Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"এ্যারেঞ্জ ম্যারেজএ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ পর্বঃ ০৫

এ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ পর্বঃ ০৫

এ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ পর্বঃ ০৫
– আবির খান

সময় যেন থমকে গিয়েছে ওদের জন্য। কিন্তু হঠাৎই সব নিস্তব্ধতা ভেঙে নেহালের ফোনটা বেজে উঠে। নেহাল আর নিশি দুজনেই কেঁপে উঠে। নেহাল নিশিকে ছেড়ে টেবিলে রাখা ফোনটার দিকে এগিয়ে যায়। নিশি ভিজা ঠোঁট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নেহাল ফোনটা রিসিভ করে।

নেহালঃ হ্যালো।

নওশিনঃ বাবু বাবু, আমি অনেক সরি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দেও। আমিতো মজা করেছি তোমার সাথে। প্লিজ আমার বাবুটা আমাকে মাফ করে দেও। আমি সত্যিই তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। কাঁদো কণ্ঠে।

নেহালঃ আচ্ছা আচ্ছা করেছি মাফ। এখন রাখো। কাল কথা বলবো।

নওশিনঃ হুম। এই তোমার বউকে আবার ছুয়েছো নাতো??

নেহাল নিশির দিকে তাকিয়ে বলে,

নেহালঃ নাহ। রাখি এখন ঘুমাবো।

নওশিনঃ ওকে। বাবু লাপ ইউ ছো মাস। হাহা।

নেহালঃ বাই।

নেহাল ফোনটা রেখে দেয়। নেহাল নিশির দিকে তাকায়। কেমন অসহায় ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে নিশি সেই একই জায়গায়।

নেহাল মনে মনে ভাবছে, নওশিন যদি এখন ফোন না দিতো তাহলে এতোক্ষনে হয়তো নিশিকে ও আপন করে নিতো। পরে ওকে চাইলেও আর ছাড়তে পারতো না।

হঠাৎই নিশি নেহালের কাছে এসে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নেহাল বিবেগের তারনায় এখন হাত উঠাতে পারছে না। তার ঘোর এখন ভেঙে গিয়েছে। সে এখন পারছে না নিশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। নাহলে আবার সেই ভুলের দিকেই এগোবে নেহাল।

নেহালঃ নিশি ছাড়ো আমি ঘুমাবো।

কথা বলতে দেরি হয়েছে কিন্তু নিশির নেহালকে ছাড়তে বিন্দুমাত্র দেরি হয়নি। নেহালও বেশ অবাক হয়েছে। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে কোনো কথা ছাড়াই।

এদিকে,

নিশি ওদের রুমেতে রাখা একটা সোফাতে গিয়ে বসে পরে। আর নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে। আর ভাবে, কেনো আমাকে বারবার উনি সরিয়ে দেয়?? আমি জানি উনি চায় আমাকে কিন্তু কোনো একটা কিছু বারবার উনাকে আটকে দেয়। কি সেটা?? আমাকে কি উনার ভালোই লাগেনি?? ভালো না লাগলে এভাবে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিতেন নাহ। তাহলে আমাকে আপন করে নিতে,একদম তার করে নিতে সমস্যাটা কই?? তখন একটা ফোন এসেছিলো। সেই ফোনের পরই উনি কেমন জানি হয়ে গিয়েছে। কে ফোন দিয়েছোলো?? না দেখলেও বা কিভাবে জানবো। আচ্ছা উনি ঘুমাক। তারপর দেখবো। উনার মন আমাকে যেভাবে হোক জয় করতেই হবে। আমার বিশ্বাস উনি শুধু আমাকে ভালোবাসেন। উনি কি ঘুমিয়েছেন??দেখিতো।

সকাল ৭.৪৭ মিনিট,

প্রতিদিনের মতো আজও নেহালের ঘুম ভেঙে যায় সকাল সকাল। রাতের কথা মনে করতেই মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায় নেহালের। নেহাল ওর পিছনে হাত দিয়ে দেখে একদম ফাকা। তাড়াতাড়ি ঘুরে দেখে ওর পিছনে কেউ নেই। মানে নিশি গত রাতে ওর পাশে শোয়নি। তাহলে??

নেহাল এক লাফে উঠে বসে। এরপর যা দেখে, তা দেখার জন্য নেহাল এই সাত সকালে প্রস্তুত ছিলনা। নেহাল দেখে, নিশি সামনের সোফায় কিরকম ভাবে যেন বসে আছে। নেহাল উঠে তাড়াতাড়ি নিশির কাছে যায়।

নেহাল দেখে, নিশির চুল গুলো অগুছালো, চোখ গুলো লাল হয়ে আছে আর ফুলে আছে। মানে নিশি সারারাত কেঁদেছে। নিশি কেমন নিথর হয়ে আছে। সামনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন পাথরের মূর্তি।

নেহালঃ নিশি… নিশি কি হয়েছে তোমার?? এভাবে বসে আছো কেন??

নিশিঃ…..

নেহালঃ প্লিজ বলো কি হয়েছে?? আমার অনেক টেনশন হচ্ছে প্লিজ বলো কি হয়েছে?? নিশি। ধাক্কা দিয়ে।

এবার নিশি আস্তে করে ওর মাথাটা ঘুরিয়ে নেহালের দিকে করে। নেহালের নিশিকে দেখে অনেক ভয় করছে।

নেহালঃ প্লিজ বলো কি হয়েছে?? হাত ধরে।

নিশি হাতটা ছাড়িয়ে।

নিশিঃ আপনার ফোন।(নেহালকে ফোন এগিয়ে দিয়ে) কাল রাতে নওশিনের সাথে কথা বললাম।

নেহাল একথা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। নেহাল বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। নেহালও নিশির পাশে ঠাস করে বসে পরে।

কিছুক্ষন পর,

নিশিঃ কেন এমন করলেন আমার সাথে?? কেনো আমাকে বিয়ে করলেন?? নওশিন বলেছে, আর তিন মাস পরে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে আপনি ওকে বিয়ে করবেন। তাহলে আমাকে কেনো এসবের মাঝে জড়ালেন??

নেহালঃ….

নিশিঃ আপনি চিন্তা করবেন না। আমি অনেক ভেবেছি পুরোরাত। আপনার কোনো ক্ষতি আমি করবো না। মানে আপনাকে যাতে আমার জন্য অপমানিত না হতে হয় বাবা মার কাছে তেমন আমি কিছুই করবো না। আপনারা আমার বাবাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন এই অনেক। আপনাদের কোনো ক্ষতি আমি কোনো ভাবেই হতে দিবো না।

নেহাল নিশির দিকে অবাক হয়ে তাকায়। নিশি এমন কিছু বলবে ও ভাবতেও পারেনি।

নিশিঃ ৩ মাস তো কোন ব্যাপার না। আমি চুপচাপ থাকবো। ৩ মাস পরে আপনি বাবা-মাকে বইলেন আমি কোনো দিন মা হতে পারবো না। তাই আমাকে ডিভোর্স দিচ্ছেন। দেখবেন তারাও মেনে নিবে। আমি নিরবে চলে যাবো। তার নওশিনকে নিয়ে মানে আপনার প্রথম ভালোবাসাকে নিয়ে আপনি সুখে শান্তিতে থেকেন। নেহালের দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত ভাবে বলল।

নেহালের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে নিশির কথা শুনে। নিশি এতো বড় কথা গুলো এতো স্বাভাবিক ভাবে বলে দিলো?? নেহাল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে নিশির কথা শুনে।

নিশিঃ আমাকে নিয়ে ভাববেন না। এইযে আমি একদমই ঠিক আছি। আপনি বসুন আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।

বলেই নিশি একটা জামা নিয়ে টয়লেটে চলে যায়। ভিতরে ঢুকে দরজাটা দিয়ে জামাটা রেখে ঝর্ণারটা ছেড়ে দেয়। আর নিশি সেই ঝর্ণার নিজে ঠাস করে বসে পরে আর নিঃশব্দে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে। বুক ফেটে যাচ্ছে সে কান্নায়।

একজন স্ত্রী যদি জানে তার স্বামীর সাথে অন্য আরেকজনের সম্পর্ক আছে। এবং কিছু দিন পর সে জনকে সে বিয়ে করবে তাকে ছেড়ে দিয়ে। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে একজন স্ত্রীর কাছে।

এদিকে,

নেহালেরও মনের অজান্তেই চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে। নেহাল ভাবছে, শেষমেশ নিশির নৌকাটাই ওকে ছাড়তে হলো?? তাও এভাবে?? নিশির মতো বউকেই ওর কষ্ট দিতে হলো?? নিশিকেই ওর হারাতে হলো??

নেহাল দীর্ঘ এক বড় নিশ্বাস ছাড়ে। বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। এতো ভালোমনের মানুষের জীবনটা ও এভাবে শেষ করে দিলো। নেহাল আর পারছে না। উঠে বারান্দায় চলে গেলো। সকালের ঝলমলে রোদ্দুর্রে আর পাখির কোলাহলের মাঝে শুধু নেহালের মন কাঁদছে নিঃশব্দে।

নিশি কোনো ভাবে নিজেকে ঠিক করে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হয়ে আসে৷ নেহালকে বারান্দায় দেখে আস্তে করে নিচে চলে যায়। শেষ নেহালের প্রতি তার সকল টান ভালোবাসা সব বিসর্জন দিয়ে এসেছে ওই প্রতিটি অশ্রু ঝরিয়ে। নিশি আর নেহালের কাছে যাবেনা। চাবেনা তার অধিকার। চাবেনা একটু ভালোবাসা। এখন শুধু অপেক্ষা নেহালকে নওশিনের করে দেওয়ার।

< <<ফ্ল্যাশব্যাক>>>
গতরাতে,

অনেকক্ষন পর নিশি আস্তে করে উঠে দেখলো নেহাল ঘুমিয়েছে কিনা। নেহালের চোখের সামনে হাত দিয়ে নাড়া দেওয়ার পরও যখন নেহাল উঠলো না তখন নিশি বুঝলো যে নেহাল ঘুমিয়ে পরেছে।

নিশি আস্তে করে টেবিল থেকে নেহালের ফোনটা নিলো। কিন্তু লক করা। নেহালের ফিঙ্গার প্রিন্ট লাগবে। তাই নিশি আস্তে আস্তে করে নেহালের কাছে গিয়ে ওর ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়। আর ফোনটা সাথে সাথে খুলে যায়।

নিশি ভিতরে ঢুকেই আগে কল লিস্টে যায়। নিশি দেখে, নেহাল এইমাত্র যার সাথে কথা বলেছিলো তার নাম নওশিন মানে একটা মেয়ে। নিশির বুকটা কেঁপে উঠে। নিশি সাহস নিয়ে নওশিনকে ফোন দেয়।

নওশিনঃ হ্যালো বাবু এতো তাড়াতাড়ি ফোন দিলে?? আমাকে বুঝি মিস করছিলে?? আই লাভ ইউ আমার বাবুটা। কি হলো কিছু বলো।

নিশির হাত পা শরীর সব কাঁপছে থরথর করে। নিশি ভেবে ছিলো নেহাল শুধু ওর। কিন্তু নেহালতো অনেক আগে থেকেই অন্যকারো। নিশি সব শক্তি এক করে অস্ফুটস্বরে বলল,

নিশিঃ আমি নিশি।

নওশিনঃ কিহ?? নিশি!!!

নিশিঃ হ্যাঁ। আপনি কে?? চাপা কণ্ঠে।

নওশিনঃ আচ্ছা ধরাতো খেয়েই গেছি। তাই লুকিয়ে আর লাভ কি। আর এমনিতেও তুমি সব জানতে সামনে তাই বলছি সব।

নিশিঃ মানে?? ভয়ার্ত স্বরে।

নওশিনঃ মানে আমি নেহালের প্রথম ভালোবাসা। নেহাল শুধু আমাকে ভালোবাসে। ও বাসার চাপে পরে তোমাকে বিয়ে করেছে। আসলে ও আমাকে ভালো বাসে আর আমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমার সমস্যা থাকায় আমি রাজি হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তোমাকে বিয়ে করেছে। তবে আগামী ৩ মাস পরে আমি নেহালকে বিয়ে করবো আর ও তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। কারণ ও শুধু আমার আর আমকেই ভালোবাসে আর কাউকে না। আর ও যে শুধু আমাকে ভালোবাসে তার প্রমাণ হয়তো তুমি এই দুই দিনেই পেয়ে গেছো। হাহা। নেহাল শুধু নওশিনের। ওর যা আছে সব আমার। তুমি শুধু কয়েকদিনের মেহমান।

নিশি ঠাস করে সোফায় বসে পরলো। হাত থেকে ফোনটা সোফায় পরে গেলো। নিশির দুনিয়া সাথে সাথে এই রাতের মতো ঘোর অন্ধকার হয়ে গেলো সাথে ওর অনাগত ভবিষ্যতও। নওশিন নিশির কোনো সারা না পেয়ে ফোন কেটে দেয়।

নিশি নেহালের চরম সত্য শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। একটু আগেও যাকে নিয়ে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখছিলো সেতো কখনোই তার ছিলো না। নিশি পাগলের মতো কাঁদতে শুরু করে তবে নিঃশব্দে। নিশির চাপা কান্নায় যেন আশেপাশের পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে যায়। শুধু দেয়ালে দেয়ালে বারি খাচ্ছে নিশির চাপা আর্ত্নাদ নেহালকে হারিয়ে ফেলার। নিশি সারাটা রাত কেঁদে কেঁদে পাড় করে।

এখন,

নেহাল বারান্দা থেকে এসে দেখে নিশি বের হয়ে গিয়েছে। নেহালের মনে হচ্ছে ওর জীবনটা লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে কিছু সময় আগে। কিছু মূল্যবান একটা জিনিস হারিয়ে গেলো। নেহাল অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

নিচে,

নিশি সবার জন্য নাস্তা রেডি করছে। বাইরে ওকে দেখলে কেউ বলবেনা যে ওর ভিতরটা পুড়ে ছাড় খার হয়ে যাচ্ছে। নিশি চুপচাপ নাস্তা বানাচ্ছে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন নিশির কাধে হাত রাখে। নিশি তাকিয়ে দেখে মা।

নিশিঃ আসসালামু আলাইকুম মা।

মাঃ আলাইকুম আসসালাম। কিরে তুই নাস্তা বানাচ্ছিস ওরা কই??

নিশিঃ ওরা অন্য কাজ করছে মা। আর বাবাতো আমার হাতের নাস্তা খেতে পছন্দ করে তাই এই শেষ কদিন মন ভরে খাইয়ে যাই। আস্তে করে বলল।

মাঃ কি বললি??

নিশিঃ না মা কিছুনা। মা আপনি বসুন আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। নিশি নিজেকে অনেক ব্যাস্ত দেখাচ্ছে মায়ের সামনে। কারণ ওর প্রচন্ড কান্না আসছে।

মাঃ নিশি… জোর গলায় ডাক দিলো।

নিশিঃ জ্বি মা?? ভয়ে ভয়ে।

মা নিশির হাত দুটো ধরে বলল,

মাঃ কি হয়েছে রে তোকে এমন লাগছে কেন?? কোনো সমস্যা?? নেহাল কিছু বলেছে?? ওকে জিজ্ঞেস করবো??

নিশিঃ মা মা… কিচ্ছু হয়নি আমার। আমি একদম ভালো আছি। আসলে রাতে ঘুম হয়নিতো তাই হয়তো এমন লাগছে।

মাঃ ও ও ও… তাই বুঝি…আমিও তো বলি। হাহা। মজা করে।

মাঃ নাতি কিন্তু আমার দুইটাই চাই। হাহা।

নিশি অনেক কষ্ট করে একটু হাসার চেষ্টা করলো।

মাঃ আচ্ছা আমি আর তোর বাবা টেবিলে বসছি তুই নাস্তা নিয়ে আস।

নিশিঃ আচ্ছা মা।

নিশি একটুপরই নাস্তা নিয়ে টেবিলে আসলো। নেহালও নেমে আসলো রেডি হয়ে। নেহাল দেখে বাবা মা হাসাহাসি করছে। তাদের হাসাহাসির কারণ নেহালের জানা নেই। নিশি চুপচাপ সবাইকে খাবার বেরে দিলো।

মাঃ তুইও বস মা। খাবি না??

নিশি না চাইতেও নেহালের পাশে গিয়ে বসলো। নিশির কেমন জানি আজ আনইজি লাগছে। অথচ গতকালও এই মানুষটাকে কত ভালো লাগতো। তাকে ঘিরেই নিশির সব ছিলো। কিন্তু আজ তা সব মুছে গিয়েছে। আসলে মুছে ফেলতে হয়েছে।

নেহালের খুব খারাপ লাগছে৷ কি হয়ে গেলো তার জীবনটা। সুন্দর জীবনটা কেমন উলোট পালোট হয়ে গেলো। সব কেমন রংহীন হয়ে গেলো।

বাবাঃ তা নেহাল নিশিকে ভারসিটিতে দিয়ে আসছিস তো??

নেহালঃ হ্যাঁ বাবা।

মাঃ নিশি মা ঠিক মতো পড়িস। যত ইচ্ছা পড়িস আমাদের কোনো সমস্যা নেই।

নিশিঃ আচ্ছা মা।

সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। মা-বাবা তাদের রুমে চলে গিয়েছেন। নেহাল নিচে বসে অপেক্ষা করছে নিশির জন্য। নিশি একটু পরই হাল্কা মিষ্টি কালারের একটা জামা পরে নিচে নেমে আসলো। নিশিকে যা লাগছে না। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে কারণ নিশি মাথায় কাপড় দিয়ে এসেছে। খুব সুন্দর আর পবিত্র লাগছে নিশিকে। নিশিকে দেখে নেহালের মনে এক অন্যরকম শান্তি লাগছে৷ তবে তা শুধু অল্প সময়েই জন্যই ছিলো। কারণ নিশির মলিন মুখ দেখে নেহালের ভিতরটা কেঁদে উঠে। নেহাল শুধু নিশির দিকে তাকিয়ে আছে আনমনে।

নিশিঃ যাবেন না??

নেহালঃ হুম।

নিশিকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নেহাল। নিশি আগে আগে হাঁটছে। হঠাৎ নেহাল নিশির হাতটা পিছন থেকে টেনে ধরে।

নেহালঃ নিশি…. খুব অসহায় কণ্ঠে।

নিশি পিছনে ফিরে তাকায় স্বাভাবিক ভাবে।

নিশিঃ জ্বি??

নেহালঃ প্লিজ আমাকে মাফ করে দেও। আমি ইচ্ছা করে তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমি সময়ের কাছে হেরে গিয়েছি নিশি। আমাকে মাফ করে দেও। অসহায় কণ্ঠে।

নিশিঃ শুনুন মাফ চেতে হবে না। এটা আমার ভাগ্যে ছিলো। আমি আজ আছি কাল থাকবো না। হয়তো এই কিছু সময় আপনার জীবনে থাকাটা আমার ভাগ্যে ছিলো। আর আমি এতেই অনেক খুশি। তাই নিজেকে দোষ দিবেন না। চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে। নিশি সামনে ফিরে চলে যেতে নিলে নেহাল আবার,

নেহালঃ নিশি….

নিশি আবার পিছনে ফিরে তাকায়।

নেহালঃ আমি নওশিনকে ছেড়ে দেই??

নিশিঃ ছিহ!!! ভুলেও আর এ কথা বলবেন নাহ। সে আপনার প্রথম ভালোবাসা আর আপনিতো শুধু তাকেই ভালোবাসেন তাইনা। তাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয়না। সে আমার আগে থেকেই আপনার জীবনে ছিলো। আমিতো নতুন। মাত্র ২/৩ দিন হলো। আর কয়েকদিনের মেহমান। আর আমাকে আপনি এমনিই ভুলে যাবেন। এখন চলুনতো।

নিশি আর কোনো কথা না বলে গাড়িতে গিয়ে বসে। একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে চোখটা মুছে মুখে মিথ্যা এক হাসি নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।

নেহাল অসহায়ের মতো ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো। নিশি অন্যমনস্ক থাকায় মনের অজান্তেই সামনের সিটে বসেছে। যখন বুঝতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। নেহাল গাড়ি চালাচ্ছে আর মাঝে মাঝে নিশিকে আড় চোখে দেখছে। নিশি গাড়ির জানালার বাইরে যান্ত্রিক শহরটা আনমনে হয়ে দেখছে ভিজা চোখ নিয়ে।

কিছুক্ষন পর,

নেহালঃ নিশি এসে পরেছি।

নিশি আস্তে করে নেমে যায় গাড়ি থেকে। নেহালও নামে।

নেহালঃ আমি নিতে আসবোনে দুপুরে।

নিশিঃ নাহ আমি একাই যেতেই পারবো। এ পথচলাটা তো আমার একারই। আপনি আর জড়াবেন নাহ। আমি একাই যেতে পারবো।

নেহালঃ নিশি…

নিশিঃ নাহ।

নেহালঃ আচ্ছা।

নিশি ভিতরে চলে গেলো। একবারও ফিরে তাকায় নি নেহালের দিকে। নেহাল একরাশ বিষন্ন মন দিয়ে চলে গেলো। নিশি একটুপরই বের হয়ে নেহালের চলে যাওয়া দেখলো। আর চোখ থেকে অজান্তেই দু এক ফোটা অশ্রু ঝরলো।

দুপুর ২.৪৫ মিনিট,

নেহালঃ হ্যালো মা।

মাঃ হ্যাঁ বল।

নেহালঃ নিশি কই??

মাঃ কেন ভারসিটিতে না??

নেহালঃ এখনো আসেনি??

মাঃ না। কেন ওর ছুটি কয়টায়??

নেহালঃ ২.৩০ এ।

মাঃ তাহলে আসছে হয়তো।

নেহালঃ আচ্ছা বাসায় আসলে আমাকে জানিও।

মাঃ আচ্ছা আমার বউ পাগল ছেলে জানাবো। হাহা।

নেহাল ফোন রেখে দিলো। এরপর নেহাল অনেক ব্যাস্ত হয়ে পরে অফিসের কাজের চাপে। ফলে আর ফোনটা দেখতে পারে না।

বিকেল ৪টা,
নেহাল ফোনটা বের করে দেখে মায়ের ১০ টা কল। নেহাল তাড়াতাড়ি ফোন ব্যাক করে। নেহালের প্রচন্ড চিন্তা হচ্ছে। হাত কাঁপছে। কেনো জানি অনেক ভয় হচ্ছে।

নেহালঃ মা নিশি কি আসছে???

চলবে….?

কোনো ভুল হলে জানাবেন।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ