কাঠগোলাপ পর্ব ১৯

0
1980

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব ঊনিশ

?

ধ্রুভ মাথা চেপে নিজের রুমের দিকে এগোলো,রাহি দাড়িয়ে এতোক্ষন নিজের ঘটনাগুলো আড়াল হয়ে দেখছিলো..সে অবাক একটা ডাক্তার মানুষ কিভাবে এরকম ব্যবহার করতে পারে??আর এই কুকুর এখানে কি করে??কুকুর দেখে সে ভীষণ ভয় পায় এটা কি এই লোক জানে না??।।

“মীরা!!’ধ্রুভ ঘরে এসে ক্ষীন স্বরে ডাকলো।।

” হুম!!”রাহি ধীর স্বরে বললো।।

“আমার মাথার ভেতরটা কেমন করতেছে??নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না!!” ধ্রুভ কথাটা বলে ধপাস করে পরে যেতে গেলে রাহি দৌড়ে তাকে এসে ধরে ততক্ষনে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে অলরেডি।।

“ধ্রুভ কি হয়েছে?? প্লিজ উঠুন!!” রাহি নানান ভাবে ডাকতে লাগলো ধ্রুভকে কিন্তু রেসপন্স নাই,রাহি তখন কোন রকমে রিবা আর লেনাকে ডাকলো..ওদের সাহায্যে ধ্রুভকে বেডে শোয়ালো..এখন ধ্রুভের কিভাবে জ্ঞান ফিরাবে বুঝতে পারছে না,তখন রিবা পরিচিত একটা লেডি ডাক্তারকে ফোন করলো..যেহেতু ধ্রুভের কড়া নির্দেশ এই বাড়িতে মীরার উপস্থিতিতে কোন পুরুষের আসা নিষেধ সেহেতু জানাশোনা ভালো জ্ঞান সম্পন্ন ডাক্তারকে ডাকা হলো।।

মিনিট দশেক পর ডাক্তার আসলো,ধ্রুভের কাছে বসে আছে..পালস রেট আরো বিভিন্ন কিছু চেক করছে..রাহি এক কোনে দাড়িয়ে আছে,বুক তার দুরুদুরু করছে এর আগে কখনো এই মানুষটার জন্য এরকম ভয় কাজ করে নি তবে আজ কেন??।।

“উনার এই সমস্যা কতদিন থেকে??”লেডি ডাক্তার জিজ্ঞেস ইংরেজিতে।।

রাহিও জবাব দিলো ইংরেজিতে যতটুকু সে রেহেনা ফুফির কাছ থেকে শুনেছে আর নিচে স্মিথের ওষুধ নিয়ে যতটুকু তার মনে ছিলো ততটুকু বললো।।

” ক্যান আই সি দ্যাট মেডিসিন?? “লেডি ডাক্তার বললো।।

রাহি ভ্রু নাচিয়ে রিবাকে জিজ্ঞেস করলে জানায়,যে ওই মেডিসিন টা স্মিথ সাথে করে নিয়ে চলে গেছে কিন্তু ভুলে প্যাকেট ফেলে রেখে গেছে..উনি কখনো মেডিসিনের কোনকিছু ফেলে রেখে যান না,আজ কিভাবে ফেলে রেখে গেছে কে জানে??রিবা সেটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে সেটা নিচে যেয়ে দৌড়ে আনতে গেলো।।

রিবা নিচ থেকে সেই প্যাকেট তুলে এনে রাহির হাতে দিলো,রাহি তখন সেই লেডির হাতে দিলো..উনি মেডিসিন হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকালো।।

অন্ধকারে চেয়ারে বাধা অবস্থায় একজন লোককে দড়ি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে,মার খাওয়ার কারনে লোকটি মাথা নিচু করে আছে ক্লান্ত শরীর নিয়ে..তার সামনে একটা অবয়ব এসে গরম পানি ছুরে মারলো মুখে..ওমনি লোকটি অসহায় ব্যাথাতুর স্বরে আওয়াজ বের করলো।।

লোকটির দিকে অবয়বটি কেমন ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে তাকে ভস্ম করে দিবে।।

” কেনো এসেছিস এখানে??বললাম না কোনদিন তুই সফল হতে পারবিব না??!!’লোকটি ধীর কন্ঠে জবাব দিলো।।

লোকটির এমন কথা শুনে অবয়বটি ভীষন রেগে গেলো,সে তার হাত দিয়ে ওই লোকটির দুই গাল চেপে ধরলো।।

“আমার স্বপ্ন সেই সাত বছর ধরে দেখছি??এতো সহজে আমি হাল ছেড়ে দিব??কখনো না!!আমার স্বপ্ন সেটা খুব শীঘ্রই পূরন হবে!!আশরিক আলফাজ ধ্রুভ খুব জলদি শেষ হবে!!’অবয়বটি লোকটির মুখের উপর কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে গেলো।।

” প্লিজ গড সেভ ধ্রুভ ফর দিস ম্যান!!”লোকটি বিড়বিড় করে বলছে।।

ধ্রুভের মাথার কাছে বসে আছে রাহি,তার মাথার চুলগুলো আস্তে আস্তে নিজের আঙ্গুলের ভাজে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে..ধ্রুভ পিটপিট করে চোখ খুলছে,সেই নিভু নিভু চোখ দিয়ে দেখলো রাহি তার মাথার কাছে বসে আছে।।

ধ্রুভ রাহিকে টান মেরে তার কাছে নিয়ে এসে,তার উপর ভর দিলো..রাহি অবাক হলেও শান্ত হয়ে গেলো,সে আস্তে আস্তে ধ্রুভ নামক মায়াতে জড়াচ্ছে..ধ্রুভ তার উপর ভর দিয়ে থাকলেও,রাহির মাথাটাকে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে আছে ধ্রুভ।।

“আমি তোমার সাথে হাজার বছর বাঁচতে চাই!!তোমার মধ্যে বাঁচতে চাই,তোমার সাথে থাকতে চাই!!”

ধ্রুভ কথাগুলো বলে রাহির ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিলো..এতো গভীরভাবে তার ঠোটে চুমু খাচ্ছে মনে হচ্ছে কত শত বছর ধরে সে এইটার জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করেছে,রাহি বাধা দিচ্ছে না কিন্তু রেসপন্স ও করছে না..সে ধ্রুভের টি-শার্ট দুই হাতে মুঠ করে ধরে আছে..ধ্রুভ রাহির কোমর শক্ত করে ধরে আছে,চুমুর পাল্লা ভারী হচ্ছে..নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছে,ধ্রুভের পাগলামি বাড়ছে..ঠোট ছেড়ে গলায় নেমে আসলো..কাধের কালো তিলে একটু করে কামড় দিলো,দুই গালে শক্ত করে চুমু দিলো..গলাতে টুকরো টুকরো অনেকগুলা চুমু দিলো..এক সময় চুমুর প্রতিযোগিতাতে ক্লান্ত হয়ে,একে অপরের বাহুডোরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমের মাঝে তলিয়ে গেলো।।

“তোমাকে যতটা ভালোবাসা যায় সেটা সবসময় ধারনার বাহিরে থাকবে!!” ধ্রুভ ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছিলো যখন রাহির কানের কাছে ঘুমানোর আগে এই কথা বলেছিলো।।

বাংলাদেশ,

রেহেনা মাথায় হাত দিয়ে রুবেলের সামনে বসে আছে..কিছুক্ষন আগে রুবেল তাকে ধ্রুভ আর রাহির সমস্ত কথা বলে দিয়েছে..গ্রাম থেকে ফিরে এসে উনি যখন রাহির খোজ করতে ওদের বাড়িতে আসে তখন রুবেলকে একা একা খেতে দেখে জিজ্ঞে করে রাহি কোথায়??আর সে একা কেন রেধে খাচ্ছে??

রুবেল তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো সমস্ত কিছু.. সব শুনে উনার চোখ ত কপালে,উনি মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরলো।।

“তুই কিভাবে পারলি ওই পাগলের সাথে রাহিকে ছেড়ে দিতে??যেদিন এসেছিলো সেদিনই পাঠিয়ে দিতি??” রেহেনা হতাশ গলায় বললো।।

“আমি কিছু করি নি ভাবছো??চিন্তা করো যে আমার উপস্থিতিতে আমার বাড়িতে থাকার কথা বলে আবার যতদিন বিয়ে না হয় ততদিন থাকার হুমকি দেয়??আবার আমাকে বেহুশ করে আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যায়??” রুবেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো।।

“কি যে অবস্থায় আছে আমার রাহি কে জানে??!” রেহেনা বললো।।

“ভালো থাকবে ইনশাআল্লাহ!! আমি এরকম কাওকে আমার পুতুলকন্যার জন্য খুজছিলাম!!আমার পুতুলকন্যার জন্য যে মরিয়া হয়ে উঠবে!!আমি জানি আমার রাহি ভালো থাকবে!!” রুবেল স্মিত হেসে বললো।।

“তুই কি পাগল??অবশ্য তোকে আর কি বলবো, তুই নিজেও ইস্পিকে(রাহির মা)স্কুল থেকে তুলে নিয়ে গেছিলি??স্কুল ইউনিফর্মে বেচারি ঘেমে নেয়ে একাকার!!তুই সেদিন ওরে ধমকে বিয়ে করেছিলি!!” রেহেনা বললো।।

“সেদিন ইস্পিকে যদি আমি তুলে বিয়ে না করতাম তাহলে আমার ওকে নিয়ে যেটা ভয় পেতাম সেটা দূর হতো না!!ইস্পিকে আমার চাওয়াই শেষ চাওয়া ছিলো!ইস্পিকে প্রথম দেখাতে আমি গলে গেছিলাম তার উপর!!ভয়ে ভয়ে যদিও সে সাইন করেছিলো রেজিস্টার পেপারে!!সেদিন ওকে নিজের না করলে ওর বাবা অকে অন্য কারো করে দিতো,আমি বেচে থাকতে আমার ভালোবাসাকে কিভাবে অন্যের করে দি বলো??ইস্পি আমাকে ভালোবাসতে যদিও সময় লাগিয়েছিলো কিন্তু যখন ভালোবাসতে শুরু করেছিলো তখন তার ভালোবাসার গভীরতা মাপা মুশকিল ছিলো!!ইস্পি চলে গেছে ঠিকই কিন্ত শেষ স্মৃতি হিসেবে আমার পুতুলকন্যাকে রেখে গেছে!!ইস্পির বাবার সেদিন যা হয়েছিলো অনুভূতি, আমারো সেইম হয়েছিলো অনুভূতি!! আমরা বাবারা মেয়ের প্রতি আলাদা দুর্বল থাকি!!মেয়েদের মা ভাবি!!আমার রাহিকে যে নিয়ে গেছে সে নিশ্চয় ভালো রাখবে!!আর আমার বিশ্বাস আমার পুতুলকন্যা তাকে সুস্থ করবে!!কিন্তু ভয় একটাই যদি আমার পুতুলকন্যাকে ভুলে যায় কখনো??আমার মেয়ে যদি তাকে ভালোবেসে সব শুরু করে আর সে যদি ছুড়ে ফেলে দেয়?আমার ইস্পির শেষ স্মৃতিকে আমি কষ্টে দেখতে পারবো না রে!!” রুবেলের কথাগুলো বলার সময় চোখে জল চিকচিক করছিলো।।

রেহেনারও চোখে জল চিকচিক করছে,ভাইকে কি বলে শান্তনা দিবে বুঝছে না..সে নিজেও দেখছে,ইস্পি ভাবীর জন্য রুবেল কতটা পজেসিভ ছিলো!!

লন্ডন,
সকালবেলা,

কেমন একটা মৃদু আওয়াজ রাহির কানে আসছে,পুলিশের গাড়ির যেরকম আওয়াজ হয় ঠিক সেরকম আওয়াজ কানে আসছে বুঝছে না কার আওয়াজ এটা..রাহি পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো ধ্রুভ আজ পাশে নেই,চোখে খুলেও বুঝছে আওয়াজটা নিচ থেকে আসছে..কোনরকমে মাথায় ওড়না দিয়ে রাহি নিচে গেলো।।

রাহি গার্ডেন এরিয়াতে এসে যা দেখলো তাতে তার চোখ কপালে..ভয়ে জনা ধুকপুক করছে,গার্ডেন ভর্তি মানুষ..ফরেনার পুলিশ সামনে,রিবা আর লেনা কাঁদছে..রাহির ও চোখে জল জমেছে..দাড়ানো শক্তিটুকু মনে হচ্ছে নাই আর!!

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,রেসপন্স আসলে লিখার আগ্রহ আসে..কালকে গল্প দিব না,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে