Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"কলা পাতায় বাঁধিব ঘরকলা পাতায় বাঁধিব ঘর পর্ব-০২+০৩

কলা পাতায় বাঁধিব ঘর পর্ব-০২+০৩

#কলা পাতায় বাঁধিব ঘর
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০২+০৩

রাউফুন ওয়াশরুম থেকে এসে খুঁটি গেঁড়ে বসে রইলো। বাড়ির জামাই রাতটুকু থাকবে বলে সবাই রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রাউফুনকে বসে থাকতে দেখে পুষ্প বলল,

-” আমার জ্বর শুনে এসেছেন। আমাকে দেখা শেষ, তাহলে এখনো বসে আছেন কেনো? নিজের বাসায় যান। আপনার ডিউটি নেই? রোগীরা আপনার জন্য বসে আছে যান।”

রাউফুন চোখমুখ কুঁচকে নিলো। কথাটি তার মোটেও পছন্দ হয়নি। অবাক হওয়ার সুর তুলে বলল,
-“আমাকে দেখে তোমার এতই দায়িত্ব জ্ঞানহীন মনে হয়? আমার বউ জ্বরে ম’রে যাচ্ছে। তাকে ফেলে আমি কিভাবে হসপিটালে যাবো? আমি প্রথমবার তোমাকে বুদ্ধিমতী ভাবলেও এখন মনে হচ্ছে তুমি মাথামোটা।”

তেতে উঠলো পুষ্প। এই মানসিক রোগী বলে কী? সে নাকি মাথামোটা। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
-“আপনি এখানে থেকে কোন রাজকার্য উদ্ধার করে ফেলবেন শুনি? আপনি এমন ভাব ধরছেন যেন আপনি থাকলেই আমি সুস্থ হয়ে যাবো।”

রাউফুন জবাব দিলোনা। ঘর ছেড়ে বের হলো। পুষ্প স্বস্তির শ্বাস ফেললো। আপদটা বিদেয় হয়েছে।

নাবিলের ক্ষত শুকিয়ে গিয়েছে। এখন সে হাঁটাচলা, দৌঁড়ঝাপ করতে পারছে। নতুন দুলাভাই পেয়ে সে অনেক খুশি। রাউফের গলায় ঝুলে পড়ে এখন আর নামতে চাইছেনা। নাবিল বলল,

-“আচ্ছা দুলাভাইয়া, তোমারও কি আমার মতো মুসলমানি হয়েছে?”

রাউফুন যেনো বিষম খেলো। তবুও হে হে করে হেসে বলল,
-“শালাবাবু মুসলমানি সবারই হয়।”

নাবিল কৌতুহল দেখিয়ে বলল,
-“কই দেখি দেখি?”

রাউফুনের এবার ইচ্ছে করলো এই কৌতুহলের বাচ্চাটাকে তুলে আছাড় মা’রতে। কিন্তু মনের ইচ্ছেকে মনেই চাপা দিয়ে রাখলো। নয়তো এরা তার নামে কে’স করবে। বউ হয়তো আর তার ঘরেই উঠবেনা। নাকের উপর ডিভোর্স পেপার ছুঁড়ে বলবে “নে রাজাকারের বাচ্চা সাইন করে দে”
রাউফুন ওয়াশরুমের নাম দিয়ে কোনোমতে উঠে গেলো। খাবার টেবিলে সবাই বসলেও পুষ্প আসলোনা। তার খাবার ঘরে দিয়ে আসা হলো। এদিকে নাবিল ধরে ধরে সবাইকে বলছে,
“জানো আমার মতো দুলাভাইয়ার ও মুসলমানি হয়েছে।”

খাবার টেবিলে রাউফুনকে লজ্জায় পড়তে হলো। সবাই মিটিমিটি হাসলেও নাবিলের বাবা ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দিতে কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো। রেহানা খালা এক দৌঁড়ে পুষ্পর ঘরে আসলো কথাটি চালান করতে। পুষ্প মাত্র মুখে খাবার তুললো। হন্তদন্ত হয়ে রেহানা খালাকে ঢুকতে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
রেহানা খালা গড়গড় করে বলতে লাগলেন,
-“আম্মাজান তোমার জামাই নাবিলকে বলেছে তার ও নাকি মুসলমানি হইছে।”

পুষ্পর গলায় খাবার আটকে গেলো। লোকটাকে মানসিক রোগী ভাবলেও এখন মনে হচ্ছে চূড়ান্ত লেভের অস’ভ্য, লুই’চ্চা। ছোট মানুষকে এসব কি বলছে? পুষ্প পানি পান করে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
-“খালা তুমি আমাকে এসব শোনাতে এসেছো? কাজ নেই তোমার?”

ধমক খেয়ে সুড়সুড় করে রেহানা খালা বেরিয়ে গেলো। প্রথম প্রথম পুষ্প উনাকে আপা ডাকলেও রেহানা ঘোর আপত্তি জানিয়ে বললেন,
-“আম্মাজান আমার কোনো বইন নাই। তাই খালা ডাকনের কেউ নাই। তুমি আমাকে খালা ডাকিও।”

ব্যাপারটা বয়স অনুযায়ী বেখাপ্পা হলেও রেহানার পিড়াপিড়িতে খালাই ডাকতে হয়। খাবার শেষ করেই রাউফুন ঘুমানোর জন্য পুষ্পর ঘরে চলে আসলো৷ এসেই পুষ্পর পাশে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো।
পুষ্প রেগে গিয়ে বলল,
-“আপনি এখনো যাননি? এখানে শুয়ে আছেন কেন?”

রাউফুন চোখ বন্ধ রেখেই বলল,
-“তোমাদের সবাই এত এত রিকোয়েস্ট করলো যে না থেকে পারলামনা৷ জামাই মানুষের এত ভাব দেখানো খাটেনা।”

রাউফুন বড় একটা মিথ্যা বললো পুষ্পকে। কেউ তাকে থাকার জন্য জোরাজোরি করেনি। দু’একবার অবশ্য বলেছিলো। তাই সে থেকে গেছে। তার আজ যেতে ইচ্ছে করছেনা। তার মিথ্যেটা পুষ্প ধরতে পারলেও কিছুই বললোনা। একে কিছু বলেও লাভ হবেনা।
পুষ্প ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে একপাশে শুয়ে রইলো। তার ঘুম আসছেনা। পাশে আস্ত এক আপদ থাকলে ঘুম আসে কিভাবে? ছটফট করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে ঘুম ভাঙতেই পাশ ফাঁকা পেলো। রাউফুন নেই। তাহলে কি ওয়াশরুমে গিয়েছে? পুষ্প ওয়াশরুম চেইক করে দেখলো দরজা খোলা। তাই আর মাথা ঘামালোনা। শরীরটা মোটামুটি ভালোলাগছে। ঠিক করলো আজ ভার্সিটি যাবে। নাস্তা করতে গিয়ে টেবিলে ও রাউফুনকে দেখলোনা। নাবিলের বাবা মানে পুষ্পর ছোট চাচা জিজ্ঞেস করলেন,

-“কি ব্যাপার? জামাই কোথায়?”

পুষ্পর মা বললেন,
-“জামাইকে দেখলাম সকাল সকাল বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি চলে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতেই বলল হসপিটাল থেকে জরুরি কল এসেছে।”

পুষ্পর কোনো হেলদোল নেই। সে একমনে খেয়ে যাচ্ছে। ভার্সিটি গিয়ে ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলো। মনে হচ্ছে কতদিন পর তাদের দেখা। একপর্যায়ে জুঁই বলল,

-“হ্যাঁ রে পুষ্প তোর ডাক্তারকে তো দেখালিনা।”

পুষ্প বিরক্ত হয়ে বলল,
-“আমি কি ডাক্তারকে সারাদিন সাথে নিয়ে ঘুরি?”

ইমরান বলল,
-“ডাক্তারকে নিয়ে ঘুরতে গেলে ডাক্তারি করবে কে? ছবি দেখা। বল’দ কোথাকার।”
পুষ্প এবারও সবার আশায় পানি ঢেলে দিয়ে বলল,
-“ছবিও নেই।”

সবাই হতাশ হলো। প্রিয়া বলল,
-“কি বলিস? ছবিও নেই? এটা বিশ্বাস করা যায়?”

পুষ্প গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। অসহায়, থমথমে গলায় রাউফুনের ব্যাপারটা খুলে বলল।
সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠতেই রিয়াদ বলল,
-“তোর ডাক্তার দেখছি হেব্বি রোমান্টিক, বউ সোহাগী। তাহলে তো এই পাগল ডাক্তারকে দেখতেই হচ্ছে।”

সবাই সাথে সুর মেলালো। পুষ্প বিরক্ত হয়ে আড্ডার আসর ছেড়ে উঠে পড়লো। পিছুপিছু রিয়াদ, ইমরান, প্রিয়া, জুঁই উঠে আসলো। তারা বলল,
-“একটু তোর মানসিক রোগীকে কল দিয়ে আসতে বল। আমরা একটু দেখি, ট্রিট ফিট নেবো না?”

পুষ্প কল দিলোনা। তার ইচ্ছে হলোনা। শুধু মনে হচ্ছে এই লোক আজ তার সাথে দেখা করলে সারাদিন তার সাথে চিপকে থাকতে চাইবে। তার যদি লেজ থাকতো? তবে এই ডাক্তার তার লেজ ধরে ঝুলে পড়তো। সবাইকে দমিয়ে রাখতে পুষ্প বলল,
-“চল, আজ আমার পক্ষ থেকে ট্রিট দেবো সবাইকে। ডাক্তারের কাছ থেকে অন্যদিন নিয়ে নিস।”

আজ রোগী দেখায় মন বসছেনা রাউফুনের। বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম হাতুড়ি পে’টার শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে ডানা ভাঙা পাখির মতো ছটফট করতে করতে ম’রে যাবে। জ্বর জ্বর অনুভূতি হচ্ছে। জিহবা তিক্ত স্বাদে বিষাদে পূর্ণ। তবুও নিজেকে ঠিক রেখে রোগী দেখে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরে ভাবলো একটু ঘুম দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। গতরাতে সে ঘুমাতে পারেনি। শুধু ঘুমিয়ে থাকার ভান ধরেছিলো। পুষ্প ও যে অর্ধেক রাত পর্যন্ত বিনা ঘুমে ছটফট করেছে সে সবই টের পেয়েছে সে। কিন্তু কিছুই বুঝতে দেয়নি৷ তাইতো সকাল সকাল পুষ্পকে না জানিয়ে হসপিটালের বাহানা দিয়ে চলে এসেছিলো। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দিলো রাউফুন। ঘুম পুরোপুরি হলেও তার ভেতরের উত্তাল ঢেউ কমলোনা। হার্টবিট কি বেড়ে যাচ্ছে? সাংঘাতিক কাজকারবার। এসব কী হচ্ছে? কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেও শান্তি মিলছেনা। জ্বর জ্বর অনুভূতি হতেই গলায়, কপালে হাত দিয়ে চেইক করলো। নাহ সব তো ঠিকই আছে। শরীরে জ্বর নেই, তবে কি তার অন্তরে জ্বর হয়েছে?

বারান্দার গ্রিল চেপে রাতের ব্যস্ত নগরীর দিকে দৃষ্টি ফেরালো পুষ্প। মানুষের জীবনটা ছোট্ট, আবার অনেক বড়। যারা সুখী মানুষ তারা ভাবে জীবন এত ছোট কেনো? আর যারা দুঃখী? দুঃখ যাদের নিত্যকার সঙ্গী তারা ভাবে জীবনটা কত বড়। আসলে সুখের মুহূর্তে গুলো খুব সহজেই চোখের পলকে কে’টে যায়, আর দুঃখের সময়টা যেনো যেতেই চায়না। পুষ্প নিজেকে সুখী মানুষ দাবী করলেও ভেতরে ভেতরে কোথাওনা কোথাও আস্ত এক বিষাদ পুষে রেখে অভিমানের পাহাড় তুলে বেঁচে আছে মেয়েটা।
পুষ্পর ভাবনার ছেদ পড়লো মোবাইল ফোনের শব্দে। বারান্দা থেকে সরে এসে ফোন হাতে নিলো৷ আননোন নাম্বার। রিসিভ করেই সালাম দিলো পুষ্প।

ওপাশ থেকে সালামের উত্তর দিয়েই ঝটপট কথা শুরু করলো রাউফুন। অস্থির কন্ঠে বলল,

-“পুষ্প আমি বোধহয় তোমাদের বাড়িতে আমার জ্বরের ঔষধ ফেলে এসেছি। একটু খুঁজে দেখবে?”

পুষ্প রাউফুনকে চিনতে পেরে অবাক হয়ে বলল,
-“জ্বরের ঔষধ? কিন্তু আপনি আমাদের বাড়িতে জ্বরের ঔষধ আনলেন কখন?”

রাউফুন একই রকম অস্থির কন্ঠে বলল,
-“আমি কোনো ঔষধ নেই নি তো? কিন্তু তোমাদের বাড়িতেই আমার জ্বরের ঔষধ আছে। আমি নিশ্চিত।”

পুষ্পকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে লাইন কে’টে দিলো রাউফুন। আশ্চর্য হলো পুষ্প। রাউফুনের ফোন করার আগামাথা খুঁজে পেলোনা। এরপর তিনদিন কে’টে গেলো। রাউফুনের কোনো কল, মেসেজ বা তার দেখা পেলোনা। হুট করে চতুর্থদিন রাউফ এসে হাজির হয় পুষ্পদের বাড়ি।

#চলবে…….

#কলা_পাতায়_বাঁধিব_ঘর
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৩

পুষ্পর উপন্যাসের বই পড়ার নেশা হলেও একাডেমিক বই গুলো তেমন ছুঁয়ে দেখা হয়না। আজ একাডেমি বই নিয়েই বসলো। পড়তে পড়তেই বসার ঘর থেকে সোরগোলের শব্দ ভেসে আসলো। সবার সাথে রাউফুনের ভারী কন্ঠস্বর চিনতে অসুবিধে হলোনা পুষ্পর। লজ্জায় তার মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে। রাউফুনের এত আসা যাওয়াতে সবাই কি ভাববে? সে কি এখনও একবারও শশুর বাড়ি গিয়েছে? অথচ বিয়ের পর এ নিয়ে দুবার শশুর বাড়ী আসলো রাউফুন। পুষ্পর আর পড়ায় মন বসলোনা। ঘরেই পায়চারি করলো কিছুক্ষণ।

রোগী দেখা শেষ করেই রাউফুন এখানে চলে এসেছে। একটিবারও পুষ্পর কথা জিজ্ঞেস করেনি। ভাবখানা এমন, যেন সে পুষ্পকে চেনেই না। এবাড়িতে এমনিতেই আসা। অথচ ভেতরে ভেতরে লাফিয়ে ওঠা হৃদযন্ত্রটাকে চেপে ধরে বলছে ‘ভাই একটু থাম, আর একটু! আর একটু অপেক্ষা কর’। রাউফুন মনে মনে সবার উপর রাগ হলো। কি আশ্চর্য! কেউ একবারও তাকে পুষ্পর ঘরে যেতে বললোনা কিংবা পুষ্পকে ডেকে দিলোনা।
অথচ কেউ এতটা ফর্মালিটির আশায় বসে নেই। সবাই ভাবছে বাড়ির জামাই যখন ইচ্ছে আসবে, যখন ইচ্ছে তার বউয়ের সাথে দেখা করবে।
এদিকে আতঙ্ক বাড়াতে নাবিল এসে হাজির। এই কৌতুহলের বাচ্চাকে বিশ্বাস নেই। কখন কৌতুহলের জোরে উল্টোপাল্টা কিছু জানতে চায়। সে এসেই দুলাভাইয়া বলে গলায় ঝুলে পড়েছে।
খাবার সময়ে পুষ্পর সাথে দেখা হলেও কথা হলোনা। গোলাপি রঙের থ্রিপিসে পুষ্পকে বড্ড মানিয়েছে। খাবার শেষে পুষ্পর সাথে কথা হলো। তার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলল,

-“এখানে তোমার হাত খরচের টাকা আছে। এখন থেকে এই দায়িত্বটা ও আমার। আজ আসি।”

পুষ্পকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা রাউফুন। বেরিয়ে পড়লো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলো। সবাই থাকার জন্য আজ জোরাজোরি করলেও রাউফুন থাকলোনা। যেকাজে এসেছে সেটা শেষ। এখন এখানে থেকে লাভ নেই বরং বাড়তি বিপদ। রাউফুন বাসায় ফিরে গেলো।

মাঝখানে সপ্তাহখানেক সময় পেরুলো। রাউফুন আর আসলোনা। সে হুটহাট গুম হয়ে যায় আবার বিনা বার্তায় হাজির হয়ে যায়। আজ আবার রাউফুনের নাম্বার থেকে কল আসলো। এবার আর নাম্বারটি আনসেইভ নয় বরং ‘ডাক্তার’ দিয়ে সেইভ করা ছিলো। সালাম দিয়েই দুজনে কথা শুরু করলো।

পুষ্পর এলার্জি বেড়ে হাঁচি শুরু হয়েছে। একের পর এক হাঁচির চোটে কথা বলতে পারছেনা।
রাউফুনের দুশ্চিন্তা হলো। পুষ্পকে কিছু উপদেশ দিয়ে বলল ঠিকমতো ঔষধ নিতে। পুষ্প কথা বাড়ালোনা। রাউফুন নিজ থেকেই কল কে’টে দিলো। তার আগে বলল,
-“ঔষধ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”

পুষ্প তাই করলো। ঔষধ নিয়েই শুয়ে পড়লো। সকালে উঠলো বেশ দেরি করে। ভার্সিটি গেলোনা। আজ বসার ঘরে আপনাআপনি চোখ গেলো। সে ভেবেছিলো রাউফুন হয়তো প্রথমবার ওর জ্বরের কথা শুনে যেভাবে এসেছিলো, সেভাবে আজও আসবে। কিন্তু নাহ্! তাকে ভুল প্রমাণিত করতেই বোধহয় রাউফুন এলোনা। নাস্তা করে নাবিলকে নিয়ে বসে পড়লো পুষ্প। সে ঘুরে ঘুরে একশটা প্রশ্ন করছে আর পুষ্প উত্তর দিচ্ছে। এবার আসলো রাউফুনের প্রসঙ্গে। বলল,

-“আপু দুলাভাইয়া আসেনা কেনো?”

পুষ্প নিচের ঠোঁট বের করে বলল,
-“সেটা তো জানিনা। তোমার দুলাভাইয়া আসেনা কেনো?”

নাবিল বলল,
-“এবার আসলে দুলাভাইয়ার ঘাড় থেকে নামবোনা। জানো? দুলাভাইয়া আমাকে কৌতুহলের বাচ্চা বলে।”

পুষ্প বিড়বিড় করে বলল,
-“এর চাইতে ভালো নাম আর তোর সাথে যায়না। সব কিছুতেই তোর কৌতুহল।”

নাবিল পুষ্পর গালে হাত দিয়ে বলল,
-“তুমি কি বলো? আমি শুনতে পাচ্ছিনা কেনো?”

পুষ্প মিষ্টি হেসে বলল,
-“বলছিলাম তোর মতো মিষ্টি বাচ্চাকে কেনো এই নামে ডাকলো? এটা কি তোর সাথে যায়?”

নাবিল এবার মিষ্টি নিয়ে পড়লো।
-“আমাদের বাসায় কি মিষ্টি আছে? আচ্ছা মিষ্টি কি দিয়ে বানায়? কেনো বানায়?”

পুষ্প এবার উঠে পড়লো। এবার এই ছেলে হাজারটা প্রশ্ন শুরু করবে। রেহানা খালা এসে হেলেদুলে জিজ্ঞেস করলো,
-“আম্মাজান, জামাই বাবা আসেনা কেন? তুমি কি আইতে না মানা করছো?”

পুষ্প তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে জবাব দিলো,
-“আশ্চর্য! আমি কেনো না করবো?”

রেহানা খালা মুখ ভেটকি দিয়ে চলে গেলেন। তিনি সেদিন শুনেছেন পুষ্প রাউফুনকে জিজ্ঞেস করলো,”আপনি এখন কেনো এসেছেন?”
এখন আবার সাধু সাজার চেষ্টা করে।
আমার জামাই যদি আমার জন্য এত মায়া দেখাইতো তয় সারাদিন তারে নিয়াই বইসা থাকতাম। অথচ এরা গুরুত্ব পায় বইলা অবহেলা দেয়। রেহানা খালা পুষ্পকে ভালোবাসেন কথাটি ঠিক, তেমনি তার সব কাজ যে ঠিক আর পছন্দ করতে হবে এমনটা নয়।

পুষ্পর অসুস্থতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তার মা তার ছোট চাচাকে বলল,
-“একবার পুষ্পকে হাসপাতালে নিয়ে যেও তো। জামাইকে দেখিয়ে আসবে। এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে মেয়েটা। বাড়ির কোনো মানুষ অসুস্থ হলে ভালোলাগেনা।”

নাবিলের বাবা জোর করেই পুষ্পকে নিয়ে গেলো হাসপাতালে। তবে পুষ্প শর্ত জুড়ে দিলো।
-“আমি ডঃ এর স্ত্রী বলে কোনো এডভান্টেজ নেবোনা। সবাই যেমন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ডঃ দেখায়, আমিও তেমনি দেখাবো।”

ছোট চাচা বেশ সুবিধা করতে পারলেননা পুষ্পর সাথে। অগত্যা তাকে পুষ্পর শর্ত মেনে নিতে হলো। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েই রাউফুনের চেম্বারে ঢুকলো। রাউফুন আগে থেকেই অবগত ছিলো তার বউ তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসছে। অপেক্ষা করার পর পুষ্পর সিরিয়াল আসলো। সাথে নাবিলের বাবা ও প্রবেশ করলেন। পুষ্পকে বসিয়ে দিয়ে তিনি বাইরে চলে গেলেন। হাসপাতালের কাছেই উনার একজন বন্ধু আছেন। তার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।

রাউফুন বলল,
-“তুমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসতে গেলে কেনো? তুমি যখন তখন এসেই এখানে প্রবেশ করতে পারো। এত কষ্ট করার কি দরকার ছিলো?”

পুষ্প বলল,
-“অন্য ডাঃ দেখালেও আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হতো। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক থাকলেই কি এডভান্টেজ নিতে হবে?”

রাউফুন নিঃশব্দে হাসলো। পুষ্পর থুতনিতে হাত রেখে নাকের ভেতর আলো দিয়ে পজিশন দেখার চেষ্টা করলো। এমন সময় আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে পুষ্পর হাঁচি আসলো। রাউফুনের হাতের আলো জ্বালানো যন্ত্রটা নিচে পড়ে গেলো ধপ করে। সে সকৌতুকে বলল,
-“তোমার হাঁচির বেশ জোর আছে দেখছি। কোনদিন আবার হাঁচি দিয়ে আমাকে উড়িয়ে ফেলো।”

লজ্জা পেয়ে হেসে দিলো পুষ্প। হাঁচি আসার আর সময় পেলোনা।
রাউফুন রগড় করে বলল,
-“বিয়ের পর আজ প্রথম বোধহয় একটু হাসলে।”

পুষ্প কিছু বললোনা। রাউফুন ফের নিজের কাজে মগ্ন হলো। নাক দেখে কিছু ঔষধ লিখে দিলো। পুষ্পকে বসিয়ে রেখেই পরপর আরও কয়েকটা রোগী দেখলো। এদিকে পুষ্পর চাচা আসার খবর নেই।
এবার রোগী হচ্ছে একটা বাচ্চা ছেলে। যার কানের পর্দা পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। অপারেশন লাগবে। তবে অপারেশনের জন্য বাচ্চাটা এখনো উপযুক্ত নয়। আরেকটু বয়স বাড়তে হবে। বাচ্চাটা যন্ত্রপাতিগুলো ঘাঁটছে আর রাউফুন বাচ্চার মা বাবার সাথে কথা বলছে। বাচ্চাটির বাবা একটা ধমক দিলো বাচ্চাকে।
রাউফুন বলল,
-“বাচ্চাদের বুঝিয়ে বলুন। অযথা ধমক দেয়া, মা’রধর করা উচিত নয়। এতে তাদের উপর মানসিক চাপ পড়ে।”

এর মাঝেই বাচ্চাটি বলল,
-“আম্মু আমাকে প্রায়ই মা’রে। আবার আব্বুকেও মা’রে। আচ্ছা আম্মুর মতো আপনার বউ ও কি আপনাকে মা’রে?”

পুষ্প ঠোঁট টিপে হাসলো। রাউফুন সেটা লক্ষ্য করে পুষ্পকে দেখিয়ে বলল,
-“তুমিই নাহয় জিজ্ঞেস করে নাও। সে আমাকে মা’রে কিনা?”

বাচ্চাটি সেটাই করলো,
-“বলল তুমিকে ডাক্তারকে মা’রো?”

পুষ্প ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
-“একদমই না। আমি কি পঁচা? তাহলে কেনো ডাঃ কে মা’রবো?”

বাচ্চাটি বলল,
-“তাহলে কি আমার আম্মু পঁচা?”

তাদের আর কথা বলার সুযোগ হলোনা। বাচ্চাটিকে নিয়ে তার বাবা মা বেরিয়ে গেলো। পুষ্প আড়মোড়া ভেঙে বলল,
-“সারাদিন বসে বসে রোগী দেখেন। আপনার একঘেয়েমি লাগেনা?”

রাউফুনের বলতে ইচ্ছে করলো ‘তুমি ছিলে বলে আমার একটুও একঘেয়েমি আসেনি। তুমি কি প্রতিদিন আমার চেম্বারে এসে বসে থাকবে?’
কিন্তু মুখে বলল অন্য কথা। চমৎকার এক হাসি দিয়ে বলল,
-“আমার একঘেয়েমি আসেনি। নিজে বেছে এই প্রফেশনে এসেছি। তুমি কি খাবে? ঠান্ডা টোটালি অফ।”

পুষ্প মাথা নেড়ে বলল,
-“আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছেনা।”

ততক্ষণে পুষ্পর ফোন বেজে উঠলো। চাচার ফোন। তিনি বললেন,
-“তুই নিচে নেমে আয়। আমি হসপিটালের সামনে আছি।”

রাউফুনকে বলে পুষ্প বের হতে যাচ্ছিলো। সে বাঁধা দিয়ে বলল,
-“তুমি কি একা যেতে পারবে? দাঁড়াও আমি আসছি। যদি ছেলে ধরা এসে নিয়ে যায়?”

এবার পুষ্পর শরীর কাঁপিয়ে হাসি আসলেও তা চেপে গেলো। রাউফুন যে তার সাথে ঠাট্টা করছে এটা তার মিটিমিটি হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। লিফট পর্যন্ত এসে ভেতরে কয়েকজন পুরুষকে দেখা গেলো। তাই পুষ্পকে একা ছাড়লোনা রাউফুন। নিজে সহ ভেতরে ঢুকলো। পুষ্পকে একপাশে রেখে তাকে প্রটেকশন দিয়ে দাঁড়ালো। নিচে চাচা অপেক্ষা করছেন। লিফট থেকে বের হওয়ার সময় রাউফুন বলল,
-“পুষ্প মাঝেমধ্যে সময় বের করেই আমার চেম্বারে চলে এসোতো? সবসময় তোমাকেই কেনো চিকিৎসা দেবো? মাঝেমধ্যে তুমি ও নাহয় আমাকে চিকিৎসা দিয়ে যেও।”

পুষ্প কিছু না বলে কিছুদূর সামনে এগিয়ে গেলো। আপনাআপনি তার অধরকোনে হাসি ফুটলো।

#চলবে….

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ