#উপন্যাস
#কনে_দেখা_আলো
#পর্ব_ষোল
নিতান্ত অনিচ্ছাতে গাড়ির পেছনের সিটে উঠেই সামনে সুফিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা বিষদৃষ্টি দিলো শরফুদ্দিন। তার মোবাইলের মেসেঞ্জারে একটা নতুন মেসেজ এসেছে এইমাত্র। খুলে দেখতে যাবে এমন সময় গাড়ির দরজা খুলে জামান শিকদার গাড়িতে উঠল। তার দৃষ্টি সোজাসুজি শরফুদ্দিনের দিকে নিবদ্ধ। শরফুদ্দিন ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে গেল। চট করে মোবাইলটাকে সরিয়ে ফেলল। তারপর চিন্তামগ্ন চোখে পথের দিকে তাকিয়ে রইল। জামান শিকদার বারকয়েক তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘শরীর খারাপ লাগছে নাকি শরফুদ্দিন?’
‘ক…কই… না তো স্যার!’
‘শরফুদ্দিন… কী যে এত ভাবনা তার সারাটা রাতদিন!’ ছন্দে ছন্দে মিলিয়ে জামান শিকদার একা একাই একটু হাসল। শরফুদ্দিনের মুখের ভাবে কোনো পরিবর্তন দেখা দিলো না। পথে খুব বেশি কথাবার্তা হলো না। জামান শিকদার, সুফিয়া, শরফুদ্দিন এমনকি মোতালেব… কারো মুখেই কথা নাই। সবাই যেন রুদ্ধশ্বাসে কিছু একটা দুরূহ আবিষ্কারের নেশায় উর্ধগতিতে ছুটে চলেছে।
জঙ্গলের কাছাকাছি এসে বেশ কিছুটা দূরেই তারা সবাই গাড়ি থেকে নামল। ততক্ষণে পেছনের গাড়িটাও চলে এসেছে। সামনে সশস্ত্র পুলিশদের রেখে তারা তিনজন পেছনে সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে লাগল। তার অবশ্য দরকার ছিল না তেমন। শুনশান নিস্তব্ধ জঙ্গলে কোনো জনমানবের অস্তিত্ব নেই। শুধু নাম না জানা পাখিরা মাঝে মাঝে অশ্রুত ভাষায় ডাক দিয়ে সবাইকে যেন জানিয়ে যাচ্ছে জঙ্গল পুরোপুরি নিঃসঙ্গ নয়। হঠাৎ কখনো দূর থেকে ভেসে আসছে বিচিত্র প্রাণীর আওয়াজ।
জামান শিকদার একবারের জন্যও শরফুদ্দিনের ওপর থেকে চোখ সরাচ্ছে না। শরফুদ্দিনের মুখে যেন অমাবস্যা নেমেছে। থপ থপ করে পা ফেলে নিতান্ত অনিচ্ছাতে সে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। জামান শিকদারের কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে, তার ওপর থেকে চোখটা একবারের জন্য সরিয়ে নিলেই এই লোক কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।
মাঝামাঝি আসার পরে জামান শিকদার সুফিয়াকে বলল, ‘তুমি সেই জায়গাটা চেনো তো? নিয়ে যেতে পারবে কি আমাদের?’
‘হ স্যার আমি চিনি তো! চিন্তা কইরেন না! আমি এই জায়গায় প্রায়ই আসি! আসেন আমার লগে লগে!’ এভাবেই পুলিশকে নির্দেশনা দিয়ে সুফিয়া তার সঙ্গে নিয়ে যেতে লাগল। ব্যাপারটাতে সে যে কী মজা পাচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। পুলিশ তার নির্দেশে হেঁটেছে, এই গল্প কাউকে না শোনানো পর্যন্ত সে পেট ফুলে মরেই যাবে!
মন্দিরের কাছাকাছি আসার পরে জামান শিকদার বলল, ‘একবার মন্দিরটা ঘুরে যাই। এই মন্দিরের অনেক গল্প শুনেছি। এত কাছে যখন এসেই পড়েছি, তখন একবার ঘুরে না গেলে কেমন দেখায়! চেয়ারম্যান সাহেব বলছিল যে মন্দির নাকি সংস্কার করাবে। দেখে আসি তো, সংস্কারের পর্যায়ে কিছু আছে কী না!’
সুফিয়ার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। সে যে আজ আসছে এই খবর শমসের জানে না। বলেছে সময় সুযোগ করে পুলিশকে নিয়ে আসবে। কিন্তু কবে আনবে সেটা তো বলা হয়নি! শমসের যদি সাবধান হওয়ার সময় না পায়? সুফিয়া শশব্যস্ত হয়ে বলে উঠল, ‘না না অখন ঐদিকে যাওনের দরকার নাই। মন্দিরে গ্যালে দেরি হইয়া যাইব! আগে যেইখানে যাইতাছি সেইখানেই চলেন!’
শরফুদ্দিন মুখ ঝামটা দিয়ে উঠল, ‘ঐ মাইয়া চুপ থাকো! তুমার কথামত সব হইব নাকি? স্যার মন্দিরে যাইবেন ঠিক করছেন যখন…’
জামান শিকদার হাত নাড়িয়ে বোঝাল, থাক আজ আর মন্দিরে যাওয়ার দরকার নাই! একটু অবাক হলেও সুফিয়ার কথায় জামান শিকদার আপত্তি করল না। আজ তিনি বিনা প্রতিবাদে সুফিয়াকে টিম লিডার মেনে নিয়েছেন। দেখাই যাক না মেয়েটা তাদেরকে শেষমেষ কী দেখায়!
একসময় তারা চলে আসে সেই জায়গাটার কাছে। একপাশে ছোট্ট একটা ঝর্ণা। সেখান থেকে তির তির করে জলধারা নেমে আসছে। কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানি! ঝর্ণার ঠিক বিপরীতদিকে বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে সারি সারি লম্বা সব গাছ।
এই সেই আগর গাছ! আজকেই ইন্টারনেটে এই গাছের অসংখ্য ছবি দেখেছে জামান শিকদার। এই গাছের পাতার একটা অন্যরকম বিশেষত্ব আছে, দেখলেই চেনা যায়। ইতোমধ্যেই এই গাছের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানা হয়ে গেছে তার। কাজেই গাছটাকে সে নিখুঁতভাবেই চিনতে পারল। আশ্চর্য না হয়ে উপায় নাই। দেখে মনে হয় কেউ বুঝি এখানে পরিকল্পিতভাবেই আগরগাছ চাষ করেছে। যদিও পাশাপাশি অন্য গাছপালাও আছে। কিন্তু আগরগাছের আধিক্যই বেশি চোখে পড়ে।
কিছু কিছু গাছ কাণ্ডের অংশ থেকে কেটে ফেলা। নিচে কিছু কাটা খণ্ডও পড়ে থাকতে দেখা গেল। ঠিক সুফিয়া যেমনটি বলেছে। আর তার চাইতেও বড় কথা, গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে রাখা আছে। অর্থাৎ কেউ অথবা কারা এই গাছ সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই এভাবে পেরেক মেরে গাছে কৃত্রিম ক্ষত তৈরি করার চেষ্টা করেছে। আগর কাঠের ব্যবহার এবং উৎপাদন প্রসেস তাদের কাছে অজানা নয়।
‘ওহ মাই গড! এ কী কাণ্ড!’ জামান শিকদারের গলায় নিখাদ বিস্ময়। তারপর শরফুদ্দিনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এই যে শরফুদ্দিন! একটু আগেই বলছিলে না আমরা এখানে বসে বসে ঘুমাই না! দেখো… দেখো একবার! পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে তাদের এরিয়ার দামি আগরগাছ কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আর তুমি বলছ পুলিশ এখানে বসে বসে ঘুমায় না!’
সুফিয়া আগেই এই গাছ সম্পর্কে ভালোমত জেনে নিয়েছে শমসেরের কাছে। তবু সে একটু অজ্ঞের ভান ধরে বলল, ‘কীসের গাছ কইলেন ওসি সাব?’
জামান শিকদার উত্তর দেওয়ার আগেই শরফুদ্দিন হঠাৎ খ্যাঁক করে বলে উঠল, ‘ঐ মাইয়া, তুমার তা দিয়া কিয়ের কাম? গাছের সন্ধান দিছ অখন বাড়িত যাও। সকল কিছু তুমার না জানলেও চলব!’
সুফিয়া রাগত চোখে কনস্টেবল শরফুদ্দিনের দিকে তাকাল। শরফুদ্দিনের চোখেমুখে কিসের যেন চাপা উষ্মা। তার অন্দরমহলের ফোঁসফোঁসানি কিছুতেই থামতে চাইছে না। ইচ্ছে করছে এই মহা ত্যাঁদড় মেয়েটাকে বাগে পেলে একেবারে আচ্ছামতোন এর ঝাল ছুটিয়ে দিত! এ্যাহ! হিরো হওয়ার শখ হইছে! মহিলা হিরো! এই মেয়ে হিরোগিরি যদি না ছুটাইতে পারে তাহলে সে কুকুরের গলায় মালা দিবে!
জামান শিকদার অবাক হয়ে শরফুদ্দিনের দিকে তাকাল। প্রচণ্ড জোরের সঙ্গে বলে উঠল, ‘শরফুদ্দিন সাবধানে কথা বলো। আমার সামনে দাঁড়াইয়া তুমি এই মেয়ের সঙ্গে কীভাবে এই ভাষায় কথা বলতে পারো? তোমার নিজের যে কাজ করার কথা ছিল, সেই কাজ এই মেয়ে করে দিয়েছে বলেই এত রাগ? ক্রেডিট নিতে পারলা সেই ক্ষোভ এর ওপরে ঝাড়ছ? নাকি ঘটনা অন্যকিছু? খবরদার বলছি আর কখনো যদি ওর সঙ্গে এমন ভাষায় কথা বলতে শুনেছি তাহলে কিন্তু আমার মতো খারাপ আর কাউকে হতে দেখবা না তুমি, বুঝেছ?’
জামান শিকদারের এই হুমকিতে কাজ হলো। হাজার হলেও ওসি তার বস। শরফুদ্দিন নিজের রাগকে বশ করে ফেলল। কিন্তু কেন জানি তার ভেতরের আগ্নেয়গিরি আজ কিছুতেই ঠাণ্ডা হতে চাইছে না! ফোঁস ফোঁস করে গর্জন করেই চলেছে। পুলিশের চাকরি করে যে ফুটো পয়সা বেতন পাওয়া যায়, তা দিয়ে বউয়ের কসমেটিক্স কেনারই টাকা হয় না। দুটো উপরি রোজগারের এমন ফুরফুরে মসৃণ রাস্তাটাতে এক পুঁচকে মেয়ে এসে গর্ত খুঁড়ে দিয়ে গেল! এই জ্বালা কীভাবে এত সহজে জুড়ায়?
জায়গাটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ শেষে জামান শিকদার তার স্টাফদের জায়গাটা ঘিরে দিতে বলল। বড় কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তাকে একবার হেড অফিসে জানাতে হবে। অফিসিয়ালি তাদের হেল্প চাইতে হতে পারে।
ঠিক তখনই মনে পড়ে গেল, আগের ওসি আব্দুস সোবহান সাহেবের পরিণতির কথা। এই হেড অফিসে খবর দিতে গিয়েই তাকে বদলি হতে হয়েছে। বর্তমান এসপি সাহেবের সম্পর্কে নানান কথাবার্তা শোনা যায়। সবই উড়ো খবর, কিন্তু উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। ডিপার্টমেন্টে সবার মুখে মুখেই ঘোরে। এসপি লোকটা খুব সুবিধাবাদী মানুষ। নৈতিকতার ধার ধারে না। প্রায়ই পরিবার নিয়ে বিদেশ সফরে যায়। তাও আবার আশেপাশের দেশগুলোতে না, একেবারে ইউরোপ আমেরিকা। তার অবস্থানে থেকে এত ঘন ঘন বিদেশ সফরে যাওয়া সহজ ব্যাপার না। পয়সাপাতির প্রশ্ন তো আছেই, কিন্তু ব্যক্তিগত কাজে বিদেশ সফরের জন্য তার জিও ম্যানেজ করাই কঠিন হওয়ার কথা। কিন্তু লোকটার হাত যে অনেকদূর অব্দি লম্বা, সেটা এতদিনে সবাই বুঝতে পেরে গেছে।
জামান শিকদার দ্রুত চিন্তা করছে তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত। একদিক দিয়ে না হলে আরেকদিক দিয়ে এগুতে হবে। কিন্তু আব্দুস সোবহান সাহেবের পরিণতি কিছুতেই বরণ করা যাবে না। সবাই হেরে গেলে এসব দুষ্টচক্রের সাথে লড়বে কারা? বাচ্চা একটা মেয়ে এতদূর পথ দেখিয়ে দিলো, তারা পুলিশের চাকরি করে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? কিছুতেই নয়!
সুফিয়াকে তার বাড়ির কাছাকাছি নামিয়ে দিয়ে জামান শিকদার পুলিশস্টেশনে ফেরার জন্য গাড়ি ঘোরানোর নির্দেশ দিলো। সুফিয়া কয়েক মুহূর্ত ইতঃস্তত করে বলল, ‘আপনারে একটা কথা কওনের ছিল। তয় সকলের সামনে কথাটা কই নাই। এইটাও খুব জরুরি একটা কথা।’
জামান শিকদার একটু তাড়াহুড়ার মধ্যে ছিল। তার এখন অনেক কাজ পড়ে আছে। দেরি করার উপায় নেই। তাই সুফিয়ার কথাটাকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ বলো সুফিয়া কী কথা?’
‘আইজ অনেকজন লগে ছিল তাই আপনারে বলিনি। আমাগো আরেকবার জঙ্গলে যাওনের দরকার আছে।’
‘হ্যাঁ জঙ্গলে তো এখন প্রতিদিনই যেতে হবে! তবে তোমার আর না গেলেও চলবে সুফিয়া। তুমি এখন বাড়িতে থাকো আর মন দিয়ে পড়ালেখা করো। এসবের মধ্যে তোমার আর ঢোকা উচিত হবে না। চারপাশে অনেক দুষ্ট লোকজন ঘোরাফেরা করে। আমরা পুলিশ, এদের নিয়েই আমাদের থাকতে হয়। তুমি বাচ্চা একটা মেয়ে। তুমি এসবের সঙ্গে সামলে চলতে পারবে না!’
‘আমি আর ঢুকুম না। তয় এই ব্যাপারটা আপনারে আমার কইতেই হইব। এইটা শুনলে আপনে…’
কথার মাঝখানেই জামান শিকদারের ফোন বেজে উঠল। ওসি আব্দুস সোবহান সাহেবের ফোন। জামান শিকদার ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে উত্তেজিত আব্দুস সোবহান বলল, ‘হ্যালো জামান সাহেব, আপনেরা তো আগর গাছ কাটার নমুনা সংগ্রহ করে ফেলেছেন শুনলাম! আপনার কনস্টেবল রেজা আমাকে ফোন দিয়েছিল। সে খুবই উত্তেজিত হয়ে আছে। অবশ্য উত্তেজিত হওয়ারই কথা! অনেক অনেক অভিনন্দন আমার তরফ থেকে। এখন কিন্তু সামনে খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। শত্রু কিন্তু দুর্বল না!’
জামান শিকদার মনে মনে একটু বিরক্ত হলো। এই খবরটা এখনই এদিকে সেদিকে চাওড় হয়ে যাক এটা সে চাইছিল না। তার স্টাফদের মধ্যে আরেকটু বিচক্ষণতা থাকলে ভালো হতো। আগের ওসিকে বলার আগেও তার একটা পারমিশন নিয়ে নেওয়ার দরকার ছিল। জামান শিকদার নিজেই তো তাকে ফোন দিত! ওসির অনুমতির তোয়াক্কা না করেই তার কনস্টেবল নিজেই ফোন দিয়ে বসেছে! গাড়ল লোকজন সব!
সোবহান সাহেব ওপাশে অপেক্ষা করছে। তার পরামর্শ মোতাবেকই কাজ শুরু হয়েছে। এটাও ভুলে যাওয়া যায় না। জামান শিকদার আন্তরিক গলাতে বলল, ‘হ্যাঁ সোবহান সাহেব, আপনার অনুমানই মিলে গেল। এখন এটা দিয়েই কাজ শুরু করছি। দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়!’
‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, চেয়ারম্যান সাহেবের ভাইয়ের খুনের সঙ্গে এবারে একটা ব্রিজ তৈরি করতে পারবেন।’
‘পলাতক খুনির সাক্ষাত এখনো পাইনি। দেখা যাক!’
‘অল দ্য বেস্ট!’
কথাতে তন্ময় হয়ে কখন যে জামান শিকদার গাড়িতে চড়ে বসেছে আর মোতালেবও গাড়ি ছুটিয়ে দিয়েছে, তা তার খেয়ালই নেই। সুফিয়া যে একটা কথা শুরু করেছিল, এটা ফোনালাপে বেমালুম ভুলেই গিয়েছে জামান শিকদার। গাড়ি বেশ কিছুদূর আসার পরে জামান শিকদারের সেই কথা মনে পড়ল। মুখ দিয়ে চুক চুক আওয়াজ করতে করতে বলল, ‘আহহা! মেয়েটা কী জানি বলতে শুরু করল, না শুনেই তো চলে এলাম!’
‘গাড়ি ঘুরাব স্যার?’ মোতালেব জানতে চাইল।
‘না থাক। পরে জেনে নিব। তেমন জরুরি কিছু নয় হয়ত!’
ওদিকে সুফিয়া তখন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ক্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে দূরে চলে যাওয়া গাড়িটার দিকে। ওসি সাহেব তার কথাটাই শুনল না! ওহ এখন নিজেদের কাজ হয়ে গেছে দেখে আর তাকে চেনে না! সে খোঁজ না দিলে জীবনেও ঐ গাছ কাটার খবর জানতে পারত না! এখন সে মুখ বন্ধ করেই বসে থাকবে। দেখা যাক, পুলিশ শমসেরকে কীভাবে খুঁজে বের করে! শমসরেকে এবারে ধরা দিতেই হবে! নইলে অনেক কিছু সামনে আসার পথ পাবে না। (ক্রমশ)
#উপন্যাস
#কনে_দেখা_আলো
#পর্ব_সতের
পুলিশস্টেশনে ফিরে আগে একটা লম্বা দম নিয়ে নিলো জামান শিকদার। তারপর অনেক ভাবনাচিন্তা করে ঢাকা পুলিশ কমিশনারের অফিসে ফোন দিলো। নিজের পরিচয় দিয়ে সরাসরি পুলিশ কমিশনারের কাছে সে সব কিছু খুলে বলল। একটু একটু ভয় যে করছিল না, এমন নয়। এভাবে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়াটাকে কেউই ভালো চোখে দেখে না। কমিশনার সাহেবও জানতে চাইলেন।
‘তুমি তোমার এসপি কে ফোন না করে সরাসরি এখানে কেন যোগাযোগ করেছ?’
‘স্যার আমি নিতান্তই বিপদে পড়ে এই কাজ করেছি। আমার এই অপরাধ ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখলে কৃতজ্ঞ হব স্যার। আমি যে ঝামেলার খোঁজ পেয়েছি ঠিক একই জিনিস আমার আগের ওসিও জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু এসপি স্যার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েও এগিয়ে আসেননি। আমি তাই এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হলাম স্যার!’
‘হুম, বেশ সাহসী অফিসার তুমি। ডিপার্টমেন্ট তোমার মতো অফিসারদের ওন করে।’
‘থ্যাংক ইউ স্যার!’
‘আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তুমি স্থানীয়দের মধ্যে কারা এটার সঙ্গে জড়িত আছে, তা খুঁজে বের করো। ইটস এ্যান অর্ডার!’
‘স্যার!’
ফোন রেখে দিয়েই কাজে নেমে পড়ল জামান শিকদার। এখন আর নিঃশ্বাস ফেলার সময় নাই। জঙ্গলে গিয়ে মোবাইলে কিছু ছবি তুলে আনা হয়েছে। সেগুলোকে পিসিতে ট্রান্সফার করে দ্রুত হাতে কয়েকটার প্রিন্ট বের করে নিলো। কালার প্রিন্টারে প্রিন্ট করায় প্রতিটা ছবি একেবারে ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে। এইরকম অজ থানায় কালার প্রিন্টারের ব্যবস্থা থাকবে এটা আশা করেনি জামান শিকদার। যে ওসি সাহেবই কেনার ব্যবস্থা করে থাকুন, তাকে মনে মনে একটা ধন্যবাদ জানিয়ে দিলো সে।
এদিকে কনস্টেবল শরফুদ্দিনও তার জায়গাতে স্থির বসে নাই। পুলিশস্টেশনে পা দিয়েই নিজের মেসেজ চেক করেছে সবার আগে। প্রায় দুই ঘণ্টা আগের মেসেজ। পরপর পাঁচটা।
‘কী কইলি? পুলিশে আগরগাছের সন্ধান পাইছে? কে দিছে এই সংবাদ?’
পনের সেকেন্ড পরেই পরের মেসেজ, ‘ওই ব্যাটা! খবর দিয়া গায়েব হইলি ক্যান? জানা শিগগির। পুলিশ ক্যামনে খবর পাইল?’
এর দশ সেকেন্ড পরে মেসেজ। ‘শরফুদ্দিন মিয়া তুমি আমার লগে খেল খেললা না তো? ভাবছ এই খবর পাইয়াই আমি গাছ কাটা ঠেকাইতে ছুট দিমু আর তুমি আমারে পুলিশ দিয়া গ্রেফতার করাইবা! অত বোকা পাওনি আমারে! এইটা যদি খেল হয়, তাইলে আমি তোমার লগে হাডুডু খেলুম!’
সাত সেকেন্ড পরে মেসেজ। ‘কীরে তর এত সাহস… কথা কস না!’
এবারে পাঁচ সেকেন্ড পরে, ‘তুই কি মরছস? ঐ ব্যাটা শরফুদ্দিন!’
শরফুদ্দিনের গা কাঁপতে লাগল। তাড়াতাড়ি ফোন তুলে নির্দিষ্ট নাম্বারে ডায়াল করল। ওপাশ থেকে বেশ কিছুটা সময় ধরে হম্বিতম্বি চলল। শরফুদ্দিন একটা কথা বলারও সুযোগ পেল না। একবার শুধু ‘স্যার আমি একটু খুলে বলি…’ বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ওপাশের মুখ খারাপ করা গালি শুনে আর কোনো কথা বলার চেষ্টা করেনি। অনেকটা সময় ধমকাধমকি চলার পরে পরিস্থিতি কিছুটা ঠাণ্ডা হলে শরফুদ্দিন কথা বলার সুযোগ পেল।
‘স্যার, ওসি আমারে তার গাড়িতে উঠাইয়া নিছিল। আমি ফোন চেক করতে পারি নাই। চেক করলে ধরা পইড়া যাইতাম! ব্যাটা এমনিতেই আমারে সন্দেহ করছে মনে হইছে। আপনারেও তাইলে…’
‘তোর ওসির হঠাৎ এমন বুদ্ধি খুলল ক্যামনে? ব্যাটা তো গ্রামে আইসা হাওয়া খাইয়া বেড়াইতাছিল। হঠাৎ এমন জেমস বণ্ড হইয়া গ্যালো ক্যামনে?’
স্যার, একটা তের চৌদ্দ বছরের মাইয়া গাছ কাটার খবর দিছে… জি স্যার, এই গ্রামেরই মাইয়া, নাম সুফিয়া।’
‘তের চৌদ্দ বছরের গ্রামের মাইয়ার এত সাহস যে আমার কামে বাম হাত ঢুকাইয়া দ্যায়! আইচ্ছা! দ্যাখতাছি! আর শুইনা রাখো শরফুদ্দিন, তুমার পুলিশ ডিপার্টমেন্ট যদি আমার ব্যবসার লালবাতি জ্বালাইবার চিন্তাও মাথায় আনে তাইলে আমি কিন্তু কাউরে ছাড়ুম না! তোমার চাকরি যাইব সবার আগে, মাথায় রাইখো!’
‘সেইডা কখনোই হইব না স্যার! আমি আপনেরে কথা দিতাছি!’
‘হ, কথা যাতে ঠিক থাকে মনে রাইখো!’
এইভাবে তুই আপনি জগাখিচুড়ি সম্বোধনে ওপাশ থেকে অগণিত গালিগালাজ ধমকাধমকির তুফান ছুটিয়ে ফোন রাখা হলো। এপাশে কনস্টেবল শরফুদ্দিন ফোন রেখে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ারে গা ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ল। তার মাথায় এখন হাজার চিন্তা। কিছুতেই ওসি জামান শিকদারকে এর চাইতে এক কদম বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না। যা করার এখনই করতে হবে। এসপি সাহেবকে সবার আগে খবরটা দেওয়া দরকার। ফোনটা তুলতে যাবে এমন সময় পিওন এসে খবর দিলো, ‘স্যার ওসি স্যার আপনারে বুলায়।’
মনে মনে মুখ খারাপ করে একটা গালি দিলো শরফুদ্দিন। হারামজাদা ওসি মনে হচ্ছে তাকে চোখে হারাচ্ছে। দুই দণ্ড তিষ্টাতে দিচ্ছে না! মুখে বলল, ‘আসতাছি গিয়া ক!’
পিওন তবু নড়ল না। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে বলল, ‘স্যার অক্ষুণি যাইতে কইছে!’
‘যা ভাগ হারামজাদা! কইলাম না যাইতাছি! কথা কানে যায় না?’
অনিচ্ছাসত্ত্বেও পিওনকে এবারে সরতে হলো। এই কনস্টেবলের কীসের জানি একটা গরম আছে। সেই গরমের হদিস কারো জানা নেই। কিন্তু গরমের তাপ সবাই টের পায়। পিওন যেতে যেতে ভাবল, ‘ব্যাটা এইবার পড়ছে মাইনকার চিপায়! এইবার জুদি তেল ছুটে!’
পিওন যাওয়ার পরে এসপি সাহেবকে একটা ফোন দেওয়ার জন্য ফোনটা তুলতে গিয়েও কী মনে করে রেখে দিলো শরফুদ্দিন। থাক, এত বেশি বাড়াবাড়ি করার দরকার নাই। ওসির ফোঁসফাঁশ লম্ফঝম্ফ এমনিতেই থেমে যাবে। শুধু শুধু নিজেকে সন্দেহের তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়ার দরকার নাই।
ওসির রুমে গিয়ে শরফুদ্দিন দেখতে পেল, চারপাশে ফাইলপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। জামান শিকদার একটা ডায়েরিতে কী যেন নোট করছে। সে রুমে ঢুকতেই বলল, ‘এই যে শরফুদ্দিন! এখান থেকে এখানে আসতেও তোমার এত সময় লাগে? সময় অনেক মূল্যবান, বুঝেছ? শোনো আমি কিছু ছবি প্রিন্ট করেছি। তুমি এই ছবিগুলো দ্রুত ঢাকা কমিশনারের অফিসে ফ্যাক্স করে পাঠাও। আমি মেইলে পাঠিয়েছি। তবু ফ্যাক্সেও পাঠায়ে দাও।’ কথাটা বলেই জামান শিকদার একটু বাঁকাচোখে শরফুদ্দিনের মুখচোখের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করতে লাগল।
মোবাইল ইন্টারনেটের এই যুগে ফ্যাক্স মেশিন এখন কেউই তেমন একটা ব্যবহার করে না। ছবি ইতোমধ্যেই কমিশনার অফিসে চলে গেছে। তবু শরফুদ্দিনকে ডেকে এনে এই কাজ করানোর পেছনে জামান শিকদারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। সে শরফুদ্দিনকে চোখের আড়াল করতে চাইছে না। পুরো ব্যাপারটিতে তার এই কনস্টেবলের জড়িত থাকার প্রমাণ এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ঘরের শত্রু বিভীষণদের জন্যই সবসময় এমন দ্রুতগতিতে আগুন লাগে! নইলে বাইরের শত্রু কি এত সহজে ভেতরে আঁচড় বসাতে পারে? তবু প্রমাণ পাওয়ার আগে কিছুই করা যাবে না।
শরফুদ্দিন অবিশ্বাসীর চোখে জামান শিকদারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এসপি স্যারকে না জানিয়ে সরাসরি কমিশনারের কাছে অভিযোগ প্রেরণ! এমনকি গাছ কাটার ছবিও সেখানে চলে গেছে! জামান শিকদার তো দেখা যাচ্ছে একেবারে কাছা বেঁধে লেগেছে। সর্বনাশ!
এই ভীষণ পরিস্থিতির মাঝেই প্রচণ্ড বেরসিকের মতোই শরফুদ্দিনের মোবাইলটা বেজে উঠল। চট করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে শরফুদ্দিনের শরীরে ঘাম ছুটে গেল। এসপি স্যার ফোন দিয়েছে!
এক ফাঁকে জামান শিকদারও শরফুদ্দিনের ফোনের ইনকামিং কলের দিকে চকিতে দৃষ্টিপাত করে ফেলেছে। ফোনদাতার নামটাও নজর এড়ায়নি তার। জামান শিকদারের মুখে বাঁকা একটা হাসি ফুটে উঠল। শরফুদ্দিন ফোন রিসিভ করতে ইতস্তত করছে দেখে হাসিমুখে বলল, ‘সে কী ফোন ধরছ না কেন? এসপি স্যার ফোন দিয়েছেন দেখছি! এসপি স্যার সরাসরি তোমাকে ফোন দেন নাকি? খুব ভালো তো! ধরো ধরো ফোনটা ধরো!’
শরফুদ্দিনের তবু ফোন ধরার উপায় নাই। সে কাতরস্বরে বলল, ‘স্যার মনে হয় আপনারে ফোন দিতে গিয়া আমারে দিয়া ফেলছে। আপনে কথা বলবেন স্যার?’
‘না অবশ্যই না! আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে উনি আমার ফোনেই ফোন দিবেন। এত বড় ভুল যদি উনার মতো অফিসার করে বসেন তাহলে তো ডিপার্টমেন্টের লালবাতি জ্বলে যাবে! তোমার ফোন তুমিই ধরো শরফুদ্দিন!’
শরফুদ্দিন সাত পাঁচ চিন্তা করে কূল কিনারা না পেয়ে ধুম করে ফোনটা কেটেই দিলো। সেটা দেখে জামান শিকদার হাসতে হাসতে বলল, ‘আহা আমার জন্য কথাটা বলা হলো না তোমার! চিন্তা নাই, আবার ফোন করবে নিশ্চয়ই। এবারে ধরো কিন্তু!’
***
ওসি স্যার তার কথা না শুনেই গাড়ি হাঁকিয়ে চলে গেছে এই রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো সুফিয়া।
জুলেখা বাড়ির কাজকর্ম শেষ করে একটা কাঁথা নিয়ে বসেছে। সুফিয়াকে আসতে দেখে গাল ভারি করে বলল, ‘মহারানী আইছেন! আইজ বলে তুই ইশকুলে যাস নাই?’
সুফিয়া ভেতর ভেতর চমকে উঠল। সে যে আজ স্কুল ফাঁকি দিয়ে পুলিশস্টেশনে গিয়েছিল এটা তো তার বুবুর জানার কথা না! কে এই খবর দিলো?
জুলেখা আন্দাজে একটা ঢিল মেরেছিল। সেই ঢিলের আন্দোলনে যে সুফিয়ার মুখেচোখে এমন ঢেউ উঠবে এটা সে আশাই করেনি। সুফিয়ার মুখ দেখে জুলেখার বুঝতে বাকি রইল না, সুফিয়া সত্যি সত্যিই এই কাজ করেছে! জুলেখা স্তম্ভিত হয়ে কাঁথা ফেলে বসে রইল। সুফিয়ার মতিগতি তার একদম ভালো ঠেকছে না। এতদিন পড়ালেখা নিয়ে মেতে ছিল তা একরকম বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ জঙ্গলের প্রতি তার কীসের এত মমতা জন্মাল যে প্রতিদিন সেখানে একা একা ঘুরতে যায়?
সুফিয়া আজকে আর লুকালো না। সে গম্ভীর মুখে বলল, ‘বুবু তুমার লগে আমার কথা আছে! আমি তুমারে বেবাক কথা খুইলা বলুম। শুনলে তুমি বুঝতে পারবা, তুমার বইনে কুনো খারাপ কাম করেনি। সে যা করছে ভালা কামই করছে!’
‘গেরামে আর কেউ নাই এই ভালা কাম করোনের লাইগা? তুইই একমাত্র মানুষ আছিলি? ইশকুল ফাঁকি দিয়া তুই কুন রাজকার্জ করবার গেছিলি ক আমারে!’
‘তার আগে কও তুমার না একটা কাম আছে? ভুইলা গেছ? তুমি না ফুলিরে দেইখা আইতে চাইছিলা? লও আইজ ঘুইরা আসি!’
‘তুই কথাডা ঘুরাইয়া নিলি তাই না? ফুলিরে দ্যাখবার যাওনের তোর জানি কত হাউশ আমি কি কিছু জানি না? এদ্দিন কইয়া কইয়া নিবার পারি নাই আইজ হঠাৎ মহারাণী নিজেই যাওনের লাইগা প্রস্তুত!’
একটু ইতস্তত করে সুফিয়া বলেই ফেলল। ‘কদমপুর থানায় নতুন একজন ওসি আইছেন। নাম জামান শিকদার। খুব ভালা মানুষ। উনার লগে আমার ভালা আলাপ পরিচয় হইছে। আইজ উনি আমারে লইয়া গেছিলেন। লগে আরো পুলিশের লোকজন আছিল। সেই জঙ্গলে একটা অপকর্ম চলতাছে। এইসব ভূত দেউয়ের যেই গল্প মাইনষের মুখে মুখে ঘুইরা বেড়াইতাছে, বেবাক গল্প ফাউল বুঝলা? জঙ্গলের আসল দেউ হইতাছে মানুষ! আর হেই মানুষ জঙ্গলে থাকে না, থাকে আমাগো আশেপাশেই। মানে এই গ্রামেই। তারা মাইনষের মইধ্যে নকল দেউয়ের ভয় ঢুকাইয়া দিয়া দ্যাশের ক্ষতি করতাছে!’
জুলেখা বোকার মতো নিস্পন্দ চেয়ে থাকে সুফিয়ার দিকে। তার সেদিনের সেই এক রত্তি বোনটা এসব কী বলছে? এত বুঝ তার মধ্যে কীভাবে এলো? জুলেখা বিড়বিড় করে বলে, ‘তুই কী কইতাছস আমি কিছুই বুঝবার পারতাছি না!’
‘বুঝন লাগব না। সময় আইলে নিজেই বুঝবা। অখন কও, বুবু তুমি যাইবা নাকি! ফুলির লগে আমার একডা কাম আছে। তুমি লগে গেলে ভালা হইত!’
‘ফুলির লগে আবার কিয়ের কাম?’
‘আছে একটা কাম। তুমার বেশি বুঝনের কাম নাই বু!’
সুফিয়ার কাজ কারবার জুলেখার কাছে এমনিতেই দুর্বোধ্য লাগে। গত কয়েকদিন ধরে সে যেন সুফিয়াকে চিনতেই পারছে না! তবু সুফিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে জুলেখা না করতে পারল না। কাঁথাটা ভাঁজ করে সে তৈরি হতে গেল। তাদের মা হনুফা বিবি দুপুরের নিয়মিত কাজ পাড়া বেড়াতে গেছে।
জুলেখা আর সুফিয়াও আজ ফুলিকে দেখতে তাদের বাড়িতে গেল। (ক্রমশ)
#ফাহ্মিদা_বারী