কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0
519

#কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
#শেষ পর্ব
নিলয়ের সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছে সাড়ে চার বছর আগে। ওই যে যাবার আগে আমায় নিয়ে রিকশা করে ঘুরে, ফিরে হোস্টেলের গেটের সামনে নামিয়ে দিয়েছিল সেই ই শেষ দেখা। হ্যাঁ তারপর আর দেখা হয় ও নি।

এই চার বছরে আমি নিজেকে নতুন রুপে আবিষ্কার করেছি। প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ানো জীবন ছেড়ে অন্য এক জীবনে পা রেখেছিলাম একজনের উপর জেদ করে। সেই একজন সেদিন ও আমার কাছে যেমন ছিলো আজও তেমন আছে। না তাকে আমি ভুলতে পারিনি! অথচ ভুলে যাবার জন্য কত কী ই না করেছি। সেগুলো ভেবে আনমনে নিজে নিজে এখনো হাসি। আমার দিন শুরু হতো চরম ব্যস্ততায়, তবুও সেই ব্যস্ততার মাঝে একটা সময় কাটতো নিলয়ের টুকরো স্মৃতিগুলো নিয়ে। খুব ই অল্প সময়ের আলাপে এরকম ও যে হতে পারে সেটা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। আমার যারা ক্লোজ তারা বলে দেখ গিয়ে নিলয় হয়তো অন্য কাউকে মন দিয়ে বসে আছে। ওসব টুকিটাকি প্রেম বাচ্চাকালেই চলে। তুই শুধু শুধু ওকে ভেবে সময় নষ্ট করছিস।

আবার কেউ কেউ খোঁচা মেরে বলতো তোমাদের গল্প তো পুরাই ফিল্মি। আমি তাদের কিছু বলি না। আমার ভালো লাগে নিলয় কে ভাবতে। মন বলে নিলয় একদিন সত্যিই আসবে। সে আমাকে ভালো না বাসলেও পছন্দ যে করে সেটার ক্লু দিয়ে গেছে। আর সেটুকু পুজি করেই আমি অপেক্ষায় আছি।

****
নিলয় চলে যাবার পর আমি ওর সাথে যোগাযোগ করিনি। আমি ওর চিরকুট হাতে পেয়ে অপেক্ষা করছিলাম যে ও হয়তো নিজে থেকেই আমাকে ফোন করবে। কিন্তু সেটা করেনি। আমিও আর দ্বিতীয়বার বেহায়া হতে পারলাম না। তবুও আমার দিন শুরু এবং শেষ হতো নিলয়ের এক্টিভিটি দেখে। তার গলার স্বর না শুনলেও হাসিখুশি ছবিগুলো দেখে সন্তুষ্ট থাকতাম। অপেক্ষা করতাম যে নিলয় একদিন হুট করে ফোন করবে কিংবা যোগাযোগ করবে। কিন্তু সেরকম কোনো কিছু ঘটলো না।

ছুটিতে বাড়ি গেলে আন্টির কাছে জানতে পারতাম যে নিলয় ভালো আছে। আন্টি সবসময়ের মতোই ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন। নানান ধরনের গল্প করতেন। একবার বললেন,

এই প্রত্যাশা নিলুকে একটা বিয়ে দিলে কেমন হয়? একটা লাল টুকটুকে বউ আসবে।

আমি হেসে বললাম, ভালোই হবে আপনিও একটা মেয়ে পেয়ে যাবেন।

আন্টি খুশি হন। একটু পরেই আবার বলেন,

“এই প্রত্যাশা নিলুর কী কোনো পছন্দ আছে? জানো কিছু?”

“না আন্টি সেসব কী করে জানব!”

“তোমাকে কখনো বলেনি?”

“না আন্টি। আমার সাথে তো অল্প কয়েক মাসের আলাপ ছিলো, এতোটা ঘনিষ্ঠতা তো ছিলো না। ”

আন্টি অবাক হয়। বলে, কী বলো! নিলু তো তোমাকে খুব পছন্দ করতো।

নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। আন্টি এসব কী বলছে। আমি যে আন্টিকে কথাটা আরেকবার জিজ্ঞেস করবো সেই সাহস হয় না। চোখ জ্বলতে শুরু করে। মনে মনে বলি, আমারও তো তাই মনে হয়েছিল আন্টি। কিন্তু আপনার ছেলে তো…..

পরেরবার যখন ছুটিতে বাড়ি গেলাম তখন শুনলাম আন্টি, আংকেল বাসা ছেড়ে দিবেন। মায়ের কাছে কারন শুনলাম যে তাদের বাড়ি বানানো কমপ্লিট হয়ে গেছে তাই ফিরে যাচ্ছে। এই ঘটনা শুনে আমার অবচেতন মন বলল, নিলয় কে তুই হারিয়ে ফেলছিস প্রত্যাশা। এরপর আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আন্টির সাথে দেখা হলে আন্টি বললেন, প্রত্যাশা লাল টুকটুকে বউয়ের স্বপ্ন তো শেষ। নিলু তো দেশে ফিরতে চাইছে না। ওখানেই নাকি সেটেল হয়ে যাবে।

আমার শরীর খারাপ হতে শুরু করে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, কেন ফিরবে না আন্টি?

“আরে ওখানে খুব ভালো অপরচুনিটি পেয়েছে যে! আমাদের ও নিয়ে যাবে বুঝলে। তোমার আংকেল অবশ্য গাইগুই করছে না যাবার জন্য। কিন্তু আমি বলেছি যে যাব ই। বছরে ছয়মাস না হয় দেশে এসে থাকব। ”

আন্টি হড়বড় করে কথা বলে যাচ্ছিল। তার গলায় খুশি উপচে পড়ছে। আমি আর কিছু বললাম না।

আন্টিরা চলে গেলেন। নিলয়ের গাছগুলো আমার অনুরোধে রেখে গেলেন। কিছু গাছ এখনও আমার বারান্দায় রয়ে গেছে। বাড়িতে এলে ওগুলো দেখে আমার বুক টা হু হু করে ওঠে। আন্টির ভাষ্যমতে নিলয় যেহেতু ওখানেই থেকে যাবে তাই লাল চুলওয়ালা কাউকে বিয়ে করে নেবে। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে নিলয় ঠিক ই ফিরে আসবে। কোনো এক কমলা রোদের বিকেলে এসে বলবে চলো প্রত্যাশা ফুসকা খেয়ে আসি। তুমি না খেলেও আমার পাশে বসে থাকবে। রিকশায় গায়ে গা লাগিয়ে না বসার জন্য খটমট কিছু একটা বলবে। কিন্তু সেই দিন টা কবে আসবে আমি জানিনা।

যেটুকু আশা ছিলো তাও গুড়ে বালি হয়ে গেল যখন নিলয়ের অনলাইন এক্টিভিটি পেলাম না। একাউন্ট ডিজেবল প্লাস নতুন আইডিও নেই। আমার ভালো থাকার রসদ টুকুও শেষ হয়ে গেল।

গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি শুরু করছি। এই চাকরিতেও বাবা মায়ের ঘোর আপত্তি। পড়াশোনা করতে চেয়েছ ঠিক আছে কিন্তু চাকরি কেন বাপু! তাদের ভাষ্যমতে, তাদের অনেক আছে তবুও কেন চাকরি করতে হবে। আমি বললাম, আমার একটা নিজের আইডেন্টিটি থাকুক। এত কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি সেটা বৃথা কেন যাবে! ভাইয়া ফুল সাপোর্ট করলো এখানেও। ভাইয়ার বউ মানে আমার ভাবীও আমাকে সাপোর্ট করলো।

চাকরি জীবনে ক’টা মাস কাটতেই বাবা মায়ের বিয়ের ঘ্যানঘ্যান শুরু হয়ে গেল। তাদের স্পষ্ট কথা হলো পছন্দ থাকলে সেটা বলে দাও। আমার উত্তর ছিলো, এখন নয় পরে।

মায়ের এই ঘ্যানঘ্যান ভাঙা রেকর্ডের মতো দিন রাত কানের কাছে বাজতেই লাগলো। আর আমিও ধৈর্য্য ধরে শুনতে লাগলাম। একবার ভাবী জিজ্ঞেস করলো, নিলয়ের জন্য আর কত অপেক্ষা করবে প্রত্যাশা?
আমি উত্তর দেই না। চুপ করে থাকি। আন্টিরা চলে যাবার পর আমি ইচ্ছে করেই যোগাযোগ করিনি। খানিক টা অভিমান ও ছিলো, আর বাকী টা ছিলো ইগো।

****
বাবা মায়ের চাপে পড়ে একবার পাত্র পক্ষের সাথে দেখা করতে গেলাম। পাত্র পক্ষ বললে ভুল হবে, শুধু পাত্রের সঙ্গে। ভদ্রলোকের নাম আদিব। কানাডা থেকে এমবিএ করে এখন ফ্যামিলি বিজনেস সামলাতে ব্যস্ত। ভদ্রলোকের নিজের কোনো পছন্দ নেই তাই বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করবে। ওনার সাথে কথা বলে বোঝা গেল যে উনি ইন্টেরেস্টেড। কিন্তু আমার দিক থেকে আমি ক্লিয়ার করলাম যে আমার পক্ষে বিয়েটা করা সম্ভব না।

ভদ্রলোক স্বাভাবিক ভাবে নিলেন। বললেন যে জোর করবেন না। তবে কারণ টা কী বয়ফ্রেন্ড ইস্যু নাকি অন্যকিছু।

আমি প্রথমে বলতে চাইছিলাম না। পরে ভাবলাম যে কথাটা বলে দেয়াই ভালো হয়। কারণ না হলে ব্যপার টা ওনার জন্যও ইনসাল্টেড। উনি হয়তো ভাববেন যে ওনাকে পছন্দ হয় নি। আমি ওনাকে নিলয়ের সব টা খুলে বললাম। সব শুনে উনি গম্ভীর গলায় বলল,

“আপনার কী মনে হয় উনি আপনার কাছে ফিরবে?”

“হ্যাঁ মনে হয়। কারন সে আমাকে যথেষ্ট ক্লু দিয়ে গেছে। ”

“তাহলে এতোদিনেও ফিরছে না কেন! সাড়ে চার বছর কিন্তু লং টাইম। ”

” কেন ফিরছে না সেটার যেমন কোনো লজিক নেই, তেমন ফিরবে সেটার ও লজিক নেই। ”

“আচ্ছা বুঝলাম। ”

“ধন্যবাদ আপনাকে এতটা বোঝার জন্য। ”

“কিন্তু প্রত্যাশা আমার মনে হয়, আপনি যেমন ইগো’র জন্য তার সাথে যোগাযোগ করছেন না তেমন সেও করছে না। ”

“হতে পারে। ”

“আপনার কী মনে হয় না ইগো দূরে সরিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা?”

“মনে হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার আমি তার কাছে বেহায়া হতে পারব না। ”

আদিব সাহেব হেসে ফেলল। বলল,

“উনিও হয়তো মনে মনে এটাই ভাবছে। ”

“মানে?”

“মানে উনি যখন আপনার জন্য কিছু একটা ফিল করেছিল তখন কিন্তু আপনার কাছে ফিরে এসেছিল। আপনি তখন অভিমানের পাহাড় তুলে রেখেছিলেন তাই সেটা বুঝতে পারেন নি। আপনার অভিমান এতোটাই প্রখর ছিলো যে আপনি বুঝেও বুঝতে চান নি। ”

আমি চুপ করে রইলাম। উনি আবারও বললেন,

“আপনার অভিমান ভেঙেছে আপনি যখন ওই চিরকুট টা খুঁজে পান তখন তাই না?”

আমি মাথা নাড়লাম।

এই চিঠিটা আপনি যদি আগে পেয়ে যেতেন তাহলে আপনার গল্পের এন্ডিং টাও আরও আগে পেয়ে যেতেন।

“মানে?”

“মানে আপনার অভিমান ভেঙে যেত আর কী….
প্রত্যাশা শুনুন, ভালোবাসা হলো চমৎকার একটা সাবজেক্ট। যেখানে এক মুঠো মায়া, এক চিমটি চমৎকার অনুভূতি, আর খানিকটা মান, অভিমান থাকে। সেখানে ইগো’কে জায়গা দিতে হয় না।

আদিব সাহেবের কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগলো। আমি সারারাত তার কথা ভাবলাম। নিলয় একদিন আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, হ্যাঁ তারপর ক্ষমাও চাইতে এসেছে কিন্তু আমি যেমন বুঝতে পারিনি তেমন নিলয়ও আমাকে বুঝাতে পারে নি। তাই বলে এতোটা রাগ কিংবা ইগো নিয়ে থাকা কী ঠিক! ঠিক না। নিলয় কে তো আমি ভালোবাসি তাই নিশ্চয়ই আরেকবার বেহায়া হওয়া যায়!

****
আন্টির যে কন্টাক্ট নাম্বার আমার কাছে ছিলো সেটায় লাগাতার ফোন করেও পেলাম না। ভাইয়াকে দিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম আন্টি আঙ্কেল দুজনেই হ্বজে গেছেন। তাই তারা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই। জীবনের সবচেয়ে কষ্টের কিংবা মধুর যন্ত্রণার নাম যে অপেক্ষা সেটা হাড়েমজ্জায় টের পেলাম। একেকটা দিন কাটে অসহ্য অস্থিরতার মধ্যে।

দিন সাতেক পর আদিব সাহেব একদিন টেক্সট করলেন। লিখলেন,

“প্রত্যাশা, আই হোপ ভালো আছেন। আপনার সাথে অল্প সময় আলাপ কিংবা কথা বলে এটুকু বুঝেছি যে আপনি একজন চমৎকার মানুষ। চলা পথে কিছু মানুষ কে ক্ষনিকের দেখায় ই মনে হয় কতো আপন! আপনি তেমন একজন। তাই একটা ভয়ংকর কাজ করে ফেলেছি। কী কাজ করেছি সেটা আপনার ইমেইল চেক করলে পেয়ে যাবেন। আপনার অনুভূতি কিংবা প্রতিক্রিয়া কী হবে জানিনা তবে এটা না করলে মন খচখচ করতো।

আমি মেইল চেক করলাম অতিদ্রুত। সেখানে মিশেল রাহেজা নামে অবাঙালি একাউন্ট থেকে টেক্সট এসেছে,

“ডিয়ার প্রত্যাশা, আমরা আজকের দিন টার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমাদের গ্রুপে হাইয়েস্ট মার্কস পাওয়া ছেলেটা তার হতাশা দূর করতো একটা সাধারণ মেয়ের মুখচ্ছবি দেখে। সেই মেয়েটা তুমি। তার ধারণা কোনো একদিন তুমি তাকে চমকে দেবে আর সেই দিন টা হবে তার জীবনের অন্যতম একটা সুন্দর দিন। কিছুদিন আগে তোমার ব্যাপারে জানতে পেরে আমরা বুঝে গেছি যে সেই দিন টির আর দেরি নেই। তুমি কী একবার সেই ছেলেটাকে ফোন করবে?

আমি ইমেইল টা অনেক বার পড়লাম। শেষ কবে এতটা ব্যকুল হয়ে কেঁদেছিলাম মনে পড়ে না। আমি আদিব সাহেব কে ফোন করলাম। ভদ্রলোক ফোন ধরে অমায়িক গলায় বলল, তোমার প্রথম ফোন টা তো অন্য কোথাও করা উচিত।

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, থ্যাংকস এ লট!

“আর দেরি কোরো না। এরপর কী করবে সেটা তোমার ভাইয়ার কাছ থেকে জানতে পারবে। আর হ্যাঁ তোমার বিয়েতে ইনভাইট করতে ভুলে যেও না। অনেক দিন কবজি ডুবিয়ে খাই না। হাহাহা।

****
আজ নিলয় আসবে। আন্টি আঙ্কেল এসে গেছে। ভাইয়া তাদের হ্বজে যাবার ব্যাপার টা আমাকে বানিয়ে বলেছে। সেই গল্পটুকু পরে বলি। আগে আমাদের ফ্যামিলির প্রতিক্রিয়া বলে নেই।

আমার মা সব টা শুনে বলল, আমি তো আগেই জানতাম যে এরকম কিছু একটা খিচুড়ি পাকানো হচ্ছে। ছেলেটা খুব ঘুরঘুর করছিল আমার মেয়ের পিছনে। আমার মেয়েটা তো সোজা সরল। এতো প্যাঁচগোছ আমার মেয়ের তো নেই। পড়াশোনা, চাকরি এসবের ভুত তো ওই ছেলেই ঢুকিয়েছে।

আমার বাবার রিয়েকশন, ছেলে ঘরের পাশে থাকতে হিল্লিদিল্লি কতো ঘুরলাম। যুগের চক্করে পড়ে ছেলে, মেয়ে দুটো ভালো খেল দেখিয়েছে।

আমার ভাইয়ার প্রতিক্রিয়া হলো, তোর কপাল ভালো যে আমি সেই বিয়েটা আটকেছিলাম। নাহলে তোর ছেলেমেয়েরা নিলয়ের মা’কে নানু আর নিলয় কে মামা ডাকতো। হাহাহা।

আমার ভাবী সে আপাতত ব্যস্ত বিয়েতে শাড়ি নাকি ল্যহেঙ্গা পরানো হবে সেটা নিয়ে। একমাস আগে পারসোনায় বুকিং দিয়ে রাখার পরও তার মাথায় হঠাৎ ভুত চাপলো ডেস্টিনেশন ওয়েডিং এর।

এবার আমার আন্টি ওরফে হবু শাশুড়ী মায়ের কথা বলি। আন্টি আমাকে দেখেই চিৎকার করে বললেন, এই প্রত্যাশা একটা জোরে চিমটি কাটো তো। আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। আন্টি বললেন, আরে আমি তো মনে মনে তোমাকেই চাইছিলাম।

আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম, কই সেটা তো আপনি কখনো বলেন নি। আপনি তো লাল টুকটুকে বউ খুঁজছিলেন নিলুর জন্য।

আন্টি আহ্লাদী গলায় বললেন, আরে তুমিও তো লাল টুকটুকে।

আঙ্কেল মানে আমার হবু শ্বশুর মুখে কিছু বলছেন না। আপাতত তার চিন্তা হলো আন্টির আব্দার কিভাবে মেটাবেন সেটা নিয়ে। আন্টি বলেছেন তার ছেলের বিয়েতে হাজার খানেক ফকির, মিসকিন খাওয়াতে। কিন্তু আঙ্কেলের ধারণা দেশ উন্নত হয়ে গেছে। ঢাকা শহরে এতো মিসকিন পাওয়া যাবে না।

***
নিলয় কে পাবার ঘটনা অনেক টা নাটকীয় ভাবে। আমার প্রেমের সব টা’ই অবশ্য নাটকের মতো। আদিব সাহেব সেদিন আমার সঙ্গে দেখা করে ফিরে গিয়ে ভাইয়াকে সব টা বললেন। ভাইয়ার কাছে চিরকুটের কথা আমি বলিনি। আর ভাবীও জানতেন না। তাই ভাইয়া আন্টির সাথে যোগাযোগ করে নিলয়ের সাথে যোগাযোগ করে পুরো ব্যাপার টা ঘটালো।

এখানেও শয়তান ছেলেটা খুব ভাব নিলো। ইমেইল টা পাঠিয়েছে বন্ধুকে দিয়ে। নিজেও পাঠায় নি। শেষ পর্যন্ত আমায় বেহায়া বানিয়ে ছাড়লো। আস্ত শয়তান একটা।

আমি ভাইয়ার কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে নিলয় কে ফোন করেছিলাম। নিলয় শুধু হ্যালো বলেছিল৷ আর আমি একটা কথাও বলতে পারিনি। কেঁদে কেটে মহাসমুদ্র বানিয়ে ফেলেছিলাম।

****
সাড়ে চার বছর পর প্রথম দেখায় নিলয় আমাকে দেখে বলল, হায় খোদা তোমার এই অবস্থা! তোমার জন্য তো রিকশা অর্ডার করে বানাতে হবে। নরমাল রিকশায় তুমি বসলে আমি তো স্পেস পাবো না।

আমি চোখ পাকিয়ে তাকালাম। নিলয় হেসে ফেলল। বলল, টেষ্ট করে দেখছিলাম যে আগের প্রত্যাশা কি না!

“তুমি কেন এসেছ? তোমার বন্ধুকে পাঠাতে সে এসে বিয়ে টা করতো। ”

নিলয় হাসতে হাসতে বলল, তুমি তো দেখছি এখনো ক্ষ্যাপাটে আছ! এই মেজাজ কী বাসর অবধি চলবে?

আমি নিলয়ের গায়ে মারতে মারতে বললাম, আমি মোটেও তোমাকে বিয়ে করবো না। তুমি খুব ই খারাপ একটা মানুষ।

“আই নো। তবে সমস্যা নেই তুমিও তো লেডি ভিলেন। ”

“শয়তান ছেলে! আমায় এতো এতো কষ্ট দেয়া! তোমার জীবনে ভালো হবে না।

“কষ্ট তুমিও দিয়েছ, আমিও দিয়েছি। শোধবোধ। তাছাড়া আমিও অনেক বেহায়া হইছি। সো… এসব বাদ।”

“আচ্ছা তুমি যে আমার ব্যগে চিরকুট টা রেখেছিলে সেটা কখন রেখেছিলে? ”

“আইসক্রিম খেতে গিয়ে তুমি যখন ভ্যা ভ্যা করে কাঁদার জন্য একটু দূরে গিয়েছিলে তখন।”

“আর প্রথম কবে ভালোবাসতে শুরু করলে?”

“যেদিন রোজিকে ম্যাসেজ দেবার জন্য অনেকগুলো বকা দিয়েছিলাম সেদিন। বাসায় যেতেই খুব খারাপ লাগলো। তবে পছন্দ করেছিলাম পায়েশ রেধে যেদিন নিয়ে এসেছিলে। ও হ্যাঁ এক চামচ খেয়েছিলাম। ভীষণ বাজে হয়েছিল৷

আমি নিলয় কে খামচি মেরে বললাম, তুমি এতো কাহিনী না করে ভালোবাসার কথা কেন বললে না?

“তুমি তো আগে ফিল করেছিলে। তাহলে তুমি কেন বললে না?”

“হ্যাঁ আবারও বলতে গিয়ে পঁচা পঁচা কথা শুনি! ”

নিলয় আমার কাছাকাছি এসে বলল, শোনো ক্ষ্যাপাটে মেয়ে, আমি তোমাকে বৃষ্টির চেয়ে কম আর কাঠগোলাপের চেয়ে বেশী ভালোবাসি।

আমি ফিসফিস করে বললাম, প্রিয় বৃষ্টি আজ থেকে তোমাকে আমি খুব হিংসে করি।

নিলয় হেসে ওর নাক দিয়ে আমার নাক টা ঘষে দিলো। আমি ফিসফিস করে বললাম, আমি তোমাকে ফুসকার চেয়ে বেশী আর তেঁতুল জলের চেয়ে একটু কম ভালোবাসি। নিলয় আমার কানে আলতো করে চুমু খেল। আবেশে চোখ বন্ধ করে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। শুরু হলো আমাদের আরেকটা গল্প। ভালোবাসার গল্প।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে