কাঠগোলাপ?
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব বিশ
?
রাহির শক্তিটুকু নেই আর দাড়ানোর যে শরীরে ভর দিয়ে দাড়াবে সে,চোখের পানি এক সাইড দিয়ে পরছে..ব্যালেন্স হারিয়ে পরে যেতে লাগলে কোথা থেকে ধ্রুভ এসে রাহির কোমড় চেপে ধরে..রাহিও ভয়ে ধ্রুভের গেঞ্জি খামচে ধরে..চোখ দিয়ে আর তাকাতে পারছে না সেই জিনিসটার দিকে।।
“তুমি নিচে কিজন্য আসছো মীরা??এখুনি উপরে চলো!!” ধ্রুভ দাঁতে দাঁত চেপে বললো।।
“এটা কি করে হলো??!” রাহি ক্ষীন স্বরে জিজ্ঞেস করলো।।
“সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না মীরা?চলো!!” ধ্রুভ বলেই রাহিকে কোলে তুলে উপরে নিয়ে চলে গেলো।।
রাহি তখন যা দেখছিলো তা আসলেই বিভৎসকর..কারন রাহির সামনে টমির লাশকে পাঁচ ভাগ করে গার্ডেনের গাছ গুলোতে দড়ি দিয়ে টাঙানো ছিলো..সেই কাটা শরীর থেকে টপাটপ রক্ত পরছিলো..রাহি এটা দেখে মনে হচ্ছে কতটা নির্দয় হলে মানুষ কাওকে এইভাবে মারে।।
পুলিশকে খবর দিয়েছে ধ্রুভ নিজেই,ধ্রুভ যখন ঘুম থেকে উঠে ভোরবেলা ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য তখনই থাই গ্লাস থেকে টমিকে সে ওই অবস্থায় দেখতে পায়..তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে কেও উঠে পরে তার পিছনে লেগেছে..রাহির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে,তাকে আর না ডেকে সে নিচে চলে গেলো..ধ্রুভের যাওয়া দেখে রিবা আর লেনাও পিছু ছুটলো..তারা উঠেছিলো চার্চে যাওয়ার জন্য,ধ্রুভের এমন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাওয়া দেখে ওরাও গেলো..টমিকে ওই অবস্থায় দেখে রিবা আর লেনাও কান্নায় ভেঙ্গে পরলো..ধ্রুভ শুন্য দৃষ্টিতে টমির দিকে তাকিয়ে আছে।।
টমি ধ্রুভের পালিত কুকুর ছিলো..খুব ছোট থেকেই ওর কাছে ছিলো,যখন ও বাংলাদেশ রাহিকে খুজার জন্য আসে তখন ওকে একটা ডগস কেয়ার সেন্টারে রেখে আসে..যেহেতু সে নাই,রিবা আর লেনাও থাকবে না,টমিকে সেখানে রেখে আসাটায় শ্রেয় মনে হয়েছে তার..যেদিন ধ্রুভ লন্ডন ব্যাক করে সেদিন কেয়ার সেন্টারে জানিয়ে দেয়া হয় সে আসছে,তারা সেইজন্য গতকালকে টমিকে বাড়িতে রাখতে এসেছিলো..কিন্তু আজ সকালে টমির এরকম নির্মম ভাবে মেরে ফেলাটা কিছুতেই মানা যাচ্ছে না..রিবা আর লেনার ও খুব প্রিয় ছিলো টমি..ধ্রুভ ওখানে দাড়িয়েই পুলিশকে ডেকে ছিলো..আলো ফুটার সাথে সাথে জনগন ও দেখতে আসতে লাগলো যে কি সমস্যা এখানে..সবাই টমির লাশের টুকরো দেখে ভয় পেয়েছে কারন তারাও জানে ধ্রুভের কাছে টমি কি ছিলো।।
ধ্রুভ চায় নি রাহি এইসব কিছু দেখুক..এইজন্য সে সকাল সকাল এই বাড়ি আর শহর ছেড়ে অন্য শহরে শিফট হতে চেয়েছে..ব্যবস্থা অলরেডি করেও ফেলেছে,অন্য শহরে তার আরেকটা বাড়ি আছে সেখানে যাবে..কিন্তু যার জন্য এইসব করা সে অলরেডি এইসব দেখে ফেলেছে..ধ্রুভের মেজাজ সপ্তমে উঠে আছে এক ত টমির খুন আর দ্বিতীয়ত তার আড়ালে কে এতোকিছু করার সাহস পায়??
টমিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ফরেনসিক ল্যাবে,তার শরীরের যদি কিছু পাওয়া যায় এই ভেবে পুলিশ টমির লাশ নিয়ে গেছে..অবাক করার বিষয় টমির চার পায়ে একটাও নখ নেই..কেমন বিশ্রিভাবে সেই নখগুলো তুলে ফেলা হয়েছে..চোখগুলো ও তুলে ফেলা হয়েছে..এরকম মর্মান্তিক কাজ করতে ওই খুনীর বুক কাপে নাই!!
এদিকে লন্ডনের ব্রেকিং নিউজে ধ্রুভের বাড়িতে তার পালিত কুকুরের খুনের খবর সারা লন্ডন ছেয়ে গেছে..সেই সাথে ছেয়ে ধ্রুভের বিবাহিত হবার খবর..সবচেয়ে অবাক করার বিষয় ধ্রুভের এইসব নিয়ে মাথাব্যাথা নেয়,তার মাথায় চলছে অন্য খেলা..আপাতত সে তার মীরাকে নিয়ে ব্যস্ত..উপরের আসার পর থেকে সে বেহুশ হয়ে পরে আছে..ডাক্তার ও ডাকা হয়েছে।।
একটা অবয়ব রাহির পিছনে মস্তবড় চাকু নিয়ে বিকট হাসি নিয়ে রাহির পিছনে ধাওয়া করছে প্রথমে সে টমিকে কাটলো তারপর এখন রাহির পিছনে পরেছে..রাহি প্রানপনে ছুটছে,ছুটতে ছুটতে এক সময় ইটের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গেছে সে..পিছু সরছে আর সামনে এগিয়ে আসছে অবয়বটি চাকু নিয়ে..রাহি ডুকরে কাদঁছে, পিছু সরতে সরতে রাহির কিছুতে আটকে গেলো..ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালে সে দেখতে পায় ধ্রুভকে..রক্তিম চোখ,চুল আউলা ঝাউলা..পরনে ময়লা শার্ট,উস্কুখুস্কু হয়ে আছে সে..ধ্রুভ রাহির কাছে বসে, রাহিকে দাড় করিয়ে তার সামনে আসলো..আর ওমনি অবয়বটি রেগে ধ্রুভের পিছন থেকে চাকু ঢুকিয়ে দিলো।।
“না!!” অনেক জোরে চিৎকার দিয়ে রাহি বিছানাতে শোয়া থেকে বসা অবস্থায় উঠলো,এমন চিৎকার ধ্রুভ ও ভয় পেয়ে গেছে।।
রুমের দরজা সাউন্ডপ্রুফ,সে নিচে এসেছিলো তার মীরার জন্য চিকেন নাগেট নিয়ে যেতে..দরজা খুলে রেখেছিলো যেন সে বন্ধ দরজা দেখে ভয় না পায়,কিচেনে এসে কাজ সারে..যারা জিনিসপত্র অন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সাথে কথা বলতে লেগেছিলো..এমন সময় রাহির চিৎকার শুনে ধ্রুভ ভয়ে এক দৌড় দিলো।।
“হেয় মীরা!!কি হয়েছে বলো??!” ধ্রুভ দৌড়ে ঘরে রাহিকে বুকের মধ্যে ধরে বললো।।
রাহি তখন হাসফাস করছে,এসি চলছে তারপরেও সে কুলুকুলু কতদ ঘেমেই চলছে..নিঃশ্বাস নিতে পারছে না সে।।
“টমিকে কেও মেরেছে ধ্রুভ!!বিশ্বাস করো!!ও তোমাকেও মারবে ধ্রুভ!!” রাহি এক নাগাড়ে এই কথাগুলো বারবার বলছে ধ্রুভকে।।
ধ্রুভের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো,তার মীরা তাকে তুমি ডেকেছে..সে তার মীরাকে বুকের সাথে আরেকটা লেপ্টে ধরলো।।
“রিল্যাক্স মীরা!!ডোন্ট স্কেয়ার্ড,আ’ম হেয়ার ফর ইউ!! আমি যতদিন আছি কেও তোমাকে টাচ করা দূরে থাক,তাকালেও সেই চোখ উপড়ে ফেলবো!!আর তুমি যতদিন আছো আমি নিঃশ্বাস নিব ভালোভাবে!!আর তোমাকে থাকতেই হবে!!তুমি আমারি!!আর হ্যা তুমি বলার জন্য এটা গিফট!!” ধ্রুভ কথাটা বলে রাহির ঠোটে বেশ লম্বা একটা চুমু খেলো।।
রাহি ত ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে,একে ত এই দুঃস্বপ্ন আর ধ্রুভকে সে তুমি ডেকেছে।।
“ইয়ে মানে,..আপনি!!” রাহি বলতে গেলে ধ্রুভ তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিলো।।
“তুমিতে থাকো,আপনিতে নামলে খবর আছে!! ” ধ্রুভ রাহির ঠোটে আরেকটা চুমু সাথে হালকা কামড় দিয়ে বললো।।
“টমিকে খুন করা হয়েছে!!আমার মন বলছে বিশ্বাস করো!!” রাহি কাঁদতে কাঁদতে বললো।।
“আই নো মীরা!!কে করেছে,তার দশাও ঠিক টমির মতোই হবে!!তুমি শুধু শুধু চাপ নিও না!!আমি আছি ত!!’ধ্রুভ রাহিকে বুঝাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তার মাথায় চলছে অনেক ভয়ংকর অন্যকিছু,মাথার একপাশ কেমন অবশ লাগছে হয়তো সময়মত ইঞ্জেকশনটা নেয়া হয় নি এইজন্য।।
চলবে?
গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।