ইন্টিমেট হতে চেয়েছি ততবার কোন না কোন বাধাতে আমি আটকে গেছি!!তুমি জানো না লাস্ট টাইম তোমাকে আঘাত করে কি ফল টায় ভুগেছি আমি??এই স্মিথ আর ওর ছেলে মিলে আমাদের মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি করেছিলো,আমি কি করে সহ্য করতে পারি সেটা??ওই স্টিভ আমাদের ঘরের রোবটিক মাইক্রফোন পাঠিয়েছিলো যার রিমোট কন্ট্রোল তার হাতে ছিল??ওই রোবটিক মাইক্রফোন সেদিন আমি আমার পায়ের নিচে পাই যা আমি সায়েন্স ল্যাবে পাঠাই!!তারা কি বলেছে জানো??তারা জানায় যে এইটা মাইক্রোফোনে সাউন্ড আর প্রতিচ্ছবি সেট করা হয়ে থাকে!!আমি যে আওয়াজে বিরক্ত হয়ে থাকি সেই আওয়াজটা আমার কানে সেদিন এই মাইক্রফোন দ্বারা বেজে যাচ্ছিলো,আর সেই মাইক্রোফোন ওই বিচ ক্যাথরিনের ছবি তারা সেট করে রাখছিলো যার ফলে তোমার মুখের সেটার ফ্ল্যাশ পরায় তোমাকে আমি ধাক্কা দি??ইউ নো হোয়াট হাও মাচ ইরিটেট দিস টু মি!!আহ!!” ধ্রুভ মাথা ধরে চিল্লিয়ে বললো।।
চলবে?
গঠনমূলক মন্তব্য করুন,আপনাদের মন্তব্যে পরের পর্ব নির্ভর করছে..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।